Ajker Patrika

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ৫৪
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঝুট ব্যবসায়ীকে সহযোগিতার জন্য ঘুষ লেনদেন নিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কণ্ঠের সদৃশ কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফোন কল রেকর্ড হিসেবে ছড়িয়ে পড়া ৬ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের অডিওতে কয়েক দফা অনৈতিক সুবিধা দাবি করার কথা শোনা গেছে। উঠে এসেছে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, আসামি গ্রেপ্তার না করার শর্তে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবির কথাও।

গতকাল রোববার রাতে কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সেলিম মিয়ার সঙ্গে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের কণ্ঠের সদৃশ একজনকে কথা বলতে শোনা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল দাবি করেন, তাঁর কথা সম্পাদনা (এডিট) করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

অডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমিনুলকে বলে দিচ্ছি, তুই আমাকে ১ লাখ ৩০ দে।’

অপর প্রান্ত থেকে পুরুষ কণ্ঠে একজন বলেন, ‘স্যার আমার হাত দিয়ে?’ ওসি বলেন, ‘তুমি এসব বুঝবা না।’

অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘হায় হায় স্যার! এই কথা আপনি বলছেন!’

ওসি বলেন, ‘তুমি এসব বুঝবা না, সে সব ভেঙে খাবে।’

অপরপক্ষ বলেন, ‘তাহলে এখন কী করব স্যার। তাহলে কী তাদের দায়ী করাব? ওসি বলেন, ‘ওদের দিয়ে করাও, তুমি পেছনে থাকো।’

ব্যবসায়ী জানতে চান, ‘এরপর যদি ওরা গাড়ির সামনে দাঁড়ায়, তাহলে কী করব। আপনি কি ব্যাকআপ দেবেন?’ ওসি বলেন, ‘সামনে থাকবে না। মুন্না, তোর সঙ্গে কি মুন্নার সম্পর্ক আছে?’ পুরুষ কণ্ঠে উত্তর আসে: ‘সে তো জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের।’ ওসি বলেন, ‘আচ্ছা এই বিষয়টি আমি দেখছি।’ এরপর ব্যবসায়ী জানতে চান, ‘শেষ পর্যন্ত কি আমিনুলরা ট্যাকেল দিতে পারবে, ওদের নামে ব্যবসা দিলে?’ ওসি বলেন, ‘আমি আগে দেখি, কয়েক দিন দেখি।’ ব্যবসায়ী তখন বলেন, ‘শনিবার তো বিস্কুট বের হবে এক গাড়ি।’ ওসি বলেন, ‘বিস্কুট বের হবে সেটা তো আরেক ঝামেলা। মুন্না তো এখন বিস্কুট চাচ্ছে না। স্পিনিং চাচ্ছে।’

ব্যবসায়ী বলেন, ‘যদি বিএনপিরা করে তাহলে তো চাইতে পারবে না। আমিনুল তো থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক)। আমিনুল আর তার বাপের নামে দেব স্ট্যাম্প কইরা। গোপনে মালিকানা থাকবে আমার নানার। এমডি স্যারকে বইলা দেব, আপাতত ভাইস্তা আর ছোট ভাইকে দিয়ে ব্যবসা করাইতাছি। আর তলে তলে আমি সব হেন্ডেল কইরা দেব।’

ওসি বলেন, ‘হাঁ এটাই ভালো। এটা আমিও বলে দেব। মুন্নার কাছে গেলে সব আউট হয়ে যাবে।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘তাহলে আপনি কাজ কইরেন। মুন্নার কাছে গেলে টাকার অ্যামাউন্ট চাইব অনেক। যে টাকা এখানে তো এত বেশি টাকা দেওয়া সম্ভব না।’ ওসি বলেন, আমি আমিনুলকে বলে দিবোনে।’

ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমিনুলকে আগেই বলতে হবে না। আগে আমরা বাড়িতে বসি।’ ওসি বলেন, ‘বসো।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমিনুলকে ফোন দিয়ে এনে নানাকে নিয়ে বসি। গোপনে বসি যদি আমাদের লেভেলে হয়, তাহলে ওগরে দিয়ে দেব, আর যদি না হয় তাহলে ব্যবসা মোর্শেদকে দিয়ে দেব।’ ওসি বলেন, ‘মোর্শেদ চেয়ারম্যানকে?’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের কথার বাইরে গেলে মোর্শেদ চেয়ারম্যানকে দিয়ে দেব। খামো না কাউকে খাইতেও দেব না।’

ওসি বলেন, ‘দেখা যাক। আমি কথা বলছি।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন কিছু বলতে হবে না স্যার।’ ওসির উত্তর, ‘তোমার নানা আমাকে দেখে না কেন? ৫ হাজার ১০ হাজার এটা কোন টাকা? এই টাকা দিয়ে কী হয়। আমি এত চাপ নিচ্ছি। তোমার নানাকে বলো, আমাকে লাখ পাঁচেক টাকা দিতে।’

ব্যবসায়ী উত্তর দেন, ‘বাড়ির কাম করতে যাইয়া অবস্থা খুবই খারাপ।’ তখন অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি রেগে গিয়ে বলেন, ‘এসব কথা বলো না। আমি যেটা বলি সেটা কর। না হলে ঝামেলা হবে।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আরেকটা কথা বলি, ওই যে শাহাবুদ্দিন মামুর কথা যে বলছিলাম আপনাকে, শৈলাট রোডে বাড়ি। শাহাবুদ্দিন মামু। ওর বাসায় আমিনুল আপনাকে একবার পাঠাইছে। ওর কথা আপনাকে বলেছিলাম। আপনি বলছিলেন নিয়ে আইসো। ওরে নিয়ে আসলে ৫০ হাজার টাকা দেব।’ ওসি বলেন, ‘ধুর, ৫০ হাজার টাকা? ওকে বলো, লাখখানেক টাকা দিতে।’

ব্যবসায়ী বলেন, ‘তাহলে আমি ফোন ধরিয়ে দিই। আপনি একটু কথা বলবেন?’ ওসি বলেন, ‘কোনো কথা হবে না। ওকে নিয়ে আসো। তাহলে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলবেন?’ ওসি বলেন, ‘কোনো কথা না। তুমি আমাকে চিন না? এত সমস্যা কী। সমস্যা করলে ধরে নিয়ে আসব।’

ব্যবসায়ী বলেন, ‘তাহলে আমি ওর কাছে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিই। এক মিনিট কথা বলবেন।’ ওসি বলেন, ‘যাও আজকেই নিয়ে আসবা।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘না হলে সে বিশ্বাস করবে না। আপনি বলবেন আগামীকাল নিয়ে আসেন।’

ওসি বলেন, ‘সে না তুমি নিয়ে আসবা।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘তাহলে বিশ্বাস করবে। আপনি শুধু বলবেন, ‘এক (লাখ টাকা) নিয়ে আসেন। আর স্যার, আমিনুলরে এখন কিছু বলার দরকার নেই। আমরা বইসা এটাই করতেছি স্যার।’ ওসি বলেন, ‘তোমার নানারে বলো, পাঁচ (লাখ) ব্যবস্থা করে দিতে।’

ব্যবসায়ী বলেন, ‘স্যার বিশ্বাস করবেন, আমরা যে ব্যবসা করি, এখন সেই পরিমাণ টাকা নাই স্যার।’ ওসি বলেন, ‘তোমাদের ব্যবসা লাগে না। ব্যবসায়ী গাড়ি মাইর খাইয়া পইড়া রইছে। এ মাসটা যাক, আমি দুই লাখ দেব।’ ওসি বলেন, ‘এত কথা বল কেন? ওসি বলছে করে দিয়ো। ওসি বলছে করে দিয়ো। তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলা না।’ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ফুলহাতা? আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসব।’

কথোপকথনের অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, ‘ওসি সাহেব আমাকে চাপ দিচ্ছেন। আমাকে একটি লেখা দিয়েছেন তিনি। এটা ফেসবুকে এসে বলতে চাপ দিচ্ছেন যে কথোপকথন মিথ্যা। এমন চাপ দিচ্ছেন। ওসি সাহেব আমাকে মাসোহারা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। আমি প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা দিই। তবুও তিনি আরও চাপ দেন। ওসি আমাকে ছাত্রলীগের তকমা দিয়ে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ দেন। অডিও প্রকাশ করার কারণে ওসি আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘আমার কথা এডিট (সম্পাদনা) করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র।’

এ বিষয়ে কথা বলতে গাজীপুর পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেকের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লঞ্চ দুর্ঘটনা: তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা থেকে ফিরছিলেন যাত্রীরা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মধ্যরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঝালকাঠিতে একটি লঞ্চ জব্দ করা হয়েছে। সেই লঞ্চের চারজনকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে জানা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন বিএনপির স্থানীয় নেতা। ঢাকায় তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগা দিতে এসেছিলেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তাঁর ফিরছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে ঝালকাঠি–২ আসনের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ইসরাত সুলতানার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা লঞ্চটিত করে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিজাম শিপিং লাইনস সূত্রে জানা গেছে, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ঝালকাঠি জেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই সুস্থ রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুর্ঘটনা: ঝালকাঠিতে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চ জব্দ, আটক ৪

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মাঝরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনার পর ঝালকাঠিতে ‘অ্যাডভেঞ্চার–৯’ নামে একটি লঞ্চ জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করলে বরিশাল নৌ-পুলিশ ও ঝালকাঠি থানা-পুলিশের সদস্যরা লঞ্চটি জব্দ করেন।

বরিশাল নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক জানান, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে লঞ্চটি ঝালকাঠিতে পৌঁছালে সেটি জব্দ করা হয়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, লঞ্চটি ঝালকাঠিতে নোঙর করার পর সারেং, সুকানি, সুপারভাইজার ও ইঞ্জিন চালক পালিয়ে যান। পরে চারজন কেবিন বয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন যাত্রী।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশু শামীম (১০) মারা গেছে। উদ্ধারের তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আজ শুক্রবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির মামা সাব্বির হোসেন ও সখীপুর থানা-পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত শামীম উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে ও স্থানীয় কীর্তনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহত শিশুর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শামীম বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ির আশপাশের বনাঞ্চলে অনুসন্ধান চালান। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি বন থেকে শামীমকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

নিহত শামীমের মামা সাব্বির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম শিয়ালের আক্রমণে এমন হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, এটি শেয়াল-কুকুরের আক্রমণের চিহ্ন নয়, শিশুটির মাথা ও শরীরের আঘাত করা হয়েছে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিহত শামীমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে অটো-টমটম সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে অটোরিকশা ও সিমেন্টবাহী টমটমের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লেবুখালী-বাউফল মহাসড়কের রাজাখালী (স্থানীয় নাম পিছাখালী ব্রিজ) এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগা থেকে আসা যাত্রীবাহী অটোরিকশা বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবাহী টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয় বছরের রবিউল নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম খানকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সুমন সরদার (২৫) ও আব্দুল কাদেরকে (৫০) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত আব্দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুমনের একটি হাত সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের বাড়ি বাউফল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা ও টমটমটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত