Ajker Patrika

মিরসরাইয়ে বিএনপি দুই পক্ষের সংঘর্ষ, জুলাই মঞ্চ নেতার মৃত্যু

মিরসরাই (প্রতিনিধি) চট্টগ্রাম
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে তাহমিদ উল্যাহ (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও সাত-আটজন আহত হয়েছেন।

এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায় বারইয়ারহাট পৌর বাজারে একটি দোকানে পা তুলে বসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

নিহত তাহমিদ উল্যাহ বারইয়ারহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের একমাত্র ছেলে। তিনি স্থানীয় কদমতলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। এ ছাড়া দি রেড জুলাই মঞ্চের আহ্বায়ক, আপ বাংলাদেশ (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য ও ধর্ষণ প্রতিরোধ মঞ্চের উদ্যোক্তা ছিলেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জুবায়ের বারইয়ারহাট পৌরসভার একটি দোকানে পা তুলে বসেছিলেন। এ সময় দোকানে আসেন পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটন। তাঁকে দেখে জুবায়ের পা নামিয়ে না বসায় লিটন জুবায়েরকে লাথি মারেন। এতে উভয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা জড়ান।

পরে লিটন ও জুবায়ের নিজ নিজ এলাকা জামালপুর ও হিঙ্গুলীর লোকজন নিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে জুলাই যোদ্ধা তাহমিদসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

গুরুতর আহত তাহমিদকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার সময় তাঁর মৃত্যু হয়।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম উত্তরের সংগঠক মোহাম্মদ সাইফুল হাওলাদার বলেন, ‘তাহমিদ জুলাই যোদ্ধা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতা ছিলেন। ফেনীতে আন্দোলনের সময় তাঁর পেটে পুলিশের গুলি লেগেছিল। তাঁকে এভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই উপজেলার আহ্বায়ক মো. জামশেদ আলম বলেন, ‘তাহমিদ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। সে জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাহমিদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

নিহত তাহমিদের মা বিবি জোহরা বলেন, ‘মাদ্রাসায় তার পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে বিকেলে বাড়ি এসে ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। পরে তার এক বন্ধু বাড়িতে এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় খবর পাই, আমার ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ছেলে মারা যায়।’

বড় বোন আকলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই ছিল জুলাই যোদ্ধা। ’২৪ সালের ৪ আগস্ট আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। সমাজের অনেক মানুষের উপকার করত। ২০২৪ সালে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার সময়ও সে কাজ করেছে মানুষের জন্য। আমার ভাইটাকে নোংরা রাজনীতির লোকজন মেরে ফেলেছে। আমার ভাই একজন কোরআনের হাফেজ ছিল। আমাদের একমাত্র ভাইকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

তাহমিদের বাবা আলমগীর বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে কেন তারা মেরে ফেলল। ও তো কোনো দোষ করেনি। যদি কখনো ভুল করেও থাকে, তবে আমি নিজেই বিচার করতাম। এভাবে আমার ছেলেকে শেষ করে দিল কেন? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

বারইয়ারহাট পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব মোহন দে বলেন, ‘তাহমিদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনে সে কাজ করেছে। কিছুদিন আগে সে আমার সঙ্গে চলাফেরা করছে। ছাত্রদলের রাজনীতির করার মনস্থির করেছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

এ বিষয়ে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘ঘটনার আগে এলাকায় সামান্য ছেলেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় জুবায়েরের সঙ্গে আমার হাতাহাতি হয়। এরপর তারা বারইয়ারহাট চলে যায়। সেখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরপর কী হয়েছে আমার জানা নেই। অভ্যন্তরীণ পূর্বশত্রুতার জেরে এমনটা ঘটতে পারে।’

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাহমিদের নিহত হওয়ার খবর শুনে আমরা সবাই শোকাহত। এই ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কঠিন বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। আমি নিশ্চিত করে বলেছি, এটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে।’

চট্টগ্রাম পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) নাদিম হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘তাহমিদ হত্যার পেছনে কারা জড়িত, কারা তাকে গুরুতর আঘাত করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়—এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত যা থেকে বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়।’

তিনি আরও বলেন, তাঁর মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসা হবে।

এদিকে তাহমিদের খুনের ঘটনায় শোক জানিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আপ বাংলাদেশ। সংগঠনের মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে খুনিদের শনাক্ত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় মা-মেয়ে খুন: আগের চুরির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার হন আয়েশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আয়েশা আক্তার
আয়েশা আক্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ মাস আগের এক জিডিতে উল্লেখ থাকা গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে। আয়েশার পরিচয় লুকানোর চেষ্টার কারণে সূত্রহীন ছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর গত বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাঁকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর স্বামী রাব্বীও।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ এই জোড়া খুনের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী আয়েশাকে ৬ দিন ও তাঁর স্বামীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার নিজেদের ফ্ল্যাটে গত সোমবার সকালে খুন হন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর একমাত্র সন্তান নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। এ ঘটনায় সেদিন রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। খুনের মাত্র চার দিন আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।

পুলিশের সূত্র জানায়, ঘটনার পর ভবনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে আয়েশার ভবনে প্রবেশ এবং সকাল ৯টার পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একজনের বের হওয়ার তথ্য মেলে। তবে তাঁর মুখ ছিল ঢাকা। আয়েশার মোবাইল নম্বর, ছবি, চেহারার বর্ণনা, ঠিকানা—কিছুই ছিল না পুলিশের কাছে। ফলে তদন্তের শুরুতেই অন্ধকারে হাতড়াতে হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, আয়েশার চুরির অভ্যাস নতুন নয়। এর আগে জুলাইয়ে কাছাকাছি আরেকটি বাসায় ৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে অভিযুক্তের গলায় পোড়া দাগ থাকার তথ্য ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, আগের একটি জিডির নথি ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় এমন এক গৃহকর্মীর নাম আয়েশা, যাঁর গলায় পোড়া দাগ রয়েছে। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি পুরোনো মোবাইল নম্বর, যার সূত্রে সামনে আসে রাব্বী নামের একজন যুবক। তাঁর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, রাব্বীর স্ত্রীই আয়েশা, যিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং জেনেভা ক্যাম্পের ভাড়া বাসায় থাকেন। এই সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আয়েশা ও রাব্বীর সম্ভাব্য অবস্থান ধরে সাভারের হেমায়েতপুর, পটুয়াখালীর দুমকী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাসায় কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনে তিনি ২ হাজার টাকা চুরি করেন। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তাঁর তর্ক-বিতর্ক হয়; তাঁকে পুলিশের দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। চতুর্থ দিন কাজে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে করে একটি সুইচ গিয়ার চাকু নেন। চুরির বিষয়টি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি লায়লা আফরোজকে ছুরিকাঘাত করেন। নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে নিজের রক্তাক্ত পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে পোশাক পাল্টে সাভারের দিকে যান। পথে সিঙ্গাইর সেতু থেকে ফেলে দেন রক্তমাখা কাপড় ও চুরি করা মোবাইল।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ঘটনার সময় নাফিসা ঘুমাচ্ছিল। ধস্তাধস্তির শব্দে জেগে উঠে নিরাপত্তাকর্মীকে জানাতে ইন্টারকম ধরতেই তাকে আক্রমণ করেন আয়েশা।

পুলিশের ধারণা, কেবল ২ হাজার টাকার বিষয় নয়, আগে থেকেই আয়েশার চুরির পরিকল্পনা ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জোড়া খুন করেছেন।

পুলিশ বলছে, আয়েশার স্বামী রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে। গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং বিশ্বাসযোগ্য দু-একজনের যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

এদিকে গতকাল আয়েশা ও রাব্বীকে এই হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে আয়েশার ৬ দিন ও তাঁর স্বামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আদালতের সহকারী পিপি হারুন-অর-রশিদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গৃহকর্মী আয়েশা খুনের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তবে খুনের মূল রহস্য কী, তা খুঁজে বের করতে এবং এ ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। রাব্বীও এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

  • দুই বছরের শিশু সাজিদ গর্তে পড়ে যায় বুধবার দুপুরে।
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাজিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে শিশু সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেই গর্তের গভীরতা ছিল ৩০-৩৫ ফুট। এমনটা বলা হচ্ছিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়। তখনো মেলে না সাজিদের সন্ধান। তবে থামেনি উদ্ধারকাজ। অবশেষে রাত ৯টার দিকে তার সন্ধান মেলে। ৩২ ঘণ্টা পর সাজিদের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গত বুধবার তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা ওই গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। এরপর বেলা ২টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অভিযানে একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। উদ্ধারকাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাত ৯টায় শিশুটিকে আমরা উদ্ধার করেছি। পরে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানাবেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেও ফায়ার সার্ভিস আশা করেছিল, সাজিদ বেঁচে আছে। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খবর আসে, সে আর বেঁচে নেই।

সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেটির ব্যাসার্ধ ছিল ৮ ইঞ্চি। সরু গর্তে অক্সিজেন পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় অক্সিজেন সরবরাহ। এতে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েন উদ্ধারকর্মীরা। তবে আশার আলো নিভে গেলেও কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে এসে চোখের ভাষা লুকোতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। জানান, গর্তে ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন—৩০ ফুটের পর জমে আছে মাটি আর খড়ের স্তূপ। স্থানীয়রা শিশুটিকে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে অজান্তেই সেসব ঠেলে দিয়েছেন ভেতরে।

শিশু সাজিদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায়। বাবা রাকিবুল ইসলাম, মা রুনা খাতুন। সন্তানটিকে একবার দেখা, বুকে জড়িয়ে ধরার আশায় ছিলেন তাঁরা। সাজিদের মা রুনা খাতুন দুপুরে ঘরে বসে ছিলেন। বললেন, ‘কছির উদ্দিন তিন জায়গা খুঁড়েছিল...দুই বছর ধরে গর্ত বন্ধ না করে রেখেছিল। কেন রেখেছিল? আমি তার বিচার চাই...কছিরের শাস্তি চাই।’

শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, সেটিসহ পাশে একই জায়গায় আরও দুই জায়গায় গভীর নলকূপের জন্য গর্ত করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিক কছির উদ্দিন। পানি না পেয়ে সব গর্তই খোলা ফেলে রেখেছিলেন দুই বছর ধরে। আর সেই অবহেলার বলি হলো দুই বছরের সাজিদ। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গর্তটি খোঁড়া হয়েছিল ৯০ ফুট পর্যন্ত।

এত গভীরতা পর্যন্ত খনন করতে হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে। রাত ৯টায় উদ্ধারকাজ শেষ হয়। শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। সাজিদের সন্ধান মিলল ঠিকই। তবে মৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে ঘরে আগুন দিলেন যুবক

 টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষোভে এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম মহসিন মাদবর (২৬)। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার কাঠাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত মহসিন মাদক সেবনের জন্য বাবার কাছে টাকা দাবি করে আসছিলেন। ঘটনার দিন তিনি আবারও টাকা চান। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন মহসিন। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘরের বেশ কিছু আসবাব পুড়ে যায়।

মহসিন মাদবর ওই গ্রামের হোসেন মাদবরের ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। মহসিনকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টঙ্গিবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাদকাসক্ত এক যুবক মাদকের টাকার জন্য নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তাঁকে পাওয়া যায়নি, তবে আটকের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীর লালবাগে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

ঢামেক প্রতিবেদক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর লালবাগ চৌরাস্তায় ছুরিকাঘাতে রিয়াদ (৩০) নামের এক যুবক খুন হয়েছেন। আজ ‎বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে পথচারীরা ওই যুবককে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

‎হাসপাতালে পথচারী মো. ফাহিম বলেন, ‘সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে লালবাগ চৌরাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ওই যুবক। দেখতে পেয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এলে মারা যান। তাঁর পিঠে ছুরিকাঘাত রয়েছে। কে বা কারা তাঁকে ছুরিকাঘাত করেছে, তা জানতে পারি নাই।’

হাসপাতালে নিহতের মা নাসিমা বেগম জানান, তাঁদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। বর্তমানে লালবাগ শহীদনগর ৮ নম্বর গলিতে থাকেন। তাঁর ছেলে রিয়াদ আগে চকবাজারে একটি জুতার কারখানায় কাজ করত। বর্তমানে বেকার ছিল। তিন বছর আগে বিয়ে করে রিয়াদ। বেশ কিছুদিন ধরে রিয়াদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার এক ছেলে নিয়ে ইসলামবাগ তার বাবার বাসায় থাকত। এক বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে রিয়াদ ছিল ছোট। তার বাবার নাম আব্দুস সালাম।

নাসিমা বেগম বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে বাসা থেকে বের হয় রিয়াদ। এর কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি, কে বা কারা রিয়াদকে ছুরি মেরেছে। পরে ঢাকা মেডিকেলে এসে রিয়াদের লাশ দেখতে পাই।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই যুবকের পিঠে ছুরিকাঘাত রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি লালবাগ থানায় অবগত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত