Ajker Patrika

বিশ্ব চলচ্চিত্রের কয়েকটি আয়না

সৈকত দে
বিশ্ব চলচ্চিত্রের কয়েকটি আয়না

১ 
আমাদের জীবন আয়নাজীবন। আয়না আমাদের উল্টো করে দেখায় আমাদের সত্যি চেহারা, উল্টো আমাদের দেখায় সোজা করে। নারীর কাছে আয়না নিভৃত আশ্রয়। নির্জন বন্ধু নারীর এই আয়না, সারা জীবনের সঙ্গে জড়ানো বিশ্বস্ত সঙ্গী। আধুনিক বিবাহব্যবস্থার শিকার, নিজস্ব ভূমি থেকে  শিকড় উৎপাটিত কন্যা যখন পরিবার অথবা নিজের নির্ধারিত জীবনসঙ্গীর কাছে যায়, পরিবারের দেওয়া সাজের বাক্সে থাকে আয়না। বিয়ের আগের ও পরের জীবনের যোগসূত্র নারীর কাছে আয়না। তার একান্ত কান্না, আন্তরিক হাসি—সবকিছুর একমাত্র দর্শক আয়না। নারীর রূপের মধ্যে অরূপের সন্ধান পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো আয়নাই পেয়েছে। পুরাণে নার্সিসাসের কথা আছে। রূপমুগ্ধ এক মানুষ। তিনি সভ্যতার প্রথম সেলিব্রেটেড শিল্পী, এই সেলিব্রেশন নিজের কাছেই, নিজের অবিনশ্বর সত্তার কাছে। আত্মমগ্নতা, বলা ভালো আত্মরতি শিল্পীর পক্ষে কতটা বিপদের, পুরাণ আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। মানবসভ্যতাকে প্রকৃতি প্রথম উপহার দিয়েছে সুর আর তারপর আয়না। পৃথিবীর তিন ভাগ জল। জল মূলত আয়না। আকাশ আর মাটির যোগাযোগের চিহ্ন জলের বুকে। মানুষ পাখির ডাক থেকে, জলের ধাবমান শব্দ থেকে সংগীতের সুর নিয়েছে। 

ইশারাভাষা থেকে মানুষ গিয়েছে গুহাচিত্রে আঁকার দিকে আর পাখির ডাক থেকে নিতে চেয়েছে সুরের দিকটা। শিল্পসন্ধানী মানুষের প্রয়োজন হয়েছে প্রকৃতিকে, নিজের চারপাশে দেখা জগৎকে নিজের মতো করে অনুবাদ করার। তখন এল ‘মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোকে’র কথা, আলোর অদৃশ্য রেখাকে মানুষ ধরল দৃশ্যমান রেখায়। আর রেখার সূত্রমালা জন্ম দিল নানা রকম আকৃতির আয়নার। গোল, লম্বাটে, চার কোনা আয়নার আকৃতির বিচিত্র বিবর্তন নিয়েই এখন অসংখ্য বই রচিত হয়ে গিয়েছে। বাৎস্যায়নের ‘কামসূত্র’ নামক মহৎ গ্রন্থটিতে শরীর ব্যবহারের ইতিহাসে আয়নাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শরীর অন্য শরীরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আনন্দ বিকিরণে, বিচ্ছুরণে সক্ষম। আয়না বাসনাকেও বিবর্ধিত চেহারায় দেখায়। মোগল সম্রাটদের আবাসস্থল, শয্যাকক্ষ আয়নায় সজ্জিত ছিল। ‘সিটি অব উইমেন’ চলচ্চিত্রে আমাদের অনেকেরই মনে আছে, আয়নাবহুল সেই বিখ্যাত দৃশ্যের কথা। মোগল, রাজপুত নারীদের ইতিহাসে অনুচ্চারিত আনন্দ-বেদনার গল্প আমরা পেতে পারতাম, যদি আয়নার ভাষা আমরা বুঝতে পারতাম। মোগল মিনিয়েচার চিত্রেও আয়নার উপস্থিতি সাবলীল। ইউরোপের ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের তুলি সম্ভবত প্রথমবারের মতো বুঝতে পেরেছে আয়নার ভাষা, এই শিল্পীরাই মানুষের সাথে আয়নার যোগাযোগের প্রকৃত চেহারাটি হয়তো খুঁজে পেলেন। আমরা ক্লদ মোনের পদ্ম সমারোহ তো ভুলে যাইনি। পৃথিবীর সমূহ জলভাগ আকাশকে এইভাবেই তো প্রেমের চিঠি, সংরাগের চিঠি লিখেছে। 

২ 
সুফি সাধকেরা নিজের ভেতরটাকেই আয়নার মতো স্বচ্ছ করে তুলতে চেয়েছেন। ঈশ্বরের সাথে নিজেদের লুপ্ত করে ফেলতে চেয়েছেন। ইশক বা প্রেমের চূড়ান্ত পরিস্থিতি এই—পরস্পরে লীন হয়ে যাওয়া। পরস্পরের যে আলাদা সত্তা, স্রষ্টা ও তাঁর সৃজন, বাসনাকারী ও প্রার্থনার লক্ষ্য—এই দুইয়ের মধ্যে কোনো ফারাক নেই সুফিদের কাছে। সুফি সাধকদের উল্টো দিকের চেহারা আছে আমাদের রূপকথায়। আমরা জানি, এই মর্ত্যপৃথিবীর সকল রূপকথা, লোককথা পরস্পর সংযুক্ত, উড়ন্ত ঘোড়া এক লহমায় ঘুরে আসতে পারে সারা দুনিয়া। আয়নায় নিজের মুখ দেখা সেই নিষ্ঠুর রাজকন্যার কথাও আমাদের ছেলেবেলার বেড়ে ওঠার সাথে যুক্ত, ‘বল তো আয়না, কে বেশি সুন্দরী?’, আয়নার উত্তরের সাথে সাথে আমাদের চেনাজানা রূপকথার গল্প শুরু হয়ে যায়। আয়নার আছে শ্রেণিচরিত্র, যেমন সুয়োরানি আর দুয়োরানি, এই দুইয়ের আয়নার চরিত্র দুই রকম। আরব্য রজনীর গল্পে আয়নার ভূমিকা অবিসংবাদিত। আয়না এখানে বার্তাবাহক। প্রাচ্যের আর পাশ্চাত্যের রূপকথার মধ্যে আয়নার প্রয়োগ একই রকম। ছোট হাত-আয়নার পেছনে চিত্রনায়িকাদের ছবি কত একলা যুবকের বন্ধু হয়েছিল সেই ষাট-সত্তর দশকের দিনগুলোতে। বিনোদনের এত উপায় বা পদ্ধতি যখন ছিল না, তখন আয়না কিংবা চোখ সম্বল করে কেবল প্রকৃতি দেখে যাওয়া আমাদের পূর্বপুরুষের আনন্দের উপকরণ ছিল। আমাদের দাদারা দাদিদের এক টুকরো রঙিন আয়না দিলেই দাম্পত্য সম্পর্কে মধুর রসের সঞ্চার করতে পারতেন; কেননা সেই কাচের টুকরোয় থাকত নবযুবকের ভালোবাসা। গ্রামের মেলায় কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতের সাথে ছোট আয়না এখনো অনেক অকথিত ইতিহাসের জন্ম দিতে পারে। 
৩ 
সুইডিশ নির্মাতা ইংমার ব্যারিম্যানের কথায় আসা যাক। তিনি আক্ষেপ করছিলেন একবার, ‘হোয়াট ডু আই সে, উইথ মাই ক্লাউন অ্যাক্ট, হোয়াইল দ্য ওয়ার্ল্ড ইন বার্নিং?’, এই জ্বলতে থাকা নশ্বর অস্তিত্বের সাথে তিনি বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন মঞ্চনাটক এবং সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে। ছেলেবেলায় মা-বাবার যে পিটুনির ট্রমা, তা তাঁকে বড়বেলাতেও ছেড়ে যায়নি, ঘুমের মধ্যেও এসব স্মৃতি তাঁকে আক্রান্ত করত। কাজের মধ্য দিয়েই তিনি এই পরিস্থিতি অতিক্রমের চেষ্টা করেছিলেন। পঞ্চাশের দশকেই তিনি বিশ্ব সিনেমার পরিচিত মুখ, কিংবদন্তিপ্রতিম। ‘সামার উইথ মনিকা’, তেপ্পান্ন সালের সিনেমা, মুক্তির পর কেউ কেউ একে চিহ্নিত করলেন আধুনিক সিনেমার জন্মদিন বলে। ক্যামেরার দিকে সোজা তাকিয়ে কথা বলার প্রথা তাঁর আগে ছিল না তো। বছরে চারটে মঞ্চনাটক আর গ্রীষ্মে একটা সিনেমার রুটিনে বেশ কিছুদিন থাকার পর ব্যারিমান পড়লেন অস্তিত্বের সংকটে। ‘পারসোনা’ চলচ্চিত্রের আগে দেখা গেল মনের এই জটিলতা। এই সম্পর্কে তিনি বলছেন, ‘...আর আমি কেবল এইমাত্র বলতে পারি, পারসোনা একটা অতি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে জন্মেছে, একধরনের সত্যের সংকটের মধ্য থেকে। শেষ পর্যন্ত আমার মনে হলো, নীরবতাই একমাত্র সত্য হতে পারে।’ মিথ্যার জগৎ নির্মাণ আর সত্যের প্রতি আমর্ম বাসনা ব্যারিমানের কাজ ও সমগ্র জীবনের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ‘তিনি সত্য না বলায় একধরনের পেশাগত গর্ব অনুভব করতেন’—কথাটা বলছেন ব্যারিমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আমরা জানি, আয়না আমাদের সত্য বলে না। ব্যারিম্যান অন্য, হাতে গোনা মহৎ পরিচালকদের মতোই ছিলেন আয়নামানুষ। তিনি বলেন, ‘আমি অনুভব করতে পারি, সংযোগের একটা অনিবার্য প্রয়োজন থেকেই আমার ফিল্মগুলো জন্মায়।’ একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প সব সময়ই একটা আয়না। এবং তোমাকে অবশ্যই শিখতে হবে আয়নাটা কেমন করে ধরতে হয়। যদি তুমি ভয়ে কাঁপতে থাকো, আয়না আউট অব ফোকাস হয়ে যাবে।’ স্বপ্ন ব্যারিম্যানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর চরিত্রদের স্বপ্ন তাড়া করে, নিপীড়িত হওয়ার স্মৃতি কিংবা ভয়। 

স্বপ্ন সব সময়ই বিপদের। স্বপ্ন দেখা বিপদের জিনিস। এ জন্যই দুঃস্বপ্ন এমনি স্বপ্নের চেয়ে অনেক ইন্টারেস্টিং, ওই বিপদের কারণেই। স্বপ্নের পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া পুরোটাই তো অবচেতনের আয়না। আমরা যা দেখি সচেতন জাগরণে, স্বপ্ন সেসব দেখায় আমাদের। আমাদের চূড়ান্ত অর্থহীন কল্পনা কিংবা স্বপ্নেরাও তাই অর্থের বাইরে যেতে পারে না। আমাদের নিশ্চয়ই ‘ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিজ’-এর বৃদ্ধ অধ্যাপককে মনে আছে। পারসোনা সিনেমার প্রথম নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সিনেমাটোগ্রাফ’। এই সিনেমা ছেষট্টির অক্টোবরে মুক্তি পায়, অস্তিত্বের অসহ ভার থেকে ব্যারিম্যান উদ্ধার পান। প্রসঙ্গত, লিভ উলম্যানের একটা স্মৃতিচারণার অংশবিশেষের দিকে আমরা মনোনিবেশ করতে পারি, ‘শুটিংয়ের সময়, আমি ভাবতাম, লোকটা সব সময়ই ক্যামেরার পাশে, সে সব সময়ই আমাকে দেখেই চলেছে।...তারপর এক বিকেলে আমি আর ইংমার হাঁটতে হাঁটতে এক পাথরের ওপর বসলাম, এইখানটাতেই পরে তিনি বাড়ি বানিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন তখন, “লিভ, আই হ্যাড আ ড্রিম লাস্ট নাইট। আই ড্রেমট দ্যাট দ্য টু অব আস ওয়্যার পেইনফুলি ম্যারিড।” শেষ শব্দ দুটোর সঠিক অভিঘাত বাংলায় আনতে অক্ষম বলে ইংরেজিটাই তুলে দিলাম। পেইনফুলি ম্যারিড এই দম্পতি, পরবর্তী পাঁচ বছর অত্যন্ত সুখে পরস্পরের সাথে কাটান। তারপর তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। নিজেদের যৌথ মালিকানাধীন আয়না একদিন ভেঙেচুরে যায় পৃথিবীর দম্পতিদের। 
৪ 
জাফর পানাহির ‘দ্য মিরর’ চলচ্চিত্রের কন্যাশিশুটিকে কার কার মনে আছে? ক্লাস টুয়ের মেয়েটিকে নিতে মা আসেননি একদিন, সে বাড়ি ফেরার জন্যে সিনেমার অর্ধেকজুড়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। সমান্তরালে চলছে সাউথ কোরিয়া আর ইরানের ফুটবল খেলা। অর্ধেক সিনেমা যেতে যেতে, মেয়েটি যখন নগরের রাস্তায় আর বাসে, ট্যাক্সিতে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন একসময় আমরা দেখলাম, এটা আসলে সিনেমা, বাস থেকে কন্যা নেমে আসে অভিনয়ে অসম্মতি জানিয়ে, কেননা পুরো সিনেমাজুড়ে সে কাঁদতে চায় না, উদ্বিগ্ন থাকতে চায় না। পরিচালক তখন বাস্তবের শিশুটির বাড়ি ফেরাটির চিত্রায়ণ করতে থাকেন। সিনেমা আর বাস্তব এখানে একাকার। আয়না নাম এইখানে সুন্দর হয়ে ওঠে, সিনেমার দুটো অংশ পরস্পরের প্রতিফলন। আমাদের স্বপ্নদৃশ্যের মতো। গত জন্মের প্রেমিকারাও এখানে ফিরে আসতে পারে, ফিরে আসতে পারে চলে যাওয়া বউ, আপনি সুন্দর সংসার পেতে বসতে পারেন, কোনো একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে আমরা দেখি, একা ঘরে শুয়ে আছে আমার সহনাগরিক। আয়না এক স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে আয়না এক ভিন্ন মাত্রা, অন্য স্তরের কথা বলে। আন্দ্রেই তারকোভস্কির ‘মিরর’ নিজের জীবনের সর্বাধিক প্রতিফলিত করেছে। নিজের জীবনের স্মৃতিকথা, নিজের বেড়ে ওঠা বলতে ওঠা বলতে গিয়ে তিনি ‘আয়না’ নামটি বেছে নিয়েছেন। অতটা বিখ্যাত নয় কবি আন্দ্রেই তারকোভস্কির সুপুত্র আন্দ্রেই বাবার কবিতা এই চলচ্চিত্রে এমনভাবে ব্যবহার করেন, কখনো কখনো বিভ্রম জাগে, এটা বাবাকে নিয়ে তথ্যচিত্র নয় তো! আমাদের অবাক লাগে, যখন দেখি মা আর স্ত্রী চরিত্রে একই অভিনেত্রী অভিনয় করছেন। তারকোভস্কির দিনপঞ্জি ঘাঁটতে গেলে এই রহস্যের তল পাওয়া যাবে। এই রহস্য আগ্রহীদের জন্য তোলা থাক। যারা দিনপঞ্জিযাত্রায় যাব, তারাই উপলব্ধি করতে পারব বিশ্ব চলচ্চিত্রে আয়না রহস্যের অম্লমধুর রস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত