Ajker Patrika

শব্দের বাগানে এক নির্ভেজাল চাষি–সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

অরিন চক্রবর্তী
শব্দের বাগানে এক নির্ভেজাল চাষি–সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কথাসাহিত্যিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪-২৩ অক্টোবর ২০১২) জন্মদিন আজ। প্রথিতযশা এই সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। তাঁর লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস দুই বাংলার পাঠকদের ছুঁয়েছে বহতা নদীর মতো। তাঁর জন্মদিনে আজকের পত্রিকার শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলা সাহিত্যের বাগানে হঠাৎ করে এসে যিনি লাল ও মিষ্টি আপেল ফলিয়েছেন, তাঁর নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। পাঠক তাঁর রচনায় একের পর এক সুখের কামড় দিয়ে চলেছে। আজও বিরাম নেই। তিনি যেন বাংলা সাহিত্যের একটি রিজার্ভ ফরেস্ট। যেখানে অনায়াসে ঘুরে বেড়ানো যায়, নদীর ধারে বসে জিরিয়ে নেওয়া যায় এবং স্নিগ্ধ হওয়া যায়।

তাঁর রচনার এই রিজার্ভ ফরেস্টেই খুঁজে পাওয়া যায় বৃষ্টির অমোঘ ধারার মতন দুঃখ। নিয়মিত লেখালেখি শুরু হওয়ার দিন থেকেই প্রতিদিন লেখার টেবিলের সামনে বসার অভ্যাস তাঁর রক্তে মিশেছে, অথচ শুরুটা হয়েছিল নিতান্তই শখ ও অনুবাদের বশে। মেট্রিক পাস করার পর অবসর সময়ে তাঁর বাবা টেনিসনের ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস’ থেকে কবিতা বাংলায় অনুবাদ করতে দিতেন, অনুবাদ করার ফাঁকে ও পড়াশোনার সূত্রে বাংলা কবিতায় শূন্যতা তিনি বুঝতে পারেন।

এই উপলব্ধি তাঁকে লিখতে বাধ্য করে। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে সাহিত্যের তপোবনে দীক্ষা নেওয়া এক শিক্ষানবিশ, পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন সাধক ও দীক্ষাগুরু। সাহিত্যে তাঁর অবাধ বিচরণ তাঁকে কালজয়ী করে তুলেছে। যদিও তার পেছনে রয়েছে শব্দের লালন ও পরিচর্যা।

বর্তমানে যেমন বাংলা কবিতা সিরিয়াসভাবে লিখতে হলে এবং নিজেদের লেখা টিকিয়ে রাখতে গেলে প্রচুর পড়তে হবে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই পড়াশোনায় জোর দিয়েছিলেন, লেখালেখি করার আগেই। তাঁর লেখা থেকেই উঠে আসে যেভাবে তিনি জীবনানন্দকে খুঁজে পেয়েছিলেন চিন্তা ও চেতনায়...

‘পড়তে হবে। কিন্তু বই কেনার পয়সা পাব কোথায়? হাত খরচ পাই দৈনিক মাত্র চার পয়সা, জীবনানন্দ দাশের ‘সাতটি তারার তিমির’-এর দাম দু’টাকা।

মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেল। রেশন থেকে চুরি করলে কেমন হয়? চাল আর চিনি যদি কিছু কিছু কম নিই, বাড়িতে ধরতে পারবে না। ধরলেও বলব, আমাকে ওজনে ঠকিয়েছে। সেরকম তো অহরহ ঠকায়। একটা যুক্তিও খাড়া করলাম। ম্যান ডাজ নট লিভ বাই ব্রেড অ্যালোন। শুধু ভাত রুটি খেয়ে বেঁচে থাকার কোনও অর্থ হয় না। কবিতাও পড়তে হবে। একটু কম ভাত খেয়ে, চায়ে একটু কম চিনি দিয়ে, সেই পয়সা বাঁচিয়ে একটা কবিতার বই অবশ্যই কেনা যেতে পারে।

সেইদিনই সন্ধেবেলা কবিতার বইটি কিনে বাড়ি ফিরে, পাগলের মতন কতবার যে পড়তে লাগলাম তা কে জানে!’ 
তাঁর পূর্বজদের শিকড় বাংলাদেশে লেগে থাকলেও মাত্র চার বছর বয়সে কলকাতায় আসেন। যদিও আপামর বাঙালি তাঁকে আপন করে নিয়েছে। কাঁটাতার তাঁর সাহিত্যকে বিঁধতে পারেনি। সংসারে জীবনের লড়াই শুরু হয়।

সায়েন্সের ছাত্র হয়েও অধ্যাপনা অথবা গবেষণাকে বেছে নেননি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সিটি কলেজে পড়াকালীন কমলকুমার মজুমদারের নেতৃত্বে হরবোলা ক্লাবে নাট্যচর্চাও করতেন। স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকা পড়তে যান, ফিরে এসে উপগ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজও করেন।

এরপর বেশ কিছুদিন প্রাইভেট অফিসে চাকরি করেন, ছেড়ে দিয়ে পড়ানো শুরু করেন। সত্তর দশকে সাংবাদিক হিসেবে কাজ নেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। শেষ জীবন পর্যন্ত সেখানকার বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। যদিও শুধু শব্দের অনন্ত নক্ষত্রবীথি এসে ভিড় করেছে জীবনের মহাকাশে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সব থেকে বড় অস্ত্র ছিল, তিনি কোনো সাহিত্য গোষ্ঠীর ভিড়ে পা মেলাননি। তিনি মনে করতেন কোনো গোষ্ঠী কখনোই লেখার মান বাড়াতে পারে না। তাই নিজেকেই ভেঙেছেন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছেন এবং লিখে গিয়েছেন। আদ্যোপান্ত দস্তয়েভস্কি-পাগল ছিলেন, এমনকি বন্ধুদের বলেও বেড়াতেন; সাহিত্যচর্চা করতে গেলে দস্তয়েভস্কি পড়তে হবে। ‘নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড’ তাঁর কাছে ছিল সাহিত্যের অণু-পরমাণু।

আসলে তিনি পড়তেন, লেখায় প্রভাব ফেলতে দেবেন না বলেই। নিজের লেখাকেও বহুবার অস্বীকার করেই এগিয়ে গিয়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন। তাঁর মধ্যে ছিল শব্দের প্রতি নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা শুধু লেখা নিয়েই কাটিয়ে দিতেন। কোনো অনুষ্ঠান অথবা কাজের সূত্রে বাইরে গেলেও এই ধারাবাহিকতার অভাব ঘটেনি। ১৯৫২ সালে ‘একটি চিঠি’ কবিতাটি তিনি লেখেন প্রেমিকাকে ভালোবাসা প্রকাশ করার মাধ্যম হিসেবে।

এই লেখাটি তিনি ‘দেশ’ পত্রিকায় পাঠালে চার মাস পর প্রথম প্রকাশিত কবিতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তীক্ষ্ণ সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর লেখা প্রথম গল্পও ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। তত দিনে অবশ্য কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

এই ধারাবাহিকতার ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছি অসামান্য সৃষ্টি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ বিচরণ থাকলেও নিজেকে আদ্যোপান্ত কবি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। গভীর নার্সিসিজম উঠে আসে তাঁর কবিতার প্রতি বাঁকে, যদিও দু-একটি কাব্যগ্রন্থ বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই আমিত্ববোধের ভাঙা-গড়া নিয়ে চড়তে থাকে কবিতার পারদ। প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই ‘একা এবং কয়েকজন’। যেখানে ‘দুপুর’ কবিতায় কবি লিখেছেন-
‘এর চেয়ে রাত্রি ভালো, যুবকটি মনে মনে বললো বারবার
রোদ্দুর মহৎ করে মন, আমি চাই শুধু ক্লান্ত অন্ধকার।’ 
কাব্যগ্রন্থটির পর্দার আড়ালে উঠে এসেছে কলকাতার যুবকদের অন্ধকার দিকটি। তাদের বেকারত্ব, প্রেমিক সত্তা উঠে আসে কবিতার মোড়কে। ‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি’ তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থটির মধ্যে একটি। ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ কবিতার একটি অংশ-
 ‘এক বছর ঘুমোবো না, স্বপ্ন দেখে কপালের ঘাম
ভোরে মুছে নিতে বড় মূর্খের মতন মনে হয়
বরং বিস্মৃতি ভালো, পোশাকের মধ্যে ঢেকে রাখা
নগ্ন শরীরের মতো লজ্জাহীন, আমি
এক বছর ঘুমোবো না, এক বছর স্বপ্নহীন জেগে
বাহান্ন তীর্থের মতো তোমার ও-শরীরে ভ্রমণে
পুণ্যবান হবো।’ 

এখানেই ধরা দেয় প্রেমিক সুনীল। তরুণ ও প্রেমিক মন নীরার শরীরকে বাহান্ন তীর্থ ভেবে ভ্রমণ করে এবং পুণ্যবান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। যেন সব প্রেমিকের মুখের ভাষা হয়ে উঠেছে। অথবা ‘কথা দিয়েছিলে তুমি উদাসীন সঙ্গম শেখাবে’ এই একটি কথাতেই শারীরিক মাহাত্ম্য বোধ প্রাধান্য পেয়েছে।

যৌনমুখর হয়ে উঠলেও তা কখনোই ছাপিয়ে যায়নি গভীর শৈল্পিক চেতনাকে। এখানেই ‘হিমযুগ’ কবিতাটি হয়ে উঠেছে মহৎ। নিজস্ব ভাষায় ও গদ্যরীতিতে প্রেমের অব্যয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যুক্ত করেছেন জ্যামিতিক টান। স্বাভাবিক মুখের ভাষাও কখনো কখনো মাত্রা পেয়ে রূপকের আঙ্গিকে মিশে, কবিতা হয়ে ওঠে সার্থক মাধ্যম।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় উঠে আসে এক দিকশূন্যপুর, যেখানে পা ডুবিয়ে বসে থাকা যায়। যেখানে মিলেমিশে যায় নীরার নূপুর ও বাউলের একতারার সুর। নীরা এমন একটি চরিত্র, যেখানে ফুটে ওঠে প্রেমের মানব দিকটি। যেখানে বিপরীত দিক হিসেবে উঠে আসে বরুণার কথাও।

অনায়াসে তাঁর কবিতায় স্বাচ্ছন্দ্য হওয়া যায়, দুঃখবিলাসিতায় ডুবে তুলে নিয়ে আসা যায় সামগ্রিক নিজস্বতা। এক আশ্চর্য অনুভব-বোধের জন্ম দেয়। জীবনের কিছু রক্ত-মাংস খুঁড়ে তুললেও, তা ছুঁয়ে ফুটে ওঠে চেতনার পরিধি। এক উন্মাদ বালক মাউথ-অর্গ্যান হাতে যেন ঘুরে বেরাচ্ছে কবিতার বৃত্তজুড়ে, আর তার মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে শব্দের মাত্রায়।

‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনায় ‘নীললোহিত’কে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে তুলে এক আত্মমগ্ন ন্যারেটিভ আমরা খুঁজে পাই। বিভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্রকে তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মূল ভিত্তি করে তুললেও তা কখনো ঐতিহাসিক উপন্যাস হয়ে ওঠেনি। বরং হয়ে উঠেছে ভীষণ রকম জ্যান্ত ও জীবনের পরিপূরক।

‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে রামকৃষ্ণদেব ও তাঁর শিষ্যদের ভূমিকা পাই আমরা। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নটী বিনোদিনী, গিরিশচন্দ্র এক আলাদা মাত্রায় যুক্ত হয়েছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা জীবন্ত দলিল আকারে আশ্রয় পেয়েছে ‘সেই সময়’ উপন্যাসে। বাঙালির নবজাগরণ পর্ব ও সেই সময়ের প্রধান ব্যক্তিবর্গের বৈশিষ্ট্য অনেকাংশে আখ্যানমূলক করে তুলেছে।

তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, ডেভিড হেয়ার প্রমুখ।

‘মন ভালো নেই’, ‘রাত্রির রঁদেভু’, ‘সেই মুহূর্তে নীরা’ ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘বন্দি জেগে আছো’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসহ প্রায় ২৫০-এর ওপর বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে, যে বইটির কথা না বললেই নয় সেটি হলো ‘মনের মানুষ’। বাংলা ভাষায় লালনকে মুখ্য ভূমিকায় রেখে দর্শনমূলক প্রেক্ষাপট অন্য উপন্যাসে কম পাওয়া যায়।

গ্রামবাংলার দলিল ও চরিত্রের বিশ্লেষণ এখানে থাবা বসায় আমাদের মানবিক অন্তরে, তৎকালীন সময়ের সামাজিক অবক্ষয় ধরা দেয় আমাদের চোখের সামনে। এই উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে পরিচালক গৌতম ঘোষ ‘মনের মানুষ’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন, যা পরবর্তীকালে বেশ কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কার এনে দেয় এবং বাংলা চলচ্চিত্রে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

প্রসঙ্গক্রমে ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহ বলেছিলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে বলার ধরনে ইতিহাসকে তুলে ধরছেন, একটা সময়ের পর আমাদের ঐতিহাসিকদের কথা কেউ শুনবে না এবং লেখা কেউ পড়বে না। ইতিহাস বলার এই দৃষ্টিকোণ অনন্য ও গ্রহণযোগ্য।’ এমনকি তাঁর কবিতাতেও আমরা চে গুয়েভারা, ইন্দিরা গান্ধী ও হাসন রাজার উল্লেখ পাই, যা এক নতুন সুনীলকে আবিষ্কার করে।

তাঁর কাকাবাবু-সন্তু সিরিজ ভায়োলেন্সবিহীন অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি হওয়ায় শিশু ও কিশোর বয়সী পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। 
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনা অনেক বেশি পাঠকের হৃদয়ের কাছাকাছি। মানুষের গভীর ও মানসিক দুঃখবোধ তাঁর লেখার মাধ্যমে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে। যে কারণে তাঁর অনেক লেখাই থেকে যাবে কালের নিয়মে।

তবুও, দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক ক্ষেত্র ও মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা তাঁর লেখায় কম পাওয়া যায়। মরুভূমিতে কোনো পথিক জল পেলো, তবুও যেন তার তৃষ্ণা মিটলো না। জীবনকে এক প্রকার ব্যালেন্স করেই লিখেছেন প্রচুর কবিতা।

ভাষা এখানে অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে ঘরোয়া। সত্তর দশকের উত্তাল পরিবেশ তাঁর লেখায় প্রভাব বিস্তার করেনি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি পরিধি বিস্তৃত যাপনে লিখে গেছেন। সুখপাঠ্য হলেও তাঁর গদ্যশৈলী কিছুটা হলেও সিরিয়াস সাহিত্য থেকে দূরে অবস্থান করেছে। 
 ‘কবিতা আমার ওষ্ঠ কামড়ে আদর করে
ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যায়
         ছাদের ঘরে
কবিতা আমার জামার বোতাম ছিঁড়েছে অনেক
হঠাৎ জুতোর পেরেক তোলে!’

‘প্রেমিকা’ কবিতায় এই আত্মচেতনা কবিতার প্রতি দায়বদ্ধ এক কবিকে বিশ্লেষণ করেছে। শব্দের বোধ এখানে অনেক বেশি নিজস্ব পরিধিতে সাবলীল। নিজস্ব অনুভূতি প্রাধান্য পেয়েছে। জীবনের দৃঢ় বিষয় এখানে লেন্সের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। তাঁর কবিতা স্বাভাবিক অর্থেই জীবনের অবতল ও উত্তল লেন্স।

শব্দকে যেখানে পরিমাপ করা যায় জীবন ও মনের এককে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন—‘শরীর ছেলে মানুষ, তার কত টুকিটাকি লোভ...’ টেক্সট এখানে আত্মনির্ভর। সচেতন ভাষা প্রয়োগ রক্তাক্ত করলেও তা মুছিয়েও দেয়। কিছু ক্ষেত্রে গ্লানিবোধের জন্ম দিলেও আক্ষেপের অবকাশ থাকে না। মসৃণ পথে হেঁটে চলে মর্মর মিছিল।

শারীরিক তীক্ষ্ণতাবোধ থাকলেও তা দূষিত করে না, বরং ভীষণ প্রাসঙ্গিক, যেন আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ও রোমান্টিসিজমের মেলবন্ধন। আমাদের মনে ছত্রাক জন্মায়, কবিতার ক্ষমতা থাকে তা জমতে না দেওয়ার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা সেই রশ্মি, যার ভেতরে মনে ছত্রাক জমতে না দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া মনস্তাত্ত্বিক স্তর ও আবেগের সন্ধানও আমরা পাই।

বাংলা কবিতার ও পত্রিকার ইতিহাসে ‘কৃত্তিবাস’ কোনো লিটল ম্যাগাজিন নয়, এটি একটি যুগ বলে চিহ্নিত হয়। প্রায় ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। আভঁ-গার্দ মুখপত্র হিসেবেও এই পত্রিকা প্রাধান্য পায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে তরুণদের লেখার মতন পত্র-পত্রিকার অভাব বোধ থেকেই মূলত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে ‘কৃত্তিবাস’ পা রাখে সাহিত্যের স্বীকারোক্তিমূলক ভাবার্থ অন্বেষণের পথে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বপ্নের পীঠস্থান এই ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার ব্যবসায়িক দিক থেকেও বড় হয়ে দেখা দেয় তরুণদের সাহিত্যচর্চায় নিষ্ঠা ও মেধাসম্পন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম বই আত্মপ্রকাশের আগেই এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়, ১৯৫৩ সালে এর প্রথম সংখ্যা ছেপে বেরোলে তরুণ সাহিত্যিকদের স্বপ্নবিন্দু হয়ে জীবনের বৃত্তে মিলে যায়।

 এই সংখ্যাটি সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ বাগচী এবং দীপক মজুমদার। সিগনেট প্রেসের তৎকালীন কর্ণধার দিলীপ কুমার গুপ্ত সহযোগিতা করেছিলেন পত্রিকা প্রকাশ এবং বিক্রির বিষয়ে, পরবর্তীকালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রধান সম্পাদক হয়ে ওঠেন।

প্রথম দিকে শুধু কবিতা ও কবিতাবিষয়ক গদ্য স্থান পেলেও পরবর্তীকালে দীপক মজুমদারের নাটিকা ‘বেদনার কুকুর ও অমল’, কমলকুমার মজুমদারের ‘সুহাসিনীর পমেটম’, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সচিত্র গল্প’, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ‘চাঁইবাসা চাঁইবাসা’ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয়। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বহুদিন ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কলকাতার কফি হাউসে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের, যার সূত্র ধরে পরবর্তী সময়ে বেলাল চৌধুরী ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সম্পাদনার কাজও সামলেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার জন্ম আকস্মিক হিসেবে মনে করলেও ও সম্পাদকীয়তে বিভিন্ন সময় তা উল্লেখ করলেও এই পত্রিকার জন্ম বাংলা লিটল ম্যাগাজিন জগতেও রেনেসাঁ নিয়ে আসে। উৎপলকুমার বসু, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, তারাপদ রায়, মোহিত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবিদের গুরুত্বপূর্ণ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।

তবে, এই পত্রিকার অন্য দিকটি হলো; সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রতিটি তরুণের লেখা পড়তেন এবং প্রকাশিত হলে তাঁদের চিঠি পাঠাতেন। এমনকি তাঁরা দপ্তরে আসলে তাঁদের লেখা সম্পর্কে মতামত জানাতেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও নতুন লিখতে আসা তরুণদের মাঝখানে একটি মর্মস্পর্শী ব্রিজ হয়ে ওঠে ‘কৃত্তিবাস’। স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দিব্যেন্দু পালিত, পিনাকী ঠাকুর, অংশুমান কর ও শ্রীজাত প্রমুখ সাহিত্যিক পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন।

স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার একটি সংখ্যায় সম্পাদকীয়তে তিনি লিখেছেন, ‘সুনীল স্মরণ সংখ্যার সম্পাদনা আমি করে উঠতে পারিনি। নভেম্বরের মাঝামাঝি আমি ছেলের সঙ্গে তার কর্মক্ষেত্রে চলে যাই। এবং কিছুদিন বাদে অসুখে পড়ি। কলকাতায় ফিরতে অনেক দেরি হল।

সেই সময়ে ‘কৃত্তিবাস’-এর দপ্তরের সবাই নিজেরাই ভার নিয়ে সব কাজ চালিয়ে দেয় এবং দিব্যেন্দু পালিত তাঁদের অনেক সাহায্য করেন। সম্পাদকীয়টি অনুলিখনের ভার নেয় পিনাকী। সে কাজ খুবই ভালোভাবে করেছে সে।

পুজোর আগে কৃত্তিবাসের দপ্তরে বেশ কিছু কবিতা এসেছে, এবং প্রবন্ধও। ফাইল খুলে দেখা গেলো সুনীল অনেক লেখা পড়ে, মনোনীত করে নিজের সই দিয়ে গেছেন। আর বাকি লেখাগুলো আমরা সবাই মিলে বেছে নিয়েছি, দেখে দিয়েছি। সামান্য কিছু লেখা থেকে গেলো, সেগুলি পরের সংখ্যায় যাবে।’

এই সম্পাদকীয় থেকে বোঝা যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে ‘কৃত্তিবাস’ কতটা কাছের ছিল। মৃত্যুর আগেও তিনি তাঁর কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগে করে রেখেছেন। মৃত্যুর পরেও ‘কৃত্তিবাস’ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে পড়ানোর সময়ে রামকিঙ্কর বেইজের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। শান্তিনিকেতন নিয়ে বহু কথাও তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। তিনি এখানে বাড়িও করেন, ‘একা এবং কয়েকজন’ নামের সেই বাড়িতে থেকে লেখা বহু উল্লেখযোগ্য রচনার স্বাদ পাঠক গ্রহণ করে। ইন্দ্রনাথ মজুমদারের বইয়ের দোকান ‘সুবর্ণরেখা’ ছিল তাঁর আড্ডার জায়গা।

১৯৬২ সালে অ্যালেন গিনসবার্গ কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার কিছুদিন পরেই ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে কর্মশালায় যোগ দিলে সেখানে সখ্য গড়ে ওঠে টি এস এলিয়ট ও স্টিফেন স্পেন্ডারের সঙ্গে। নিউ ইয়র্কে স্যুররিয়ালিস্টিক চিত্রশিল্পী সালভাদর দালির সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়। বিদেশে বহুদিন কাটালেও এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে প্রায়ই যাতায়াত করলেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন আদ্যোপান্ত বাঙালি, তাঁর লেখাতেও ছিল বাঙালিয়ানা। যদিও ফরাসি বান্ধবী মার্গারিটের সঙ্গে কীভাবে আলাপ হয়েছিল এবং তাঁর কথা আমরা বহু লেখা থেকে আবিষ্কার করতে পেরেছি।

সাহিত্যের জগতের নানা পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হলেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনন্য কীর্তি হলো, সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি থাকাকালীন ‘সাহিত্য আকাদেমি যুবা পুরস্কার’ প্রচলন।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন সর্বভারতীয় স্তরে একজন লেখককে প্রাধান্য পেতে গেলে সত্তর-আশি বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো, তরুণদের পরিসর এ ক্ষেত্রে বৃহত্তর হয়ে উঠবে। তাঁর দূরদর্শিতার ফসল হিসেবে আজ বহু তরুণের লেখালেখির পথ প্রশস্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত