ফারজানা সিদ্দিকা

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!
ফারজানা সিদ্দিকা

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
কবি তাঁর অফিসের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখতেন প্রেমিকাদের ছবি। লোকজন না থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন! প্রেমিকাদের দীর্ঘ চিঠি লিখতেন তিনি। প্রেমিকারাও লিখতেন তাঁকে। চিঠিরই তো যুগ ছিল তখন। আর ছিল অ্যানালগ টেলিফোন। সম্ভাব্য সুযোগ পেলে টেলিফোনে কথা বলতেন। কিন্তু কবি পছন্দ করতেন চিঠি লিখতে এবং চিঠি পেতে।
কোথায় হারালো সেসব চিঠি? ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিক’-এর শামসুর রাহমান সংখ্যায় কোনো পারিবারিক পত্র প্রকাশিত হয়নি। সেগুলো মূলত শামসুর রাহমানকে লেখা বিশিষ্ট লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের চিঠি। অর্থাৎ এসব পত্র শামসুর রাহমান নিজেই যত্নসহকারে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু তাঁর লেখা পত্র? ২০০৭-এ সময় প্রকাশন থেকে বদরুল আলম আমিনের সম্পাদনায় ‘শামসুর রাহমানের পত্র ও প্রেমপত্র’ গ্রন্থে মীজানুর রহমান ত্রৈমাসিকের শামসুর রাহমান সংখ্যায় প্রকাশিত পত্রগুলোর সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক পত্র এবং নয়খানা প্রেমপত্র যুক্ত হয়েছে। সেখানে মাত্র নয়খানা প্রেমপত্র আছে, নাম-পরিচয়হীন! অর্থাৎ কোনো এক প্রেমিকাকে লেখা কবির নয়খানা পত্র, তাতে প্রেমিকার নাম নেই, ছদ্মনামে বা বিভিন্ন উপমা দিয়ে প্রেমিকাকে সম্বোধন করেছেন তিনি। সেসব চিঠি কাকে লিখেছিলেন কবি? উৎসুক পাঠক হিসেবে তার খোঁজে গিয়েছিলাম কবি তুষার করের বাড়িতে। শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠক তিনি। বছরের পর বছর তিনি কবির সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হওয়া কবির লেখা সযত্নে রেখেছেন। এমনও হয়েছে, প্রকাশ হওয়া কোনো লেখার কপি কবির কাছে নেই, কিন্তু কবি জানেন, তুষার করের কাছে নিশ্চিত পাওয়া যাবে! বহু পুরোনো লেখা একসঙ্গে জড়ো করে কবির জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ঢাকার বাইরে কত অনুষ্ঠানে গেছেন কবির সঙ্গে। কবির বাড়িতে থেকেছেন দিনের পর দিন! এসব গল্প করবার সময় তুষার করের মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়! শিশুর সারল্য মাখা কণ্ঠে একদিন বললেন, ‘জানেন, কত রাত কবির সঙ্গে ঘুমিয়েছি আমি! মাঝরাতে জেগে উঠে আমি কবির ঘুমন্ত মুখ দেখতাম!’ বইয়ে প্রকাশিত নয়খানা চিঠির প্রাপকের খোঁজ তুষার কর জানবেনই এমন বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে তাঁর বাড়িতে যাওয়া বিফল হয়নি। সেই নয়টি চিঠির প্রাপকের পরিচয় জানেন তুষার কর। কবি ও চিঠির প্রাপকের গল্প করতে করতে ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন আরও কিছু কাগজপত্র। বারবার বাসা বদলাতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেক সংগ্রহ হারিয়ে গেছে তাঁর। সেসব নিয়ে আফসোস করতে করতে পুরোনো কাগজপত্রের ভেতর থেকে বের হলো একটা রঙিন ভাঁজপত্র! তারপর আরও কয়েকটা চিঠি!
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটা সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে নিতে চাই এ জন্য যে, কবির ‘প্রেমিক সত্তা’ কেমন হয় তা যেন পাঠক উপলব্ধি করে নিতে পারেন।
১৯৯১-এ হুমায়ুন আজাদের মুখোমুখি হন শামসুর রাহমান। কবিতা নিয়ে বিস্তর কথার ভিড়ে আসে কবিতায় প্রেমের প্রসঙ্গ। সেই সাক্ষাৎকার থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :
হুমায়ুন আজাদ: আপনার প্রেমের কবিতা কি শুধুই কল্পনার সৃষ্টি? না ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ?
শামসুর রাহমান : ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধই অধিকাংশ কবিতা।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার এ প্রেমের কবিতাগুলোর মধ্যে কজন প্রেমিকাকে খুঁজে বের করা যাবে?
শামসুর রাহমান : বেশ কয়েকজনকে।
হুমায়ুন আজাদ : আপনার প্রেমের কবিতায় আপনি কোন ধরনের আবেগ প্রকাশ করেন? অর্থাৎ হৃদয়ের আবেগের ওপর আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, না শারীরিক আবেগের ওপর?
শামসুর রাহমান : দুটোতেই।
হুমায়ুন আজাদ : আশাকরি আপনার অনেক প্রেমিকা ছিল। এঁদের মধ্যে কে সবচে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছে আপনাকে? অন্তত আপনি নামটা উল্লেখ করতে পারেন।
প্রথমটি না দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়টি...।
শামসুর রাহমান : এটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয়, আমি সবার কাছেই ঋণী।
শেষের প্রশ্নটিতে মনে হচ্ছে হুমায়ুন আজাদ কবির কথায় প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন, একাধিক প্রেমিকা এসেছিল তাঁর জীবনে। কোনো একজন প্রেমিকার নাম জানতে চাইছেন।
কিন্তু ‘এটা বলা মুশকিল’ বলে এড়িয়ে গেলেন কবি। এই ‘মুশকিল’ ব্যাপারটিই হলো আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকটের ফলেই কবিকে সতর্কে লুকোতে হয় প্রেমিকার নাম। আর প্রেমিকারা লুকিয়ে রাখেন প্রেমিক কবির প্রেমপত্র! কিংবা একজন মাত্র প্রেমিকা প্রেমিক কবির মৃত্যুর পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি পত্র ছাপতে দেন। অথচ সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনো প্রেমিকার নাম প্রকাশ না করলেও কী অনায়াসে ‘ঋণী’ হয়ে থাকেন তিনি!
১৯৯৪ সালে তরুণী প্রেমিকার উদ্দেশে লেখা আটটি কবিতা নিয়ে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হবে ‘গোধূলিতে হৃদয়ের ধ্বনি’ নামে একটি ভাঁজপত্রের কাব্যগ্রন্থ—সেই কাব্যগ্রন্থের খোঁজ জানবেন না কবির রচনাবলির সম্পাদকেরাও! তুষার কর সেই ভাঁজপত্রটিই মেলে ধরেছিলেন!
রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের এক আয়োজনে শিলাইদহে দেখা হয়েছিল তাঁদের। সেই তরুণী গান জানেন, আবৃত্তি করেন, অভিনয় জানেন। সেই প্রথম দেখা ও আলাপ।
তারপর ফিরে গেছেন যে যাঁর গন্তব্যে। একজন ঢাকায়, অন্যজন রাজশাহী। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত পত্র বিনিময়ে খুব একটা সময় লাগেনি। মাঝে মাঝে টেলিফোনে কথাও বলেছেন। এমনকি, একা একা কোনো একটা বাহানা করে বিমানে উঠে কবি চলে গেছেন রাজশাহী! লিখে ফেলেছেন রাজশাহীর বিমানবন্দর নিয়ে কবিতা! ভাঁজপত্রের একটি কবিতার নাম ‘বিমান বন্দর’। ‘বিমান বন্দরটার নেই কোনো বাহারি আদল,/ নেহাতই শাদামাটা; অনুজ্জ্বল/ দরজার কাছে জলকণাময়, [...] সেই বিমান বন্দর বন্দনীয়/ এবং চিরপ্রিয়/ হয়ে ওঠে আমার শুধু তুমি ছিলে ব’লে,/ আমাকে স্পর্শ করেছিলে ব’লে কথাচ্ছলে।’ ভাঁজপত্রের আরেকটি কবিতায় আছে রাজশাহীর ভূ-প্রকৃতির চিহ্ন। ‘বড় রুখা সুখা সেই শহর, অথচ সেখানে যাওয়ার সাধ আমার চূড়াস্পর্শী। কবিতার নাম ‘আলোকলতার মূল’। কবির সঙ্গেও ঢাকায় দেখা করতে এসেছিলেন প্রেমিকা। চারদিকে সতর্ক নজর!
ততদিনে কবি জাতীয় ব্যক্তিত্ব। পথেঘাটে দেখা করা মুশকিল। এমনকি নিজের বাড়িতে লেখার ঘরেও। বাড়ির লোকেরাও পাহারা দেয় তাঁকে! আরও বহু কবিতা অনুরাগীর বেশ ধরে প্রেমিকা আসেন কবির বাড়িতে, সামান্য সময়ের জন্য দেখা দিতে পারেন। সেটুকু সময়ের রেশ রয়ে যায় ভাঁজপত্রের কবিতায়, ‘যাচ্ছো, যাও।/ পথ রোধ করে দাঁড়াবার/ নেই অধিকার আমার।/ তোমার চ’লে-যাওয়া/ জানে দূর মফস্বলগামী বাস,/ প্রত্যুষের হাওয়া,/ লেজঝোলা পাখি,/ সবচেয়ে বেশি জানে/ এ কবির বিদীর্ণ হৃদয়।’ কবিতার নাম ‘যাচ্ছো, যাও’। এমনই সেই নজরদারি যে বাড়িতে বসে প্রেমিকার চিঠির উত্তর দিতে পারেন না কবি! কবির চিঠি বা খোঁজ না পেলে তুষার করকেই চিঠি লিখেন কবির প্রেমিকা। ২৯.০৩.১৯৯৪ তারিখযুক্ত জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের রাইটিং প্যাডে কবির ওপর সেই নজরদারির কথা প্রেমিকা লিখছেন, ‘ [...] অথচ কী আশ্চর্য জানেন?
কবি, আমার কবি, এখন এই ৬৬/বয়সে এসে কড়া শাসনের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন, দগ্ধ। বিখ্যাত এই কবির; একজন লেখকের লেখার স্বাধীনতা থাকবে না? ভাবতে পারেন?
লিখতে বসলে পাহারা দেওয়া হয়, কাকে লিখছেন [,] কারণ কি শুনবেন? শুনতে কারো মন্দ লাগবে না! আপনারও না। কারণ? ‘ভালোবাসা’ সমাজে হাতে গোনা ক’জন এর বেশি যেন কাউকে ভালো না বাসেন। তবে হ্যাঁ, পুরুষ হলে আলাদা কথা [,] কোনো মেয়েদের নয়। মেয়েদের ভালোবাসলে মহা অন্যায় হয়। পাপ হয়। মেয়েরা কি ভালোবাসার কোনো বস্তু হ’ল? তুষার’কে ভালোবাসতে দোষ নেই মানা নেই, তমা’কে বাসলেই যত বিপত্তি। [...]’ ২২.৮.৯৬ এ তুষার করকে শেষ চিঠি লেখেন কবির প্রেমিকা। তত দিনে তাঁর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে! বাবর আকস্মিক মৃত্যু, প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়া, পুত্রসন্তান নিয়ে চাকরির সন্ধান, এমনকি ঢাকায় বিজ্ঞাপনের কাজের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সব শেষে দ্বিতীয় বিয়ের খবর। এই চিঠিতে কবি সম্পর্কে একটি বাক্যও নেই!
১৯৯৪-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রেম ঘিরে কেবল এই ভাঁজপত্রের আটটি কবিতাই নয়, কবির এই পর্বের প্রেমে আরও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের এই প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা কবির শেষ কবিতা কোনটি? ‘উত্তর’? ‘তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো, এই আকাশ আমার।’ প্রেমিকাকে ‘তমা’ নামেই সম্বোধন করতেন কবি। ‘উত্তর’ কবিতাটি ১৯৯৫-এ প্রকাশিত ‘এসো কোকিল এসো স্বর্ণচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে। কিন্তু তত দিনে কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর নতুন প্রেমিকাকে!

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

পাঠকমাত্রই জানেন শামসুর রাহমানের জীবনে প্রেম ও কবিতার অবস্থান সমান্তরাল। এ নিয়ে লুকোছাপা নেই তাঁর। প্রেমে পড়ার, প্রেমে জড়িত থাকার বা বিচ্ছেদে নিদারুণ বেদনার কথা যতটা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজৈবনিক রচনায়, এমনকি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায়।
২৯ অক্টোবর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫