Ajker Patrika

ডি এইচ লরেন্সের বাড়ির খোঁজে

আরিফ আবেদ আদিত্য
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ৩০
ডি এইচ লরেন্সের বাড়ির খোঁজে

নটিংহ্যাম শহরে নেমেই মাথার ভেতরে ঘুরতে থাকে ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড। আগের রাতে শেফিল্ডে ছিলাম সহকর্মী মামুনের বাসায়। রাতেই দুজনে ট্রেনের টিকিট কেটে রাখি নটিংহ্যামে যাওয়ার। দূরত্ব বেশি না, মাত্র এক ঘণ্টার পথ। সকাল ৯টার ট্রেন ধরব বলে আধা ঘণ্টা হাতে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, শেফিল্ড শহরের খাঁড়া-ঢালু পথ বেয়ে রেলস্টেশনে যেতে না যেতেই মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন ছেড়ে গেল। দুজনের তখন   আফসোস, আরও এক ঘণ্টা পর অন্য ট্রেনের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।

প্রথম সেমিস্টার শেষ করে ২২ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু করি। অক্টোবরে বিলাতে আসার পর পড়াশোনার চাপ ও অসহনীয় ঠান্ডায় নিজ শহর ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রথমে গন্তব্য ঠিক করি ম্যানচেস্টার, সেখান থেকে বিটলসের শহর লিভারপুল; তারপর শেফিল্ড ঘুরে নটিংহ্যাম—শেষে লন্ডন হয়ে নিজ শহর ক্যান্টাবরি প্রত্যাবর্তন। এই পরিকল্পনা মোতাবেক ক্যান্টাবরি ওয়েস্ট স্টেশন থেকে ম্যানচেস্টারের টিকিট কাটি। আগেই স্টুডেন্ট কার্ড দিয়ে রেল কার্ড করে রেখেছিলাম বলে রেলে ভাড়া তিন ভাগের এক ভাগ কম হয়। ইংল্যান্ডে রেলের ভাড়া আর বিমানভাড়া প্রায় কাছাকাছি। অনেক সময় বিমানভাড়া রেলের চেয়ে কম হয়। তবে এসি বাসের ভাড়া সবার নাগালে—স্বল্প খরচ। যাতায়াতে ট্রেন সবচেয়ে আরামদায়ক। যাই হোক, এবার ইংল্যান্ডের কয়েকটি শহর ভ্রমণের গল্প করা যাক।

ডি এইচ লরেন্সের বাড়ির পাশের গলি। ছবি: লেখকের সৌজন্যেযখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, হলুদ মলাটের একটা অনুবাদ বই, বিশ টাকা দাম ছিল হয়তো, প্রায়শই নীলক্ষেতে ফুটপাতে দেখা মিলত। কেমন একটা নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ গন্ধ মিশ্রিত আবহ কাজ করত বইটাকে ঘিরে। তখন প্রথম বর্ষের দিকে বয়ঃসন্ধি পেরিয়েছি মাত্র—বইটার নাম ও প্রচ্ছদের মধ্যেই কেমন যেন একধরনের ‘নিষিদ্ধের’ প্রতি গোপন আকর্ষণ কাজ করত। আবার সামাজিক ট্যাবুও মাথার মধ্যে বিরাজ করত। ফলে নীলক্ষেতের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে বইটি হাতে নিয়ে সন্তর্পণে উলটে-পালটে দেখতাম আর মনের ভেতরে অজানা উত্তেজনা বোধ করতাম—অবচেতন মনে কাজ করত, না জানি কী আছে এর ভেতরে!

 

নিষিদ্ধ বই বা ম্যাগাজিনগুলো তখন ছেলেদের হলে পালাক্রমে পড়া হতো। একজনের পড়া শেষ হলে আরেকজন নিয়ে যেত। বলছি সেই বছর পনেরো-বিশ আগের কথা। তখন কিছু লেখকই ছিলেন, যাঁরা উদ্ভিন্ন যৌবন বা নিষিদ্ধ রোমাঞ্চকে উপলক্ষ করে লিখতেন। বইয়ের নামগুলোও ছিল চমকপ্রদ। যায়যায়দিনের বিশেষ সংখ্যাগুলো (যেমন শাড়ি সংখ্যা) ছিল তখন তুমুল জনপ্রিয়। নব্বইয়ের দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সাহিত্যের একশ্রেণির পাঠক তৈরি হয়েছিল এই আপাতত গোপন রোমাঞ্চ আস্বাদন অনুরাগী।

ডি এইচ লরেন্সের বাড়িতে যাওয়ার ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটের ফলক। ছবি: লেখকের সৌজন্যে

যাই হোক, একদিন বইটা কিনে টুপ করে ব্যাগে ভরে নিই। সেই হলুদ মলাটের বইটি ছিল ডি এইচ লরেন্সের (১৮৮৫-১৯৩০) ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’। এসব বই প্রকাশ্যে বহন করাও যেন অস্বস্তিকর। কারণ, যদি কেউ দেখে ফেলে! রোমাঞ্চের জায়গা থেকে বইটি পড়েছি ঠিকই, কিন্তু তখন জানতাম না এই বইয়ের লেখক বিশ্বসাহিত্যে উপন্যাসের ধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। সাহিত্য যেহেতু মানুষের জীবনকেই অনুকরণ করে, সেহেতু মানুষের জৈবিকতা উপেক্ষা করার উপায় নেই। মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে যৌনতা জড়িত—স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক। ডি এইচ লরেন্স মানুষের অন্ধকার আদিম প্রবৃত্তিকে এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি শ্রেণিসংগ্রামকে। আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্রিয়াকলাপকে নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহভাবে তুলে ধরা। তাই লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ প্রকাশের পর সাহিত্যের শ্লীলতা ও অশ্লীলতা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তবে শিল্প-সাহিত্যের চেয়ে সামাজিক শ্রেণিবিভাজন তুলে ধরে লরেন্স ব্রিটিশ সমাজকাঠামোকে ভেঙে দিয়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে উঁচু শ্রেণির সঙ্গে নিচু শ্রেণির কোনো সম্পর্ক হতে পারে না—না মানসিক, না দৈহিক। ইংল্যান্ডের অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় অত্যন্ত কঠোর ও রক্ষণশীল মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। লরেন্স ব্রিটিশ রক্ষণশীল সমাজকে আঘাত করেছিলেন। ফলে দেখা যায়, ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ ইতালিতে ১৯২৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ইংল্যান্ডে অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিল ৩২ বছর; পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ১৯৬০ সালে প্রথম প্রকাশেই এটি প্রায় ২ লাখ কপি বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, এ সময় বিশ্বব্যাপী এটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হতে থাকে—বাংলাদেশেও তখন ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’ সহজলভ্য হয়। অথচ ডি এইচ লরেন্সের জীবিতকালে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল এই গ্রন্থ। যদিও এই উপন্যাসের থেকেও তাঁর অন্যান্য লেখা সমসাময়িক লেখক ও সমালোচকদের কাছে অধিক সমাদৃত ছিল। যেমন : ‘সন্স অ্যান্ড লাভারস’, ‘দ্য রেইনবো’, ‘উইমেন ইন লাভ’ ইত্যাদি।

বিখ্যাত ৮/এ বাড়ির প্রবেশদ্বার, যেখানে ডি এইচ লরেন্স জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সাহিত্যে ডি এইচ লরেন্সের অতি রগরগে বয়ন বা প্রথাবিরোধী সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করার পেছনে কারণ ছিল তাঁর স্বকাল ও স্বসমাজের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও শ্লাঘাস্বরূপ। অন্যদিকে, ঔপনিবেশিক শাসনে পিষ্ট পরাধীন বাংলার সমাজব্যবস্থা ব্রিটিশ আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমান্তরাল ছিল না। ফলে ‘আধুনিক’ বাংলা সাহিত্যের পথ নির্মাণে বাংলার সমাজকাঠামো কতটা প্রস্তুত ছিল, তা প্রশ্নসাপেক্ষ বৈকি! কারণ, ইংল্যান্ডের প্রাক শিল্পবিপ্লব থেকে শিল্পবিপ্লব যুগে প্রবেশের সময় যে শ্রেণিসংগ্রাম ব্রিটিশ সমাজে দেখা গিয়েছিল, ডি এইচ লরেন্স তা-ই বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অথচ পূর্ব বাংলায় তেমন কোনো সমাজ রূপান্তরের বিপ্লব পরিলক্ষিত হয় না। অথচ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা অনুকরণ হতে দেরি করেনি। যদিও ‘আধুনিক’ প্রপঞ্চের ধারক লেখকদের অনেক সমালোচক সময়ের চেয়ে অগ্রগামী চিন্তক হিসেবে আখ্যা দিতে চান। কিন্তু সমাজ ও সাহিত্য যদি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধরা হয়, তবে এই বক্তব্যে ফাঁক থেকে যায়।

বাড়ির দেয়ালে লাগানো ডি এইচ লরেন্সের জন্মের বৃত্তান্ত। ছবি: লেখকের সৌজন্যেযাই হোক, ডি এইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার’-এর পর এই ধারার বাংলা ভাষায় রচিত উপন্যাসগুলো পড়া শুরু করি। একে একে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’, বুদ্ধদেব বসুর ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’, শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’, মাহবুব-উল আলমের ‘মফিজন’, আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সত্যের মতো বদমাশ’ ইত্যাদি নিষিদ্ধ(!) উপকরণে সন্নিবিষ্ট বই পড়া হয়ে যায়।

কোনায় অবস্থিত ডি এইচ লরেন্সের বাড়ি। ছবি: লেখকের সৌজন্যেডি এইচ লরেন্সের বাড়ি খোঁজার গল্পে ফিরে আসা যাক। আমরা পরের ট্রেনেই লরেন্সের জন্ম শহরে চলে আসি। এখানে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কয়েকজন সহকর্মী পিএইচডি গবেষণারত আছেন। তাঁদের অপেক্ষায় রেখে নটিংহ্যাম রেলস্টেশনে নেমেই ট্রামে টিকিট কেটে শহরের 'আপার পার্লামেন্ট স্ট্রিট' নামক স্থানে চলে আসি। এই জায়গা থেকে রেইনবো বাসে করে ৪০ মিনিটে চলে যাই ৮/এ, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, ইস্টউড, যে বাড়িতে ডি এইচ লরেন্স জন্মেছিলেন।

নটিংহ্যামশায়ারের ইস্টউড ছোট্ট ছিমছাম শহর। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় কয়লাশ্রমিকদের আবাস ছিল এই এলাকা। ইংল্যান্ডের প্রাক্‌-শিল্পবিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে এই শহর। বাস থেকে নেমে গুগল ম্যাপ ধরে কয়েক মিনিট হাঁটতেই পেয়ে যাই লরেন্সের বাড়ি। নীলক্ষেতে দেখা একটি বইয়ের লেখকের বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না। মূল রাস্তা থেকে নেমে অপর পাশে হাতের ডান দিকে এগোতেই কিছুটা ঢালু পথ, অনেকটা গলির মতো। এই রাস্তার মাঝামাঝি আরেকটি গলির কোনায় লাল ইটের রঙে দাঁড়িয়ে আছে সেই ৮/এ বাড়িটি। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। এখান থেকে সোজা সামনে এগিয়ে গেলে ঢালু পথ একেবারে নেমে গেছে নিচে পাহাড়ের গোড়ায়।  সেখানে উপত্যকার মতো পাহাড়ি ঝিড়িপথ, জনমানুষশূন্য বনবনানী। সুদূরে তাকালেই দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের সারি আর ঘন অরণ্য। বাড়ির চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে ভেতরের প্রবেশদ্বারের চৌকাঠে বসে বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। বর্তমানে এটি লেখকের নামে স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে।

ডি এইচ লরেন্সের বাড়ির পেছনে ঢালু রাস্তা ধরে দূরে অরণ্যে আচ্ছাদিত পাহাড়। ছবি: লেখকের সৌজন্যেডি এইচ লরেন্স এই প্রাকৃতিক পাহাড়ঘেরা পরিবেশেই বেড়ে উঠেছিলেন। কয়লাখনি ও শ্রমিক অধ্যুষিত নটিংহ্যামশায়ারের এই জীবন ডি এইচ লরেন্সের ততটা সুখকর ছিল না। মাত্র ষোলো বছর বয়সে এই শহর ছেড়ে যাওয়ার পর বাকি জীবন কেটেছে বোহেমিয়ান। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় যাযাবর জীবন কেটেছে তাঁর। শারীরিক অসুস্থতা ছিল নিত্যসঙ্গী। যেখানেই যান না কেন, শৈশবের শহর নটিংহ্যামশায়ারকে তিনি ভুলতে পারেননি। তাঁর সাহিত্যিক জীবনকে তুমুল প্রভাবিত করেছে এই শহর। ফলে লরেন্সের অধিকাংশ উপন্যাসে পাওয়া যায় এই শহরের উপভাষা ও প্রতিচ্ছবি। শান্ত-নিরিবিলি ছোট্ট মহল্লার সেই ঢালু পথ ধরে দূরের অরণ্যের দিকে নেমে গেলাম কিছুটা। মনে মনে ভাবছিলাম, লরেন্সও কি এই রাস্তা ধরে হাঁটত একসময়? হয়তো! হয়তো না! হয়তো!

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত