দীপংকর গৌতম

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়। আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি নারায়ণগঞ্জ যেতে হাকিমাবাদের পীরের খানকা শরিফ, বরদেশ্বরী কালীবাড়ি-মানসিংহ যাত্রাবাড়ীতে যাত্রা বিরতি দিয়ে যে দিঘিটা তাঁর সেনাবাহিনী দিয়ে কাটিয়ে ছিলেন, তার পাড়ে বসে ইতিহাস শুনেছি। ইতিহাসের পাঠ নিতে নিতে তাঁর ঝোলা ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত ‘তবক দেওয়া পান’। একটা স্টিলের বাক্স। সেটার যে কত তলা, তা বোঝা দায়। একেক পার্ট থেকে একেক রকমের সুগন্ধি মসলা। আমি খুব পছন্দ করতাম তাঁর পান খেতে। একবার এক ঘটনা ঘটল—তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির হরতাল। আমি শাহবাগ মোড়ে, পিকেটিং চলছে। হঠাৎ দেখি আসাদ চৌধুরী যাচ্ছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে স্বভাবসুলভভাবে বললাম, ‘পান খাব তো।’
তিনি বললেন, ‘এখন পুলিশ তাড়া করলে?’
আমি বললাম, ‘আসাদ চৌধুরীকে পুলিশ কিছু বলবে না।’
তিনি শিশুতোষ হাসি দিয়ে ঝোলা ব্যাগ থেকে বের করে আনলেন স্টিলের হাজার দুয়ারি বাক্স। তারপর পান বানানো শুরু হতে হতে টিয়ার গ্যাস। পুলিশ এসে বলছেন, ‘আপনারা কী করছেন?’
আসাদ চৌধুরী শান্ত গলায় বললেন, ‘একটু পান দিয়েই চলে যাব।’
পান দিয়ে আমার হাত ধরে বললেন, এখন ওদিকে যাবে না। চলো পিজি মার্কেটে। আমি ওনার সঙ্গে গিয়ে আবার পিকেটিংয়ে ফিরে এলাম।
আসাদ চৌধুরীর সাধারণ জীবনযাপন দেখে মনে হতো না কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তিনি। উর্দু ও ফারসি ভাষা নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল অসীম। তাঁর মাধ্যমেই জানতে পারি ঢাকায় উর্দু কবিদের একটি সোসাইটি আছে। তাঁদের মধ্যে অনেক ভালো কবি আছেন। মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকায় আমি গিয়েছি কয়েকবার। কবি আসাদ চৌধুরী ছিলেন তাঁদের আত্মীয়। কবি আসাদ চৌধুরী তাঁদের সঙ্গে উর্দুতে বাতচিত করতেন। কাঁধে ঝোলা, ঝাঁকড়া চুল। অনেক মসলা দিয়ে পান খাওয়ায় ঠোঁট থাকত লাল। আর সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ছাড়া তাঁকে ভাবা যায়? চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ঢাকা শহরে কবি, বাংলাদেশে মাটির মানুষের কবি আসাদ চৌধুরী হেঁটে যাচ্ছেন।
নিরাবেগ বোঝাপড়া নিয়ে হাঁটছেন। সেই ঢিলেঢালা রঙিন শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা প্রেম, দ্রোহ ও প্রতিবাদের কবি আসাদ চৌধুরী হাঁটছেন, শহরজুড়ে তাঁর পদধ্বনির মুখরতা। শুদ্ধ বাংলায় দরাজ কণ্ঠে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন কবি আসাদ চৌধুরী। জীবনে কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচয়ের অন্ত ছিল না। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। সাহিত্যে তিনি গণমুখী, নান্দনিক ও রোমান্টিক বিন্যাস গড়েছেন। পরিচয় উঠে এসেছে প্রাজ্ঞ, আলোচক, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, আরও কত কী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ কোনো ছোট ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর কবিতায় যে দহন, যে প্রতিবাদ, পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা, কবিতায় তিনি তা লিখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার লোকায়ত জীবন—সবই তাঁর লেখায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখা ‘বারবারা বিডলারকে’ কবিতা পড়লে বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাঙালির ওপর কী ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে, কবিতায় সে কথা লিখতে লিখতে না জানি এই মানুষটি কতবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ‘আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা/তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়/বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো/ওটা একটা জল্লাদের ছবি/পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠান্ডা মাথায় সে হত্যা করেছে/মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সে গলা টিপে হত্যা করেছে/অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ/বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়/দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে/গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস, মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি/সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয় থেঁতলে দেয়।’
ঠিক একইভাবে এই কবিতায় যখন আরেক ছত্রে যাই, তখন বুকটা শীতল হয়ে আসে। হাত চলে না। কবিতার কত শক্তি, ভাষা ব্যবহারে কী মুনশিয়ানা, মাটি ও মানুষের প্রতি কতটা ভালোবাসা বহন করতেন তিনি, তা তাঁর কবিতায় বোঝা যায়—‘টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা?
গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকে দেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে/আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল/সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে/তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে তিনি শিউরে উঠবেন/অভিধান থেকে নয় আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী/জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার/আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো।’ এর প্রতিটি লাইন যেকোনো মানুষকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানিয়ে দেবে। তাঁর কবিতার শাণিত তেজ কয়েক লক্ষ বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী। প্রতিটি কবিতার কাঠামো-বিন্যাস, ভাষার সজীবতা, উৎপ্রেক্ষা অনবদ্য। বাঙালির জন্ম জড়ুল মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যত সেরা কবিতা লেখা হয়েছে, আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই সে তালিকায় পড়বে বলে বিশ্বাস করি। আরেকটি কবিতা ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ তার কাঠামোটাই আলাদা। তিনি লিখেছেন, ‘কুকুর বেড়াল থাবা হাঁকায়/ফোঁসে সাপের ফণা/শিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায় জ্বলে বালির কণা/আগুন ছিলো মুক্তি সেনার/স্বপ্ন ঢলের বন্যায়/প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে/কাঁপছিলো সব অন্যায়।’ মুক্তিযোদ্ধা কবি তাঁর কবিতায় পশুপাখি, মাছ, বালুর কণা সবই যে যুদ্ধে শামিল হয়েছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে যেসব উপমা-উৎপ্রেক্ষা ব্যবহার করছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে কবিতায়। তাঁর কবিতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া অনন্য সম্পদ। কবিতা যে সাহিত্যে কত বড় শক্তিশালী হাতিয়ার, তা ভালো কবিতা পড়লে বোঝা যায়। চেতনা জাগানিয়া কবিতা পড়লে বোঝা যায়। ভাষা ব্যবহারের কৌশল শক্তি কতটা, সেটা নিবিষ্ট চিত্তে বোঝা সহজ হয়। কবিতার মধ্য দিয়ে ইতিহাস-দুঃসময়ের কালপর্ব কত মোহনীয় শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, সেটা আসাদ চৌধুরীর কবিতায় প্রতীয়মান।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য ১০১ জন বাংলাদেশি কর্মী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় সম্ভবত প্রজন্ম’৭১ নামে সংগঠনটি একটা পোস্টার প্রকাশ করেছিল। ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ এ দুটো লাইন ছিল সেই পোস্টারের গায়ে লেখা। কী শক্তিশালী দুটি লাইন, এর মধ্য দিয়ে যে অস্ফুট আর্তনাদ লুকানো, তা তাঁরাই জানে, একাত্তরের পাকিস্তানি বর্বরতা যাদের সামান্যও ছুঁয়েছে। এই লাইন দুটো আর পোস্টারটি যেন চেতনার গহিনে আজও গেঁথে আছে।
পরে জেনেছি, আসাদ চৌধুরীর ‘শহীদদের প্রতি’ কবিতা থেকে লাইন দুটি নেওয়া হয়েছিল। সেই কবিতার লাইনগুলো ছিল, ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ? শেষ কথাটি সুখের ছিল? ঘৃণার ছিল? নাকি ক্রোধের, প্রতিশোধের, কোনটা ছিল?’
বাংলার সূর্যসন্তানদের হত্যা করে একেকটি পরিবারের সদস্যদের বুকে স্বজন হারানোর দগদগে ক্ষতই শুধু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, দেশকে করা হয়েছিল মেধাশূন্য। পরিকল্পিত এই হত্যার পেছনে ছিল পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী আর কার্যকর করেছে এদেশীয় দালালেরা। যাদের ফাঁসির দাবিতে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ। গড়ে তোলা হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। তারপরও শহীদ পরিবারগুলোর খবর কে রাখে? কেউ কি রাখে? রায়ের বাজারের একাত্তরের বধ্যভূমি দেখলে কি মনে হয় না একদম ভেতর থেকে কথাটি লিখেছেন আসাদ চৌধুরী। তাঁর আরেকটি কবিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নারীদের চিরায়ত স্বভাব। আর তাঁদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়া পাকিস্তানি হার্মাদদের নারকীয়তা। ‘রিপোর্ট ১৯৭১’ নামে এ কবিতায় তিনি লিখেছেন—‘প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল/বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম/আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।/এসব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে/বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়/বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে/তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে শুধু মুখ টিপে হাসে/প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে/কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা/সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী/অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার/সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা/সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে/আমি তার সুরকার তার রক্তে স্বরলিপি লিখি/মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী/গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়/মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে ঝিয়ে/খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো, অস্ফুট গোলাপকলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে/কার কী বা আসে যায়।’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের কাহিনি আর কত বলা যায়? একজন কবি কতটা বেদনা নিয়ে এই ইতিহাস লিখেছেন কাব্যের ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে। এই ইতিহাসের কথাকার, গণযুদ্ধের জনযোদ্ধা কবি আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত। প্রাণবান চিরতরুণ এই কবি। কবি আসাদ চৌধুরী কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টরন্টোতে বসবাস করছিলেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন অটোয়ায়। মাসখানেক আগে কবি আসাদ চৌধুরীর এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়। এরপর তিনি বাসায় ছিলেন। হঠাৎ তাঁর শরীর খারাপ করলে কানাডার ওসোয়ার হাসপাতালটিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব জটিল অবস্থা ছিল কিন্তু তারপরে? বুধবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ৩টায় কানাডার টরন্টোর আসোয়া শহরের লেকরিচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি লোকান্তরিত হন। বাংলাদেশে এ খবর আসার পরে শোকে যেন মুষড়ে ওঠে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাঁর কবিতা ‘সত্য ফেরারী’র মতো বলতে ইচ্ছে করে—‘কোথায় পালালো সত্য?
দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তো? রেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে, গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,
টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে, নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো।’ মানুষ তাকে অতিক্রম করে তার কাজ দিয়ে। মানুষ মারা যাবে, এটাই সত্য। কিন্তু বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্য দিয়ে। সেদিক থেকে আসাদ ভাইকে ভুলবে না কেউ। দুহাতে লিখেছেন তিনি বহুমাত্রিক লেখা। তাঁকে ভোলার নয়। কবি আসাদ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন তাঁর অনন্য সৃষ্টির মধ্যে।

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়। আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি নারায়ণগঞ্জ যেতে হাকিমাবাদের পীরের খানকা শরিফ, বরদেশ্বরী কালীবাড়ি-মানসিংহ যাত্রাবাড়ীতে যাত্রা বিরতি দিয়ে যে দিঘিটা তাঁর সেনাবাহিনী দিয়ে কাটিয়ে ছিলেন, তার পাড়ে বসে ইতিহাস শুনেছি। ইতিহাসের পাঠ নিতে নিতে তাঁর ঝোলা ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত ‘তবক দেওয়া পান’। একটা স্টিলের বাক্স। সেটার যে কত তলা, তা বোঝা দায়। একেক পার্ট থেকে একেক রকমের সুগন্ধি মসলা। আমি খুব পছন্দ করতাম তাঁর পান খেতে। একবার এক ঘটনা ঘটল—তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির হরতাল। আমি শাহবাগ মোড়ে, পিকেটিং চলছে। হঠাৎ দেখি আসাদ চৌধুরী যাচ্ছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে স্বভাবসুলভভাবে বললাম, ‘পান খাব তো।’
তিনি বললেন, ‘এখন পুলিশ তাড়া করলে?’
আমি বললাম, ‘আসাদ চৌধুরীকে পুলিশ কিছু বলবে না।’
তিনি শিশুতোষ হাসি দিয়ে ঝোলা ব্যাগ থেকে বের করে আনলেন স্টিলের হাজার দুয়ারি বাক্স। তারপর পান বানানো শুরু হতে হতে টিয়ার গ্যাস। পুলিশ এসে বলছেন, ‘আপনারা কী করছেন?’
আসাদ চৌধুরী শান্ত গলায় বললেন, ‘একটু পান দিয়েই চলে যাব।’
পান দিয়ে আমার হাত ধরে বললেন, এখন ওদিকে যাবে না। চলো পিজি মার্কেটে। আমি ওনার সঙ্গে গিয়ে আবার পিকেটিংয়ে ফিরে এলাম।
আসাদ চৌধুরীর সাধারণ জীবনযাপন দেখে মনে হতো না কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তিনি। উর্দু ও ফারসি ভাষা নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল অসীম। তাঁর মাধ্যমেই জানতে পারি ঢাকায় উর্দু কবিদের একটি সোসাইটি আছে। তাঁদের মধ্যে অনেক ভালো কবি আছেন। মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকায় আমি গিয়েছি কয়েকবার। কবি আসাদ চৌধুরী ছিলেন তাঁদের আত্মীয়। কবি আসাদ চৌধুরী তাঁদের সঙ্গে উর্দুতে বাতচিত করতেন। কাঁধে ঝোলা, ঝাঁকড়া চুল। অনেক মসলা দিয়ে পান খাওয়ায় ঠোঁট থাকত লাল। আর সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ছাড়া তাঁকে ভাবা যায়? চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ঢাকা শহরে কবি, বাংলাদেশে মাটির মানুষের কবি আসাদ চৌধুরী হেঁটে যাচ্ছেন।
নিরাবেগ বোঝাপড়া নিয়ে হাঁটছেন। সেই ঢিলেঢালা রঙিন শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা প্রেম, দ্রোহ ও প্রতিবাদের কবি আসাদ চৌধুরী হাঁটছেন, শহরজুড়ে তাঁর পদধ্বনির মুখরতা। শুদ্ধ বাংলায় দরাজ কণ্ঠে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন কবি আসাদ চৌধুরী। জীবনে কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচয়ের অন্ত ছিল না। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। সাহিত্যে তিনি গণমুখী, নান্দনিক ও রোমান্টিক বিন্যাস গড়েছেন। পরিচয় উঠে এসেছে প্রাজ্ঞ, আলোচক, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, আরও কত কী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ কোনো ছোট ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর কবিতায় যে দহন, যে প্রতিবাদ, পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা, কবিতায় তিনি তা লিখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার লোকায়ত জীবন—সবই তাঁর লেখায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখা ‘বারবারা বিডলারকে’ কবিতা পড়লে বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাঙালির ওপর কী ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে, কবিতায় সে কথা লিখতে লিখতে না জানি এই মানুষটি কতবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ‘আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা/তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়/বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো/ওটা একটা জল্লাদের ছবি/পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠান্ডা মাথায় সে হত্যা করেছে/মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সে গলা টিপে হত্যা করেছে/অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ/বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়/দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে/গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস, মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি/সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয় থেঁতলে দেয়।’
ঠিক একইভাবে এই কবিতায় যখন আরেক ছত্রে যাই, তখন বুকটা শীতল হয়ে আসে। হাত চলে না। কবিতার কত শক্তি, ভাষা ব্যবহারে কী মুনশিয়ানা, মাটি ও মানুষের প্রতি কতটা ভালোবাসা বহন করতেন তিনি, তা তাঁর কবিতায় বোঝা যায়—‘টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা?
গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকে দেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে/আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল/সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে/তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে তিনি শিউরে উঠবেন/অভিধান থেকে নয় আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী/জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার/আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো।’ এর প্রতিটি লাইন যেকোনো মানুষকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানিয়ে দেবে। তাঁর কবিতার শাণিত তেজ কয়েক লক্ষ বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী। প্রতিটি কবিতার কাঠামো-বিন্যাস, ভাষার সজীবতা, উৎপ্রেক্ষা অনবদ্য। বাঙালির জন্ম জড়ুল মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যত সেরা কবিতা লেখা হয়েছে, আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই সে তালিকায় পড়বে বলে বিশ্বাস করি। আরেকটি কবিতা ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ তার কাঠামোটাই আলাদা। তিনি লিখেছেন, ‘কুকুর বেড়াল থাবা হাঁকায়/ফোঁসে সাপের ফণা/শিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায় জ্বলে বালির কণা/আগুন ছিলো মুক্তি সেনার/স্বপ্ন ঢলের বন্যায়/প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে/কাঁপছিলো সব অন্যায়।’ মুক্তিযোদ্ধা কবি তাঁর কবিতায় পশুপাখি, মাছ, বালুর কণা সবই যে যুদ্ধে শামিল হয়েছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে যেসব উপমা-উৎপ্রেক্ষা ব্যবহার করছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে কবিতায়। তাঁর কবিতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া অনন্য সম্পদ। কবিতা যে সাহিত্যে কত বড় শক্তিশালী হাতিয়ার, তা ভালো কবিতা পড়লে বোঝা যায়। চেতনা জাগানিয়া কবিতা পড়লে বোঝা যায়। ভাষা ব্যবহারের কৌশল শক্তি কতটা, সেটা নিবিষ্ট চিত্তে বোঝা সহজ হয়। কবিতার মধ্য দিয়ে ইতিহাস-দুঃসময়ের কালপর্ব কত মোহনীয় শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, সেটা আসাদ চৌধুরীর কবিতায় প্রতীয়মান।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য ১০১ জন বাংলাদেশি কর্মী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় সম্ভবত প্রজন্ম’৭১ নামে সংগঠনটি একটা পোস্টার প্রকাশ করেছিল। ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ এ দুটো লাইন ছিল সেই পোস্টারের গায়ে লেখা। কী শক্তিশালী দুটি লাইন, এর মধ্য দিয়ে যে অস্ফুট আর্তনাদ লুকানো, তা তাঁরাই জানে, একাত্তরের পাকিস্তানি বর্বরতা যাদের সামান্যও ছুঁয়েছে। এই লাইন দুটো আর পোস্টারটি যেন চেতনার গহিনে আজও গেঁথে আছে।
পরে জেনেছি, আসাদ চৌধুরীর ‘শহীদদের প্রতি’ কবিতা থেকে লাইন দুটি নেওয়া হয়েছিল। সেই কবিতার লাইনগুলো ছিল, ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ? শেষ কথাটি সুখের ছিল? ঘৃণার ছিল? নাকি ক্রোধের, প্রতিশোধের, কোনটা ছিল?’
বাংলার সূর্যসন্তানদের হত্যা করে একেকটি পরিবারের সদস্যদের বুকে স্বজন হারানোর দগদগে ক্ষতই শুধু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, দেশকে করা হয়েছিল মেধাশূন্য। পরিকল্পিত এই হত্যার পেছনে ছিল পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী আর কার্যকর করেছে এদেশীয় দালালেরা। যাদের ফাঁসির দাবিতে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ। গড়ে তোলা হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। তারপরও শহীদ পরিবারগুলোর খবর কে রাখে? কেউ কি রাখে? রায়ের বাজারের একাত্তরের বধ্যভূমি দেখলে কি মনে হয় না একদম ভেতর থেকে কথাটি লিখেছেন আসাদ চৌধুরী। তাঁর আরেকটি কবিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নারীদের চিরায়ত স্বভাব। আর তাঁদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়া পাকিস্তানি হার্মাদদের নারকীয়তা। ‘রিপোর্ট ১৯৭১’ নামে এ কবিতায় তিনি লিখেছেন—‘প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল/বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম/আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।/এসব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে/বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়/বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে/তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে শুধু মুখ টিপে হাসে/প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে/কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা/সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী/অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার/সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা/সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে/আমি তার সুরকার তার রক্তে স্বরলিপি লিখি/মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী/গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়/মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে ঝিয়ে/খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো, অস্ফুট গোলাপকলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে/কার কী বা আসে যায়।’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের কাহিনি আর কত বলা যায়? একজন কবি কতটা বেদনা নিয়ে এই ইতিহাস লিখেছেন কাব্যের ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে। এই ইতিহাসের কথাকার, গণযুদ্ধের জনযোদ্ধা কবি আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত। প্রাণবান চিরতরুণ এই কবি। কবি আসাদ চৌধুরী কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টরন্টোতে বসবাস করছিলেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন অটোয়ায়। মাসখানেক আগে কবি আসাদ চৌধুরীর এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়। এরপর তিনি বাসায় ছিলেন। হঠাৎ তাঁর শরীর খারাপ করলে কানাডার ওসোয়ার হাসপাতালটিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব জটিল অবস্থা ছিল কিন্তু তারপরে? বুধবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ৩টায় কানাডার টরন্টোর আসোয়া শহরের লেকরিচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি লোকান্তরিত হন। বাংলাদেশে এ খবর আসার পরে শোকে যেন মুষড়ে ওঠে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাঁর কবিতা ‘সত্য ফেরারী’র মতো বলতে ইচ্ছে করে—‘কোথায় পালালো সত্য?
দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তো? রেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে, গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,
টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে, নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো।’ মানুষ তাকে অতিক্রম করে তার কাজ দিয়ে। মানুষ মারা যাবে, এটাই সত্য। কিন্তু বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্য দিয়ে। সেদিক থেকে আসাদ ভাইকে ভুলবে না কেউ। দুহাতে লিখেছেন তিনি বহুমাত্রিক লেখা। তাঁকে ভোলার নয়। কবি আসাদ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন তাঁর অনন্য সৃষ্টির মধ্যে।
দীপংকর গৌতম

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়। আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি নারায়ণগঞ্জ যেতে হাকিমাবাদের পীরের খানকা শরিফ, বরদেশ্বরী কালীবাড়ি-মানসিংহ যাত্রাবাড়ীতে যাত্রা বিরতি দিয়ে যে দিঘিটা তাঁর সেনাবাহিনী দিয়ে কাটিয়ে ছিলেন, তার পাড়ে বসে ইতিহাস শুনেছি। ইতিহাসের পাঠ নিতে নিতে তাঁর ঝোলা ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত ‘তবক দেওয়া পান’। একটা স্টিলের বাক্স। সেটার যে কত তলা, তা বোঝা দায়। একেক পার্ট থেকে একেক রকমের সুগন্ধি মসলা। আমি খুব পছন্দ করতাম তাঁর পান খেতে। একবার এক ঘটনা ঘটল—তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির হরতাল। আমি শাহবাগ মোড়ে, পিকেটিং চলছে। হঠাৎ দেখি আসাদ চৌধুরী যাচ্ছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে স্বভাবসুলভভাবে বললাম, ‘পান খাব তো।’
তিনি বললেন, ‘এখন পুলিশ তাড়া করলে?’
আমি বললাম, ‘আসাদ চৌধুরীকে পুলিশ কিছু বলবে না।’
তিনি শিশুতোষ হাসি দিয়ে ঝোলা ব্যাগ থেকে বের করে আনলেন স্টিলের হাজার দুয়ারি বাক্স। তারপর পান বানানো শুরু হতে হতে টিয়ার গ্যাস। পুলিশ এসে বলছেন, ‘আপনারা কী করছেন?’
আসাদ চৌধুরী শান্ত গলায় বললেন, ‘একটু পান দিয়েই চলে যাব।’
পান দিয়ে আমার হাত ধরে বললেন, এখন ওদিকে যাবে না। চলো পিজি মার্কেটে। আমি ওনার সঙ্গে গিয়ে আবার পিকেটিংয়ে ফিরে এলাম।
আসাদ চৌধুরীর সাধারণ জীবনযাপন দেখে মনে হতো না কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তিনি। উর্দু ও ফারসি ভাষা নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল অসীম। তাঁর মাধ্যমেই জানতে পারি ঢাকায় উর্দু কবিদের একটি সোসাইটি আছে। তাঁদের মধ্যে অনেক ভালো কবি আছেন। মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকায় আমি গিয়েছি কয়েকবার। কবি আসাদ চৌধুরী ছিলেন তাঁদের আত্মীয়। কবি আসাদ চৌধুরী তাঁদের সঙ্গে উর্দুতে বাতচিত করতেন। কাঁধে ঝোলা, ঝাঁকড়া চুল। অনেক মসলা দিয়ে পান খাওয়ায় ঠোঁট থাকত লাল। আর সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ছাড়া তাঁকে ভাবা যায়? চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ঢাকা শহরে কবি, বাংলাদেশে মাটির মানুষের কবি আসাদ চৌধুরী হেঁটে যাচ্ছেন।
নিরাবেগ বোঝাপড়া নিয়ে হাঁটছেন। সেই ঢিলেঢালা রঙিন শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা প্রেম, দ্রোহ ও প্রতিবাদের কবি আসাদ চৌধুরী হাঁটছেন, শহরজুড়ে তাঁর পদধ্বনির মুখরতা। শুদ্ধ বাংলায় দরাজ কণ্ঠে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন কবি আসাদ চৌধুরী। জীবনে কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচয়ের অন্ত ছিল না। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। সাহিত্যে তিনি গণমুখী, নান্দনিক ও রোমান্টিক বিন্যাস গড়েছেন। পরিচয় উঠে এসেছে প্রাজ্ঞ, আলোচক, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, আরও কত কী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ কোনো ছোট ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর কবিতায় যে দহন, যে প্রতিবাদ, পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা, কবিতায় তিনি তা লিখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার লোকায়ত জীবন—সবই তাঁর লেখায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখা ‘বারবারা বিডলারকে’ কবিতা পড়লে বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাঙালির ওপর কী ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে, কবিতায় সে কথা লিখতে লিখতে না জানি এই মানুষটি কতবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ‘আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা/তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়/বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো/ওটা একটা জল্লাদের ছবি/পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠান্ডা মাথায় সে হত্যা করেছে/মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সে গলা টিপে হত্যা করেছে/অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ/বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়/দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে/গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস, মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি/সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয় থেঁতলে দেয়।’
ঠিক একইভাবে এই কবিতায় যখন আরেক ছত্রে যাই, তখন বুকটা শীতল হয়ে আসে। হাত চলে না। কবিতার কত শক্তি, ভাষা ব্যবহারে কী মুনশিয়ানা, মাটি ও মানুষের প্রতি কতটা ভালোবাসা বহন করতেন তিনি, তা তাঁর কবিতায় বোঝা যায়—‘টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা?
গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকে দেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে/আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল/সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে/তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে তিনি শিউরে উঠবেন/অভিধান থেকে নয় আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী/জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার/আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো।’ এর প্রতিটি লাইন যেকোনো মানুষকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানিয়ে দেবে। তাঁর কবিতার শাণিত তেজ কয়েক লক্ষ বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী। প্রতিটি কবিতার কাঠামো-বিন্যাস, ভাষার সজীবতা, উৎপ্রেক্ষা অনবদ্য। বাঙালির জন্ম জড়ুল মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যত সেরা কবিতা লেখা হয়েছে, আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই সে তালিকায় পড়বে বলে বিশ্বাস করি। আরেকটি কবিতা ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ তার কাঠামোটাই আলাদা। তিনি লিখেছেন, ‘কুকুর বেড়াল থাবা হাঁকায়/ফোঁসে সাপের ফণা/শিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায় জ্বলে বালির কণা/আগুন ছিলো মুক্তি সেনার/স্বপ্ন ঢলের বন্যায়/প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে/কাঁপছিলো সব অন্যায়।’ মুক্তিযোদ্ধা কবি তাঁর কবিতায় পশুপাখি, মাছ, বালুর কণা সবই যে যুদ্ধে শামিল হয়েছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে যেসব উপমা-উৎপ্রেক্ষা ব্যবহার করছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে কবিতায়। তাঁর কবিতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া অনন্য সম্পদ। কবিতা যে সাহিত্যে কত বড় শক্তিশালী হাতিয়ার, তা ভালো কবিতা পড়লে বোঝা যায়। চেতনা জাগানিয়া কবিতা পড়লে বোঝা যায়। ভাষা ব্যবহারের কৌশল শক্তি কতটা, সেটা নিবিষ্ট চিত্তে বোঝা সহজ হয়। কবিতার মধ্য দিয়ে ইতিহাস-দুঃসময়ের কালপর্ব কত মোহনীয় শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, সেটা আসাদ চৌধুরীর কবিতায় প্রতীয়মান।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য ১০১ জন বাংলাদেশি কর্মী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় সম্ভবত প্রজন্ম’৭১ নামে সংগঠনটি একটা পোস্টার প্রকাশ করেছিল। ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ এ দুটো লাইন ছিল সেই পোস্টারের গায়ে লেখা। কী শক্তিশালী দুটি লাইন, এর মধ্য দিয়ে যে অস্ফুট আর্তনাদ লুকানো, তা তাঁরাই জানে, একাত্তরের পাকিস্তানি বর্বরতা যাদের সামান্যও ছুঁয়েছে। এই লাইন দুটো আর পোস্টারটি যেন চেতনার গহিনে আজও গেঁথে আছে।
পরে জেনেছি, আসাদ চৌধুরীর ‘শহীদদের প্রতি’ কবিতা থেকে লাইন দুটি নেওয়া হয়েছিল। সেই কবিতার লাইনগুলো ছিল, ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ? শেষ কথাটি সুখের ছিল? ঘৃণার ছিল? নাকি ক্রোধের, প্রতিশোধের, কোনটা ছিল?’
বাংলার সূর্যসন্তানদের হত্যা করে একেকটি পরিবারের সদস্যদের বুকে স্বজন হারানোর দগদগে ক্ষতই শুধু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, দেশকে করা হয়েছিল মেধাশূন্য। পরিকল্পিত এই হত্যার পেছনে ছিল পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী আর কার্যকর করেছে এদেশীয় দালালেরা। যাদের ফাঁসির দাবিতে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ। গড়ে তোলা হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। তারপরও শহীদ পরিবারগুলোর খবর কে রাখে? কেউ কি রাখে? রায়ের বাজারের একাত্তরের বধ্যভূমি দেখলে কি মনে হয় না একদম ভেতর থেকে কথাটি লিখেছেন আসাদ চৌধুরী। তাঁর আরেকটি কবিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নারীদের চিরায়ত স্বভাব। আর তাঁদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়া পাকিস্তানি হার্মাদদের নারকীয়তা। ‘রিপোর্ট ১৯৭১’ নামে এ কবিতায় তিনি লিখেছেন—‘প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল/বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম/আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।/এসব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে/বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়/বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে/তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে শুধু মুখ টিপে হাসে/প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে/কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা/সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী/অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার/সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা/সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে/আমি তার সুরকার তার রক্তে স্বরলিপি লিখি/মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী/গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়/মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে ঝিয়ে/খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো, অস্ফুট গোলাপকলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে/কার কী বা আসে যায়।’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের কাহিনি আর কত বলা যায়? একজন কবি কতটা বেদনা নিয়ে এই ইতিহাস লিখেছেন কাব্যের ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে। এই ইতিহাসের কথাকার, গণযুদ্ধের জনযোদ্ধা কবি আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত। প্রাণবান চিরতরুণ এই কবি। কবি আসাদ চৌধুরী কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টরন্টোতে বসবাস করছিলেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন অটোয়ায়। মাসখানেক আগে কবি আসাদ চৌধুরীর এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়। এরপর তিনি বাসায় ছিলেন। হঠাৎ তাঁর শরীর খারাপ করলে কানাডার ওসোয়ার হাসপাতালটিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব জটিল অবস্থা ছিল কিন্তু তারপরে? বুধবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ৩টায় কানাডার টরন্টোর আসোয়া শহরের লেকরিচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি লোকান্তরিত হন। বাংলাদেশে এ খবর আসার পরে শোকে যেন মুষড়ে ওঠে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাঁর কবিতা ‘সত্য ফেরারী’র মতো বলতে ইচ্ছে করে—‘কোথায় পালালো সত্য?
দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তো? রেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে, গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,
টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে, নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো।’ মানুষ তাকে অতিক্রম করে তার কাজ দিয়ে। মানুষ মারা যাবে, এটাই সত্য। কিন্তু বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্য দিয়ে। সেদিক থেকে আসাদ ভাইকে ভুলবে না কেউ। দুহাতে লিখেছেন তিনি বহুমাত্রিক লেখা। তাঁকে ভোলার নয়। কবি আসাদ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন তাঁর অনন্য সৃষ্টির মধ্যে।

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়। আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি নারায়ণগঞ্জ যেতে হাকিমাবাদের পীরের খানকা শরিফ, বরদেশ্বরী কালীবাড়ি-মানসিংহ যাত্রাবাড়ীতে যাত্রা বিরতি দিয়ে যে দিঘিটা তাঁর সেনাবাহিনী দিয়ে কাটিয়ে ছিলেন, তার পাড়ে বসে ইতিহাস শুনেছি। ইতিহাসের পাঠ নিতে নিতে তাঁর ঝোলা ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত ‘তবক দেওয়া পান’। একটা স্টিলের বাক্স। সেটার যে কত তলা, তা বোঝা দায়। একেক পার্ট থেকে একেক রকমের সুগন্ধি মসলা। আমি খুব পছন্দ করতাম তাঁর পান খেতে। একবার এক ঘটনা ঘটল—তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির হরতাল। আমি শাহবাগ মোড়ে, পিকেটিং চলছে। হঠাৎ দেখি আসাদ চৌধুরী যাচ্ছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে স্বভাবসুলভভাবে বললাম, ‘পান খাব তো।’
তিনি বললেন, ‘এখন পুলিশ তাড়া করলে?’
আমি বললাম, ‘আসাদ চৌধুরীকে পুলিশ কিছু বলবে না।’
তিনি শিশুতোষ হাসি দিয়ে ঝোলা ব্যাগ থেকে বের করে আনলেন স্টিলের হাজার দুয়ারি বাক্স। তারপর পান বানানো শুরু হতে হতে টিয়ার গ্যাস। পুলিশ এসে বলছেন, ‘আপনারা কী করছেন?’
আসাদ চৌধুরী শান্ত গলায় বললেন, ‘একটু পান দিয়েই চলে যাব।’
পান দিয়ে আমার হাত ধরে বললেন, এখন ওদিকে যাবে না। চলো পিজি মার্কেটে। আমি ওনার সঙ্গে গিয়ে আবার পিকেটিংয়ে ফিরে এলাম।
আসাদ চৌধুরীর সাধারণ জীবনযাপন দেখে মনে হতো না কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তিনি। উর্দু ও ফারসি ভাষা নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল অসীম। তাঁর মাধ্যমেই জানতে পারি ঢাকায় উর্দু কবিদের একটি সোসাইটি আছে। তাঁদের মধ্যে অনেক ভালো কবি আছেন। মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকায় আমি গিয়েছি কয়েকবার। কবি আসাদ চৌধুরী ছিলেন তাঁদের আত্মীয়। কবি আসাদ চৌধুরী তাঁদের সঙ্গে উর্দুতে বাতচিত করতেন। কাঁধে ঝোলা, ঝাঁকড়া চুল। অনেক মসলা দিয়ে পান খাওয়ায় ঠোঁট থাকত লাল। আর সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ছাড়া তাঁকে ভাবা যায়? চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ঢাকা শহরে কবি, বাংলাদেশে মাটির মানুষের কবি আসাদ চৌধুরী হেঁটে যাচ্ছেন।
নিরাবেগ বোঝাপড়া নিয়ে হাঁটছেন। সেই ঢিলেঢালা রঙিন শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা প্রেম, দ্রোহ ও প্রতিবাদের কবি আসাদ চৌধুরী হাঁটছেন, শহরজুড়ে তাঁর পদধ্বনির মুখরতা। শুদ্ধ বাংলায় দরাজ কণ্ঠে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছেন কবি আসাদ চৌধুরী। জীবনে কবি আসাদ চৌধুরীর পরিচয়ের অন্ত ছিল না। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। সাহিত্যে তিনি গণমুখী, নান্দনিক ও রোমান্টিক বিন্যাস গড়েছেন। পরিচয় উঠে এসেছে প্রাজ্ঞ, আলোচক, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার, টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, আরও কত কী। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ কোনো ছোট ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর কবিতায় যে দহন, যে প্রতিবাদ, পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা, কবিতায় তিনি তা লিখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার লোকায়ত জীবন—সবই তাঁর লেখায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখা ‘বারবারা বিডলারকে’ কবিতা পড়লে বোঝা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাঙালির ওপর কী ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে, কবিতায় সে কথা লিখতে লিখতে না জানি এই মানুষটি কতবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ‘আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা/তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়/বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো/ওটা একটা জল্লাদের ছবি/পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠান্ডা মাথায় সে হত্যা করেছে/মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সে গলা টিপে হত্যা করেছে/অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ/বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়/দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে/গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস, মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি/সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয় থেঁতলে দেয়।’
ঠিক একইভাবে এই কবিতায় যখন আরেক ছত্রে যাই, তখন বুকটা শীতল হয়ে আসে। হাত চলে না। কবিতার কত শক্তি, ভাষা ব্যবহারে কী মুনশিয়ানা, মাটি ও মানুষের প্রতি কতটা ভালোবাসা বহন করতেন তিনি, তা তাঁর কবিতায় বোঝা যায়—‘টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা?
গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকে দেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে/আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল/সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে/তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে তিনি শিউরে উঠবেন/অভিধান থেকে নয় আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী/জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার/আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো।’ এর প্রতিটি লাইন যেকোনো মানুষকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানিয়ে দেবে। তাঁর কবিতার শাণিত তেজ কয়েক লক্ষ বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী। প্রতিটি কবিতার কাঠামো-বিন্যাস, ভাষার সজীবতা, উৎপ্রেক্ষা অনবদ্য। বাঙালির জন্ম জড়ুল মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যত সেরা কবিতা লেখা হয়েছে, আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই সে তালিকায় পড়বে বলে বিশ্বাস করি। আরেকটি কবিতা ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ তার কাঠামোটাই আলাদা। তিনি লিখেছেন, ‘কুকুর বেড়াল থাবা হাঁকায়/ফোঁসে সাপের ফণা/শিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায় জ্বলে বালির কণা/আগুন ছিলো মুক্তি সেনার/স্বপ্ন ঢলের বন্যায়/প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে/কাঁপছিলো সব অন্যায়।’ মুক্তিযোদ্ধা কবি তাঁর কবিতায় পশুপাখি, মাছ, বালুর কণা সবই যে যুদ্ধে শামিল হয়েছে, সেটা বোঝাতে গিয়ে যেসব উপমা-উৎপ্রেক্ষা ব্যবহার করছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে কবিতায়। তাঁর কবিতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া অনন্য সম্পদ। কবিতা যে সাহিত্যে কত বড় শক্তিশালী হাতিয়ার, তা ভালো কবিতা পড়লে বোঝা যায়। চেতনা জাগানিয়া কবিতা পড়লে বোঝা যায়। ভাষা ব্যবহারের কৌশল শক্তি কতটা, সেটা নিবিষ্ট চিত্তে বোঝা সহজ হয়। কবিতার মধ্য দিয়ে ইতিহাস-দুঃসময়ের কালপর্ব কত মোহনীয় শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, সেটা আসাদ চৌধুরীর কবিতায় প্রতীয়মান।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য ১০১ জন বাংলাদেশি কর্মী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময় সম্ভবত প্রজন্ম’৭১ নামে সংগঠনটি একটা পোস্টার প্রকাশ করেছিল। ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ এ দুটো লাইন ছিল সেই পোস্টারের গায়ে লেখা। কী শক্তিশালী দুটি লাইন, এর মধ্য দিয়ে যে অস্ফুট আর্তনাদ লুকানো, তা তাঁরাই জানে, একাত্তরের পাকিস্তানি বর্বরতা যাদের সামান্যও ছুঁয়েছে। এই লাইন দুটো আর পোস্টারটি যেন চেতনার গহিনে আজও গেঁথে আছে।
পরে জেনেছি, আসাদ চৌধুরীর ‘শহীদদের প্রতি’ কবিতা থেকে লাইন দুটি নেওয়া হয়েছিল। সেই কবিতার লাইনগুলো ছিল, ‘তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ? শেষ কথাটি সুখের ছিল? ঘৃণার ছিল? নাকি ক্রোধের, প্রতিশোধের, কোনটা ছিল?’
বাংলার সূর্যসন্তানদের হত্যা করে একেকটি পরিবারের সদস্যদের বুকে স্বজন হারানোর দগদগে ক্ষতই শুধু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়নি, দেশকে করা হয়েছিল মেধাশূন্য। পরিকল্পিত এই হত্যার পেছনে ছিল পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী আর কার্যকর করেছে এদেশীয় দালালেরা। যাদের ফাঁসির দাবিতে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ। গড়ে তোলা হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। তারপরও শহীদ পরিবারগুলোর খবর কে রাখে? কেউ কি রাখে? রায়ের বাজারের একাত্তরের বধ্যভূমি দেখলে কি মনে হয় না একদম ভেতর থেকে কথাটি লিখেছেন আসাদ চৌধুরী। তাঁর আরেকটি কবিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নারীদের চিরায়ত স্বভাব। আর তাঁদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়া পাকিস্তানি হার্মাদদের নারকীয়তা। ‘রিপোর্ট ১৯৭১’ নামে এ কবিতায় তিনি লিখেছেন—‘প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল/বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম/আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।/এসব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে/বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়/বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে/তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে শুধু মুখ টিপে হাসে/প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে/কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা/সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী/অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার/সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা/সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে/আমি তার সুরকার তার রক্তে স্বরলিপি লিখি/মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী/গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়/মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে ঝিয়ে/খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো, অস্ফুট গোলাপকলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে/কার কী বা আসে যায়।’ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের কাহিনি আর কত বলা যায়? একজন কবি কতটা বেদনা নিয়ে এই ইতিহাস লিখেছেন কাব্যের ধারাকে অক্ষুণ্ন রেখে। এই ইতিহাসের কথাকার, গণযুদ্ধের জনযোদ্ধা কবি আসাদ চৌধুরীর সব কবিতাই হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত। প্রাণবান চিরতরুণ এই কবি। কবি আসাদ চৌধুরী কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টরন্টোতে বসবাস করছিলেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন অটোয়ায়। মাসখানেক আগে কবি আসাদ চৌধুরীর এনজিওগ্রাম করে দুটি ব্লকের ৯৯ ও ৮৮ শতাংশ সারানো হয়। এরপর তিনি বাসায় ছিলেন। হঠাৎ তাঁর শরীর খারাপ করলে কানাডার ওসোয়ার হাসপাতালটিতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ফুসফুস ও হার্ট দুটিরই খুব জটিল অবস্থা ছিল কিন্তু তারপরে? বুধবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ৩টায় কানাডার টরন্টোর আসোয়া শহরের লেকরিচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি লোকান্তরিত হন। বাংলাদেশে এ খবর আসার পরে শোকে যেন মুষড়ে ওঠে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাঁর কবিতা ‘সত্য ফেরারী’র মতো বলতে ইচ্ছে করে—‘কোথায় পালালো সত্য?
দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তো? রেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে, গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,
টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে, নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো।’ মানুষ তাকে অতিক্রম করে তার কাজ দিয়ে। মানুষ মারা যাবে, এটাই সত্য। কিন্তু বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্য দিয়ে। সেদিক থেকে আসাদ ভাইকে ভুলবে না কেউ। দুহাতে লিখেছেন তিনি বহুমাত্রিক লেখা। তাঁকে ভোলার নয়। কবি আসাদ চৌধুরী বেঁচে থাকবেন তাঁর অনন্য সৃষ্টির মধ্যে।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়।
০৬ অক্টোবর ২০২৩
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়।
০৬ অক্টোবর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়।
০৬ অক্টোবর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

কবি আসাদ চৌধুরী নেই—তিনি লোকান্তরিত হয়েছেন। খবর পেয়েছিলাম অফিসে বসেই। সংবাদপত্র অফিসে মৃত্যুর খবরগুলো শোক হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ, শোক যাদের ছড়াতে হয়, তাদের শোক করার সময় কোথায়? কিন্তু আসাদ চৌধুরীর মৃত্যু আমার কাছে অত সহজ বিষয় নয়।
০৬ অক্টোবর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫