অনলাইন ডেস্ক
ফ্রানৎস কাফকা তাঁর জীবদ্দশায় কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। কিন্তু ১৯২৭ সালে মৃত্যুর পর প্রকাশিত তাঁর অসমাপ্ত উপন্যাসের (আমেরিকা) নায়ক ১৭ বছর বয়সী জার্মান কিশোর কার্ল রসম্যান যুক্তরাষ্ট্রে যান! রসম্যানকে একজন দাসীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের দায়ে নির্বাসিত করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক বন্দরে পৌঁছানোর পর রসম্যান খেয়াল করেন, স্ট্যাচু অব লিবার্টি তলোয়ার হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু বাস্তবে তলোয়ার নয়, এটি ছিল মশাল।
যেহেতু কাফকা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে যাননি, তাই তলোয়ার, নাকি মশাল—এই ব্যাপারে তিনি ঠিক কী জানতেন, তা আমরা নিশ্চিত নই। তবে এই তলোয়ারধারী ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ই আজকের যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যথাযথ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর। কাফকার নায়কের মতোই আমরা যেন আজ যুক্তরাষ্ট্রকে আরও তীব্র আলোর নিচে দেখছি—এবং এই যুক্তরাষ্ট্র মুক্তির আশা জাগানোর বদলে ভয় জাগাচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল শক্তি ছিল কপটতা বা দ্বিচারী স্বভাব। তারা বরাবরই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আদর্শ প্রচার করেছে, কিন্তু বাস্তবে নীতি ছিল ভিন্ন। যেমন পশ্চিম ইউরোপে সোভিয়েত আধিপত্য প্রতিরোধের নামে গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ালেও গ্লোবাল সাউথে (বিশ্বের অনুন্নত অংশ) যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল ঠিক উল্টো। এই উচ্চ নৈতিকতা ও বাস্তবতার গোপন গলদ সবচেয়ে প্রকট হয়ে ওঠে জো বাইডেন প্রশাসনের সময়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পর প্রেসিডেন্ট হয়ে বাইডেন ঘোষণা দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ফিরে এসেছে’। তিনি বোঝাতে চান, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের যে মূল চরিত্র (মহান) তার কোনো অংশ নয়।
২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে আক্রমণ করল, তখন যুক্তরাষ্ট্র আবারও ‘মুক্ত বিশ্বের নেতা’ হয়ে উঠতে চাইল। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের পরে রাশিয়াকে ক্রমাগত নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু গাজার যুদ্ধ সেই চিত্র পাল্টে দেয়।
মার্কিন কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিংকেন যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়াকে আক্রমণ করেন, সেগুলোর অনেক কিছুই ইসরায়েল গাজায় করেছে। যেমন হাসপাতাল ও স্কুলে হামলা। কিন্তু গাজার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র শুধু চুপই ছিল না, বরং তাদের সরাসরি সহায়তাও দিয়েছে।
এদিকে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মহান যুক্তরাষ্ট্রের আগের সব ‘কপটতা’ উধাও হয়ে গেলেও শুরু হয়েছে নতুন খেলা। শুধু অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল ট্রাম্পের আমেরিকা এর মধ্যে গ্রিনল্যান্ড দখল, পানামা খাল পুনর্দখল করার ঘোষণা দিয়েছে। কানাডাকে ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার হুমকি দিয়েছে।
এ ছাড়া ট্রাম্প সরাসরি বলেছেন, তিনি গাজা দখল করবেন এবং গাজাবাসীকে অন্যত্র স্থানান্তর করবেন। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচনের কথাও বলেছেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউএসএআইডির অর্থ বরাদ্দ বন্ধের ঘোষণা এসেছে।
অথচ এই ইউএসএআইডি ছিল এমন একটি সংস্থা, যা গ্লোবাল সাউথে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে কিছুটা মানবিকভাবে উপস্থাপন করত। বাইডেন আমলে সংস্থাটির প্রধান সামান্থা পাওয়ার এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বড় কূটনৈতিক ভুল।’
আজকের বাস্তবতায় স্ট্যাচু অব লিবার্টির প্রতীকী অর্থও বদলে গেছে। এটিকে একসময় বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়ের প্রতীক মনে করা হলেও বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বরাবরই কঠোরতা ছিল। যেমন ১৮৮২ সালে ‘চায়নিজ এক্সক্লুশন অ্যাক্টে’র মাধ্যমে চীনা শ্রমিকদের অভিবাসী হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে বর্তমানে সেটি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্র বদলে যাচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত রূপ দেখছি, নাকি এটি কখনোই তেমন ছিল না?
দ্য নিউ স্টেটসম্যান থেকে অনূদিত
ফ্রানৎস কাফকা তাঁর জীবদ্দশায় কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। কিন্তু ১৯২৭ সালে মৃত্যুর পর প্রকাশিত তাঁর অসমাপ্ত উপন্যাসের (আমেরিকা) নায়ক ১৭ বছর বয়সী জার্মান কিশোর কার্ল রসম্যান যুক্তরাষ্ট্রে যান! রসম্যানকে একজন দাসীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের দায়ে নির্বাসিত করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক বন্দরে পৌঁছানোর পর রসম্যান খেয়াল করেন, স্ট্যাচু অব লিবার্টি তলোয়ার হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু বাস্তবে তলোয়ার নয়, এটি ছিল মশাল।
যেহেতু কাফকা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে যাননি, তাই তলোয়ার, নাকি মশাল—এই ব্যাপারে তিনি ঠিক কী জানতেন, তা আমরা নিশ্চিত নই। তবে এই তলোয়ারধারী ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ই আজকের যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যথাযথ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর। কাফকার নায়কের মতোই আমরা যেন আজ যুক্তরাষ্ট্রকে আরও তীব্র আলোর নিচে দেখছি—এবং এই যুক্তরাষ্ট্র মুক্তির আশা জাগানোর বদলে ভয় জাগাচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল শক্তি ছিল কপটতা বা দ্বিচারী স্বভাব। তারা বরাবরই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আদর্শ প্রচার করেছে, কিন্তু বাস্তবে নীতি ছিল ভিন্ন। যেমন পশ্চিম ইউরোপে সোভিয়েত আধিপত্য প্রতিরোধের নামে গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ালেও গ্লোবাল সাউথে (বিশ্বের অনুন্নত অংশ) যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল ঠিক উল্টো। এই উচ্চ নৈতিকতা ও বাস্তবতার গোপন গলদ সবচেয়ে প্রকট হয়ে ওঠে জো বাইডেন প্রশাসনের সময়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের পর প্রেসিডেন্ট হয়ে বাইডেন ঘোষণা দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ফিরে এসেছে’। তিনি বোঝাতে চান, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের যে মূল চরিত্র (মহান) তার কোনো অংশ নয়।
২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে আক্রমণ করল, তখন যুক্তরাষ্ট্র আবারও ‘মুক্ত বিশ্বের নেতা’ হয়ে উঠতে চাইল। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের পরে রাশিয়াকে ক্রমাগত নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু গাজার যুদ্ধ সেই চিত্র পাল্টে দেয়।
মার্কিন কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিংকেন যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়াকে আক্রমণ করেন, সেগুলোর অনেক কিছুই ইসরায়েল গাজায় করেছে। যেমন হাসপাতাল ও স্কুলে হামলা। কিন্তু গাজার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র শুধু চুপই ছিল না, বরং তাদের সরাসরি সহায়তাও দিয়েছে।
এদিকে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মহান যুক্তরাষ্ট্রের আগের সব ‘কপটতা’ উধাও হয়ে গেলেও শুরু হয়েছে নতুন খেলা। শুধু অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল ট্রাম্পের আমেরিকা এর মধ্যে গ্রিনল্যান্ড দখল, পানামা খাল পুনর্দখল করার ঘোষণা দিয়েছে। কানাডাকে ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার হুমকি দিয়েছে।
এ ছাড়া ট্রাম্প সরাসরি বলেছেন, তিনি গাজা দখল করবেন এবং গাজাবাসীকে অন্যত্র স্থানান্তর করবেন। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচনের কথাও বলেছেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউএসএআইডির অর্থ বরাদ্দ বন্ধের ঘোষণা এসেছে।
অথচ এই ইউএসএআইডি ছিল এমন একটি সংস্থা, যা গ্লোবাল সাউথে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে কিছুটা মানবিকভাবে উপস্থাপন করত। বাইডেন আমলে সংস্থাটির প্রধান সামান্থা পাওয়ার এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বড় কূটনৈতিক ভুল।’
আজকের বাস্তবতায় স্ট্যাচু অব লিবার্টির প্রতীকী অর্থও বদলে গেছে। এটিকে একসময় বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়ের প্রতীক মনে করা হলেও বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বরাবরই কঠোরতা ছিল। যেমন ১৮৮২ সালে ‘চায়নিজ এক্সক্লুশন অ্যাক্টে’র মাধ্যমে চীনা শ্রমিকদের অভিবাসী হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে বর্তমানে সেটি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্র বদলে যাচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত রূপ দেখছি, নাকি এটি কখনোই তেমন ছিল না?
দ্য নিউ স্টেটসম্যান থেকে অনূদিত
ট্রাম্প কি মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যোগাযোগের পদক্ষেপ নেবেন এবং ‘এসএসি’–এর সঙ্গে মিত্রতার সূত্র খুঁজতে শুরু করবেন? এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি হতে পারে, এসএসি–কে আলাদা করা এবং এর নিন্দা করা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কেবল চীনের দিকে আরও ঠেলে দেবে। মিয়ানমারের আগের জান্তা সরকারের সময়ও মার্কিন নীতি নির্ধারকদে
২ দিন আগেবিশ্বজুড়ে নানা সংকটের মুখে পড়েছে টেক মোগল ইলন মাস্কের ব্যবসা। আবার এমন সময়ে তিনি ভারতে টেসলা ও স্টারলিংকের ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে টেসলা ও স্টারলিংক ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক সংকট কাটাতে পারবে কি না। এমন একটি...
৩ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্র একা নয়। বিশ্ব বিভিন্ন দেশের সরকার ক্রমবর্ধমান হারে বিটকয়েনকে রিজার্ভ ‘সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করছে। ব্রাজিলের কংগ্রেসম্যান ইরোস বিওনদিনি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েন সংগ্রহে বাধ্য করা হয় এবং যতক্ষণ না সংগৃহীত বিটকয়েনের মূল্য দেশের মোট রিজার্ভের ৫ শতাংশ...
৩ দিন আগেদক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব একসময় নিরঙ্কুশ ছিল। কিন্তু এখন পররাষ্ট্রনীতিতে অবিমৃশ্যকারিতার কারণে দেশটির অবস্থান টালমাটাল। ২০২৩ সালের জুনে ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’–এর একটি মানচিত্র রাখা হয়েছে, যেখানে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কাকে এর অংশ দেখান
৪ দিন আগে