ইয়াসিন আরাফাত

‘ত্রিশঙ্কু দশা’ বলে বাংলায় একটা কথা আছে। কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বা কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে দোটানায় থাকলে হরহামেশাই একে ‘ত্রিশঙ্কু দশা’ বলে বর্ণনা করা হয়। যদিও এটি একটু বাড়িয়ে বলাই। কারণ, ত্রিশঙ্কু দশা এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার, যা সাত দশকের বেশি সময় ধরে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ‘ভূ–স্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মীর।
হিমালয় অঞ্চলের রাজ্য কাশ্মীর তার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য দিয়ে গোটা বিশ্বের কাছ থেকেই ‘ভূ–স্বর্গ’ খ্যাতি অর্জন করেছে। আর এই খ্যাতিই বোধ হয় তার বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদে যেমন উল্লেখ আছে—‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’, ঠিক তেমনই যেন কাশ্মীরের কপালেও ঘটেছে। কাশ্মীর নাম শুনলেই এখন মন সচেতন হয় ‘মৃত্যু’, ‘হামলা’, ‘অভিযান’ ইত্যাকার শব্দের জন্য।
হিমালয় অঞ্চলের উপত্যকা কাশ্মীরকে দখল করেছে তিনটি দেশ, যা তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফেলেছে ত্রিশঙ্কু দশায়। এর মধ্যে ভারত যে অংশটিকে দখল করেছে, তার নাম জম্মু কাশ্মীর। পাকিস্তান যে অংশটিকে দখল করেছে, তার নাম আজাদ কাশ্মীর এবং চীন যে অংশটিকে দখল করেছে তার নাম আকসাই চীন।
কাশ্মীর এমন একটি অঞ্চল যা বরাবরই উত্তেজনার কারণ। ১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে তিন দফা যুদ্ধ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। গত শতকের আশির দশকের পর থেকে দফায় দফায় পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট ইসলামপন্থী আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে অঞ্চলটিতে। এতে নিহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাও বাতিল করেছে ভারতের মোদি সরকার।
যেভাবে দশকের পর দশক ধরে চলছে এ বিরোধ—
দেশভাগ থেকেই শুরু
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তানের উত্তর–পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংয়ের সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়। এ সময় তিনি ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চান। এরপরই ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি চুক্তি সই করেন তিনি। ১৯৪৮ সালে কাশ্মীর বিতর্ক পৌঁছায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু সেখানে অস্ত্রবিরতি ও গণভোট নিয়ে ঐকমত্য অধরাই থেকে যায়।
মুখোমুখি ভারত–পাকিস্তান
গোটা ৫০–এর দশক কাশ্মীর ছিল ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে দোটানায়। তখনো অস্ত্রের ঝনঝনানি সেভাবে শুরু হয়নি। ১৯৫১ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরে ভোটের আয়োজন করা হয়। তখন কাশ্মীর নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব নাকচ করে ভারত। ভারতের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ ও পাকিস্তান। তার দাবি করে—কাশ্মীরের জনগণ কোন দেশের সঙ্গে যেতে চায়, তা নিয়ে গণভোটের প্রয়োজন। গণভোটের পক্ষ নেওয়ায় ভারত সমর্থিত কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহকে ১৯৫৩ সালে বরখাস্ত করে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জম্মু কাশ্মীর ভারত সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। চার বছর পর ১৯৫৭ সালে ভারতীয় সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে ঘোষণা করা হয়।
সমীকরণে চীনের সরাসরি প্রবেশ
১৯৬০ সালে কাশ্মীরের পূর্বাঞ্চল দখল করে চীন, যা এখন আকসাই চীন হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে উত্তেজনার শুরু অবশ্য আগের দশকেই শুরু হয়, যখন ১৯৫৯ সালে ভারত দালাই লামাকে আশ্রয় দেয়। ১৯৬২ সালে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে বাজেভাবে পরাজিত হয় ভারত। লাদাখের আকসাই চীন অংশ দখলে নেয় চীন। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত অঞ্চলটি চীনের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
একই দশকে সরাসরি যুদ্ধ জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ শেষ হয় একই বছরের সেপ্টেম্বরে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক সেনাক্ষয় হয়। উভয় পক্ষই নিজেদের মতো করে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কাশ্মীরের দশা হয় দুই রাজার লড়াইয়ে উলুখাগড়ার মতো। যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেয় চীন। পাকিস্তানকে অস্ত্রসহ নানা সহায়তা দেয় তারা। আর এর মধ্য দিয়েই এক দীর্ঘসূত্রী মৈত্রীর সূচনা হয় দু দেশের মধ্যে। পরে তাসখন্দে দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও শিমলা চুক্তি
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয় পাকিস্তান। তখন ভারতীয় বাহিনী ও বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ অভিযানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশ ছাড়ে। পরের বছরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি সই। এতে নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলার বিষয়ে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়। আজ সিমলা চুক্তির ৪৯তম বার্ষিকী। যদিও এই এত বছরে চুক্তির প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে না বলে উভয় পক্ষ থেকেই পরস্পরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য এসেছে বহুবার। এসব অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই পরে সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
বিদ্রোহ এবার কাশ্মীরে
সিয়াচেন হিমবাহ ১৯৮৪ সালে দখল করে ভারতীয় সেনারা। এটি পুনর্দখলের জন্য পরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালায় পাকিস্তান। এই টানাপোড়েনের মধ্যে ১৯৮৭ সালে কাশ্মীরে বিদ্রোহ শুরু হয়। জম্মু কাশ্মীরে বিতর্কিত রাজ্য নির্বাচন নিয়ে জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট নামের একটি দল এ বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহের সময় জম্মু কাশ্মীরে পাকিস্তান নিজেদের সেনা পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ তোলে ভারত। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। ১৯৯০ সাল নাগাদ কাশ্মীরে বিদ্রোহের তীব্রতা আরও বাড়ে। ওই বছর গাওয়াকদল ব্রিজে ভারতীয় সেনারা প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে। হামলার শিকার হয়ে জম্মু কাশ্মীরে বাস করা হিন্দুরা উপত্যকাটি ছাড়তে থাকেন। বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে আর্মড ফোর্সেস অ্যাক্ট নামের বিশেষ আইন চালু করে ভারত। ১৯৯০–এর দশকের পুরো সময় কাশ্মীরে বিদ্রোহ, সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে। একদিকে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা উপত্যকাটিতে প্রবেশ করতে শুরু করে, অন্যদিকে ভারতও জম্মু কাশ্মীরে সেনা উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। মাঝখান থেকে একের পর এক সংঘর্ষে জেরবার হতে থাকে কাশ্মীর ও এর বাসিন্দারা। এই সংঘর্ষ ১৯৯৯ সালে পুরোপুরি যুদ্ধের রূপ নেয়। শুরু হয় কারগিল যুদ্ধ। আইসি-৮১৪ নামের ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে অঞ্চলটির স্বাধীনতাকামীরা। যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তিন স্বাধীনতাকামীকে মুক্তি দেয় ভারত।
খণ্ড যুদ্ধের কাল
২০০১ সালে জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে আইনসভায় হামলার চালায় অঞ্চলটির স্বাধীনতাকামীরা। এর পর থেকে এমন বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটতেই থাকে কাশ্মীরজুড়ে, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে থাকে। ২০১০–১১ সময়ে কাশ্মীর উপত্যকায় ব্যাপক সহিংসতা শুরু। স্বাধীনতাকামীরা সরাসরি বিরোধের পথ বেছে নেয়। ওই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশে পাথর ছোড়ায় অভিযুক্ত ১২০০ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীকে’ ক্ষমা করে দেন জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। এর দু বছর পর ২০১৩ সালে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদের সদস্য আফজল গুরুর ফাঁসি কার্যকর হয়। আফজাল গুরু কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা, যিনি আইনসভায় সন্ত্রাসী হামলায় অভিযুক্ত হন। কাশ্মীর সীমান্তে সংঘাত কমাতে ওই বছরই আলোচনায় বসেন ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
সমঝোতা দূর অস্ত
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বাতিল করে ভারত। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে দিল্লিতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বৈঠককে কেন্দ্র করে এই বৈঠক বাতিল করা হয়। ২০১৫-১৬ সালে কাশ্মীরের ক্ষমতায় আসে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। স্থানীয় পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে জোট করে বিজেপি কাশ্মীরের ক্ষমতায় আসে। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো নারী মুখ্যমন্ত্রী পায় জম্মু-কাশ্মীর। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মেহবুবা তাঁর বাবা মুফতি মোহাম্মদ সাইদের মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা চালালে আবার পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হন; আহত হয় ১৬ জন। ২০০০ সালের পর এটিই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা। ২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে বদলি করা হয়। একই বছর সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে মোদি সরকার। ফলে কাশ্মীর ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়।
বিশ্বগ্রামের বাইরে কাশ্মীর
বিশেষ সুবিধা বাতিল হওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে জম্মু-কাশ্মীর। সংঘাত নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে টু–জি ইন্টারনেট সেবা চালু রাখা হয়। এক অর্থে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে গোটা কাশ্মীরকে বিশ্বগ্রাম থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। এ সময় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর আবদুল্লাহ এবং এই উপত্যকার আরেক নেত্রী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে বেশ কয়েকবার গৃহবন্দী করা হয়। এদিকে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধে ভারত-পাকিস্তানের বিরল সমঝোতা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ বিবৃতিতে দেশ দুটির সামরিক বাহিনী এ কথা জানায়।
সমঝোতার বিবৃতিও আদতে কাশ্মীরকে খুব একটা আশা দেখাতে পারছে না। কাশ্মীর হচ্ছে সেই ঘরপোড়া গরু, যে সিঁদুরে মেঘ নয়, বাতাসের জোর হালকা বাড়লেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। পাবে না কেন, তার ইতিহাস তো আর দশটা অঞ্চলের মতো নয়। ভূ–স্বর্গ কাশ্মীর তো তার নিজ ঐশ্বর্য দিয়েই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে। এখানে ১৯৪৭ সাল থেকে সংকট তুলে ধরা হলেও কাশ্মীরের এই যন্ত্রণাকাল শুরু হয়েছে তারও বহু আগে। এর মূলটি খুঁজতে হলে অন্তত চলে যেতে হবে ১৮৪৬ সালে, যখন গুলাব সিং নতি স্বীকার করেন ব্রিটিশরাজের কাছে। কিংবা তারও আগে যাওয়া যায়, যেদিন প্রথম কোনো ভিনদেশি ক্ষমতাধরের চোখ মুগ্ধ হয়েছিল কাশ্মীরের রূপে। সে ইতিহাস অন্যদিকে।
আরও পড়ুন:

‘ত্রিশঙ্কু দশা’ বলে বাংলায় একটা কথা আছে। কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বা কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে দোটানায় থাকলে হরহামেশাই একে ‘ত্রিশঙ্কু দশা’ বলে বর্ণনা করা হয়। যদিও এটি একটু বাড়িয়ে বলাই। কারণ, ত্রিশঙ্কু দশা এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার, যা সাত দশকের বেশি সময় ধরে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ‘ভূ–স্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মীর।
হিমালয় অঞ্চলের রাজ্য কাশ্মীর তার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য দিয়ে গোটা বিশ্বের কাছ থেকেই ‘ভূ–স্বর্গ’ খ্যাতি অর্জন করেছে। আর এই খ্যাতিই বোধ হয় তার বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদে যেমন উল্লেখ আছে—‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’, ঠিক তেমনই যেন কাশ্মীরের কপালেও ঘটেছে। কাশ্মীর নাম শুনলেই এখন মন সচেতন হয় ‘মৃত্যু’, ‘হামলা’, ‘অভিযান’ ইত্যাকার শব্দের জন্য।
হিমালয় অঞ্চলের উপত্যকা কাশ্মীরকে দখল করেছে তিনটি দেশ, যা তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফেলেছে ত্রিশঙ্কু দশায়। এর মধ্যে ভারত যে অংশটিকে দখল করেছে, তার নাম জম্মু কাশ্মীর। পাকিস্তান যে অংশটিকে দখল করেছে, তার নাম আজাদ কাশ্মীর এবং চীন যে অংশটিকে দখল করেছে তার নাম আকসাই চীন।
কাশ্মীর এমন একটি অঞ্চল যা বরাবরই উত্তেজনার কারণ। ১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে তিন দফা যুদ্ধ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। গত শতকের আশির দশকের পর থেকে দফায় দফায় পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট ইসলামপন্থী আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে অঞ্চলটিতে। এতে নিহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাও বাতিল করেছে ভারতের মোদি সরকার।
যেভাবে দশকের পর দশক ধরে চলছে এ বিরোধ—
দেশভাগ থেকেই শুরু
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তানের উত্তর–পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংয়ের সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়। এ সময় তিনি ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চান। এরপরই ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি চুক্তি সই করেন তিনি। ১৯৪৮ সালে কাশ্মীর বিতর্ক পৌঁছায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু সেখানে অস্ত্রবিরতি ও গণভোট নিয়ে ঐকমত্য অধরাই থেকে যায়।
মুখোমুখি ভারত–পাকিস্তান
গোটা ৫০–এর দশক কাশ্মীর ছিল ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে দোটানায়। তখনো অস্ত্রের ঝনঝনানি সেভাবে শুরু হয়নি। ১৯৫১ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরে ভোটের আয়োজন করা হয়। তখন কাশ্মীর নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব নাকচ করে ভারত। ভারতের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে জাতিসংঘ ও পাকিস্তান। তার দাবি করে—কাশ্মীরের জনগণ কোন দেশের সঙ্গে যেতে চায়, তা নিয়ে গণভোটের প্রয়োজন। গণভোটের পক্ষ নেওয়ায় ভারত সমর্থিত কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহকে ১৯৫৩ সালে বরখাস্ত করে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জম্মু কাশ্মীর ভারত সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। চার বছর পর ১৯৫৭ সালে ভারতীয় সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে ঘোষণা করা হয়।
সমীকরণে চীনের সরাসরি প্রবেশ
১৯৬০ সালে কাশ্মীরের পূর্বাঞ্চল দখল করে চীন, যা এখন আকসাই চীন হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে উত্তেজনার শুরু অবশ্য আগের দশকেই শুরু হয়, যখন ১৯৫৯ সালে ভারত দালাই লামাকে আশ্রয় দেয়। ১৯৬২ সালে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে বাজেভাবে পরাজিত হয় ভারত। লাদাখের আকসাই চীন অংশ দখলে নেয় চীন। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত অঞ্চলটি চীনের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
একই দশকে সরাসরি যুদ্ধ জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৬৫ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ শেষ হয় একই বছরের সেপ্টেম্বরে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক সেনাক্ষয় হয়। উভয় পক্ষই নিজেদের মতো করে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কাশ্মীরের দশা হয় দুই রাজার লড়াইয়ে উলুখাগড়ার মতো। যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেয় চীন। পাকিস্তানকে অস্ত্রসহ নানা সহায়তা দেয় তারা। আর এর মধ্য দিয়েই এক দীর্ঘসূত্রী মৈত্রীর সূচনা হয় দু দেশের মধ্যে। পরে তাসখন্দে দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও শিমলা চুক্তি
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয় পাকিস্তান। তখন ভারতীয় বাহিনী ও বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ অভিযানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশ ছাড়ে। পরের বছরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি সই। এতে নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলার বিষয়ে দুই পক্ষের সমঝোতা হয়। আজ সিমলা চুক্তির ৪৯তম বার্ষিকী। যদিও এই এত বছরে চুক্তির প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে না বলে উভয় পক্ষ থেকেই পরস্পরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য এসেছে বহুবার। এসব অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই পরে সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
বিদ্রোহ এবার কাশ্মীরে
সিয়াচেন হিমবাহ ১৯৮৪ সালে দখল করে ভারতীয় সেনারা। এটি পুনর্দখলের জন্য পরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালায় পাকিস্তান। এই টানাপোড়েনের মধ্যে ১৯৮৭ সালে কাশ্মীরে বিদ্রোহ শুরু হয়। জম্মু কাশ্মীরে বিতর্কিত রাজ্য নির্বাচন নিয়ে জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট নামের একটি দল এ বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহের সময় জম্মু কাশ্মীরে পাকিস্তান নিজেদের সেনা পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ তোলে ভারত। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। ১৯৯০ সাল নাগাদ কাশ্মীরে বিদ্রোহের তীব্রতা আরও বাড়ে। ওই বছর গাওয়াকদল ব্রিজে ভারতীয় সেনারা প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে। হামলার শিকার হয়ে জম্মু কাশ্মীরে বাস করা হিন্দুরা উপত্যকাটি ছাড়তে থাকেন। বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে আর্মড ফোর্সেস অ্যাক্ট নামের বিশেষ আইন চালু করে ভারত। ১৯৯০–এর দশকের পুরো সময় কাশ্মীরে বিদ্রোহ, সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে। একদিকে পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা উপত্যকাটিতে প্রবেশ করতে শুরু করে, অন্যদিকে ভারতও জম্মু কাশ্মীরে সেনা উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। মাঝখান থেকে একের পর এক সংঘর্ষে জেরবার হতে থাকে কাশ্মীর ও এর বাসিন্দারা। এই সংঘর্ষ ১৯৯৯ সালে পুরোপুরি যুদ্ধের রূপ নেয়। শুরু হয় কারগিল যুদ্ধ। আইসি-৮১৪ নামের ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে অঞ্চলটির স্বাধীনতাকামীরা। যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তিন স্বাধীনতাকামীকে মুক্তি দেয় ভারত।
খণ্ড যুদ্ধের কাল
২০০১ সালে জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে আইনসভায় হামলার চালায় অঞ্চলটির স্বাধীনতাকামীরা। এর পর থেকে এমন বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটতেই থাকে কাশ্মীরজুড়ে, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে থাকে। ২০১০–১১ সময়ে কাশ্মীর উপত্যকায় ব্যাপক সহিংসতা শুরু। স্বাধীনতাকামীরা সরাসরি বিরোধের পথ বেছে নেয়। ওই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশে পাথর ছোড়ায় অভিযুক্ত ১২০০ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীকে’ ক্ষমা করে দেন জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। এর দু বছর পর ২০১৩ সালে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদের সদস্য আফজল গুরুর ফাঁসি কার্যকর হয়। আফজাল গুরু কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা, যিনি আইনসভায় সন্ত্রাসী হামলায় অভিযুক্ত হন। কাশ্মীর সীমান্তে সংঘাত কমাতে ওই বছরই আলোচনায় বসেন ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
সমঝোতা দূর অস্ত
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বাতিল করে ভারত। ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে দিল্লিতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বৈঠককে কেন্দ্র করে এই বৈঠক বাতিল করা হয়। ২০১৫-১৬ সালে কাশ্মীরের ক্ষমতায় আসে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। স্থানীয় পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে জোট করে বিজেপি কাশ্মীরের ক্ষমতায় আসে। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো নারী মুখ্যমন্ত্রী পায় জম্মু-কাশ্মীর। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মেহবুবা তাঁর বাবা মুফতি মোহাম্মদ সাইদের মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা চালালে আবার পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হন; আহত হয় ১৬ জন। ২০০০ সালের পর এটিই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা। ২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে বদলি করা হয়। একই বছর সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে মোদি সরকার। ফলে কাশ্মীর ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়।
বিশ্বগ্রামের বাইরে কাশ্মীর
বিশেষ সুবিধা বাতিল হওয়ার পর উত্তাল হয়ে ওঠে জম্মু-কাশ্মীর। সংঘাত নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে টু–জি ইন্টারনেট সেবা চালু রাখা হয়। এক অর্থে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে গোটা কাশ্মীরকে বিশ্বগ্রাম থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। এ সময় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর আবদুল্লাহ এবং এই উপত্যকার আরেক নেত্রী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে বেশ কয়েকবার গৃহবন্দী করা হয়। এদিকে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধে ভারত-পাকিস্তানের বিরল সমঝোতা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ বিবৃতিতে দেশ দুটির সামরিক বাহিনী এ কথা জানায়।
সমঝোতার বিবৃতিও আদতে কাশ্মীরকে খুব একটা আশা দেখাতে পারছে না। কাশ্মীর হচ্ছে সেই ঘরপোড়া গরু, যে সিঁদুরে মেঘ নয়, বাতাসের জোর হালকা বাড়লেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। পাবে না কেন, তার ইতিহাস তো আর দশটা অঞ্চলের মতো নয়। ভূ–স্বর্গ কাশ্মীর তো তার নিজ ঐশ্বর্য দিয়েই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে। এখানে ১৯৪৭ সাল থেকে সংকট তুলে ধরা হলেও কাশ্মীরের এই যন্ত্রণাকাল শুরু হয়েছে তারও বহু আগে। এর মূলটি খুঁজতে হলে অন্তত চলে যেতে হবে ১৮৪৬ সালে, যখন গুলাব সিং নতি স্বীকার করেন ব্রিটিশরাজের কাছে। কিংবা তারও আগে যাওয়া যায়, যেদিন প্রথম কোনো ভিনদেশি ক্ষমতাধরের চোখ মুগ্ধ হয়েছিল কাশ্মীরের রূপে। সে ইতিহাস অন্যদিকে।
আরও পড়ুন:

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

হিমালয় অঞ্চলের উপত্যকা কাশ্মীরকে দখল করেছে তিনটি দেশ, যা তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফেলেছে ত্রিশঙ্কু দশায়। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের টানাটানির মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে কাশ্মীরের। ভূ–স্বর্গ কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এই সংকট নিয়ে লিখেছেন ইয়াসিন আরাফাত।
০২ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

হিমালয় অঞ্চলের উপত্যকা কাশ্মীরকে দখল করেছে তিনটি দেশ, যা তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফেলেছে ত্রিশঙ্কু দশায়। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের টানাটানির মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে কাশ্মীরের। ভূ–স্বর্গ কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এই সংকট নিয়ে লিখেছেন ইয়াসিন আরাফাত।
০২ জুলাই ২০২১
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

হিমালয় অঞ্চলের উপত্যকা কাশ্মীরকে দখল করেছে তিনটি দেশ, যা তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফেলেছে ত্রিশঙ্কু দশায়। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের টানাটানির মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে কাশ্মীরের। ভূ–স্বর্গ কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এই সংকট নিয়ে লিখেছেন ইয়াসিন আরাফাত।
০২ জুলাই ২০২১
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

হিমালয় অঞ্চলের উপত্যকা কাশ্মীরকে দখল করেছে তিনটি দেশ, যা তাকে আক্ষরিক অর্থেই ফেলেছে ত্রিশঙ্কু দশায়। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের টানাটানির মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে কাশ্মীরের। ভূ–স্বর্গ কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। এই সংকট নিয়ে লিখেছেন ইয়াসিন আরাফাত।
০২ জুলাই ২০২১
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে