আজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীনা মার্সেনারি তথা ভাড়াটে ২৫ সেনাকে নিয়ে একটি বিমান গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এটি মিয়ানমারের উপকূল থেকে বেশ কাছেই। চার বছর আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন দক্ষিণের এই প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খল এক গৃহযুদ্ধের মাঝে মিয়ানমারে চীনা মার্সেনারির আগমন দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই ইঙ্গিত।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিশৃঙ্খল ও সহিংস হয়ে উঠতে দেখেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। দেশটি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাজ করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে।
মিয়ানমারে চীনের বিভিন্ন স্বার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব নাকচ করা। এ ছাড়া, রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত চলে গেছে।
মিয়ানমারে চীন কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পাইপলাইনের আশপাশে চীন কী করছে তা অনুসরণ করা। এই পাইপলাইন চীনের মোট তেল-গ্যাস আমদানির একটি ছোট অংশ বহন করে। এই তেল-গ্যাস কেবলই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য যথেষ্ট, সারা দেশের জন্য নয়। তবে এই পাইপলাইনের ফলে তেল-গ্যাসবাহী নৌযানগুলোকে মালাক্কা প্রণালি এবং ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয় না। যদি কখনো চীন-আমেরিকার যুদ্ধ হয়, তাহলে এই পাইপলাইন চীনা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন হয়ে উঠবে।
এই পাইপলাইন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই পাইপলাইন যে পথ ধরে গেছে, সেসব এলাকার কোনো অংশই সংঘাত থেকে রেহাই পায়নি। তবুও এটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে। এই অক্ষত রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে সহিংস, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের চতুর কূটনীতিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অন্যদিকে মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি তাদের শীতল, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রামরি দ্বীপে আসা চীনা ভাড়াটে সেনারা সম্ভবত সাবেক সৈনিক। তবে তারা রামরি দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতে আসেনি। চীনের লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগরে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করা। পাইপলাইন টার্মিনালগুলোর পাশাপাশি, কাছাকাছি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। একটি প্রস্তাবিত রেলপথ দিয়ে এই বন্দরকে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার রাজি হতেই হয়েছে।’ কারণ, বর্তমান মিয়ানমারে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীই চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তাৎমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি অর্জন করে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরের বছর আরাকান আর্মি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে—এই আশঙ্কায় সেনাবাহিনী ও অং সান সুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বেসামরিক সরকার এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ মাস পরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জান্তাবাহিনী। এর পরপরই মিয়ানমার জুড়ে অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের উপযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এরপর, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক তখনই আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরতি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লোকবলের অভাবে জান্তা তখন অভাবনীয় এক কাজ করে। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দিতে শুরু করে এবং লড়াই করতে বাধ্য করে। এতে তেমন লাভ হয়নি। এক বছরের মধ্যেই তাৎমাদাও রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরপর এমন ধারাবাহিক পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভাবতে পারেন যে, তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী সম্পর্ক এবং রাখাইনে তাদের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিলে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনের উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু না। চীন দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। আরাকান আর্মির দ্রুত অগ্রগতিতেও অস্বস্তিতে নেই চীন। আরাকান আর্মি চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা চীনা বিনিয়োগ সমর্থন করে। গোষ্ঠীটি পাইপলাইনের কাছাকাছি ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। এমনকি জান্তাবাহিনীর হাত থেকে পাইপলাইনের পাম্পিং স্টেশনগুলো দখল করার সময়ও এর ক্ষতি করেনি। তারা তেল-গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে চীনা তেল-গ্যাসের পাইপলাইনটি আরাকান পর্বতমালা অতিক্রম করে এক শুষ্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই শুষ্ক সমভূমি মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর মূল কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে তাৎমাদাও এই অঞ্চলের তরুণদের ব্যাপকহারে বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটির সীমান্ত এলাকা একের পর এক সংঘাতে জর্জরিত হলেও, এই সমভূমিতে অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে খুব বেশি অশান্তি ছিল না।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জান্তাবাহিনী যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে গুলি করে দমন করে, তখন এই সমভূমি অঞ্চলের তরুণেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর বড় একটি অংশ একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এসব গোষ্ঠীর বেশির ভাগ স্বাধীন হলেও কিছু দল সামরিক শাসনবিরোধী এবং বিদেশে বা জাতিগত সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় থাকা নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
শুরুতে প্রতিরোধে যোগ দেওয়া অনেক গোষ্ঠীই জান্তার পাশাপাশি চীনের প্রতি বিরূপ ছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, চীনের সমর্থনের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটাতে পেরেছে জান্তা। কারণ ১৯৮৮-২০১১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারকেও চীন সমর্থন দিয়েছিল। তাই এই সংঘাতের প্রথম দিকে চীনা পাইপলাইন বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সরকার বা এনইউজি তাদের থামতে নির্দেশ দেয়। এই সরকারের ভয় ছিল যে, পাইপলাইনে হামলা হলে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে চীন এবং বিশ্বের কাছে তাদের পরিচিতি লাভের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
তারপরও পাইপলাইন হামলার শিকার হয়েছে। মান্দালয়ের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতোগির কাছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে (দুইবার) গেরিলারা পাইপলাইনে হামলা চালায়। তবে, দুর্বল অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। পরবর্তী দিনগুলোতে সেনাবাহিনী তাদের কয়েক ডজন বেসামরিক সমর্থককে আটক করে এবং চীনকে বোঝাতে চায় যে, তারা বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে কঠোর সুরক্ষা দেবে।
কিছুদিন আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরোধ কমান্ডার দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, পাইপলাইনে হামলা না করার জন্য এখন তাদের আর বলে দিতে হয় না। তিনি বলেন, এটি তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রক্সিদের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ—এবং মাঝে মাঝে ভারী সামরিক সরঞ্জাম—সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন প্রতিরোধ বাহিনী চীনকে ক্ষুব্ধ করে, তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো কয়েক মাসের জন্য।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গ্রাম বা শহর দখল করে রাখতে হিমশিম খেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তারা মাত্র একদিনের জন্য নাতোগি দখল করেছিল, তাৎমাদাওয়ের শক্তিবৃদ্ধি হলে তারা পিছু হটে। তবে, গ্রামাঞ্চলে এই দলগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পরিচালনা করছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো—শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাগাইন শহরের কাছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৬০০ জন আহত হন। কিন্তু উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীরা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পৌঁছাতে সংগ্রাম করেছে এবং জান্তা সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখায় দুর্ভোগ বা প্রয়োজনের কোনো খবর বাইরে আসতে দেরি হচ্ছে।
ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি হয়েও থাকে তাহলে চীনা প্রকৌশলীরা কোনো পক্ষের বাধার মুখে না পড়েই ত্রাণ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। মান্দালয়ের কাছে পাইপলাইনটি শুষ্ক অঞ্চল থেকে একটি খাঁড়া ঢাল বেয়ে শান পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে। এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর নামে। জাতিগত সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার পাইপলাইন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা পাইপলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পথে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল। শান রাজ্যে চীনা পাইপলাইনের বেশির ভাগ অংশ তখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত।
এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য জান্তা চীন, প্রতারক এবং নিজেকেই দায়ী করতে পারে। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত মানবপাচারের সব কেন্দ্র থেকে প্রতারক-দালালেরা চীনা সঞ্চয়কারীদের ঠকাত। প্রায়শই তারা চীনাদের জোর করে ধরে এনে এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করত। ২০২৩ সালে এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা চীনের জন্য মিয়ানমারে এক নতুন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা আবার পুরোনো জাতিগত মিলিশিয়া—তারা তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগ করে নেওয়ার চুক্তিতে সীমান্ত পাহারা দিত। তারা প্রতারকদের কাছ থেকে ঘুষ নিত এবং তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিত। ২০২৩ সালে চীনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জান্তা সরকার এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারেনি বা চায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিরক্ত হয়ে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সীমান্ত শহর লাউকাং দখল করে স্ক্যাম সেন্টারগুলো সাফ করার অনুমতি দেয়। এই জোটটি আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ব্রাদারহুড শান রাজ্যের শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাৎমাদাওয়ের অবস্থানে আক্রমণ করে। এটি ছিল এক শোচনীয় পরাজয়। হাজার হাজার তাৎমাদাও সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। অপারেশন ১০২৭ (তারিখের নামে নামকরণ করা) ব্রাদারহুড গোষ্ঠীগুলোকে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী শক্তিতে পরিণত করে।
বিদ্রোহীরা লাউকাং দখলের পর চীন দ্রুত গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু একবার যা শুরু হয়েছিল, তা আর থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুনে ব্রাদারহুড যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই জোটের একটি গোষ্ঠী শান রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১ লাখ জনসংখ্যার শহর লাশিও দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া সবচেয়ে বড় শহর। ব্রাদারহুডের তৃতীয় সদস্য মান্দালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। আগস্টের মধ্যে তারা প্রায় পিন উ লুইনে পৌঁছে গিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে চীন অসন্তুষ্ট হয়। মিয়ানমারের যেকোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও, ব্রাদারহুডের অগ্রগতির কারণে জান্তা ভেঙে পড়তে পারে এবং বিদ্রোহের দাবানল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা তারা নেভাতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় চীন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং ব্রাদারহুডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দেশটির একটি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে অপহরণও করে। ২২ এপ্রিল ব্রাদারহুড লাশিও থেকে সরে আসে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হতবাক করে দিয়ে চীনা কূটনীতিকেরা শহরে জান্তার ফিরে আসার তত্ত্বাবধান করেন। তবে নতুন ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এসব ঘটনা পাইপলাইনকেও তীব্র যুদ্ধের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে সিপাও এবং নওংখিও টাউনশিপে। সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আশঙ্কা করেন যে, তাৎমাদাওয়ের বিমানবাহিনীর পাইলটেরা হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে পাইপলাইনে বোমা ফেলতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে যে গৃহযুদ্ধের কোনো পক্ষই চীনা রোষানল এড়াতে পারবে না। এখন বেসামরিকেরা এই পাইপলাইনের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। কারণ তারা জানে, এটি এমন কিছু যা থেকে উভয় পক্ষই দূরে থাকতে চায়।
মিয়ানমারে কী ঘটছে সেদিকে চীনের সব সময়ই গভীর নজর ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, হাজার হাজার পরাজিত জাতীয়তাবাদী বা কুওমিনতাং শান পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কমিউনিস্ট ইউনানে অভিযান চালায়। কুওমিনতাং বহু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি এড়াতে চীন মিয়ানমারে বন্দুকধারী যে কারও সঙ্গে কাজ করে। জান্তা ও সেই সব জাতিগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যারা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের জন্য আদর্শকে ত্যাগ করে। তবে তারা পরোক্ষভাবে হলেও গণতন্ত্রপন্থী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। এই পদ্ধতি চীনকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ নাটকে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে মিয়ানমারের বিপ্লবীরা পশ্চিমা সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। এটি দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখে একটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে পশ্চিমা সহায়তার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই থেকে যায় এবং এই গোষ্ঠীগুলোও চীনের দিকে তাকাতে শুরু করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনইউজি (জাতীয় ঐক্য সরকার) চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দশ-দফা নীতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ, যেমন পাইপলাইনে বিনিয়োগ সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনইউজির প্রতিশ্রুতির বিশদ বিবরণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের একটি শব্দ ব্যবহার, যা চীন খুঁজছিল—‘পাউক-ফাউ।’ এটি দুই দেশের সম্পর্ক বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি বর্মিজ ভাষায় বিশেষ শব্দ। এটি বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝায়। মিয়ানমার যে-ই শাসন করুক না কেন, তার বড় চীন ভাই নজর রাখছে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চীনা মার্সেনারি তথা ভাড়াটে ২৫ সেনাকে নিয়ে একটি বিমান গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এটি মিয়ানমারের উপকূল থেকে বেশ কাছেই। চার বছর আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন দক্ষিণের এই প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খল এক গৃহযুদ্ধের মাঝে মিয়ানমারে চীনা মার্সেনারির আগমন দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই ইঙ্গিত।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিশৃঙ্খল ও সহিংস হয়ে উঠতে দেখেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। দেশটি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাজ করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে।
মিয়ানমারে চীনের বিভিন্ন স্বার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব নাকচ করা। এ ছাড়া, রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত চলে গেছে।
মিয়ানমারে চীন কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পাইপলাইনের আশপাশে চীন কী করছে তা অনুসরণ করা। এই পাইপলাইন চীনের মোট তেল-গ্যাস আমদানির একটি ছোট অংশ বহন করে। এই তেল-গ্যাস কেবলই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য যথেষ্ট, সারা দেশের জন্য নয়। তবে এই পাইপলাইনের ফলে তেল-গ্যাসবাহী নৌযানগুলোকে মালাক্কা প্রণালি এবং ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয় না। যদি কখনো চীন-আমেরিকার যুদ্ধ হয়, তাহলে এই পাইপলাইন চীনা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন হয়ে উঠবে।
এই পাইপলাইন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই পাইপলাইন যে পথ ধরে গেছে, সেসব এলাকার কোনো অংশই সংঘাত থেকে রেহাই পায়নি। তবুও এটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে। এই অক্ষত রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে সহিংস, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের চতুর কূটনীতিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অন্যদিকে মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি তাদের শীতল, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রামরি দ্বীপে আসা চীনা ভাড়াটে সেনারা সম্ভবত সাবেক সৈনিক। তবে তারা রামরি দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতে আসেনি। চীনের লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগরে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করা। পাইপলাইন টার্মিনালগুলোর পাশাপাশি, কাছাকাছি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। একটি প্রস্তাবিত রেলপথ দিয়ে এই বন্দরকে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার রাজি হতেই হয়েছে।’ কারণ, বর্তমান মিয়ানমারে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীই চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তাৎমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি অর্জন করে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরের বছর আরাকান আর্মি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে—এই আশঙ্কায় সেনাবাহিনী ও অং সান সুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বেসামরিক সরকার এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ মাস পরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জান্তাবাহিনী। এর পরপরই মিয়ানমার জুড়ে অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের উপযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এরপর, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক তখনই আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরতি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লোকবলের অভাবে জান্তা তখন অভাবনীয় এক কাজ করে। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দিতে শুরু করে এবং লড়াই করতে বাধ্য করে। এতে তেমন লাভ হয়নি। এক বছরের মধ্যেই তাৎমাদাও রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরপর এমন ধারাবাহিক পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভাবতে পারেন যে, তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী সম্পর্ক এবং রাখাইনে তাদের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিলে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনের উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু না। চীন দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। আরাকান আর্মির দ্রুত অগ্রগতিতেও অস্বস্তিতে নেই চীন। আরাকান আর্মি চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা চীনা বিনিয়োগ সমর্থন করে। গোষ্ঠীটি পাইপলাইনের কাছাকাছি ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। এমনকি জান্তাবাহিনীর হাত থেকে পাইপলাইনের পাম্পিং স্টেশনগুলো দখল করার সময়ও এর ক্ষতি করেনি। তারা তেল-গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে চীনা তেল-গ্যাসের পাইপলাইনটি আরাকান পর্বতমালা অতিক্রম করে এক শুষ্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই শুষ্ক সমভূমি মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর মূল কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে তাৎমাদাও এই অঞ্চলের তরুণদের ব্যাপকহারে বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটির সীমান্ত এলাকা একের পর এক সংঘাতে জর্জরিত হলেও, এই সমভূমিতে অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে খুব বেশি অশান্তি ছিল না।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জান্তাবাহিনী যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে গুলি করে দমন করে, তখন এই সমভূমি অঞ্চলের তরুণেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর বড় একটি অংশ একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এসব গোষ্ঠীর বেশির ভাগ স্বাধীন হলেও কিছু দল সামরিক শাসনবিরোধী এবং বিদেশে বা জাতিগত সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় থাকা নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
শুরুতে প্রতিরোধে যোগ দেওয়া অনেক গোষ্ঠীই জান্তার পাশাপাশি চীনের প্রতি বিরূপ ছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, চীনের সমর্থনের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটাতে পেরেছে জান্তা। কারণ ১৯৮৮-২০১১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারকেও চীন সমর্থন দিয়েছিল। তাই এই সংঘাতের প্রথম দিকে চীনা পাইপলাইন বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সরকার বা এনইউজি তাদের থামতে নির্দেশ দেয়। এই সরকারের ভয় ছিল যে, পাইপলাইনে হামলা হলে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে চীন এবং বিশ্বের কাছে তাদের পরিচিতি লাভের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
তারপরও পাইপলাইন হামলার শিকার হয়েছে। মান্দালয়ের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতোগির কাছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে (দুইবার) গেরিলারা পাইপলাইনে হামলা চালায়। তবে, দুর্বল অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। পরবর্তী দিনগুলোতে সেনাবাহিনী তাদের কয়েক ডজন বেসামরিক সমর্থককে আটক করে এবং চীনকে বোঝাতে চায় যে, তারা বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে কঠোর সুরক্ষা দেবে।
কিছুদিন আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরোধ কমান্ডার দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, পাইপলাইনে হামলা না করার জন্য এখন তাদের আর বলে দিতে হয় না। তিনি বলেন, এটি তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রক্সিদের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ—এবং মাঝে মাঝে ভারী সামরিক সরঞ্জাম—সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন প্রতিরোধ বাহিনী চীনকে ক্ষুব্ধ করে, তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো কয়েক মাসের জন্য।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গ্রাম বা শহর দখল করে রাখতে হিমশিম খেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তারা মাত্র একদিনের জন্য নাতোগি দখল করেছিল, তাৎমাদাওয়ের শক্তিবৃদ্ধি হলে তারা পিছু হটে। তবে, গ্রামাঞ্চলে এই দলগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পরিচালনা করছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো—শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাগাইন শহরের কাছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৬০০ জন আহত হন। কিন্তু উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীরা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পৌঁছাতে সংগ্রাম করেছে এবং জান্তা সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখায় দুর্ভোগ বা প্রয়োজনের কোনো খবর বাইরে আসতে দেরি হচ্ছে।
ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি হয়েও থাকে তাহলে চীনা প্রকৌশলীরা কোনো পক্ষের বাধার মুখে না পড়েই ত্রাণ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। মান্দালয়ের কাছে পাইপলাইনটি শুষ্ক অঞ্চল থেকে একটি খাঁড়া ঢাল বেয়ে শান পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে। এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর নামে। জাতিগত সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার পাইপলাইন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা পাইপলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পথে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল। শান রাজ্যে চীনা পাইপলাইনের বেশির ভাগ অংশ তখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত।
এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য জান্তা চীন, প্রতারক এবং নিজেকেই দায়ী করতে পারে। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত মানবপাচারের সব কেন্দ্র থেকে প্রতারক-দালালেরা চীনা সঞ্চয়কারীদের ঠকাত। প্রায়শই তারা চীনাদের জোর করে ধরে এনে এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করত। ২০২৩ সালে এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা চীনের জন্য মিয়ানমারে এক নতুন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা আবার পুরোনো জাতিগত মিলিশিয়া—তারা তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগ করে নেওয়ার চুক্তিতে সীমান্ত পাহারা দিত। তারা প্রতারকদের কাছ থেকে ঘুষ নিত এবং তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিত। ২০২৩ সালে চীনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জান্তা সরকার এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারেনি বা চায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিরক্ত হয়ে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সীমান্ত শহর লাউকাং দখল করে স্ক্যাম সেন্টারগুলো সাফ করার অনুমতি দেয়। এই জোটটি আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ব্রাদারহুড শান রাজ্যের শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাৎমাদাওয়ের অবস্থানে আক্রমণ করে। এটি ছিল এক শোচনীয় পরাজয়। হাজার হাজার তাৎমাদাও সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। অপারেশন ১০২৭ (তারিখের নামে নামকরণ করা) ব্রাদারহুড গোষ্ঠীগুলোকে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী শক্তিতে পরিণত করে।
বিদ্রোহীরা লাউকাং দখলের পর চীন দ্রুত গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু একবার যা শুরু হয়েছিল, তা আর থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুনে ব্রাদারহুড যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই জোটের একটি গোষ্ঠী শান রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১ লাখ জনসংখ্যার শহর লাশিও দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া সবচেয়ে বড় শহর। ব্রাদারহুডের তৃতীয় সদস্য মান্দালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। আগস্টের মধ্যে তারা প্রায় পিন উ লুইনে পৌঁছে গিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে চীন অসন্তুষ্ট হয়। মিয়ানমারের যেকোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও, ব্রাদারহুডের অগ্রগতির কারণে জান্তা ভেঙে পড়তে পারে এবং বিদ্রোহের দাবানল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা তারা নেভাতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় চীন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং ব্রাদারহুডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দেশটির একটি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে অপহরণও করে। ২২ এপ্রিল ব্রাদারহুড লাশিও থেকে সরে আসে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হতবাক করে দিয়ে চীনা কূটনীতিকেরা শহরে জান্তার ফিরে আসার তত্ত্বাবধান করেন। তবে নতুন ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এসব ঘটনা পাইপলাইনকেও তীব্র যুদ্ধের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে সিপাও এবং নওংখিও টাউনশিপে। সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আশঙ্কা করেন যে, তাৎমাদাওয়ের বিমানবাহিনীর পাইলটেরা হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে পাইপলাইনে বোমা ফেলতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে যে গৃহযুদ্ধের কোনো পক্ষই চীনা রোষানল এড়াতে পারবে না। এখন বেসামরিকেরা এই পাইপলাইনের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। কারণ তারা জানে, এটি এমন কিছু যা থেকে উভয় পক্ষই দূরে থাকতে চায়।
মিয়ানমারে কী ঘটছে সেদিকে চীনের সব সময়ই গভীর নজর ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, হাজার হাজার পরাজিত জাতীয়তাবাদী বা কুওমিনতাং শান পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কমিউনিস্ট ইউনানে অভিযান চালায়। কুওমিনতাং বহু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি এড়াতে চীন মিয়ানমারে বন্দুকধারী যে কারও সঙ্গে কাজ করে। জান্তা ও সেই সব জাতিগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যারা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের জন্য আদর্শকে ত্যাগ করে। তবে তারা পরোক্ষভাবে হলেও গণতন্ত্রপন্থী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। এই পদ্ধতি চীনকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ নাটকে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে মিয়ানমারের বিপ্লবীরা পশ্চিমা সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। এটি দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখে একটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে পশ্চিমা সহায়তার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই থেকে যায় এবং এই গোষ্ঠীগুলোও চীনের দিকে তাকাতে শুরু করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনইউজি (জাতীয় ঐক্য সরকার) চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দশ-দফা নীতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ, যেমন পাইপলাইনে বিনিয়োগ সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনইউজির প্রতিশ্রুতির বিশদ বিবরণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের একটি শব্দ ব্যবহার, যা চীন খুঁজছিল—‘পাউক-ফাউ।’ এটি দুই দেশের সম্পর্ক বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি বর্মিজ ভাষায় বিশেষ শব্দ। এটি বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝায়। মিয়ানমার যে-ই শাসন করুক না কেন, তার বড় চীন ভাই নজর রাখছে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীনা মার্সেনারি তথা ভাড়াটে ২৫ সেনাকে নিয়ে একটি বিমান গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এটি মিয়ানমারের উপকূল থেকে বেশ কাছেই। চার বছর আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন দক্ষিণের এই প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খল এক গৃহযুদ্ধের মাঝে মিয়ানমারে চীনা মার্সেনারির আগমন দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই ইঙ্গিত।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিশৃঙ্খল ও সহিংস হয়ে উঠতে দেখেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। দেশটি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাজ করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে।
মিয়ানমারে চীনের বিভিন্ন স্বার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব নাকচ করা। এ ছাড়া, রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত চলে গেছে।
মিয়ানমারে চীন কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পাইপলাইনের আশপাশে চীন কী করছে তা অনুসরণ করা। এই পাইপলাইন চীনের মোট তেল-গ্যাস আমদানির একটি ছোট অংশ বহন করে। এই তেল-গ্যাস কেবলই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য যথেষ্ট, সারা দেশের জন্য নয়। তবে এই পাইপলাইনের ফলে তেল-গ্যাসবাহী নৌযানগুলোকে মালাক্কা প্রণালি এবং ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয় না। যদি কখনো চীন-আমেরিকার যুদ্ধ হয়, তাহলে এই পাইপলাইন চীনা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন হয়ে উঠবে।
এই পাইপলাইন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই পাইপলাইন যে পথ ধরে গেছে, সেসব এলাকার কোনো অংশই সংঘাত থেকে রেহাই পায়নি। তবুও এটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে। এই অক্ষত রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে সহিংস, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের চতুর কূটনীতিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অন্যদিকে মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি তাদের শীতল, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রামরি দ্বীপে আসা চীনা ভাড়াটে সেনারা সম্ভবত সাবেক সৈনিক। তবে তারা রামরি দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতে আসেনি। চীনের লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগরে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করা। পাইপলাইন টার্মিনালগুলোর পাশাপাশি, কাছাকাছি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। একটি প্রস্তাবিত রেলপথ দিয়ে এই বন্দরকে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার রাজি হতেই হয়েছে।’ কারণ, বর্তমান মিয়ানমারে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীই চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তাৎমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি অর্জন করে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরের বছর আরাকান আর্মি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে—এই আশঙ্কায় সেনাবাহিনী ও অং সান সুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বেসামরিক সরকার এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ মাস পরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জান্তাবাহিনী। এর পরপরই মিয়ানমার জুড়ে অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের উপযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এরপর, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক তখনই আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরতি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লোকবলের অভাবে জান্তা তখন অভাবনীয় এক কাজ করে। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দিতে শুরু করে এবং লড়াই করতে বাধ্য করে। এতে তেমন লাভ হয়নি। এক বছরের মধ্যেই তাৎমাদাও রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরপর এমন ধারাবাহিক পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভাবতে পারেন যে, তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী সম্পর্ক এবং রাখাইনে তাদের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিলে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনের উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু না। চীন দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। আরাকান আর্মির দ্রুত অগ্রগতিতেও অস্বস্তিতে নেই চীন। আরাকান আর্মি চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা চীনা বিনিয়োগ সমর্থন করে। গোষ্ঠীটি পাইপলাইনের কাছাকাছি ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। এমনকি জান্তাবাহিনীর হাত থেকে পাইপলাইনের পাম্পিং স্টেশনগুলো দখল করার সময়ও এর ক্ষতি করেনি। তারা তেল-গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে চীনা তেল-গ্যাসের পাইপলাইনটি আরাকান পর্বতমালা অতিক্রম করে এক শুষ্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই শুষ্ক সমভূমি মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর মূল কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে তাৎমাদাও এই অঞ্চলের তরুণদের ব্যাপকহারে বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটির সীমান্ত এলাকা একের পর এক সংঘাতে জর্জরিত হলেও, এই সমভূমিতে অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে খুব বেশি অশান্তি ছিল না।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জান্তাবাহিনী যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে গুলি করে দমন করে, তখন এই সমভূমি অঞ্চলের তরুণেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর বড় একটি অংশ একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এসব গোষ্ঠীর বেশির ভাগ স্বাধীন হলেও কিছু দল সামরিক শাসনবিরোধী এবং বিদেশে বা জাতিগত সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় থাকা নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
শুরুতে প্রতিরোধে যোগ দেওয়া অনেক গোষ্ঠীই জান্তার পাশাপাশি চীনের প্রতি বিরূপ ছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, চীনের সমর্থনের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটাতে পেরেছে জান্তা। কারণ ১৯৮৮-২০১১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারকেও চীন সমর্থন দিয়েছিল। তাই এই সংঘাতের প্রথম দিকে চীনা পাইপলাইন বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সরকার বা এনইউজি তাদের থামতে নির্দেশ দেয়। এই সরকারের ভয় ছিল যে, পাইপলাইনে হামলা হলে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে চীন এবং বিশ্বের কাছে তাদের পরিচিতি লাভের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
তারপরও পাইপলাইন হামলার শিকার হয়েছে। মান্দালয়ের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতোগির কাছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে (দুইবার) গেরিলারা পাইপলাইনে হামলা চালায়। তবে, দুর্বল অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। পরবর্তী দিনগুলোতে সেনাবাহিনী তাদের কয়েক ডজন বেসামরিক সমর্থককে আটক করে এবং চীনকে বোঝাতে চায় যে, তারা বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে কঠোর সুরক্ষা দেবে।
কিছুদিন আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরোধ কমান্ডার দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, পাইপলাইনে হামলা না করার জন্য এখন তাদের আর বলে দিতে হয় না। তিনি বলেন, এটি তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রক্সিদের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ—এবং মাঝে মাঝে ভারী সামরিক সরঞ্জাম—সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন প্রতিরোধ বাহিনী চীনকে ক্ষুব্ধ করে, তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো কয়েক মাসের জন্য।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গ্রাম বা শহর দখল করে রাখতে হিমশিম খেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তারা মাত্র একদিনের জন্য নাতোগি দখল করেছিল, তাৎমাদাওয়ের শক্তিবৃদ্ধি হলে তারা পিছু হটে। তবে, গ্রামাঞ্চলে এই দলগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পরিচালনা করছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো—শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাগাইন শহরের কাছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৬০০ জন আহত হন। কিন্তু উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীরা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পৌঁছাতে সংগ্রাম করেছে এবং জান্তা সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখায় দুর্ভোগ বা প্রয়োজনের কোনো খবর বাইরে আসতে দেরি হচ্ছে।
ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি হয়েও থাকে তাহলে চীনা প্রকৌশলীরা কোনো পক্ষের বাধার মুখে না পড়েই ত্রাণ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। মান্দালয়ের কাছে পাইপলাইনটি শুষ্ক অঞ্চল থেকে একটি খাঁড়া ঢাল বেয়ে শান পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে। এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর নামে। জাতিগত সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার পাইপলাইন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা পাইপলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পথে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল। শান রাজ্যে চীনা পাইপলাইনের বেশির ভাগ অংশ তখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত।
এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য জান্তা চীন, প্রতারক এবং নিজেকেই দায়ী করতে পারে। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত মানবপাচারের সব কেন্দ্র থেকে প্রতারক-দালালেরা চীনা সঞ্চয়কারীদের ঠকাত। প্রায়শই তারা চীনাদের জোর করে ধরে এনে এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করত। ২০২৩ সালে এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা চীনের জন্য মিয়ানমারে এক নতুন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা আবার পুরোনো জাতিগত মিলিশিয়া—তারা তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগ করে নেওয়ার চুক্তিতে সীমান্ত পাহারা দিত। তারা প্রতারকদের কাছ থেকে ঘুষ নিত এবং তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিত। ২০২৩ সালে চীনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জান্তা সরকার এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারেনি বা চায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিরক্ত হয়ে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সীমান্ত শহর লাউকাং দখল করে স্ক্যাম সেন্টারগুলো সাফ করার অনুমতি দেয়। এই জোটটি আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ব্রাদারহুড শান রাজ্যের শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাৎমাদাওয়ের অবস্থানে আক্রমণ করে। এটি ছিল এক শোচনীয় পরাজয়। হাজার হাজার তাৎমাদাও সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। অপারেশন ১০২৭ (তারিখের নামে নামকরণ করা) ব্রাদারহুড গোষ্ঠীগুলোকে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী শক্তিতে পরিণত করে।
বিদ্রোহীরা লাউকাং দখলের পর চীন দ্রুত গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু একবার যা শুরু হয়েছিল, তা আর থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুনে ব্রাদারহুড যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই জোটের একটি গোষ্ঠী শান রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১ লাখ জনসংখ্যার শহর লাশিও দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া সবচেয়ে বড় শহর। ব্রাদারহুডের তৃতীয় সদস্য মান্দালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। আগস্টের মধ্যে তারা প্রায় পিন উ লুইনে পৌঁছে গিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে চীন অসন্তুষ্ট হয়। মিয়ানমারের যেকোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও, ব্রাদারহুডের অগ্রগতির কারণে জান্তা ভেঙে পড়তে পারে এবং বিদ্রোহের দাবানল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা তারা নেভাতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় চীন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং ব্রাদারহুডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দেশটির একটি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে অপহরণও করে। ২২ এপ্রিল ব্রাদারহুড লাশিও থেকে সরে আসে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হতবাক করে দিয়ে চীনা কূটনীতিকেরা শহরে জান্তার ফিরে আসার তত্ত্বাবধান করেন। তবে নতুন ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এসব ঘটনা পাইপলাইনকেও তীব্র যুদ্ধের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে সিপাও এবং নওংখিও টাউনশিপে। সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আশঙ্কা করেন যে, তাৎমাদাওয়ের বিমানবাহিনীর পাইলটেরা হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে পাইপলাইনে বোমা ফেলতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে যে গৃহযুদ্ধের কোনো পক্ষই চীনা রোষানল এড়াতে পারবে না। এখন বেসামরিকেরা এই পাইপলাইনের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। কারণ তারা জানে, এটি এমন কিছু যা থেকে উভয় পক্ষই দূরে থাকতে চায়।
মিয়ানমারে কী ঘটছে সেদিকে চীনের সব সময়ই গভীর নজর ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, হাজার হাজার পরাজিত জাতীয়তাবাদী বা কুওমিনতাং শান পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কমিউনিস্ট ইউনানে অভিযান চালায়। কুওমিনতাং বহু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি এড়াতে চীন মিয়ানমারে বন্দুকধারী যে কারও সঙ্গে কাজ করে। জান্তা ও সেই সব জাতিগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যারা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের জন্য আদর্শকে ত্যাগ করে। তবে তারা পরোক্ষভাবে হলেও গণতন্ত্রপন্থী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। এই পদ্ধতি চীনকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ নাটকে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে মিয়ানমারের বিপ্লবীরা পশ্চিমা সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। এটি দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখে একটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে পশ্চিমা সহায়তার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই থেকে যায় এবং এই গোষ্ঠীগুলোও চীনের দিকে তাকাতে শুরু করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনইউজি (জাতীয় ঐক্য সরকার) চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দশ-দফা নীতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ, যেমন পাইপলাইনে বিনিয়োগ সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনইউজির প্রতিশ্রুতির বিশদ বিবরণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের একটি শব্দ ব্যবহার, যা চীন খুঁজছিল—‘পাউক-ফাউ।’ এটি দুই দেশের সম্পর্ক বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি বর্মিজ ভাষায় বিশেষ শব্দ। এটি বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝায়। মিয়ানমার যে-ই শাসন করুক না কেন, তার বড় চীন ভাই নজর রাখছে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চীনা মার্সেনারি তথা ভাড়াটে ২৫ সেনাকে নিয়ে একটি বিমান গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অবতরণ করে মিয়ানমারের রামরি দ্বীপে। এটি মিয়ানমারের উপকূল থেকে বেশ কাছেই। চার বছর আগে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন দক্ষিণের এই প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। বিশৃঙ্খল এক গৃহযুদ্ধের মাঝে মিয়ানমারে চীনা মার্সেনারির আগমন দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই ইঙ্গিত।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিশৃঙ্খল ও সহিংস হয়ে উঠতে দেখেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। দেশটি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কাজ করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে।
মিয়ানমারে চীনের বিভিন্ন স্বার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পশ্চিমা প্রভাব নাকচ করা। এ ছাড়া, রামরি দ্বীপ থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তেল-গ্যাস পাইপলাইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এই পাইপলাইনটি মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পর্যন্ত চলে গেছে।
মিয়ানমারে চীন কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই পাইপলাইনের আশপাশে চীন কী করছে তা অনুসরণ করা। এই পাইপলাইন চীনের মোট তেল-গ্যাস আমদানির একটি ছোট অংশ বহন করে। এই তেল-গ্যাস কেবলই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের জন্য যথেষ্ট, সারা দেশের জন্য নয়। তবে এই পাইপলাইনের ফলে তেল-গ্যাসবাহী নৌযানগুলোকে মালাক্কা প্রণালি এবং ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চীনের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয় না। যদি কখনো চীন-আমেরিকার যুদ্ধ হয়, তাহলে এই পাইপলাইন চীনা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন হয়ে উঠবে।
এই পাইপলাইন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের প্রতিচ্ছবিও বটে। এই পাইপলাইন যে পথ ধরে গেছে, সেসব এলাকার কোনো অংশই সংঘাত থেকে রেহাই পায়নি। তবুও এটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেছে। এই অক্ষত রয়ে যাওয়ার বিষয়টি একদিকে সহিংস, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে চীনের চতুর কূটনীতিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং অন্যদিকে মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতি তাদের শীতল, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রামরি দ্বীপে আসা চীনা ভাড়াটে সেনারা সম্ভবত সাবেক সৈনিক। তবে তারা রামরি দ্বীপের মূল ভূখণ্ড রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতে আসেনি। চীনের লক্ষ্য হলো ভারত মহাসাগরে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করা। পাইপলাইন টার্মিনালগুলোর পাশাপাশি, কাছাকাছি একটি গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। একটি প্রস্তাবিত রেলপথ দিয়ে এই বন্দরকে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার রাজি হতেই হয়েছে।’ কারণ, বর্তমান মিয়ানমারে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীই চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারবে না।
তাৎমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি অর্জন করে। অন্তত ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরের বছর আরাকান আর্মি রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে—এই আশঙ্কায় সেনাবাহিনী ও অং সান সুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বেসামরিক সরকার এই বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু ৩ মাস পরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জান্তাবাহিনী। এর পরপরই মিয়ানমার জুড়ে অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু আরাকান আর্মি তাদের উপযুক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
এরপর, ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়তে শুরু করে। আর ঠিক তখনই আরাকান আর্মি যুদ্ধবিরতি ভেঙে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। লোকবলের অভাবে জান্তা তখন অভাবনীয় এক কাজ করে। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র দিতে শুরু করে এবং লড়াই করতে বাধ্য করে। এতে তেমন লাভ হয়নি। এক বছরের মধ্যেই তাৎমাদাও রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পরপর এমন ধারাবাহিক পরাজয়ের মুখোমুখি আর কখনোই হয়নি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ভাবতে পারেন যে, তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে চীনের শক্তিশালী সম্পর্ক এবং রাখাইনে তাদের বিনিয়োগ বিবেচনায় নিলে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনের উদ্বেগের কারণ হবে। কিন্তু না। চীন দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। আরাকান আর্মির দ্রুত অগ্রগতিতেও অস্বস্তিতে নেই চীন। আরাকান আর্মি চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা চীনা বিনিয়োগ সমর্থন করে। গোষ্ঠীটি পাইপলাইনের কাছাকাছি ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত ছিল। এমনকি জান্তাবাহিনীর হাত থেকে পাইপলাইনের পাম্পিং স্টেশনগুলো দখল করার সময়ও এর ক্ষতি করেনি। তারা তেল-গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হতে দিয়েছে।
রাখাইন রাজ্য থেকে চীনা তেল-গ্যাসের পাইপলাইনটি আরাকান পর্বতমালা অতিক্রম করে এক শুষ্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই শুষ্ক সমভূমি মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার জনগোষ্ঠীর মূল কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে তাৎমাদাও এই অঞ্চলের তরুণদের ব্যাপকহারে বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটির সীমান্ত এলাকা একের পর এক সংঘাতে জর্জরিত হলেও, এই সমভূমিতে অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে খুব বেশি অশান্তি ছিল না।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জান্তাবাহিনী যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে গুলি করে দমন করে, তখন এই সমভূমি অঞ্চলের তরুণেরাও অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। তারা প্রতিরোধ ইউনিট গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলোর বড় একটি অংশ একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এসব গোষ্ঠীর বেশির ভাগ স্বাধীন হলেও কিছু দল সামরিক শাসনবিরোধী এবং বিদেশে বা জাতিগত সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় থাকা নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
শুরুতে প্রতিরোধে যোগ দেওয়া অনেক গোষ্ঠীই জান্তার পাশাপাশি চীনের প্রতি বিরূপ ছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিল যে, চীনের সমর্থনের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটাতে পেরেছে জান্তা। কারণ ১৯৮৮-২০১১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারকেও চীন সমর্থন দিয়েছিল। তাই এই সংঘাতের প্রথম দিকে চীনা পাইপলাইন বিদ্রোহীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় শীর্ষে ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের সরকার বা এনইউজি তাদের থামতে নির্দেশ দেয়। এই সরকারের ভয় ছিল যে, পাইপলাইনে হামলা হলে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে চীন এবং বিশ্বের কাছে তাদের পরিচিতি লাভের প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে।
তারপরও পাইপলাইন হামলার শিকার হয়েছে। মান্দালয়ের ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাতোগির কাছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০২৩ সালের মে মাসে (দুইবার) গেরিলারা পাইপলাইনে হামলা চালায়। তবে, দুর্বল অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। পরবর্তী দিনগুলোতে সেনাবাহিনী তাদের কয়েক ডজন বেসামরিক সমর্থককে আটক করে এবং চীনকে বোঝাতে চায় যে, তারা বেইজিংয়ের বিনিয়োগকে কঠোর সুরক্ষা দেবে।
কিছুদিন আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরোধ কমান্ডার দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, পাইপলাইনে হামলা না করার জন্য এখন তাদের আর বলে দিতে হয় না। তিনি বলেন, এটি তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। চীন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রক্সিদের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ—এবং মাঝে মাঝে ভারী সামরিক সরঞ্জাম—সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন প্রতিরোধ বাহিনী চীনকে ক্ষুব্ধ করে, তখন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, কখনো কখনো কয়েক মাসের জন্য।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো গ্রাম বা শহর দখল করে রাখতে হিমশিম খেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তারা মাত্র একদিনের জন্য নাতোগি দখল করেছিল, তাৎমাদাওয়ের শক্তিবৃদ্ধি হলে তারা পিছু হটে। তবে, গ্রামাঞ্চলে এই দলগুলো সবচেয়ে শক্তিশালী। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত পরিচালনা করছে।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো—শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাগাইন শহরের কাছে। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৬০০ জন আহত হন। কিন্তু উদ্ধার ও সহায়তাকর্মীরা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় পৌঁছাতে সংগ্রাম করেছে এবং জান্তা সরকার ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে রাখায় দুর্ভোগ বা প্রয়োজনের কোনো খবর বাইরে আসতে দেরি হচ্ছে।
ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি হয়েও থাকে তাহলে চীনা প্রকৌশলীরা কোনো পক্ষের বাধার মুখে না পড়েই ত্রাণ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছাতে পারবেন। মান্দালয়ের কাছে পাইপলাইনটি শুষ্ক অঞ্চল থেকে একটি খাঁড়া ঢাল বেয়ে শান পাহাড়ের দিকে উঠে গেছে। এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর নামে। জাতিগত সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে। অভ্যুত্থানের পর জান্তা সরকার পাইপলাইন আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তাই তারা পাইপলাইনের কাছাকাছি যাওয়ার পথে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছিল। শান রাজ্যে চীনা পাইপলাইনের বেশির ভাগ অংশ তখনো জান্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত।
এই ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য জান্তা চীন, প্রতারক এবং নিজেকেই দায়ী করতে পারে। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত মানবপাচারের সব কেন্দ্র থেকে প্রতারক-দালালেরা চীনা সঞ্চয়কারীদের ঠকাত। প্রায়শই তারা চীনাদের জোর করে ধরে এনে এই প্রতারণামূলক কার্যক্রমে যুক্ত করত। ২০২৩ সালে এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা চীনের জন্য মিয়ানমারে এক নতুন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা আবার পুরোনো জাতিগত মিলিশিয়া—তারা তাৎমাদাওয়ের সঙ্গে ক্ষমতা ও রাজস্ব ভাগ করে নেওয়ার চুক্তিতে সীমান্ত পাহারা দিত। তারা প্রতারকদের কাছ থেকে ঘুষ নিত এবং তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিত। ২০২৩ সালে চীনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও জান্তা সরকার এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে পারেনি বা চায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিরক্ত হয়ে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সকে সীমান্ত শহর লাউকাং দখল করে স্ক্যাম সেন্টারগুলো সাফ করার অনুমতি দেয়। এই জোটটি আরাকান আর্মিসহ আরও দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর ব্রাদারহুড শান রাজ্যের শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাৎমাদাওয়ের অবস্থানে আক্রমণ করে। এটি ছিল এক শোচনীয় পরাজয়। হাজার হাজার তাৎমাদাও সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। অপারেশন ১০২৭ (তারিখের নামে নামকরণ করা) ব্রাদারহুড গোষ্ঠীগুলোকে মিয়ানমারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহী শক্তিতে পরিণত করে।
বিদ্রোহীরা লাউকাং দখলের পর চীন দ্রুত গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু একবার যা শুরু হয়েছিল, তা আর থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের জুনে ব্রাদারহুড যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই জোটের একটি গোষ্ঠী শান রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১ লাখ জনসংখ্যার শহর লাশিও দখল করে নেয়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে কোনো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া সবচেয়ে বড় শহর। ব্রাদারহুডের তৃতীয় সদস্য মান্দালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। আগস্টের মধ্যে তারা প্রায় পিন উ লুইনে পৌঁছে গিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোতে চীন অসন্তুষ্ট হয়। মিয়ানমারের যেকোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও, ব্রাদারহুডের অগ্রগতির কারণে জান্তা ভেঙে পড়তে পারে এবং বিদ্রোহের দাবানল এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা তারা নেভাতে পারবে না—এমন আশঙ্কায় চীন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং ব্রাদারহুডের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দেশটির একটি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে অপহরণও করে। ২২ এপ্রিল ব্রাদারহুড লাশিও থেকে সরে আসে। মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হতবাক করে দিয়ে চীনা কূটনীতিকেরা শহরে জান্তার ফিরে আসার তত্ত্বাবধান করেন। তবে নতুন ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এসব ঘটনা পাইপলাইনকেও তীব্র যুদ্ধের মুখে ফেলেছে। বিশেষ করে সিপাও এবং নওংখিও টাউনশিপে। সেখানকার কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আশঙ্কা করেন যে, তাৎমাদাওয়ের বিমানবাহিনীর পাইলটেরা হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে পাইপলাইনে বোমা ফেলতে পারে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে যে গৃহযুদ্ধের কোনো পক্ষই চীনা রোষানল এড়াতে পারবে না। এখন বেসামরিকেরা এই পাইপলাইনের কাছাকাছি আশ্রয় নেয়। কারণ তারা জানে, এটি এমন কিছু যা থেকে উভয় পক্ষই দূরে থাকতে চায়।
মিয়ানমারে কী ঘটছে সেদিকে চীনের সব সময়ই গভীর নজর ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা চীনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, হাজার হাজার পরাজিত জাতীয়তাবাদী বা কুওমিনতাং শান পাহাড়ে আশ্রয় নেয় এবং বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কমিউনিস্ট ইউনানে অভিযান চালায়। কুওমিনতাং বহু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি এড়াতে চীন মিয়ানমারে বন্দুকধারী যে কারও সঙ্গে কাজ করে। জান্তা ও সেই সব জাতিগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যারা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের জন্য আদর্শকে ত্যাগ করে। তবে তারা পরোক্ষভাবে হলেও গণতন্ত্রপন্থী প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও কাজ করেছে তাদের স্বার্থ রক্ষায়। এই পদ্ধতি চীনকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের এই ভয়াবহ নাটকে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরের দিনগুলোতে মিয়ানমারের বিপ্লবীরা পশ্চিমা সহায়তার জন্য চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। এটি দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অভিমুখে একটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারত। কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলে পশ্চিমা সহায়তার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণই থেকে যায় এবং এই গোষ্ঠীগুলোও চীনের দিকে তাকাতে শুরু করে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এনইউজি (জাতীয় ঐক্য সরকার) চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দশ-দফা নীতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা মিয়ানমারে চীনের স্বার্থ, যেমন পাইপলাইনে বিনিয়োগ সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এনইউজির প্রতিশ্রুতির বিশদ বিবরণের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের একটি শব্দ ব্যবহার, যা চীন খুঁজছিল—‘পাউক-ফাউ।’ এটি দুই দেশের সম্পর্ক বোঝানোর ক্ষেত্রে একটি বর্মিজ ভাষায় বিশেষ শব্দ। এটি বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝায়। মিয়ানমার যে-ই শাসন করুক না কেন, তার বড় চীন ভাই নজর রাখছে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার..
০২ জুন ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার..
০২ জুন ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার..
০২ জুন ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আসলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি উভয়ই চীনা ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়েছে। জান্তা সরকার মিয়ানমারে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতিকে বৈধতা দিতে একটি আইন পাশ করেছে। তবে আরাকান আর্মির অনুমোদন কম আনুষ্ঠানিক। তাদের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘অবশ্যই, তাদের একপ্রকার..
০২ জুন ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে