
বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে। এসব দেশের মধ্যে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়া অন্যতম। সম্প্রতি দেশগুলোর গাড্ডায় পড়া অর্থনীতি দারুণভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিন দেশের মধ্যে প্রথম বিপদে পড়ে জাম্বিয়া। দেশটি ২০২০ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ঘানা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এবং শ্রীলঙ্কা কয়েক মাস আগে, ২০২২ সালের জুন মাসে।
দেশগুলোর ঋণ সংকটের সাধারণ কিছু চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে, অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে অপর্যাপ্ত কর আয়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ফাঁদ ও চীনের দেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ অন্যতম।
তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু সমস্যা ছিল। যেমন, শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপানোর পাশাপাশি কৃষি খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে এমন নীতি গ্রহণ করেছিল। ঘানা অবাস্তবিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছিল এবং জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর নাজুক প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়েছিল।
নীতিগত ত্রুটি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কায় বহুমুখী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। অসময়ে কর কমানো, জৈব কৃষি গ্রহণের দ্রুত প্রচেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সময়ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হওয়ার রেকর্ড বজায় রাখার প্রচেষ্টা, বিনিময় হারের বিলম্বিত সমন্বয় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসন্ন এমন সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও তা আমলে না নেওয়া দেশটির অর্থনীতিকে দেউলিয়া হওয়ার পথে নিয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যায়। যা সংকটকে আরও ঘনীভূত করে।
তহবিলের অপব্যবহার, কর কমানো, বিপুল ভর্তুকি দিয়ে অবাস্তব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ঘানার অর্থনৈতিক পতনকে ত্বরান্বিত করে। দেশটি যেসব খাতে কর সংস্কার বা কর হ্রাস করেছে সেসব খাতের মধ্যে রয়েছে—আবাসন, আর্থিক পরিষেবা, আমদানি শুল্কের ওপর ভ্যাট কমানো, স্বাস্থ্য সেবারও ওপর থেকে কর বিলুপ্তি, জাতীয় বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের শুল্ক হ্রাস, জন বিদ্যুতায়ন খাতে শুল্ক কমানো এবং বিশেষ পেট্রোলিয়াম পণ্যের করের ওপর কর হ্রাস।
জাম্বিয়ার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও দেশটির আর্থিক ভারসাম্যহীনতা অতিরিক্ত ঋণের চাপ তৈরি করে। জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন করে ভাতা পুনঃস্থাপন, জলবায়ু দুর্বলতার কারণে অর্থনৈতিক ধাক্কা ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংকটের কারণ ভিন্ন হলেও তিনটি দেশই একই পরিণতি বরণ করেছে। দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহ ও আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ফলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট ও ঋণ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং দেশগুলোকে দেউলিয়ার পথে যেতে বাধ্য করেছে।
ঋণ সংকট শুরুর পর দেশটি তিনটি সর্বশেষ উপায় হিসেবে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়। জবাবে আইএমএফও আগ্রহ দেখায় সংকট কাটিয়ে ওঠার সহযাত্রী হতে। তবে অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও ঘানার ক্ষেত্রে এক রকম কৌশল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে জাম্বিয়ার সঙ্গে অন্যরকম কৌশল গ্রহণ করে। যেমন ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে শর্ত দেওয়া হয় আইএমএফের ঋণ পেতে হলে অবশ্যই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। বিপরীতে জাম্বিয়াকে এমন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
শর্ত মানার পর আইএমএফ ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি ডলার করে এবং জাম্বিয়াকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেয়। এই তিনটি দেশের মধ্যে জাম্বিয়া সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। কারণ দেশটি বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উচ্চ ঋণ সংবলিত দরিদ্র দেশের (এইচআইপিসি) তালিকাভুক্ত। কোনো দেশ এইচআইপিসি-ভুক্ত হওয়ার অর্থ হলো—এই দেশগুলো সুবিধাজনক শর্তে দাতা দেশগুলোর সঙ্গে পুরোনো ঋণ নবায়ন করতে পারে।
জাম্বিয়াকে দেওয়া এই সুবিধা বৈশ্বিক ঋণ সংকটের মধ্যে ‘মধ্যম আয়ের’ ফাঁদের বিষয়টিকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এই বিষয়টি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মধ্যম আয়ের যে দেশগুলো ঋণ সংকটে আবদ্ধ তাদের জন্য আরও অনেক সহজ শর্তে ঋণ ও সংকট মোকাবিলায় প্রচলিত কৌশলের বাইরে গিয়ে অধিকতর উন্নত কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন।
বৈশ্বিক ঋণ সংকটে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়ার ঋণ সংকটের ক্ষেত্রেও। কারণ জাম্বিয়ার বৈদেশিক ঋণের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশই চীনের। ঘানার বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ চীনের। ঘানায় চীনের বিনিয়োগ মূলত দেশটির কোকোয়া, বক্সাইট ও জ্বালানি তেল খাতে। এই দুই দেশে চীনের পরিমাণ সামান্য হলেও শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের প্রায় অর্ধেকই চীনের। দেশটির মোট ঋণের ৪৫ শতাংশই চীনের। আর চীন এককভাবে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঋণ দাতা হওয়ায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হলো—বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। এই ঋণ চীন সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। তাই দেশটি ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। কারণ এ ক্ষেত্রে অনেক দেশ ঋণ খেলাপি হয়ে উঠতে পারে। যা দেশটির চাপে পড়া অর্থনীতিতে আরও চাপে ফেলতে পারে। এসব কারণে চীন ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে চীন খুব সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। যেমন, দেশটিকে দেওয়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের ৪০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার কমাতে সম্মত হয়েছে আইএমএফের শর্ত মেনে। নতুন নির্ধারিত সুদহার হলো মাত্র ১ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হলো ২০৩৭ সাল।
আবার শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঋণ থাকার পরও চীন দেশটিকে আরও ৪২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের চীন সফরের সময় বিষয়টি নির্ধারিত হয়। এটি আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির শর্ত সহজ করবে। কারণ চীনা ঋণের সহায়তায় শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে দেশটির অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে বলেছেন, ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা লেভেলে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
চীন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে যে মনোভাব দেখিয়েছে তা ঘানাকে আশার আলো দেখাতেই পারে। দেশটি আশা করছে চীন আইএমএফের শর্ত পূরণে তাদের সহায়তা করবে। যা হোক, চীনের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে। এসব দেশের মধ্যে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়া অন্যতম। সম্প্রতি দেশগুলোর গাড্ডায় পড়া অর্থনীতি দারুণভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিন দেশের মধ্যে প্রথম বিপদে পড়ে জাম্বিয়া। দেশটি ২০২০ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ঘানা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এবং শ্রীলঙ্কা কয়েক মাস আগে, ২০২২ সালের জুন মাসে।
দেশগুলোর ঋণ সংকটের সাধারণ কিছু চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে, অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে অপর্যাপ্ত কর আয়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ফাঁদ ও চীনের দেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ অন্যতম।
তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু সমস্যা ছিল। যেমন, শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপানোর পাশাপাশি কৃষি খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে এমন নীতি গ্রহণ করেছিল। ঘানা অবাস্তবিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছিল এবং জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর নাজুক প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়েছিল।
নীতিগত ত্রুটি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কায় বহুমুখী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। অসময়ে কর কমানো, জৈব কৃষি গ্রহণের দ্রুত প্রচেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সময়ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হওয়ার রেকর্ড বজায় রাখার প্রচেষ্টা, বিনিময় হারের বিলম্বিত সমন্বয় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসন্ন এমন সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও তা আমলে না নেওয়া দেশটির অর্থনীতিকে দেউলিয়া হওয়ার পথে নিয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যায়। যা সংকটকে আরও ঘনীভূত করে।
তহবিলের অপব্যবহার, কর কমানো, বিপুল ভর্তুকি দিয়ে অবাস্তব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ঘানার অর্থনৈতিক পতনকে ত্বরান্বিত করে। দেশটি যেসব খাতে কর সংস্কার বা কর হ্রাস করেছে সেসব খাতের মধ্যে রয়েছে—আবাসন, আর্থিক পরিষেবা, আমদানি শুল্কের ওপর ভ্যাট কমানো, স্বাস্থ্য সেবারও ওপর থেকে কর বিলুপ্তি, জাতীয় বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের শুল্ক হ্রাস, জন বিদ্যুতায়ন খাতে শুল্ক কমানো এবং বিশেষ পেট্রোলিয়াম পণ্যের করের ওপর কর হ্রাস।
জাম্বিয়ার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও দেশটির আর্থিক ভারসাম্যহীনতা অতিরিক্ত ঋণের চাপ তৈরি করে। জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন করে ভাতা পুনঃস্থাপন, জলবায়ু দুর্বলতার কারণে অর্থনৈতিক ধাক্কা ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংকটের কারণ ভিন্ন হলেও তিনটি দেশই একই পরিণতি বরণ করেছে। দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহ ও আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ফলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট ও ঋণ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং দেশগুলোকে দেউলিয়ার পথে যেতে বাধ্য করেছে।
ঋণ সংকট শুরুর পর দেশটি তিনটি সর্বশেষ উপায় হিসেবে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়। জবাবে আইএমএফও আগ্রহ দেখায় সংকট কাটিয়ে ওঠার সহযাত্রী হতে। তবে অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও ঘানার ক্ষেত্রে এক রকম কৌশল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে জাম্বিয়ার সঙ্গে অন্যরকম কৌশল গ্রহণ করে। যেমন ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে শর্ত দেওয়া হয় আইএমএফের ঋণ পেতে হলে অবশ্যই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। বিপরীতে জাম্বিয়াকে এমন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
শর্ত মানার পর আইএমএফ ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি ডলার করে এবং জাম্বিয়াকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেয়। এই তিনটি দেশের মধ্যে জাম্বিয়া সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। কারণ দেশটি বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উচ্চ ঋণ সংবলিত দরিদ্র দেশের (এইচআইপিসি) তালিকাভুক্ত। কোনো দেশ এইচআইপিসি-ভুক্ত হওয়ার অর্থ হলো—এই দেশগুলো সুবিধাজনক শর্তে দাতা দেশগুলোর সঙ্গে পুরোনো ঋণ নবায়ন করতে পারে।
জাম্বিয়াকে দেওয়া এই সুবিধা বৈশ্বিক ঋণ সংকটের মধ্যে ‘মধ্যম আয়ের’ ফাঁদের বিষয়টিকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এই বিষয়টি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মধ্যম আয়ের যে দেশগুলো ঋণ সংকটে আবদ্ধ তাদের জন্য আরও অনেক সহজ শর্তে ঋণ ও সংকট মোকাবিলায় প্রচলিত কৌশলের বাইরে গিয়ে অধিকতর উন্নত কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন।
বৈশ্বিক ঋণ সংকটে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়ার ঋণ সংকটের ক্ষেত্রেও। কারণ জাম্বিয়ার বৈদেশিক ঋণের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশই চীনের। ঘানার বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ চীনের। ঘানায় চীনের বিনিয়োগ মূলত দেশটির কোকোয়া, বক্সাইট ও জ্বালানি তেল খাতে। এই দুই দেশে চীনের পরিমাণ সামান্য হলেও শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের প্রায় অর্ধেকই চীনের। দেশটির মোট ঋণের ৪৫ শতাংশই চীনের। আর চীন এককভাবে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঋণ দাতা হওয়ায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হলো—বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। এই ঋণ চীন সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। তাই দেশটি ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। কারণ এ ক্ষেত্রে অনেক দেশ ঋণ খেলাপি হয়ে উঠতে পারে। যা দেশটির চাপে পড়া অর্থনীতিতে আরও চাপে ফেলতে পারে। এসব কারণে চীন ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে চীন খুব সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। যেমন, দেশটিকে দেওয়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের ৪০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার কমাতে সম্মত হয়েছে আইএমএফের শর্ত মেনে। নতুন নির্ধারিত সুদহার হলো মাত্র ১ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হলো ২০৩৭ সাল।
আবার শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঋণ থাকার পরও চীন দেশটিকে আরও ৪২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের চীন সফরের সময় বিষয়টি নির্ধারিত হয়। এটি আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির শর্ত সহজ করবে। কারণ চীনা ঋণের সহায়তায় শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে দেশটির অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে বলেছেন, ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা লেভেলে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
চীন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে যে মনোভাব দেখিয়েছে তা ঘানাকে আশার আলো দেখাতেই পারে। দেশটি আশা করছে চীন আইএমএফের শর্ত পূরণে তাদের সহায়তা করবে। যা হোক, চীনের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে। এসব দেশের মধ্যে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়া অন্যতম। সম্প্রতি দেশগুলোর গাড্ডায় পড়া অর্থনীতি দারুণভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিন দেশের মধ্যে প্রথম বিপদে পড়ে জাম্বিয়া। দেশটি ২০২০ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ঘানা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এবং শ্রীলঙ্কা কয়েক মাস আগে, ২০২২ সালের জুন মাসে।
দেশগুলোর ঋণ সংকটের সাধারণ কিছু চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে, অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে অপর্যাপ্ত কর আয়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ফাঁদ ও চীনের দেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ অন্যতম।
তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু সমস্যা ছিল। যেমন, শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপানোর পাশাপাশি কৃষি খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে এমন নীতি গ্রহণ করেছিল। ঘানা অবাস্তবিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছিল এবং জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর নাজুক প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়েছিল।
নীতিগত ত্রুটি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কায় বহুমুখী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। অসময়ে কর কমানো, জৈব কৃষি গ্রহণের দ্রুত প্রচেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সময়ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হওয়ার রেকর্ড বজায় রাখার প্রচেষ্টা, বিনিময় হারের বিলম্বিত সমন্বয় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসন্ন এমন সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও তা আমলে না নেওয়া দেশটির অর্থনীতিকে দেউলিয়া হওয়ার পথে নিয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যায়। যা সংকটকে আরও ঘনীভূত করে।
তহবিলের অপব্যবহার, কর কমানো, বিপুল ভর্তুকি দিয়ে অবাস্তব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ঘানার অর্থনৈতিক পতনকে ত্বরান্বিত করে। দেশটি যেসব খাতে কর সংস্কার বা কর হ্রাস করেছে সেসব খাতের মধ্যে রয়েছে—আবাসন, আর্থিক পরিষেবা, আমদানি শুল্কের ওপর ভ্যাট কমানো, স্বাস্থ্য সেবারও ওপর থেকে কর বিলুপ্তি, জাতীয় বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের শুল্ক হ্রাস, জন বিদ্যুতায়ন খাতে শুল্ক কমানো এবং বিশেষ পেট্রোলিয়াম পণ্যের করের ওপর কর হ্রাস।
জাম্বিয়ার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও দেশটির আর্থিক ভারসাম্যহীনতা অতিরিক্ত ঋণের চাপ তৈরি করে। জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন করে ভাতা পুনঃস্থাপন, জলবায়ু দুর্বলতার কারণে অর্থনৈতিক ধাক্কা ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংকটের কারণ ভিন্ন হলেও তিনটি দেশই একই পরিণতি বরণ করেছে। দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহ ও আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ফলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট ও ঋণ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং দেশগুলোকে দেউলিয়ার পথে যেতে বাধ্য করেছে।
ঋণ সংকট শুরুর পর দেশটি তিনটি সর্বশেষ উপায় হিসেবে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়। জবাবে আইএমএফও আগ্রহ দেখায় সংকট কাটিয়ে ওঠার সহযাত্রী হতে। তবে অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও ঘানার ক্ষেত্রে এক রকম কৌশল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে জাম্বিয়ার সঙ্গে অন্যরকম কৌশল গ্রহণ করে। যেমন ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে শর্ত দেওয়া হয় আইএমএফের ঋণ পেতে হলে অবশ্যই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। বিপরীতে জাম্বিয়াকে এমন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
শর্ত মানার পর আইএমএফ ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি ডলার করে এবং জাম্বিয়াকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেয়। এই তিনটি দেশের মধ্যে জাম্বিয়া সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। কারণ দেশটি বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উচ্চ ঋণ সংবলিত দরিদ্র দেশের (এইচআইপিসি) তালিকাভুক্ত। কোনো দেশ এইচআইপিসি-ভুক্ত হওয়ার অর্থ হলো—এই দেশগুলো সুবিধাজনক শর্তে দাতা দেশগুলোর সঙ্গে পুরোনো ঋণ নবায়ন করতে পারে।
জাম্বিয়াকে দেওয়া এই সুবিধা বৈশ্বিক ঋণ সংকটের মধ্যে ‘মধ্যম আয়ের’ ফাঁদের বিষয়টিকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এই বিষয়টি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মধ্যম আয়ের যে দেশগুলো ঋণ সংকটে আবদ্ধ তাদের জন্য আরও অনেক সহজ শর্তে ঋণ ও সংকট মোকাবিলায় প্রচলিত কৌশলের বাইরে গিয়ে অধিকতর উন্নত কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন।
বৈশ্বিক ঋণ সংকটে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়ার ঋণ সংকটের ক্ষেত্রেও। কারণ জাম্বিয়ার বৈদেশিক ঋণের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশই চীনের। ঘানার বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ চীনের। ঘানায় চীনের বিনিয়োগ মূলত দেশটির কোকোয়া, বক্সাইট ও জ্বালানি তেল খাতে। এই দুই দেশে চীনের পরিমাণ সামান্য হলেও শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের প্রায় অর্ধেকই চীনের। দেশটির মোট ঋণের ৪৫ শতাংশই চীনের। আর চীন এককভাবে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঋণ দাতা হওয়ায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হলো—বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। এই ঋণ চীন সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। তাই দেশটি ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। কারণ এ ক্ষেত্রে অনেক দেশ ঋণ খেলাপি হয়ে উঠতে পারে। যা দেশটির চাপে পড়া অর্থনীতিতে আরও চাপে ফেলতে পারে। এসব কারণে চীন ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে চীন খুব সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। যেমন, দেশটিকে দেওয়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের ৪০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার কমাতে সম্মত হয়েছে আইএমএফের শর্ত মেনে। নতুন নির্ধারিত সুদহার হলো মাত্র ১ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হলো ২০৩৭ সাল।
আবার শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঋণ থাকার পরও চীন দেশটিকে আরও ৪২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের চীন সফরের সময় বিষয়টি নির্ধারিত হয়। এটি আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির শর্ত সহজ করবে। কারণ চীনা ঋণের সহায়তায় শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে দেশটির অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে বলেছেন, ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা লেভেলে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
চীন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে যে মনোভাব দেখিয়েছে তা ঘানাকে আশার আলো দেখাতেই পারে। দেশটি আশা করছে চীন আইএমএফের শর্ত পূরণে তাদের সহায়তা করবে। যা হোক, চীনের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে। এসব দেশের মধ্যে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়া অন্যতম। সম্প্রতি দেশগুলোর গাড্ডায় পড়া অর্থনীতি দারুণভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
তিন দেশের মধ্যে প্রথম বিপদে পড়ে জাম্বিয়া। দেশটি ২০২০ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ঘানা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এবং শ্রীলঙ্কা কয়েক মাস আগে, ২০২২ সালের জুন মাসে।
দেশগুলোর ঋণ সংকটের সাধারণ কিছু চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে, অব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে অপর্যাপ্ত কর আয়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ফাঁদ ও চীনের দেওয়া দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জ অন্যতম।
তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু সমস্যা ছিল। যেমন, শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপানোর পাশাপাশি কৃষি খাতের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে এমন নীতি গ্রহণ করেছিল। ঘানা অবাস্তবিক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছিল এবং জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর নাজুক প্রভাব মোকাবিলা করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়েছিল।
নীতিগত ত্রুটি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কায় বহুমুখী বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। অসময়ে কর কমানো, জৈব কৃষি গ্রহণের দ্রুত প্রচেষ্টা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সময়ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হওয়ার রেকর্ড বজায় রাখার প্রচেষ্টা, বিনিময় হারের বিলম্বিত সমন্বয় এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসন্ন এমন সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও তা আমলে না নেওয়া দেশটির অর্থনীতিকে দেউলিয়া হওয়ার পথে নিয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও কমে যায়। যা সংকটকে আরও ঘনীভূত করে।
তহবিলের অপব্যবহার, কর কমানো, বিপুল ভর্তুকি দিয়ে অবাস্তব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ঘানার অর্থনৈতিক পতনকে ত্বরান্বিত করে। দেশটি যেসব খাতে কর সংস্কার বা কর হ্রাস করেছে সেসব খাতের মধ্যে রয়েছে—আবাসন, আর্থিক পরিষেবা, আমদানি শুল্কের ওপর ভ্যাট কমানো, স্বাস্থ্য সেবারও ওপর থেকে কর বিলুপ্তি, জাতীয় বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের শুল্ক হ্রাস, জন বিদ্যুতায়ন খাতে শুল্ক কমানো এবং বিশেষ পেট্রোলিয়াম পণ্যের করের ওপর কর হ্রাস।
জাম্বিয়ার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হলেও দেশটির আর্থিক ভারসাম্যহীনতা অতিরিক্ত ঋণের চাপ তৈরি করে। জাম্বিয়া নির্দিষ্ট কিছু খাতে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন করে ভাতা পুনঃস্থাপন, জলবায়ু দুর্বলতার কারণে অর্থনৈতিক ধাক্কা ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করেছে।
সংকটের কারণ ভিন্ন হলেও তিনটি দেশই একই পরিণতি বরণ করেছে। দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহ ও আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ফলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট ও ঋণ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং দেশগুলোকে দেউলিয়ার পথে যেতে বাধ্য করেছে।
ঋণ সংকট শুরুর পর দেশটি তিনটি সর্বশেষ উপায় হিসেবে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়। জবাবে আইএমএফও আগ্রহ দেখায় সংকট কাটিয়ে ওঠার সহযাত্রী হতে। তবে অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ও ঘানার ক্ষেত্রে এক রকম কৌশল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে জাম্বিয়ার সঙ্গে অন্যরকম কৌশল গ্রহণ করে। যেমন ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে শর্ত দেওয়া হয় আইএমএফের ঋণ পেতে হলে অবশ্যই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত ঋণগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। বিপরীতে জাম্বিয়াকে এমন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
শর্ত মানার পর আইএমএফ ঘানা ও শ্রীলঙ্কাকে ৩০০ কোটি ডলার করে এবং জাম্বিয়াকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা দেয়। এই তিনটি দেশের মধ্যে জাম্বিয়া সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। কারণ দেশটি বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উচ্চ ঋণ সংবলিত দরিদ্র দেশের (এইচআইপিসি) তালিকাভুক্ত। কোনো দেশ এইচআইপিসি-ভুক্ত হওয়ার অর্থ হলো—এই দেশগুলো সুবিধাজনক শর্তে দাতা দেশগুলোর সঙ্গে পুরোনো ঋণ নবায়ন করতে পারে।
জাম্বিয়াকে দেওয়া এই সুবিধা বৈশ্বিক ঋণ সংকটের মধ্যে ‘মধ্যম আয়ের’ ফাঁদের বিষয়টিকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এই বিষয়টি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মধ্যম আয়ের যে দেশগুলো ঋণ সংকটে আবদ্ধ তাদের জন্য আরও অনেক সহজ শর্তে ঋণ ও সংকট মোকাবিলায় প্রচলিত কৌশলের বাইরে গিয়ে অধিকতর উন্নত কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন।
বৈশ্বিক ঋণ সংকটে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে ঘানা, শ্রীলঙ্কা ও জাম্বিয়ার ঋণ সংকটের ক্ষেত্রেও। কারণ জাম্বিয়ার বৈদেশিক ঋণের ১৭ দশমিক ৬ শতাংশই চীনের। ঘানার বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ চীনের। ঘানায় চীনের বিনিয়োগ মূলত দেশটির কোকোয়া, বক্সাইট ও জ্বালানি তেল খাতে। এই দুই দেশে চীনের পরিমাণ সামান্য হলেও শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের প্রায় অর্ধেকই চীনের। দেশটির মোট ঋণের ৪৫ শতাংশই চীনের। আর চীন এককভাবে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ঋণ দাতা হওয়ায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণ চুক্তি নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হলো—বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশটি বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে। এই ঋণ চীন সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। তাই দেশটি ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। কারণ এ ক্ষেত্রে অনেক দেশ ঋণ খেলাপি হয়ে উঠতে পারে। যা দেশটির চাপে পড়া অর্থনীতিতে আরও চাপে ফেলতে পারে। এসব কারণে চীন ঋণ পুনর্গঠনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে চীন খুব সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। যেমন, দেশটিকে দেওয়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের ৪০০ কোটি ডলার ঋণের সুদহার কমাতে সম্মত হয়েছে আইএমএফের শর্ত মেনে। নতুন নির্ধারিত সুদহার হলো মাত্র ১ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হলো ২০৩৭ সাল।
আবার শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ঋণ থাকার পরও চীন দেশটিকে আরও ৪২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের চীন সফরের সময় বিষয়টি নির্ধারিত হয়। এটি আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির শর্ত সহজ করবে। কারণ চীনা ঋণের সহায়তায় শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে দেশটির অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে বলেছেন, ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা লেভেলে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
চীন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে যে মনোভাব দেখিয়েছে তা ঘানাকে আশার আলো দেখাতেই পারে। দেশটি আশা করছে চীন আইএমএফের শর্ত পূরণে তাদের সহায়তা করবে। যা হোক, চীনের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে
০৬ নভেম্বর ২০২৩
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে
০৬ নভেম্বর ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে
০৬ নভেম্বর ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বৈশ্বিক ঋণ সংকট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর তো বটেই বিভিন্ন উন্নত দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এই সংকটে খাবি খাচ্ছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) হিসাব বলছে, বিশ্বের অন্তত ৫৪টি দেশ ঋণ সংকটে ভুগছে
০৬ নভেম্বর ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে