
লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা উভয় পক্ষের হুমকি-ধমকি ও পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সত্যিই কি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতির পর এই আশঙ্কা আরও উসকে দিয়েছে। বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল এখন গাজা থেকে ‘সামরিক দৃষ্টি’ সরিয়ে লেবাননের ওপর নিবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, রাফাহে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন তা লেবাননে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালালে তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও জড়িয়ে যাবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে লেবাননে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩৫ জন। ইসরায়েলের দাবি, এর মধ্যে ৩৪৯ জনই হিজবুল্লাহর সদস্য। ইসরায়েলের তথ্যমতে, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ ইসরায়েলি সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত উভয় পক্ষ লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় পাশে ৭ হাজার ৪০০ হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ৬ হাজার ১৪২ এবং ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলা ১ হাজার ২৫৮ টি। এসব হামলায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত ৯ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর দল ইসরায়েলে আক্রমণ তখনই বন্ধ করবে, যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করে, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অটল থাকবে।
হিজবুল্লাহর ওপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সা’দ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া হিজবুল্লাহ অন্য কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। ফলে বলা যায়, এমনটা হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’
আমাল সা’দ আরও বলেন, ‘নাসরুল্লাহ বলেছেন, হামাস বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। হামাস দুর্বল হয়ে পড়লেও হিজবুল্লাহ বসে থাকবে না। এখানে একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য আছে। হিজবুল্লাহ কখনোই হামাসকে পরিত্যাগ করবে না।’
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চাইলেই এখন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারবেন না। কারণ হিসেবে সামনে আসছে, নেতানিয়াহু জোটের কট্টরপন্থী নেতাদের হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার জোরালো দাবি। ফলে, নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধবিরতিতে গেলে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে হামাসকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে সন্দেহ আছে খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, হামাস শুধু একটি গোষ্ঠীই নয়, এটি একটি আদর্শ। গত ১৯ জুন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেবি এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, হামাস একটি আদর্শের নাম, যা কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, এই বাস্তবতা মেনে হোক আর অন্য কিছু বিবেচনা করে হোক—ইসরায়েল গাজাসংক্রান্ত নীতিতে আরও নমনীয় হতে চাইছে বা পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই লক্ষ্যে দেশটি হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সঙ্গে এলাকাটিতে হামাসের রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজতে থাকবে। গাজায় আগ্রাসনের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননে নজর দিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে জড়িত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইসরায়েল বলছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও তাঁর দল প্রতিনিয়তই শক্তিমত্তা ও দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে চলেছেন। গত ১৯ জুন নাসরুল্লাহ জানান, ১ লাখের বেশি যোদ্ধা আছে তাঁর দলে। এ ছাড়া আঞ্চলিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হিজবুল্লাহর নিজেরই যথেষ্ট সেনা আছে।
নাসরুল্লাহর এই বক্তব্যের এক দিন আগে হিজবুল্লাহ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার চিত্র ধরা পড়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত একটি অপ্রকাশ্য হুমকি, যা নির্দেশ করে যে শহরটি যেকোনো সময় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক ভিডিওতে ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী একাধিক স্থানকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৈরুতের লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে বলেছেন, ‘এসব ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধের ব্যয় ও পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করতে চাইছে।’
নাসরুল্লাহ এর আগে ইসরায়েল থেকে দূরে থাকার জন্য ভূমধ্যসাগরের দেশ সাইপ্রাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সাইপ্রাস জানায়, তারা কোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না।
মার্কিন থিংকট্যাংক গ্লোবাল গার্ডিয়ান রিস্ক ম্যানেজমেন্টের গবেষক ও সাবেক মার্কিন স্পেশাল ফোর্স কর্মকর্তা শেঠ ক্রুমরিচ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘৮ অক্টোবরের পর থেকে সাইপ্রাস ইসরায়েলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, আগে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর ইসরায়েলে যেত।’
তবে নাসরুল্লাহর এই হুমকি কেবল সাইপ্রাসকে নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ছিল। এ বিষয়ে ইমাদ সালামে বলেন, ‘নাসরুল্লাহর হুমকিটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি, যাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।’
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের বৈরুতের সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেন, ‘ইসরায়েল সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে ছোট ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর কৌশল প্রস্তুত। সেই সঙ্গে বড় পরিসরের যুদ্ধের জন্যও গোষ্ঠীটির কৌশল নির্ধারিত আছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার হতে যাওয়া সম্ভাব্য এই যুদ্ধকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে ‘স্বল্প-তীব্রতার অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্বল্প-ব্যয়, দক্ষ ও কার্যকর সংঘর্ষের মাধ্যমে শত্রুর রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এটি মূলত বর্তমান সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা।
ধারণা করা হচ্ছে, বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হলে তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো লেবাননে। যেমনটা এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এমনটা হলে লেবাননের কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে—যেমন বৈরুত বিমানবন্দর—আঘাত হানতে পারে ইসরায়েল।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও তা উভয় পক্ষের জন্যই অনেক হতাহতের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে এমিল বিতার বলছেন, ‘হিজবুল্লাহ সম্ভবত এমনটা চায় না। হিজবুল্লাহ এবং ইরান সরকারের এই উপলব্ধি আছে যে, একটি যুদ্ধ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক হবে।’
পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপের তীব্র হুমকির পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক আলোচনাও। সম্প্রতি মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হচস্টাইন তেল আবিব ও বৈরুতে সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি লেবানন স্পিকার ও হিজবুল্লাহর মিত্র নবীহ বেরির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, হচস্টাইন হিজবুল্লাহকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় পরিসরে যুদ্ধে বাধা দেবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল হবে। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফরাসি কূটনীতিকদের মাধ্যমে বার্তা লেনদেন করছে বিতার বলেছেন, উভয় পক্ষই মূলত সম্মানজনক প্রস্থানের কৌশল যাচাইবাছাই করছে।
এ বিষয়ে এমিল বিতার বলেন, যদি এই আলোচনায় ইসরায়েলকে বোঝানো সম্ভব হয় হিজবুল্লাহর মিত্ররা ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থান করবে না এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না, তাহলে যুদ্ধ না-ও এগোতে পারে।
যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলমান, তবু ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো পক্ষই তাদের বিরোধীদের নৈতিক বিজয় ঘোষণা করার সুযোগ দেবে না। এ ছাড়া, হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পূর্বশর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এমিল বিতার বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে দু পক্ষই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।’
এমিল বিতারের মতে, ‘হিজবুল্লাহ জানে যে, তাদের সমর্থকসহ লেবাননের জনগণের বড় একটি অংশই নতুন করে যুদ্ধ চায় না। উভয় পক্ষই এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ সময় উভয় পক্ষের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের এই অঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু করতে পারে।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা উভয় পক্ষের হুমকি-ধমকি ও পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সত্যিই কি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতির পর এই আশঙ্কা আরও উসকে দিয়েছে। বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল এখন গাজা থেকে ‘সামরিক দৃষ্টি’ সরিয়ে লেবাননের ওপর নিবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, রাফাহে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন তা লেবাননে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালালে তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও জড়িয়ে যাবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে লেবাননে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩৫ জন। ইসরায়েলের দাবি, এর মধ্যে ৩৪৯ জনই হিজবুল্লাহর সদস্য। ইসরায়েলের তথ্যমতে, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ ইসরায়েলি সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত উভয় পক্ষ লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় পাশে ৭ হাজার ৪০০ হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ৬ হাজার ১৪২ এবং ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলা ১ হাজার ২৫৮ টি। এসব হামলায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত ৯ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর দল ইসরায়েলে আক্রমণ তখনই বন্ধ করবে, যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করে, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অটল থাকবে।
হিজবুল্লাহর ওপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সা’দ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া হিজবুল্লাহ অন্য কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। ফলে বলা যায়, এমনটা হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’
আমাল সা’দ আরও বলেন, ‘নাসরুল্লাহ বলেছেন, হামাস বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। হামাস দুর্বল হয়ে পড়লেও হিজবুল্লাহ বসে থাকবে না। এখানে একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য আছে। হিজবুল্লাহ কখনোই হামাসকে পরিত্যাগ করবে না।’
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চাইলেই এখন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারবেন না। কারণ হিসেবে সামনে আসছে, নেতানিয়াহু জোটের কট্টরপন্থী নেতাদের হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার জোরালো দাবি। ফলে, নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধবিরতিতে গেলে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে হামাসকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে সন্দেহ আছে খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, হামাস শুধু একটি গোষ্ঠীই নয়, এটি একটি আদর্শ। গত ১৯ জুন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেবি এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, হামাস একটি আদর্শের নাম, যা কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, এই বাস্তবতা মেনে হোক আর অন্য কিছু বিবেচনা করে হোক—ইসরায়েল গাজাসংক্রান্ত নীতিতে আরও নমনীয় হতে চাইছে বা পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই লক্ষ্যে দেশটি হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সঙ্গে এলাকাটিতে হামাসের রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজতে থাকবে। গাজায় আগ্রাসনের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননে নজর দিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে জড়িত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইসরায়েল বলছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও তাঁর দল প্রতিনিয়তই শক্তিমত্তা ও দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে চলেছেন। গত ১৯ জুন নাসরুল্লাহ জানান, ১ লাখের বেশি যোদ্ধা আছে তাঁর দলে। এ ছাড়া আঞ্চলিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হিজবুল্লাহর নিজেরই যথেষ্ট সেনা আছে।
নাসরুল্লাহর এই বক্তব্যের এক দিন আগে হিজবুল্লাহ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার চিত্র ধরা পড়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত একটি অপ্রকাশ্য হুমকি, যা নির্দেশ করে যে শহরটি যেকোনো সময় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক ভিডিওতে ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী একাধিক স্থানকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৈরুতের লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে বলেছেন, ‘এসব ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধের ব্যয় ও পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করতে চাইছে।’
নাসরুল্লাহ এর আগে ইসরায়েল থেকে দূরে থাকার জন্য ভূমধ্যসাগরের দেশ সাইপ্রাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সাইপ্রাস জানায়, তারা কোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না।
মার্কিন থিংকট্যাংক গ্লোবাল গার্ডিয়ান রিস্ক ম্যানেজমেন্টের গবেষক ও সাবেক মার্কিন স্পেশাল ফোর্স কর্মকর্তা শেঠ ক্রুমরিচ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘৮ অক্টোবরের পর থেকে সাইপ্রাস ইসরায়েলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, আগে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর ইসরায়েলে যেত।’
তবে নাসরুল্লাহর এই হুমকি কেবল সাইপ্রাসকে নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ছিল। এ বিষয়ে ইমাদ সালামে বলেন, ‘নাসরুল্লাহর হুমকিটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি, যাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।’
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের বৈরুতের সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেন, ‘ইসরায়েল সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে ছোট ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর কৌশল প্রস্তুত। সেই সঙ্গে বড় পরিসরের যুদ্ধের জন্যও গোষ্ঠীটির কৌশল নির্ধারিত আছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার হতে যাওয়া সম্ভাব্য এই যুদ্ধকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে ‘স্বল্প-তীব্রতার অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্বল্প-ব্যয়, দক্ষ ও কার্যকর সংঘর্ষের মাধ্যমে শত্রুর রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এটি মূলত বর্তমান সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা।
ধারণা করা হচ্ছে, বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হলে তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো লেবাননে। যেমনটা এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এমনটা হলে লেবাননের কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে—যেমন বৈরুত বিমানবন্দর—আঘাত হানতে পারে ইসরায়েল।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও তা উভয় পক্ষের জন্যই অনেক হতাহতের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে এমিল বিতার বলছেন, ‘হিজবুল্লাহ সম্ভবত এমনটা চায় না। হিজবুল্লাহ এবং ইরান সরকারের এই উপলব্ধি আছে যে, একটি যুদ্ধ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক হবে।’
পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপের তীব্র হুমকির পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক আলোচনাও। সম্প্রতি মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হচস্টাইন তেল আবিব ও বৈরুতে সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি লেবানন স্পিকার ও হিজবুল্লাহর মিত্র নবীহ বেরির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, হচস্টাইন হিজবুল্লাহকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় পরিসরে যুদ্ধে বাধা দেবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল হবে। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফরাসি কূটনীতিকদের মাধ্যমে বার্তা লেনদেন করছে বিতার বলেছেন, উভয় পক্ষই মূলত সম্মানজনক প্রস্থানের কৌশল যাচাইবাছাই করছে।
এ বিষয়ে এমিল বিতার বলেন, যদি এই আলোচনায় ইসরায়েলকে বোঝানো সম্ভব হয় হিজবুল্লাহর মিত্ররা ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থান করবে না এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না, তাহলে যুদ্ধ না-ও এগোতে পারে।
যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলমান, তবু ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো পক্ষই তাদের বিরোধীদের নৈতিক বিজয় ঘোষণা করার সুযোগ দেবে না। এ ছাড়া, হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পূর্বশর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এমিল বিতার বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে দু পক্ষই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।’
এমিল বিতারের মতে, ‘হিজবুল্লাহ জানে যে, তাদের সমর্থকসহ লেবাননের জনগণের বড় একটি অংশই নতুন করে যুদ্ধ চায় না। উভয় পক্ষই এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ সময় উভয় পক্ষের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের এই অঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু করতে পারে।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা উভয় পক্ষের হুমকি-ধমকি ও পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সত্যিই কি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতির পর এই আশঙ্কা আরও উসকে দিয়েছে। বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল এখন গাজা থেকে ‘সামরিক দৃষ্টি’ সরিয়ে লেবাননের ওপর নিবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, রাফাহে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন তা লেবাননে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালালে তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও জড়িয়ে যাবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে লেবাননে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩৫ জন। ইসরায়েলের দাবি, এর মধ্যে ৩৪৯ জনই হিজবুল্লাহর সদস্য। ইসরায়েলের তথ্যমতে, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ ইসরায়েলি সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত উভয় পক্ষ লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় পাশে ৭ হাজার ৪০০ হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ৬ হাজার ১৪২ এবং ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলা ১ হাজার ২৫৮ টি। এসব হামলায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত ৯ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর দল ইসরায়েলে আক্রমণ তখনই বন্ধ করবে, যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করে, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অটল থাকবে।
হিজবুল্লাহর ওপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সা’দ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া হিজবুল্লাহ অন্য কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। ফলে বলা যায়, এমনটা হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’
আমাল সা’দ আরও বলেন, ‘নাসরুল্লাহ বলেছেন, হামাস বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। হামাস দুর্বল হয়ে পড়লেও হিজবুল্লাহ বসে থাকবে না। এখানে একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য আছে। হিজবুল্লাহ কখনোই হামাসকে পরিত্যাগ করবে না।’
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চাইলেই এখন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারবেন না। কারণ হিসেবে সামনে আসছে, নেতানিয়াহু জোটের কট্টরপন্থী নেতাদের হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার জোরালো দাবি। ফলে, নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধবিরতিতে গেলে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে হামাসকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে সন্দেহ আছে খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, হামাস শুধু একটি গোষ্ঠীই নয়, এটি একটি আদর্শ। গত ১৯ জুন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেবি এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, হামাস একটি আদর্শের নাম, যা কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, এই বাস্তবতা মেনে হোক আর অন্য কিছু বিবেচনা করে হোক—ইসরায়েল গাজাসংক্রান্ত নীতিতে আরও নমনীয় হতে চাইছে বা পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই লক্ষ্যে দেশটি হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সঙ্গে এলাকাটিতে হামাসের রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজতে থাকবে। গাজায় আগ্রাসনের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননে নজর দিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে জড়িত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইসরায়েল বলছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও তাঁর দল প্রতিনিয়তই শক্তিমত্তা ও দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে চলেছেন। গত ১৯ জুন নাসরুল্লাহ জানান, ১ লাখের বেশি যোদ্ধা আছে তাঁর দলে। এ ছাড়া আঞ্চলিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হিজবুল্লাহর নিজেরই যথেষ্ট সেনা আছে।
নাসরুল্লাহর এই বক্তব্যের এক দিন আগে হিজবুল্লাহ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার চিত্র ধরা পড়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত একটি অপ্রকাশ্য হুমকি, যা নির্দেশ করে যে শহরটি যেকোনো সময় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক ভিডিওতে ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী একাধিক স্থানকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৈরুতের লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে বলেছেন, ‘এসব ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধের ব্যয় ও পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করতে চাইছে।’
নাসরুল্লাহ এর আগে ইসরায়েল থেকে দূরে থাকার জন্য ভূমধ্যসাগরের দেশ সাইপ্রাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সাইপ্রাস জানায়, তারা কোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না।
মার্কিন থিংকট্যাংক গ্লোবাল গার্ডিয়ান রিস্ক ম্যানেজমেন্টের গবেষক ও সাবেক মার্কিন স্পেশাল ফোর্স কর্মকর্তা শেঠ ক্রুমরিচ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘৮ অক্টোবরের পর থেকে সাইপ্রাস ইসরায়েলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, আগে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর ইসরায়েলে যেত।’
তবে নাসরুল্লাহর এই হুমকি কেবল সাইপ্রাসকে নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ছিল। এ বিষয়ে ইমাদ সালামে বলেন, ‘নাসরুল্লাহর হুমকিটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি, যাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।’
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের বৈরুতের সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেন, ‘ইসরায়েল সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে ছোট ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর কৌশল প্রস্তুত। সেই সঙ্গে বড় পরিসরের যুদ্ধের জন্যও গোষ্ঠীটির কৌশল নির্ধারিত আছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার হতে যাওয়া সম্ভাব্য এই যুদ্ধকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে ‘স্বল্প-তীব্রতার অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্বল্প-ব্যয়, দক্ষ ও কার্যকর সংঘর্ষের মাধ্যমে শত্রুর রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এটি মূলত বর্তমান সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা।
ধারণা করা হচ্ছে, বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হলে তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো লেবাননে। যেমনটা এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এমনটা হলে লেবাননের কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে—যেমন বৈরুত বিমানবন্দর—আঘাত হানতে পারে ইসরায়েল।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও তা উভয় পক্ষের জন্যই অনেক হতাহতের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে এমিল বিতার বলছেন, ‘হিজবুল্লাহ সম্ভবত এমনটা চায় না। হিজবুল্লাহ এবং ইরান সরকারের এই উপলব্ধি আছে যে, একটি যুদ্ধ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক হবে।’
পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপের তীব্র হুমকির পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক আলোচনাও। সম্প্রতি মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হচস্টাইন তেল আবিব ও বৈরুতে সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি লেবানন স্পিকার ও হিজবুল্লাহর মিত্র নবীহ বেরির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, হচস্টাইন হিজবুল্লাহকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় পরিসরে যুদ্ধে বাধা দেবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল হবে। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফরাসি কূটনীতিকদের মাধ্যমে বার্তা লেনদেন করছে বিতার বলেছেন, উভয় পক্ষই মূলত সম্মানজনক প্রস্থানের কৌশল যাচাইবাছাই করছে।
এ বিষয়ে এমিল বিতার বলেন, যদি এই আলোচনায় ইসরায়েলকে বোঝানো সম্ভব হয় হিজবুল্লাহর মিত্ররা ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থান করবে না এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না, তাহলে যুদ্ধ না-ও এগোতে পারে।
যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলমান, তবু ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো পক্ষই তাদের বিরোধীদের নৈতিক বিজয় ঘোষণা করার সুযোগ দেবে না। এ ছাড়া, হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পূর্বশর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এমিল বিতার বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে দু পক্ষই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।’
এমিল বিতারের মতে, ‘হিজবুল্লাহ জানে যে, তাদের সমর্থকসহ লেবাননের জনগণের বড় একটি অংশই নতুন করে যুদ্ধ চায় না। উভয় পক্ষই এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ সময় উভয় পক্ষের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের এই অঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু করতে পারে।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা উভয় পক্ষের হুমকি-ধমকি ও পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সত্যিই কি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতির পর এই আশঙ্কা আরও উসকে দিয়েছে। বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল এখন গাজা থেকে ‘সামরিক দৃষ্টি’ সরিয়ে লেবাননের ওপর নিবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, রাফাহে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন তা লেবাননে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালালে তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও জড়িয়ে যাবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে লেবাননে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩৫ জন। ইসরায়েলের দাবি, এর মধ্যে ৩৪৯ জনই হিজবুল্লাহর সদস্য। ইসরায়েলের তথ্যমতে, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ ইসরায়েলি সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত উভয় পক্ষ লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় পাশে ৭ হাজার ৪০০ হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ৬ হাজার ১৪২ এবং ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলা ১ হাজার ২৫৮ টি। এসব হামলায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত ৯ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর দল ইসরায়েলে আক্রমণ তখনই বন্ধ করবে, যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করে, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অটল থাকবে।
হিজবুল্লাহর ওপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সা’দ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া হিজবুল্লাহ অন্য কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। ফলে বলা যায়, এমনটা হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’
আমাল সা’দ আরও বলেন, ‘নাসরুল্লাহ বলেছেন, হামাস বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। হামাস দুর্বল হয়ে পড়লেও হিজবুল্লাহ বসে থাকবে না। এখানে একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য আছে। হিজবুল্লাহ কখনোই হামাসকে পরিত্যাগ করবে না।’
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চাইলেই এখন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারবেন না। কারণ হিসেবে সামনে আসছে, নেতানিয়াহু জোটের কট্টরপন্থী নেতাদের হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার জোরালো দাবি। ফলে, নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধবিরতিতে গেলে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে হামাসকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে সন্দেহ আছে খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, হামাস শুধু একটি গোষ্ঠীই নয়, এটি একটি আদর্শ। গত ১৯ জুন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেবি এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, হামাস একটি আদর্শের নাম, যা কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, এই বাস্তবতা মেনে হোক আর অন্য কিছু বিবেচনা করে হোক—ইসরায়েল গাজাসংক্রান্ত নীতিতে আরও নমনীয় হতে চাইছে বা পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই লক্ষ্যে দেশটি হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সঙ্গে এলাকাটিতে হামাসের রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজতে থাকবে। গাজায় আগ্রাসনের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননে নজর দিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে জড়িত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইসরায়েল বলছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও তাঁর দল প্রতিনিয়তই শক্তিমত্তা ও দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে চলেছেন। গত ১৯ জুন নাসরুল্লাহ জানান, ১ লাখের বেশি যোদ্ধা আছে তাঁর দলে। এ ছাড়া আঞ্চলিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হিজবুল্লাহর নিজেরই যথেষ্ট সেনা আছে।
নাসরুল্লাহর এই বক্তব্যের এক দিন আগে হিজবুল্লাহ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার চিত্র ধরা পড়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত একটি অপ্রকাশ্য হুমকি, যা নির্দেশ করে যে শহরটি যেকোনো সময় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক ভিডিওতে ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী একাধিক স্থানকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৈরুতের লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে বলেছেন, ‘এসব ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধের ব্যয় ও পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করতে চাইছে।’
নাসরুল্লাহ এর আগে ইসরায়েল থেকে দূরে থাকার জন্য ভূমধ্যসাগরের দেশ সাইপ্রাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সাইপ্রাস জানায়, তারা কোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না।
মার্কিন থিংকট্যাংক গ্লোবাল গার্ডিয়ান রিস্ক ম্যানেজমেন্টের গবেষক ও সাবেক মার্কিন স্পেশাল ফোর্স কর্মকর্তা শেঠ ক্রুমরিচ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘৮ অক্টোবরের পর থেকে সাইপ্রাস ইসরায়েলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, আগে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর ইসরায়েলে যেত।’
তবে নাসরুল্লাহর এই হুমকি কেবল সাইপ্রাসকে নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ছিল। এ বিষয়ে ইমাদ সালামে বলেন, ‘নাসরুল্লাহর হুমকিটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি, যাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।’
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের বৈরুতের সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেন, ‘ইসরায়েল সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে ছোট ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর কৌশল প্রস্তুত। সেই সঙ্গে বড় পরিসরের যুদ্ধের জন্যও গোষ্ঠীটির কৌশল নির্ধারিত আছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার হতে যাওয়া সম্ভাব্য এই যুদ্ধকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে ‘স্বল্প-তীব্রতার অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্বল্প-ব্যয়, দক্ষ ও কার্যকর সংঘর্ষের মাধ্যমে শত্রুর রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এটি মূলত বর্তমান সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা।
ধারণা করা হচ্ছে, বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হলে তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো লেবাননে। যেমনটা এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এমনটা হলে লেবাননের কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে—যেমন বৈরুত বিমানবন্দর—আঘাত হানতে পারে ইসরায়েল।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও তা উভয় পক্ষের জন্যই অনেক হতাহতের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে এমিল বিতার বলছেন, ‘হিজবুল্লাহ সম্ভবত এমনটা চায় না। হিজবুল্লাহ এবং ইরান সরকারের এই উপলব্ধি আছে যে, একটি যুদ্ধ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক হবে।’
পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপের তীব্র হুমকির পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক আলোচনাও। সম্প্রতি মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হচস্টাইন তেল আবিব ও বৈরুতে সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি লেবানন স্পিকার ও হিজবুল্লাহর মিত্র নবীহ বেরির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, হচস্টাইন হিজবুল্লাহকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় পরিসরে যুদ্ধে বাধা দেবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল হবে। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফরাসি কূটনীতিকদের মাধ্যমে বার্তা লেনদেন করছে বিতার বলেছেন, উভয় পক্ষই মূলত সম্মানজনক প্রস্থানের কৌশল যাচাইবাছাই করছে।
এ বিষয়ে এমিল বিতার বলেন, যদি এই আলোচনায় ইসরায়েলকে বোঝানো সম্ভব হয় হিজবুল্লাহর মিত্ররা ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থান করবে না এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না, তাহলে যুদ্ধ না-ও এগোতে পারে।
যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলমান, তবু ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো পক্ষই তাদের বিরোধীদের নৈতিক বিজয় ঘোষণা করার সুযোগ দেবে না। এ ছাড়া, হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পূর্বশর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এমিল বিতার বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে দু পক্ষই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।’
এমিল বিতারের মতে, ‘হিজবুল্লাহ জানে যে, তাদের সমর্থকসহ লেবাননের জনগণের বড় একটি অংশই নতুন করে যুদ্ধ চায় না। উভয় পক্ষই এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ সময় উভয় পক্ষের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের এই অঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু করতে পারে।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ নিজেদের সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
০৩ জুলাই ২০২৪
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ নিজেদের সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
০৩ জুলাই ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ নিজেদের সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
০৩ জুলাই ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ নিজেদের সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
০৩ জুলাই ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে