ফরেন অ্যাফেয়ার্সের নিবন্ধ
গত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে লুটেরা শাসকদের উত্থান ও পতন দেখা যাচ্ছে। তিউনিসিয়া থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ—সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রেও সেই লক্ষণ দৃশ্যমান। অলিগার্করা কীভাবে ‘রাষ্ট্রকে দখল’ করে, লুণ্ঠন করে এবং এর অর্থনৈতিক পরিণতি কী, তা নিয়ে ফরেন অ্যাফেয়ার্সে লিখেছেন এলিজাবেথ ডেভিট ব্যারেট। একই সঙ্গে, এই অলিগার্কদের কারণে পরে যাঁরা নেতা হয়ে আসেন, তাঁদের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে, তা নিয়েও আলাপ করেছেন তিনি। এই লেখার অন্যতম প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে, সেটিরও ইঙ্গিত আছে এই নিবন্ধে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইলন মাস্ক যুগল মার্কিন প্রশাসনে যেন করাত চালিয়ে যাচ্ছেন! মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে মাস্ক বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মী ছাঁটাই করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বরখাস্ত কর্মকর্তাদের স্থলে অনুগতদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
ট্রাম্প বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিদর্শকদের বরখাস্ত করেছেন এবং সরকারি নৈতিকতা বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করেছেন। এই যুগল মিলে কংগ্রেসের অনুমিত বরাদ্দ নিজেদের হস্তগত করতে এবং তাঁদের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে ‘পাওয়ার অব দ্য পার্স’ (অর্থ বরাদ্দের ক্ষমতা)-এর অপব্যবহার করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন আরও বেশি করে মাস্কের কোম্পানির স্টারলিংক স্যাটেলাইট ডিশ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাস্কের কোম্পানিগুলোকে আরও বিলিয়ন ডলারের চুক্তির জন্য তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ এই কোম্পানিগুলো আগে থেকেই বিপুল পরিমাণ সরকারি ভর্তুকি পেয়ে আসছে। একই সময়ে ট্রাম্প তাঁর অ্যাজেন্ডা সমর্থন করে না, এমন বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ তহবিল বাতিল করেছেন।
বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘দুর্নীতি’ বলে মনে হবে না। আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে কোনো ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের ফেডারেল সরকারব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেনি। ফলে সাধারণ নাগরিক সেই অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে অনেক কিছুই তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিত্র বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বৃহৎ পরিসরের একটি খণ্ডাংশমাত্র।
দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোতে রাজনীতিক, অভিজাত ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদদের ছোট ছোট গোষ্ঠী—যাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ‘পলিগার্ক’ বলা হয়—নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক চরিত্রের বিকার ঘটিয়েছে। এই অশুভ আঁতাতগুলো একসঙ্গে মিলে বিদ্যমান আইন, নিয়ম পরিবর্তন করে, আমলাদের বরখাস্ত করে, সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে এবং এরপর দেশের সম্পদ গ্রাস করে। রাজনীতিবিদেরা ব্যাংক দখল করে, বিধিবিধান পরিবর্তন এবং সরকারি ক্রয় চুক্তি দখলে নেয়। একই সময়ে, তাদের বেসরকারি খাতের মিত্ররা ঘুষ, অনুদান এবং অনুকূল মিডিয়া কাভারেজ দেয়।
এই প্রক্রিয়াকে বলা যেতে পারে ‘স্টেট ক্যাপচার’ বা ‘রাষ্ট্র লুণ্ঠন’। ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তারা এটি করে। বাংলাদেশ, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক এবং আরও অনেক দেশে এটি ঘটেছে। এর সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা, তা নির্ধারণ করা কঠিন এবং এর সম্পূর্ণ প্রভাব পুরোপুরি প্রকাশ পেতে বহু বছর লেগে যায়। তবে ঘটনাগুলো গুরুতর।
দখল করা অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও) ফুলে-ফেঁপে ওঠে। দেশের অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। ব্যাংকগুলো পছন্দের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ব্যাড লোন’ বা মন্দ ঋণ দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে প্রবৃদ্ধি কমে যায়, কর্মসংস্থান হ্রাস পায়, বৈষম্য বাড়ে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, রাষ্ট্র লুণ্ঠন ঠেকানো এবং সেই প্রক্রিয়াকে বিপরীতমুখী করা এক কঠিন কাজ। এ জন্য প্রয়োজন হুইসেলব্লোয়ার, সাংবাদিক এবং অ্যাকটিভিস্টদের নাগাড়ে সোচ্চার থাকা। দীর্ঘ মেয়াদে এ ধরনের অধ্যবসায় ফলপ্রসূ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে—বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকেরা শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে। কিন্তু প্রায়শই সাফল্য আসে তখন, যখন দখলদারেরা অর্থনীতিকে সম্পূর্ণরূপে শোষণ করে ধ্বংস করে ফেলে এবং তত দিনে পুনর্গঠন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
লুণ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে কোনো খাতই নিরাপদ নয়। তবে ব্যাংকগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়ে। বস্তুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই একটি অর্থনীতিকে মূলধন সরবরাহ এবং লেনদেন সহজ করে। আর রাষ্ট্র লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে এ দুটো খাতই দখলে অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকগুলোর ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে দেশ থেকে অন্তত ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট করেছেন।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সরকারসমর্থিত বন্ড পছন্দের কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের স্বজনতোষণমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছেন। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন ওয়ান এমডিবি নামের একটি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাংককে। বিনিময়ে কোম্পানিগুলো নাজিবের দলকে তহবিল জুগিয়েছে। মোট ৭০০ মিলিয়ন ডলার তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
আবার, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁকে সমর্থনকারী স্থানীয় মেয়রদের বেশি বেশি ঋণ দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেন। ওই মেয়ররা তখন সেই তহবিল ব্যবহার করেন ব্যয়বহুল প্রকল্পের জন্য, যা তাঁদের এবং এরদোয়ানকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করে।
একটি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে রাজনীতিবিদেরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। তুরস্কে এরদোয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে তাঁর মিত্রদের নিয়োগ দিতে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। নাজিব রাজাক ওয়ান এমডিবিকে একেবারে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছিলেন, যাতে এটি তাঁর ব্যক্তিগত জমিদারিতে পরিণত হয়। হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান দেশের বৃহত্তম বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ছাড়কৃত মূল্যে ব্যাংক শেয়ার কেনাবেচার এক জটিল কৌশল ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মতে, শেখ হাসিনা তাঁর অলিগার্ক মিত্রদের কাছে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করতে দেশের গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যাংক পরিচালক এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অপহরণ ও হুমকি দিয়েছিলেন।
এ ধরনের দখলের অর্থনৈতিক ক্ষতি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। সবচেয়ে স্পষ্ট যে বিষয়টি সেটি হলো—এই প্রক্রিয়া একটি দেশের অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, নাজিব তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক ব্যবহার করে মালয়েশিয়া থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার (দেশের জিডিপির ১ শতাংশ) লুট করেছিলেন এবং শেখ হাসিনা সম্ভবত ৩০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশের জিডিপির ৭ শতাংশ) পর্যন্ত লুট করেছেন।
বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাংক দখলের বিষয়টি আরও কৌশলী উপায়ে বাজারকে নষ্ট করে। কোম্পানিগুলোকে দেওয়ার জন্য অর্থাৎ বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে সীমিত পরিমাণ অর্থ থাকে। তাই যখন কোনো ব্যাংক রাজনৈতিক সংযোগের কারণে ঋণ দেয়, তখন তারা সুস্থ বা সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ হারায়। এমনকি তারা রাজনৈতিক সংযোগ থাকা কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিতে দিতে একসময় ফতুর হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ তাদের আমানত হারায় এবং আর্থিক সংকট দেখা দেয়। শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কে এর ফলে চরম মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কারণ, সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে ক্রমাগত টাকা ছাপাতে থাকে। তুরস্ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার আশায় সুদের হার বাড়াতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
অবশ্য, রাষ্ট্র লুণ্ঠনকারীরা কেবল ব্যাংকেই তাদের কারসাজি সীমাবদ্ধ রাখে না; তারা সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও বিধিনিষেধও পরিবর্তন করে। শ্রীলঙ্কায় ২০০৫-২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা রাজাপক্ষে পরিবার চিনি আমদানিতে শুল্ক ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়। মূলত, এটি তাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী কোম্পানিকে বিশাল অঙ্কের কর ছাড় দেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। এর ফলে কোম্পানিটি সস্তায় আমদানি করা চিনি বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করে। এতে দেশটির রাজস্বে বড় ক্ষতি হয়। এই ছাড়ের কারণে শ্রীলঙ্কা ২০২১ সালের মোট রাজস্বের ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরিমাণ অর্থ হারায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্র লুণ্ঠনকারীরা পছন্দের কোম্পানিগুলোকে নিয়মকানুন ও আইনের বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিউনিসিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইন এল-আবেদিন বেন আলি ও তাঁর পরিবার গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসের মতো ভোগ্যপণ্য আমদানি করা কয়েকটি কোম্পানির মালিক ছিল। এসব পণ্য আমদানিতে তাদের প্রচুর শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু তাঁর সরকার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোকে কর ফাঁকির সুযোগ দেয়। ফলে বেন আলি পরিবার বিশাল মুনাফা অর্জন করে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক সংযোগ না থাকা কোম্পানিগুলোকে কর দিতে হয়েছিল। ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং বৈষম্য আরও বাড়ে।
এই লুণ্ঠনকারীরা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ভেঙে ফেলতে সচেষ্ট থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায়, ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দেওয়া জ্যাকব জুমা, তিন ব্যবসায়ী ভাই অজয়, অতুল ও রাজেশ গুপ্তের অংশীদার হয়ে রাজস্ব পরিষেবাকে (সার্স) দুর্বল করার চেষ্টা করেছিলেন।
সংস্থা হিসেবে সার্স কর ফাঁকি ও আর্থিক অপরাধ তদন্তের জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। ২০১৩ সালে ওই তিন ভাই জানতে পারেন, তাঁদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে জুমা সার্সে অনুগত কমিশনার নিয়োগ করেন, যিনি সংস্থার শীর্ষ পদে ব্যাপক রদবদল ঘটান। সার্সের তদন্ত করার ক্ষমতা প্রায় নিঃশেষ করে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক সমালোচনা মোকাবিলা করতে, গুপ্ত ভাইয়েরা নিজেদের সংবাদপত্র ও টেলিভিশন স্টেশন ব্যবহার করে সার্সের সুনাম নষ্ট করার জন্য কুৎসা রটাতে শুরু করে।
জুমা ও গুপ্ত ভাইয়েরা নিজেদের রক্ষায় যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, তা সফল হয়েছিল। গুপ্তদের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত বাতিল হয়। ক্ষতি কাটাতে পরে পুনর্গঠন করা হলেও সার্স উল্লেখযোগ্যভাবে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ব্যয় কমাতে হয়েছে।
রাষ্ট্র লুণ্ঠনের জন্য যেসব কাজ প্রয়োজন, সেগুলোর সবটাই খুব একটা জটিল নয়। মাঝে মাঝে, অলিগার্করা সরাসরি রাষ্ট্র থেকেই চুরি করে। উদাহরণস্বরূপ, এরদোয়ান তুরস্কের সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন বহুবার পরিবর্তন করেছেন, যাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দরপত্রের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারেন। এরপর থেকে তিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারি ব্যবসা পাঁচটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছেন। এই কোম্পানিগুলো সরকারি টেন্ডার জেতার দিক থেকে বিশ্বের দশটি সফল কোম্পানির মধ্যে অন্যতম। বিনিময়ে, এই কোম্পানিগুলো এরদোয়ানকে বিপুল পরিমাণ ইতিবাচক সংবাদের মাধ্যমে আনুকূল্য দিয়েছে। কারণ, এসব কোম্পানির প্রায় সব কটিরই গণমাধ্যম আছে। কেবল তা-ই নয়, এসব কোম্পানি এরদোয়ানের দল পরিচালিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়েছে এবং নিজ কর্মীদের এরদোয়ানের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে।
একই পথে হেঁটেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। জুমার আমলে গুপ্ত ভাইয়েরা একের পর এক ঠিকাদারি পেয়েছে এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ঘুষ আদায়ে নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করেন। ছোটখাটো একটি কম্পিউটার কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুতই বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার মালিক বনে যান তাঁরা। ডেইরি থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং হয়ে কয়লার মতো বিভিন্ন খাতে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে গুপ্ত ভাইয়েরা। তাঁরা জুমার সরকারের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, এমনকি মন্ত্রিপরিষদে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর প্রধানও তাঁরা ঠিক করতেন। বিনিময়ে, গুপ্তরা জুমার পকেটে অর্থ সরবরাহ করতেন এবং জুমাকে সমর্থন করে প্রচারণা চালাতেন।
এ ধরনের দুর্নীতি উন্নয়নের গতি অনেক কমিয়ে দেয়। একটি সুস্থ অর্থনীতির দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুণমান ও দামের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু একটি লুণ্ঠিত রাষ্ট্রে তারা অর্থনীতিতে ‘কার্যকর সম্পর্ক’ তৈরির মাধ্যমে সফল হয়। এর সঙ্গে আর উদ্ভাবন বা দক্ষতার তেমন একটা যোগ থাকে না।
অনেক দক্ষ ও সেরা কোম্পানি কেবল সঠিক যোগাযোগ না থাকায় পিছিয়ে পড়ে। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীরা ব্যবসা শুরু করার চেষ্টাও করেন না। অনেক দক্ষ কর্মী এমন বাজারের সন্ধানে দেশ ছাড়েন যেখানে প্রতিভা পুরস্কৃত হয়, ক্ষমতার নৈকট্য নয়। সুবিধাপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো বেশি দাম নিয়ে কম পরিষেবা দেয়। ফলে অর্থনৈতিক উৎপাদন হ্রাস পায়, জীবনযাত্রার মান খারাপ হয়। এমনকি, কখনো কখনো মানুষ তাদের প্রাণও হারায়।
একাধিক গবেষণা অনুসারে, তুরস্কের অবকাঠামো উন্নত হলে ২০২৩ সালের ভূমিকম্পে কম প্রাণঘাতী হতে পারত। কারণ, এরদোয়ান প্রতিযোগিতামূলক কোম্পানিগুলোকে ঠেকিয়ে পছন্দের কোম্পানিগুলো অবকাঠামো খাতে সুযোগ দিয়েছিলেন। এতে নির্মাণের মান খারাপ হয়।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল কীভাবে দুর্নীতির কারণে আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা এস্কম। একসময়ের অত্যন্ত সফল সংস্থা ছিল। কিন্তু জুমার আমলে এস্কম খোলা বাজার থেকে কয়লা না কিনে গুপ্ত পরিবারের কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হয়। নিম্নমানের কয়লা চড়া দামে কিনতে হয়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, এস্কম এবং অন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা রেলওয়ে অপারেটর ট্রান্সনেটের ব্যর্থতার কারণে গত ১৫ বছরে দেশটির অর্থনীতি প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষতির শিকার হয়েছে।
একপর্যায়ে, এই অর্থনৈতিক সংকট ‘রাষ্ট্র লুণ্ঠনকারীদের’ জন্যও সমস্যা তৈরি করে। কারণ, চুরি করার মতো অর্থের পরিমাণ তো সীমিত। তবে বাজার ভেঙে পড়লেও পলিগার্করা কদাচিৎ নীতি পরিবর্তন করে। বরং তারা অর্থনীতিকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়; যতক্ষণ না সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় এবং ততক্ষণ তারা চুরি করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় দেশটির জিডিপির ১১৪ গুণ বেশি। ফলে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট তৈরি হয়, জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতি ৪৯ শতাংশে পৌঁছায়।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তাঁর ভাই ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য কর ছাড় বজায় রেখেছিলেন। বৈদেশিক মুদ্রা কেনায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলেও মিত্রদের ডলার খরচে সীমা ছিল না। তাঁরা ঋণখেলাপি হতে পারত এবং জনগণের নাম করে আইএমএফের কাছে সাহায্য চাইতে পারত। কিন্তু পরিবর্তে, তারা তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর মালিকানাধীন বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে থাকে। এতে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে যায়।
পলিগার্করা পুরোপুরি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারলে, একটা পর্যায়ে বিরোধীদের মুখোমুখি হয়। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রেও এমন সব প্রতিষ্ঠান থাকে, যেগুলো নির্বাহী ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করে। আদালত বেআইনি সিদ্ধান্ত বাতিল করে, নিরীক্ষা সংস্থাগুলো জালিয়াতি উদ্ঘাটন করে এবং সাংবাদিকেরা দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি ফাঁস করেন। সাহসী নাগরিকেরা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি নেয়। কখনো কখনো তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। কিন্তু এই লুণ্ঠনকারীরা প্রায়শই জবাবদিহি এড়িয়ে যেতে সফল হয়।
তবে বিরোধীরাও সফল হয় কখনো কখনো। হাসিনা, রাজাপক্ষে ও জুমা তার উদাহরণ। কিন্তু প্রায়শই অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়ার পরেই কেবল লুণ্ঠনকারীরা উচ্ছেদ হয়। রাজাপক্ষের পতনের আগে শ্রীলঙ্কায় ভোগ্যপণ্যের সংকট ও আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা অনুগতদের সরকারি চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু তত দিনে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আজ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধসের দ্বারপ্রান্তে। মানুষ তাদের আমানত তুলতে এবং মৌলিক অনেক পণ্যও কিনতে অক্ষম (অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে)।
এই ব্যাপক ক্ষতি থেকে দেশগুলোর পুনরুদ্ধার পাওয়া কঠিন। নতুন নেতারা চুরি করা সম্পদের কারণে সৃষ্ট বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষত ভরাট করতে হিমশিম খান। কারণ, তাঁদের বিধ্বস্ত অর্থনীতির কোনো সুস্পষ্ট করের ভিত্তি নেই। আর্থিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, তাই তাঁরা ঋণ নিতেও হিমশিম খান। তাঁরা সেই অলিগার্কদের পেছনে লাগতে পারেন, যারা এই চুরি করা সম্পদের বেশির ভাগ অংশের মালিক। কিন্তু প্রায়শই, সেই অভিজাতেরা বিদেশে থাকেন। যাঁরা রয়ে গেছেন, তাঁরাও তাঁদের সম্পদ বিদেশে সরিয়ে ফেলেছেন, ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে সেই অর্থ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন আরও বেশি কঠিন। নতুন নেতৃত্ব হয়তো আমলাতন্ত্রকে পরিশুদ্ধ করতে চাইতে পারে, কিন্তু ব্যাপক হারে বরখাস্ত করলে তা প্রতিশোধমূলক মনে হবে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় কর্মীশূন্য হয়ে পড়বে। ফলে নেতাদের পুনর্গঠনের জন্য একটি ধীরস্থির পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যার অর্থ হলো, কিছু সময়ের জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া চালিয়ে যাওয়া।
একইভাবে, আরও বিপর্যয় এড়াতে নতুন সরকারগুলো দেখতে পায় যে তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে অর্থ প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। সমাজের কিছু নির্দিষ্ট সম্পদের প্রয়োজন—খাবার, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ—এবং বছরের পর বছর ধরে দখলের পর, উপযুক্ত সরবরাহকারী খুঁজে বের করতে সময় লাগে। নতুন ব্যবসাগুলো বাজারে প্রবেশের আগে নিশ্চিত হতে চায় পরিস্থিতি আগের মতো নেই।
এখন ট্রাম্প-মাস্ক মার্কিন অর্থনীতিকে দখল করতে সফল হলে তাঁরা কেবল মার্কিন বাজারকেই উলটপালট করবেন না; বরং বিশ্ব অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং প্রধান আর্থিক কেন্দ্র, সুতরাং সেখানে যা ঘটে, তার প্রভাব সর্বত্র পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে ওয়াশিংটন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পরিচ্ছন্ন শাসনের প্রবক্তা হিসেবে অন্য দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাতদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু ট্রাম্প ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিস আইনের প্রয়োগ স্থগিত করতে এবং করপোরেট স্বচ্ছতাবিষয়ক প্রয়োজনীয়তাগুলো শিথিল করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
অন্যভাবে বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল বিশ্বের পরিচ্ছন্ন শাসনের পাহারাদারের ঐতিহাসিক ভূমিকা ত্যাগ করছে না; বরং পক্ষ পরিবর্তন করে একটি মাফিয়া প্রধানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের রোল মডেলে পরিণত হচ্ছে।
লেখক: এলিজাবেথ ডেভিড ব্যারেট, ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের দুর্নীতিবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক

ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইলন মাস্ক যুগল মার্কিন প্রশাসনে যেন করাত চালিয়ে যাচ্ছেন! মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে মাস্ক বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মী ছাঁটাই করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বরখাস্ত কর্মকর্তাদের স্থলে অনুগতদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
ট্রাম্প বিভিন্ন বিভাগের মহাপরিদর্শকদের বরখাস্ত করেছেন এবং সরকারি নৈতিকতা বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করেছেন। এই যুগল মিলে কংগ্রেসের অনুমিত বরাদ্দ নিজেদের হস্তগত করতে এবং তাঁদের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে ‘পাওয়ার অব দ্য পার্স’ (অর্থ বরাদ্দের ক্ষমতা)-এর অপব্যবহার করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন আরও বেশি করে মাস্কের কোম্পানির স্টারলিংক স্যাটেলাইট ডিশ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাস্কের কোম্পানিগুলোকে আরও বিলিয়ন ডলারের চুক্তির জন্য তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ এই কোম্পানিগুলো আগে থেকেই বিপুল পরিমাণ সরকারি ভর্তুকি পেয়ে আসছে। একই সময়ে ট্রাম্প তাঁর অ্যাজেন্ডা সমর্থন করে না, এমন বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ তহবিল বাতিল করেছেন।
বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘দুর্নীতি’ বলে মনে হবে না। আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে কোনো ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের ফেডারেল সরকারব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেনি। ফলে সাধারণ নাগরিক সেই অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে অনেক কিছুই তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই চিত্র বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বৃহৎ পরিসরের একটি খণ্ডাংশমাত্র।
দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোতে রাজনীতিক, অভিজাত ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদদের ছোট ছোট গোষ্ঠী—যাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ‘পলিগার্ক’ বলা হয়—নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক চরিত্রের বিকার ঘটিয়েছে। এই অশুভ আঁতাতগুলো একসঙ্গে মিলে বিদ্যমান আইন, নিয়ম পরিবর্তন করে, আমলাদের বরখাস্ত করে, সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে এবং এরপর দেশের সম্পদ গ্রাস করে। রাজনীতিবিদেরা ব্যাংক দখল করে, বিধিবিধান পরিবর্তন এবং সরকারি ক্রয় চুক্তি দখলে নেয়। একই সময়ে, তাদের বেসরকারি খাতের মিত্ররা ঘুষ, অনুদান এবং অনুকূল মিডিয়া কাভারেজ দেয়।
এই প্রক্রিয়াকে বলা যেতে পারে ‘স্টেট ক্যাপচার’ বা ‘রাষ্ট্র লুণ্ঠন’। ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তারা এটি করে। বাংলাদেশ, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক এবং আরও অনেক দেশে এটি ঘটেছে। এর সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা, তা নির্ধারণ করা কঠিন এবং এর সম্পূর্ণ প্রভাব পুরোপুরি প্রকাশ পেতে বহু বছর লেগে যায়। তবে ঘটনাগুলো গুরুতর।
দখল করা অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও) ফুলে-ফেঁপে ওঠে। দেশের অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। ব্যাংকগুলো পছন্দের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ব্যাড লোন’ বা মন্দ ঋণ দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। ফলে প্রবৃদ্ধি কমে যায়, কর্মসংস্থান হ্রাস পায়, বৈষম্য বাড়ে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, রাষ্ট্র লুণ্ঠন ঠেকানো এবং সেই প্রক্রিয়াকে বিপরীতমুখী করা এক কঠিন কাজ। এ জন্য প্রয়োজন হুইসেলব্লোয়ার, সাংবাদিক এবং অ্যাকটিভিস্টদের নাগাড়ে সোচ্চার থাকা। দীর্ঘ মেয়াদে এ ধরনের অধ্যবসায় ফলপ্রসূ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে—বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকেরা শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে। কিন্তু প্রায়শই সাফল্য আসে তখন, যখন দখলদারেরা অর্থনীতিকে সম্পূর্ণরূপে শোষণ করে ধ্বংস করে ফেলে এবং তত দিনে পুনর্গঠন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
লুণ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে কোনো খাতই নিরাপদ নয়। তবে ব্যাংকগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়ে। বস্তুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই একটি অর্থনীতিকে মূলধন সরবরাহ এবং লেনদেন সহজ করে। আর রাষ্ট্র লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে এ দুটো খাতই দখলে অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকগুলোর ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে দেশ থেকে অন্তত ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট করেছেন।
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সরকারসমর্থিত বন্ড পছন্দের কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের স্বজনতোষণমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছেন। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন ওয়ান এমডিবি নামের একটি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ব্যাংককে। বিনিময়ে কোম্পানিগুলো নাজিবের দলকে তহবিল জুগিয়েছে। মোট ৭০০ মিলিয়ন ডলার তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
আবার, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁকে সমর্থনকারী স্থানীয় মেয়রদের বেশি বেশি ঋণ দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেন। ওই মেয়ররা তখন সেই তহবিল ব্যবহার করেন ব্যয়বহুল প্রকল্পের জন্য, যা তাঁদের এবং এরদোয়ানকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করে।
একটি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে রাজনীতিবিদেরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। তুরস্কে এরদোয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে তাঁর মিত্রদের নিয়োগ দিতে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। নাজিব রাজাক ওয়ান এমডিবিকে একেবারে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছিলেন, যাতে এটি তাঁর ব্যক্তিগত জমিদারিতে পরিণত হয়। হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান দেশের বৃহত্তম বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ছাড়কৃত মূল্যে ব্যাংক শেয়ার কেনাবেচার এক জটিল কৌশল ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মতে, শেখ হাসিনা তাঁর অলিগার্ক মিত্রদের কাছে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করতে দেশের গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যাংক পরিচালক এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অপহরণ ও হুমকি দিয়েছিলেন।
এ ধরনের দখলের অর্থনৈতিক ক্ষতি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। সবচেয়ে স্পষ্ট যে বিষয়টি সেটি হলো—এই প্রক্রিয়া একটি দেশের অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, নাজিব তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক ব্যবহার করে মালয়েশিয়া থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার (দেশের জিডিপির ১ শতাংশ) লুট করেছিলেন এবং শেখ হাসিনা সম্ভবত ৩০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশের জিডিপির ৭ শতাংশ) পর্যন্ত লুট করেছেন।
বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাংক দখলের বিষয়টি আরও কৌশলী উপায়ে বাজারকে নষ্ট করে। কোম্পানিগুলোকে দেওয়ার জন্য অর্থাৎ বিনিয়োগ করার জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে সীমিত পরিমাণ অর্থ থাকে। তাই যখন কোনো ব্যাংক রাজনৈতিক সংযোগের কারণে ঋণ দেয়, তখন তারা সুস্থ বা সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার সুযোগ হারায়। এমনকি তারা রাজনৈতিক সংযোগ থাকা কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিতে দিতে একসময় ফতুর হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ তাদের আমানত হারায় এবং আর্থিক সংকট দেখা দেয়। শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কে এর ফলে চরম মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কারণ, সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে ক্রমাগত টাকা ছাপাতে থাকে। তুরস্ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার আশায় সুদের হার বাড়াতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
অবশ্য, রাষ্ট্র লুণ্ঠনকারীরা কেবল ব্যাংকেই তাদের কারসাজি সীমাবদ্ধ রাখে না; তারা সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও বিধিনিষেধও পরিবর্তন করে। শ্রীলঙ্কায় ২০০৫-২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা রাজাপক্ষে পরিবার চিনি আমদানিতে শুল্ক ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়। মূলত, এটি তাদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী কোম্পানিকে বিশাল অঙ্কের কর ছাড় দেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। এর ফলে কোম্পানিটি সস্তায় আমদানি করা চিনি বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করে। এতে দেশটির রাজস্বে বড় ক্ষতি হয়। এই ছাড়ের কারণে শ্রীলঙ্কা ২০২১ সালের মোট রাজস্বের ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরিমাণ অর্থ হারায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্র লুণ্ঠনকারীরা পছন্দের কোম্পানিগুলোকে নিয়মকানুন ও আইনের বিধিনিষেধ থেকে অব্যাহতি দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিউনিসিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইন এল-আবেদিন বেন আলি ও তাঁর পরিবার গাড়ি ও ইলেকট্রনিকসের মতো ভোগ্যপণ্য আমদানি করা কয়েকটি কোম্পানির মালিক ছিল। এসব পণ্য আমদানিতে তাদের প্রচুর শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু তাঁর সরকার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোকে কর ফাঁকির সুযোগ দেয়। ফলে বেন আলি পরিবার বিশাল মুনাফা অর্জন করে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক সংযোগ না থাকা কোম্পানিগুলোকে কর দিতে হয়েছিল। ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং বৈষম্য আরও বাড়ে।
এই লুণ্ঠনকারীরা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ভেঙে ফেলতে সচেষ্ট থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায়, ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির নেতৃত্ব দেওয়া জ্যাকব জুমা, তিন ব্যবসায়ী ভাই অজয়, অতুল ও রাজেশ গুপ্তের অংশীদার হয়ে রাজস্ব পরিষেবাকে (সার্স) দুর্বল করার চেষ্টা করেছিলেন।
সংস্থা হিসেবে সার্স কর ফাঁকি ও আর্থিক অপরাধ তদন্তের জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। ২০১৩ সালে ওই তিন ভাই জানতে পারেন, তাঁদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে জুমা সার্সে অনুগত কমিশনার নিয়োগ করেন, যিনি সংস্থার শীর্ষ পদে ব্যাপক রদবদল ঘটান। সার্সের তদন্ত করার ক্ষমতা প্রায় নিঃশেষ করে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক সমালোচনা মোকাবিলা করতে, গুপ্ত ভাইয়েরা নিজেদের সংবাদপত্র ও টেলিভিশন স্টেশন ব্যবহার করে সার্সের সুনাম নষ্ট করার জন্য কুৎসা রটাতে শুরু করে।
জুমা ও গুপ্ত ভাইয়েরা নিজেদের রক্ষায় যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, তা সফল হয়েছিল। গুপ্তদের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত বাতিল হয়। ক্ষতি কাটাতে পরে পুনর্গঠন করা হলেও সার্স উল্লেখযোগ্যভাবে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ব্যয় কমাতে হয়েছে।
রাষ্ট্র লুণ্ঠনের জন্য যেসব কাজ প্রয়োজন, সেগুলোর সবটাই খুব একটা জটিল নয়। মাঝে মাঝে, অলিগার্করা সরাসরি রাষ্ট্র থেকেই চুরি করে। উদাহরণস্বরূপ, এরদোয়ান তুরস্কের সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন বহুবার পরিবর্তন করেছেন, যাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দরপত্রের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারেন। এরপর থেকে তিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারি ব্যবসা পাঁচটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছেন। এই কোম্পানিগুলো সরকারি টেন্ডার জেতার দিক থেকে বিশ্বের দশটি সফল কোম্পানির মধ্যে অন্যতম। বিনিময়ে, এই কোম্পানিগুলো এরদোয়ানকে বিপুল পরিমাণ ইতিবাচক সংবাদের মাধ্যমে আনুকূল্য দিয়েছে। কারণ, এসব কোম্পানির প্রায় সব কটিরই গণমাধ্যম আছে। কেবল তা-ই নয়, এসব কোম্পানি এরদোয়ানের দল পরিচালিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়েছে এবং নিজ কর্মীদের এরদোয়ানের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে।
একই পথে হেঁটেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। জুমার আমলে গুপ্ত ভাইয়েরা একের পর এক ঠিকাদারি পেয়েছে এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ঘুষ আদায়ে নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করেন। ছোটখাটো একটি কম্পিউটার কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুতই বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার মালিক বনে যান তাঁরা। ডেইরি থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং হয়ে কয়লার মতো বিভিন্ন খাতে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে গুপ্ত ভাইয়েরা। তাঁরা জুমার সরকারের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, এমনকি মন্ত্রিপরিষদে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর প্রধানও তাঁরা ঠিক করতেন। বিনিময়ে, গুপ্তরা জুমার পকেটে অর্থ সরবরাহ করতেন এবং জুমাকে সমর্থন করে প্রচারণা চালাতেন।
এ ধরনের দুর্নীতি উন্নয়নের গতি অনেক কমিয়ে দেয়। একটি সুস্থ অর্থনীতির দেশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুণমান ও দামের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু একটি লুণ্ঠিত রাষ্ট্রে তারা অর্থনীতিতে ‘কার্যকর সম্পর্ক’ তৈরির মাধ্যমে সফল হয়। এর সঙ্গে আর উদ্ভাবন বা দক্ষতার তেমন একটা যোগ থাকে না।
অনেক দক্ষ ও সেরা কোম্পানি কেবল সঠিক যোগাযোগ না থাকায় পিছিয়ে পড়ে। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীরা ব্যবসা শুরু করার চেষ্টাও করেন না। অনেক দক্ষ কর্মী এমন বাজারের সন্ধানে দেশ ছাড়েন যেখানে প্রতিভা পুরস্কৃত হয়, ক্ষমতার নৈকট্য নয়। সুবিধাপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো বেশি দাম নিয়ে কম পরিষেবা দেয়। ফলে অর্থনৈতিক উৎপাদন হ্রাস পায়, জীবনযাত্রার মান খারাপ হয়। এমনকি, কখনো কখনো মানুষ তাদের প্রাণও হারায়।
একাধিক গবেষণা অনুসারে, তুরস্কের অবকাঠামো উন্নত হলে ২০২৩ সালের ভূমিকম্পে কম প্রাণঘাতী হতে পারত। কারণ, এরদোয়ান প্রতিযোগিতামূলক কোম্পানিগুলোকে ঠেকিয়ে পছন্দের কোম্পানিগুলো অবকাঠামো খাতে সুযোগ দিয়েছিলেন। এতে নির্মাণের মান খারাপ হয়।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল কীভাবে দুর্নীতির কারণে আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা এস্কম। একসময়ের অত্যন্ত সফল সংস্থা ছিল। কিন্তু জুমার আমলে এস্কম খোলা বাজার থেকে কয়লা না কিনে গুপ্ত পরিবারের কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হয়। নিম্নমানের কয়লা চড়া দামে কিনতে হয়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, এস্কম এবং অন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা রেলওয়ে অপারেটর ট্রান্সনেটের ব্যর্থতার কারণে গত ১৫ বছরে দেশটির অর্থনীতি প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষতির শিকার হয়েছে।
একপর্যায়ে, এই অর্থনৈতিক সংকট ‘রাষ্ট্র লুণ্ঠনকারীদের’ জন্যও সমস্যা তৈরি করে। কারণ, চুরি করার মতো অর্থের পরিমাণ তো সীমিত। তবে বাজার ভেঙে পড়লেও পলিগার্করা কদাচিৎ নীতি পরিবর্তন করে। বরং তারা অর্থনীতিকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়; যতক্ষণ না সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয় এবং ততক্ষণ তারা চুরি করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় দেশটির জিডিপির ১১৪ গুণ বেশি। ফলে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সংকট তৈরি হয়, জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি দেখা দেয়। মূল্যস্ফীতি ৪৯ শতাংশে পৌঁছায়।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তাঁর ভাই ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য কর ছাড় বজায় রেখেছিলেন। বৈদেশিক মুদ্রা কেনায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলেও মিত্রদের ডলার খরচে সীমা ছিল না। তাঁরা ঋণখেলাপি হতে পারত এবং জনগণের নাম করে আইএমএফের কাছে সাহায্য চাইতে পারত। কিন্তু পরিবর্তে, তারা তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর মালিকানাধীন বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে থাকে। এতে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে যায়।
পলিগার্করা পুরোপুরি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারলে, একটা পর্যায়ে বিরোধীদের মুখোমুখি হয়। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রেও এমন সব প্রতিষ্ঠান থাকে, যেগুলো নির্বাহী ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করে। আদালত বেআইনি সিদ্ধান্ত বাতিল করে, নিরীক্ষা সংস্থাগুলো জালিয়াতি উদ্ঘাটন করে এবং সাংবাদিকেরা দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি ফাঁস করেন। সাহসী নাগরিকেরা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি নেয়। কখনো কখনো তারা প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। কিন্তু এই লুণ্ঠনকারীরা প্রায়শই জবাবদিহি এড়িয়ে যেতে সফল হয়।
তবে বিরোধীরাও সফল হয় কখনো কখনো। হাসিনা, রাজাপক্ষে ও জুমা তার উদাহরণ। কিন্তু প্রায়শই অর্থনীতি গভীর সংকটে পড়ার পরেই কেবল লুণ্ঠনকারীরা উচ্ছেদ হয়। রাজাপক্ষের পতনের আগে শ্রীলঙ্কায় ভোগ্যপণ্যের সংকট ও আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা অনুগতদের সরকারি চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু তত দিনে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আজ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধসের দ্বারপ্রান্তে। মানুষ তাদের আমানত তুলতে এবং মৌলিক অনেক পণ্যও কিনতে অক্ষম (অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে)।
এই ব্যাপক ক্ষতি থেকে দেশগুলোর পুনরুদ্ধার পাওয়া কঠিন। নতুন নেতারা চুরি করা সম্পদের কারণে সৃষ্ট বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষত ভরাট করতে হিমশিম খান। কারণ, তাঁদের বিধ্বস্ত অর্থনীতির কোনো সুস্পষ্ট করের ভিত্তি নেই। আর্থিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, তাই তাঁরা ঋণ নিতেও হিমশিম খান। তাঁরা সেই অলিগার্কদের পেছনে লাগতে পারেন, যারা এই চুরি করা সম্পদের বেশির ভাগ অংশের মালিক। কিন্তু প্রায়শই, সেই অভিজাতেরা বিদেশে থাকেন। যাঁরা রয়ে গেছেন, তাঁরাও তাঁদের সম্পদ বিদেশে সরিয়ে ফেলেছেন, ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে সেই অর্থ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন আরও বেশি কঠিন। নতুন নেতৃত্ব হয়তো আমলাতন্ত্রকে পরিশুদ্ধ করতে চাইতে পারে, কিন্তু ব্যাপক হারে বরখাস্ত করলে তা প্রতিশোধমূলক মনে হবে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় কর্মীশূন্য হয়ে পড়বে। ফলে নেতাদের পুনর্গঠনের জন্য একটি ধীরস্থির পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যার অর্থ হলো, কিছু সময়ের জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া চালিয়ে যাওয়া।
একইভাবে, আরও বিপর্যয় এড়াতে নতুন সরকারগুলো দেখতে পায় যে তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে অর্থ প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। সমাজের কিছু নির্দিষ্ট সম্পদের প্রয়োজন—খাবার, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ—এবং বছরের পর বছর ধরে দখলের পর, উপযুক্ত সরবরাহকারী খুঁজে বের করতে সময় লাগে। নতুন ব্যবসাগুলো বাজারে প্রবেশের আগে নিশ্চিত হতে চায় পরিস্থিতি আগের মতো নেই।
এখন ট্রাম্প-মাস্ক মার্কিন অর্থনীতিকে দখল করতে সফল হলে তাঁরা কেবল মার্কিন বাজারকেই উলটপালট করবেন না; বরং বিশ্ব অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং প্রধান আর্থিক কেন্দ্র, সুতরাং সেখানে যা ঘটে, তার প্রভাব সর্বত্র পড়ে। ঐতিহাসিকভাবে ওয়াশিংটন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পরিচ্ছন্ন শাসনের প্রবক্তা হিসেবে অন্য দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাতদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু ট্রাম্প ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিস আইনের প্রয়োগ স্থগিত করতে এবং করপোরেট স্বচ্ছতাবিষয়ক প্রয়োজনীয়তাগুলো শিথিল করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
অন্যভাবে বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল বিশ্বের পরিচ্ছন্ন শাসনের পাহারাদারের ঐতিহাসিক ভূমিকা ত্যাগ করছে না; বরং পক্ষ পরিবর্তন করে একটি মাফিয়া প্রধানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের রোল মডেলে পরিণত হচ্ছে।
লেখক: এলিজাবেথ ডেভিড ব্যারেট, ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের দুর্নীতিবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

দখলকৃত অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও)
০৬ এপ্রিল ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

দখলকৃত অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও)
০৬ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

দখলকৃত অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও)
০৬ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

দখলকৃত অর্থনীতিতে প্রতিভা এবং সাফল্যের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই এমন দক্ষ কর্মীরা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং সক্ষম সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অন্যদিকে, ভালো যোগাযোগ আছে এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবন বা মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াই (বা কখনো কখনো পণ্য সরবরাহ না করেও)
০৬ এপ্রিল ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে