Ajker Patrika

‘মানবজাতির ত্রাতা’ হওয়ার বাসনাই ইলন মাস্কের কাল হতে পারে!

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ৩০
‘মানবজাতির ত্রাতা’ হওয়ার বাসনাই ইলন মাস্কের কাল হতে পারে!

ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী। তবে সব মহলেই সর্বাধিক আলোচিত নামগুলোর একটি। বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি—এমনকি ভূরাজনৈতিক অঙ্গনেও তাঁর সরব উপস্থিতি। অনেকে ইলন মাস্ককে বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ মনে করেন। তবে কেউ বলেন উন্মাদ! সে যা-ই হোক, তিনি যে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অতি গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি, সেটি কেউ অস্বীকার করতে পারে না। তিনি এমন এক চরিত্র, যাঁকে পছন্দ না করলেও উপেক্ষা করা যায় না। 

তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, ইলন মাস্কের অতিমানবীয় সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে, তাঁর মানবজাতির ত্রাতা হতে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে। 

কয়েক দিন পরপরই ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এতে অনেকের হয়তো ধারণা হয়েছে যে বিষয়টা এখন ডালভাত! কিন্তু সবাই তা ভাবেন না। যেমন চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে ফ্যালকন-৯ রকেট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছিল সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। 

একজন ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স প্রস্তুতিকৃত ফ্যালকন-৯ রকেটের প্রশংসা করে বলেন, ‘এটি যেন কখনোই পুরোনো হয় না! অনেকটা আমাদের জনপ্রিয় এসিডিসি কনসার্টের মতো।’ তবে বিষয়টি কেবলই এসিডিসি কনসার্টের মতো নয়। কারণ, সেদিন ফ্যালকন-৯ রকেটে করে যে স্যাটেলাইট উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল, তা মূলত একটি ভূরাজনৈতিক ভার বয়ে নিয়ে গেছে মহাশূন্যে। সেটিতে ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট। উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কয়েক দিনের মাথায়ই এটি কক্ষপথে পাঠাল দক্ষিণ কোরিয়া। 

এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সঙ্গে আরও একটি ইতিহাস বা মাইলফলক জড়িত। সেটি হলো স্যাটেলাইটটির প্রস্তুতকারক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনের শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে তৈরি প্রথম কোনো স্যাটেলাইট এটি। 

তবে ঘটনা যা-ই হোক, এই উৎক্ষেপণের কৃতিত্বের বড় একটি অংশই গেছে ফ্যালকন-৯এর মালিক স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের ঝুলিতে। কারণ, বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট নিয়ে এরই মধ্যে স্পেসএক্স প্রায় ২৫০ বার মহাকাশে গেছে। এ ছাড়া, টেসলা ও এক্সের মতো প্রতিষ্ঠান দিয়েও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। 

কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য ইলন মাস্ককে মহাকাশ বিজ্ঞানের একজন বাচাল শিক্ষার্থীর কাতারে নামিয়ে দিয়েছে। 
 
সাম্প্রতিক সময়ে ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্যকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। পরে তিনি নিজেই তাঁর এই কাজকে ‘বোকামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে, তাঁর ইসরায়েল সফর। এই সফরকে শান্তির বার্তা প্রচারের উদ্দেশ্যে বলে দাবি করলেও অনেকে মনে করছেন, তিনি মূলত ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ কাটাতে ইসরায়েল সফর করেছেন। আবার অনেকে বলছেন, ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্স থেকে বিজ্ঞাপন তুলে নিয়েছে। এই পরিস্থিতি প্রশমনের উদ্দেশ্যেও তিনি ইসরায়েল সফর করে থাকতে পারেন। 

এর বাইরেও ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘তিনি পৃথিবীর যেকোনো মানুষের চেয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।’ 

এমন বিতর্কিত অবস্থানের কারণে নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করতে হলে ইলন মাস্ককে অনেকে জিনিয়াস বললেও বিতর্কিত বিষয়গুলোও সামনে আনতে হয়। ভ্যান্ডেনবার্গে সেদিনের উৎক্ষেপণে উপস্থিত থাকা এক তরুণ ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী বলেন, ‘ইলন মাস্ককে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ কাল্ট হিসেবে অনুসরণ করে। তিনি স্পষ্টতই একজন খুব সমস্যাজনক মানুষ। অবিশ্বাস্য মানসিক জোর ও অস্থির অতীতকে সফল ভবিষ্যতে পরিণত করার জন্য তিনি অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়। ভক্তদের মাঝে তাঁর অবস্থান এতটাই দৃঢ় যে যদি বলেন মানুষ পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে পারবে, তবে সেটিও ভক্তরা বিশ্বাস করবে!’ 

স্পষ্ট বিনিয়োগ, নতুন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনে এই সময়ে মাস্কের জুড়ি পাওয়া ভার। তিনি বিপুল টাকার মালিকও। কিন্তু তাঁর যে চরিত্র দাঁড়িয়ে গেছে, সেটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, দাম্ভিকতা কি কেবল বিজনেস পাইওনিয়ারের জন্যই প্রযোজ্য? যে ব্যক্তি ভূমি, মহাকাশ ভ্রমণে বিপ্লব ঘটাতে প্রকৌশল, শক্তি ও অর্থনীতির রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন; তিনি যত বড়ই হন কেন, তিনি তাঁর গুরুত্বের কারণে শালীনতার প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারেন? নাকি তিনি নিজেই নিজেকে প্রচার করার মিশনে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন এবং তাঁর মধ্যে নিজেকে ত্রাতা হিসেবে ভাবার আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে? 

এসব প্রশ্নের উত্তর জটিল। ইলন মাস্কের কৌতুক অনেক সময়ই বালখিল্য হয়। প্র্যাংক থেকে শুরু করে তিনি মানুষের গাঁজা সেবন নিয়ে পর্যন্ত তামাশা করেন। এই বিষয়টি মাস্ককে একজন প্রথাবিরোধী বিজনেস ম্যাগনেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়ে সাধারণের আড্ডার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। 

তবে মাস্ক কেবল হাস্যরসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তিনি প্রায়ই বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের আক্রমণ করে বসেন। অনেকে এসব কারণে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

সে যা-ই হোক, প্রথাবিরোধী বিপণন কৌশল ঠিকই মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেসলার কথা। প্রতিষ্ঠানটি প্রথাগত বিজ্ঞাপন না দিয়েই একপ্রকার মাস্কের কথার জোরে বিপুল পরিমাণ গাড়ি বিক্রি করেছে। 

মাস্কের নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়ানোর বিষয়টিতে প্রাণের ছোঁয়া রয়েছে, রয়েছে সরস বুদ্ধিমত্তা। একই সঙ্গে নিজের মধ্যে একটি জেদি মনোভাবও রয়েছে তাঁর। ফলে মাস্কের জাদু কোথায় শেষ হবে, আর কোথায় তাঁর পাগলামি শুরু হবে না নির্ণয় করা আসলেই দুষ্কর। 

ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ডলার। ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, স্পেসএক্সের বর্তমান বাজারমূল্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। ইতিহাসে বেসরকারি খাতের কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বাজারমূল্য এত হয়নি কখনো। 

এরপরও ইলন মাস্ক কেন এমন দুর্বোধ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে সিএনএনের সাবেক সাংবাদিক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন লিখিত মাস্কের জীবনীতে বলা হয়েছে, মাস্কের এমন আচরণ আসলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেও হয়ে থাকতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একবার মজা করে মাস্কের এক বন্ধু তাঁর ফোন কেড়ে নিয়ে হোটেলের লকারে বন্ধ করে রেখেছিলেন যাতে মাস্ক টুইট করতে না পারেন। সারা দিন মোটামুটি ভালো গেলেও রাত ৩টার দিকে মাস্ক হোটেলের কর্মচারীদের লকার খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

এর বাইরে আরেকটি বিষয় এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে, ইলন মাস্কের টুইটগুলো যতই আপাত ক্ষতিকর হোক না কেন, তাতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীদের খুব একটা আসে যায় না। 

তবে যে বছর টুইটার (বর্তমান এক্স) কিনে নেন, সে বছর টেসলার শেয়ার দর পড়ে গিয়েছিল ব্যাপকভাবে। এর বড় কারণ টুইটার কেনার টাকার জোগাড় করতে টেসলায় নিজের অনেক শেয়ার বিক্রি করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হওয়া। 

অবশ্য বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টেসলা। একই ভাবে, স্পেসএক্স যদি শেয়ারবাজারে চলে আসে, কোনো সন্দেহ নেই যে—বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী এতে অর্থ লগ্নি করবেন। এ ক্ষেত্রে মাস্কের চরিত্রের অপর দিকগুলোকে—যে দিকটা খুবই মেধাবী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন—বিনিয়োগকারীরা আমলে নেবেন। 

তবে মাস্কের চরিত্রের সবচেয়ে সমস্যাজনক বিষয় হলো নিজেকে মানবজাতির ত্রাতা বা ত্রাণকর্তা ভাবার প্রবণতা। টেসলা থেকে শুরু করে স্পেসএক্স হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিষয় নিয়ে মাস্ক এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান যেন, তিনি মানবজাতির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বিশেষ করে জলবায়ু-সংক্রান্ত দুর্যোগ প্রতিরোধ, মানুষ আন্তগ্রহ প্রাণীতে উন্নীত করা, বুদ্ধিতে যন্ত্র যেন মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা এবং বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক মহাপ্রলয় যেন শুরু না হয়—সে বিষয়ে ওকালতি করে তিনি এই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছেন। 

এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় যেন ইলন মাস্ক খামখেয়ালি গ্রিক দেবতাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি মনে করেন, তাঁর হাতেই মানবজাতির ভবিষ্যৎ। তাঁর এমন ধারণার প্রমাণ মেলে গত ৩০ নভেম্বর যখন তিনি টেসলার সাইবার ট্রাক পিকআপের উদ্বোধন করেন, তখন করা এক মন্তব্য থেকে। সে সময় তিনি বলেন, ‘অবশেষে ভবিষ্যৎকে প্রকৃতই ভবিষ্যৎ বলে মনে হচ্ছে!’ 

মানবজাতিকে রক্ষার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়া আজকাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ফ্যাশন খুবই বিপজ্জনক। গত মাসে বিশ্বকে দুর্বৃত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদ থেকে রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত একটি সনদ প্রায় অকেজো করে দিয়েছে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। বছরখানেক আগে ক্রিপ্টো প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত স্যাম ব্যাংকম্যান ফ্রাইড দাবি করেছিলেন, তিনি এফটিএক্স ক্রিপ্টো-এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ঝুঁকি নিয়েছিলেন, এটা তিনি মানবতার সেবার লক্ষ্যেই করেছিলেন। 

বিশ্বে এ ধরনের মিশনারি আগ্রহ ব্যবসায় নতুন নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক হেনরি ফোর্ডকে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে আগ্রহী করে তুলেছিল। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ, ট্রেড ইউনিয়নের মতো ধারণা তিনি এনেছিলেন। 

হেনরি ফোর্ড সব সময় যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে কিছু লোভী বিনিয়োগকারীর মানুষ ধ্বংস করে টাকা বানানোর কৌশল।’ এই বিনিয়োগকারী বলতে তিনি সেই সময় ধনী ইহুদিদেরই বুঝিয়েছিলেন। তবে যুদ্ধকালে ব্যবসা তিনি ঠিকই করেছেন। ইংল্যান্ডের জন্য যুদ্ধবিমান বানিয়েছে তাঁর কোম্পানি, নাৎসি জার্মানিকেও যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করতেন ফোর্ড। এসব মিলিয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন হেনরি ফোর্ড। কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারক এবং শ্রমিকদের ত্রাতা হয়ে উঠতে চাওয়া ফোর্ডকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যা দেওয়া হয়। 

একইভাবে ইলন মাস্কের ঔদ্ধত্যও খর্ব হতে পারে। যেমন, সাইবার ট্রাক নিয়ে মাস্ক বড় বড় কথা বললেও বাজারে আসার পর সেটির বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। যেমন, চালকদের একটি দরজার হাতল খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে। 

তবে বড় পরিসরে বিবেচনা করলে হয়তো ইলন মাস্কের মানবিক ত্রুটিগুলো তাঁর প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী জ্ঞানের সামনে উপেক্ষিত হয়। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট উদ্ভাবন তাঁকে মানবজাতির ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাঁর জন্যও হয়তো হেনরি ফোর্ডের মতো ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক তাঁকে তাঁর অস্থির চরিত্রের জন্য গালাগাল দিতে থাকবে; বাকিরা মনে রাখবে তাঁর সৃষ্টিশীল মনন ও উদ্ভাবনের জন্য। 

দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত