আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে জেনারেশন জেড বা জেন-জি তরুণের সংখ্যা বিশাল—৩৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই তাঁরা। ২৫ বছরের কম বয়সী অস্থির প্রকৃতির এই তরুণেরা হাইপার কানেক্টেড, অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরস্পরের সঙ্গে তীব্রভাবে যুক্ত। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের তথ্য প্রতিনিয়তই জানছেন তাঁরা। সেই তথ্যপ্রবাহের সূত্র ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদ্যমান ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তাঁরা।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরা গত মাসে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন ঘটিয়েছেন। মাদাগাস্কারে তরুণদের আন্দোলন সেখানকার শাসককে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের তীব্র বিক্ষোভ সরকারকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গত বছর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন দ্রুতগতির, বিকেন্দ্রীভূত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষে ভরা।
কিন্তু কাছাকাছি পরিস্থিতি হলেও লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এনক্রিপটেড অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আন্দোলনের ঢেউ এখনো তেমন আলোড়ন তুলতে পারেনি। সবচেয়ে তরুণ এই প্রজন্ম ভারতে কেন আওয়াজ তুলছে না, প্রতিবাদে রাস্তায় কেন নামছে না? তারা কি ভীত বা কেউ কি তাদের রাস্তায় নামতে বাধা দিচ্ছে?
বিবিসি বলছে, মূলত ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতিগত ও আঞ্চলিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ যেন ভারতের তরুণদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। এর সঙ্গে ‘প্রতিবাদে কিছুই বদলাবে না’—এমন সাধারণ মনোভাবও রয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতে জেন-জি আন্দোলনের জোরালো কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের জন্য ‘রাজ্যের মর্যাদার’ দাবিতে অসন্তোষের ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।
ওই ঘটনাকে জেন-জি দ্রোহ ও দীর্ঘদিনের অবদমিত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেছেন এই বিক্ষোভের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও এ বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘জেন-জি প্রজন্মই ভোট কারচুপি রুখবে ও সংবিধানকে রক্ষা করবে।’ তারপরও জেন-জি প্রজন্মের কাছ থেকে সাড়া নেই।
নেপালসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তরুণদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নাকি রাজধানীতে তরুণদের সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইনে এ নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক চলছে। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ বলছে, জেন-জি প্রজন্মের ভেতরেই যেন এক অনলাইন যুদ্ধ চলছে। রেডিট ও এক্সে ভারতের তরুণদের একইভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ; একে ন্যায়বিচারের আহ্বান মনে করছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ নেপালের সহিংসতার দৃষ্টান্ত টেনে সতর্ক করছেন, তাঁরা বিদেশি হস্তক্ষেপের ছায়া দেখছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস বিক্ষোভ—ভারতের ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই দৃষ্টি কাড়ে। তবু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টলিয়ে দেওয়া এত সহজ নয়। এর একটা কারণ হলো, আঞ্চলিক বিভক্তি। আশপাশের দেশগুলোর তরুণদের মতো তাঁরাও ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ মূলত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ঘিরে। ফলে বেকারত্ব, দুর্নীতি আর বৈষম্য নিয়ে দেশজুড়ে তরুণদের বিক্ষোভ গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
বিহারের ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক বিপুল কুমার বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক করতে পারবে—এমন কোনো শক্তি আমি দেখি না। নেপালের তুলনায় ভারতে ক্ষমতা অনেক বেশি বিকেন্দ্রীকৃত, তরুণদের ক্ষোভও তেমনই বিক্ষিপ্ত। আমি চাই, কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হোক। কিন্তু অনেক তরুণ কেবল সরকারি চাকরি বাড়ুক—এটাই চান।’
ভারতীয় থিংকট্যাংক ইয়ুথ পলিসি সেন্টারের প্রধান সুধাংশু কৌশিক মনে করেন, জেন-জি বিদ্রোহের দিক থেকে ভারত হয়তো ‘ব্যতিক্রম’ হয়েই থাকবে। তিনি বলেন, ‘বয়সই একমাত্র বিষয় নয়। ভারতে তরুণেরা আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতিভিত্তিক পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা প্রায়ই তাঁদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়।’
সুধাংশু কৌশিকের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ভারতে কোনো জেন-জি বিদ্রোহ হয়, কোন তরুণদের হবে সেটা? দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের, না তামিলভাষী তরুণদের? তাঁর ভাষায়, বাস্তবতা হলো, ভারতের তরুণসমাজ এত বৈচিত্র্যময় ও পরস্পরবিরোধী যে, তাদের এক ছাতার নিচে আনা কঠিন।
শহুরে তরুণেরা কাজের সুযোগ ও নগর-পরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন করবেন; একসময় ‘অস্পৃশ্য’ বিবেচিত দলিত তরুণেরা লড়বেন জাতিগত বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে; আর তামিল তরুণেরা সোচ্চার হবেন ভাষা, আঞ্চলিক অধিকার কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষায়। আবার রাজ্যভেদেও তরুণদের ক্ষোভের কারণ আলাদা। গুজরাট ও হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের তরুণেরা কোটা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে তরুণেরা প্রতিবাদ করেছেন ঐতিহ্যবাহী খেলা জল্লিকাত্তু নিষিদ্ধের রায়কে ঘিরে।
আঞ্চলিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর চেপে বসেছে ‘দেশবিরোধী’ ট্যাগ পাওয়ার বড় ভয়। এ কারণে সবচেয়ে সচেতন ও পরস্পরের সঙ্গে হাইপার কানেক্টেড তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পান বলে মনে করেন জেন-জি প্রজন্মের তরুণ ২৩ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকে পড়া ধৈর্য চৌধুরী। ভারতের সরকারি রাজনীতিক ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের প্রায়ই আন্দোলনকারীদের এই ‘ট্যাগ’ দিতে শোনা যায়।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি বাধা কাজ করে ভারতীয় তরুণদের সামনে। তা হলো—দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ২৩ বছর বয়সী গবেষক হাজারা নাজিব বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন তারা সেই চেতনা হারিয়েছে।
সরকার অবশ্য দাবি করে, তরুণদের উদ্যম এখনো অটুট। আর তাঁরা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেই শক্তিকে গঠনমূলক পথে নিতে চান। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক চাপই তরুণদের জীবনপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সুধাংশু কৌশিক বলেন, ভারতের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো করছে। তবু বেকারত্বের আতঙ্ক বাড়ছে। তরুণেরা নিজেরাই পথ খুঁজছেন, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বছর বছর বাড়ছে।
তরুণেরা ভোট দিতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিলেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা ক্রমেই কমছে। ২৯ শতাংশ তরুণ ভারতীয় রাজনীতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন।
কৌশিকের পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু ভারতীয় তরুণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় খুঁজে নিচ্ছে। অতএব, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক সিএসডিএস-লোকনীতি পরিচালিত এক বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তরুণদের মধ্যেও শক্ত সমর্থন ধরে রেখেছে। ২০১৯ সালে এই সমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে সামান্যই কমেছে।
তবে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার শিকড় আরও গভীরে। কৈশোরে দেখা এক দশকের রাস্তাঘাটের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি উৎসারিত। এই প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিশোর বয়সে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দিল্লির দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ পর্যন্ত ২০১০-এর দশকের বড় বড় আন্দোলন দেখেছেন।
২০১৯ সালে একের পর এক ক্যাম্পাস ও সড়ক নিয়ে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে কৃষি আইন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে তরুণেরাই ছিলেন সোচ্চার। এর মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল্যও অনেক বেশি।
সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করলে ছাত্রদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রনেতা উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁকে দিল্লি দাঙ্গায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে উমর খালিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ইয়ুথ ফেলো ২৬ বছর বয়সী যতিন ঝা বলেন, সরকার প্রতিবাদ নিয়ে এমন কুৎসা রটায় যে, খুব কম মানুষই প্রতিবাদের কথা ভাবতে পারেন। তবে সরকারের দাবি, এই আন্দোলনগুলোতে ‘বাইরের প্রভাব’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে। তারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে।
ভারতীয় তরুণসমাজের এই নীরবতাকে ‘গভীর প্রজন্মগত বৈশিষ্ট্যের’ প্রতিফলন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত। তাঁর ভাষায়, যুবশক্তি ক্ষণস্থায়ী; প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতে জেনারেশন জেড বা জেন-জি তরুণের সংখ্যা বিশাল—৩৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই তাঁরা। ২৫ বছরের কম বয়সী অস্থির প্রকৃতির এই তরুণেরা হাইপার কানেক্টেড, অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরস্পরের সঙ্গে তীব্রভাবে যুক্ত। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের তথ্য প্রতিনিয়তই জানছেন তাঁরা। সেই তথ্যপ্রবাহের সূত্র ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদ্যমান ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তাঁরা।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরা গত মাসে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন ঘটিয়েছেন। মাদাগাস্কারে তরুণদের আন্দোলন সেখানকার শাসককে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের তীব্র বিক্ষোভ সরকারকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গত বছর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন দ্রুতগতির, বিকেন্দ্রীভূত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষে ভরা।
কিন্তু কাছাকাছি পরিস্থিতি হলেও লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এনক্রিপটেড অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আন্দোলনের ঢেউ এখনো তেমন আলোড়ন তুলতে পারেনি। সবচেয়ে তরুণ এই প্রজন্ম ভারতে কেন আওয়াজ তুলছে না, প্রতিবাদে রাস্তায় কেন নামছে না? তারা কি ভীত বা কেউ কি তাদের রাস্তায় নামতে বাধা দিচ্ছে?
বিবিসি বলছে, মূলত ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতিগত ও আঞ্চলিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ যেন ভারতের তরুণদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। এর সঙ্গে ‘প্রতিবাদে কিছুই বদলাবে না’—এমন সাধারণ মনোভাবও রয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতে জেন-জি আন্দোলনের জোরালো কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের জন্য ‘রাজ্যের মর্যাদার’ দাবিতে অসন্তোষের ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।
ওই ঘটনাকে জেন-জি দ্রোহ ও দীর্ঘদিনের অবদমিত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেছেন এই বিক্ষোভের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও এ বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘জেন-জি প্রজন্মই ভোট কারচুপি রুখবে ও সংবিধানকে রক্ষা করবে।’ তারপরও জেন-জি প্রজন্মের কাছ থেকে সাড়া নেই।
নেপালসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তরুণদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নাকি রাজধানীতে তরুণদের সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইনে এ নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক চলছে। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ বলছে, জেন-জি প্রজন্মের ভেতরেই যেন এক অনলাইন যুদ্ধ চলছে। রেডিট ও এক্সে ভারতের তরুণদের একইভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ; একে ন্যায়বিচারের আহ্বান মনে করছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ নেপালের সহিংসতার দৃষ্টান্ত টেনে সতর্ক করছেন, তাঁরা বিদেশি হস্তক্ষেপের ছায়া দেখছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস বিক্ষোভ—ভারতের ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই দৃষ্টি কাড়ে। তবু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টলিয়ে দেওয়া এত সহজ নয়। এর একটা কারণ হলো, আঞ্চলিক বিভক্তি। আশপাশের দেশগুলোর তরুণদের মতো তাঁরাও ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ মূলত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ঘিরে। ফলে বেকারত্ব, দুর্নীতি আর বৈষম্য নিয়ে দেশজুড়ে তরুণদের বিক্ষোভ গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
বিহারের ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক বিপুল কুমার বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক করতে পারবে—এমন কোনো শক্তি আমি দেখি না। নেপালের তুলনায় ভারতে ক্ষমতা অনেক বেশি বিকেন্দ্রীকৃত, তরুণদের ক্ষোভও তেমনই বিক্ষিপ্ত। আমি চাই, কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হোক। কিন্তু অনেক তরুণ কেবল সরকারি চাকরি বাড়ুক—এটাই চান।’
ভারতীয় থিংকট্যাংক ইয়ুথ পলিসি সেন্টারের প্রধান সুধাংশু কৌশিক মনে করেন, জেন-জি বিদ্রোহের দিক থেকে ভারত হয়তো ‘ব্যতিক্রম’ হয়েই থাকবে। তিনি বলেন, ‘বয়সই একমাত্র বিষয় নয়। ভারতে তরুণেরা আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতিভিত্তিক পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা প্রায়ই তাঁদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়।’
সুধাংশু কৌশিকের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ভারতে কোনো জেন-জি বিদ্রোহ হয়, কোন তরুণদের হবে সেটা? দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের, না তামিলভাষী তরুণদের? তাঁর ভাষায়, বাস্তবতা হলো, ভারতের তরুণসমাজ এত বৈচিত্র্যময় ও পরস্পরবিরোধী যে, তাদের এক ছাতার নিচে আনা কঠিন।
শহুরে তরুণেরা কাজের সুযোগ ও নগর-পরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন করবেন; একসময় ‘অস্পৃশ্য’ বিবেচিত দলিত তরুণেরা লড়বেন জাতিগত বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে; আর তামিল তরুণেরা সোচ্চার হবেন ভাষা, আঞ্চলিক অধিকার কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষায়। আবার রাজ্যভেদেও তরুণদের ক্ষোভের কারণ আলাদা। গুজরাট ও হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের তরুণেরা কোটা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে তরুণেরা প্রতিবাদ করেছেন ঐতিহ্যবাহী খেলা জল্লিকাত্তু নিষিদ্ধের রায়কে ঘিরে।
আঞ্চলিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর চেপে বসেছে ‘দেশবিরোধী’ ট্যাগ পাওয়ার বড় ভয়। এ কারণে সবচেয়ে সচেতন ও পরস্পরের সঙ্গে হাইপার কানেক্টেড তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পান বলে মনে করেন জেন-জি প্রজন্মের তরুণ ২৩ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকে পড়া ধৈর্য চৌধুরী। ভারতের সরকারি রাজনীতিক ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের প্রায়ই আন্দোলনকারীদের এই ‘ট্যাগ’ দিতে শোনা যায়।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি বাধা কাজ করে ভারতীয় তরুণদের সামনে। তা হলো—দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ২৩ বছর বয়সী গবেষক হাজারা নাজিব বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন তারা সেই চেতনা হারিয়েছে।
সরকার অবশ্য দাবি করে, তরুণদের উদ্যম এখনো অটুট। আর তাঁরা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেই শক্তিকে গঠনমূলক পথে নিতে চান। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক চাপই তরুণদের জীবনপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সুধাংশু কৌশিক বলেন, ভারতের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো করছে। তবু বেকারত্বের আতঙ্ক বাড়ছে। তরুণেরা নিজেরাই পথ খুঁজছেন, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বছর বছর বাড়ছে।
তরুণেরা ভোট দিতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিলেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা ক্রমেই কমছে। ২৯ শতাংশ তরুণ ভারতীয় রাজনীতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন।
কৌশিকের পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু ভারতীয় তরুণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় খুঁজে নিচ্ছে। অতএব, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক সিএসডিএস-লোকনীতি পরিচালিত এক বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তরুণদের মধ্যেও শক্ত সমর্থন ধরে রেখেছে। ২০১৯ সালে এই সমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে সামান্যই কমেছে।
তবে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার শিকড় আরও গভীরে। কৈশোরে দেখা এক দশকের রাস্তাঘাটের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি উৎসারিত। এই প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিশোর বয়সে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দিল্লির দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ পর্যন্ত ২০১০-এর দশকের বড় বড় আন্দোলন দেখেছেন।
২০১৯ সালে একের পর এক ক্যাম্পাস ও সড়ক নিয়ে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে কৃষি আইন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে তরুণেরাই ছিলেন সোচ্চার। এর মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল্যও অনেক বেশি।
সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করলে ছাত্রদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রনেতা উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁকে দিল্লি দাঙ্গায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে উমর খালিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ইয়ুথ ফেলো ২৬ বছর বয়সী যতিন ঝা বলেন, সরকার প্রতিবাদ নিয়ে এমন কুৎসা রটায় যে, খুব কম মানুষই প্রতিবাদের কথা ভাবতে পারেন। তবে সরকারের দাবি, এই আন্দোলনগুলোতে ‘বাইরের প্রভাব’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে। তারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে।
ভারতীয় তরুণসমাজের এই নীরবতাকে ‘গভীর প্রজন্মগত বৈশিষ্ট্যের’ প্রতিফলন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত। তাঁর ভাষায়, যুবশক্তি ক্ষণস্থায়ী; প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২৩ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২৩ অক্টোবর ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২৩ অক্টোবর ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২৩ অক্টোবর ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৫ দিন আগে