একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্রমেই বহু মেরু বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বৈশ্বিক আধিপত্যের পাট চুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত ‘নিজ আঙিনা’ বলে পরিচিত পশ্চিম গোলার্ধ অর্থাৎ দুই আমেরিকা মহাদেশে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। আর সেই চাওয়ার পথে নাকের ডগায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ভেনেজুয়েলা। ভেনেজুয়েলা উপকূলে মার্কিন রণ সাজ কেন এবং কী কারণে সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন নিয়ে দ্য ক্রেডলে লিখেছেন এইডেন জে. সিমার্ডোন। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য লেখাটি অনুবাদ করেছেন পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী কারণে’ এবং ‘এখনই কেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক মেরু বিশ্ব ক্ষয়ে যাওয়ায় এবং ইউরেশিয়ার ডিটারেন্ট বা বাইরের শক্তিকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতায় বেড়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটনের শেষ কার্যকর প্রকল্প হলো—নিজেদের তথাকথিত ‘পেছনের আঙিনা’ কাবু করা। দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য বিস্তার ব্যর্থ হলে তাই বিকল্প পরিকল্পনা হলো—অন্তত পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই কৌশলটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরও দ্রুত এগিয়ে চলছে।
পশ্চিম গোলার্ধে নিজ নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কারণ, দেশটির আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ তেলের মজুত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাঙ্ক্ষার পথে বাধা ভেনেজুয়েলার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সরকার। অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে সরকার পতনে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এখন একমাত্র বিকল্প সামরিক শক্তি। কিন্তু এটি বিপরীত ফল দিতে পারে। বিশেষ করে, আঞ্চলিক মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে এবং ভেনেজুয়েলাকে সাহায্য দিতে পারে বেইজিং, মস্কো এবং তেহরান। তখন ট্রাম্পকে অন্য কোথাও পালানোর পথ খুঁজতে হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন যুক্তরাষ্ট্রকে অনন্য অসাধারণ বৈশ্বিক আধিপত্য এনে দিয়েছিল। শক্তির শীর্ষে থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। কুয়েত থেকে ইরাককে বের করে দিয়েছে, যুগোস্লাভিয়া ভেঙেছে এবং হাইতির শাসন পরিবর্তন করেছে। এসবই করা হয়েছে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
অতীতের ঘটনা থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করেন পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য। দ্রুত বিজয় না পাওয়ায় এবং স্থানীয় প্রতিরোধের মুখে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় দুই দশক আটকে পড়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের মার্কিনরা বুঝে যায়, বিশ্বের জ্বালানি ভান্ডার নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে।
একই সময়ে, চীন মার্কিন করপোরেট সিস্টেম আউটসোর্স করে তার অর্থনীতি দ্রুত শক্তিশালী করেছে। এই সময়েই রাশিয়া চেচেন বিদ্রোহ দমন করেছে, প্রতিবেশী অঞ্চলে প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং জর্জিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বাধা দিয়েছে। এই অবস্থায় মাল্টিপোলার বা বহু মেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পরিবর্তে, ওয়াশিংটন আরও ইউনিপোলার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা রুশ সীমান্তের দিকে ন্যাটো সম্প্রসারণ, পূর্ব ইউরোপ ও ককেশিয়ায় কালার রেভোলিউশনকে সমর্থন, দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় মিত্রদের সাহায্য করেছে। এসব মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিপোলার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কোশেশ।
এসব প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশগুলো ডলারের ব্যবহার কমিয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে, কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে হামাসের প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ফাদি লামা ২০২২ সালে লিখেছিলেন, ‘রাশিয়া, ইরান, চীনের (আরআইসি) ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব বিবেচনা করে পশ্চিমের একমাত্র কার্যকর কৌশল হলো—বিশ্বকে (বিভিন্ন প্রভাব বলয়ে) বিভক্ত করে প্রতিযোগিতা সমাপ্ত করা।’
এরপর থেকে, ট্রাম্পের সময়ে পশ্চিম গোলার্ধে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের নীতি আরও দ্রুত এগিয়েছে। ইউরোপের নিরাপত্তা আমেরিকা নিশ্চিত করার পরিবর্তে ট্রাম্প এটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো সদস্যদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং সম্প্রতি রোমানিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
নিশ্চয়ই, ট্রাম্প প্রশাসনে এখনো নব্য–রক্ষণশীল ঘরানার তীক্ষ্ণ নীতির লোক রয়েছে। ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইউক্রেনে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং সোমালিয়ায় ড্রোন হামলাসহ লোহিত সাগর এলাকায় কার্যক্রম বাড়িয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প নিজে কখনো প্রচলিত নব্য–রক্ষণশীল পরিকল্পনা অনুসরণ করেননি।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। তিনি আশা করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া আবার পশ্চিমা জোটে ফিরবে, আর এতে চীনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক দুর্বল হবে। কিন্তু রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে যুদ্ধ থামানোর কোনো যৌক্তিকতা তারা দেখছে না। বরং, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বেইজিংয়ের সঙ্গে।
এই সময়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধও বেড়ে গেছে। চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। জবাবে চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। শেষে যুক্তরাষ্ট্র নীরবে সেই শুল্ক কমিয়ে ৪৭ শতাংশে নামায়। এমনকি তাইওয়ানও এখন কার্যত ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচ্যসূচি থেকে হারিয়ে গেছে। অথচ, এক সময় তাইওয়ান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয় ছিল।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি অনেকেই ভুলভাবে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বা ‘শান্তিপ্রিয়’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প এখন আমেরিকা মহাদেশকে—পাতাগোনিয়া থেকে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত—ওয়াশিংটনের প্রভাববলয়ে আনতে চাইছেন।
এটি আসলে মনরো নীতিরই নতুন সংস্করণ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই নীতিই বলছে, পশ্চিম গোলার্ধ যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বভুক্ত এলাকা। তবে এবার ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে বলছেন এবং হুমকি দিয়েছেন—প্রয়োজনে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে সংযুক্তিকরণ নিশ্চিত করবেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই তিনি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান। উদারপন্থী বিশ্লেষকেরা একে পাগলামি বললেও এতে বাস্তব ফল এসেছে।
কানাডা সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গ্রিনল্যান্ডে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে, যাতে চীন ওই অঞ্চলের খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার না পায়। পানামা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্প বাতিল করেছে এবং হংকংভিত্তিক সিকে হাচিনসনের সঙ্গে খাল ব্যবস্থাপনার চুক্তি বাতিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে মেক্সিকো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়াতে সম্মত হয়েছে। আর্জেন্টিনা ৪০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সহায়তা পেয়েছে, যা তাদের মার্কিনপন্থী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে। কোস্টারিকা ও গুয়াতেমালা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে, বিনিময়ে তারা কম শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। এভাবে ঘুষ, হুমকি ও সামরিক ভয়ের মুখে একে একে অঞ্চলটির দেশগুলো আবারও ওয়াশিংটনের প্রভাব বলয়ে ফিরছে।
তবে এক ব্যতিক্রম ভেনেজুয়েলা। ২০০২ সাল থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিবর্তনের চেষ্টার, নিষেধাজ্ঞা আর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে টিকে আছে। শুরুতে মনে হয়েছিল, ওয়াশিংটনের চাপে দেশটি ভেঙে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেনেজুয়েলার সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেশটির জিডিপি ৭৪ শতাংশ কমে যায়, মুদ্রাস্ফীতি দুই মিলিয়ন শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, আর প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। তখন মনে হয়েছিল, সরকার ভেঙে পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তা হয়নি।
এখন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মানুষ দেশে ফিরছে, মুদ্রাস্ফীতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এ সাফল্যের পেছনে আছে ভেনেজুয়েলার জনগণের স্থিতিশীলতা। তবে এর বড় অংশের কৃতিত্ব চীনেরও। বেইজিং দেশটিতে ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা ভেনেজুয়েলার মোট অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন দেশটিকে সাহায্য করছে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে পণ্য রপ্তানি করতে। রাশিয়াও সামরিক সহযোগিতা ও গোয়েন্দা সহায়তায় ভেনেজুয়েলাকে সহায়তা দিচ্ছে। ইরানও পাশে আছে, তারা দেশটিতে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পাঠিয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ভেনেজুয়েলার টিকে থাকা অন্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ইতিমধ্যে ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও নিকারাগুয়ায় বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইকুয়েডর ও পেরুর গণবিক্ষোভও ইঙ্গিত দিচ্ছে—তারা শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে বা লড়াইয়ের পথ ধরে এই ধারায় যোগ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উল্টো ফল দিয়েছে। এই পদক্ষেপ চীন ও রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠোনে’ প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভেনেজুয়েলাকে দুর্বল করা অর্থনৈতিক যুদ্ধের সব অস্ত্র এখন প্রায় শেষ। তাই এবার সামরিক বিকল্পের পালা। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল নৌবহর পাঠিয়েছে—১৯৯৪ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি। নতুন কৌশল অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভেনেজুয়েলার উপকূলে। ভয় দেখানোর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারের অভিযোগে কয়েকটি নৌকা লক্ষ্য করে হামলাও চালিয়েছে।
কিন্তু ভেনেজুয়েলা এই উসকানিতে পা দিচ্ছে না। তারা রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে ও ভাগনার বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষক পাঠাতে। এমনকি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনার খবরও শোনা যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় প্রতিরোধও বাড়ছে। ব্রাজিলের ১৫ লাখ সদস্যের ভূমিহীন কৃষক আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সংহতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেক্সিকো ও কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। কারাকাস শহুরে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী পরাজিত হলেও নাগরিক মিলিশিয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, যেন লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়। এই হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ, ইরাক যুদ্ধের মতোই হবে—দীর্ঘ, অজনপ্রিয় ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ।
ট্রাম্প আমেরিকার কৌশল ছোট করে আনছেন। আগে ছিল বৈশ্বিক আধিপত্য, তারপর ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘পিভট’, এখন লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধ। কিন্তু ভেনেজুয়েলা সেই পথে বড় বাধা। যদি ভেনেজুয়েলা সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে টিকে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের শেষ ভ্রমও ভেঙে পড়বে। তখন হয়তো সাম্রাজ্য আংশিক নিয়ন্ত্রণেই সন্তুষ্ট হবে—কেবল উপকূলীয় কিছু সম্পদপূর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রেখে, ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে কাঁচামাল আহরণের জন্য।
এরই মধ্যে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে চাইছে। ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে ‘খ্রিষ্টানদের ওপর গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। বিদেশে হস্তক্ষেপের অজুহাত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ ব্যবহার করে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনে জর্জরিত নাইজেরিয়া ভেঙে যেতে পারে। তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চল আলাদা হয়ে যেতে পারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চল থেকে। কিন্তু নাইজেরিয়াও সহজ লক্ষ্য নয়। সেখানে হস্তক্ষেপ করতে গেলে বিপুল খরচ ও মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। তবু এক মরিয়া সাম্রাজ্যের চোখে হয়তো ঝুঁকিটা নেওয়ার মতোই মূল্যবান মনে হতে পারে।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশল এখন রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নব্য রক্ষণশীলরা পুরোনো আধিপত্য ধরে রাখতে চায়—তারা চায় ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান বজায় রাখুক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে সমর্থন দিক, আর চীনকে ঠেকিয়ে রাখুক। পুরোপুরি পশ্চাদপসরণে সময় লাগবে, কিন্তু ট্রাম্প তার প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই ধারা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সঙ্গেই শেষ হবে না। বৃহত্তর মার্কিন অভিজাত মহল ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, একক আধিপত্যের যুগ শেষ। তাই তারা ভাবছে, যদি বিশ্বকে শাসন করা না যায়, তবে অন্তত নিজের অঞ্চলটাকেই শাসন করা হোক।
কিন্তু সেটাও হয়তো ব্যর্থ হবে। যদি ভেনেজুয়েলা টিকে থাকে, যদি গ্লোবাল সাউথ একত্র হয়, আর যদি লাতিন আমেরিকার জনগণ পরাধীনতার বদলে সার্বভৌমত্বে এক হয়—তাহলে আমেরিকার জন্য পশ্চিম গোলার্ধও আর নিরাপদ থাকবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবের পরবর্তী অধ্যায় হয়তো ‘বিচ্ছিন্নতা’ নয়—বরং এক প্রকার পশ্চাদপসরণ। সেটি ছদ্মবেশে, আক্রমণাত্মক রূপে, তবুও বিপজ্জনক হবে। তবে সেটি আর ‘আধিপত্য’ নয়।
লেখক: এইডেন জে. সিমার্ডোন কানাডিয়ান অভিবাসন আইনজীবী। এ ছাড়া, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর মাস্টার অফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ন্যাটোর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, উইলসন সেন্টার এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন।

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী কারণে’ এবং ‘এখনই কেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক মেরু বিশ্ব ক্ষয়ে যাওয়ায় এবং ইউরেশিয়ার ডিটারেন্ট বা বাইরের শক্তিকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতায় বেড়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটনের শেষ কার্যকর প্রকল্প হলো—নিজেদের তথাকথিত ‘পেছনের আঙিনা’ কাবু করা। দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য বিস্তার ব্যর্থ হলে তাই বিকল্প পরিকল্পনা হলো—অন্তত পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই কৌশলটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরও দ্রুত এগিয়ে চলছে।
পশ্চিম গোলার্ধে নিজ নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কারণ, দেশটির আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ তেলের মজুত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাঙ্ক্ষার পথে বাধা ভেনেজুয়েলার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সরকার। অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে সরকার পতনে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এখন একমাত্র বিকল্প সামরিক শক্তি। কিন্তু এটি বিপরীত ফল দিতে পারে। বিশেষ করে, আঞ্চলিক মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে এবং ভেনেজুয়েলাকে সাহায্য দিতে পারে বেইজিং, মস্কো এবং তেহরান। তখন ট্রাম্পকে অন্য কোথাও পালানোর পথ খুঁজতে হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন যুক্তরাষ্ট্রকে অনন্য অসাধারণ বৈশ্বিক আধিপত্য এনে দিয়েছিল। শক্তির শীর্ষে থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। কুয়েত থেকে ইরাককে বের করে দিয়েছে, যুগোস্লাভিয়া ভেঙেছে এবং হাইতির শাসন পরিবর্তন করেছে। এসবই করা হয়েছে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
অতীতের ঘটনা থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করেন পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য। দ্রুত বিজয় না পাওয়ায় এবং স্থানীয় প্রতিরোধের মুখে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় দুই দশক আটকে পড়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের মার্কিনরা বুঝে যায়, বিশ্বের জ্বালানি ভান্ডার নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে।
একই সময়ে, চীন মার্কিন করপোরেট সিস্টেম আউটসোর্স করে তার অর্থনীতি দ্রুত শক্তিশালী করেছে। এই সময়েই রাশিয়া চেচেন বিদ্রোহ দমন করেছে, প্রতিবেশী অঞ্চলে প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং জর্জিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বাধা দিয়েছে। এই অবস্থায় মাল্টিপোলার বা বহু মেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পরিবর্তে, ওয়াশিংটন আরও ইউনিপোলার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা রুশ সীমান্তের দিকে ন্যাটো সম্প্রসারণ, পূর্ব ইউরোপ ও ককেশিয়ায় কালার রেভোলিউশনকে সমর্থন, দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় মিত্রদের সাহায্য করেছে। এসব মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিপোলার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কোশেশ।
এসব প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশগুলো ডলারের ব্যবহার কমিয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে, কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে হামাসের প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ফাদি লামা ২০২২ সালে লিখেছিলেন, ‘রাশিয়া, ইরান, চীনের (আরআইসি) ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব বিবেচনা করে পশ্চিমের একমাত্র কার্যকর কৌশল হলো—বিশ্বকে (বিভিন্ন প্রভাব বলয়ে) বিভক্ত করে প্রতিযোগিতা সমাপ্ত করা।’
এরপর থেকে, ট্রাম্পের সময়ে পশ্চিম গোলার্ধে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের নীতি আরও দ্রুত এগিয়েছে। ইউরোপের নিরাপত্তা আমেরিকা নিশ্চিত করার পরিবর্তে ট্রাম্প এটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো সদস্যদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং সম্প্রতি রোমানিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
নিশ্চয়ই, ট্রাম্প প্রশাসনে এখনো নব্য–রক্ষণশীল ঘরানার তীক্ষ্ণ নীতির লোক রয়েছে। ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইউক্রেনে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং সোমালিয়ায় ড্রোন হামলাসহ লোহিত সাগর এলাকায় কার্যক্রম বাড়িয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প নিজে কখনো প্রচলিত নব্য–রক্ষণশীল পরিকল্পনা অনুসরণ করেননি।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। তিনি আশা করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া আবার পশ্চিমা জোটে ফিরবে, আর এতে চীনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক দুর্বল হবে। কিন্তু রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে যুদ্ধ থামানোর কোনো যৌক্তিকতা তারা দেখছে না। বরং, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বেইজিংয়ের সঙ্গে।
এই সময়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধও বেড়ে গেছে। চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। জবাবে চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। শেষে যুক্তরাষ্ট্র নীরবে সেই শুল্ক কমিয়ে ৪৭ শতাংশে নামায়। এমনকি তাইওয়ানও এখন কার্যত ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচ্যসূচি থেকে হারিয়ে গেছে। অথচ, এক সময় তাইওয়ান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয় ছিল।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি অনেকেই ভুলভাবে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বা ‘শান্তিপ্রিয়’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প এখন আমেরিকা মহাদেশকে—পাতাগোনিয়া থেকে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত—ওয়াশিংটনের প্রভাববলয়ে আনতে চাইছেন।
এটি আসলে মনরো নীতিরই নতুন সংস্করণ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই নীতিই বলছে, পশ্চিম গোলার্ধ যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বভুক্ত এলাকা। তবে এবার ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে বলছেন এবং হুমকি দিয়েছেন—প্রয়োজনে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে সংযুক্তিকরণ নিশ্চিত করবেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই তিনি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান। উদারপন্থী বিশ্লেষকেরা একে পাগলামি বললেও এতে বাস্তব ফল এসেছে।
কানাডা সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গ্রিনল্যান্ডে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে, যাতে চীন ওই অঞ্চলের খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার না পায়। পানামা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্প বাতিল করেছে এবং হংকংভিত্তিক সিকে হাচিনসনের সঙ্গে খাল ব্যবস্থাপনার চুক্তি বাতিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে মেক্সিকো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়াতে সম্মত হয়েছে। আর্জেন্টিনা ৪০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সহায়তা পেয়েছে, যা তাদের মার্কিনপন্থী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে। কোস্টারিকা ও গুয়াতেমালা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে, বিনিময়ে তারা কম শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। এভাবে ঘুষ, হুমকি ও সামরিক ভয়ের মুখে একে একে অঞ্চলটির দেশগুলো আবারও ওয়াশিংটনের প্রভাব বলয়ে ফিরছে।
তবে এক ব্যতিক্রম ভেনেজুয়েলা। ২০০২ সাল থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিবর্তনের চেষ্টার, নিষেধাজ্ঞা আর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে টিকে আছে। শুরুতে মনে হয়েছিল, ওয়াশিংটনের চাপে দেশটি ভেঙে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেনেজুয়েলার সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেশটির জিডিপি ৭৪ শতাংশ কমে যায়, মুদ্রাস্ফীতি দুই মিলিয়ন শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, আর প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। তখন মনে হয়েছিল, সরকার ভেঙে পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তা হয়নি।
এখন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মানুষ দেশে ফিরছে, মুদ্রাস্ফীতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এ সাফল্যের পেছনে আছে ভেনেজুয়েলার জনগণের স্থিতিশীলতা। তবে এর বড় অংশের কৃতিত্ব চীনেরও। বেইজিং দেশটিতে ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা ভেনেজুয়েলার মোট অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন দেশটিকে সাহায্য করছে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে পণ্য রপ্তানি করতে। রাশিয়াও সামরিক সহযোগিতা ও গোয়েন্দা সহায়তায় ভেনেজুয়েলাকে সহায়তা দিচ্ছে। ইরানও পাশে আছে, তারা দেশটিতে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পাঠিয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ভেনেজুয়েলার টিকে থাকা অন্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ইতিমধ্যে ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও নিকারাগুয়ায় বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইকুয়েডর ও পেরুর গণবিক্ষোভও ইঙ্গিত দিচ্ছে—তারা শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে বা লড়াইয়ের পথ ধরে এই ধারায় যোগ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উল্টো ফল দিয়েছে। এই পদক্ষেপ চীন ও রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠোনে’ প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভেনেজুয়েলাকে দুর্বল করা অর্থনৈতিক যুদ্ধের সব অস্ত্র এখন প্রায় শেষ। তাই এবার সামরিক বিকল্পের পালা। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল নৌবহর পাঠিয়েছে—১৯৯৪ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি। নতুন কৌশল অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভেনেজুয়েলার উপকূলে। ভয় দেখানোর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারের অভিযোগে কয়েকটি নৌকা লক্ষ্য করে হামলাও চালিয়েছে।
কিন্তু ভেনেজুয়েলা এই উসকানিতে পা দিচ্ছে না। তারা রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে ও ভাগনার বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষক পাঠাতে। এমনকি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনার খবরও শোনা যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় প্রতিরোধও বাড়ছে। ব্রাজিলের ১৫ লাখ সদস্যের ভূমিহীন কৃষক আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সংহতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেক্সিকো ও কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। কারাকাস শহুরে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী পরাজিত হলেও নাগরিক মিলিশিয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, যেন লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়। এই হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ, ইরাক যুদ্ধের মতোই হবে—দীর্ঘ, অজনপ্রিয় ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ।
ট্রাম্প আমেরিকার কৌশল ছোট করে আনছেন। আগে ছিল বৈশ্বিক আধিপত্য, তারপর ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘পিভট’, এখন লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধ। কিন্তু ভেনেজুয়েলা সেই পথে বড় বাধা। যদি ভেনেজুয়েলা সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে টিকে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের শেষ ভ্রমও ভেঙে পড়বে। তখন হয়তো সাম্রাজ্য আংশিক নিয়ন্ত্রণেই সন্তুষ্ট হবে—কেবল উপকূলীয় কিছু সম্পদপূর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রেখে, ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে কাঁচামাল আহরণের জন্য।
এরই মধ্যে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে চাইছে। ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে ‘খ্রিষ্টানদের ওপর গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। বিদেশে হস্তক্ষেপের অজুহাত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ ব্যবহার করে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনে জর্জরিত নাইজেরিয়া ভেঙে যেতে পারে। তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চল আলাদা হয়ে যেতে পারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চল থেকে। কিন্তু নাইজেরিয়াও সহজ লক্ষ্য নয়। সেখানে হস্তক্ষেপ করতে গেলে বিপুল খরচ ও মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। তবু এক মরিয়া সাম্রাজ্যের চোখে হয়তো ঝুঁকিটা নেওয়ার মতোই মূল্যবান মনে হতে পারে।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশল এখন রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নব্য রক্ষণশীলরা পুরোনো আধিপত্য ধরে রাখতে চায়—তারা চায় ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান বজায় রাখুক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে সমর্থন দিক, আর চীনকে ঠেকিয়ে রাখুক। পুরোপুরি পশ্চাদপসরণে সময় লাগবে, কিন্তু ট্রাম্প তার প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই ধারা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সঙ্গেই শেষ হবে না। বৃহত্তর মার্কিন অভিজাত মহল ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, একক আধিপত্যের যুগ শেষ। তাই তারা ভাবছে, যদি বিশ্বকে শাসন করা না যায়, তবে অন্তত নিজের অঞ্চলটাকেই শাসন করা হোক।
কিন্তু সেটাও হয়তো ব্যর্থ হবে। যদি ভেনেজুয়েলা টিকে থাকে, যদি গ্লোবাল সাউথ একত্র হয়, আর যদি লাতিন আমেরিকার জনগণ পরাধীনতার বদলে সার্বভৌমত্বে এক হয়—তাহলে আমেরিকার জন্য পশ্চিম গোলার্ধও আর নিরাপদ থাকবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবের পরবর্তী অধ্যায় হয়তো ‘বিচ্ছিন্নতা’ নয়—বরং এক প্রকার পশ্চাদপসরণ। সেটি ছদ্মবেশে, আক্রমণাত্মক রূপে, তবুও বিপজ্জনক হবে। তবে সেটি আর ‘আধিপত্য’ নয়।
লেখক: এইডেন জে. সিমার্ডোন কানাডিয়ান অভিবাসন আইনজীবী। এ ছাড়া, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর মাস্টার অফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ন্যাটোর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, উইলসন সেন্টার এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
১২ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
১২ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
১২ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
১২ নভেম্বর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে