মারুফ ইসলাম

একটি তথ্যচিত্র ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল নয়। ক্ষমতাসীন কারও বিরুদ্ধে কিছু প্রকাশিত হবে গণমাধ্যমে, আর তা নিয়ে হইচই হবে না, তা হয় না। বিবিসি বলছে, তাদের তথ্যচিত্রটি যুক্তরাজ্য সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। তথ্যচিত্রটির নাম ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’।
তথ্যচিত্রে ভারতের গুজরাটের দাঙ্গাকে প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। তিন দিনের সেই দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এ দাঙ্গার মূল ইন্ধনদাতা ছিলেন নরেদ্র মোদি। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। বিবিসির দাবি, ওই দাঙ্গাই পরবর্তী সময়ে মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম করেছে।
বিবিসির দাবি কতটা সঠিক, তা নিশ্চয় তর্কসাপেক্ষ। শুধুই গুজরাট দাঙ্গায় ‘অবদানের’ পুরস্কারস্বরূপ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, এমনটা নিশ্চয় জোর দিয়ে বলা যায় না। এর পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে নিশ্চয়। গুজরাট দাঙ্গাকে অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে।
তবে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র যে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা নিয়ে কোনো তর্ক নেই। ভারত সরকার তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে প্রায় সব ধরনের পদক্ষেপই নিয়েছে। যদিও বিবিসি তথ্যচিত্রটি ভারতে প্রদর্শন করেনি। কিন্তু তা হলে কী হবে? ভারতে ব্যাপকভাবেই ছড়িয়েছে সেটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই উত্তুঙ্গ সময়ে এসব ঠেকানো বেশ কঠিনই। তারপরও মোদি সরকার ইউটিউব ও টুইটারকে তথ্যচিত্রটি দেখানো বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
এসব নির্দেশে কি কাজ হবে? মানুষের পকেটে পকেটে ঘুরেছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। সেসব ফোনে কেউ যদি ভিন্ন মাধ্যমে (ভিপিএন ও অন্যান্য) তথ্যচিত্রটি দেখেন, সরকার ঠেকাবে কী করে?
কী আছে তথ্যচিত্রে
যুক্তরাজ্যের ‘বিবিসি ২’ নামের চ্যানেলে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে ব্রিটেনে সম্প্রচারিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের ওপর আলো ফেলা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। তবে মূল ফোকাস হচ্ছে, গুজরাট দাঙ্গার পিঠে সওয়ার হয়ে মোদির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা।
তথ্যচিত্রটির ব্যাপ্তি এক ঘণ্টা। দীর্ঘ এ তথ্যচিত্রের একটি অংশে বলা হয়েছে, মোদির দল বিজেপি, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীরা ও ভারতের বিচারব্যবস্থা—সবাই মিলেমিশে মোদিকে সাহায্য করেছে।
তবে বিস্ময়কর শোনালেও সত্য, ওই সময়ে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোদিবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের জেলে পোরা হয়েছিল। কীভাবে তাঁদের জেলে ভরা হয়েছিল, সেটাই দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এমন এক ব্যক্তির নাম সঞ্জীব ভাট। তাঁকে একটি পুরোনো মামলায় আজীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এই সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন নরেন্দ্র মোদি—এমনটাই দাবি করা হয়েছে তথ্যচিত্রে।
গুজরাটের ওই দাঙ্গায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এ ছাড়া ওই দাঙ্গার সময় কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছেন, এমন বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়েছে।
ভারতের বিচারব্যবস্থার দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে বিবিসির তথ্যচিত্রে। কীভাবে নরেদ্র মোদিকে যাবতীয় অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে, সেসব নিয়েও আলোচনা রয়েছে তথ্যচিত্রটিতে।
টানা তিন দিন ধরে চলেছিল গুজরাটের দাঙ্গা। ওই পুরোটা সময় নীরব ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। কেন তিনি সময়মতো প্রশাসনকে কাজে লাগাননি দাঙ্গা থামাতে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তথ্যচিত্রে আরও যে বিষয়টি স্থান পেয়েছে, সেটি হচ্ছে মোদির মুসলিমবিদ্বেষ। যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন (অবশ্যই নাম ও ছবি প্রকাশ না করার শর্তে)। সেই সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে দ্য মোদি কোশ্চেন তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, গুজরাট দাঙ্গার সময় মুসলিমদের ওপর পরিকল্পনামাফিক হামলা করা হয়েছিল। আর এ কাজ করেছিল উগ্রপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’।
হিন্দু পরিষদ একা ওই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিতে পারত না, গুজরাট রাজ্য সরকার তাদের সাহায্য করেছে বলেও বিবিসির তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে। তথ্যচিত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ওই দাঙ্গার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরাসরি দায়ী।
বিবিসির তথ্যচিত্রে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতারও সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। গুজরাট দাঙ্গার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বিজেপি নেতা স্বীকার করেছেন, তাঁরা কীভাবে মানুষ হত্যা করেছেন এবং অন্যদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে জাতীয় স্তরের অনেক নেতাকে এসব অভিযোগ খারিজ করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে তথ্যচিত্রে।
কেন নিষিদ্ধ করলেন মোদি
ব্রিটেনে তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করার পরপরই ভারতে সেটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ইউটিউব ও টুইটার থেকে ওই তথ্যচিত্রসংক্রান্ত যাবতীয় ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী হচ্ছিল। সেখানে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু কেন এমন কঠোর অবস্থানে গেল মোদি সরকার? দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এর পেছনে নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আমরা মনে করি, এই প্রোপাগান্ডা ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্যই হলো একটি বিশেষ বিকৃত ন্যারেটিভকে তুলে ধরা। এখানে পক্ষপাত, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং অব্যাহত ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণার ছাপ একেবারে স্পষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বিবিসির এ তথ্যচিত্রকে ভারতে বিভাজন তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গত ২৮ জানুয়ারি তিনি দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের কারিয়াপ্পা ময়দানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি সংবাদমাধ্যমের তৈরি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে বিভাজন এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব করে দেশের জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যাবে না।’
গত ১৯ জানুয়ারি তথ্যচিত্রকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন’ বলে নিন্দা জানানো হয়েছে ভারত সকারের পক্ষ থেকে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘এটি প্রচারণাধর্মী। সম্মানহানির উদ্দেশ্যেই এসব কাহিনি তৈরি করা হয়েছে।’
ভারতে তিন শ জনের বেশি সাবেক বিচারপতি, আমলা এবং সুপরিচিত নাগরিকও একটি খোলা চিঠি লিখে এই তথ্যচিত্র বানানোর জন্য বিবিসির তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভারতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্য তাদের দায়ী করেছেন।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, ‘তথ্যচিত্রটি তৈরির আগে বহু মানুষের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। এতে ওই সময়ের বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত যেমন রয়েছে, তেমনই বিজেপির সদস্যদের প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে বিবিসি আরও বলেছে, ‘সর্বোচ্চ সম্পাদকীয় মান অনুসরণ করে নিরলস গবেষণার ফসল এই তথ্যচিত্র, যেখানে বিজেপিসহ নানা পক্ষের বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে।’
নিষিদ্ধের পর কী হচ্ছে ভারতে
তথ্যচিত্রটি বন্ধের নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি জনপরিসরেও।
বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা এবং সরকারের সমালোচক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই তথ্যচিত্রটির লিংক শেয়ার করেছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (জেএনইউ) রাত ৯টায় তথ্যচিত্রটি দেখার আয়োজন করেছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্র দেখানোর অনুমতি দেবে না।
শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যানটিনে গিয়ে মোবাইল ফোনে ওই তথ্যচিত্র দেখতে শুরু করে। তখন কর্তৃপক্ষ সেখানে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে।
এসএফআইয়ের সভাপতি ঐশী ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা কিউআর কোড ব্যবহার করে তথ্যচিত্র দেখব।’ এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখাও জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে সমস্ত কলেজে এই তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে কবে দেখানো হবে, সেই নির্দিষ্ট দিন তারা জানায়নি।
শুধু জেএনইউ নয়, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা এই তথ্যচিত্র দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের এ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এ ছাড়া কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ তথ্যচিত্র দেখেছে। এ সময় তাঁদের ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তথ্যচিত্র দেখা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর সময় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে অন্তত ২৪ শিক্ষার্থীকে। ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
এদিকে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা নির্দেশিকা না মানলে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানছেন না এসব হুঁশিয়ারি।
সামাজিক মাধ্যমে তথ্যচিত্রের ভিডিও লিংক বন্ধ করার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদও চলছে ভারতে। হায়দরাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি টুইটারে লিখেছেন, সরকার বিবিসির তথ্যচিত্র ব্লক করতে পারে, কিন্তু জাতির জনকের হত্যাকারী নাথুরাম গার্ডসকে নিয়ে চলচ্চিত্র আটকাতে পারে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মহুয়া মৈত্র টুইটারে লিংক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, সেন্সরশিপ মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে নির্বাচিত হইনি। এই দিলাম লিংক। যতক্ষণ আছে, তার মধ্যে দেখে নিন।’
এদিকে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। তাঁদের আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধি অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তথ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, সাংবাদিক এন রাম ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে। অথচ, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশটি জনসমক্ষে জারি করেনি।
আইনজীবী শর্মার আবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বৈরতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই নির্দেশ মৌলিক অধিকার হরণ করছে।
কী লাভ হলো মোদির
গত কয়েক দিনের এসব ঘটন ও অঘটনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কী লাভ হলো নরেদ্র মোদির। তিনি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও লিংক বন্ধ করে খুব বেশি লাভবান হতে পারলেন কি? বরং বুমেরাংই হয়েছে। বিভিন্ন অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম (ভিপিএন) ব্যবহার করে মানুষ ঠিকই দেখছে এই তথ্যচিত্র। বরং নিষিদ্ধ করার ফলে বিপুল মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রটি দেখার ব্যাপারে। মোদি সরকার যদি এতটা প্রতিক্রিয়া না দেখাত, তাহলে হয়তো অনেকেই জানত না বিবিসির এই তথ্যচিত্রের ব্যাপারে।
শিবসেনার এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইটারে লিখেছেন, ‘আজকের এই ভিপিএনের যুগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আইনের যে বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে বিবিসি ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাতে কি আদৌ কাজ হবে? বরং আপনি যত বাধা সৃষ্টি করতে চাইবেন, যত প্রতিবাদসূচক চিঠি লিখবেন, ততই মানুষ সেটি দেখার জন্য উৎসুক হয়ে উঠবেন।’
সুতরাং বিবিসির তথ্যচিত্র ঘিরে ভারত সরকারের পদক্ষেপ বরং এই বার্তাই দিল যে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে কোনো কিছু নিষিদ্ধ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। কোনা না কোনো মাধ্যমে সেটি মানুষের কাছে পৌঁছায়ই। ফলে ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি’ নীতি থেকে ক্ষমতাধরদের বের হয়ে আসাই বরং সমীচীন।
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি, দ্য ডিপ্লোম্যাট, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি, দ্য ওয়াল ও নিউজ ১৮

একটি তথ্যচিত্র ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল নয়। ক্ষমতাসীন কারও বিরুদ্ধে কিছু প্রকাশিত হবে গণমাধ্যমে, আর তা নিয়ে হইচই হবে না, তা হয় না। বিবিসি বলছে, তাদের তথ্যচিত্রটি যুক্তরাজ্য সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। তথ্যচিত্রটির নাম ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’।
তথ্যচিত্রে ভারতের গুজরাটের দাঙ্গাকে প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। তিন দিনের সেই দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এ দাঙ্গার মূল ইন্ধনদাতা ছিলেন নরেদ্র মোদি। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। বিবিসির দাবি, ওই দাঙ্গাই পরবর্তী সময়ে মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম করেছে।
বিবিসির দাবি কতটা সঠিক, তা নিশ্চয় তর্কসাপেক্ষ। শুধুই গুজরাট দাঙ্গায় ‘অবদানের’ পুরস্কারস্বরূপ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, এমনটা নিশ্চয় জোর দিয়ে বলা যায় না। এর পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে নিশ্চয়। গুজরাট দাঙ্গাকে অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে।
তবে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র যে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা নিয়ে কোনো তর্ক নেই। ভারত সরকার তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে প্রায় সব ধরনের পদক্ষেপই নিয়েছে। যদিও বিবিসি তথ্যচিত্রটি ভারতে প্রদর্শন করেনি। কিন্তু তা হলে কী হবে? ভারতে ব্যাপকভাবেই ছড়িয়েছে সেটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই উত্তুঙ্গ সময়ে এসব ঠেকানো বেশ কঠিনই। তারপরও মোদি সরকার ইউটিউব ও টুইটারকে তথ্যচিত্রটি দেখানো বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
এসব নির্দেশে কি কাজ হবে? মানুষের পকেটে পকেটে ঘুরেছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। সেসব ফোনে কেউ যদি ভিন্ন মাধ্যমে (ভিপিএন ও অন্যান্য) তথ্যচিত্রটি দেখেন, সরকার ঠেকাবে কী করে?
কী আছে তথ্যচিত্রে
যুক্তরাজ্যের ‘বিবিসি ২’ নামের চ্যানেলে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে ব্রিটেনে সম্প্রচারিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের ওপর আলো ফেলা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। তবে মূল ফোকাস হচ্ছে, গুজরাট দাঙ্গার পিঠে সওয়ার হয়ে মোদির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা।
তথ্যচিত্রটির ব্যাপ্তি এক ঘণ্টা। দীর্ঘ এ তথ্যচিত্রের একটি অংশে বলা হয়েছে, মোদির দল বিজেপি, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীরা ও ভারতের বিচারব্যবস্থা—সবাই মিলেমিশে মোদিকে সাহায্য করেছে।
তবে বিস্ময়কর শোনালেও সত্য, ওই সময়ে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোদিবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের জেলে পোরা হয়েছিল। কীভাবে তাঁদের জেলে ভরা হয়েছিল, সেটাই দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এমন এক ব্যক্তির নাম সঞ্জীব ভাট। তাঁকে একটি পুরোনো মামলায় আজীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এই সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন নরেন্দ্র মোদি—এমনটাই দাবি করা হয়েছে তথ্যচিত্রে।
গুজরাটের ওই দাঙ্গায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এ ছাড়া ওই দাঙ্গার সময় কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছেন, এমন বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়েছে।
ভারতের বিচারব্যবস্থার দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে বিবিসির তথ্যচিত্রে। কীভাবে নরেদ্র মোদিকে যাবতীয় অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে, সেসব নিয়েও আলোচনা রয়েছে তথ্যচিত্রটিতে।
টানা তিন দিন ধরে চলেছিল গুজরাটের দাঙ্গা। ওই পুরোটা সময় নীরব ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। কেন তিনি সময়মতো প্রশাসনকে কাজে লাগাননি দাঙ্গা থামাতে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তথ্যচিত্রে আরও যে বিষয়টি স্থান পেয়েছে, সেটি হচ্ছে মোদির মুসলিমবিদ্বেষ। যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন (অবশ্যই নাম ও ছবি প্রকাশ না করার শর্তে)। সেই সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে দ্য মোদি কোশ্চেন তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, গুজরাট দাঙ্গার সময় মুসলিমদের ওপর পরিকল্পনামাফিক হামলা করা হয়েছিল। আর এ কাজ করেছিল উগ্রপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’।
হিন্দু পরিষদ একা ওই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিতে পারত না, গুজরাট রাজ্য সরকার তাদের সাহায্য করেছে বলেও বিবিসির তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে। তথ্যচিত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ওই দাঙ্গার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরাসরি দায়ী।
বিবিসির তথ্যচিত্রে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতারও সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। গুজরাট দাঙ্গার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বিজেপি নেতা স্বীকার করেছেন, তাঁরা কীভাবে মানুষ হত্যা করেছেন এবং অন্যদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে জাতীয় স্তরের অনেক নেতাকে এসব অভিযোগ খারিজ করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে তথ্যচিত্রে।
কেন নিষিদ্ধ করলেন মোদি
ব্রিটেনে তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করার পরপরই ভারতে সেটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ইউটিউব ও টুইটার থেকে ওই তথ্যচিত্রসংক্রান্ত যাবতীয় ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী হচ্ছিল। সেখানে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু কেন এমন কঠোর অবস্থানে গেল মোদি সরকার? দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এর পেছনে নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আমরা মনে করি, এই প্রোপাগান্ডা ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্যই হলো একটি বিশেষ বিকৃত ন্যারেটিভকে তুলে ধরা। এখানে পক্ষপাত, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং অব্যাহত ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণার ছাপ একেবারে স্পষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বিবিসির এ তথ্যচিত্রকে ভারতে বিভাজন তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গত ২৮ জানুয়ারি তিনি দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের কারিয়াপ্পা ময়দানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি সংবাদমাধ্যমের তৈরি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে বিভাজন এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব করে দেশের জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যাবে না।’
গত ১৯ জানুয়ারি তথ্যচিত্রকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন’ বলে নিন্দা জানানো হয়েছে ভারত সকারের পক্ষ থেকে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘এটি প্রচারণাধর্মী। সম্মানহানির উদ্দেশ্যেই এসব কাহিনি তৈরি করা হয়েছে।’
ভারতে তিন শ জনের বেশি সাবেক বিচারপতি, আমলা এবং সুপরিচিত নাগরিকও একটি খোলা চিঠি লিখে এই তথ্যচিত্র বানানোর জন্য বিবিসির তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভারতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্য তাদের দায়ী করেছেন।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, ‘তথ্যচিত্রটি তৈরির আগে বহু মানুষের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। এতে ওই সময়ের বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত যেমন রয়েছে, তেমনই বিজেপির সদস্যদের প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে বিবিসি আরও বলেছে, ‘সর্বোচ্চ সম্পাদকীয় মান অনুসরণ করে নিরলস গবেষণার ফসল এই তথ্যচিত্র, যেখানে বিজেপিসহ নানা পক্ষের বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে।’
নিষিদ্ধের পর কী হচ্ছে ভারতে
তথ্যচিত্রটি বন্ধের নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি জনপরিসরেও।
বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা এবং সরকারের সমালোচক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই তথ্যচিত্রটির লিংক শেয়ার করেছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (জেএনইউ) রাত ৯টায় তথ্যচিত্রটি দেখার আয়োজন করেছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্র দেখানোর অনুমতি দেবে না।
শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যানটিনে গিয়ে মোবাইল ফোনে ওই তথ্যচিত্র দেখতে শুরু করে। তখন কর্তৃপক্ষ সেখানে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে।
এসএফআইয়ের সভাপতি ঐশী ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা কিউআর কোড ব্যবহার করে তথ্যচিত্র দেখব।’ এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখাও জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে সমস্ত কলেজে এই তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে কবে দেখানো হবে, সেই নির্দিষ্ট দিন তারা জানায়নি।
শুধু জেএনইউ নয়, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা এই তথ্যচিত্র দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের এ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এ ছাড়া কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ তথ্যচিত্র দেখেছে। এ সময় তাঁদের ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তথ্যচিত্র দেখা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর সময় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে অন্তত ২৪ শিক্ষার্থীকে। ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
এদিকে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা নির্দেশিকা না মানলে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানছেন না এসব হুঁশিয়ারি।
সামাজিক মাধ্যমে তথ্যচিত্রের ভিডিও লিংক বন্ধ করার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদও চলছে ভারতে। হায়দরাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি টুইটারে লিখেছেন, সরকার বিবিসির তথ্যচিত্র ব্লক করতে পারে, কিন্তু জাতির জনকের হত্যাকারী নাথুরাম গার্ডসকে নিয়ে চলচ্চিত্র আটকাতে পারে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মহুয়া মৈত্র টুইটারে লিংক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, সেন্সরশিপ মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে নির্বাচিত হইনি। এই দিলাম লিংক। যতক্ষণ আছে, তার মধ্যে দেখে নিন।’
এদিকে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। তাঁদের আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধি অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তথ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, সাংবাদিক এন রাম ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে। অথচ, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশটি জনসমক্ষে জারি করেনি।
আইনজীবী শর্মার আবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বৈরতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই নির্দেশ মৌলিক অধিকার হরণ করছে।
কী লাভ হলো মোদির
গত কয়েক দিনের এসব ঘটন ও অঘটনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কী লাভ হলো নরেদ্র মোদির। তিনি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও লিংক বন্ধ করে খুব বেশি লাভবান হতে পারলেন কি? বরং বুমেরাংই হয়েছে। বিভিন্ন অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম (ভিপিএন) ব্যবহার করে মানুষ ঠিকই দেখছে এই তথ্যচিত্র। বরং নিষিদ্ধ করার ফলে বিপুল মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রটি দেখার ব্যাপারে। মোদি সরকার যদি এতটা প্রতিক্রিয়া না দেখাত, তাহলে হয়তো অনেকেই জানত না বিবিসির এই তথ্যচিত্রের ব্যাপারে।
শিবসেনার এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইটারে লিখেছেন, ‘আজকের এই ভিপিএনের যুগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আইনের যে বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে বিবিসি ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাতে কি আদৌ কাজ হবে? বরং আপনি যত বাধা সৃষ্টি করতে চাইবেন, যত প্রতিবাদসূচক চিঠি লিখবেন, ততই মানুষ সেটি দেখার জন্য উৎসুক হয়ে উঠবেন।’
সুতরাং বিবিসির তথ্যচিত্র ঘিরে ভারত সরকারের পদক্ষেপ বরং এই বার্তাই দিল যে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে কোনো কিছু নিষিদ্ধ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। কোনা না কোনো মাধ্যমে সেটি মানুষের কাছে পৌঁছায়ই। ফলে ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি’ নীতি থেকে ক্ষমতাধরদের বের হয়ে আসাই বরং সমীচীন।
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি, দ্য ডিপ্লোম্যাট, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি, দ্য ওয়াল ও নিউজ ১৮

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

একটি তথ্যচিত্রকে ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রটিতে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

একটি তথ্যচিত্রকে ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রটিতে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

একটি তথ্যচিত্রকে ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রটিতে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

একটি তথ্যচিত্রকে ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রটিতে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে