আজকের পত্রিকা ডেস্ক

নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। আপাতদৃষ্টিতে এটি নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে হলেও এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত উদ্বেগের বিষয়। এটি নয়াদিল্লির জন্য সতর্কসংকেত।
জেন–জিদের নেতৃত্বে সংঘটিত এই আন্দোলনকে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ হিসেবে তুলে ধরা হলেও প্রকৃত ঘটনা তা নয়। এটি ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ। দশকের পর দশক ধরে নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গন কয়েকজন মাত্র নেতার দখলে থেকেছে। তাঁরা ক্ষমতার খেলায় বারবার ফিরে এসেছেন, কিন্তু বেকারত্ব আর অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো মূল সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এই বিক্ষোভের সূচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে। এরপর তা আরও উসকে দেয় এক দুর্ঘটনা। এক মন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় ১১ বছরের এক স্কুলছাত্রী মারা যায়। তবে এই আন্দোলনের শিকড় নিহিত দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সর্বব্যাপী দুর্নীতি আর তরুণদের গভীর হতাশার মধ্যে।
নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি, মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এ বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে এবং আলোচনার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়। এতে প্রশ্ন ওঠে, প্রেসিডেন্টের ভূমিকা আসলে কী?
এ ধরনের অরাজকতা ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়ও এমন অস্থিরতা দেখা গেছে। ভারতের জন্য বিষয়টি স্পষ্ট—পুরোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব—যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির সম্পর্ক ছিল, তারা আর আগের মতো প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারছে না। তরুণ প্রজন্ম চাচ্ছে, নতুন নেতৃত্ব, যারা অতীতের বোঝা বহন করবে না। তারা বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলছে, কারণ সংসদ সদস্যদের তারা অযোগ্য ও অবিশ্বস্ত বলে মনে করছে। ভারতকে স্বীকার করতে হবে—নেপালে এক নতুন রাজনৈতিক প্রজন্মের উত্থান ঘটেছে এবং দিল্লির প্রচলিত প্রভাবের হাতিয়ারগুলো হয়তো আর তেমন কার্যকর থাকছে না।
কিন্তু আমরা কি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকতে পারি? নেপালের অস্থিতিশীলতা ভারতের স্বার্থের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কতগুলো বড় হুমকি তৈরি করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপত্তা। নেপালের সঙ্গে ভারতের উন্মুক্ত সীমান্ত যেমন আশীর্বাদ, তেমনি অভিশাপও। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর আইনশৃঙ্খলার ভেঙে পড়া সীমান্তপথে চোরাচালান, মানব পাচার এবং ভারতবিরোধী শক্তির কার্যক্রম বাড়িয়ে দিতে পারে।
নেপালে সম্ভাব্য নিরাপত্তাশূন্যতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মতো শত্রুশক্তি ভারতে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। এ কারণেই ভারত সরকার কিছুদিনের জন্য ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে পরে সীমান্ত আবার খুলে দেওয়া হয় এবং এখন বাণিজ্য ও যাতায়াত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা কড়াকড়ি রাখা হয়েছে। সীমান্তের সংবেদনশীল অংশে পরিচয় যাচাই থেকে শুরু করে ড্রোন নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও উদ্বেগের বিষয়। নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারতের প্রভাব কমতে থাকায় সেখানে চীনের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও নানা অবকাঠামো প্রকল্পের—যেমন সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ—মাধ্যমে বেইজিং নেপালে সক্রিয়ভাবে জড়িত। একই সময়ে এটা স্পষ্ট যে নেপালের তরুণ বিদ্রোহীরা তাঁদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘ভারতের প্রভাব’ বা ‘চীনের প্রভাব’ রয়েছে—এমন ধারণা নিয়েও যথেষ্ট সতর্ক।
ভারতীয় কিছু মহল, বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, ‘সেইম টুলকিট’ তত্ত্বকে সামনে এনেছে। তাদের দাবি, যুব নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলনগুলো আপাতদৃষ্টিতে স্বতঃস্ফূর্ত মনে হলেও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া শাসন পরিবর্তনের সঙ্গে এগুলোর ‘অস্বাভাবিক মিল’ রয়েছে। তাই তাদের আশঙ্কা, এর পেছনে হয়তো কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনা কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করা—অর্থাৎ, পশ্চিমা শক্তিগুলোর কোনো সাজানো খেলা।
আমি সাধারণত এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে সন্দিহান থাকি। বাস্তব পৃথিবী অনেক সময়ই এলোমেলো ঘটনাবলির প্রতি বেশি সংবেদনশীল। তবে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা এদিকটা ভাবেন না। তবু ভারতকে অবশ্যই এ ধরনের আশঙ্কাকে মাথায় রাখতে হবে এবং ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
তবু সুশীলা কার্কিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমাদের সাজানো কোনো ‘কালার রেভল্যুশন’ তত্ত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। ৭৩ বছর বয়সী কার্কির স্বদেশি নেপালি প্রতিরোধ আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রাজতন্ত্র উৎখাতে তিনি অংশ নিয়েছেন, লড়েছেন সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
কার্কি পড়াশোনা করেছেন ভারতের বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারত নিয়ে তিনি প্রায়ই স্মৃতিচারণ করেন। ভারতের সঙ্গে তাঁর সংযোগ আমাদের আশ্বস্ত করার মতো বিষয়। বিচার বিভাগের ভেতর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন অবস্থান, সঙ্গে তাঁর স্বামীর তৎকালীন রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা (১৯৭৩ সালের বিখ্যাত বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার নায়ক তিনি)—এগুলো ব্যাখ্যা করে—কেন তাঁকে বেছে নেওয়া হলো। আরও বড় কথা, বিক্ষোভকারীরা গেমিং চ্যাট অ্যাপ ‘ডিসকোর্ড’ ব্যবহার করে তাঁকে বেছে নিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আন্দোলনটি কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ও বিশৃঙ্খল—যা কোনো সুচারুভাবে সাজানো অভ্যুত্থানের ধারণার সঙ্গে মেলে না।
তবে স্বল্প মেয়াদে নেপালে ভারতের ‘বিশেষ ভূমিকা’ প্রভাবিত হতে পারে। এই অস্থিরতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প, বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ খাত থমকে যেতে পারে বা ব্যাহত হতে পারে। অরুণ-৩ ও ফুকোত কর্ণালি প্রকল্প ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং আঞ্চলিক শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার ভারতের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্পে দেরি হলে তা হবে বড় ধরনের ধাক্কা। আন্দোলনের সময় প্রায় ৩৩ হাজার বন্দী জেল থেকে পালিয়ে গেছেন। যাঁদের মধ্যে খুন ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। অনেকেই এখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কারও কারও হাতে লুট করা অস্ত্র রয়েছে। এই অবস্থায় সমাজের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থায় ভারত কী করতে পারে? নয়াদিল্লির হাতে সীমিত কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পথ খোলা রয়েছে। একদিকে সার্বভৌম প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দূরত্ব বজায় রেখে সম্মান প্রদর্শনের জন্য হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ জরুরি। অন্যদিকে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় সূক্ষ্ম অথচ সক্রিয় কৌশলও নিতে হবে।
অবশ্যই প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলা জরুরি। নেপালের রাজনীতিতে ভারতের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের প্রবণতা প্রতিহত করতে হবে। অতীতে ২০১৫ সালের অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত অবরোধের মতো কূটনৈতিক চাপ উল্টো ফল দিয়েছে। এতে নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব বেড়েছে এবং দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকেছে। এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে নেপালের রাজনীতির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা না করে দূরত্ব বজায় রাখা।
একই সময়ে নেপালের উন্নয়ন এবং ভারতের ‘সফট পাওয়ার’–এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পরিবর্তে আমাদের আরও বেশি করে উন্নয়ন সহায়তা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা, সাধারণ নেপালি জনগণের উপকারে আসবে—এমন নতুন উদ্যোগ নেওয়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো—এসব পদক্ষেপ নেপালে ভারতের প্রতি শুভেচ্ছা বাড়াবে এবং সম্পর্ক মজবুত করবে।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোও দরকার। নেপালের উঠতি রাজনৈতিক নেতা ও তরুণ কর্মীদের সঙ্গে নয়াদিল্লিকে নতুন যোগাযোগের পথ খুলতে হবে। তাঁদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষোভ বোঝা ছাড়া ভবিষ্যৎমুখী পররাষ্ট্রনীতি তৈরি সম্ভব নয়। এই নতুন প্রজন্মকে উপেক্ষা করা বড় ভুল হবে। তবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করাও বাদ দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় সহিংসতার প্রভাব ভারতে ছড়িয়ে পড়া বা অবাঞ্ছিত উপাদান ঢুকে পড়া ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।
নেপাল এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভারতের জন্য এটা ‘ওরা ওদের ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা নয়। নয়াদিল্লিকে বুঝতে হবে, এই গণ-অসন্তোষ কত গভীর ক্ষোভ থেকে তৈরি হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ও সূক্ষ্ম কৌশল নিতে হবে—যেখানে পারস্পরিক সম্মান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা গুরুত্ব পাবে আর নেপালের রাজনৈতিক সমাধান নেপালিদের হাতেই থাকবে।
নতুন সরকারকে এখন নির্বাচন প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যুবকদের বেকারত্ব কমানো ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এরপর কী আসবে, তা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও নির্ধারণ করার দায়িত্ব ভারতের নয়।
নেপাল আমাদের কাছে কেবল প্রতিবেশী নয়, বরং ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ—যার সঙ্গে সংস্কৃতি, ধর্ম, ভৌগোলিক অবস্থান ও ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। তাই একদিকে হস্তক্ষেপ না করা, অন্যদিকে উদাসীনও না থাকা—এই ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে। নেপালে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে নতুন সরকারকে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়াই হবে ভারতের মূল ভূমিকা। স্বীকার করতে হবে, সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের কূটনীতিকদের জন্য সহজ কাজ নয়। কিন্তু ঠিক এই কাজের জন্যই তো আমরা তাঁদের বেতন দিই—নাকি!
এনডিটিভি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। আপাতদৃষ্টিতে এটি নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে হলেও এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত উদ্বেগের বিষয়। এটি নয়াদিল্লির জন্য সতর্কসংকেত।
জেন–জিদের নেতৃত্বে সংঘটিত এই আন্দোলনকে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ হিসেবে তুলে ধরা হলেও প্রকৃত ঘটনা তা নয়। এটি ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ। দশকের পর দশক ধরে নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গন কয়েকজন মাত্র নেতার দখলে থেকেছে। তাঁরা ক্ষমতার খেলায় বারবার ফিরে এসেছেন, কিন্তু বেকারত্ব আর অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো মূল সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এই বিক্ষোভের সূচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে। এরপর তা আরও উসকে দেয় এক দুর্ঘটনা। এক মন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় ১১ বছরের এক স্কুলছাত্রী মারা যায়। তবে এই আন্দোলনের শিকড় নিহিত দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সর্বব্যাপী দুর্নীতি আর তরুণদের গভীর হতাশার মধ্যে।
নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি, মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এ বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে এবং আলোচনার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়। এতে প্রশ্ন ওঠে, প্রেসিডেন্টের ভূমিকা আসলে কী?
এ ধরনের অরাজকতা ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়ও এমন অস্থিরতা দেখা গেছে। ভারতের জন্য বিষয়টি স্পষ্ট—পুরোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব—যাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির সম্পর্ক ছিল, তারা আর আগের মতো প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারছে না। তরুণ প্রজন্ম চাচ্ছে, নতুন নেতৃত্ব, যারা অতীতের বোঝা বহন করবে না। তারা বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলছে, কারণ সংসদ সদস্যদের তারা অযোগ্য ও অবিশ্বস্ত বলে মনে করছে। ভারতকে স্বীকার করতে হবে—নেপালে এক নতুন রাজনৈতিক প্রজন্মের উত্থান ঘটেছে এবং দিল্লির প্রচলিত প্রভাবের হাতিয়ারগুলো হয়তো আর তেমন কার্যকর থাকছে না।
কিন্তু আমরা কি এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকতে পারি? নেপালের অস্থিতিশীলতা ভারতের স্বার্থের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কতগুলো বড় হুমকি তৈরি করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপত্তা। নেপালের সঙ্গে ভারতের উন্মুক্ত সীমান্ত যেমন আশীর্বাদ, তেমনি অভিশাপও। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর আইনশৃঙ্খলার ভেঙে পড়া সীমান্তপথে চোরাচালান, মানব পাচার এবং ভারতবিরোধী শক্তির কার্যক্রম বাড়িয়ে দিতে পারে।
নেপালে সম্ভাব্য নিরাপত্তাশূন্যতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মতো শত্রুশক্তি ভারতে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। এ কারণেই ভারত সরকার কিছুদিনের জন্য ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে পরে সীমান্ত আবার খুলে দেওয়া হয় এবং এখন বাণিজ্য ও যাতায়াত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তা কড়াকড়ি রাখা হয়েছে। সীমান্তের সংবেদনশীল অংশে পরিচয় যাচাই থেকে শুরু করে ড্রোন নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও উদ্বেগের বিষয়। নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারতের প্রভাব কমতে থাকায় সেখানে চীনের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও নানা অবকাঠামো প্রকল্পের—যেমন সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ—মাধ্যমে বেইজিং নেপালে সক্রিয়ভাবে জড়িত। একই সময়ে এটা স্পষ্ট যে নেপালের তরুণ বিদ্রোহীরা তাঁদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘ভারতের প্রভাব’ বা ‘চীনের প্রভাব’ রয়েছে—এমন ধারণা নিয়েও যথেষ্ট সতর্ক।
ভারতীয় কিছু মহল, বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, ‘সেইম টুলকিট’ তত্ত্বকে সামনে এনেছে। তাদের দাবি, যুব নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলনগুলো আপাতদৃষ্টিতে স্বতঃস্ফূর্ত মনে হলেও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া শাসন পরিবর্তনের সঙ্গে এগুলোর ‘অস্বাভাবিক মিল’ রয়েছে। তাই তাদের আশঙ্কা, এর পেছনে হয়তো কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনা কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করা—অর্থাৎ, পশ্চিমা শক্তিগুলোর কোনো সাজানো খেলা।
আমি সাধারণত এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে সন্দিহান থাকি। বাস্তব পৃথিবী অনেক সময়ই এলোমেলো ঘটনাবলির প্রতি বেশি সংবেদনশীল। তবে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা এদিকটা ভাবেন না। তবু ভারতকে অবশ্যই এ ধরনের আশঙ্কাকে মাথায় রাখতে হবে এবং ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
তবু সুশীলা কার্কিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমাদের সাজানো কোনো ‘কালার রেভল্যুশন’ তত্ত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। ৭৩ বছর বয়সী কার্কির স্বদেশি নেপালি প্রতিরোধ আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রাজতন্ত্র উৎখাতে তিনি অংশ নিয়েছেন, লড়েছেন সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
কার্কি পড়াশোনা করেছেন ভারতের বারানসি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারত নিয়ে তিনি প্রায়ই স্মৃতিচারণ করেন। ভারতের সঙ্গে তাঁর সংযোগ আমাদের আশ্বস্ত করার মতো বিষয়। বিচার বিভাগের ভেতর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন অবস্থান, সঙ্গে তাঁর স্বামীর তৎকালীন রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা (১৯৭৩ সালের বিখ্যাত বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার নায়ক তিনি)—এগুলো ব্যাখ্যা করে—কেন তাঁকে বেছে নেওয়া হলো। আরও বড় কথা, বিক্ষোভকারীরা গেমিং চ্যাট অ্যাপ ‘ডিসকোর্ড’ ব্যবহার করে তাঁকে বেছে নিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আন্দোলনটি কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ও বিশৃঙ্খল—যা কোনো সুচারুভাবে সাজানো অভ্যুত্থানের ধারণার সঙ্গে মেলে না।
তবে স্বল্প মেয়াদে নেপালে ভারতের ‘বিশেষ ভূমিকা’ প্রভাবিত হতে পারে। এই অস্থিরতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প, বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ খাত থমকে যেতে পারে বা ব্যাহত হতে পারে। অরুণ-৩ ও ফুকোত কর্ণালি প্রকল্প ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং আঞ্চলিক শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার ভারতের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্পে দেরি হলে তা হবে বড় ধরনের ধাক্কা। আন্দোলনের সময় প্রায় ৩৩ হাজার বন্দী জেল থেকে পালিয়ে গেছেন। যাঁদের মধ্যে খুন ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। অনেকেই এখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কারও কারও হাতে লুট করা অস্ত্র রয়েছে। এই অবস্থায় সমাজের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে।
এই অবস্থায় ভারত কী করতে পারে? নয়াদিল্লির হাতে সীমিত কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পথ খোলা রয়েছে। একদিকে সার্বভৌম প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দূরত্ব বজায় রেখে সম্মান প্রদর্শনের জন্য হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ জরুরি। অন্যদিকে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় সূক্ষ্ম অথচ সক্রিয় কৌশলও নিতে হবে।
অবশ্যই প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলা জরুরি। নেপালের রাজনীতিতে ভারতের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের প্রবণতা প্রতিহত করতে হবে। অতীতে ২০১৫ সালের অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত অবরোধের মতো কূটনৈতিক চাপ উল্টো ফল দিয়েছে। এতে নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব বেড়েছে এবং দেশটি চীনের দিকে ঝুঁকেছে। এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে নেপালের রাজনীতির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা না করে দূরত্ব বজায় রাখা।
একই সময়ে নেপালের উন্নয়ন এবং ভারতের ‘সফট পাওয়ার’–এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পরিবর্তে আমাদের আরও বেশি করে উন্নয়ন সহায়তা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা, সাধারণ নেপালি জনগণের উপকারে আসবে—এমন নতুন উদ্যোগ নেওয়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো—এসব পদক্ষেপ নেপালে ভারতের প্রতি শুভেচ্ছা বাড়াবে এবং সম্পর্ক মজবুত করবে।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোও দরকার। নেপালের উঠতি রাজনৈতিক নেতা ও তরুণ কর্মীদের সঙ্গে নয়াদিল্লিকে নতুন যোগাযোগের পথ খুলতে হবে। তাঁদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষোভ বোঝা ছাড়া ভবিষ্যৎমুখী পররাষ্ট্রনীতি তৈরি সম্ভব নয়। এই নতুন প্রজন্মকে উপেক্ষা করা বড় ভুল হবে। তবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করাও বাদ দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় সহিংসতার প্রভাব ভারতে ছড়িয়ে পড়া বা অবাঞ্ছিত উপাদান ঢুকে পড়া ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।
নেপাল এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভারতের জন্য এটা ‘ওরা ওদের ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা নয়। নয়াদিল্লিকে বুঝতে হবে, এই গণ-অসন্তোষ কত গভীর ক্ষোভ থেকে তৈরি হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ও সূক্ষ্ম কৌশল নিতে হবে—যেখানে পারস্পরিক সম্মান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা গুরুত্ব পাবে আর নেপালের রাজনৈতিক সমাধান নেপালিদের হাতেই থাকবে।
নতুন সরকারকে এখন নির্বাচন প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, যুবকদের বেকারত্ব কমানো ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এরপর কী আসবে, তা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও নির্ধারণ করার দায়িত্ব ভারতের নয়।
নেপাল আমাদের কাছে কেবল প্রতিবেশী নয়, বরং ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ—যার সঙ্গে সংস্কৃতি, ধর্ম, ভৌগোলিক অবস্থান ও ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। তাই একদিকে হস্তক্ষেপ না করা, অন্যদিকে উদাসীনও না থাকা—এই ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে। নেপালে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে নতুন সরকারকে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়াই হবে ভারতের মূল ভূমিকা। স্বীকার করতে হবে, সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের কূটনীতিকদের জন্য সহজ কাজ নয়। কিন্তু ঠিক এই কাজের জন্যই তো আমরা তাঁদের বেতন দিই—নাকি!
এনডিটিভি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি ও মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এই বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি ও মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এই বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি ও মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এই বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি ও মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এই বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে