Ajker Patrika

ইয়াহিয়া সিনওয়ার: গাজায় ইসরায়েলের ব্যর্থতার মূল কারিগর

ইয়াহিয়া সিনওয়ার: গাজায় ইসরায়েলের ব্যর্থতার মূল কারিগর

ইয়াহিয়া সিনওয়ার, গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা। যাকে গত বছরে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার অন্যতম স্থপতি বলা হয়। সেই হামলার পর হামাস ধরেই নিয়েছিল যে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ইসরায়েল ছাড়বে না। কিন্তু যুদ্ধের সাত মাস শেষে ইসরায়েল গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেও সিনওয়ারসহ হামাসের সব শীর্ষ নেতাই বহাল তবিয়তে আছেন। এটি গাজা অভিযানে ইসরায়েলের ব্যর্থতাই তুলে ধরছে। আর সিনওয়ার সেই ব্যর্থতার জলজ্যান্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরও বলছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে কৌশল অনুসরণ করছে, তাতে চূড়ান্ত বিজয় পাওয়া সম্ভব নয়। হামাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সন্দেহের কথা জানিয়ে আসছে।

ইসরায়েলি নীতিনির্ধারকেরা সিনওয়ারকে হত্যা করাসহ হামাসকে নির্মূল করার অঙ্গীকার করলেও সেই আশা পূরণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছে, ‘ইসরায়েলিরা তাঁকে হত্যার প্রতিজ্ঞা করলেও তাঁর সঙ্গেই (যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি–বন্দী বিনিময় নিয়ে) দর–কষাকষি করতে বাধ্য হয়েছে।’

বিগত সাত মাসের যুদ্ধ–বাস্তবতায় সিনওয়ার কেবল ইস্পাতদৃঢ় মনোবলের নেতাই নন, একজন কৌশলী আলোচক হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে আলোচনার টেবিল সামলেছেন এবং গাজায় ইসরায়েলি বিজয়কে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। সূত্রটি এ বিষয়ে বলেছে, ‘হামাস, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি সূত্রগুলো বলছে, ইসরায়েলিরা এখনো আলোচনার টেবিলে আছে’। যা মূলত সিনওয়ারেরই অবদান।

হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে জড়িত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যদিও কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এর মূল চাবিকাঠি সিনওয়ারের হাতে। এমনকি কাতারে থাকা হামাসের শীর্ষ নেতাদেরও এ বিষয়ে কিছু করার নেই। সূত্রগুলো বলছে, হামাস নেতারা এই আলোচনার ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সিনওয়ারের অনুমতি বা সম্মতি তালাশ করছেন।

হামাস নেতারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সিনওয়ারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয় এবং টেকনিক্যালি সিনওয়ার হামাসের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষও নন। কিন্তু গাজায় হামাসের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তাঁকে গোষ্ঠীটির ভেতরে এক অনন্য–অসাধারণ ভাবমূর্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ফলে তাঁকে উপেক্ষা করার জো নেই। এই বিষয়টি হামাসের শত্রু–মিত্র নির্বিশেষে স্বীকার করে। 

হামাস সদস্য, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সিনওয়ারের বন্ধু সালাহ–আল–দ্বীন আল–আওদা বলেন, ‘সিনওয়ারের সঙ্গে পরামর্শ না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তিনি সাধারণ কোনো নেতা নন। তিনি শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব এবং ঘটনার স্থপতি। তিনি কোনো সাধারণ ব্যবস্থাপক বা পরিচালক নন, তিনি একজন নেতা।’

উল্লেখ্য, আল–আওদা এবং সিনওয়ার ১৯৯০ থেকে ২০০০–এর দশক পর্যন্ত একসঙ্গে ইসরায়েলি কারাগারে ছিলেন। সে সময় তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর থেকে সিনওয়ারের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য সে অর্থে শোনা যায়নি। কিন্তু হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চেয়ে বয়সে ছোট হয়েও সিনওয়ার গত বছরের নভেম্বরে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরব ও পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেক সময় সিনওয়ারের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকার কারণে যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রক্রিয়া অনেক ধীর গতির হয়ে গিয়েছিল। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার যোগাযোগ অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সিনওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো তাঁর কাছে বার্তা পৌঁছানোর জন্য একদিন এবং প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য আরও একদিন লেগে যেত।

ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলার সময়ে সিনওয়ার একজন দক্ষ আলোচক ও রাজনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যিনি ইসরায়েলি সমাজের মনস্তত্ত্ব বুঝতে সক্ষম এবং সেই অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারঙ্গম। ইসরায়েলি ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিগত কয়েক মাস সিনওয়ারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। ইসরায়েলি ও মার্কিন বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, সিনওয়ারের মূল উদ্দেশ্য হলো—ইসরায়েলকে দুর্বল করে প্রতিশোধ নেওয়া। ফিলিস্তিনি জনগণের কল্যাণ বা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তাঁর কাছে গৌণ বিষয়।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৬২ সালে গাজায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়ে গাজায় স্থানান্তরিত হয়। তাঁদের মূল ভিটেমাটি এখন ইসরায়েলের দখলে। ১৯৮০–এর দশকে সিনওয়ার হামাসে যোগ দেন। পরে ধর্মত্যাগী ও ইসরায়েলের সহযোগীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েলি আদালত। প্রায় দুই দশক কারাগারে থাকার পর সিনওয়ার ২০১১ সালে মুক্তি পান। মূলত হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি সেনাদের মুক্তির বিনিময়ে সিনওয়ার মুক্তি পান। ২০১৭ সালে সিনওয়ার হামাসের গাজা প্রধান নির্বাচিত হন।

ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও সহবন্দীরা বলছেন, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী থাকার সময় সিনওয়ার হিব্রু শিখেছিলেন এবং ইসরায়েলি সংস্কৃতি ও সমাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া চেষ্টা করেছিলেন। ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সিনওয়ার এখন ইসরায়েলি সমাজে বিভাজনের বীজ বপন করতে ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়াতে সেই বোঝাপড়া ব্যবহার করছেন। তাঁদের বিশ্বাস, যুদ্ধবিরতি আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নেতানিয়াহুর প্রতি জনগণের ক্ষোভ উসকে দিতেই সিনওয়ারের নির্দেশে ইসরায়েলি জিম্মিদের ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন।

অনেক ইসরায়েলি চান, যেকোনো মূল্যে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে, এমনকি হামাসের দাবি অনুসারে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন করে হলেও। কিন্তু নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষ করতে নারাজ, মূলত জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থী অংশীদারদের চাপের কারণে তাঁর এই অবস্থান। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, নেতানিয়াহুকে যদি যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী করা হয় তবে একই অভিযোগের আঙুল উঠবে তাঁর প্রতিপক্ষ সিনওয়ারের বিরুদ্ধেও।

ইসরায়েলি ও মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, সিনওয়ার চান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন আরও প্রলম্বিত করতে। যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলের যে ভাবমূর্তি আছে তা ধসে পড়ে এবং দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। এ কারণেই হয়তো, রাফাহে ইসরায়েলের তীব্র অভিযানের মুখেও গত রোববার হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ রকেট হামলা চালিয়েছে। যে হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।

এটি যদি সত্যিই হামাসের যুদ্ধকৌশল হয়ে থাকে তবে সম্ভবত তা কাজে দিয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েল রাফাহে অভিযান শুরুর পর বাইডেন প্রশাসন দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও কঠোর ভাষায় সমালোচনা শুরু করেছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামাস গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ও দুর্দশা থেকে ফায়দা লাভের চেষ্টা করছে। তবে হামাসের দাবি, তাদের কিংবা সিনওয়ার কারওরই এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই।

হামাস নেতা আহমেদ ইউসেফ বলেন, ‘হামাসের কৌশল হলো—এখনই যুদ্ধ বন্ধ করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা।’ তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, সিনওয়ার গাজার বাইরে থাকা হামাসের নেতা–কর্মীদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। মূলত, গাজায় হামাসের কার্যক্রম এবং গাজার বাইরে থাকা হামাস নেতাদের সে বিষয়ে অবগত না থাকার বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এমন হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অনুমান, সিনওয়ার তাঁর ভাই ও হামাসের সশস্ত্র শাখার অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাজায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং এ কারণে গাজার বাইরে অবস্থান করা হামাসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে তাঁর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও জানান, যেখানে হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিলেন, সেখানে সিনওয়ার এ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। কারণ, তিনি জানতেন যে, যুদ্ধ শেষ হোক বা না হোক তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তার মতে, সিনওয়ারের এই আশঙ্কা ঠিকই আছে। কারণ, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েল সিনওয়ারের পিছু ছাড়বে না।

যদিও হামাস নেতারা একটি ঐক্যবদ্ধ চিত্রই বহির্বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিনওয়ারের ব্যক্তিগত ভূমিকাকে খাটো করে নির্বাচিত হামাস নেতৃত্বের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণের প্রতি জোর আরোপ করেন। কেউ কেউ বলেন, এই যুদ্ধে সিনওয়ার যে বড় ভূমিকা পালন করেছেন তার বেশির ভাগই গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা হিসেবে তাঁর অবস্থানের কারণে।

কাতারে অবস্থানরত হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুকের মতে, ‘সিনওয়ারের বক্তব্য চূড়ান্ত না হলেও গাজার বিষয়ে তাঁর একটি বড় ভূমিকা আছে।’

তিনি বলেন, ‘সিনওয়ারের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি ভূখণ্ডটিতে আছেন এবং ভেতর থেকে হামাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইসমাইল হানিয়ের বক্তব্যই চূড়ান্ত।’

তবে সিনওয়ারের চারিত্রিক দৃঢ়তায় একটা অস্বাভাবিক কিছু আছে বলে মনে করেন তাঁর বন্ধু আল–আওদা। তিনি বলেন, সিনওয়ারের জায়গায় হামাসের অন্য কোনো নেতা হলে হয়তো ৭ অক্টোবরের মতো ঘটনা না ঘটিয়ে গাজা শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে মনোনিবেশ করতেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো বিষয়গুলো আরও শান্তভাবে সংঘটিত হতো।’

এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার একটি টানেলের নিরাপত্তা ক্যামেরার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল যেখানে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে একজন নারী ও শিশুকে নিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ইসরায়েল দাবি করে, সেই ব্যক্তি সিনওয়ার ছিলেন। যদিও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখায়নি।

মূলত গাজায় আগ্রাসন চালানোর দীর্ঘ সাত মাস পরেও ইসরায়েল সেই টানেলের মতো অন্ধকার এক কানাগলিতে আটকে আছে। যেখানে দেশটি না হামাসকে নির্মূল করার সফলতা অর্জন করতে পারছে, আর না সিনওয়ারকে ধরতে পেরেছে। সিনওয়ার এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে এক মরীচিকার মতো। মূলত, যুদ্ধের সাত মাস শেষে সিনওয়ারই ইসরায়েলের ব্যর্থতার জলজ্যান্ত প্রতীক হিসেবে হাজির হয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন  আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।

২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।

ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।

সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।

তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।

সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত