
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়। এমনকি ইউক্রেনকে কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতেও রাজি নয়। এই অবস্থায় ইউক্রেনকে রক্ষার দায় ইউরোপের কাঁধেই পড়েছে। আর এ জন্য ইউরোপকে তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
এই বিষয়ে এস্তোনিয়ান একাডেমি অব সিকিউরিটি সায়েন্সেসের ভিজিটিং লেকচারার জানিকা মেরিলো বলেন, ইউরোপের বাস্তবসম্মত কৌশল প্রণয়নের এখনই সময়। যথাযথ বাজেটের মাধ্যমে এই কৌশলকে এগিয়ে নিতে হবে এবং নতুন ও উদ্ভাবনী সমাধানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে, আধুনিক যুদ্ধ হলো—একটি হাইব্রিড যুদ্ধ, যার কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই।’
ইউরোপজুড়ে রুশ সাইবার হামলার প্রভাব মূল্যায়ন করে জানিকা মেরিলো বলেন, ‘রুশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সাইবার হামলাগুলো ইউক্রেনের মিত্রদের ওপর নির্বিচারে আঘাত হানছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করছে। আমরা প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ করে যাচ্ছি, কিন্তু এই নতুন ধরনের যুদ্ধে আমাদের নিজস্ব সিস্টেম ও রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় যে উদ্ভাবনী সমাধানগুলো প্রয়োজন, সেগুলোর বিকাশ ও প্রসারের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কর্মপরিকল্পনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। আমরা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হতে পারি না, হওয়া উচিতও নয়।’
জানিকা মেরিলো বলেন, ‘এটি আশাব্যঞ্জক যে, বাল্টিক দেশগুলো পোল্যান্ডের সঙ্গে মিলে ইউরোপের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রাচীর গঠন করেছে। তারা বিপদের পরিপূর্ণ মাত্রা উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং কেবল বাজেট ও প্রচলিত যুদ্ধের প্রস্তুতি বাড়ানোর দিকেই নয়, ড্রোন, নজরদারি, গোয়েন্দা কার্যক্রম ও সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে কীভাবে সমর্থন করা যায়, সে বিষয়েও ভাবতে শুরু করেছে। ইউরোপের প্রচলিত প্রতিরক্ষা শক্তিগুলোকে অবশ্যই এই উদ্যোগ অনুসরণ করতে হবে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যাটো গঠনের পর পরবর্তী ৭ দশকের বেশি সময় ইউরোপ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়ে ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নাটকীয়ভাবে ইউরোপের সামষ্টিক নিরাপত্তার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়েছে। তবে ইউরোপের যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্ল্যাটফর্ম গঠনের অভিজ্ঞতা আছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া তারা তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এই বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক ইউকে ইন আ চেঞ্জিং ইউরোপের পরিচালক আনন্দ মেনন বলেন, ‘কথা বলা বা আলোচনা করা খুবই ভালো একটি কৌশল। ইউরোপ সম্ভবত এটিই সবচেয়ে ভালো পারে, বিশেষ করে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে কথার কমতি ছিল না। কিন্তু বাস্তবতায় সবাই অনেকটাই পিছিয়ে।’
মেনন বলেন, ‘যদি সত্যিই ইউরোপ এই নির্বাচনী ফলাফলের জন্য প্রস্তুতি নিত, তাহলে তা ট্রাম্প প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হতো। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে দীর্ঘ সময় লাগে, তা এক দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। শুধু বেশি খরচ করাই যথেষ্ট নয়। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় কিছুটা বাড়িয়েছে। তবে প্রয়োজন এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা, যাতে পুনরাবৃত্তি এবং বিভক্তি এড়ানো যায়। কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বিশেষ করে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে পড়ে সরকারগুলো নিজেদের স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়, তা যতই প্রতিযোগিতাহীন হোক না কেন।’
এই বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেন, ‘ইউরোপীয়রা বহুবার ঘোষণা দিয়েছে যে, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার তারা আরও উদ্যোগী হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ট্রাম্প যদি সত্যিই সিদ্ধান্ত নেন যে—ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর মার্কিন সামরিক নির্ভরতার যুগ শেষ হওয়া উচিত, তাহলে এখন এই সদিচ্ছাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
ইউরোপীয়রা যদি কথার সঙ্গে কাজটাও ঠিকমতো করত তবে হয়তো তাদের এখন এসে এই দিন দেখতে হতো না। ইউরোপের দেশগুলো কেন এত দিনেও নিজেদের প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করতে পারেনি সেটার কারণ খুঁজতে গিয়ে ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট মঁতেনের সিনিয়র ফেলো এবং আন্তর্জাতিক অধ্যয়নবিষয়ক উপপরিচালক জর্জিনা রাইট বলেন, ‘ইউরোপীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক সাহসের অভাব রয়েছে।’
জর্জিনা আরও বলেন, ‘তারা এখন পর্যন্ত সাহসী ও সম্মিলিত কৌশলগত চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতেও সক্ষম হয়নি। এটি বদলাতে হলে নেতাদের প্রতিরক্ষা ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং নাগরিকদের কাছে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সুফল ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে খোলাখুলি বলতে হবে। গণতান্ত্রিক সমর্থন নিশ্চিত করতে হলে, দেশে যারা প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর বিরোধিতা করেন, তাদের সঙ্গে বিতর্কে নামতে নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পোল্যান্ড এবং বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো ইতিমধ্যে এটি করেছে। এমনকি ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গের মতো দেশেও ভাষাগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ফ্রান্স ও জার্মানি পিছিয়ে আছে।’
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর ইউরোপের হাতে অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৩ বছর সময় ছিল। কিন্তু তবুও তারা পিছিয়ে আছে। এই বিষয়ে জর্জিনা বলেন, ‘এখানে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া প্রয়োজন: ক্রয় বাড়ানো, চাহিদা মেটাতে ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করা—যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলের নিশ্চয়তা দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা; ইউরোপীয় অস্ত্র কেনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তবে প্রয়োজন হলে বিদেশি অস্ত্র কেনার জন্যও প্রস্তুত থাকা; এবং সম্মিলিত উদ্যোগে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার বাজেট বা বন্ড ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।’
তবে কেবল অর্থনৈতিক দিকটা দেখলেই চলছে না। পুরো প্রক্রিয়া ভালোভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইউরোপ থেকে সরে গেছে। জর্জিনা বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, যদি আমরা দেখাতে পারি যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমাদের কার্যকর অবদান রাখার সামর্থ্য আছে, তাহলে ওয়াশিংটন বরং ইউরোপে তাদের নিরাপত্তা ছাতা বজায় রাখার বিষয়ে আরও আগ্রহী হবে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ইউরোপ সেগুলো উপেক্ষা করে গেছে। এর ফলে, ইউরোপ আজ এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছে যেখানে রাশিয়ার ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মাঝে তারা ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা সহায়তার ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের ব্যাপক নির্বাচনী জয় ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র যখন কৌশলগত মনোযোগ ও রিসোর্স বা সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে, তখন ইউরোপ আর আগের মতো পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে পারবে না।
এই বিষয়ে মার্কিন কৌশলগত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক ব্র্যাটবার্গ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও—যেমন ট্রাম্পের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপটে (ইউরোপের তরফ থেকে) ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দেওয়া, প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির অন্তত ৩ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কিংবা ১০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি ইইউ প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনে একমত হওয়া—সম্ভবত কঠিন হয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, যেখানে পোল্যান্ড এবং নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেখানে জার্মানি অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে আছে, ফ্রান্সের আর্থিক সামর্থ্য নেই, আর যুক্তরাজ্য এখনো ইউরোপের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য স্থির করেছেন, কিন্তু ইইউর ভেতরে ঐক্যের অভাব আছে।
ব্র্যাটবার্গের মতে, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করে সময় নষ্ট না করে ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্রুত একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত, যাতে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, ‘এর লক্ষ্য হওয়া উচিত, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত রাখা। পাশাপাশি, ইইউ-এর প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা ও ইউরোপের প্রধান মিত্রদের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ন্যাটোর ভেতরে একটি শক্তিশালী ইউরোপীয় স্তম্ভ গড়ে তোলা।’
তবে ব্র্যাটবার্গসহ বিশ্লেষকেরা যেসব বিষয় বাস্তবায়নের কথা বলছেন, সেগুলো মূলত অর্থের বিষয়। এই বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড ফেলো ওয়ানা লঞ্জেস্কু বলেন, ‘এটি মূলত অর্থের বিষয়। বেশির ভাগ ন্যাটো রাষ্ট্র তাদের জিডিপির অন্তত ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে এক দশক সময় নিয়েছে। কিছু দেশ—যেমন স্পেন, ইতালি ও বেলজিয়াম—এখনো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি, আবার কিছু দেশ—যেমন জার্মানি—এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’
ইউরোপীয় নেতাদের অবশ্যই তাদের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, বর্তমান বিশ্ব কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় গড়ে জিডিপির ৪ শতাংশ ছিল। এখন কেবলমাত্র পোল্যান্ড এই ব্যয় বজায় রেখেছে।
লঞ্জেস্কু বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত দ্রুত জিডিপির ৩ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এটি শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানোর জন্য নয় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করছে, বরং ন্যাটোর নতুন উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ইউরোপ ও ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যও প্রয়োজন। ন্যাটো-ইইউ সহযোগিতার ঘনিষ্ঠতা, যা উভয় সংস্থার নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে, অবশ্যই ইতিবাচক।’
লঞ্জেস্কুর মতে, ইউরোপ একা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ইউরোপীয়দের স্বার্থ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো নয়, বরং ইউরোপ ও আমেরিকাকে একত্রে রাখার জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ করা।
ইউরোপের নিরাপত্তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের দয়া বা চিন্তার ওপর নির্ভর করতে পারে না বলে মনে করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষণা প্রধান নিকোলাই ভন ওন্ডারজা। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের নিরাপত্তা প্রতি চার বছর পর পর কয়েক হাজার মার্কিন সুইং-স্টেট ভোটারের ওপর নির্ভর করতে পারে না।’
বারবার সতর্ক সংকেত পাওয়ার পরও ইউরোপ শিক্ষা নেয়নি উল্লেখ করে ওন্ডারজা বলেন, ‘নিষ্ক্রিয়তা, আর্থিক চাপ, যৌথ অর্থায়নের প্রতি অনাস্থা, পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত এবং ন্যাটো ও ইইউকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার প্রবণতার কারণে ইউরোপ এখনো ২০১৬ সালের তুলনায় নিজ নিরাপত্তা রক্ষায় খুব একটা সক্ষম হয়ে ওঠেনি।’
রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে ইউরোপীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বেড়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানির সরকার দুর্বল, যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে গেছে, আর পোল্যান্ডসহ নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করলেও তারা পশ্চিম ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আরও অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।
ওন্ডারজা বলেন, ‘ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় ইউরোপ পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার হবে। ইউরোপের দেশগুলো এককভাবে ট্রাম্পের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করবে। এই প্রবণতা এড়াতে হলে ইউরোপীয় নেতৃত্বের এক অভূতপূর্ব কৌশলগত ঐক্য দরকার—যেখানে ইইউ-ন্যাটো বিভাজন দূর করা হবে, আর্থিক শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় আনা হবে এবং ইউক্রেন ও সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় যৌথ বিনিয়োগ করা হবে।’
তবে ইউরোপীয়রা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে কি না এই বিষয়ে সন্দিহান কার্নেগি এনডাওমেন্ট-ইউরোপের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘না, ইউরোপীয়রা পারবে না, আর তারা চাইবেও না। তারা চাইবে না, কারণ বড় দেশগুলো—জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি—তাদের নিজ নিজ অস্ত্রশিল্প রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ ভাগাভাগি ও যৌথ ক্রয় নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে অগ্রগতি খুব সামান্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ডের কথাই ধরুন। তারা দ্রুত প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তুলছে, কিন্তু প্রধানত মার্কিন অস্ত্র কিনেই। যখন তারা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছিল, তখন ওয়াশিংটন থেকে তীব্র চাপ আসে। এটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় আরও দায়িত্ব নিতে বলছে, কিন্তু তারা এটিও বলে দিচ্ছে যে, ইউরোপের এই উদ্যোগ যেন মার্কিন সামরিক শিল্পের ক্ষতি না করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের বহু দেশের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং ইউরোপের অভিন্ন প্রতিরক্ষা ও ক্রয়নীতি গড়ে তোলার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।
জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘কিন্তু ইউরোপীয়রা সেই পথ ধরবে না। সদস্য দেশগুলো এখনো অস্ত্র ব্যবস্থা একীভূত করতে রাজি নয়—যেমন ট্যাংক, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, এমনকি সরবরাহ ব্যবস্থাও বিশৃঙ্খল। আরও গভীরতর সমস্যা হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর হুমকি উপলব্ধির মধ্যে কোনো ঐক্য নেই, এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের পরও। নিরাপত্তা ও কৌশল নিয়ে অভিন্ন চিন্তা না থাকার ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’
ইউরোপ নিজের নিরাপত্তা ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট ধনী। ভোটাররা সচেতন যে, প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় করা জরুরি। এ ছাড়া, কার্যকর পরিকল্পনাও বিদ্যমান। তবু, এখন পর্যন্ত ইউরোপের প্রচেষ্টা খণ্ডিত ও অপ্রতুল কেন?—এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর ও সিনিয়র ফেলো জেরেমি ক্লিফ।
তিনি বলেছেন, ‘এর মূল কারণ, নেতৃত্বের অভাব। ইউরোপকে আত্মনির্ভরশীল করতে দরকার—একজন বা একাধিক শক্তিশালী নেতা, কিছু বড় রাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি কার্যকর চালিকাশক্তি এবং জনগণকে বোঝানোর জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক বার্তা। বর্তমানে এগুলোর কোনোটিই যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।’
তবে সম্ভাবনা পুরোপুরি নেই—এমনও নয়। মাখোঁ ও শলৎস দুর্বল হলেও উরসুলা ভন ডার লেয়ন ইউরোপীয় কমিশনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্স-জার্মান জোট দুর্বল হলেও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন নিয়ে একটি শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে তোলা সম্ভব।
ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাতজা বেগো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ থেকে সরে যাওয়ার মাত্রা এখনো অজানা, তবে ইউরোপকে একটি খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মানে হলো, ইউরোপকে ধারণা করতে হবে যে—শিগগিরই তাদের ইউক্রেনকে সমর্থন করার পুরো দায়িত্ব নিতে হবে, নিজেদের প্রতিরক্ষা পরিচালনা করতে হবে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বৈত বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হবে।’
এই চিত্র খুবই হতাশাজনক এবং আগামী বছরগুলো হবে ইউরোপের জন্য কষ্টকর ও বিপজ্জনক। তবে আশার কিছু কারণও আছে। কঠিন হলেও, ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি পুনর্গঠন ও একত্রিত ফ্রন্ট তৈরির দিকে অর্থবহ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, ইউরোপীয় কমিশন নতুনভাবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমন্বয়মূলক চিন্তাধারা চ্যালেঞ্জ করার জন্য বাড়তি গতি পাচ্ছে।
তবে আরও বেশি কিছু দরকার। প্রতিরক্ষা খাতে ২ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রাথমিক আলাপ শেষ হয়েছে। এখন প্রতিরক্ষা সংহতকরণের জন্য সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ইউরোপীয় জাতীয় চ্যাম্পিয়নদের চেয়ে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নদের নির্বাচন করতে হবে এবং মহাদেশের শিল্প ভিত্তিকে যুদ্ধের প্রস্তুতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ‘আমরা হয়তো যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী না, তবে যুদ্ধ আমাদের প্রতি আগ্রহী।’
ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নিরাপত্তা নির্ভরতা কীভাবে কমাতে পারে সে বিষয়ে ইউরোপীয় থিংক ট্যাংক ডেমোক্রেটিক স্ট্র্যাটেজি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক বেঞ্জামিন টালিস বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী, সক্ষমতার ভিত্তিতে এবং সেই অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য ইউরোপীয় স্তম্ভ গড়ে তুলতে পারি, যাতে ন্যাটোকে আবার একটি জোট হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে নয়। আমাদের নিজেদের শক্তি তৈরি করতে হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরতা কমাতে হবে। এটি আমাদের সেই সক্ষমতা দেবে যা আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটি সময় নিবে, আর তাই আমাদের একটি স্মার্ট কৌশল প্রয়োজন আমাদের স্বল্পমেয়াদি ত্রুটিগুলি পূর্ণ করতে, নতুন সামরিক প্রযুক্তি, ইইউ তহবিল এবং নতুন প্রতিরক্ষা কমিশনারকে ত্বরান্বিতকারী হিসেবে ব্যবহার করে। আমাদের অবশ্যই সেই মিত্রদের সঙ্গে কঠিন আলোচনা করতে হবে যারা পিছিয়ে আছে—খারাপ সিদ্ধান্ত বা খারাপ বিশ্বাসের কারণে—এবং তাদের বলতেই হবে তারা বা চেষ্টার সঙ্গে এগিয়ে আসুক, না হয় তারা অন্যদের সঙ্গে চলে যাক। খেলা শেষ। বাস্তব নেতৃত্ব এবং কৌশল দরকার যাতে সাহস এবং ইচ্ছাশক্তির অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা যায়, এবং তাই আমাদের কৌশলগত নেতাদের অনুসরণ করতে হবে, পুরোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
ইউরোপের দেশগুলোকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে বলে মত দেন ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ডিফেন্স ও মিলিটারি অ্যানালাইসিসের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এস্টার সাবাটিনো। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল সম্ভাবনার প্রশ্ন নয়; ইউরোপীয় দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো উচিত।’
সাবাটিনো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের নিরাপত্তা মানে কি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তবে এতে সম্ভবত আরও লেনদেনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। এ জন্য ইউরোপীয়দের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেখাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তথ্যসূত্র: কার্নেগি এনডাওমেন্ট

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়। এমনকি ইউক্রেনকে কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতেও রাজি নয়। এই অবস্থায় ইউক্রেনকে রক্ষার দায় ইউরোপের কাঁধেই পড়েছে। আর এ জন্য ইউরোপকে তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
এই বিষয়ে এস্তোনিয়ান একাডেমি অব সিকিউরিটি সায়েন্সেসের ভিজিটিং লেকচারার জানিকা মেরিলো বলেন, ইউরোপের বাস্তবসম্মত কৌশল প্রণয়নের এখনই সময়। যথাযথ বাজেটের মাধ্যমে এই কৌশলকে এগিয়ে নিতে হবে এবং নতুন ও উদ্ভাবনী সমাধানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে, আধুনিক যুদ্ধ হলো—একটি হাইব্রিড যুদ্ধ, যার কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই।’
ইউরোপজুড়ে রুশ সাইবার হামলার প্রভাব মূল্যায়ন করে জানিকা মেরিলো বলেন, ‘রুশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সাইবার হামলাগুলো ইউক্রেনের মিত্রদের ওপর নির্বিচারে আঘাত হানছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করছে। আমরা প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ করে যাচ্ছি, কিন্তু এই নতুন ধরনের যুদ্ধে আমাদের নিজস্ব সিস্টেম ও রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় যে উদ্ভাবনী সমাধানগুলো প্রয়োজন, সেগুলোর বিকাশ ও প্রসারের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কর্মপরিকল্পনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। আমরা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হতে পারি না, হওয়া উচিতও নয়।’
জানিকা মেরিলো বলেন, ‘এটি আশাব্যঞ্জক যে, বাল্টিক দেশগুলো পোল্যান্ডের সঙ্গে মিলে ইউরোপের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রাচীর গঠন করেছে। তারা বিপদের পরিপূর্ণ মাত্রা উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং কেবল বাজেট ও প্রচলিত যুদ্ধের প্রস্তুতি বাড়ানোর দিকেই নয়, ড্রোন, নজরদারি, গোয়েন্দা কার্যক্রম ও সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে কীভাবে সমর্থন করা যায়, সে বিষয়েও ভাবতে শুরু করেছে। ইউরোপের প্রচলিত প্রতিরক্ষা শক্তিগুলোকে অবশ্যই এই উদ্যোগ অনুসরণ করতে হবে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যাটো গঠনের পর পরবর্তী ৭ দশকের বেশি সময় ইউরোপ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়ে ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নাটকীয়ভাবে ইউরোপের সামষ্টিক নিরাপত্তার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়েছে। তবে ইউরোপের যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্ল্যাটফর্ম গঠনের অভিজ্ঞতা আছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া তারা তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এই বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক ইউকে ইন আ চেঞ্জিং ইউরোপের পরিচালক আনন্দ মেনন বলেন, ‘কথা বলা বা আলোচনা করা খুবই ভালো একটি কৌশল। ইউরোপ সম্ভবত এটিই সবচেয়ে ভালো পারে, বিশেষ করে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে কথার কমতি ছিল না। কিন্তু বাস্তবতায় সবাই অনেকটাই পিছিয়ে।’
মেনন বলেন, ‘যদি সত্যিই ইউরোপ এই নির্বাচনী ফলাফলের জন্য প্রস্তুতি নিত, তাহলে তা ট্রাম্প প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হতো। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে দীর্ঘ সময় লাগে, তা এক দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। শুধু বেশি খরচ করাই যথেষ্ট নয়। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় কিছুটা বাড়িয়েছে। তবে প্রয়োজন এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা, যাতে পুনরাবৃত্তি এবং বিভক্তি এড়ানো যায়। কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বিশেষ করে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে পড়ে সরকারগুলো নিজেদের স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়, তা যতই প্রতিযোগিতাহীন হোক না কেন।’
এই বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেন, ‘ইউরোপীয়রা বহুবার ঘোষণা দিয়েছে যে, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার তারা আরও উদ্যোগী হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ট্রাম্প যদি সত্যিই সিদ্ধান্ত নেন যে—ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর মার্কিন সামরিক নির্ভরতার যুগ শেষ হওয়া উচিত, তাহলে এখন এই সদিচ্ছাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
ইউরোপীয়রা যদি কথার সঙ্গে কাজটাও ঠিকমতো করত তবে হয়তো তাদের এখন এসে এই দিন দেখতে হতো না। ইউরোপের দেশগুলো কেন এত দিনেও নিজেদের প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করতে পারেনি সেটার কারণ খুঁজতে গিয়ে ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট মঁতেনের সিনিয়র ফেলো এবং আন্তর্জাতিক অধ্যয়নবিষয়ক উপপরিচালক জর্জিনা রাইট বলেন, ‘ইউরোপীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক সাহসের অভাব রয়েছে।’
জর্জিনা আরও বলেন, ‘তারা এখন পর্যন্ত সাহসী ও সম্মিলিত কৌশলগত চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতেও সক্ষম হয়নি। এটি বদলাতে হলে নেতাদের প্রতিরক্ষা ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং নাগরিকদের কাছে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সুফল ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে খোলাখুলি বলতে হবে। গণতান্ত্রিক সমর্থন নিশ্চিত করতে হলে, দেশে যারা প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর বিরোধিতা করেন, তাদের সঙ্গে বিতর্কে নামতে নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পোল্যান্ড এবং বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো ইতিমধ্যে এটি করেছে। এমনকি ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গের মতো দেশেও ভাষাগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ফ্রান্স ও জার্মানি পিছিয়ে আছে।’
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর ইউরোপের হাতে অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৩ বছর সময় ছিল। কিন্তু তবুও তারা পিছিয়ে আছে। এই বিষয়ে জর্জিনা বলেন, ‘এখানে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া প্রয়োজন: ক্রয় বাড়ানো, চাহিদা মেটাতে ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করা—যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলের নিশ্চয়তা দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা; ইউরোপীয় অস্ত্র কেনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তবে প্রয়োজন হলে বিদেশি অস্ত্র কেনার জন্যও প্রস্তুত থাকা; এবং সম্মিলিত উদ্যোগে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার বাজেট বা বন্ড ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।’
তবে কেবল অর্থনৈতিক দিকটা দেখলেই চলছে না। পুরো প্রক্রিয়া ভালোভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইউরোপ থেকে সরে গেছে। জর্জিনা বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, যদি আমরা দেখাতে পারি যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমাদের কার্যকর অবদান রাখার সামর্থ্য আছে, তাহলে ওয়াশিংটন বরং ইউরোপে তাদের নিরাপত্তা ছাতা বজায় রাখার বিষয়ে আরও আগ্রহী হবে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ইউরোপ সেগুলো উপেক্ষা করে গেছে। এর ফলে, ইউরোপ আজ এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছে যেখানে রাশিয়ার ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মাঝে তারা ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা সহায়তার ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের ব্যাপক নির্বাচনী জয় ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র যখন কৌশলগত মনোযোগ ও রিসোর্স বা সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে, তখন ইউরোপ আর আগের মতো পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে পারবে না।
এই বিষয়ে মার্কিন কৌশলগত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক ব্র্যাটবার্গ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও—যেমন ট্রাম্পের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপটে (ইউরোপের তরফ থেকে) ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দেওয়া, প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির অন্তত ৩ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কিংবা ১০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি ইইউ প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনে একমত হওয়া—সম্ভবত কঠিন হয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, যেখানে পোল্যান্ড এবং নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেখানে জার্মানি অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে আছে, ফ্রান্সের আর্থিক সামর্থ্য নেই, আর যুক্তরাজ্য এখনো ইউরোপের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য স্থির করেছেন, কিন্তু ইইউর ভেতরে ঐক্যের অভাব আছে।
ব্র্যাটবার্গের মতে, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করে সময় নষ্ট না করে ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্রুত একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত, যাতে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, ‘এর লক্ষ্য হওয়া উচিত, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত রাখা। পাশাপাশি, ইইউ-এর প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা ও ইউরোপের প্রধান মিত্রদের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ন্যাটোর ভেতরে একটি শক্তিশালী ইউরোপীয় স্তম্ভ গড়ে তোলা।’
তবে ব্র্যাটবার্গসহ বিশ্লেষকেরা যেসব বিষয় বাস্তবায়নের কথা বলছেন, সেগুলো মূলত অর্থের বিষয়। এই বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড ফেলো ওয়ানা লঞ্জেস্কু বলেন, ‘এটি মূলত অর্থের বিষয়। বেশির ভাগ ন্যাটো রাষ্ট্র তাদের জিডিপির অন্তত ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে এক দশক সময় নিয়েছে। কিছু দেশ—যেমন স্পেন, ইতালি ও বেলজিয়াম—এখনো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি, আবার কিছু দেশ—যেমন জার্মানি—এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’
ইউরোপীয় নেতাদের অবশ্যই তাদের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, বর্তমান বিশ্ব কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় গড়ে জিডিপির ৪ শতাংশ ছিল। এখন কেবলমাত্র পোল্যান্ড এই ব্যয় বজায় রেখেছে।
লঞ্জেস্কু বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত দ্রুত জিডিপির ৩ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এটি শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানোর জন্য নয় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করছে, বরং ন্যাটোর নতুন উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ইউরোপ ও ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যও প্রয়োজন। ন্যাটো-ইইউ সহযোগিতার ঘনিষ্ঠতা, যা উভয় সংস্থার নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে, অবশ্যই ইতিবাচক।’
লঞ্জেস্কুর মতে, ইউরোপ একা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ইউরোপীয়দের স্বার্থ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো নয়, বরং ইউরোপ ও আমেরিকাকে একত্রে রাখার জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ করা।
ইউরোপের নিরাপত্তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের দয়া বা চিন্তার ওপর নির্ভর করতে পারে না বলে মনে করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষণা প্রধান নিকোলাই ভন ওন্ডারজা। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের নিরাপত্তা প্রতি চার বছর পর পর কয়েক হাজার মার্কিন সুইং-স্টেট ভোটারের ওপর নির্ভর করতে পারে না।’
বারবার সতর্ক সংকেত পাওয়ার পরও ইউরোপ শিক্ষা নেয়নি উল্লেখ করে ওন্ডারজা বলেন, ‘নিষ্ক্রিয়তা, আর্থিক চাপ, যৌথ অর্থায়নের প্রতি অনাস্থা, পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত এবং ন্যাটো ও ইইউকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার প্রবণতার কারণে ইউরোপ এখনো ২০১৬ সালের তুলনায় নিজ নিরাপত্তা রক্ষায় খুব একটা সক্ষম হয়ে ওঠেনি।’
রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে ইউরোপীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বেড়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানির সরকার দুর্বল, যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে গেছে, আর পোল্যান্ডসহ নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করলেও তারা পশ্চিম ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আরও অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।
ওন্ডারজা বলেন, ‘ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় ইউরোপ পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার হবে। ইউরোপের দেশগুলো এককভাবে ট্রাম্পের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করবে। এই প্রবণতা এড়াতে হলে ইউরোপীয় নেতৃত্বের এক অভূতপূর্ব কৌশলগত ঐক্য দরকার—যেখানে ইইউ-ন্যাটো বিভাজন দূর করা হবে, আর্থিক শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় আনা হবে এবং ইউক্রেন ও সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় যৌথ বিনিয়োগ করা হবে।’
তবে ইউরোপীয়রা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে কি না এই বিষয়ে সন্দিহান কার্নেগি এনডাওমেন্ট-ইউরোপের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘না, ইউরোপীয়রা পারবে না, আর তারা চাইবেও না। তারা চাইবে না, কারণ বড় দেশগুলো—জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি—তাদের নিজ নিজ অস্ত্রশিল্প রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ ভাগাভাগি ও যৌথ ক্রয় নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে অগ্রগতি খুব সামান্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ডের কথাই ধরুন। তারা দ্রুত প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তুলছে, কিন্তু প্রধানত মার্কিন অস্ত্র কিনেই। যখন তারা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছিল, তখন ওয়াশিংটন থেকে তীব্র চাপ আসে। এটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় আরও দায়িত্ব নিতে বলছে, কিন্তু তারা এটিও বলে দিচ্ছে যে, ইউরোপের এই উদ্যোগ যেন মার্কিন সামরিক শিল্পের ক্ষতি না করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের বহু দেশের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং ইউরোপের অভিন্ন প্রতিরক্ষা ও ক্রয়নীতি গড়ে তোলার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।
জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘কিন্তু ইউরোপীয়রা সেই পথ ধরবে না। সদস্য দেশগুলো এখনো অস্ত্র ব্যবস্থা একীভূত করতে রাজি নয়—যেমন ট্যাংক, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, এমনকি সরবরাহ ব্যবস্থাও বিশৃঙ্খল। আরও গভীরতর সমস্যা হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর হুমকি উপলব্ধির মধ্যে কোনো ঐক্য নেই, এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের পরও। নিরাপত্তা ও কৌশল নিয়ে অভিন্ন চিন্তা না থাকার ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’
ইউরোপ নিজের নিরাপত্তা ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট ধনী। ভোটাররা সচেতন যে, প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় করা জরুরি। এ ছাড়া, কার্যকর পরিকল্পনাও বিদ্যমান। তবু, এখন পর্যন্ত ইউরোপের প্রচেষ্টা খণ্ডিত ও অপ্রতুল কেন?—এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর ও সিনিয়র ফেলো জেরেমি ক্লিফ।
তিনি বলেছেন, ‘এর মূল কারণ, নেতৃত্বের অভাব। ইউরোপকে আত্মনির্ভরশীল করতে দরকার—একজন বা একাধিক শক্তিশালী নেতা, কিছু বড় রাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি কার্যকর চালিকাশক্তি এবং জনগণকে বোঝানোর জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক বার্তা। বর্তমানে এগুলোর কোনোটিই যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।’
তবে সম্ভাবনা পুরোপুরি নেই—এমনও নয়। মাখোঁ ও শলৎস দুর্বল হলেও উরসুলা ভন ডার লেয়ন ইউরোপীয় কমিশনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্স-জার্মান জোট দুর্বল হলেও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন নিয়ে একটি শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে তোলা সম্ভব।
ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাতজা বেগো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ থেকে সরে যাওয়ার মাত্রা এখনো অজানা, তবে ইউরোপকে একটি খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মানে হলো, ইউরোপকে ধারণা করতে হবে যে—শিগগিরই তাদের ইউক্রেনকে সমর্থন করার পুরো দায়িত্ব নিতে হবে, নিজেদের প্রতিরক্ষা পরিচালনা করতে হবে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বৈত বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হবে।’
এই চিত্র খুবই হতাশাজনক এবং আগামী বছরগুলো হবে ইউরোপের জন্য কষ্টকর ও বিপজ্জনক। তবে আশার কিছু কারণও আছে। কঠিন হলেও, ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি পুনর্গঠন ও একত্রিত ফ্রন্ট তৈরির দিকে অর্থবহ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, ইউরোপীয় কমিশন নতুনভাবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমন্বয়মূলক চিন্তাধারা চ্যালেঞ্জ করার জন্য বাড়তি গতি পাচ্ছে।
তবে আরও বেশি কিছু দরকার। প্রতিরক্ষা খাতে ২ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রাথমিক আলাপ শেষ হয়েছে। এখন প্রতিরক্ষা সংহতকরণের জন্য সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ইউরোপীয় জাতীয় চ্যাম্পিয়নদের চেয়ে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নদের নির্বাচন করতে হবে এবং মহাদেশের শিল্প ভিত্তিকে যুদ্ধের প্রস্তুতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ‘আমরা হয়তো যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী না, তবে যুদ্ধ আমাদের প্রতি আগ্রহী।’
ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নিরাপত্তা নির্ভরতা কীভাবে কমাতে পারে সে বিষয়ে ইউরোপীয় থিংক ট্যাংক ডেমোক্রেটিক স্ট্র্যাটেজি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক বেঞ্জামিন টালিস বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী, সক্ষমতার ভিত্তিতে এবং সেই অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য ইউরোপীয় স্তম্ভ গড়ে তুলতে পারি, যাতে ন্যাটোকে আবার একটি জোট হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে নয়। আমাদের নিজেদের শক্তি তৈরি করতে হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরতা কমাতে হবে। এটি আমাদের সেই সক্ষমতা দেবে যা আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটি সময় নিবে, আর তাই আমাদের একটি স্মার্ট কৌশল প্রয়োজন আমাদের স্বল্পমেয়াদি ত্রুটিগুলি পূর্ণ করতে, নতুন সামরিক প্রযুক্তি, ইইউ তহবিল এবং নতুন প্রতিরক্ষা কমিশনারকে ত্বরান্বিতকারী হিসেবে ব্যবহার করে। আমাদের অবশ্যই সেই মিত্রদের সঙ্গে কঠিন আলোচনা করতে হবে যারা পিছিয়ে আছে—খারাপ সিদ্ধান্ত বা খারাপ বিশ্বাসের কারণে—এবং তাদের বলতেই হবে তারা বা চেষ্টার সঙ্গে এগিয়ে আসুক, না হয় তারা অন্যদের সঙ্গে চলে যাক। খেলা শেষ। বাস্তব নেতৃত্ব এবং কৌশল দরকার যাতে সাহস এবং ইচ্ছাশক্তির অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা যায়, এবং তাই আমাদের কৌশলগত নেতাদের অনুসরণ করতে হবে, পুরোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
ইউরোপের দেশগুলোকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে বলে মত দেন ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ডিফেন্স ও মিলিটারি অ্যানালাইসিসের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এস্টার সাবাটিনো। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল সম্ভাবনার প্রশ্ন নয়; ইউরোপীয় দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো উচিত।’
সাবাটিনো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের নিরাপত্তা মানে কি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তবে এতে সম্ভবত আরও লেনদেনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। এ জন্য ইউরোপীয়দের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেখাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তথ্যসূত্র: কার্নেগি এনডাওমেন্ট

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়।
০৩ মার্চ ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়।
০৩ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়।
০৩ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়।
০৩ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে