আব্দুর রহমান

ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আজকের নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা অগণিত বার উচ্ছেদ, নির্যাতন, জাতিগত নিধন এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে গাজার কসাইখ্যাত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আর তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদ বা জায়োনিজম।
গাজায় সর্বশেষ আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর মাঝে দুই দফায় অল্প কিছু সময়ের জন্য বিরতি থাকলেও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ হাজার মানুষ। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি এবং নিখোঁজ প্রায় ১৪ হাজার। এই নিখোঁজদের বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তাঁদের পচা-গলা লাশের দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার বাতাস। সেই সঙ্গে বাড়তি ভীতি যোগ করেছে টনকে টন বারুদের গন্ধ।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি এই বর্বরতার কারণ কী? মোটা দাগে দুটি লাইনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। এক. ইসরায়েলি জায়নবাদের আকাঙ্ক্ষা। যেখানে, পুরো ফিলিস্তিন (১৯৪৮ সালের আগের) ভূখণ্ডকে ইসরায়েলিদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ মনে করা হয় এবং এখানে ফিলিস্তিনিদের দেখা হয় দখলদার হিসেবে। অথচ, এই ভূখণ্ডে এখন যেসব ইসরায়েলি বসবাস করছে, তাদের বেশির ভাগই ইউরোপসহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিবাসী। আরব ইহুদি সেখানে খুব সামান্যই।
জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর ক্রমবর্ধমান যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানোর এবং মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোর পদ্ধতিগত ধ্বংসের মাধ্যমে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।
ইসরায়েল তো সরাসরি হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেই, পাশাপাশি দেশটি পদ্ধতিগতভাবেও গণহত্যামূলক কাজ করে যাচ্ছে। যেমন, দেশটি ফিলিস্তিনিরা যাতে সন্তান জন্ম দিতে না পারে সে ব্যবস্থাও করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রোম সংবিধি (স্ট্যাটিউট) এবং গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় এবং এই দুটিই ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া এবং সন্তান জন্মদান ঠেকাতে পদক্ষেপ আরোপ করা হচ্ছে।’
এখানেই থেমে নেই ইসরায়েল। দেশটি গাজাবাসীদের আফ্রিকার দেশগুলোতে স্থানান্তর করতে চায়। জায়নিবাদের এই আকাঙ্ক্ষাই যেন প্রতিফলিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকে। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে নতুন করে নির্মাণের কথা বলছেন। ট্রাম্পের সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহু।
কিছুদিন আগেই, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজার লোকদের আফ্রিকার দেশ সুদান, সোমালিয়া এবং এর বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের কথা বলেছে। তারও আগে, খবর বেরিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজাবাসীদের মরোক্কো ও সোমালিয়ায় স্থানান্তর করতে চায়। যদিও মরক্কো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু সোমালিয়া বা সুদান এ বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি। আরব বিশ্বের দেশগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা করেছে, এমনকি গাজার বিকল্প পুনর্গঠন পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। কিন্তু যেটি আসলে করা প্রয়োজন—যুদ্ধ বন্ধ—সেটিই তারা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অভিবাসী আহমেদ ইবসাইস বলেন, ‘গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আজ যে বর্ণবাদ, উগ্রবাদ এবং গণহত্যার অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে, তার জন্য শুধু নেতানিয়াহুকে দায়ী করা যায় না এবং করা উচিতও নয়।’ তাঁর মতে, এসবের পেছনে মূল কারণ হলো, ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর জায়নবাদ। তাঁর মতে, ‘কেবল নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি জনগণের অতীত ও বর্তমানের দুঃখ-দুর্দশা এবং নিপীড়নের জন্য দোষারোপ করার মাধ্যমে, তারা এই মিথ্যাটিকে বাঁচিয়ে রাখে যে—ইসরায়েল জাতিগত নির্মূলের পরিবর্তে প্রগতিশীল আদর্শের ওপর নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু আসলে তা নয়।’
শুরু থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্র তার দীর্ঘমেয়াদি অস্তিত্বকে ফিলিস্তিনের জাতিগত নির্মূল, ফিলিস্তিনি পরিচয়কে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা এবং নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকা ফিলিস্তিনিদের দমন-পীড়নের শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘There is no such thing as Palestinians’, অর্থাৎ, ‘ফিলিস্তিনি বলে কিছু নেই।’ অর্থাৎ, খোদ ইসরায়েল রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
গাজা আগ্রাসনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জায়নবাদী নীতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ এক বিন্দুতে মিলেছে। ফলে, তার জন্য গাজায় আগ্রাসন চালানোর রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করা তুলনামূলক সহজই হয়েছে। যদিও অনেক ইসরায়েলিই গাজায় আগ্রাসনের বিপক্ষে এবং তাঁরা চান, ইসরায়েল গাজা থেকে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুক এবং যুদ্ধ শেষ করুক। কিন্তু নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে এসব জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করছেন।
নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে কট্টর জায়নবাদী নেতা ও সরকারের জোটসঙ্গী বেজালেল স্মটরিচ, ইসরায়েল কাৎজসহ অনেকের রাজনৈতিক সমর্থন লাভের আশায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা ভালো, প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে তিনি আবারও গাজায় আগ্রাসন শুরু করেছেন। এতে তাঁর নগদ লাভ হয়েছে দুটি: প্রথমত, তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া থেকে আপাতত বিরতি পেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর সরকারের জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতারা আগ্রাসন পুনরায় শুরু করায় তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২০২২ সালে। সেই হিসাবে তাঁর মেয়াদের তৃতীয় বছর চলে। তিনি চাইবেন মেয়াদ পূর্ণ করতে এবং আগামী মেয়াদে নির্বাচিত হতে। তবে এ জন্য, তাঁর রাজনৈতিক জোটসঙ্গীদের সমর্থন দরকার। নইলে যেকোনো সময় তাঁর সরকারের পতন হতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক পুঁজি দিয়েছে। গাজায় গণহত্যা শুরুর আগে, ইসরায়েলিরা কয়েক মাস ধরে নেতানিয়াহুর হাতে ‘দেশের আইনি ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ’ বলে মনে করা পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, হত্যা এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে এত সংখ্যায় এবং এত জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেনি।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর ঠিক এক মাস পর, ২০২৩ সালের নভেম্বরে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছিল, তারা বিশ্বাস করে—ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে। আর গণহত্যার পাঁচ মাস পর গিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছে, তারা গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপন প্রকল্প পুনরায় চালু করার পক্ষে।
হাজার হাজার মৃত ও পঙ্গু ফিলিস্তিনির ছবি ইসরায়েলিদের কাছে তেমন অর্থ বহন করে না বলেই মনে হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগে সন্তানের দেহাবশেষ বহনকারী বাবার আহাজারির ভিডিও বা নিহত শিশুদের রক্তাক্ত দেহের ওপর মায়েদের কান্নার ভিডিও তাদের মনে দাগ কাটে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ক্ষুধার্ত শিশু বা মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে অখাদ্য গ্রহণে বাধ্য হওয়া শিশুদের বিষক্রিয়ার ঘটনা তাদের স্পর্শ করে না। তাদের সামরিক বাহিনী নিরীহদের ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কেবল উদাসীনই নয়—তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের কাছে কোনো সাহায্য যাতে পৌঁছাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে বিক্ষোভও করেছে। আর এসব বিষয়ই নেতানিয়াহুর হারানো রাজনৈতিক পুঁজি ফিরে পাওয়ার হাতিয়ার। ফলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাঁর জন্য লাভজনক ব্যবসায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জানুয়ারিতেই স্পষ্ট ছিল যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া তিন পর্যায়ের চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। আজ তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য সংশয় ছিল। সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই আলোচনা ব্যর্থ হলে যুদ্ধ ফের শুরু করার অনুমতি দিয়েছে।
নেতানিয়াহু মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের নির্ধারিত সময়সীমাকে উপেক্ষা করে আলোচনার পথে না গিয়ে, ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করাকে অগ্রাধিকার দেন। এতে শুধু যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তির মৃত্যুঘণ্টাই বাজেনি, বরং নেতানিয়াহু যুদ্ধ ফের শুরুর মাধ্যমে তাঁর মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থী অংশের সমর্থনও দৃঢ় করেছেন, যাদের সমর্থনের ওপর তাঁর রাজনৈতিক নির্ভর করছে। এই গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে সম্পূর্ণ বিনাশ করার পক্ষে, যদিও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারাই বলেছেন, এটি অসম্ভব।
নেতানিয়াহু বরাবর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাপ্রধানদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তিনি সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন এবং সাময়িকভাবে হলেও তাঁর দুর্নীতি মামলার শুনানি পেছানোর সুযোগ পেয়েছেন। বিরোধী রাজনীতিক, ইয়াইর গোলান বলেন, ‘সীমান্তে লড়াইরত সেনা ও গাজায় আটক বন্দীরা কেবল তাঁর (নেতানিয়াহুর) টিকে থাকার খেলায় দাবার ঘুঁটি।’
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ের লাপিদ বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ করতে হলে নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে এবং তিনি সেই মূল্য দিতে ইচ্ছুক নন।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার কিছুই করতে চায় না, বা গাজায় বন্দী ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি বা ক্ষমতা দিয়ে কাজ করছে না।’
হামাসের হাতে বন্দীদের পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানিয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। তারা বলেছে, ‘ইসরায়েল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দীদের ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার, বিরোধী রাজনীতিকদের কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাঁচাতেই হাজারো মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছেন।
এত কিছুর পরও, গাজাবাসী মনোবল হারায়নি। কিন্তু শোক তাদের পাথর বানিয়ে দিয়েছে। তাদের শোকগাঁথা লিপিবদ্ধ করার জন্য কোনো শব্দই যেন যথেষ্ট নয়! প্রতিনিয়ত তারা ইসরায়েলের যে বর্বরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ তাদের স্বজন হারাচ্ছে, সেই শোক, ব্যথা এবং হাহাকার আসলে কোনো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু গাজাবাসীর আর্তনাদ, হাহাকার ‘গাজার কসাই’—যেমনটা বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান—নেতানিয়াহুর হৃদয়ে পৌঁছায় না। তাঁর কাছে এবং ইসরায়েলের কাছে, স্বার্থটাই বড়। সর্বাগ্রে জায়নবাদ এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এখানে গাজাবাসীর কোনো স্থান নেই। গোল্ডা মেয়ারের ভাষায় বললে, গাজা (ফিলিস্তিন) বলে কিছু নেই!
লেখক: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক
তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, এক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল, আল-জাজিরা, এপি, ডেইলি সাবাহ ও এএফপি

ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আজকের নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা অগণিত বার উচ্ছেদ, নির্যাতন, জাতিগত নিধন এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে গাজার কসাইখ্যাত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আর তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদ বা জায়োনিজম।
গাজায় সর্বশেষ আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর মাঝে দুই দফায় অল্প কিছু সময়ের জন্য বিরতি থাকলেও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ হাজার মানুষ। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি এবং নিখোঁজ প্রায় ১৪ হাজার। এই নিখোঁজদের বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তাঁদের পচা-গলা লাশের দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার বাতাস। সেই সঙ্গে বাড়তি ভীতি যোগ করেছে টনকে টন বারুদের গন্ধ।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি এই বর্বরতার কারণ কী? মোটা দাগে দুটি লাইনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। এক. ইসরায়েলি জায়নবাদের আকাঙ্ক্ষা। যেখানে, পুরো ফিলিস্তিন (১৯৪৮ সালের আগের) ভূখণ্ডকে ইসরায়েলিদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ মনে করা হয় এবং এখানে ফিলিস্তিনিদের দেখা হয় দখলদার হিসেবে। অথচ, এই ভূখণ্ডে এখন যেসব ইসরায়েলি বসবাস করছে, তাদের বেশির ভাগই ইউরোপসহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিবাসী। আরব ইহুদি সেখানে খুব সামান্যই।
জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর ক্রমবর্ধমান যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানোর এবং মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোর পদ্ধতিগত ধ্বংসের মাধ্যমে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।
ইসরায়েল তো সরাসরি হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেই, পাশাপাশি দেশটি পদ্ধতিগতভাবেও গণহত্যামূলক কাজ করে যাচ্ছে। যেমন, দেশটি ফিলিস্তিনিরা যাতে সন্তান জন্ম দিতে না পারে সে ব্যবস্থাও করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রোম সংবিধি (স্ট্যাটিউট) এবং গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় এবং এই দুটিই ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া এবং সন্তান জন্মদান ঠেকাতে পদক্ষেপ আরোপ করা হচ্ছে।’
এখানেই থেমে নেই ইসরায়েল। দেশটি গাজাবাসীদের আফ্রিকার দেশগুলোতে স্থানান্তর করতে চায়। জায়নিবাদের এই আকাঙ্ক্ষাই যেন প্রতিফলিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকে। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে নতুন করে নির্মাণের কথা বলছেন। ট্রাম্পের সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহু।
কিছুদিন আগেই, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজার লোকদের আফ্রিকার দেশ সুদান, সোমালিয়া এবং এর বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের কথা বলেছে। তারও আগে, খবর বেরিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজাবাসীদের মরোক্কো ও সোমালিয়ায় স্থানান্তর করতে চায়। যদিও মরক্কো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু সোমালিয়া বা সুদান এ বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি। আরব বিশ্বের দেশগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা করেছে, এমনকি গাজার বিকল্প পুনর্গঠন পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। কিন্তু যেটি আসলে করা প্রয়োজন—যুদ্ধ বন্ধ—সেটিই তারা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অভিবাসী আহমেদ ইবসাইস বলেন, ‘গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আজ যে বর্ণবাদ, উগ্রবাদ এবং গণহত্যার অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে, তার জন্য শুধু নেতানিয়াহুকে দায়ী করা যায় না এবং করা উচিতও নয়।’ তাঁর মতে, এসবের পেছনে মূল কারণ হলো, ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর জায়নবাদ। তাঁর মতে, ‘কেবল নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি জনগণের অতীত ও বর্তমানের দুঃখ-দুর্দশা এবং নিপীড়নের জন্য দোষারোপ করার মাধ্যমে, তারা এই মিথ্যাটিকে বাঁচিয়ে রাখে যে—ইসরায়েল জাতিগত নির্মূলের পরিবর্তে প্রগতিশীল আদর্শের ওপর নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু আসলে তা নয়।’
শুরু থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্র তার দীর্ঘমেয়াদি অস্তিত্বকে ফিলিস্তিনের জাতিগত নির্মূল, ফিলিস্তিনি পরিচয়কে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা এবং নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকা ফিলিস্তিনিদের দমন-পীড়নের শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘There is no such thing as Palestinians’, অর্থাৎ, ‘ফিলিস্তিনি বলে কিছু নেই।’ অর্থাৎ, খোদ ইসরায়েল রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
গাজা আগ্রাসনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জায়নবাদী নীতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ এক বিন্দুতে মিলেছে। ফলে, তার জন্য গাজায় আগ্রাসন চালানোর রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করা তুলনামূলক সহজই হয়েছে। যদিও অনেক ইসরায়েলিই গাজায় আগ্রাসনের বিপক্ষে এবং তাঁরা চান, ইসরায়েল গাজা থেকে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুক এবং যুদ্ধ শেষ করুক। কিন্তু নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে এসব জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করছেন।
নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে কট্টর জায়নবাদী নেতা ও সরকারের জোটসঙ্গী বেজালেল স্মটরিচ, ইসরায়েল কাৎজসহ অনেকের রাজনৈতিক সমর্থন লাভের আশায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা ভালো, প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে তিনি আবারও গাজায় আগ্রাসন শুরু করেছেন। এতে তাঁর নগদ লাভ হয়েছে দুটি: প্রথমত, তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া থেকে আপাতত বিরতি পেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর সরকারের জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতারা আগ্রাসন পুনরায় শুরু করায় তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২০২২ সালে। সেই হিসাবে তাঁর মেয়াদের তৃতীয় বছর চলে। তিনি চাইবেন মেয়াদ পূর্ণ করতে এবং আগামী মেয়াদে নির্বাচিত হতে। তবে এ জন্য, তাঁর রাজনৈতিক জোটসঙ্গীদের সমর্থন দরকার। নইলে যেকোনো সময় তাঁর সরকারের পতন হতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক পুঁজি দিয়েছে। গাজায় গণহত্যা শুরুর আগে, ইসরায়েলিরা কয়েক মাস ধরে নেতানিয়াহুর হাতে ‘দেশের আইনি ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ’ বলে মনে করা পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, হত্যা এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে এত সংখ্যায় এবং এত জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেনি।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর ঠিক এক মাস পর, ২০২৩ সালের নভেম্বরে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছিল, তারা বিশ্বাস করে—ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে। আর গণহত্যার পাঁচ মাস পর গিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছে, তারা গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপন প্রকল্প পুনরায় চালু করার পক্ষে।
হাজার হাজার মৃত ও পঙ্গু ফিলিস্তিনির ছবি ইসরায়েলিদের কাছে তেমন অর্থ বহন করে না বলেই মনে হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগে সন্তানের দেহাবশেষ বহনকারী বাবার আহাজারির ভিডিও বা নিহত শিশুদের রক্তাক্ত দেহের ওপর মায়েদের কান্নার ভিডিও তাদের মনে দাগ কাটে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ক্ষুধার্ত শিশু বা মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে অখাদ্য গ্রহণে বাধ্য হওয়া শিশুদের বিষক্রিয়ার ঘটনা তাদের স্পর্শ করে না। তাদের সামরিক বাহিনী নিরীহদের ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কেবল উদাসীনই নয়—তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের কাছে কোনো সাহায্য যাতে পৌঁছাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে বিক্ষোভও করেছে। আর এসব বিষয়ই নেতানিয়াহুর হারানো রাজনৈতিক পুঁজি ফিরে পাওয়ার হাতিয়ার। ফলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাঁর জন্য লাভজনক ব্যবসায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জানুয়ারিতেই স্পষ্ট ছিল যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া তিন পর্যায়ের চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। আজ তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য সংশয় ছিল। সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই আলোচনা ব্যর্থ হলে যুদ্ধ ফের শুরু করার অনুমতি দিয়েছে।
নেতানিয়াহু মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের নির্ধারিত সময়সীমাকে উপেক্ষা করে আলোচনার পথে না গিয়ে, ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করাকে অগ্রাধিকার দেন। এতে শুধু যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তির মৃত্যুঘণ্টাই বাজেনি, বরং নেতানিয়াহু যুদ্ধ ফের শুরুর মাধ্যমে তাঁর মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থী অংশের সমর্থনও দৃঢ় করেছেন, যাদের সমর্থনের ওপর তাঁর রাজনৈতিক নির্ভর করছে। এই গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে সম্পূর্ণ বিনাশ করার পক্ষে, যদিও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারাই বলেছেন, এটি অসম্ভব।
নেতানিয়াহু বরাবর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাপ্রধানদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তিনি সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন এবং সাময়িকভাবে হলেও তাঁর দুর্নীতি মামলার শুনানি পেছানোর সুযোগ পেয়েছেন। বিরোধী রাজনীতিক, ইয়াইর গোলান বলেন, ‘সীমান্তে লড়াইরত সেনা ও গাজায় আটক বন্দীরা কেবল তাঁর (নেতানিয়াহুর) টিকে থাকার খেলায় দাবার ঘুঁটি।’
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ের লাপিদ বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ করতে হলে নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে এবং তিনি সেই মূল্য দিতে ইচ্ছুক নন।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার কিছুই করতে চায় না, বা গাজায় বন্দী ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি বা ক্ষমতা দিয়ে কাজ করছে না।’
হামাসের হাতে বন্দীদের পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানিয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। তারা বলেছে, ‘ইসরায়েল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দীদের ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার, বিরোধী রাজনীতিকদের কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাঁচাতেই হাজারো মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছেন।
এত কিছুর পরও, গাজাবাসী মনোবল হারায়নি। কিন্তু শোক তাদের পাথর বানিয়ে দিয়েছে। তাদের শোকগাঁথা লিপিবদ্ধ করার জন্য কোনো শব্দই যেন যথেষ্ট নয়! প্রতিনিয়ত তারা ইসরায়েলের যে বর্বরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ তাদের স্বজন হারাচ্ছে, সেই শোক, ব্যথা এবং হাহাকার আসলে কোনো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু গাজাবাসীর আর্তনাদ, হাহাকার ‘গাজার কসাই’—যেমনটা বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান—নেতানিয়াহুর হৃদয়ে পৌঁছায় না। তাঁর কাছে এবং ইসরায়েলের কাছে, স্বার্থটাই বড়। সর্বাগ্রে জায়নবাদ এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এখানে গাজাবাসীর কোনো স্থান নেই। গোল্ডা মেয়ারের ভাষায় বললে, গাজা (ফিলিস্তিন) বলে কিছু নেই!
লেখক: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক
তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, এক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল, আল-জাজিরা, এপি, ডেইলি সাবাহ ও এএফপি

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
১৯ মার্চ ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
১৯ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
১৯ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
১৯ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে