Ajker Patrika

সিএনএনের প্রতিবেদন /যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংঘাতে রাজনীতি নয়, প্রভাব ফেলছে ধর্মীয় মতবাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫, ১৯: ০০
একদিন যিশু আসবেন এবং অবিশ্বাসীদের দমন করে বিশ্বাসীদের স্বর্গারোহণ করবেন, এটাই র‍্যাপচার। অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান এমনটাই বিশ্বাস করেন। ছবি: এএফপি
একদিন যিশু আসবেন এবং অবিশ্বাসীদের দমন করে বিশ্বাসীদের স্বর্গারোহণ করবেন, এটাই র‍্যাপচার। অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান এমনটাই বিশ্বাস করেন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পেছনে শুধু কূটনৈতিক কৌশল বা রাজনৈতিক অভিসন্ধি নয়, কাজ করেছে এক গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকেরা।

মার্কিন ধর্ম বিশ্লেষক ও লেখিকা ডায়ানা বাটলার ব্যাস মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং তা অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ভাবনা দ্বারা, যাঁরা মনে করেন, ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে ‘শেষ যুগ’ বা End Times শুরু হবে। এই ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা হলেন প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টধর্মের একটি শাখা, যাঁদের বাইবেলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। তাঁরা যিশুকে একমাত্র ত্রাণকর্তা ও পালনকর্তা হিসেবে মানেন। ইভানজেলিক্যাল শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘ইউএঞ্জেলিয়ন’ থেকে, যার অর্থ সুসংবাদ বা সুসমাচার। এই ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন, যিশু একদিন ফিরে আসবেন এবং তাঁদের উদ্ধার করবেন।

ব্যাস বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের একধরনের ‘‘আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা’’ রয়েছে এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে।’ তাঁর মতে, এই ধর্মীয় গোষ্ঠীটি বিশ্বাস করে ইসরায়েলকে ঘিরে যুদ্ধ হলে সেটি যিশুখ্রিষ্টের দ্বিতীয় আগমনের পথ খুলে দেবে।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। সেনাবাহিনীর দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ছিল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু ধর্মবিশারদদের মতে, এর পেছনে রয়েছে ‘ভবিষ্যদ্বাণীমূলক’ রাজনৈতিক চিন্তা। ব্যাস বলেন, এই যুদ্ধ ট্রাম্পকে তাঁর অনুসারীদের চোখে ‘ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলপ্রীতি দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি আরও গভীর ধর্মীয় রূপ নিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ১৯ শতকের ব্রিটিশ ধর্মগুরুদের লেখা ও ‘লেফট বিহাইন্ড’ সিরিজের মতো জনপ্রিয় ধর্মীয় সাহিত্য।

ধর্মতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ জেমার টিসবি বলেন, ‘এই ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কেবল মতবাদ নয়, এর সরাসরি ও ভয়ানক প্রভাব রয়েছে। এসব বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

সাবেক গভর্নর মাইক হাকাবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি টেক্সট মেসেজে লিখেছিলেন, ‘ঈশ্বর আপনাকে বাঁচিয়েছেন, কারণ, আপনার ওপর তাঁর বিশেষ কাজের দায়িত্ব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনি স্বর্গের বার্তা শুনতে পান।’ হাকাবি বর্তমানে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

অনেক শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান বিশ্বাস করেন, বাইবেলের ইসরায়েল ও আজকের রাষ্ট্র ইসরায়েল অভিন্ন। তাঁদের মতে, বাইবেল অনুযায়ী ইসরায়েলকে সমর্থন না করা মানে ঈশ্বরকে অমান্য করা।

২০১৭ সালের ২২ মে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমে অবস্থিত ইহুদিদের পবিত্রতম স্থান ওয়েস্টার্ন ওয়াল পরিদর্শন করেন। ছবি: এএফপি
২০১৭ সালের ২২ মে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমে অবস্থিত ইহুদিদের পবিত্রতম স্থান ওয়েস্টার্ন ওয়াল পরিদর্শন করেন। ছবি: এএফপি

বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে, আমি তাদের আশীর্বাদ করব; আর যারা তোমাকে অভিশাপ দেবে, আমি তাদের অভিশাপ দেব। পৃথিবীর সব গোত্র তোমার মাধ্যমে আশীর্বাদ পাবে।’ (জেনেসিস ১২: ৩)। বাইবেলের এই উদ্ধৃতির ভিত্তিতেই অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল সমর্থনকে ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’ হিসেবে দেখে থাকেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এসব ধর্মীয় বিশ্বাসকে আরও জোরালো করেছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৮০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। সাম্প্রতিক সিএনএন জরিপে দেখা গেছে, ইরানে বিমান হামলার পর ৮৭ শতাংশ রিপাবলিকান ট্রাম্পের সামরিক সিদ্ধান্তে আস্থা প্রকাশ করেন।

ধর্ম বিশ্লেষক ও লেখিকা ব্যাস মনে করেন, এই সমর্থনের ভিত্তি শুধুই রাজনৈতিক নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে এক ভবিষ্যদ্বাণী প্রসূত আশা—‘যুদ্ধ হলে যিশু ফিরে আসবেন এবং ইসরায়েল চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইরান হামলার পর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন দেশটির শীর্ষ ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান নেতারা। ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়ে তাঁরা এই হামলাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা হিসেবেই তুলে ধরছেন। তবে ধর্মতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদেরা বলছেন, এই মনোভাব যুক্তরাষ্ট্রের বহু সাংস্কৃতিক ও বহুধর্মীয় গণতন্ত্রের জন্য এক গভীর ঝুঁকি।

ইভানজেলিক্যাল নেতা ফ্রাঙ্কলিন গ্রাহাম প্রয়াত ধর্মীয় নেতা বিলি গ্রাহামের পুত্র। ইরানে হামলার পর ফ্রাঙ্কলিন এক্সে লেখেন, ‘বিশ্ব এখন অনেক বেশি নিরাপদ।’ অপর দিকে ডালাসভিত্তিক প্যাস্টর রবার্ট জেফ্রেসও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ঈশ্বরের নির্দেশ বলেই ব্যাখ্যা করেন। তিনি গত রোববার চার্চে যখন ধর্মোপদেশ দেন, তা শুনে শ্রোতারা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।

জেফ্রেস বলেন, ‘যারা ইসরায়েলের বিরোধিতা করে, তারা সব সময় ইতিহাসের ভুল দিকে থাকে। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই, কারণ এখন আমাদের একজন এমন প্রেসিডেন্ট আছেন— ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সত্য বোঝেন।’

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বাইবেলের ইসরায়েল ও আধুনিক রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এক করে দেখার এই প্রবণতা শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

২০১২ সালের ৩ জুন নিউ ইয়র্কে ইসরায়েল দিবসের কুচকাওয়াজে এক ব্যক্তি একটি প্ল্যাকার্ড ধরে আছেন, যেখানে লেখা, ‘যিশু ফিরে আসবেন।’ ছবি: সংগৃহীত
২০১২ সালের ৩ জুন নিউ ইয়র্কে ইসরায়েল দিবসের কুচকাওয়াজে এক ব্যক্তি একটি প্ল্যাকার্ড ধরে আছেন, যেখানে লেখা, ‘যিশু ফিরে আসবেন।’ ছবি: সংগৃহীত

ধর্মতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ জেমার টিসবি সিএনএনকে বলেন, যদি কেউ বাইবেলের ইসরায়েল ও আধুনিক ইসরায়েলকে এক করে দেখে, তাহলে নানা ধরনের সহিংসতা, নিপীড়ন ও রাজনৈতিক অপব্যবহারকেও ধর্মের নামে সমর্থন করতে শুরু করে। তিনি বলেন, এই বিশ্বাস প্যালেস্টাইনের জনগণের অধিকার অস্বীকার করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে মানবাধিকারের প্রশ্নগুলোকে আড়াল করে দেয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের ইরান নীতিকে প্রভাবিত করেছে একটি বিতর্কিত ধর্মীয় মতবাদ, যা গড়ে তোলা হয়েছিল ১৯ শতকে অ্যাংলো-আইরিশ যাজক বা প্যাস্টর জন নেলসন ডারবির দ্বারা। তিনি বাইবেলের ‘রিভেলেশন’ অধ্যায় থেকে ‘ডিসপেনসেশনালিজম’ নামে একটি মতবাদ তৈরি করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে, মানব ইতিহাসকে ঈশ্বরের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন যুগে যোগাযোগের মাধ্যমে বিভক্ত করা হয়েছে। এতে বিশ্বাস করা হয়, পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে এবং ‘র‍্যাপচার’-এর মাধ্যমে খ্রিষ্টানরা স্বর্গে টেলিপোর্ট হয়ে যাবেন। অর্থাৎ যেদিন পৃথিবী ধ্বংস হবে, সেদিন যিশু এসে এই খ্রিষ্টানদের নিয়ে স্বর্গারোহণ করবেন।

এই তত্ত্ব ১৯৯০ ও ২০০০ সালের জনপ্রিয় ‘লেফট বিহাইন্ড’ উপন্যাস ও টিভি সিরিজের মাধ্যমে আরও বেশি পরিচিত হয়। সিরিজটির ৬৫ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। যদিও এগুলো কাল্পনিক গল্প, তবে অনেক ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান তা বাস্তবধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবেই দেখেছেন।

আর এই বিশ্বাসের কেন্দ্রে রয়েছে ইসরায়েল। এই মতাবলম্বীরা মনে করেন, আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলো শেষ সময়ের সূচনাবিন্দু। তাঁরা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই যিশুখ্রিষ্টের দ্বিতীয় আগমন ঘটবে।

ইতিহাসবিদ জেমার টিসবি বলেন, ‘আজকের অনেক ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান এই তত্ত্ব মানেন, যদিও তারা হয়তো ডিসপেনসেশনালিজম শব্দটি জানেন না। এটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, নাম না জেনেও অনেকেই এই বিশ্বাসে দীক্ষিত।’

ধর্ম বিশ্লেষক ও লেখিকা ডায়ানা বাটলার ব্যাস বলেন, র‍্যাপচার মতবাদ একটি ‘সম্পূর্ণ মনগড়া ধর্মতত্ত্ব’। তিনি বলেন, ‘এটি খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল বিভ্রান্তিগুলোর একটি।’ ব্যাস বলেন, অনেক শিশু-কিশোর এই বিশ্বাসে আতঙ্কে দিন কাটিয়েছে—রাতে ঘুম থেকে উঠে যদি বাড়ি নীরব থাকে, তবে তারা ভয় পেয়ে মা-বাবার ঘরে গিয়ে দেখে নিত, তারা উধাও হয়ে গেছে কি না। মানে যিশু এসে তাদের মা-বাবাকে নিয়ে গেছেন কি না। তিনি বলেন, বাইবেলের রিভেলেশন বইটি আসলে রোমান সাম্রাজ্যের বিরোধিতা করে লেখা একটি প্রতীকী গ্রন্থ। আক্ষরিক অর্থে, একদিন পৃথিবীতে ‘শেষ দিন’ আসবে এমন কোনো বর্ণনা এর মধ্যে নেই।

ব্যাস বলেন, এ ধরনের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক নেতাদের যুদ্ধ এড়ানোর উৎসাহ দেয় না। বরং, এসব বিশ্বাসের কারণে ধ্বংস ও সহিংসতাকেই ঈশ্বরের কাজ বলে মনে করা হয়। এই ধর্মতত্ত্বে, যত খারাপ কিছু ঘটে, ততই ঈশ্বরের ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই যুদ্ধ, দারিদ্র্য কিংবা জলবায়ু সংকট প্রতিরোধে কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।

টিসবি বলেন, ‘যখন কোনো গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকেরা মনে করেন, তাঁদের নেতা ঈশ্বর-নির্বাচিত এবং একটি ভবিষ্যদ্বাণী পূরণের জন্য কাজ করছেন, তখন গণতান্ত্রিক আলোচনা ও সমালোচনার জায়গা আর থাকে না। এমন অন্ধ ও নিঃশর্ত সমর্থন, সেটা যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্যই হোক না কেন, গণতন্ত্রের জন্য এক চরম বিপদ।’

ধর্মতাত্ত্বিক ও বিশ্লেষকদের প্রশ্ন—ইরানও একটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যাদের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি। যাদের পররাষ্ট্রনীতিও ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভর করে চলে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও যদি আংশিকভাবে একই রকম ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা চালিত হয়, তাহলে কি দুই দেশের সংঘর্ষ এক অন্ধ ধর্মীয় সংঘাতে রূপ নেবে? এই প্রশ্নই এখন মার্কিন-মধ্যপ্রাচ্য নীতির ভবিষ্যৎ ব্যাখ্যার কেন্দ্রে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূ-রাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।

২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।

ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।

এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।

সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।

তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।

সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত