
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন শিনজো আবে। আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর অর্থনৈতিক নীতি ‘অ্যাবেনোমিক্স’ নামে খ্যাতি পেয়েছিল।
একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে তাঁর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম কার্যকাল ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলেন। পুরো সময়টাই ছিল বিতর্কিত।
২০১২ সালে বিস্ময়করভাবে রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটে আবের। এরপর টানা ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। পরে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
জাপানে ভয়ানক মন্দার মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেন শিনজো আবে। তাঁর অর্থনৈতিক নীতি—আর্থিক সহজীকরণ, রাজস্ব প্রণোদনা এবং কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। এসব কারণে একটি দুর্বল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব তাঁকে দেওয়া হয়।
২০১১ সালে তোহোকুতে বিধ্বংসী ভূমিকম্প এবং সুনামি থেকে জাপানের পুনরুদ্ধারের তত্ত্বাবধান করেছিলেন আবে। এই দুর্যোগে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এই ভূমিকম্পের কারণেই ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির ব্যাপক ক্ষতি হয়। সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানির বিস্তার নিয়ে সারা বিশ্বেই উদ্বেগ দেখা দেয়।
২০২০ সালে কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের কথা বলে পদত্যাগ করেন আবে। অন্ত্রের রোগের কারণে ২০০৭ সালেও পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
আবের স্থলাভিষিক্ত হন ঘনিষ্ঠ দলীয় মিত্র ইয়োশিহিদে সুগা। কিন্তু এরপরও জাপানের রাজনীতিতে একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনিই ছিলেন।
শিনজো আবে জাপানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিনতারো আবের ছেলে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নোবুসুকে কিশির নাতি। ফলে তাঁকে বলা যেতে পারে রাজনৈতিক রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী।
১৯৯৩ সালে আবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তিনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি তাঁকে প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন।
২০০৬ সালে জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন শিনজো আবে। এর পরপরই জাপানের শীর্ষ ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দ্রুতই উত্থান ঘটে তাঁর।
কিন্তু ধারাবাহিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আবেকে বেশ চাপে ফেলে। রেকর্ড পরিমাণ পেনশন সুবিধা ছাঁটাই করে তাঁর সরকার। এতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ বিপাকে পড়ে। এই সিদ্ধান্ত তাঁর প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের আঘাতের কারণ হয়।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে এলডিপি বড় ধাক্কা খায়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের কারণে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ২০১২ সালে আবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এসে বলেন, কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই শুধু ওষুধ সেবনে রোগটি কাটিয়ে উঠেছেন।
২০১৪ এবং ২০১৭ সালে আবে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এই ধারাবাহিক বিজয় তাঁকে জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রিত্ব এনে দেয়।
শিনজো আবের নীতির কারণেই জনপ্রিয়তা বেশ ওঠানামা করেছে। কিন্তু এলডিপিতে তাঁর প্রভাব তাঁকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতায় পরিণত করে। এমনকি দলের নেতা হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়।
আগ্রাসী প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র নীতির কারণে পরিচিত ছিলেন শিনজো আবে। দ্বিতীয় যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন তিনি। জাপানের সেনাবাহিনীকে বলা হয় সেলফ ডিফেন্স ফোর্স। সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে একটি ধারায় বলা আছে, বিশ্বশান্তির জন্য যুদ্ধ বেআইনি। জাপানের যে সশস্ত্র বাহিনী তারা মূলত অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে। এ বাহিনীতে ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং পরমাণু অস্ত্রের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যুদ্ধ নয় বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হবে ন্যায় ও শৃঙ্খলার মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালের ৩ মে এ সংবিধান কার্যকর হয়। যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই এ সংবিধান গ্রহণ করতে বাধ্য হয় জাপান সরকার।
জাপানের রক্ষণশীলেরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ প্রভাবে প্রণীত এ সংবিধান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সেনাদের অপমানজনক পরাজয়ের স্মারক।
আবের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে টোকিওর ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শনে যাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধের সময়কার জাপানের সামরিকবাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত সমাধিক্ষেত্র এটি।
বারবার এই সমাধি পরিদর্শন জাপানের বামপন্থী দলগুলোকেও বেশ বিব্রত করেছে। বামপন্থীরা প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণকে যুদ্ধের সময় জাপানি নৃশংসতাকে অনুমোদন দেওয়ার একটি চেষ্টা হিসেবে দেখেছে।
২০১৫ সালে শিনজো আবে ‘সম্মিলিত আত্মরক্ষার’ অধিকারের জন্য সংবিধান সংশোধনের চাপ দেন। বৈদেশিক আক্রমণের মুখে আত্মরক্ষা এবং মিত্রদের রক্ষার জন্য নিজ ভূখণ্ডের বাইরে জাপানি সেনা মোতায়েনের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন তিনি।
জাপানের প্রতিবেশী দেশ এবং এমনকি জাপানি জনসাধারণের বিরোধিতা সত্ত্বেও জাপানের সংসদ এই বিতর্কিত সংবিধান সংশোধন বিল পাস করে।
অবশ্য শিনজো আবের জাপানের সামরিক বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধন করার বৃহত্তর লক্ষ্য অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। আবের এই পদক্ষেপ এখনো জাপানে একটি বিতর্কিত জাতিকে বিভক্তকারী ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে।
এ ছাড়া বিরোধপূর্ণ দ্বীপমালা যেটিকে জাপান বলে ‘উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল’—সেটি নিয়ন্ত্রণ ফেরাতেও সক্ষম হননি শিনজো আবে। হোক্কাইদোর উত্তর প্রিফেকচারের কাছে এই দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান। জাপান এবং রাশিয়া উভয়ই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শিনজো আবের সম্পর্কও এখানে উল্লেখযোগ্য। বাণিজ্য শুল্কের চাপে পড়া মার্কিন অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে জাপানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি সমর্থনের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কৃতিত্বও তাঁকে দেন ট্রাম্প। যদিও ওকিনাওয়া দ্বীপে মার্কিন সেনাদের হাতে স্থানীয় অধিবাসীদের নিপীড়ন এমনকি ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে দুটি বাণিজ্য চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় পণ্যে প্রবেশাধিকার সহজ, কোটা সম্প্রসারণ এবং ট্যারিফ কমানো হয়।
অর্থনীতিতে আবের সিগনেচার নীতি ‘আবেনোমিক্স’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এই নীতি তাঁর প্রথম মেয়াদে জাপানকে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসতে সহায়তা করেছিল।
নীতির মধ্যে অন্যতম—স্বল্পমেয়াদি ঋণাত্মক সুদের হার। এ নীতি ভোক্তা এবং কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণ নেওয়া এবং খরচ করা সহজ করে তোলে। অবকাঠামোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর বিরতির মতো আরও আর্থিক প্রণোদনা এবং সংস্কার আরও বেশি নারীকে কর্মশক্তিতে যুক্ত করেছিল। জনবল সংকট কমাতে এবং নতুন উদ্যোগ উৎসাহিত করতে অভিবাসীদের উৎসাহিত করেছিল আবেনোমিক্স।
কিন্তু তাঁর এ প্রচেষ্টা বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় যখন ২০২০ সালের বসন্তে জাপান আবার মন্দার মুখে পড়ে। আগের ও পরের মন্দা আবের এই নীতি কৌশলের কার্যকারিতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা নিয়ে সারা দেশে উদ্বেগের কারণে আবের জনপ্রিয়তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমালোচকেরা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাড়ানোর লক্ষ্যে আবের প্রচারণাগুলো নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
সমালোচকেরা আরও বলেন, অ্যাবেনমিক্সের অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে—কর্মক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন, স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ এবং অস্বাস্থ্যকর কাজের সংস্কৃতি পরিবর্তন—এসব অধরাই রয়ে গেছে।
পদত্যাগ এবং মৃত্যু
২০২০ সালের ২৮ আগস্ট আবের পদত্যাগের ঘোষণা এলডিপিকে অভ্যন্তরীণ বিরোধের দিকে ঠেলে দেয়। এরপরও আবে তাঁর উত্তরাধিকারীর নাম বলতে অস্বীকার করেন। অবশেষে প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং দীর্ঘদিনের মন্ত্রিসভার সদস্য ইয়োশিহিদে সুগা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে এলডিপিতে সুগার স্থলাভিষিক্ত করার পরও শিনজো আবে জাপানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন।
শুক্রবার (৮ জুলাই) দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নারাতে জাপানের উচ্চকক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন আবে। বক্তৃতা দেওয়ার সময় একজন বন্দুকধারী তাঁকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি করে। ৪১ বছর বয়সী ওই হামলাকারী জাপানের স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর (জাপানের সামরিক বাহিনী) সাবেক সদস্য বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাহিনী থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
হাসপাতালে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর শিনজো আবে মারা যান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন শিনজো আবে। আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর অর্থনৈতিক নীতি ‘অ্যাবেনোমিক্স’ নামে খ্যাতি পেয়েছিল।
একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে তাঁর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম কার্যকাল ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলেন। পুরো সময়টাই ছিল বিতর্কিত।
২০১২ সালে বিস্ময়করভাবে রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটে আবের। এরপর টানা ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। পরে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
জাপানে ভয়ানক মন্দার মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেন শিনজো আবে। তাঁর অর্থনৈতিক নীতি—আর্থিক সহজীকরণ, রাজস্ব প্রণোদনা এবং কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। এসব কারণে একটি দুর্বল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব তাঁকে দেওয়া হয়।
২০১১ সালে তোহোকুতে বিধ্বংসী ভূমিকম্প এবং সুনামি থেকে জাপানের পুনরুদ্ধারের তত্ত্বাবধান করেছিলেন আবে। এই দুর্যোগে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এই ভূমিকম্পের কারণেই ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির ব্যাপক ক্ষতি হয়। সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানির বিস্তার নিয়ে সারা বিশ্বেই উদ্বেগ দেখা দেয়।
২০২০ সালে কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের কথা বলে পদত্যাগ করেন আবে। অন্ত্রের রোগের কারণে ২০০৭ সালেও পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
আবের স্থলাভিষিক্ত হন ঘনিষ্ঠ দলীয় মিত্র ইয়োশিহিদে সুগা। কিন্তু এরপরও জাপানের রাজনীতিতে একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনিই ছিলেন।
শিনজো আবে জাপানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিনতারো আবের ছেলে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী নোবুসুকে কিশির নাতি। ফলে তাঁকে বলা যেতে পারে রাজনৈতিক রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী।
১৯৯৩ সালে আবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তিনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি তাঁকে প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন।
২০০৬ সালে জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন শিনজো আবে। এর পরপরই জাপানের শীর্ষ ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দ্রুতই উত্থান ঘটে তাঁর।
কিন্তু ধারাবাহিক রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আবেকে বেশ চাপে ফেলে। রেকর্ড পরিমাণ পেনশন সুবিধা ছাঁটাই করে তাঁর সরকার। এতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ বিপাকে পড়ে। এই সিদ্ধান্ত তাঁর প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের আঘাতের কারণ হয়।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে এলডিপি বড় ধাক্কা খায়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগের কারণে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ২০১২ সালে আবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে এসে বলেন, কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই শুধু ওষুধ সেবনে রোগটি কাটিয়ে উঠেছেন।
২০১৪ এবং ২০১৭ সালে আবে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এই ধারাবাহিক বিজয় তাঁকে জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রিত্ব এনে দেয়।
শিনজো আবের নীতির কারণেই জনপ্রিয়তা বেশ ওঠানামা করেছে। কিন্তু এলডিপিতে তাঁর প্রভাব তাঁকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতায় পরিণত করে। এমনকি দলের নেতা হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়।
আগ্রাসী প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র নীতির কারণে পরিচিত ছিলেন শিনজো আবে। দ্বিতীয় যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন তিনি। জাপানের সেনাবাহিনীকে বলা হয় সেলফ ডিফেন্স ফোর্স। সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে একটি ধারায় বলা আছে, বিশ্বশান্তির জন্য যুদ্ধ বেআইনি। জাপানের যে সশস্ত্র বাহিনী তারা মূলত অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে। এ বাহিনীতে ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং পরমাণু অস্ত্রের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যুদ্ধ নয় বিশ্বে শান্তি স্থাপিত হবে ন্যায় ও শৃঙ্খলার মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালের ৩ মে এ সংবিধান কার্যকর হয়। যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই এ সংবিধান গ্রহণ করতে বাধ্য হয় জাপান সরকার।
জাপানের রক্ষণশীলেরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ প্রভাবে প্রণীত এ সংবিধান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সেনাদের অপমানজনক পরাজয়ের স্মারক।
আবের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে টোকিওর ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র পরিদর্শনে যাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধের সময়কার জাপানের সামরিকবাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত সমাধিক্ষেত্র এটি।
বারবার এই সমাধি পরিদর্শন জাপানের বামপন্থী দলগুলোকেও বেশ বিব্রত করেছে। বামপন্থীরা প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণকে যুদ্ধের সময় জাপানি নৃশংসতাকে অনুমোদন দেওয়ার একটি চেষ্টা হিসেবে দেখেছে।
২০১৫ সালে শিনজো আবে ‘সম্মিলিত আত্মরক্ষার’ অধিকারের জন্য সংবিধান সংশোধনের চাপ দেন। বৈদেশিক আক্রমণের মুখে আত্মরক্ষা এবং মিত্রদের রক্ষার জন্য নিজ ভূখণ্ডের বাইরে জাপানি সেনা মোতায়েনের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকেন তিনি।
জাপানের প্রতিবেশী দেশ এবং এমনকি জাপানি জনসাধারণের বিরোধিতা সত্ত্বেও জাপানের সংসদ এই বিতর্কিত সংবিধান সংশোধন বিল পাস করে।
অবশ্য শিনজো আবের জাপানের সামরিক বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধন করার বৃহত্তর লক্ষ্য অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। আবের এই পদক্ষেপ এখনো জাপানে একটি বিতর্কিত জাতিকে বিভক্তকারী ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে।
এ ছাড়া বিরোধপূর্ণ দ্বীপমালা যেটিকে জাপান বলে ‘উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল’—সেটি নিয়ন্ত্রণ ফেরাতেও সক্ষম হননি শিনজো আবে। হোক্কাইদোর উত্তর প্রিফেকচারের কাছে এই দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান। জাপান এবং রাশিয়া উভয়ই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শিনজো আবের সম্পর্কও এখানে উল্লেখযোগ্য। বাণিজ্য শুল্কের চাপে পড়া মার্কিন অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে জাপানে মার্কিন সেনা উপস্থিতি সমর্থনের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কৃতিত্বও তাঁকে দেন ট্রাম্প। যদিও ওকিনাওয়া দ্বীপে মার্কিন সেনাদের হাতে স্থানীয় অধিবাসীদের নিপীড়ন এমনকি ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে দুটি বাণিজ্য চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় পণ্যে প্রবেশাধিকার সহজ, কোটা সম্প্রসারণ এবং ট্যারিফ কমানো হয়।
অর্থনীতিতে আবের সিগনেচার নীতি ‘আবেনোমিক্স’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এই নীতি তাঁর প্রথম মেয়াদে জাপানকে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসতে সহায়তা করেছিল।
নীতির মধ্যে অন্যতম—স্বল্পমেয়াদি ঋণাত্মক সুদের হার। এ নীতি ভোক্তা এবং কোম্পানিগুলোর জন্য ঋণ নেওয়া এবং খরচ করা সহজ করে তোলে। অবকাঠামোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর বিরতির মতো আরও আর্থিক প্রণোদনা এবং সংস্কার আরও বেশি নারীকে কর্মশক্তিতে যুক্ত করেছিল। জনবল সংকট কমাতে এবং নতুন উদ্যোগ উৎসাহিত করতে অভিবাসীদের উৎসাহিত করেছিল আবেনোমিক্স।
কিন্তু তাঁর এ প্রচেষ্টা বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় যখন ২০২০ সালের বসন্তে জাপান আবার মন্দার মুখে পড়ে। আগের ও পরের মন্দা আবের এই নীতি কৌশলের কার্যকারিতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা নিয়ে সারা দেশে উদ্বেগের কারণে আবের জনপ্রিয়তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমালোচকেরা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাড়ানোর লক্ষ্যে আবের প্রচারণাগুলো নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
সমালোচকেরা আরও বলেন, অ্যাবেনমিক্সের অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে—কর্মক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়ন, স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ এবং অস্বাস্থ্যকর কাজের সংস্কৃতি পরিবর্তন—এসব অধরাই রয়ে গেছে।
পদত্যাগ এবং মৃত্যু
২০২০ সালের ২৮ আগস্ট আবের পদত্যাগের ঘোষণা এলডিপিকে অভ্যন্তরীণ বিরোধের দিকে ঠেলে দেয়। এরপরও আবে তাঁর উত্তরাধিকারীর নাম বলতে অস্বীকার করেন। অবশেষে প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং দীর্ঘদিনের মন্ত্রিসভার সদস্য ইয়োশিহিদে সুগা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে এলডিপিতে সুগার স্থলাভিষিক্ত করার পরও শিনজো আবে জাপানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন।
শুক্রবার (৮ জুলাই) দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নারাতে জাপানের উচ্চকক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন আবে। বক্তৃতা দেওয়ার সময় একজন বন্দুকধারী তাঁকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি করে। ৪১ বছর বয়সী ওই হামলাকারী জাপানের স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর (জাপানের সামরিক বাহিনী) সাবেক সদস্য বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাহিনী থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
হাসপাতালে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর শিনজো আবে মারা যান।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে তাঁর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম কার্যকাল ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলেন। পুরো সময়টাই ছিল বিতর্কিত।
০৮ জুলাই ২০২২
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে তাঁর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম কার্যকাল ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলেন। পুরো সময়টাই ছিল বিতর্কিত।
০৮ জুলাই ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে তাঁর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম কার্যকাল ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলেন। পুরো সময়টাই ছিল বিতর্কিত।
০৮ জুলাই ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

একজন রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে শিনজো আবে তাঁর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম কার্যকাল ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। ২০০৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলেন। পুরো সময়টাই ছিল বিতর্কিত।
০৮ জুলাই ২০২২
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে