
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে সৎভাবে আলোচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হতে দেখতে চায়, সত্যিই তাই।’ ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সংঘাতে মস্কোর অবস্থান শক্তিশালী। রাশিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা অনেক এলাকা দখল করেছে। সুতরাং, (আলোচনার শর্ত নির্ধারণের) তাস তাদের হাতেই।’
২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চান। কিন্তু তার পরও, গত ১০ দিনে তিনি যেভাবে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পথ তৈরি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা চোখ ধাঁধানো। এই বিষয়টি আমেরিকার পশ্চিমা মিত্রদের হতবাক করেছে এবং ন্যাটো ঐক্যের ভাঙন ধরার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।
ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ, সৌদি আরবে তাঁর কূটনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কিথ কেলোগকে কিয়েভে পাঠিয়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি, যাতে তারা সমঝোতার পথে হাঁটে।
এ ছাড়া, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তীব্র সমালোচনা করেছেন, তাঁকে ‘একনায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের ভাষায়, জেলেনস্কি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছেন এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য মূলত দায়ী জেলেনস্কিই।
এই অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতির এক নাটকীয় মোড়। তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নীতি গ্রহণ করেছিল তার থেকে ট্রাম্পের অবস্থান অনেক দূরে। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের প্রশাসন কিয়েভের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, মস্কোকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কৌশল অনুসরণ করেছিল।
কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে দেখছে, যা অন্তত গত দুই দশকে করা হয়নি। অন্তত ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় পুতিনের আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্তও নয়। সে সময় থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো পুতিনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক হতে শুরু করে।
এই পরিবর্তন শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেই নয়, বরং ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কয়েক দশক ধরে ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কের ভিত্তি যতটা শক্তিশালী ছিল, তা এখন তীব্র পরীক্ষার মুখে।
ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের মিত্ররা, কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা এবং ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন যে, তিনি ‘বলপ্রয়োগের মাধ্যমে শান্তি’ অর্জনের নীতির অনুসরণ করবেন। কিন্তু এর পরিবর্তে, তিনি দ্রুতই মস্কোর ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। এই বিষয়টি বিশ্লেষকদের বিভ্রান্ত করেছে এবং তারা বুঝতে চেষ্টা করছেন যে, তাঁর নতুন কৌশল ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান বহুমেরুক বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকার অবস্থানের জন্য কী ইঙ্গিত বহন করছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির ট্রান্স-আটলান্টিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক আন্দ্রেয়া কেন্ডাল-টেইলর বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য হলো যেকোনো মূল্যে যুদ্ধের অবসান ঘটানো।’ কিন্তু ভবিষ্যতে এর সম্ভাব্য পরিণতি কী বা কেমন হতে পারে সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে না।
কেন্ডাল-টেইলর বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, পুতিন কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে ভবিষ্যতে আরও আগ্রাসনের পথ সুগম করবেন। এটি কেবল পুতিনের আরও তৎপর হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া কিছুই নয়।’
কোলোরাডোর ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জেসন ক্রো ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘বেশির ভাগ যুদ্ধের মতো’, ইউক্রেন যুদ্ধও শেষ পর্যন্ত আলোচনা টেবিলে গিয়ে গড়াবে, তবে ট্রাম্প সঠিক পদ্ধতিতে এটি করছেন না। তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষ আলোচনার শুরুতেই ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে দেখা করে ট্রাম্প ভুল বার্তা দিয়েছেন এবং পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন।’
জেসন ক্রো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়া ও ইউক্রেন নীতি অস্থির এবং অসংগতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নীতি প্রতিদিন টুইটের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্যরা স্পষ্টতই পরস্পরবিরোধী বিবৃতি দিচ্ছেন এবং কখনো কখনো একে অপরের পরিপন্থী কাজ করছেন।’
মার্কিন-রাশিয়া পুনর্মিলনের এই ঝোড়ো প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন আলোচনা শুরুর মাধ্যমে। মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তির জন্য একটি বন্দী বিনিময় চুক্তির ব্যবস্থা করতে এই আলোচনা শুরু করা হয়েছিল। ২০২১ সালের আগস্টে ফোগেলকে রাশিয়ায় গাঁজা নিয়ে প্রবেশের অভিযোগে আটক করা হয়।
উইটকফ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মস্কো যান এবং ফোগেলকে মুক্ত করে দেশে ফেরত আনেন। একই সঙ্গে তিনি সেখানে পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর উইটকফ বলেন, ‘এটির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমি মনে করি, এটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের তরফ থেকে সৎ সদিচ্ছার পরিচায়ক ছিল...এবং এটি অনেক ইতিবাচক দিকের সূচনা করেছে।’
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত সপ্তাহে গাজা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য আগেই রিয়াদে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য সৌদি আরবের রাজধানী ছিল যৌক্তিক স্থান। গত মঙ্গলবার সৌদি কর্মকর্তারা রিয়াদের দিরিয়াহ প্রাসাদে আমেরিকা ও রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের স্বাগত জানায়। সেখানে উভয় পক্ষ সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে আলোচনা করে।
পরে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা অনুভব করেছেন যে—রুশ কর্মকর্তারা খোলা মন নিয়ে আলোচনা করেছেন, ঐতিহাসিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বক্তৃতা দেননি। আলোচনার পর রুবিও বলেন, ‘আজকের আলোচনার পর আমি নিশ্চিত যে, তাঁরা (রাশিয়া) একটি গুরুতর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে ইচ্ছুক, যাতে বোঝা যায় কীভাবে, কত দ্রুত এবং কোন পদ্ধতির মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায়। তবে শেষ পর্যন্ত এটি নির্ভর করবে সংঘাতে জড়িত প্রতিটি পক্ষের কিছু বিষয় মেনে নেওয়ার সদিচ্ছার ওপর।’
জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়া রিপাবলিকানদের মধ্যে কিছু আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের রাশিয়া নীতির কারণে উদ্বিগ্ন। লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর জন কেনেডি বলেন, ‘হোয়াইট হাউস যদি বলে যে, ইউক্রেন এই যুদ্ধ শুরু করেছে, তাহলে আমি একমত নই। আমি মনে করি, ভ্লাদিমির পুতিনই যুদ্ধ শুরু করেছেন। এ ছাড়া, তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি, ভ্লাদিমির পুতিন একজন গ্যাংস্টার।’
তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন এবং দলের ভেতরে যেকোনো সমালোচনা শুরুর আগেই দমনের চেষ্টা করেছেন। তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন, তারা এমন একটি সংঘাতের সমাপ্তি টানতে চাইছেন যা তিন বছর ধরে চলমান।
গত বৃহস্পতিবার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি রাশিয়ার সঙ্গে কথা না বলে কীভাবে যুদ্ধ শেষ করবেন? যদি সত্যিই সংঘাত বন্ধ করতে চান, তাহলে লড়াইয়ে জড়িত প্রতিটি পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শান্তি রাশিয়ার স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ইউক্রেনের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ইউরোপের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শান্তি আমেরিকার জনগণের স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।’
উইটকফের মস্কো সফরের আগে ট্রাম্প ও তাঁর দল আশঙ্কা করছিল যে, পুতিন হয়তো আলোচনার টেবিলে আসতে জেলেনস্কির তুলনায় কম আগ্রহী। এমনকি তাঁরা মস্কোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে রুশ জ্বালানি খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার হুমকিও দিয়েছিলেন।
কিন্তু গত সপ্তাহে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় ট্রাম্পের মনোভাব জেলেনস্কির প্রতি নেতিবাচক হয়ে ওঠে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ব্যবসার আয়কৃত রাজস্বের অর্ধেক পেত।
হোয়াইট হাউসে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি খুবই হতাশ, কারণ তিনি আলোচনার টেবিলে আসেননি, তিনি (জেলেনস্কি) এই সুযোগ গ্রহণ করতে রাজি হননি। আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হবেন এবং আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত ঘটবে।’
ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক সিগনাম গ্লোবাল অ্যাডভাইজার্সের গ্লোবাল পলিসি গবেষণা প্রধান অ্যান্ড্রু বিশপ মনে করেন, ট্রাম্প উপলব্ধি করেছেন, যুদ্ধের স্থবিরতা ভাঙতে তাঁকে ‘নাটকীয় কিছু’ করতে হবে এবং তিনি রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করাকে বেশি সুবিধাজনক মনে করেছেন। তিনি বলেন, ‘জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্পের অনীহা এবং রাশিয়ার ওপর কঠোর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক খরচ বিবেচনায় নিয়ে, তিনি ইউক্রেনকেই টার্গেট করেছেন।’
জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সমালোচনা অনেকের কাছে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক ঠেকছে। ট্রাম্পের প্রথম দফা শাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বোল্টন বলেন, ‘তিনি মনে করেন, পুতিন ও তিনি বন্ধু, আর তিনি জেলেনস্কিকে পছন্দ করেন না। ট্রাম্প এমন সব কথা বলছেন, যা রাশিয়া চায় বিশ্ব বিশ্বাস করুক, অথচ সেগুলো সত্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবার যখন আপনি এই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করবেন, ততবার দেখবেন ট্রাম্প পুতিনকে আরও বড় সুবিধা দিয়ে দিচ্ছেন।’
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ইউরোপ, রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক ম্যাক্স বার্গম্যান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত একটি গণতান্ত্রিক দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে, যে দেশটি স্বাধীনতার জন্য লড়ছে, অথচ যার প্রতিপক্ষ একনায়ক এবং আমাদের দীর্ঘদিনের শত্রু।’
বার্গম্যান প্রশ্ন তোলেন, ‘এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কী পাচ্ছে? রাশিয়া কী ধরনের ছাড় দিচ্ছে? আমরা রাশিয়া থেকে কী আদায় করতে পারছি?’
যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে কী অর্জন করবে, ইউরোপের অর্জন কী হবে, রাশিয়া কতটা লাভবান হবে এবং সর্বোপরি ইউক্রেন ও ইউক্রেনের জনগণ কী পাবে—এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে সৎভাবে আলোচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হতে দেখতে চায়, সত্যিই তাই।’ ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সংঘাতে মস্কোর অবস্থান শক্তিশালী। রাশিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা অনেক এলাকা দখল করেছে। সুতরাং, (আলোচনার শর্ত নির্ধারণের) তাস তাদের হাতেই।’
২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চান। কিন্তু তার পরও, গত ১০ দিনে তিনি যেভাবে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পথ তৈরি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা চোখ ধাঁধানো। এই বিষয়টি আমেরিকার পশ্চিমা মিত্রদের হতবাক করেছে এবং ন্যাটো ঐক্যের ভাঙন ধরার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।
ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ, সৌদি আরবে তাঁর কূটনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কিথ কেলোগকে কিয়েভে পাঠিয়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি, যাতে তারা সমঝোতার পথে হাঁটে।
এ ছাড়া, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তীব্র সমালোচনা করেছেন, তাঁকে ‘একনায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের ভাষায়, জেলেনস্কি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছেন এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য মূলত দায়ী জেলেনস্কিই।
এই অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতির এক নাটকীয় মোড়। তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নীতি গ্রহণ করেছিল তার থেকে ট্রাম্পের অবস্থান অনেক দূরে। ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের প্রশাসন কিয়েভের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, মস্কোকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কৌশল অনুসরণ করেছিল।
কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে দেখছে, যা অন্তত গত দুই দশকে করা হয়নি। অন্তত ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় পুতিনের আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্তও নয়। সে সময় থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো পুতিনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক হতে শুরু করে।
এই পরিবর্তন শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেই নয়, বরং ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কয়েক দশক ধরে ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কের ভিত্তি যতটা শক্তিশালী ছিল, তা এখন তীব্র পরীক্ষার মুখে।
ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের মিত্ররা, কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা এবং ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন যে, তিনি ‘বলপ্রয়োগের মাধ্যমে শান্তি’ অর্জনের নীতির অনুসরণ করবেন। কিন্তু এর পরিবর্তে, তিনি দ্রুতই মস্কোর ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। এই বিষয়টি বিশ্লেষকদের বিভ্রান্ত করেছে এবং তারা বুঝতে চেষ্টা করছেন যে, তাঁর নতুন কৌশল ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান বহুমেরুক বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকার অবস্থানের জন্য কী ইঙ্গিত বহন করছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির ট্রান্স-আটলান্টিক সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক আন্দ্রেয়া কেন্ডাল-টেইলর বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য হলো যেকোনো মূল্যে যুদ্ধের অবসান ঘটানো।’ কিন্তু ভবিষ্যতে এর সম্ভাব্য পরিণতি কী বা কেমন হতে পারে সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে না।
কেন্ডাল-টেইলর বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, পুতিন কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে ভবিষ্যতে আরও আগ্রাসনের পথ সুগম করবেন। এটি কেবল পুতিনের আরও তৎপর হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া কিছুই নয়।’
কোলোরাডোর ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জেসন ক্রো ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘বেশির ভাগ যুদ্ধের মতো’, ইউক্রেন যুদ্ধও শেষ পর্যন্ত আলোচনা টেবিলে গিয়ে গড়াবে, তবে ট্রাম্প সঠিক পদ্ধতিতে এটি করছেন না। তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষ আলোচনার শুরুতেই ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে দেখা করে ট্রাম্প ভুল বার্তা দিয়েছেন এবং পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন।’
জেসন ক্রো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়া ও ইউক্রেন নীতি অস্থির এবং অসংগতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নীতি প্রতিদিন টুইটের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্যরা স্পষ্টতই পরস্পরবিরোধী বিবৃতি দিচ্ছেন এবং কখনো কখনো একে অপরের পরিপন্থী কাজ করছেন।’
মার্কিন-রাশিয়া পুনর্মিলনের এই ঝোড়ো প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন আলোচনা শুরুর মাধ্যমে। মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে মুক্তির জন্য একটি বন্দী বিনিময় চুক্তির ব্যবস্থা করতে এই আলোচনা শুরু করা হয়েছিল। ২০২১ সালের আগস্টে ফোগেলকে রাশিয়ায় গাঁজা নিয়ে প্রবেশের অভিযোগে আটক করা হয়।
উইটকফ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মস্কো যান এবং ফোগেলকে মুক্ত করে দেশে ফেরত আনেন। একই সঙ্গে তিনি সেখানে পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর উইটকফ বলেন, ‘এটির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমি মনে করি, এটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের তরফ থেকে সৎ সদিচ্ছার পরিচায়ক ছিল...এবং এটি অনেক ইতিবাচক দিকের সূচনা করেছে।’
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত সপ্তাহে গাজা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য আগেই রিয়াদে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য সৌদি আরবের রাজধানী ছিল যৌক্তিক স্থান। গত মঙ্গলবার সৌদি কর্মকর্তারা রিয়াদের দিরিয়াহ প্রাসাদে আমেরিকা ও রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের স্বাগত জানায়। সেখানে উভয় পক্ষ সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে আলোচনা করে।
পরে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা অনুভব করেছেন যে—রুশ কর্মকর্তারা খোলা মন নিয়ে আলোচনা করেছেন, ঐতিহাসিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বক্তৃতা দেননি। আলোচনার পর রুবিও বলেন, ‘আজকের আলোচনার পর আমি নিশ্চিত যে, তাঁরা (রাশিয়া) একটি গুরুতর প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে ইচ্ছুক, যাতে বোঝা যায় কীভাবে, কত দ্রুত এবং কোন পদ্ধতির মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায়। তবে শেষ পর্যন্ত এটি নির্ভর করবে সংঘাতে জড়িত প্রতিটি পক্ষের কিছু বিষয় মেনে নেওয়ার সদিচ্ছার ওপর।’
জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়া রিপাবলিকানদের মধ্যে কিছু আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের রাশিয়া নীতির কারণে উদ্বিগ্ন। লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর জন কেনেডি বলেন, ‘হোয়াইট হাউস যদি বলে যে, ইউক্রেন এই যুদ্ধ শুরু করেছে, তাহলে আমি একমত নই। আমি মনে করি, ভ্লাদিমির পুতিনই যুদ্ধ শুরু করেছেন। এ ছাড়া, তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি, ভ্লাদিমির পুতিন একজন গ্যাংস্টার।’
তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন এবং দলের ভেতরে যেকোনো সমালোচনা শুরুর আগেই দমনের চেষ্টা করেছেন। তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন, তারা এমন একটি সংঘাতের সমাপ্তি টানতে চাইছেন যা তিন বছর ধরে চলমান।
গত বৃহস্পতিবার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘আপনি রাশিয়ার সঙ্গে কথা না বলে কীভাবে যুদ্ধ শেষ করবেন? যদি সত্যিই সংঘাত বন্ধ করতে চান, তাহলে লড়াইয়ে জড়িত প্রতিটি পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শান্তি রাশিয়ার স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ইউক্রেনের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ইউরোপের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শান্তি আমেরিকার জনগণের স্বার্থের জন্য অপরিহার্য।’
উইটকফের মস্কো সফরের আগে ট্রাম্প ও তাঁর দল আশঙ্কা করছিল যে, পুতিন হয়তো আলোচনার টেবিলে আসতে জেলেনস্কির তুলনায় কম আগ্রহী। এমনকি তাঁরা মস্কোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে রুশ জ্বালানি খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার হুমকিও দিয়েছিলেন।
কিন্তু গত সপ্তাহে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় ট্রাম্পের মনোভাব জেলেনস্কির প্রতি নেতিবাচক হয়ে ওঠে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ব্যবসার আয়কৃত রাজস্বের অর্ধেক পেত।
হোয়াইট হাউসে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রতি খুবই হতাশ, কারণ তিনি আলোচনার টেবিলে আসেননি, তিনি (জেলেনস্কি) এই সুযোগ গ্রহণ করতে রাজি হননি। আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হবেন এবং আমি আশা করি এটি খুব দ্রুত ঘটবে।’
ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক সিগনাম গ্লোবাল অ্যাডভাইজার্সের গ্লোবাল পলিসি গবেষণা প্রধান অ্যান্ড্রু বিশপ মনে করেন, ট্রাম্প উপলব্ধি করেছেন, যুদ্ধের স্থবিরতা ভাঙতে তাঁকে ‘নাটকীয় কিছু’ করতে হবে এবং তিনি রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করাকে বেশি সুবিধাজনক মনে করেছেন। তিনি বলেন, ‘জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্পের অনীহা এবং রাশিয়ার ওপর কঠোর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক খরচ বিবেচনায় নিয়ে, তিনি ইউক্রেনকেই টার্গেট করেছেন।’
জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সমালোচনা অনেকের কাছে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক ঠেকছে। ট্রাম্পের প্রথম দফা শাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বোল্টন বলেন, ‘তিনি মনে করেন, পুতিন ও তিনি বন্ধু, আর তিনি জেলেনস্কিকে পছন্দ করেন না। ট্রাম্প এমন সব কথা বলছেন, যা রাশিয়া চায় বিশ্ব বিশ্বাস করুক, অথচ সেগুলো সত্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবার যখন আপনি এই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করবেন, ততবার দেখবেন ট্রাম্প পুতিনকে আরও বড় সুবিধা দিয়ে দিচ্ছেন।’
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ইউরোপ, রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক ম্যাক্স বার্গম্যান বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত একটি গণতান্ত্রিক দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে, যে দেশটি স্বাধীনতার জন্য লড়ছে, অথচ যার প্রতিপক্ষ একনায়ক এবং আমাদের দীর্ঘদিনের শত্রু।’
বার্গম্যান প্রশ্ন তোলেন, ‘এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কী পাচ্ছে? রাশিয়া কী ধরনের ছাড় দিচ্ছে? আমরা রাশিয়া থেকে কী আদায় করতে পারছি?’
যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে কী অর্জন করবে, ইউরোপের অর্জন কী হবে, রাশিয়া কতটা লাভবান হবে এবং সর্বোপরি ইউক্রেন ও ইউক্রেনের জনগণ কী পাবে—এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে সৎভাবে আলোচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে সৎভাবে আলোচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে সৎভাবে আলোচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন গত বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে সৎভাবে আলোচনা করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন কিনা?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে