
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। ৬ সপ্তাহের এই নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিসহ ছোট-বড় পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ জয় পেতে মোদির জনপ্রিয়তাকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। ‘অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মোদি’- এই মূলমন্ত্র নিয়েই বিজেপির ভারতীয়দের কাছে প্রচারণা চালাচ্ছে।
৫৪৩ আসনের লোকসভায় ৪ শতাধিক আসনে জিততে চায় বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫২ আসন জিতেছিল এই জোট। এবার চারশ আসনের মাইলফলক পার হতে স্থানীয় কৌশল ব্যবহার করছে বিজেপি। জনমত জরিপ বলছে, টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মোদি। তবে তাঁর দল ও জোটের জন্য ৪ শতাধিক আসন পাওয়া কঠিন। ইতিহাস বলছে, ভারতের একমাত্র দল হিসেবে কংগ্রেস একবার ৪ শতাধিক আসন পায়, সেটার পেছনেও ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের ভূমিকা ছিল।
এবার নির্বাচনে বাজিমাত করতে মোদি ও বিজেপির কৌশল নিয়ে জানতে এনডিএর নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি দিক ওঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—প্রবীণ বিরোধী নেতাদের হারাতে তারকাদের প্রার্থী করা, দক্ষিণ ভারতে বিরোধী দুর্গ ভাঙতে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া ও বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারতের ভোটারদের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ব্যবহার করে বিভাজন তৈরি করা।
বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই চলতি নির্বাচনে চার শতাধিক আসন জিতলে বিজেপি নিজস্ব কট্টরপন্থী এজেন্ডা আরও জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছে। আপাতদৃষ্টে তা সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেসঙ্গে মুসলিমদের লক্ষ্য করে ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা একক পারিবারিক আইন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুসলিমসহ নানা উপজাতি মানুষ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে ধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে বিয়ে ও উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সব আইন বদলে অভিন্ন আইন হবে। কিন্তু এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন, সেজন্য অন্তত লোকসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন থাকতে হবে। মূলত এ কারণেই বিজেপি ৪ শতাধিক আসন জিততে চায়।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রয়টার্সকে বলেন, শুধু নীতিগত বিষয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক ও আলোচনার অবসানের জন্যই মোদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চান।
তবে ভোটের প্রচারে থাকা বিজেপি নেতাদের কণ্ঠে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়ে তেমন আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠেনি। কারণ, দুই দফা ভোটগ্রহণে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। তবে দলটি পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারবে বলেই আশাবাদী।
দক্ষিণে জিততে বিজেপির কৌশল
‘কংগ্রেস পরিবারতান্ত্রিক’ বলে মোদির দল বিজেপি সব সময়ই অভিযোগ করে এসেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গান্ধী পরিবারের প্রাধান্য বজায় রয়েছে দলটিতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, কেরালার পাথানামথিত্তা আসনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা একে অ্যান্টনির ছেলে অনিল অ্যান্টনিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি ।
২০০৯ সালে এই আসন সৃষ্টির পর থেকেই কংগ্রেসের দখলে। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি খ্রিষ্টান প্রাধান্যের এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন এবং খ্রিষ্টান হয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলকে প্রতিনিধিত্ব করায় ছেলে অনিলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। অনিলের পাশে তাঁর বাবা না দাঁড়ালেও মোদি আছেন। গত মার্চে পাথানামথিত্তায় এসে অনিলের প্রশংসা করেন মোদি। কেবল এই আসন নয়, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ ভারতের ৫টি রাজ্যে ১৬ বার সফর করেছেন মোদি।
বিজেপির সভাপতি নাড্ডার মতে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইলে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে ভালো করতে হবে। এই রাজ্যগুলোতে ভারতের মোট ভোটের ২০ শতাংশ থাকলেও এরা প্রায় কখনোই বিজেপিকে ভোট দেয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এনডিএ দক্ষিণের পাঁচ রাজ্য—অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুর ১৩০ আসনের মধ্যে মাত্র ৩১টি পেয়েছিল। ভারতের এই অংশটি উত্তর ভারতের চেয়ে ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের দিক থেকে আলাদা। এসব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খ্রিষ্টান ও মুসলমান আছে।
কেরালায় বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সাধারণ সম্পাদক জিজি জোসেফ জানান, তাঁর দল রাজ্যে খ্রিষ্টান ভোটারদের অন্তত ১৮ শতাংশের ভোট জিততে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেটা কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিহাস বলে, সর্বশেষ নির্বাচনে বিজেপি কেরালায় একটি আসনও জেতেনি।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা জানিয়ে জিজি জোসেফ বলেন, ‘বিজেপি চার্চের পাদ্রীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছে।’ এ সময় তিনি জানান, রাজ্যে তাঁর দলে এখন ১১ হাজার সক্রিয় কর্মী আছে। তিনি বলেন, ‘একটা পরিবর্তন হয়েছে। খ্রিষ্টানরা এখন বিশ্বাস করতে চায় যে, বিজেপি তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে কেরালার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি অংশের সমর্থনে বিজেপির প্রার্থী হন অনিল অ্যান্টনি। এ বিষয়ে অনিল জানান, তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার মাধ্যমে বিজেপি সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকেও প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
কেরালার খ্রিষ্টান ভোটার জয়ন্ত জোসেফ জানান, তিনি বিজেপিকেই সমর্থন দেবেন। তাঁর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গণমাধ্যমের খবরে তিনি পড়েছেন—মুসলিমরা খ্রিষ্টান নারীদের বিয়ে করে তাদের ধর্মান্তরিত করছে। অথচ, মধ্যপন্থী হিন্দুরা পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ই মনে করেন। জয়ন্তর আরও বলেন, ‘কেরালা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য। কিন্তু এটিকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য হিসেবে বজায় রাখতে চাইলে মুসলিম জনসংখ্যা এবং তাদের ধর্মান্তরকরণের যে কৌশল সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোদির এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী রয়টার্সকে বলেছেন, এনডিএ জোট দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে অন্তত ৫০টি আসনে জিততে চায়। তবে কেরালার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্কসবাদী) জ্যেষ্ঠ নেতা কে অনিল কুমার মনে করেন, বিজেপি তাঁর রাজ্যে খুব একটা ভালো করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘বিজেপি হয়তো কিছু ইস্যুতে খ্রিষ্টানদের পক্ষ নেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু তাঁরা মৌলিকভাবে হিন্দুদের নিয়ে গঠিত হিন্দু স্বার্থের একটি দল।’
তারকা প্রার্থী
উত্তর ভারতের হিমাচল রাজ্যের মান্ডি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের দুর্গ ভাঙতে বিজেপি বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতকে বেছে নিয়েছে। কঙ্গনার বিপরীতে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং। এই আসনের বর্তমান এমপি প্রতিভা সিং, বিক্রমের মা।
বলিউডে মোটামুটি জায়গা করে নেওয়া কঙ্গনা রনৌত রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। যদিও তিনি নিজেকে ‘গর্বিত ডানপন্থী’ রাজনীতিবিদ বলেই উল্লেখ করে বেশির ভাগ সময়। নিকট অতীতে তিনি বলিউডে বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঘরানার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। রাজনীতিতে নবীন হলেও এই এই অভিনেত্রীর ওপর বিজেপির নেক নজর আছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে অন্তত ৫ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী লড়ছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ জন। যাই হোক, মান্ডিতে কে জিতবেন এমন পূর্বাভাস দিয়ে কোনো জরিপ এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে রাজনীতিতে নতুন কঙ্গনার পক্ষে ভোট পড়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
অঞ্জনা নেগি নামে এক প্রাক—প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা জানালেন, তিনি কঙ্গনাকেই ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। তাঁর মতে, কঙ্গনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও মোদি-সমর্থিত নতুন মুখকে ক্ষমতায় এনে এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্টের ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মিলন বৈষ্ণব বলেন, তারকাদের মাঠে নামানো এবং বিনোদন জগতের তারকাদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো বিজেপির জন্য তুলনামূলক নতুন। বিজেপি তৃণমূলে কর্মীভিত্তিক রাজনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
নিজের প্রার্থিতার ব্যাপারে রয়টার্সের সঙ্গে কঙ্গনা কথা না বললেও বিজেপির মুখপাত্র শাহজাদ পূনওয়ালা বলেছেন, ‘তিনি (কঙ্গনা) বলিউডে পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন। একই কাজ তিনি এখন রাজনীতিতেও করে যাচ্ছেন।’
তবে বিক্রমাদিত্য সিং বিজেপির নেতাদের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে তাঁকে রাজনীতির বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া দিয়েছে। আর তাই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ এখানে হালে পানি পাবে না।
উল্লেখ্য, কঙ্গনা রনৌত ছাড়াও বলিউড থেকে বিজেপির টিকিটে এবার লড়ছেন—হেমা মালিনি, অরুন গোভিল, রবি কিষান এবং মনোজ তিওয়ারি।
লোকসভা আসন পুনঃনির্ধারণের ফায়দা
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতি নির্বাচনের আগেই লোকসভা আসনের সীমানা জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুনঃ নির্ধারণ করে থাকে। আর তার ওপর ভিত্তি করেই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাজির দান জিততে চায় বিজেপি। যেমন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁর দল রাজ্যের ১৪ লোকসভা আসনের ১৩ টিতেই জিতবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৯ আসনে।
আসামে এত ভালো ফলাফলের প্রত্যাশার পেছনের কারণ হলো, আসন সীমানা পুনর্বণ্টন। ভারতের নির্বাচন কমিশন জনমিতির পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য নিয়মিত আসনের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করে। এমনটা করা হয় যেন, কোনো রাজনৈতিক দল জনমিতির কারণে অযাচিত সুবিধা লাভ করতে না পারে।
তবে খোদ এনডিএ এবং বিরোধী দলের ৭ নেতার মতে, নিকট অতীতে আসাম ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের পর থেকে কিছু কিছু অঞ্চলে আসনগুলোর—বিশেষ করে যেগুলোকে বিজেপি টার্গেট করেছে জেতার জন্য—সীমানা এমনভাবে বণ্টন করা হয়েছে যে, সেগুলোতে মুসলিম ভোটারের প্রাধান্য কমে গেছে।
আসামে এনডিএ জোট বারপেতা লোকসভা আসন জয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। সেখানে জোটের প্রার্থী ফনীভূষণ চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন সীমানায় বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলোর বেশির ভাগই হিন্দু অধ্যুষিত। তিনি বলেন, ‘আগে বারপেতায় মুসলিম প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে এই আসনে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এই পরিবর্তন আমার অনুকূলে কাজ করেছে।’
ফনীভূষণ চৌধুরীর অনুমান, বর্তমানে বারপেতা আসনে প্রায় ১২ লাখ হিন্দু ভোটার আছে এবং তাঁর লক্ষ্য হলো—উন্নয়নের প্রচারণা এবং আদি আসাবাসীর অধিকার রক্ষা করা। উল্লেখ্য, রাজ্যটিতে আদি আসামবাসী বলতে হিন্দুদেরই বোঝানো হয়।
বারপেতা আসনে বিজেপির বিপরীতে লড়ছেন কংগ্রেসের দীপ বয়ন। তিনি বলেন, বারপেতায় হিন্দু জনসংখ্যার হার ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে উঠে গেছে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি এখানে প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন-মেরুকরণ তৈরি করছে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের পাঁচটি লোকসভা আসনই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে তারপরও বিজেপি অন্তত একটি—অনন্তনাগ-রাজৌরি—আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ, ভারত সরকারের সর্বশেষ হিসাব বলছে, আসনটিতে ভোটার সংখ্যা গত নির্বাচনের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। যাদের অধিকাংশই হিন্দু বা অন্যান্য আঞ্চলিক গোত্রের। যা বিজেপিকে নির্বাচনে সুবিধা দেবে বলেই আশাবাদী দলটির আঞ্চলিক প্রধান রবিন্দর রায়না।
তবে আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি তুলনামূলক গরিব ও হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর ভারতে বিজেপিকে সুবিধা দিলেও দক্ষিণের ধনী ও সেক্যুলার রাজ্যগুলোতে তা হিতে বিপরীতই হতে পারে বলেই মনে করেন কার্নেগি এনডাউমেন্টের মিলন বৈষ্ণব।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। ৬ সপ্তাহের এই নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিসহ ছোট-বড় পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ জয় পেতে মোদির জনপ্রিয়তাকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। ‘অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মোদি’- এই মূলমন্ত্র নিয়েই বিজেপির ভারতীয়দের কাছে প্রচারণা চালাচ্ছে।
৫৪৩ আসনের লোকসভায় ৪ শতাধিক আসনে জিততে চায় বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫২ আসন জিতেছিল এই জোট। এবার চারশ আসনের মাইলফলক পার হতে স্থানীয় কৌশল ব্যবহার করছে বিজেপি। জনমত জরিপ বলছে, টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন মোদি। তবে তাঁর দল ও জোটের জন্য ৪ শতাধিক আসন পাওয়া কঠিন। ইতিহাস বলছে, ভারতের একমাত্র দল হিসেবে কংগ্রেস একবার ৪ শতাধিক আসন পায়, সেটার পেছনেও ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের ভূমিকা ছিল।
এবার নির্বাচনে বাজিমাত করতে মোদি ও বিজেপির কৌশল নিয়ে জানতে এনডিএর নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি দিক ওঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—প্রবীণ বিরোধী নেতাদের হারাতে তারকাদের প্রার্থী করা, দক্ষিণ ভারতে বিরোধী দুর্গ ভাঙতে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া ও বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারতের ভোটারদের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ব্যবহার করে বিভাজন তৈরি করা।
বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই চলতি নির্বাচনে চার শতাধিক আসন জিতলে বিজেপি নিজস্ব কট্টরপন্থী এজেন্ডা আরও জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছে। আপাতদৃষ্টে তা সাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য। সেসঙ্গে মুসলিমদের লক্ষ্য করে ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা একক পারিবারিক আইন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুসলিমসহ নানা উপজাতি মানুষ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে ধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে বিয়ে ও উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সব আইন বদলে অভিন্ন আইন হবে। কিন্তু এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন, সেজন্য অন্তত লোকসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন থাকতে হবে। মূলত এ কারণেই বিজেপি ৪ শতাধিক আসন জিততে চায়।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রয়টার্সকে বলেন, শুধু নীতিগত বিষয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক ও আলোচনার অবসানের জন্যই মোদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চান।
তবে ভোটের প্রচারে থাকা বিজেপি নেতাদের কণ্ঠে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়ে তেমন আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠেনি। কারণ, দুই দফা ভোটগ্রহণে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল খুবই কম। তবে দলটি পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারবে বলেই আশাবাদী।
দক্ষিণে জিততে বিজেপির কৌশল
‘কংগ্রেস পরিবারতান্ত্রিক’ বলে মোদির দল বিজেপি সব সময়ই অভিযোগ করে এসেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গান্ধী পরিবারের প্রাধান্য বজায় রয়েছে দলটিতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, কেরালার পাথানামথিত্তা আসনে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা একে অ্যান্টনির ছেলে অনিল অ্যান্টনিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি ।
২০০৯ সালে এই আসন সৃষ্টির পর থেকেই কংগ্রেসের দখলে। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি খ্রিষ্টান প্রাধান্যের এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন এবং খ্রিষ্টান হয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলকে প্রতিনিধিত্ব করায় ছেলে অনিলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। অনিলের পাশে তাঁর বাবা না দাঁড়ালেও মোদি আছেন। গত মার্চে পাথানামথিত্তায় এসে অনিলের প্রশংসা করেন মোদি। কেবল এই আসন নয়, গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ ভারতের ৫টি রাজ্যে ১৬ বার সফর করেছেন মোদি।
বিজেপির সভাপতি নাড্ডার মতে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চাইলে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে ভালো করতে হবে। এই রাজ্যগুলোতে ভারতের মোট ভোটের ২০ শতাংশ থাকলেও এরা প্রায় কখনোই বিজেপিকে ভোট দেয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এনডিএ দক্ষিণের পাঁচ রাজ্য—অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুর ১৩০ আসনের মধ্যে মাত্র ৩১টি পেয়েছিল। ভারতের এই অংশটি উত্তর ভারতের চেয়ে ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের দিক থেকে আলাদা। এসব রাজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খ্রিষ্টান ও মুসলমান আছে।
কেরালায় বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার সাধারণ সম্পাদক জিজি জোসেফ জানান, তাঁর দল রাজ্যে খ্রিষ্টান ভোটারদের অন্তত ১৮ শতাংশের ভোট জিততে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেটা কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিহাস বলে, সর্বশেষ নির্বাচনে বিজেপি কেরালায় একটি আসনও জেতেনি।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা জানিয়ে জিজি জোসেফ বলেন, ‘বিজেপি চার্চের পাদ্রীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছে।’ এ সময় তিনি জানান, রাজ্যে তাঁর দলে এখন ১১ হাজার সক্রিয় কর্মী আছে। তিনি বলেন, ‘একটা পরিবর্তন হয়েছে। খ্রিষ্টানরা এখন বিশ্বাস করতে চায় যে, বিজেপি তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’
চলতি বছরের এপ্রিলে কেরালার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি অংশের সমর্থনে বিজেপির প্রার্থী হন অনিল অ্যান্টনি। এ বিষয়ে অনিল জানান, তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার মাধ্যমে বিজেপি সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকেও প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
কেরালার খ্রিষ্টান ভোটার জয়ন্ত জোসেফ জানান, তিনি বিজেপিকেই সমর্থন দেবেন। তাঁর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, গণমাধ্যমের খবরে তিনি পড়েছেন—মুসলিমরা খ্রিষ্টান নারীদের বিয়ে করে তাদের ধর্মান্তরিত করছে। অথচ, মধ্যপন্থী হিন্দুরা পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ই মনে করেন। জয়ন্তর আরও বলেন, ‘কেরালা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য। কিন্তু এটিকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য হিসেবে বজায় রাখতে চাইলে মুসলিম জনসংখ্যা এবং তাদের ধর্মান্তরকরণের যে কৌশল সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোদির এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী রয়টার্সকে বলেছেন, এনডিএ জোট দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে অন্তত ৫০টি আসনে জিততে চায়। তবে কেরালার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্কসবাদী) জ্যেষ্ঠ নেতা কে অনিল কুমার মনে করেন, বিজেপি তাঁর রাজ্যে খুব একটা ভালো করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘বিজেপি হয়তো কিছু ইস্যুতে খ্রিষ্টানদের পক্ষ নেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু তাঁরা মৌলিকভাবে হিন্দুদের নিয়ে গঠিত হিন্দু স্বার্থের একটি দল।’
তারকা প্রার্থী
উত্তর ভারতের হিমাচল রাজ্যের মান্ডি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের দুর্গ ভাঙতে বিজেপি বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতকে বেছে নিয়েছে। কঙ্গনার বিপরীতে কংগ্রেসের টিকিটে লড়ছেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য সিং। এই আসনের বর্তমান এমপি প্রতিভা সিং, বিক্রমের মা।
বলিউডে মোটামুটি জায়গা করে নেওয়া কঙ্গনা রনৌত রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। যদিও তিনি নিজেকে ‘গর্বিত ডানপন্থী’ রাজনীতিবিদ বলেই উল্লেখ করে বেশির ভাগ সময়। নিকট অতীতে তিনি বলিউডে বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঘরানার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। রাজনীতিতে নবীন হলেও এই এই অভিনেত্রীর ওপর বিজেপির নেক নজর আছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে অন্তত ৫ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী লড়ছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ জন। যাই হোক, মান্ডিতে কে জিতবেন এমন পূর্বাভাস দিয়ে কোনো জরিপ এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে রাজনীতিতে নতুন কঙ্গনার পক্ষে ভোট পড়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।
অঞ্জনা নেগি নামে এক প্রাক—প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা জানালেন, তিনি কঙ্গনাকেই ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। তাঁর মতে, কঙ্গনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও মোদি-সমর্থিত নতুন মুখকে ক্ষমতায় এনে এলাকার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্টের ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মিলন বৈষ্ণব বলেন, তারকাদের মাঠে নামানো এবং বিনোদন জগতের তারকাদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো বিজেপির জন্য তুলনামূলক নতুন। বিজেপি তৃণমূলে কর্মীভিত্তিক রাজনীতিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
নিজের প্রার্থিতার ব্যাপারে রয়টার্সের সঙ্গে কঙ্গনা কথা না বললেও বিজেপির মুখপাত্র শাহজাদ পূনওয়ালা বলেছেন, ‘তিনি (কঙ্গনা) বলিউডে পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন। একই কাজ তিনি এখন রাজনীতিতেও করে যাচ্ছেন।’
তবে বিক্রমাদিত্য সিং বিজেপির নেতাদের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে তাঁকে রাজনীতির বিষয়ে গভীর বোঝাপড়া দিয়েছে। আর তাই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ এখানে হালে পানি পাবে না।
উল্লেখ্য, কঙ্গনা রনৌত ছাড়াও বলিউড থেকে বিজেপির টিকিটে এবার লড়ছেন—হেমা মালিনি, অরুন গোভিল, রবি কিষান এবং মনোজ তিওয়ারি।
লোকসভা আসন পুনঃনির্ধারণের ফায়দা
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতি নির্বাচনের আগেই লোকসভা আসনের সীমানা জনসংখ্যার ভিত্তিতে পুনঃ নির্ধারণ করে থাকে। আর তার ওপর ভিত্তি করেই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাজির দান জিততে চায় বিজেপি। যেমন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁর দল রাজ্যের ১৪ লোকসভা আসনের ১৩ টিতেই জিতবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৯ আসনে।
আসামে এত ভালো ফলাফলের প্রত্যাশার পেছনের কারণ হলো, আসন সীমানা পুনর্বণ্টন। ভারতের নির্বাচন কমিশন জনমিতির পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য নিয়মিত আসনের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ করে। এমনটা করা হয় যেন, কোনো রাজনৈতিক দল জনমিতির কারণে অযাচিত সুবিধা লাভ করতে না পারে।
তবে খোদ এনডিএ এবং বিরোধী দলের ৭ নেতার মতে, নিকট অতীতে আসাম ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের পর থেকে কিছু কিছু অঞ্চলে আসনগুলোর—বিশেষ করে যেগুলোকে বিজেপি টার্গেট করেছে জেতার জন্য—সীমানা এমনভাবে বণ্টন করা হয়েছে যে, সেগুলোতে মুসলিম ভোটারের প্রাধান্য কমে গেছে।
আসামে এনডিএ জোট বারপেতা লোকসভা আসন জয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। সেখানে জোটের প্রার্থী ফনীভূষণ চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন সীমানায় বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলোর বেশির ভাগই হিন্দু অধ্যুষিত। তিনি বলেন, ‘আগে বারপেতায় মুসলিম প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে এই আসনে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এই পরিবর্তন আমার অনুকূলে কাজ করেছে।’
ফনীভূষণ চৌধুরীর অনুমান, বর্তমানে বারপেতা আসনে প্রায় ১২ লাখ হিন্দু ভোটার আছে এবং তাঁর লক্ষ্য হলো—উন্নয়নের প্রচারণা এবং আদি আসাবাসীর অধিকার রক্ষা করা। উল্লেখ্য, রাজ্যটিতে আদি আসামবাসী বলতে হিন্দুদেরই বোঝানো হয়।
বারপেতা আসনে বিজেপির বিপরীতে লড়ছেন কংগ্রেসের দীপ বয়ন। তিনি বলেন, বারপেতায় হিন্দু জনসংখ্যার হার ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে উঠে গেছে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি এখানে প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন-মেরুকরণ তৈরি করছে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের পাঁচটি লোকসভা আসনই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে তারপরও বিজেপি অন্তত একটি—অনন্তনাগ-রাজৌরি—আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ, ভারত সরকারের সর্বশেষ হিসাব বলছে, আসনটিতে ভোটার সংখ্যা গত নির্বাচনের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। যাদের অধিকাংশই হিন্দু বা অন্যান্য আঞ্চলিক গোত্রের। যা বিজেপিকে নির্বাচনে সুবিধা দেবে বলেই আশাবাদী দলটির আঞ্চলিক প্রধান রবিন্দর রায়না।
তবে আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি তুলনামূলক গরিব ও হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর ভারতে বিজেপিকে সুবিধা দিলেও দক্ষিণের ধনী ও সেক্যুলার রাজ্যগুলোতে তা হিতে বিপরীতই হতে পারে বলেই মনে করেন কার্নেগি এনডাউমেন্টের মিলন বৈষ্ণব।
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
০৭ মে ২০২৪
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
০৭ মে ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
০৭ মে ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বিজেপি ও এনডিএ জোটের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে এপ্রিলে দলটির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রতিশ্রুতি ও পরিবর্তনশীল কৌশলসহ বেশকিছু রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয় এমন আসনগুলো জিততে সাহায্য করবে। এসব আসন আগে কখনো দলের (বিজেপির) দখলে ছিল না।’
০৭ মে ২০২৪
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে