Ajker Patrika

বিশ্বজুড়ে দানা বাঁধছে আরও রক্তক্ষয়ী সংঘাত

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ৪২
বিশ্বজুড়ে দানা বাঁধছে আরও রক্তক্ষয়ী সংঘাত

ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার আলোচনা শুরুর পর থেকেই পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। গত বছরের শুরু থেকেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। পুতিন কী করবেন—এ নিয়ে বিশ্বনেতাদের মধ্যে চাপা উদ্বেগ দেখা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত পুতিন ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন করেন। মার্কিন গোয়েন্দারা এর আগেই সতর্ক করেছিলেন যে রাশিয়া সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রথম দিকে বিষয়টি অভাবনীয় মনে হলেও ক্রমেই সর্বাত্মক আক্রমণের সব লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

২০১৪ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। এরপর ২০২১ সালের বসন্তে আরেকটি আক্রমণের ড্রেস রিহার্সাল দেয় পুতিনের সেনাবাহিনী। সীমান্তে সেনা জড়ো করা হয়।

পশ্চিমা সহায়তায় কিয়েভ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নতি স্বীকার করার কোনো লক্ষণ না দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনের জাতীয় পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রকাশ্যে। এরপরও ২০২২ সালে একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তির প্রতিবেশী দেশে আগ্রাসনে অনেকেই অবাক হয়েছেন।

ইউক্রেন হামলা এখন পর্যন্ত রাশিয়ার জন্য একটি বিপর্যয় বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। পুতিনের পরিকল্পনা মতে, এই আক্রমণ ইউক্রেনকে বশীভূত করা, পশ্চিমকে দুর্বল করা এবং ক্রেমলিনকে শক্তিশালী করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি তো হয়নি, বরং রাশিয়ার অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাবও খর্ব হয়েছে।

এতে উল্টো ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়েছে এবং কিয়েভকে আরও ইউরোপের কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে।

ন্যাটোতে কিয়েভের যোগদান নিয়েই যখন এত কিছু, এই যুদ্ধের মধ্যে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন জোটে ভিড়ছে। এটি নাটকীয়ভাবে উত্তর ইউরোপে ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আনবে। ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্তের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হতে চলেছে।

সিরিয়া (২০১৫) ও ইউক্রেনে (২০১৪ ও ২০১৫) ছদ্মবেশী অভিযান ছিল মস্কোর, কিন্তু এবারের যুদ্ধ রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা নগ্নভাবে প্রকাশ্য করে তুলেছে। 

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল বিশ্বজুড়েই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের ছায়া ফেলেছে। তবুও, যুদ্ধ শেষ হয়নি। রাশিয়ার অর্থনীতি ব্যাপক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ক্রেমলিন নিশ্চিত যে রাশিয়ার সক্ষমতা আছে। মস্কো এখনো একটি কঠোর বন্দোবস্তে যেতে পশ্চিমকে বাধ্য করতে পারে এবং অন্যত্র আগ্রাসনের উদ্বেগজনক নজির স্থাপন করতে পারে।

অন্যদিকে, যুদ্ধের ময়দানে ইউক্রেনীয়দের অগ্রগতি বা অন্যান্য কারণে পুতিন যদি সত্যিকারের বিপদ আঁচ করে, তবে এটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে তিনি পাশার শেষ দান হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলতে পারেন।

ইউক্রেনে যা-ই ঘটুক না কেন, পশ্চিম এবং রাশিয়ার দ্বন্দ্ব ঘুচে যাওয়ার সমূহ কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর নিয়ে খ্যাপেছিল চীনএই সময় যুদ্ধকে চীন মাথাব্যথার কারণ হিসেবেই দেখছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের পুতিনকে আলিঙ্গন করা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও, যুদ্ধ প্রশ্নে মস্কোর পক্ষে বেইজিংয়ের কিন্তু সমর্থন অপ্রতুল।

শি চিন পিং রাশিয়াতে অস্ত্র পাঠাননি। পুতিনের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে বেইজিং।

তবে এটাও সত্য যে বেইজিং মস্কোর বড়ভাই সুলভ আচরণে বাগড়া দিয়ে ছোট করবে না। অথবা পুতিনকে সমঝোতায় পৌঁছাতে বাধ্য করার সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু বেইজিং আক্রমণে মদদ দিয়ে পশ্চিমাদের উসকে দেওয়ার অপরিণামদর্শী পদক্ষেপও নেবে না।

এশিয়ায় মার্কিন মিত্ররা প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে ওয়াশিংটনকেই পাশে রাখতে আগ্রহী বলে মনে হয়। এমনকি তারা এখনো চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার চায়।

ইউক্রেন যুদ্ধ তাইওয়ানে  চীনা হামলার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আক্রমণ করাটাকে বেইজিং খুব ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করছে। অন্তত আপাতত এমন সম্ভাবনা কম।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক—যা আগামী দশকগুলোতে নানা ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করবে—ভূরাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এ ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির গত আগস্টে তাইওয়ান সফর বেইজিংকে বিরক্ত করেছিল। কিন্তু তিন মাস পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং শির মধ্যে বৈঠকে সংলাপ পুনরায় শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

যদিও দুই দেশের বৈদেশিক নীতির মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্টই। তাইওয়ানের ওপর চীনের হাত সেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে না। যদিও বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি প্রযুক্তি বাজার নিয়ে দ্বৈরথে রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ অ-পশ্চিমা মধ্যশক্তির প্রভাব এবং স্বায়ত্তশাসনের ওপর আলো ফেলেছে। তুরস্ক দীর্ঘদিন ন্যাটোর সদস্য থেকে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় একটি কঠিন পথ ধরে হাঁটছে। জাতিসংঘের সঙ্গে কৃষ্ণসাগর হয়ে ইউক্রেনের শস্য বিশ্ববাজারে রপ্তানির একটি চুক্তি করেছে। এই উদ্যোগটি লিবিয়া ও দক্ষিণ ককেশাসে যুদ্ধক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা এবং ড্রোন বিক্রয় সম্প্রসারণসহ বিদেশে তুরস্কের অবস্থানের দৃঢ়তার প্রমাণ হিসেবে বছরের পর বছর বহাল থাকবে।

বাজার থেকে রুশ জ্বালানি তেলের আকস্মিক প্রত্যাহার সৌদি আরবের জন্য একটি আশীর্বাদ ছিল। এই ঘটনা জো বাইডেনকে রিয়াদ সফরে বাধ্য করে। যদিও তিনি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বয়কট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন।

রিয়াদ অন্যান্য তেল উৎপাদকদের সঙ্গে দাম বেশি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি ওয়াশিংটনের ক্ষোভের কারণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একসময়ের নিরাপত্তা অংশীদার এবং রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা ভারত রাশিয়ার তেল কিনেছে। পাশাপাশি পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়ার সমালোচনাও করেছে।

এটি কিন্তু কোনো সমন্বিত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন নয়। কিন্তু মধ্যম মানের শক্তিগুলো তাদের নিজস্ব গতিপথ নির্ধারণ করার জন্য এটিই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে। অনেকেই মনে করছেন, বৃহৎ পরাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহু মেরুর বিশ্বের সুযোগ অবারিত করবে।

ইথিওপিয়ায় আবি সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ঝরেছে বহু প্রাণএদিকে বৈশ্বিক দক্ষিণের কোথাও কোথাও যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে আছে। বেশির ভাগ অ-পশ্চিমী দেশ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোট দিয়েছে। তবে এর মধ্যে কমই প্রকাশ্যে পুতিনের নিন্দা করেছে বা নিষেধাজ্ঞায় সায় দিয়েছে।

তবে বাণিজ্যিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্কে জড়িত পক্ষগুলো এবং যারা ক্রেমলিন-ঘনিষ্ঠ ওয়াগনার গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল তাদের মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক সহজে ভাঙার নয়। ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপের স্পষ্ট পক্ষ অবলম্বন এবং অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা করাকে তারা তাদের স্বার্থবিরোধী বলেই মনে করছে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মজুত, অভিবাসন নীতি বা জলবায়ু নীতির কারণে পশ্চিমের ওপরও বাকি বিশ্বের হতাশা বাড়ছে। অন্যত্র পশ্চিমাদের বারবার হস্তক্ষেপ এবং ঔপনিবেশিক ইতিহাসের কারণে অনেকেই ইউক্রেনে পশ্চিমের দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ তুলছেন। অনেক বৈশ্বিক দক্ষিণ নেতা বিশ্বাস করেন, বিশেষত যখন নিষেধাজ্ঞার কথা আসে, পশ্চিমা সরকারগুলো তখন বিশ্ব অর্থনীতির কথা না ভেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে।

প্রকৃতপক্ষে, ইউরোপের বাইরে, যুদ্ধের সবচেয়ে বড় প্রভাব অর্থনৈতিক। আগ্রাসন এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতিতে কোভিডের ধাক্কা আরও প্রকট হয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়েছে, জীবনযাত্রার সংকট সৃষ্টি করেছে।  মূল্যস্ফীতি এখনো সহনীয় মাত্রার বেশি, ঋণের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মহামারি এবং অর্থনৈতিক সংকট দুটি পরস্পরকে প্রবল করে তোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা দুর্বল দেশগুলোকে আরও গভীর সংকটে ফেলতে পারে এবং সেসব দেশে অস্থিরতা বাড়তে পারে। গত বছর এই তালিকায় পাকিস্তান একটি প্রধান উদাহরণ। অনেক দেশ একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

পাকিস্তানে বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানির পর জীবিতরা ভুগছেন খাদ্যসংকটে। ছবি: রয়টার্স২০২২ যে সবই খারাপ জিনিস দিয়েছে, এমন নয়। পশ্চিমাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের কারণে ইউক্রেনের পতন ঘটেনি। বেশ কিছু জনমনোরঞ্জনবাদী (পপুলিস্ট) নেতা রাজনীতিতে সম্প্রতি অনেক বিভেদের বীজ বপন করেছেন, গত বছর তাঁরাও হারিয়ে গেছেন। জেইর বলসোনারো ব্রাজিলে পরাজিত হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ক্ষয়িষ্ণু। মেরিন লো পেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। ইতালিতে পপুলিস্টরা ক্ষমতায় এসেছে। অবশ্য বেশির ভাগ সময় তাঁরা একবারের বেশি কেন্দ্রে টিকতে পারেনি।

তাই বলে উগ্র ডানপন্থী পপুলিস্টদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। যদিও তাঁদের মধ্যের চ্যাম্পিয়নরা বিপর্যয়ের মুখে। সেই সঙ্গে বহু পাক্ষিক কূটনীতির মধ্য দিয়ে ব্যাপক গোলমাল হয়েছে। পারস্পরিক তিক্ত মতপার্থক্য সত্ত্বেও, চীন, রাশিয়া এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো এখনো বেশির ভাগই ইউক্রেনের বাইরে সংকট মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে নির্ভরতার স্থান হিসেবে দেখেছে। একটি চুক্তি যা ইথিওপিয়ার ভয়ংকর যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে এবং কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলা সম্পর্কে উষ্ণতা—এই আশাই দেখাচ্ছে যে ইউরোপে সংঘাত সত্ত্বেও অন্যত্র শান্তি স্থাপনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।

সামগ্রিকভাবে, যদিও ২০২২ সালে একটি অস্থির বছর পার হয়েছে। মহামারি বিশ্বের বেশির ভাগ অংশকে বিপর্যস্ত করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা মার্কিন ক্যাপিটলে হামলা করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন ইউরোপে একটি বড় যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের ‘মূল হোতা’ পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বেশ কয়েকটি দরিদ্র দেশ ঋণসংকট, ক্ষুধা এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মুখোমুখি।

এ ঘটনাগুলোর কোনোটিই কিন্তু আগাম সতর্কতা ছাড়া আসেনি। আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া যেত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেকোনো সময়ের তুলনায় সংঘাতে নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং যুদ্ধের কারণে অনেক বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত বা ক্ষুধার্ত হওয়ার শর্ত তৈরি হয়েছে।

সুতরাং, ২০২৩ কি বড় শক্তিগুলোর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কাল হতে যাচ্ছে? প্রায় ৮০ বছরের পারমাণবিক অস্ত্রের নিষেধাজ্ঞা কি ভাঙবে? রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে কি সারা বিশ্বেই সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে? এই বছরের বড় প্রশ্নগুলোর সবচেয়ে আতঙ্ক জাগানিয়া জবাবগুলো সুদূরপ্রসারী বলেই মনে হচ্ছে। এ ঘটনাগুলোকে অচিন্তনীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া হবে স্রেফ অপরিণামদর্শী আত্মতুষ্টি।

তথ্যসূত্র: এএফপি, ক্রাইসিস গ্রুপ ও ফরেন পলিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত