Ajker Patrika

আল জাজিরার প্রতিবেদন /৮ কোটি ভারতীয় কেন আত্মপরিচয় প্রমাণের মুখে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাঁদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট-বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।

গত ২৪ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ঘোষণা দেয়, বিহার রাজ্যে ৮ কোটির কাছাকাছি সব ভোটারকেই আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার সমান।

নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে ভোটাধিকার হারাবেন তাঁরা এবং ইসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের ‘সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি তাঁদের জেল বা দেশ থেকে বহিষ্কারাদেশের মুখেও পড়তে হতে পারে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অক্টোবর বা নভেম্বরে হওয়ার কথা।

এই পদক্ষেপকে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) পেছনের দরজা দিয়ে বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অতীতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও বহিষ্কারের অজুহাতে এনআরসি চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মূলত বাংলাভাষী হাজার হাজার মুসলিমকে ‘বাংলাদেশি’ অভিবাসী সন্দেহে আটক করে অনেককেই ভারতে থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আল জাজিরা ইসিআইকে এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে কমিশন এখনো কোনো জবাব দেয়নি।

ভারতের মাথাপিছু আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এখানকার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তবে দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হওয়ায় বিহার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্র। ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যটিতে বিজেপি ও আঞ্চলিক দল জনতা দলের (ইউনাইটেড) জোট বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যে বিরোধী জোটগুলোরও শাসন দেখা গেছে।

এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও দলিলপত্র জোগাড় করার হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বলছে, এই অল্প সময়ে এত বিশালসংখ্যক মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল সম্ভব নয়। ফলে বহু বৈধ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তাদের বিহার মিত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) রোববার বিহারে বন্ধের ডাক দিয়েছে। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বিহারের রাজধানী পাটনায় অবস্থান করছেন।

বিরোধীদলীয় নেতারা ও নাগরিক সমাজের একাধিক ব্যক্তি এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই উদ্যোগ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলো শোনার কথা আদালতের।

ক্ষমতাসীন দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলিম অভিবাসী ভারতে ঢুকছে বলে দাবি করে আসছে এবং ইসিআইয়ের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। দলটি চাইছে, দেশজুড়ে একইভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হোক। আল জাজিরা বিজেপির মুখপাত্র অনিল বলুনির এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। ২৪ জুনের আদেশে ইসিআই বলেছে, ‘কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তি যেন ভোটার তালিকায় না থাকে’ তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। শহরায়ণ, অভিবাসন, নতুন ভোটার, মৃত ভোটার এবং বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলো এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এর আগে, ২০০৩ সালে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিতই তালিকা হালনাগাদ হয়েছে, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগেও তা করা হয়েছিল। ইসিআই জানিয়েছে, যাঁরা ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিলেন, তাঁদের শুধু পুনরায় ফরম জমা দিলেই চলবে। তবে ২০০৩ সালের পর যাঁরা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য স্বপ্রমাণসহ নথিপত্র, এমনকি বাবা-মায়ের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।

ইসিআইয়ের হিসাবে, প্রায় ৭৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ২৯ মিলিয়ন নাগরিককে কেবল যাচাই করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নের বেশি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইসিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের একটি ফর্ম দেবেন। এরপর ভোটারদের সেই ফর্মে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং বাদ পড়া ব্যক্তিদের আপত্তি জানানোর জন্য আরও এক মাস সময় দেওয়া হবে।

ভারতীয় থিংক ট্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোকার বলেন, ‘২০০৩ সালের পর যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখায় এই পদক্ষেপ। তাহলে কি ইসিআই বলছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে, সবই প্রশ্নবিদ্ধ?’

তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশালসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এক মাসে দুবার যোগাযোগ করাই তো এক মহাযজ্ঞ। অথচ এই প্রক্রিয়ার আগে কোনো জনপরামর্শ করা হয়নি।’

টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গোপনে, পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে—এটা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।’

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, লাখ লাখ বৈধ ভোটার নথি দেখাতে না পারায় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। এতে ভারতের গণতন্ত্র বড়সড় এক সংকটে পড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ভোটার শনাক্তকরণ নথি হিসেবে আধার কার্ড, যা ভারত সরকারের দেওয়া একটি বিশেষ পরিচয়পত্র, কিংবা তাদের নিজেদের জারি করা ভোটার আইডি কার্ডও গ্রহণ করবে না। অথচ, এত দিন এই কার্ডগুলো ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এর বদলে ভোটারদের ১১ ধরনের নির্ধারিত নথির যেকোনো একটি জমা দিতে বলা হয়েছে যেমন—জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বন অধিকার সনদ কিংবা রাজ্য সরকার প্রদত্ত শিক্ষা সনদ।

কিন্তু বিহার ভারতের সবচেয়ে কম সাক্ষরতার রাজ্য। এখানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৬২ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৭৩ শতাংশ। বিহার সরকারের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, রাজ্যের মাত্র ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষ দশম শ্রেণি পাস। ফলে শিক্ষা সনদ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। একইভাবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিহারে জন্মনিবন্ধনের হারও অন্যতম সর্বনিম্ন। এখানে ২৫ শতাংশ জন্ম এখনো নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, এক-চতুর্থাংশ মানুষের পক্ষে জন্ম সনদ পাওয়া সম্ভব নয়।

অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, এটা আসলে রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। যাঁরা বৈধ নাগরিক, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করতে পারেনি। তাঁর মন্তব্য, ‘যদি রাষ্ট্রই এসব নথি বিতরণে অক্ষম হয়, তাহলে জনগণকে শাস্তি দেওয়া যায় না।’

ইসিআইয়ের সময় নির্ধারণ নিয়েও সমালোচনা আছে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিহারে বর্ষা চলে আর বর্ষার বন্যা প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিহারের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাপ্রবণ। প্রতি বছর ভারতের মোট বন্যায় ক্ষতির ৩০-৪০ শতাংশ হয় বিহারেই। গত বছর বিহারে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই যে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো, সেখানেই নথিপত্র কম থাকে, কারণ বছরের পর বছর বন্যায় গোটা গ্রাম ধুয়ে যায়।’

এ ছাড়া, ইসিআইয়ের এই উদ্যোগে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতিতে এক মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জগদীপ চোকার। তিনি বলেন, ‘দেশের গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ভোটাধিকার নির্ধারণে মূল শর্ত ছিল জন্ম তারিখ, কিন্তু এখন তা পরিবর্তন করে জন্মস্থানও চাওয়া হচ্ছে।’

ইসিআই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও তাদের এই পদক্ষেপ বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। গত বছর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর থেকেই বিজেপি বলছে, রোহিঙ্গা ও তথাকথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢল ভারতে জনমিতিক কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দায়িত্বরত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন, আর শাহ মোদির ঘনিষ্ঠ।

মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড কিংবা দিল্লি—মোদি ও বিজেপির নেতারা প্রায় প্রতিটি রাজ্য নির্বাচনে এই অভিযোগ তুলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব ইসিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ তোলেন—রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকেরা বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যদিও ভারতের আইন অনুযায়ী কেবল ভারতীয় নাগরিকেরাই ভোট দিতে পারেন।

ইসিআই এই অভিযোগ মেনে নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু করলেও তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেনি। ফলে সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে যে, এসব বিজেপিরই চাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিহারের বাসিন্দা অপূর্বানন্দ বলেন, ‘ইসিআই এখনো বলতে পারেনি, কেন এই সংশোধন জরুরি। তারা কোনো উপাত্তও দেখাতে পারেনি। ফলে এটা আর কেবল প্রশাসনিক বা নিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাজ নেই, এর রাজনীতি অত্যন্ত সন্দেহজনক।’

অন্যদিকে বিজেপি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং চায় সারা দেশে তা চালু হোক। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই ভোটার যাচাইকরণ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক শ্রেণি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। কারণ তাঁদের মধ্যে পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ বা জন্ম সনদ খুব কম জনেরই থাকে। এই শ্রেণিগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী দল আরজেডি ও কংগ্রেসকে সমর্থন করে।’ সরল ভাষায় বললে, তাঁরা যদি ভোট না দিতে পারেন, তাহলে বিজেপিরই লাভ।

গত কয়েক মাসে মোদি সরকার ও বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে তথাকথিত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারের অভিযান জোরদার হয়েছে। অন্তত আটটি রাজ্যে শত শত মানুষকে ধরে আটক করা হয়েছে। এই অভিযান বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরই কেন্দ্রীভূত। হাজার হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে তাদের বহিষ্কার করেছে। অনেক ভারতীয় মুসলমান নাগরিকও এই অভিযানের শিকার হয়েছে।

অনেকে বলছেন, এটি আসলে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির মোদি সরকারের পূর্বপরিকল্পনারই অংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই এনআরসি তৈরি করা হবে এবং ‘প্রত্যেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’

এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলমানরা। কারণ, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিষ্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করা হলেও মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে পাস হওয়া এই আইন মোদি সরকার গত বছরের মার্চে কার্যকর করেছে।

বিহারে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ‘এই যে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যা হচ্ছে, এটা আসলে এনআরসি কার্যকর করারই আরেক রূপ।’ একই বিষয়ে জগদীপ চোকারের সংস্থাই প্রথম এই উদ্যোগ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। তিনি বলছেন, এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। তাঁর মতে, ‘এভাবে চললে রাজ্যের অর্ধেক মানুষের ভোটাধিকারই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত