আজকের পত্রিকা ডেস্ক

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাঁদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট-বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
গত ২৪ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ঘোষণা দেয়, বিহার রাজ্যে ৮ কোটির কাছাকাছি সব ভোটারকেই আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার সমান।
নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে ভোটাধিকার হারাবেন তাঁরা এবং ইসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের ‘সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি তাঁদের জেল বা দেশ থেকে বহিষ্কারাদেশের মুখেও পড়তে হতে পারে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অক্টোবর বা নভেম্বরে হওয়ার কথা।
এই পদক্ষেপকে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) পেছনের দরজা দিয়ে বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অতীতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও বহিষ্কারের অজুহাতে এনআরসি চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মূলত বাংলাভাষী হাজার হাজার মুসলিমকে ‘বাংলাদেশি’ অভিবাসী সন্দেহে আটক করে অনেককেই ভারতে থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আল জাজিরা ইসিআইকে এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে কমিশন এখনো কোনো জবাব দেয়নি।
ভারতের মাথাপিছু আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এখানকার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তবে দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হওয়ায় বিহার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্র। ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যটিতে বিজেপি ও আঞ্চলিক দল জনতা দলের (ইউনাইটেড) জোট বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যে বিরোধী জোটগুলোরও শাসন দেখা গেছে।
এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও দলিলপত্র জোগাড় করার হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বলছে, এই অল্প সময়ে এত বিশালসংখ্যক মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল সম্ভব নয়। ফলে বহু বৈধ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তাদের বিহার মিত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) রোববার বিহারে বন্ধের ডাক দিয়েছে। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বিহারের রাজধানী পাটনায় অবস্থান করছেন।
বিরোধীদলীয় নেতারা ও নাগরিক সমাজের একাধিক ব্যক্তি এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই উদ্যোগ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলো শোনার কথা আদালতের।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলিম অভিবাসী ভারতে ঢুকছে বলে দাবি করে আসছে এবং ইসিআইয়ের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। দলটি চাইছে, দেশজুড়ে একইভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হোক। আল জাজিরা বিজেপির মুখপাত্র অনিল বলুনির এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। ২৪ জুনের আদেশে ইসিআই বলেছে, ‘কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তি যেন ভোটার তালিকায় না থাকে’ তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। শহরায়ণ, অভিবাসন, নতুন ভোটার, মৃত ভোটার এবং বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলো এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এর আগে, ২০০৩ সালে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিতই তালিকা হালনাগাদ হয়েছে, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগেও তা করা হয়েছিল। ইসিআই জানিয়েছে, যাঁরা ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিলেন, তাঁদের শুধু পুনরায় ফরম জমা দিলেই চলবে। তবে ২০০৩ সালের পর যাঁরা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য স্বপ্রমাণসহ নথিপত্র, এমনকি বাবা-মায়ের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।
ইসিআইয়ের হিসাবে, প্রায় ৭৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ২৯ মিলিয়ন নাগরিককে কেবল যাচাই করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নের বেশি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইসিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের একটি ফর্ম দেবেন। এরপর ভোটারদের সেই ফর্মে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং বাদ পড়া ব্যক্তিদের আপত্তি জানানোর জন্য আরও এক মাস সময় দেওয়া হবে।
ভারতীয় থিংক ট্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোকার বলেন, ‘২০০৩ সালের পর যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখায় এই পদক্ষেপ। তাহলে কি ইসিআই বলছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে, সবই প্রশ্নবিদ্ধ?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশালসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এক মাসে দুবার যোগাযোগ করাই তো এক মহাযজ্ঞ। অথচ এই প্রক্রিয়ার আগে কোনো জনপরামর্শ করা হয়নি।’
টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গোপনে, পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে—এটা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, লাখ লাখ বৈধ ভোটার নথি দেখাতে না পারায় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। এতে ভারতের গণতন্ত্র বড়সড় এক সংকটে পড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ভোটার শনাক্তকরণ নথি হিসেবে আধার কার্ড, যা ভারত সরকারের দেওয়া একটি বিশেষ পরিচয়পত্র, কিংবা তাদের নিজেদের জারি করা ভোটার আইডি কার্ডও গ্রহণ করবে না। অথচ, এত দিন এই কার্ডগুলো ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এর বদলে ভোটারদের ১১ ধরনের নির্ধারিত নথির যেকোনো একটি জমা দিতে বলা হয়েছে যেমন—জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বন অধিকার সনদ কিংবা রাজ্য সরকার প্রদত্ত শিক্ষা সনদ।
কিন্তু বিহার ভারতের সবচেয়ে কম সাক্ষরতার রাজ্য। এখানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৬২ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৭৩ শতাংশ। বিহার সরকারের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, রাজ্যের মাত্র ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষ দশম শ্রেণি পাস। ফলে শিক্ষা সনদ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। একইভাবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিহারে জন্মনিবন্ধনের হারও অন্যতম সর্বনিম্ন। এখানে ২৫ শতাংশ জন্ম এখনো নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, এক-চতুর্থাংশ মানুষের পক্ষে জন্ম সনদ পাওয়া সম্ভব নয়।
অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, এটা আসলে রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। যাঁরা বৈধ নাগরিক, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করতে পারেনি। তাঁর মন্তব্য, ‘যদি রাষ্ট্রই এসব নথি বিতরণে অক্ষম হয়, তাহলে জনগণকে শাস্তি দেওয়া যায় না।’
ইসিআইয়ের সময় নির্ধারণ নিয়েও সমালোচনা আছে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিহারে বর্ষা চলে আর বর্ষার বন্যা প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিহারের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাপ্রবণ। প্রতি বছর ভারতের মোট বন্যায় ক্ষতির ৩০-৪০ শতাংশ হয় বিহারেই। গত বছর বিহারে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই যে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো, সেখানেই নথিপত্র কম থাকে, কারণ বছরের পর বছর বন্যায় গোটা গ্রাম ধুয়ে যায়।’
এ ছাড়া, ইসিআইয়ের এই উদ্যোগে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতিতে এক মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জগদীপ চোকার। তিনি বলেন, ‘দেশের গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ভোটাধিকার নির্ধারণে মূল শর্ত ছিল জন্ম তারিখ, কিন্তু এখন তা পরিবর্তন করে জন্মস্থানও চাওয়া হচ্ছে।’
ইসিআই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও তাদের এই পদক্ষেপ বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। গত বছর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর থেকেই বিজেপি বলছে, রোহিঙ্গা ও তথাকথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢল ভারতে জনমিতিক কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দায়িত্বরত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন, আর শাহ মোদির ঘনিষ্ঠ।
মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড কিংবা দিল্লি—মোদি ও বিজেপির নেতারা প্রায় প্রতিটি রাজ্য নির্বাচনে এই অভিযোগ তুলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব ইসিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ তোলেন—রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকেরা বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যদিও ভারতের আইন অনুযায়ী কেবল ভারতীয় নাগরিকেরাই ভোট দিতে পারেন।
ইসিআই এই অভিযোগ মেনে নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু করলেও তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেনি। ফলে সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে যে, এসব বিজেপিরই চাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিহারের বাসিন্দা অপূর্বানন্দ বলেন, ‘ইসিআই এখনো বলতে পারেনি, কেন এই সংশোধন জরুরি। তারা কোনো উপাত্তও দেখাতে পারেনি। ফলে এটা আর কেবল প্রশাসনিক বা নিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাজ নেই, এর রাজনীতি অত্যন্ত সন্দেহজনক।’
অন্যদিকে বিজেপি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং চায় সারা দেশে তা চালু হোক। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই ভোটার যাচাইকরণ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক শ্রেণি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। কারণ তাঁদের মধ্যে পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ বা জন্ম সনদ খুব কম জনেরই থাকে। এই শ্রেণিগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী দল আরজেডি ও কংগ্রেসকে সমর্থন করে।’ সরল ভাষায় বললে, তাঁরা যদি ভোট না দিতে পারেন, তাহলে বিজেপিরই লাভ।
গত কয়েক মাসে মোদি সরকার ও বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে তথাকথিত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারের অভিযান জোরদার হয়েছে। অন্তত আটটি রাজ্যে শত শত মানুষকে ধরে আটক করা হয়েছে। এই অভিযান বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরই কেন্দ্রীভূত। হাজার হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে তাদের বহিষ্কার করেছে। অনেক ভারতীয় মুসলমান নাগরিকও এই অভিযানের শিকার হয়েছে।
অনেকে বলছেন, এটি আসলে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির মোদি সরকারের পূর্বপরিকল্পনারই অংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই এনআরসি তৈরি করা হবে এবং ‘প্রত্যেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলমানরা। কারণ, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিষ্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করা হলেও মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে পাস হওয়া এই আইন মোদি সরকার গত বছরের মার্চে কার্যকর করেছে।
বিহারে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ‘এই যে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যা হচ্ছে, এটা আসলে এনআরসি কার্যকর করারই আরেক রূপ।’ একই বিষয়ে জগদীপ চোকারের সংস্থাই প্রথম এই উদ্যোগ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। তিনি বলছেন, এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। তাঁর মতে, ‘এভাবে চললে রাজ্যের অর্ধেক মানুষের ভোটাধিকারই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাঁদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট-বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
গত ২৪ জুন ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) ঘোষণা দেয়, বিহার রাজ্যে ৮ কোটির কাছাকাছি সব ভোটারকেই আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে ভোটার হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এই সংখ্যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার সমান।
নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে ভোটাধিকার হারাবেন তাঁরা এবং ইসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের ‘সন্দেহভাজন বিদেশি নাগরিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনকি তাঁদের জেল বা দেশ থেকে বহিষ্কারাদেশের মুখেও পড়তে হতে পারে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অক্টোবর বা নভেম্বরে হওয়ার কথা।
এই পদক্ষেপকে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) পেছনের দরজা দিয়ে বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অতীতে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও বহিষ্কারের অজুহাতে এনআরসি চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মূলত বাংলাভাষী হাজার হাজার মুসলিমকে ‘বাংলাদেশি’ অভিবাসী সন্দেহে আটক করে অনেককেই ভারতে থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আল জাজিরা ইসিআইকে এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে কমিশন এখনো কোনো জবাব দেয়নি।
ভারতের মাথাপিছু আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এখানকার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তবে দেশটির তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য হওয়ায় বিহার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষেত্র। ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যটিতে বিজেপি ও আঞ্চলিক দল জনতা দলের (ইউনাইটেড) জোট বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও মাঝেমধ্যে বিরোধী জোটগুলোরও শাসন দেখা গেছে।
এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে চরম বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও দলিলপত্র জোগাড় করার হুলুস্থুল শুরু হয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বলছে, এই অল্প সময়ে এত বিশালসংখ্যক মানুষের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল সম্ভব নয়। ফলে বহু বৈধ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তাদের বিহার মিত্র রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) রোববার বিহারে বন্ধের ডাক দিয়েছে। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বিহারের রাজধানী পাটনায় অবস্থান করছেন।
বিরোধীদলীয় নেতারা ও নাগরিক সমাজের একাধিক ব্যক্তি এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে এই উদ্যোগ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলাগুলো শোনার কথা আদালতের।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে বিপুলসংখ্যক মুসলিম অভিবাসী ভারতে ঢুকছে বলে দাবি করে আসছে এবং ইসিআইয়ের এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। দলটি চাইছে, দেশজুড়ে একইভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হোক। আল জাজিরা বিজেপির মুখপাত্র অনিল বলুনির এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। ২৪ জুনের আদেশে ইসিআই বলেছে, ‘কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তি যেন ভোটার তালিকায় না থাকে’ তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। শহরায়ণ, অভিবাসন, নতুন ভোটার, মৃত ভোটার এবং বিদেশি অবৈধ অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলো এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এর আগে, ২০০৩ সালে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিতই তালিকা হালনাগাদ হয়েছে, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগেও তা করা হয়েছিল। ইসিআই জানিয়েছে, যাঁরা ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিলেন, তাঁদের শুধু পুনরায় ফরম জমা দিলেই চলবে। তবে ২০০৩ সালের পর যাঁরা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য স্বপ্রমাণসহ নথিপত্র, এমনকি বাবা-মায়ের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।
ইসিআইয়ের হিসাবে, প্রায় ৭৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে ২৯ মিলিয়ন নাগরিককে কেবল যাচাই করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা ৪৭ মিলিয়নের বেশি হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইসিআইয়ের কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের একটি ফর্ম দেবেন। এরপর ভোটারদের সেই ফর্মে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং বাদ পড়া ব্যক্তিদের আপত্তি জানানোর জন্য আরও এক মাস সময় দেওয়া হবে।
ভারতীয় থিংক ট্যাংক অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোকার বলেন, ‘২০০৩ সালের পর যাঁরা ভোটার হয়েছেন, তাঁদের সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখায় এই পদক্ষেপ। তাহলে কি ইসিআই বলছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে, সবই প্রশ্নবিদ্ধ?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশালসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এক মাসে দুবার যোগাযোগ করাই তো এক মহাযজ্ঞ। অথচ এই প্রক্রিয়ার আগে কোনো জনপরামর্শ করা হয়নি।’
টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এত বড় একটা সিদ্ধান্ত গোপনে, পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে—এটা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, লাখ লাখ বৈধ ভোটার নথি দেখাতে না পারায় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। এতে ভারতের গণতন্ত্র বড়সড় এক সংকটে পড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ভোটার শনাক্তকরণ নথি হিসেবে আধার কার্ড, যা ভারত সরকারের দেওয়া একটি বিশেষ পরিচয়পত্র, কিংবা তাদের নিজেদের জারি করা ভোটার আইডি কার্ডও গ্রহণ করবে না। অথচ, এত দিন এই কার্ডগুলো ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এর বদলে ভোটারদের ১১ ধরনের নির্ধারিত নথির যেকোনো একটি জমা দিতে বলা হয়েছে যেমন—জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, বন অধিকার সনদ কিংবা রাজ্য সরকার প্রদত্ত শিক্ষা সনদ।
কিন্তু বিহার ভারতের সবচেয়ে কম সাক্ষরতার রাজ্য। এখানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৬২ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় ৭৩ শতাংশ। বিহার সরকারের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, রাজ্যের মাত্র ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষ দশম শ্রেণি পাস। ফলে শিক্ষা সনদ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। একইভাবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিহারে জন্মনিবন্ধনের হারও অন্যতম সর্বনিম্ন। এখানে ২৫ শতাংশ জন্ম এখনো নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, এক-চতুর্থাংশ মানুষের পক্ষে জন্ম সনদ পাওয়া সম্ভব নয়।
অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, এটা আসলে রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। যাঁরা বৈধ নাগরিক, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র পালন করতে পারেনি। তাঁর মন্তব্য, ‘যদি রাষ্ট্রই এসব নথি বিতরণে অক্ষম হয়, তাহলে জনগণকে শাস্তি দেওয়া যায় না।’
ইসিআইয়ের সময় নির্ধারণ নিয়েও সমালোচনা আছে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিহারে বর্ষা চলে আর বর্ষার বন্যা প্রায় প্রতিবছরই ভয়াবহ হয়। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিহারের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যাপ্রবণ। প্রতি বছর ভারতের মোট বন্যায় ক্ষতির ৩০-৪০ শতাংশ হয় বিহারেই। গত বছর বিহারে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই যে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো, সেখানেই নথিপত্র কম থাকে, কারণ বছরের পর বছর বন্যায় গোটা গ্রাম ধুয়ে যায়।’
এ ছাড়া, ইসিআইয়ের এই উদ্যোগে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতিতে এক মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জগদীপ চোকার। তিনি বলেন, ‘দেশের গত ৭০ বছরের ইতিহাসে ভোটাধিকার নির্ধারণে মূল শর্ত ছিল জন্ম তারিখ, কিন্তু এখন তা পরিবর্তন করে জন্মস্থানও চাওয়া হচ্ছে।’
ইসিআই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলেও তাদের এই পদক্ষেপ বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। গত বছর সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর থেকেই বিজেপি বলছে, রোহিঙ্গা ও তথাকথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢল ভারতে জনমিতিক কাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এসব অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দায়িত্বরত সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন, আর শাহ মোদির ঘনিষ্ঠ।
মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড কিংবা দিল্লি—মোদি ও বিজেপির নেতারা প্রায় প্রতিটি রাজ্য নির্বাচনে এই অভিযোগ তুলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপি নেতৃত্ব ইসিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ তোলেন—রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি নাগরিকেরা বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যদিও ভারতের আইন অনুযায়ী কেবল ভারতীয় নাগরিকেরাই ভোট দিতে পারেন।
ইসিআই এই অভিযোগ মেনে নিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু করলেও তারা কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেনি। ফলে সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে যে, এসব বিজেপিরই চাল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিহারের বাসিন্দা অপূর্বানন্দ বলেন, ‘ইসিআই এখনো বলতে পারেনি, কেন এই সংশোধন জরুরি। তারা কোনো উপাত্তও দেখাতে পারেনি। ফলে এটা আর কেবল প্রশাসনিক বা নিরপেক্ষ সাংবিধানিক কাজ নেই, এর রাজনীতি অত্যন্ত সন্দেহজনক।’
অন্যদিকে বিজেপি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং চায় সারা দেশে তা চালু হোক। অধ্যাপক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এই ভোটার যাচাইকরণ কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক শ্রেণি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। কারণ তাঁদের মধ্যে পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ বা জন্ম সনদ খুব কম জনেরই থাকে। এই শ্রেণিগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিরোধী দল আরজেডি ও কংগ্রেসকে সমর্থন করে।’ সরল ভাষায় বললে, তাঁরা যদি ভোট না দিতে পারেন, তাহলে বিজেপিরই লাভ।
গত কয়েক মাসে মোদি সরকার ও বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে তথাকথিত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কারের অভিযান জোরদার হয়েছে। অন্তত আটটি রাজ্যে শত শত মানুষকে ধরে আটক করা হয়েছে। এই অভিযান বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরই কেন্দ্রীভূত। হাজার হাজার সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে অস্ত্রের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাড়াহুড়ো করে তাদের বহিষ্কার করেছে। অনেক ভারতীয় মুসলমান নাগরিকও এই অভিযানের শিকার হয়েছে।
অনেকে বলছেন, এটি আসলে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তৈরির মোদি সরকারের পূর্বপরিকল্পনারই অংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই এনআরসি তৈরি করা হবে এবং ‘প্রত্যেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’
এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলমানরা। কারণ, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ফলে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিষ্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সহজ করা হলেও মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে পাস হওয়া এই আইন মোদি সরকার গত বছরের মার্চে কার্যকর করেছে।
বিহারে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ‘এই যে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে যা হচ্ছে, এটা আসলে এনআরসি কার্যকর করারই আরেক রূপ।’ একই বিষয়ে জগদীপ চোকারের সংস্থাই প্রথম এই উদ্যোগ বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। তিনি বলছেন, এর ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। তাঁর মতে, ‘এভাবে চললে রাজ্যের অর্ধেক মানুষের ভোটাধিকারই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে, এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
১০ জুলাই ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে, এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
১০ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে, এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
১০ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ বিতাড়নের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন কমিশন ৮০ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি মানুষকে তাদের পরিচয় নতুন করে প্রমাণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে, এই ৮ কোটি মানুষকে ভোট বঞ্চিত করার এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিতে।
১০ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে