আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
০৪ নভেম্বর ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
০৪ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
০৪ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
০৪ নভেম্বর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৫ দিন আগে