আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ক্ষেত্রে একটি সত্য খুব দুর্বলভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তা হলো—সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো চায় পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিজের করে নিতে এবং অপর পক্ষকে পুরোপুরি অদৃশ্য করে দিতে। ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নয়, তাদের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেই ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা।
এরপর, ২০১৬ সালের এক জরিপে প্রায় অর্ধেক ইসরায়েলি ইহুদি একমত হয়, ‘আরবদের ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত বা স্থানান্তর করা উচিত।’ ২০০০ সালে, যখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখনকার এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলি ও ১০ শতাংশ ফিলিস্তিনি একমত ছিলেন, স্কুল পাঠ্যক্রমে এমন শিক্ষা থাকা উচিত যাতে শিক্ষার্থীরা ‘অন্য রাষ্ট্রে’ পড়ে থাকা নিজেদের ‘পিতৃভূমির’ অংশ ছাড় দেওয়ার চিন্তা করতে শেখে।
এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকেই অপর পক্ষকে একেবারে মুছে ফেলতে চায়—এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মাঠে এই বাস্তবতা তো আছেই, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান মার্কিন প্রশাসনই প্রথমবারের মতো সেই আকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করার বদলে উসকে দিচ্ছে।
এই অঞ্চলে শত বছর ধরে যে সংঘাত চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা রাখে মূলত মধ্যপন্থীরা। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা বাদ দিলে দেখা যায়, এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিগুলোকে রোধ করে মূলত মাঠের বাস্তবতা, আদর্শ নয়। কারণ, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের কেউই একে অপরকে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারে না, ভয়াবহ রক্তপাত ছাড়া। আর আন্তর্জাতিক সমাজও কখনোই এমন পরিণতি মেনে নেয়নি, যেখানে একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে পুরোপুরি হটিয়ে দেবে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট চেয়েছেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা আলোচনার টেবিলেই নিজেদের বিরোধ মেটাক।
ফিলিস্তিনে ভূখণ্ড নিয়ে আপসের যেসব প্রচেষ্টা অতীতে হয়েছে, তা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে। তবে এসবের প্রভাব পড়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একপক্ষীয়ভাবে দখলের বাসনাকে কিছুটা হলেও সংযত করেছে এসব প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতা বোঝা যায় ইসরায়েলের রক্ষণশীল রাজনীতিক মাতান কাহানার এক বক্তব্য থেকে।
২০২২ সালে পশ্চিম তীরে একটি ইসরায়েলি বসতিতে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেছিলেন, ‘যদি এমন কোনো বোতাম থাকত, যেটা চাপলে সব আরবরা উধাও হয়ে যেত, সুইজারল্যান্ডে চলে যেত, সেখানে চমৎকার জীবন কাটাত—তাহলে আমি সেই বোতামটা চেপে দিতাম। কিন্তু কী আর করা? এমন কোনো বোতাম তো নেই। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—এই ভূখণ্ডে আমাদের কোনো না কোনোভাবে সহাবস্থান করেই চলতে হবে।’
কাহানার এই বক্তব্য গোপনে ফাঁস হয়ে যায়। পরে কাহানাকে ক্ষমাও চাইতে হয়। তবে ঘটনাটি এক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে। সেটি হলো—যখন কাহানার মতো সেটলারপন্থী আইনপ্রণেতাও একই মতাদর্শের শ্রোতার সামনে এ ধরনের কথা বলেন, তখন বোঝা যায়, তাঁর মতো লোকও মনে করে ‘অপর পক্ষকে’ উৎখাতের স্বপ্ন অবাস্তব।
তবে এই ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন হামাস ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এই ঘটনার পর ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা তাদের বহুদিনের অবদমিত ইচ্ছা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজে পায়।
এর আগে, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে সব বসতি উচ্ছেদ করে এলাকা ছেড়ে দিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের হাতে। ১৮ বছর পর, ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় পুনরায় প্রবেশ করে তখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে থাকা চরমপন্থীরা সেই পুরোনো ঘড়ির কাঁটা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা করেন এবং যাঁরা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিতাড়নের কৌশলে নামেন।
২০২৩ সালের শেষ দিকে ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা লিমোর সন হার-মেলেখ ঘোষণা দেন, ‘এই যুদ্ধের একমাত্র বিজয়চিহ্ন যা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে, তা হলো—পুরো গাজা উপত্যকায় ইহুদি বসতি স্থাপন।’ ওই বছরের নভেম্বরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ‘গাজা উপত্যকায় ফিরে যাওয়া’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তব্য দেন। কয়েক সপ্তাহ পর মধ্য ইসরায়েলে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী ‘গাজায় বসতির বাস্তব প্রস্তুতি’—এই শিরোনামে আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নেন।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নেতানিয়াহুর জোটের ৬৪ আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৫ জন যোগ দেন জেরুজালেমে আয়োজিত আরও বড় এক সমাবেশে। সেখানে বক্তারা প্রকাশ্যে ‘গাজাবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ’—নামে পরিচিত একটি ধারণার পক্ষে মত দেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনেরই আরেক নাম।
তবে জনমত বলছে, গাজা পুনর্বাসন বা এর দখল নেওয়ার পক্ষে নেই বেশির ভাগ ইসরায়েলি। এমনকি যেসব ইসরায়েলি ভবিষ্যতে গোটা ভূমি শাসনের স্বপ্ন দেখে, তাদেরও অনেকেই বাস্তবে হামাসের বিরুদ্ধে স্থায়ী সামরিক দখল বজায় রাখার কথা ভেবে পিছিয়ে যায়।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন নির্ভর করছেন সেই সংখ্যালঘু কট্টর ডানপন্থীদের ওপর, যারা গাজা দখল ও বসতি স্থাপনের পক্ষেই জোরালো দাবি জানাচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ জাতীয় নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জোট মোট ভোটের মাত্র ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি যে দলগুলোর ওপর নির্ভর করছেন, সেগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ্যেই আরববিদ্বেষী ও চরম ডানপন্থী। এ অবস্থায় নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগে চলমান বিচারের মুখোমুখি থাকায় নিজের অবস্থান রক্ষায় এসব চরমপন্থীদের প্রভাবের বাইরে যেতে পারছেন না।
এই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অনুধাবন করেছেন। তাই তাঁর প্রশাসন একযোগে প্রকাশ্য ও গোপন চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়, যেন নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থী মিত্রদের দাবি মানতে বাধ্য না হন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বারবার স্পষ্ট, ধারাবাহিক ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছি, গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি, এটি ফিলিস্তিনিদেরই ভূমি হয়ে থাকবে।’ মিলার নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রীর ‘উসকানিমূলক ও দায়িত্বহীন’ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই দুই মন্ত্রী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘দেশত্যাগ’ উৎসাহিত করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে উড়ে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদের আশ্বস্ত করেন, ওয়াশিংটন গাজা থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করে। কাতারের দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব নিজেদের ঘরে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। তাদের গাজা ছাড়তে চাপ দেওয়া চলবে না, দেওয়া উচিতও নয়।’
দোহা সফর শেষে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল যান এবং সেখানেও নেতানিয়াহুকে একই বার্তা দেন বলে জানা গেছে। পরদিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েলের গাজা দখল বা সেখানকার জনগণকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই।’ সে সময় নেতানিয়াহুর দলের এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।’ বাইডেন প্রশাসনের তৎপরতায় আপাতত চরমপন্থী অবস্থানকে কিছুটা হলেও পেছনে সরিয়ে রাখা গেছে।
কিন্তু ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ট্রাম্পের জয়ের দিনে নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করেন। গ্যালান্ত গাজাকে ইসরায়েলি দখলে নিয়ে এর পুনর্বাসন পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন। মূলত, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি না হওয়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে গ্যালান্ত। এভাবেই একদিনেই গাজা দখলের পথে বাইরের (বাইডেন) এবং ভেতরের (গ্যালান্ত) প্রধান প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যায় নেতানিয়াহুর সামনে। এরপর, নেতানিয়াহুর ওপর গাজা দখলের চাপ আরও বাড়তে থাকে কট্টর ডানপন্থীদের দিক থেকে এবং এরপর ট্রাম্প নিজেও যেন সেই চাপে শামিল হয়ে যান।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে নেতানিয়াহুর পাশে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগকে নাটকীয়ভাবে বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি গাজা দখলের ঘোষণা দেন, সেখানে বসবাসকারীদের স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন এবং গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার পরিকল্পনা জানান।
এই ভাবনাটি হয়তো ট্রাম্পের মনে ভুলভাবে গঠিত একধরনের সহানুভূতি থেকেই এসেছে। তিনি হয়তো ভেবেছেন—ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি উন্নত ভবিষ্যৎ এনে দিতে পারে। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য যা–ই হোক, এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে অনেক ইসরায়েলির কাছে তাদের বহুদিনের ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’ বাস্তবায়নের ইঙ্গিত হিসেবে গৃহীত হয়। কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের কাছে এটি রীতিমতো ‘জাতিগত নির্মূলীকরণের’ বৈধ অনুমতি হিসেবে দেখা দেয়। একসময় যা ছিল অলীক কল্পনা, ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে তা বাস্তব পরিকল্পনায় রূপ নেয় এবং পরিণত হয় সংঘাত শেষ করার পথে এক বড় বাধায়।
এরপর মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মহাপরিচালক ওয়াশিংটন সফর করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সফরে তিনি ‘স্বেচ্ছায়’ ‘লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে’ তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যেই গাজায় খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিরা এখনো মুক্তি পায়নি।
ফলে যুদ্ধ শেষ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এখন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দিন না প্রেসিডেন্ট নিজে গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যের বিরোধিতা করে স্পষ্টভাবে অবস্থান নেন, তত দিন এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর যেকোনো উদ্যোগের অন্তরায় হয়ে থাকবে।
হামাস তারা নিশ্চিন্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অজেয় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না গাজার শেষ নাগরিকটিও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যা করা প্রয়োজন করেন, তা–ই করে যাবেন। তিনি চরম ডানপন্থীদের সন্তুষ্ট রাখতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন, যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণই হবে প্রধান কাজ। অথচ ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন মুখে অন্তত এ ধরনের পরিণতি চান না।
ট্রাম্প বহুদিন তাঁর ‘রিভেরা’ পরিকল্পনার কথা বলেননি। বরং এখন তিনি ইসরায়েলকে সমঝোতায় যেতে চাপ দিচ্ছেন। গত ২৯ জুন ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘গাজায় চুক্তি করো। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনো!’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘমেয়াদি ও বর্তমানে গাজায় বিশেষভাবে নৃশংস হয়ে ওঠা সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্টের বার্তা পরিষ্কার—তিনি চান হত্যা বন্ধ হোক, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হোক এবং সব জিম্মি যেন গাজা থেকে মুক্তি পায়।’
তবে সত্যি বলতে, প্রেসিডেন্টের বার্তা স্পষ্ট নয়। এটি পরস্পরবিরোধী। আর এটাই এখন মূল সমস্যা। এ সপ্তাহেই ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠিয়েছেন বিদেশ সফরে, সমঝোতা চুক্তির আশায়। কিন্তু যদি এই প্রশাসন শুধু আরেকটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে থেমে না থেকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এগোতে চায়, তাহলে অবশ্যই ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনৈতিক স্বপ্ন—গাজা তো বটেই, এমনকি পশ্চিম তীর জয়ের চিন্তাকেও—আর উৎসাহ দেওয়া যাবে না। দুই পক্ষই যে এখানেই থাকবে এবং কোনো একচেটিয়া দাবিই যে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে।
নেতানিয়াহু হয়তো চরমপন্থীদের খুশি রাখতে চাইবেন, কিন্তু তাঁর জোট এখন ভাঙনের পথে। ২০২৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সমর্থন হারান, সেটি তাঁর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। তাই ট্রাম্প যেটিই বলেন, ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে, সেই নির্দেশই মানতে বাধ্য হবেন নেতানিয়াহু।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার ওজন আছে। গাজা নিয়ে ‘গাজা-এ-লাগো’ ধরনের হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্প যেমন একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি বা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির পথ কঠিন করে তুলেছেন, তেমনি তিনিই চাইলে তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল থেকে বেরিয়ে এসে পরিস্থিতি উল্টেও দিতে পারেন—যদি সত্যিই তা করার সদিচ্ছা থাকে।
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছে আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ক্ষেত্রে একটি সত্য খুব দুর্বলভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তা হলো—সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো চায় পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিজের করে নিতে এবং অপর পক্ষকে পুরোপুরি অদৃশ্য করে দিতে। ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নয়, তাদের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেই ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা।
এরপর, ২০১৬ সালের এক জরিপে প্রায় অর্ধেক ইসরায়েলি ইহুদি একমত হয়, ‘আরবদের ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত বা স্থানান্তর করা উচিত।’ ২০০০ সালে, যখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখনকার এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলি ও ১০ শতাংশ ফিলিস্তিনি একমত ছিলেন, স্কুল পাঠ্যক্রমে এমন শিক্ষা থাকা উচিত যাতে শিক্ষার্থীরা ‘অন্য রাষ্ট্রে’ পড়ে থাকা নিজেদের ‘পিতৃভূমির’ অংশ ছাড় দেওয়ার চিন্তা করতে শেখে।
এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকেই অপর পক্ষকে একেবারে মুছে ফেলতে চায়—এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মাঠে এই বাস্তবতা তো আছেই, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান মার্কিন প্রশাসনই প্রথমবারের মতো সেই আকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করার বদলে উসকে দিচ্ছে।
এই অঞ্চলে শত বছর ধরে যে সংঘাত চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা রাখে মূলত মধ্যপন্থীরা। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা বাদ দিলে দেখা যায়, এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিগুলোকে রোধ করে মূলত মাঠের বাস্তবতা, আদর্শ নয়। কারণ, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের কেউই একে অপরকে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারে না, ভয়াবহ রক্তপাত ছাড়া। আর আন্তর্জাতিক সমাজও কখনোই এমন পরিণতি মেনে নেয়নি, যেখানে একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে পুরোপুরি হটিয়ে দেবে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট চেয়েছেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা আলোচনার টেবিলেই নিজেদের বিরোধ মেটাক।
ফিলিস্তিনে ভূখণ্ড নিয়ে আপসের যেসব প্রচেষ্টা অতীতে হয়েছে, তা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে। তবে এসবের প্রভাব পড়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একপক্ষীয়ভাবে দখলের বাসনাকে কিছুটা হলেও সংযত করেছে এসব প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতা বোঝা যায় ইসরায়েলের রক্ষণশীল রাজনীতিক মাতান কাহানার এক বক্তব্য থেকে।
২০২২ সালে পশ্চিম তীরে একটি ইসরায়েলি বসতিতে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেছিলেন, ‘যদি এমন কোনো বোতাম থাকত, যেটা চাপলে সব আরবরা উধাও হয়ে যেত, সুইজারল্যান্ডে চলে যেত, সেখানে চমৎকার জীবন কাটাত—তাহলে আমি সেই বোতামটা চেপে দিতাম। কিন্তু কী আর করা? এমন কোনো বোতাম তো নেই। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—এই ভূখণ্ডে আমাদের কোনো না কোনোভাবে সহাবস্থান করেই চলতে হবে।’
কাহানার এই বক্তব্য গোপনে ফাঁস হয়ে যায়। পরে কাহানাকে ক্ষমাও চাইতে হয়। তবে ঘটনাটি এক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে। সেটি হলো—যখন কাহানার মতো সেটলারপন্থী আইনপ্রণেতাও একই মতাদর্শের শ্রোতার সামনে এ ধরনের কথা বলেন, তখন বোঝা যায়, তাঁর মতো লোকও মনে করে ‘অপর পক্ষকে’ উৎখাতের স্বপ্ন অবাস্তব।
তবে এই ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন হামাস ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এই ঘটনার পর ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা তাদের বহুদিনের অবদমিত ইচ্ছা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজে পায়।
এর আগে, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে সব বসতি উচ্ছেদ করে এলাকা ছেড়ে দিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের হাতে। ১৮ বছর পর, ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় পুনরায় প্রবেশ করে তখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে থাকা চরমপন্থীরা সেই পুরোনো ঘড়ির কাঁটা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা করেন এবং যাঁরা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিতাড়নের কৌশলে নামেন।
২০২৩ সালের শেষ দিকে ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা লিমোর সন হার-মেলেখ ঘোষণা দেন, ‘এই যুদ্ধের একমাত্র বিজয়চিহ্ন যা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে, তা হলো—পুরো গাজা উপত্যকায় ইহুদি বসতি স্থাপন।’ ওই বছরের নভেম্বরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ‘গাজা উপত্যকায় ফিরে যাওয়া’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তব্য দেন। কয়েক সপ্তাহ পর মধ্য ইসরায়েলে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী ‘গাজায় বসতির বাস্তব প্রস্তুতি’—এই শিরোনামে আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নেন।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নেতানিয়াহুর জোটের ৬৪ আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৫ জন যোগ দেন জেরুজালেমে আয়োজিত আরও বড় এক সমাবেশে। সেখানে বক্তারা প্রকাশ্যে ‘গাজাবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ’—নামে পরিচিত একটি ধারণার পক্ষে মত দেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনেরই আরেক নাম।
তবে জনমত বলছে, গাজা পুনর্বাসন বা এর দখল নেওয়ার পক্ষে নেই বেশির ভাগ ইসরায়েলি। এমনকি যেসব ইসরায়েলি ভবিষ্যতে গোটা ভূমি শাসনের স্বপ্ন দেখে, তাদেরও অনেকেই বাস্তবে হামাসের বিরুদ্ধে স্থায়ী সামরিক দখল বজায় রাখার কথা ভেবে পিছিয়ে যায়।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন নির্ভর করছেন সেই সংখ্যালঘু কট্টর ডানপন্থীদের ওপর, যারা গাজা দখল ও বসতি স্থাপনের পক্ষেই জোরালো দাবি জানাচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ জাতীয় নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জোট মোট ভোটের মাত্র ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি যে দলগুলোর ওপর নির্ভর করছেন, সেগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ্যেই আরববিদ্বেষী ও চরম ডানপন্থী। এ অবস্থায় নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগে চলমান বিচারের মুখোমুখি থাকায় নিজের অবস্থান রক্ষায় এসব চরমপন্থীদের প্রভাবের বাইরে যেতে পারছেন না।
এই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অনুধাবন করেছেন। তাই তাঁর প্রশাসন একযোগে প্রকাশ্য ও গোপন চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়, যেন নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থী মিত্রদের দাবি মানতে বাধ্য না হন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বারবার স্পষ্ট, ধারাবাহিক ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছি, গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি, এটি ফিলিস্তিনিদেরই ভূমি হয়ে থাকবে।’ মিলার নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রীর ‘উসকানিমূলক ও দায়িত্বহীন’ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই দুই মন্ত্রী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘দেশত্যাগ’ উৎসাহিত করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে উড়ে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদের আশ্বস্ত করেন, ওয়াশিংটন গাজা থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করে। কাতারের দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব নিজেদের ঘরে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। তাদের গাজা ছাড়তে চাপ দেওয়া চলবে না, দেওয়া উচিতও নয়।’
দোহা সফর শেষে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল যান এবং সেখানেও নেতানিয়াহুকে একই বার্তা দেন বলে জানা গেছে। পরদিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েলের গাজা দখল বা সেখানকার জনগণকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই।’ সে সময় নেতানিয়াহুর দলের এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।’ বাইডেন প্রশাসনের তৎপরতায় আপাতত চরমপন্থী অবস্থানকে কিছুটা হলেও পেছনে সরিয়ে রাখা গেছে।
কিন্তু ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ট্রাম্পের জয়ের দিনে নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করেন। গ্যালান্ত গাজাকে ইসরায়েলি দখলে নিয়ে এর পুনর্বাসন পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন। মূলত, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি না হওয়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে গ্যালান্ত। এভাবেই একদিনেই গাজা দখলের পথে বাইরের (বাইডেন) এবং ভেতরের (গ্যালান্ত) প্রধান প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যায় নেতানিয়াহুর সামনে। এরপর, নেতানিয়াহুর ওপর গাজা দখলের চাপ আরও বাড়তে থাকে কট্টর ডানপন্থীদের দিক থেকে এবং এরপর ট্রাম্প নিজেও যেন সেই চাপে শামিল হয়ে যান।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে নেতানিয়াহুর পাশে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগকে নাটকীয়ভাবে বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি গাজা দখলের ঘোষণা দেন, সেখানে বসবাসকারীদের স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন এবং গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার পরিকল্পনা জানান।
এই ভাবনাটি হয়তো ট্রাম্পের মনে ভুলভাবে গঠিত একধরনের সহানুভূতি থেকেই এসেছে। তিনি হয়তো ভেবেছেন—ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি উন্নত ভবিষ্যৎ এনে দিতে পারে। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য যা–ই হোক, এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে অনেক ইসরায়েলির কাছে তাদের বহুদিনের ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’ বাস্তবায়নের ইঙ্গিত হিসেবে গৃহীত হয়। কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের কাছে এটি রীতিমতো ‘জাতিগত নির্মূলীকরণের’ বৈধ অনুমতি হিসেবে দেখা দেয়। একসময় যা ছিল অলীক কল্পনা, ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে তা বাস্তব পরিকল্পনায় রূপ নেয় এবং পরিণত হয় সংঘাত শেষ করার পথে এক বড় বাধায়।
এরপর মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মহাপরিচালক ওয়াশিংটন সফর করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সফরে তিনি ‘স্বেচ্ছায়’ ‘লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে’ তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যেই গাজায় খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিরা এখনো মুক্তি পায়নি।
ফলে যুদ্ধ শেষ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এখন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দিন না প্রেসিডেন্ট নিজে গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যের বিরোধিতা করে স্পষ্টভাবে অবস্থান নেন, তত দিন এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর যেকোনো উদ্যোগের অন্তরায় হয়ে থাকবে।
হামাস তারা নিশ্চিন্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অজেয় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না গাজার শেষ নাগরিকটিও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যা করা প্রয়োজন করেন, তা–ই করে যাবেন। তিনি চরম ডানপন্থীদের সন্তুষ্ট রাখতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন, যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণই হবে প্রধান কাজ। অথচ ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন মুখে অন্তত এ ধরনের পরিণতি চান না।
ট্রাম্প বহুদিন তাঁর ‘রিভেরা’ পরিকল্পনার কথা বলেননি। বরং এখন তিনি ইসরায়েলকে সমঝোতায় যেতে চাপ দিচ্ছেন। গত ২৯ জুন ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘গাজায় চুক্তি করো। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনো!’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘমেয়াদি ও বর্তমানে গাজায় বিশেষভাবে নৃশংস হয়ে ওঠা সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্টের বার্তা পরিষ্কার—তিনি চান হত্যা বন্ধ হোক, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হোক এবং সব জিম্মি যেন গাজা থেকে মুক্তি পায়।’
তবে সত্যি বলতে, প্রেসিডেন্টের বার্তা স্পষ্ট নয়। এটি পরস্পরবিরোধী। আর এটাই এখন মূল সমস্যা। এ সপ্তাহেই ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠিয়েছেন বিদেশ সফরে, সমঝোতা চুক্তির আশায়। কিন্তু যদি এই প্রশাসন শুধু আরেকটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে থেমে না থেকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এগোতে চায়, তাহলে অবশ্যই ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনৈতিক স্বপ্ন—গাজা তো বটেই, এমনকি পশ্চিম তীর জয়ের চিন্তাকেও—আর উৎসাহ দেওয়া যাবে না। দুই পক্ষই যে এখানেই থাকবে এবং কোনো একচেটিয়া দাবিই যে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে।
নেতানিয়াহু হয়তো চরমপন্থীদের খুশি রাখতে চাইবেন, কিন্তু তাঁর জোট এখন ভাঙনের পথে। ২০২৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সমর্থন হারান, সেটি তাঁর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। তাই ট্রাম্প যেটিই বলেন, ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে, সেই নির্দেশই মানতে বাধ্য হবেন নেতানিয়াহু।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার ওজন আছে। গাজা নিয়ে ‘গাজা-এ-লাগো’ ধরনের হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্প যেমন একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি বা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির পথ কঠিন করে তুলেছেন, তেমনি তিনিই চাইলে তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল থেকে বেরিয়ে এসে পরিস্থিতি উল্টেও দিতে পারেন—যদি সত্যিই তা করার সদিচ্ছা থাকে।
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছে আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ক্ষেত্রে একটি সত্য খুব দুর্বলভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তা হলো—সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো চায় পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিজের করে নিতে এবং অপর পক্ষকে পুরোপুরি অদৃশ্য করে দিতে। ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নয়, তাদের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেই ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা।
এরপর, ২০১৬ সালের এক জরিপে প্রায় অর্ধেক ইসরায়েলি ইহুদি একমত হয়, ‘আরবদের ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত বা স্থানান্তর করা উচিত।’ ২০০০ সালে, যখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখনকার এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলি ও ১০ শতাংশ ফিলিস্তিনি একমত ছিলেন, স্কুল পাঠ্যক্রমে এমন শিক্ষা থাকা উচিত যাতে শিক্ষার্থীরা ‘অন্য রাষ্ট্রে’ পড়ে থাকা নিজেদের ‘পিতৃভূমির’ অংশ ছাড় দেওয়ার চিন্তা করতে শেখে।
এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকেই অপর পক্ষকে একেবারে মুছে ফেলতে চায়—এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মাঠে এই বাস্তবতা তো আছেই, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান মার্কিন প্রশাসনই প্রথমবারের মতো সেই আকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করার বদলে উসকে দিচ্ছে।
এই অঞ্চলে শত বছর ধরে যে সংঘাত চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা রাখে মূলত মধ্যপন্থীরা। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা বাদ দিলে দেখা যায়, এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিগুলোকে রোধ করে মূলত মাঠের বাস্তবতা, আদর্শ নয়। কারণ, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের কেউই একে অপরকে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারে না, ভয়াবহ রক্তপাত ছাড়া। আর আন্তর্জাতিক সমাজও কখনোই এমন পরিণতি মেনে নেয়নি, যেখানে একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে পুরোপুরি হটিয়ে দেবে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট চেয়েছেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা আলোচনার টেবিলেই নিজেদের বিরোধ মেটাক।
ফিলিস্তিনে ভূখণ্ড নিয়ে আপসের যেসব প্রচেষ্টা অতীতে হয়েছে, তা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে। তবে এসবের প্রভাব পড়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একপক্ষীয়ভাবে দখলের বাসনাকে কিছুটা হলেও সংযত করেছে এসব প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতা বোঝা যায় ইসরায়েলের রক্ষণশীল রাজনীতিক মাতান কাহানার এক বক্তব্য থেকে।
২০২২ সালে পশ্চিম তীরে একটি ইসরায়েলি বসতিতে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেছিলেন, ‘যদি এমন কোনো বোতাম থাকত, যেটা চাপলে সব আরবরা উধাও হয়ে যেত, সুইজারল্যান্ডে চলে যেত, সেখানে চমৎকার জীবন কাটাত—তাহলে আমি সেই বোতামটা চেপে দিতাম। কিন্তু কী আর করা? এমন কোনো বোতাম তো নেই। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—এই ভূখণ্ডে আমাদের কোনো না কোনোভাবে সহাবস্থান করেই চলতে হবে।’
কাহানার এই বক্তব্য গোপনে ফাঁস হয়ে যায়। পরে কাহানাকে ক্ষমাও চাইতে হয়। তবে ঘটনাটি এক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে। সেটি হলো—যখন কাহানার মতো সেটলারপন্থী আইনপ্রণেতাও একই মতাদর্শের শ্রোতার সামনে এ ধরনের কথা বলেন, তখন বোঝা যায়, তাঁর মতো লোকও মনে করে ‘অপর পক্ষকে’ উৎখাতের স্বপ্ন অবাস্তব।
তবে এই ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন হামাস ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এই ঘটনার পর ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা তাদের বহুদিনের অবদমিত ইচ্ছা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজে পায়।
এর আগে, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে সব বসতি উচ্ছেদ করে এলাকা ছেড়ে দিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের হাতে। ১৮ বছর পর, ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় পুনরায় প্রবেশ করে তখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে থাকা চরমপন্থীরা সেই পুরোনো ঘড়ির কাঁটা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা করেন এবং যাঁরা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিতাড়নের কৌশলে নামেন।
২০২৩ সালের শেষ দিকে ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা লিমোর সন হার-মেলেখ ঘোষণা দেন, ‘এই যুদ্ধের একমাত্র বিজয়চিহ্ন যা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে, তা হলো—পুরো গাজা উপত্যকায় ইহুদি বসতি স্থাপন।’ ওই বছরের নভেম্বরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ‘গাজা উপত্যকায় ফিরে যাওয়া’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তব্য দেন। কয়েক সপ্তাহ পর মধ্য ইসরায়েলে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী ‘গাজায় বসতির বাস্তব প্রস্তুতি’—এই শিরোনামে আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নেন।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নেতানিয়াহুর জোটের ৬৪ আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৫ জন যোগ দেন জেরুজালেমে আয়োজিত আরও বড় এক সমাবেশে। সেখানে বক্তারা প্রকাশ্যে ‘গাজাবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ’—নামে পরিচিত একটি ধারণার পক্ষে মত দেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনেরই আরেক নাম।
তবে জনমত বলছে, গাজা পুনর্বাসন বা এর দখল নেওয়ার পক্ষে নেই বেশির ভাগ ইসরায়েলি। এমনকি যেসব ইসরায়েলি ভবিষ্যতে গোটা ভূমি শাসনের স্বপ্ন দেখে, তাদেরও অনেকেই বাস্তবে হামাসের বিরুদ্ধে স্থায়ী সামরিক দখল বজায় রাখার কথা ভেবে পিছিয়ে যায়।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন নির্ভর করছেন সেই সংখ্যালঘু কট্টর ডানপন্থীদের ওপর, যারা গাজা দখল ও বসতি স্থাপনের পক্ষেই জোরালো দাবি জানাচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ জাতীয় নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জোট মোট ভোটের মাত্র ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি যে দলগুলোর ওপর নির্ভর করছেন, সেগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ্যেই আরববিদ্বেষী ও চরম ডানপন্থী। এ অবস্থায় নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগে চলমান বিচারের মুখোমুখি থাকায় নিজের অবস্থান রক্ষায় এসব চরমপন্থীদের প্রভাবের বাইরে যেতে পারছেন না।
এই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অনুধাবন করেছেন। তাই তাঁর প্রশাসন একযোগে প্রকাশ্য ও গোপন চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়, যেন নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থী মিত্রদের দাবি মানতে বাধ্য না হন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বারবার স্পষ্ট, ধারাবাহিক ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছি, গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি, এটি ফিলিস্তিনিদেরই ভূমি হয়ে থাকবে।’ মিলার নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রীর ‘উসকানিমূলক ও দায়িত্বহীন’ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই দুই মন্ত্রী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘দেশত্যাগ’ উৎসাহিত করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে উড়ে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদের আশ্বস্ত করেন, ওয়াশিংটন গাজা থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করে। কাতারের দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব নিজেদের ঘরে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। তাদের গাজা ছাড়তে চাপ দেওয়া চলবে না, দেওয়া উচিতও নয়।’
দোহা সফর শেষে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল যান এবং সেখানেও নেতানিয়াহুকে একই বার্তা দেন বলে জানা গেছে। পরদিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েলের গাজা দখল বা সেখানকার জনগণকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই।’ সে সময় নেতানিয়াহুর দলের এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।’ বাইডেন প্রশাসনের তৎপরতায় আপাতত চরমপন্থী অবস্থানকে কিছুটা হলেও পেছনে সরিয়ে রাখা গেছে।
কিন্তু ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ট্রাম্পের জয়ের দিনে নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করেন। গ্যালান্ত গাজাকে ইসরায়েলি দখলে নিয়ে এর পুনর্বাসন পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন। মূলত, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি না হওয়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে গ্যালান্ত। এভাবেই একদিনেই গাজা দখলের পথে বাইরের (বাইডেন) এবং ভেতরের (গ্যালান্ত) প্রধান প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যায় নেতানিয়াহুর সামনে। এরপর, নেতানিয়াহুর ওপর গাজা দখলের চাপ আরও বাড়তে থাকে কট্টর ডানপন্থীদের দিক থেকে এবং এরপর ট্রাম্প নিজেও যেন সেই চাপে শামিল হয়ে যান।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে নেতানিয়াহুর পাশে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগকে নাটকীয়ভাবে বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি গাজা দখলের ঘোষণা দেন, সেখানে বসবাসকারীদের স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন এবং গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার পরিকল্পনা জানান।
এই ভাবনাটি হয়তো ট্রাম্পের মনে ভুলভাবে গঠিত একধরনের সহানুভূতি থেকেই এসেছে। তিনি হয়তো ভেবেছেন—ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি উন্নত ভবিষ্যৎ এনে দিতে পারে। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য যা–ই হোক, এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে অনেক ইসরায়েলির কাছে তাদের বহুদিনের ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’ বাস্তবায়নের ইঙ্গিত হিসেবে গৃহীত হয়। কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের কাছে এটি রীতিমতো ‘জাতিগত নির্মূলীকরণের’ বৈধ অনুমতি হিসেবে দেখা দেয়। একসময় যা ছিল অলীক কল্পনা, ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে তা বাস্তব পরিকল্পনায় রূপ নেয় এবং পরিণত হয় সংঘাত শেষ করার পথে এক বড় বাধায়।
এরপর মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মহাপরিচালক ওয়াশিংটন সফর করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সফরে তিনি ‘স্বেচ্ছায়’ ‘লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে’ তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যেই গাজায় খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিরা এখনো মুক্তি পায়নি।
ফলে যুদ্ধ শেষ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এখন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দিন না প্রেসিডেন্ট নিজে গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যের বিরোধিতা করে স্পষ্টভাবে অবস্থান নেন, তত দিন এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর যেকোনো উদ্যোগের অন্তরায় হয়ে থাকবে।
হামাস তারা নিশ্চিন্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অজেয় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না গাজার শেষ নাগরিকটিও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যা করা প্রয়োজন করেন, তা–ই করে যাবেন। তিনি চরম ডানপন্থীদের সন্তুষ্ট রাখতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন, যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণই হবে প্রধান কাজ। অথচ ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন মুখে অন্তত এ ধরনের পরিণতি চান না।
ট্রাম্প বহুদিন তাঁর ‘রিভেরা’ পরিকল্পনার কথা বলেননি। বরং এখন তিনি ইসরায়েলকে সমঝোতায় যেতে চাপ দিচ্ছেন। গত ২৯ জুন ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘গাজায় চুক্তি করো। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনো!’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘমেয়াদি ও বর্তমানে গাজায় বিশেষভাবে নৃশংস হয়ে ওঠা সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্টের বার্তা পরিষ্কার—তিনি চান হত্যা বন্ধ হোক, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হোক এবং সব জিম্মি যেন গাজা থেকে মুক্তি পায়।’
তবে সত্যি বলতে, প্রেসিডেন্টের বার্তা স্পষ্ট নয়। এটি পরস্পরবিরোধী। আর এটাই এখন মূল সমস্যা। এ সপ্তাহেই ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠিয়েছেন বিদেশ সফরে, সমঝোতা চুক্তির আশায়। কিন্তু যদি এই প্রশাসন শুধু আরেকটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে থেমে না থেকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এগোতে চায়, তাহলে অবশ্যই ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনৈতিক স্বপ্ন—গাজা তো বটেই, এমনকি পশ্চিম তীর জয়ের চিন্তাকেও—আর উৎসাহ দেওয়া যাবে না। দুই পক্ষই যে এখানেই থাকবে এবং কোনো একচেটিয়া দাবিই যে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে।
নেতানিয়াহু হয়তো চরমপন্থীদের খুশি রাখতে চাইবেন, কিন্তু তাঁর জোট এখন ভাঙনের পথে। ২০২৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সমর্থন হারান, সেটি তাঁর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। তাই ট্রাম্প যেটিই বলেন, ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে, সেই নির্দেশই মানতে বাধ্য হবেন নেতানিয়াহু।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার ওজন আছে। গাজা নিয়ে ‘গাজা-এ-লাগো’ ধরনের হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্প যেমন একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি বা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির পথ কঠিন করে তুলেছেন, তেমনি তিনিই চাইলে তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল থেকে বেরিয়ে এসে পরিস্থিতি উল্টেও দিতে পারেন—যদি সত্যিই তা করার সদিচ্ছা থাকে।
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছে আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ক্ষেত্রে একটি সত্য খুব দুর্বলভাবে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তা হলো—সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো চায় পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিজের করে নিতে এবং অপর পক্ষকে পুরোপুরি অদৃশ্য করে দিতে। ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নয়, তাদের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেই ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা।
এরপর, ২০১৬ সালের এক জরিপে প্রায় অর্ধেক ইসরায়েলি ইহুদি একমত হয়, ‘আরবদের ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত বা স্থানান্তর করা উচিত।’ ২০০০ সালে, যখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আলোচনা চলছিল, তখনকার এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলি ও ১০ শতাংশ ফিলিস্তিনি একমত ছিলেন, স্কুল পাঠ্যক্রমে এমন শিক্ষা থাকা উচিত যাতে শিক্ষার্থীরা ‘অন্য রাষ্ট্রে’ পড়ে থাকা নিজেদের ‘পিতৃভূমির’ অংশ ছাড় দেওয়ার চিন্তা করতে শেখে।
এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকেই অপর পক্ষকে একেবারে মুছে ফেলতে চায়—এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মাঠে এই বাস্তবতা তো আছেই, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান মার্কিন প্রশাসনই প্রথমবারের মতো সেই আকাঙ্ক্ষাকে প্রশমিত করার বদলে উসকে দিচ্ছে।
এই অঞ্চলে শত বছর ধরে যে সংঘাত চলছে, তা নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা রাখে মূলত মধ্যপন্থীরা। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা বাদ দিলে দেখা যায়, এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিগুলোকে রোধ করে মূলত মাঠের বাস্তবতা, আদর্শ নয়। কারণ, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের কেউই একে অপরকে পুরোপুরি পরাজিত করতে পারে না, ভয়াবহ রক্তপাত ছাড়া। আর আন্তর্জাতিক সমাজও কখনোই এমন পরিণতি মেনে নেয়নি, যেখানে একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে পুরোপুরি হটিয়ে দেবে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট চেয়েছেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা আলোচনার টেবিলেই নিজেদের বিরোধ মেটাক।
ফিলিস্তিনে ভূখণ্ড নিয়ে আপসের যেসব প্রচেষ্টা অতীতে হয়েছে, তা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে। তবে এসবের প্রভাব পড়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একপক্ষীয়ভাবে দখলের বাসনাকে কিছুটা হলেও সংযত করেছে এসব প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতা বোঝা যায় ইসরায়েলের রক্ষণশীল রাজনীতিক মাতান কাহানার এক বক্তব্য থেকে।
২০২২ সালে পশ্চিম তীরে একটি ইসরায়েলি বসতিতে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেছিলেন, ‘যদি এমন কোনো বোতাম থাকত, যেটা চাপলে সব আরবরা উধাও হয়ে যেত, সুইজারল্যান্ডে চলে যেত, সেখানে চমৎকার জীবন কাটাত—তাহলে আমি সেই বোতামটা চেপে দিতাম। কিন্তু কী আর করা? এমন কোনো বোতাম তো নেই। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—এই ভূখণ্ডে আমাদের কোনো না কোনোভাবে সহাবস্থান করেই চলতে হবে।’
কাহানার এই বক্তব্য গোপনে ফাঁস হয়ে যায়। পরে কাহানাকে ক্ষমাও চাইতে হয়। তবে ঘটনাটি এক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে। সেটি হলো—যখন কাহানার মতো সেটলারপন্থী আইনপ্রণেতাও একই মতাদর্শের শ্রোতার সামনে এ ধরনের কথা বলেন, তখন বোঝা যায়, তাঁর মতো লোকও মনে করে ‘অপর পক্ষকে’ উৎখাতের স্বপ্ন অবাস্তব।
তবে এই ধারণায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন হামাস ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এই ঘটনার পর ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীরা তাদের বহুদিনের অবদমিত ইচ্ছা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজে পায়।
এর আগে, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে সব বসতি উচ্ছেদ করে এলাকা ছেড়ে দিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের হাতে। ১৮ বছর পর, ইসরায়েলি বাহিনী যখন গাজায় পুনরায় প্রবেশ করে তখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে থাকা চরমপন্থীরা সেই পুরোনো ঘড়ির কাঁটা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টা করেন এবং যাঁরা তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিতাড়নের কৌশলে নামেন।
২০২৩ সালের শেষ দিকে ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা লিমোর সন হার-মেলেখ ঘোষণা দেন, ‘এই যুদ্ধের একমাত্র বিজয়চিহ্ন যা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে, তা হলো—পুরো গাজা উপত্যকায় ইহুদি বসতি স্থাপন।’ ওই বছরের নভেম্বরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ‘গাজা উপত্যকায় ফিরে যাওয়া’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তব্য দেন। কয়েক সপ্তাহ পর মধ্য ইসরায়েলে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী ‘গাজায় বসতির বাস্তব প্রস্তুতি’—এই শিরোনামে আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নেন।
এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নেতানিয়াহুর জোটের ৬৪ আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৫ জন যোগ দেন জেরুজালেমে আয়োজিত আরও বড় এক সমাবেশে। সেখানে বক্তারা প্রকাশ্যে ‘গাজাবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ’—নামে পরিচিত একটি ধারণার পক্ষে মত দেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনেরই আরেক নাম।
তবে জনমত বলছে, গাজা পুনর্বাসন বা এর দখল নেওয়ার পক্ষে নেই বেশির ভাগ ইসরায়েলি। এমনকি যেসব ইসরায়েলি ভবিষ্যতে গোটা ভূমি শাসনের স্বপ্ন দেখে, তাদেরও অনেকেই বাস্তবে হামাসের বিরুদ্ধে স্থায়ী সামরিক দখল বজায় রাখার কথা ভেবে পিছিয়ে যায়।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন নির্ভর করছেন সেই সংখ্যালঘু কট্টর ডানপন্থীদের ওপর, যারা গাজা দখল ও বসতি স্থাপনের পক্ষেই জোরালো দাবি জানাচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ জাতীয় নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জোট মোট ভোটের মাত্র ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি যে দলগুলোর ওপর নির্ভর করছেন, সেগুলোর অধিকাংশই প্রকাশ্যেই আরববিদ্বেষী ও চরম ডানপন্থী। এ অবস্থায় নেতানিয়াহু দুর্নীতির অভিযোগে চলমান বিচারের মুখোমুখি থাকায় নিজের অবস্থান রক্ষায় এসব চরমপন্থীদের প্রভাবের বাইরে যেতে পারছেন না।
এই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অনুধাবন করেছেন। তাই তাঁর প্রশাসন একযোগে প্রকাশ্য ও গোপন চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়, যেন নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থী মিত্রদের দাবি মানতে বাধ্য না হন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বারবার স্পষ্ট, ধারাবাহিক ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে আসছি, গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি, এটি ফিলিস্তিনিদেরই ভূমি হয়ে থাকবে।’ মিলার নেতানিয়াহুর দুই মন্ত্রীর ‘উসকানিমূলক ও দায়িত্বহীন’ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। ওই দুই মন্ত্রী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘দেশত্যাগ’ উৎসাহিত করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে উড়ে যান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্রদের আশ্বস্ত করেন, ওয়াশিংটন গাজা থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করে। কাতারের দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব নিজেদের ঘরে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। তাদের গাজা ছাড়তে চাপ দেওয়া চলবে না, দেওয়া উচিতও নয়।’
দোহা সফর শেষে ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল যান এবং সেখানেও নেতানিয়াহুকে একই বার্তা দেন বলে জানা গেছে। পরদিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েলের গাজা দখল বা সেখানকার জনগণকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় নেই।’ সে সময় নেতানিয়াহুর দলের এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।’ বাইডেন প্রশাসনের তৎপরতায় আপাতত চরমপন্থী অবস্থানকে কিছুটা হলেও পেছনে সরিয়ে রাখা গেছে।
কিন্তু ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ট্রাম্পের জয়ের দিনে নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তকে বরখাস্ত করেন। গ্যালান্ত গাজাকে ইসরায়েলি দখলে নিয়ে এর পুনর্বাসন পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছিলেন। মূলত, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি না হওয়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে গ্যালান্ত। এভাবেই একদিনেই গাজা দখলের পথে বাইরের (বাইডেন) এবং ভেতরের (গ্যালান্ত) প্রধান প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যায় নেতানিয়াহুর সামনে। এরপর, নেতানিয়াহুর ওপর গাজা দখলের চাপ আরও বাড়তে থাকে কট্টর ডানপন্থীদের দিক থেকে এবং এরপর ট্রাম্প নিজেও যেন সেই চাপে শামিল হয়ে যান।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে নেতানিয়াহুর পাশে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত উদ্যোগকে নাটকীয়ভাবে বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি গাজা দখলের ঘোষণা দেন, সেখানে বসবাসকারীদের স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন এবং গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার পরিকল্পনা জানান।
এই ভাবনাটি হয়তো ট্রাম্পের মনে ভুলভাবে গঠিত একধরনের সহানুভূতি থেকেই এসেছে। তিনি হয়তো ভেবেছেন—ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি উন্নত ভবিষ্যৎ এনে দিতে পারে। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য যা–ই হোক, এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে অনেক ইসরায়েলির কাছে তাদের বহুদিনের ‘সর্বোচ্চ লক্ষ্য’ বাস্তবায়নের ইঙ্গিত হিসেবে গৃহীত হয়। কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের কাছে এটি রীতিমতো ‘জাতিগত নির্মূলীকরণের’ বৈধ অনুমতি হিসেবে দেখা দেয়। একসময় যা ছিল অলীক কল্পনা, ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে তা বাস্তব পরিকল্পনায় রূপ নেয় এবং পরিণত হয় সংঘাত শেষ করার পথে এক বড় বাধায়।
এরপর মে মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মহাপরিচালক ওয়াশিংটন সফর করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সফরে তিনি ‘স্বেচ্ছায়’ ‘লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে’ তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যেই গাজায় খাদ্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিরা এখনো মুক্তি পায়নি।
ফলে যুদ্ধ শেষ করার পরিবর্তে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব এখন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দিন না প্রেসিডেন্ট নিজে গাজাবাসীকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যের বিরোধিতা করে স্পষ্টভাবে অবস্থান নেন, তত দিন এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর যেকোনো উদ্যোগের অন্তরায় হয়ে থাকবে।
হামাস তারা নিশ্চিন্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অজেয় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না গাজার শেষ নাগরিকটিও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যা করা প্রয়োজন করেন, তা–ই করে যাবেন। তিনি চরম ডানপন্থীদের সন্তুষ্ট রাখতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন, যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে তাদের লক্ষ্য পূরণই হবে প্রধান কাজ। অথচ ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন মুখে অন্তত এ ধরনের পরিণতি চান না।
ট্রাম্প বহুদিন তাঁর ‘রিভেরা’ পরিকল্পনার কথা বলেননি। বরং এখন তিনি ইসরায়েলকে সমঝোতায় যেতে চাপ দিচ্ছেন। গত ২৯ জুন ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘গাজায় চুক্তি করো। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনো!’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘমেয়াদি ও বর্তমানে গাজায় বিশেষভাবে নৃশংস হয়ে ওঠা সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্টের বার্তা পরিষ্কার—তিনি চান হত্যা বন্ধ হোক, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হোক এবং সব জিম্মি যেন গাজা থেকে মুক্তি পায়।’
তবে সত্যি বলতে, প্রেসিডেন্টের বার্তা স্পষ্ট নয়। এটি পরস্পরবিরোধী। আর এটাই এখন মূল সমস্যা। এ সপ্তাহেই ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠিয়েছেন বিদেশ সফরে, সমঝোতা চুক্তির আশায়। কিন্তু যদি এই প্রশাসন শুধু আরেকটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে থেমে না থেকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এগোতে চায়, তাহলে অবশ্যই ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনৈতিক স্বপ্ন—গাজা তো বটেই, এমনকি পশ্চিম তীর জয়ের চিন্তাকেও—আর উৎসাহ দেওয়া যাবে না। দুই পক্ষই যে এখানেই থাকবে এবং কোনো একচেটিয়া দাবিই যে বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে।
নেতানিয়াহু হয়তো চরমপন্থীদের খুশি রাখতে চাইবেন, কিন্তু তাঁর জোট এখন ভাঙনের পথে। ২০২৬ সালের নির্বাচন সামনে রেখে তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সমর্থন হারান, সেটি তাঁর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। তাই ট্রাম্প যেটিই বলেন, ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে, সেই নির্দেশই মানতে বাধ্য হবেন নেতানিয়াহু।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার ওজন আছে। গাজা নিয়ে ‘গাজা-এ-লাগো’ ধরনের হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্প যেমন একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি বা মধ্যপ্রাচ্য শান্তির পথ কঠিন করে তুলেছেন, তেমনি তিনিই চাইলে তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল থেকে বেরিয়ে এসে পরিস্থিতি উল্টেও দিতে পারেন—যদি সত্যিই তা করার সদিচ্ছা থাকে।
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছে আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৮ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকে
২৬ জুলাই ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৮ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকে
২৬ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৮ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকে
২৬ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

এই তিক্ত পরিসংখ্যানগুলোই দেখায় যে কেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এত দীর্ঘ ও জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিরা দুটি বিপরীত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী। তাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তি একই ভূমির ওপর, কিন্তু একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। শতবর্ষের সহিংসতা ও উচ্ছেদের পর যদি অনেকে
২৬ জুলাই ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৮ দিন আগে