আজকের পত্রিকা ডেস্ক
চলতি মাসের শুরুর দিকে ফিলিস্তিনি কূটনীতিক ড. হুসসাম জুমলাতকে লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক চ্যাথাম হাউসে এক আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঠিক সেই সময়টাতেই বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই আলোচনায় জুমলাত স্পষ্ট বুঝে গিয়েছিলেন যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
তবে ড. জুমলাত সতর্ক করে বলেন, ‘নিউইয়র্কে আপনারা যা দেখতে যাচ্ছেন, তা হয়তো দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান কার্যকর করার আসল শেষ প্রচেষ্টা হতে পারে। সেটি যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়।’ জুমলাত যে আশা চ্যাথাম হাউসে প্রকাশ করেছিলেন, কয়েক সপ্তাহ পর সেটাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও এবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এ ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বেড়ে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে আমরা কাজ করছি শান্তির সম্ভাবনা আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাঁচিয়ে রাখতে। এর মানে হচ্ছে, একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি টিকে থাকার মতো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তোলা—বর্তমানে দুটোরই অভাব রয়েছে।’
এর আগে ১৫০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে যুক্তরাজ্যসহ নতুন কিছু দেশের যোগ হওয়াকে অনেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন। ফিলিস্তিনি প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা জাভিয়ের আবু ঈদ বলেন, ‘বিশ্বে এর আগে ফিলিস্তিন কখনোই এতটা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না। বিশ্ব এখন ফিলিস্তিনের জন্য এক হয়ে উঠছে।’
তবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন। এর একটি হলো—স্থায়ী জনসংখ্যা (যদিও গাজায় যুদ্ধের কারণে এটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা। ড. জুমলাত নিজেই এর প্রমাণ।

কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের শর্ত পূরণ এখনো হয়নি। চূড়ান্ত সীমান্ত নিয়ে কোনো সমঝোতা নেই (কোনো কার্যকর শান্তি প্রক্রিয়াও নেই)। ফলে ‘ফিলিস্তিন’ বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিতে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠিত হবে তিনটি অংশ নিয়ে—পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল এই তিনটি এলাকাই দখল করেছিল।
মানচিত্রে চোখ বোলালেই সমস্যাগুলো ধরা পড়ে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা প্রায় ৭৫ বছর পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ভৌগোলিকভাবে আলাদা হয়ে আছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও ইহুদি বসতির কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (যা ১৯৯০-এর দশকের অসলো শান্তি চুক্তির পর গঠিত হয়) হাতে রয়েছে কেবল প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ডের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে আরও খণ্ডিত করেছে, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এটিকে দুর্বল করে তুলেছে।
অন্যদিকে, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাঁদের রাজধানী হিসেবে দেখে। কিন্তু শহরটিকে ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা ইহুদি বসতি এটিকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। গাজার অবস্থা আরও ভয়াবহ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে উপত্যকার বড় একটি অংশ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এর বাইরেও সমাধান করার মতো একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য মন্টেভিডিও কনভেনশনে চতুর্থ যে মানদণ্ড রয়েছে, তা হলো—একটি কার্যকর সরকার। এটাই এখন ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন—পিএলও) মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয় ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ (যা সাধারণভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা পিএ নামেই পরিচিত)। এটি গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর আংশিক বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ চালাত।
কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস ও প্রধান পিএলওর রাজনৈতিক শাখা ফাতাহর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের অধীনে বসবাস করছে। গাজার ক্ষমতায় হামাস, আর পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
এভাবে যে ফিলিস্তিনের কথা বলা হয়, তা ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা হয়ে আছে ৭৭ বছর ধরে এবং রাজনৈতিক বিভাজন চলছে ১৮ বছর ধরে। দীর্ঘ এই সময়ে পশ্চিম তীর ও গাজা আরও দূরে সরে গেছে একে অপরের কাছ থেকে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি রাজনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি তাঁদের নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়েছেন এবং অভ্যন্তরীণ কোনো সমঝোতা বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতির ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
শেষবার ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল ২০০৬ সালে। অর্থাৎ, পশ্চিম তীর বা গাজায় ৩৬ বছরের কম বয়সী কোনো ফিলিস্তিনি জীবনে কখনো ভোট দিতে পারেননি। ফিলিস্তিনি আইনজীবী দিয়ানা বুত্তু বলেন, ‘এত বছর ধরে নির্বাচন না হওয়া সত্যিই মস্তিষ্ক অবশ করে দেওয়ার মতো। আমাদের নতুন নেতৃত্ব দরকার।’

এরপর, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর বিষয়টি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। হাজার হাজার নাগরিক নিহত হওয়ার মুখে পশ্চিম তীরের সদর দপ্তরে বসে থাকা আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কার্যত অসহায় দর্শকের ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।
যখন পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত নির্বাসন থেকে ফিরে এসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, তখন স্থানীয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিকেরা প্রায় উপেক্ষিত হয়ে পড়েন। ‘ভেতরের লোকেরা’ আরাফাতের ‘বাইরের লোকদের’ কর্তৃত্ববাদী ধরন মেনে নিতে পারেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে দুর্নীতির গুজবও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
সবচেয়ে বড় বিষয়, সদ্য গঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমাগত বসতি স্থাপন রোধে ব্যর্থ হয়। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের যে প্রতিশ্রুতি আরাফাতের ঐতিহাসিক হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে (ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসের লনে) আশাব্যঞ্জকভাবে উত্থাপিত হয়েছিল, সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
পরবর্তী বছরগুলোও ধীরস্থির রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য অনুকূল ছিল না। একের পর এক ব্যর্থ শান্তি উদ্যোগ, ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ, দুই পক্ষের চরমপন্থীদের সহিংসতা, ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়া এবং ২০০৭ সালে হামাস–ফাতাহর সহিংস বিভাজন—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে।
ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ ইয়াজিদ সায়িঘ বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নতুন নতুন মুখ, নতুন প্রজন্ম উঠে আসত। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি...দখলকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনিরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলাদা জায়গায় ভেঙে পড়েছে। এতে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।’
তবু একজন নেতা উঠে এসেছিলেন—মারওয়ান বারঘৌতি। পশ্চিম তীরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা বারঘৌতি ১৫ বছর বয়সেই আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ গোষ্ঠীতে সক্রিয় হন। দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা তথা বিদ্রোহের সময় তিনি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ ইসরায়েলিকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়। তিনি সব সময় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী।
তবু যখন ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়, তখন ফিলিস্তিনিরা প্রায় ২৫ বছর ধরে বন্দী একজন ব্যক্তির নামই বেশি উচ্চারণ করেন। পশ্চিম তীরভিত্তিক ‘প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের’ সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বারঘৌতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান। আর ২০০৫ সাল থেকে এই পদে থাকা মাহমুদ আব্বাসের সমর্থন অনেক কম।
মারওয়ান বারঘৌতি ফাতাহের জ্যেষ্ঠ সদস্য হলেও গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের বিনিময়ে হামাস যেসব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির তালিকা দিচ্ছে, সেখানে তাঁর নামও গুরুত্বের সঙ্গে রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু তাঁকে মুক্তি দিতে ইসরায়েল কোনো আগ্রহ দেখায়নি। গত আগস্টের মাঝামাঝি এক ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, ৬৬ বছর বয়সী কৃশকায় ও দুর্বল বারঘৌতিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির উপহাস করছেন। বহু বছর পর এটাই ছিল বারঘৌতির প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি।

গাজা যুদ্ধ শুরুরও আগে থেকেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতা ছিল স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, আমি-ই সেই ব্যক্তি, যিনি দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঠেকিয়ে রেখেছি। কারণ, তা হলে আমাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ত।’
আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আবার গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে আহ্বান জানানো হলেও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাঁর যুক্তি, মাহমুদ আব্বাস এখনো ৭ অক্টোবরের হামাস হামলার নিন্দা করেননি।
গত আগস্টে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে এমন এক বসতি নির্মাণ পরিকল্পনায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়, যা কার্যত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ৩ হাজার ৪০০টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন মেলে সে সময়। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেন, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে ‘সমাধিস্থ করবে। কারণ, স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছু নেই, কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ারও নেই’।
এ বিষয়কে নতুন কিছু নয় বলে মনে করেন ইয়াজিদ সাইয়িঘ। তিনি বলেন, ‘আপনি চাইলে আর্চএঞ্জেল মাইকেলকেও (ইসলামে যাকে ফেরেশতা মিকাইল বলা হয়) পৃথিবীতে নামিয়ে এনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান করতে পারেন। তবু কোনো পার্থক্য হবে না। কারণ, যে পরিবেশে কাজ করতে হবে, তাতে কোনো ধরনের সাফল্য অর্জন একেবারেই অসম্ভব। আর এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।’
একটা বিষয় নিশ্চিত—যদি কোনো দিন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে ওঠেও, সেটা হামাস চালাবে না। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় তিন দিনের এক সম্মেলনে গত জুলাইয়ে একটি ঘোষণা গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘হামাসকে অবশ্যই গাজায় তাদের শাসন শেষ করতে হবে এবং অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।’
‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’—নামে পরিচিত ওই ঘোষণা সব আরব রাষ্ট্র সমর্থন করে। পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৪২ সদস্য দেশ তা সমর্থন করে। অন্যদিকে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গাজার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে প্রস্তুত—তবে সেটা হবে স্বাধীন টেকনোক্র্যাট বা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্রশাসনের কাছে।
বারঘৌতি কারাগারে, আব্বাসের বয়স প্রায় ৯০, হামাস ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং পশ্চিম তীর ছিন্নভিন্ন—এমন অবস্থায় স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব ও ঐক্য খুবই দুর্বল। তবে এ কারণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে অমূল্য মনে করা যাবে না। ডায়ানা বুত্তু বলেন, ‘এটা আসলে অনেক মূল্যবান হতে পারে।’ তবে সতর্ক করে দিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘কিন্তু সেটা নির্ভর করবে এসব দেশ কেন করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী।’
ব্রিটিশ সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু প্রতীকী স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, আমরা কি কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারব, নাকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কেবল স্বীকৃতির এক উৎসব হয়ে থাকবে।’
‘নিউইয়র্ক ঘোষণায়’ স্বাক্ষরকারী দেশগুলো—যাদের মধ্যে ব্রিটেনও আছে—প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ‘বাস্তব, সময়ে সীমাবদ্ধ ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ’ নেওয়ার। লন্ডনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন, ঘোষণায় গাজা ও পশ্চিম তীরকে ঐক্যবদ্ধ করা, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমর্থন দেওয়া, ফিলিস্তিনি নির্বাচন আয়োজন এবং গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর পরিকল্পনা—এমন কিছু পদক্ষেপের কথাই বলা হয়েছে, যা স্বীকৃতির পর অনুসরণ করা উচিত।
তবে তাঁরা জানেন, প্রতিবন্ধকতা ভয়াবহ। ইসরায়েল এখনো অনড়ভাবে বিরোধিতা করছে এবং হুমকি দিচ্ছে, পশ্চিম তীরের কিছু অংশ বা পুরোটা আনুষ্ঠানিকভাবে দখল (অ্যানেক্সেশন) করবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমার (ব্রিটিশ) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে।’
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নেয়—দশকের পর দশ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করে। এটা জাতিসংঘের নিজস্ব নিয়ম লঙ্ঘনের সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা আছে এবং ট্রাম্প এখনো তাঁর তথাকথিত গাজা ‘রিভেরা পরিকল্পনায়’ অটল বলে মনে হচ্ছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ মেয়াদে গাজার ‘মালিকানা’ নেবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে শুধু ‘পুনর্গঠিত ফিলিস্তিনি স্বশাসন’ এবং গাজার সঙ্গে পশ্চিম তীরের কোনো ভবিষ্যৎ সংযোগের কথাও এতে নেই।
গাজার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ হয়তো নির্ধারিত হবে নিউইয়র্ক ঘোষণা, ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং আরব দেশগুলোর পুনর্গঠন পরিকল্পনার মধ্যে কোথাও। সব পরিকল্পনাই—তাদের নিজস্ব ভিন্ন পথে—চেষ্টা করছে গাজাকে গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে কিছুটা হলেও কিছু উদ্ধার করতে। আর ভবিষ্যতে যা-ই আসুক, সেটা অবশ্যই উত্তর দিতে হবে—ফিলিস্তিন কেমন হবে এবং তাদের নেতৃত্ব কেমন হবে।
কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মতো ডায়ানা বুত্তুর কাছে আরও জরুরি প্রশ্ন হলো অন্য কিছু। তিনি বলেন, আসলে তিনি চাইবেন এসব দেশ আরও হত্যা ঠেকাতে কাজ করুক। তাঁর ভাষায়, ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে বরং হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়াই জরুরি।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
চলতি মাসের শুরুর দিকে ফিলিস্তিনি কূটনীতিক ড. হুসসাম জুমলাতকে লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক চ্যাথাম হাউসে এক আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঠিক সেই সময়টাতেই বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই আলোচনায় জুমলাত স্পষ্ট বুঝে গিয়েছিলেন যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
তবে ড. জুমলাত সতর্ক করে বলেন, ‘নিউইয়র্কে আপনারা যা দেখতে যাচ্ছেন, তা হয়তো দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান কার্যকর করার আসল শেষ প্রচেষ্টা হতে পারে। সেটি যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়।’ জুমলাত যে আশা চ্যাথাম হাউসে প্রকাশ করেছিলেন, কয়েক সপ্তাহ পর সেটাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও এবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এ ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বেড়ে চলা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে আমরা কাজ করছি শান্তির সম্ভাবনা আর দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাঁচিয়ে রাখতে। এর মানে হচ্ছে, একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি টিকে থাকার মতো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তোলা—বর্তমানে দুটোরই অভাব রয়েছে।’
এর আগে ১৫০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে যুক্তরাজ্যসহ নতুন কিছু দেশের যোগ হওয়াকে অনেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন। ফিলিস্তিনি প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা জাভিয়ের আবু ঈদ বলেন, ‘বিশ্বে এর আগে ফিলিস্তিন কখনোই এতটা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না। বিশ্ব এখন ফিলিস্তিনের জন্য এক হয়ে উঠছে।’
তবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন। এর একটি হলো—স্থায়ী জনসংখ্যা (যদিও গাজায় যুদ্ধের কারণে এটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা। ড. জুমলাত নিজেই এর প্রমাণ।

কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের শর্ত পূরণ এখনো হয়নি। চূড়ান্ত সীমান্ত নিয়ে কোনো সমঝোতা নেই (কোনো কার্যকর শান্তি প্রক্রিয়াও নেই)। ফলে ‘ফিলিস্তিন’ বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিতে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠিত হবে তিনটি অংশ নিয়ে—পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল এই তিনটি এলাকাই দখল করেছিল।
মানচিত্রে চোখ বোলালেই সমস্যাগুলো ধরা পড়ে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা প্রায় ৭৫ বছর পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা ভৌগোলিকভাবে আলাদা হয়ে আছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও ইহুদি বসতির কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (যা ১৯৯০-এর দশকের অসলো শান্তি চুক্তির পর গঠিত হয়) হাতে রয়েছে কেবল প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ডের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে আরও খণ্ডিত করেছে, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এটিকে দুর্বল করে তুলেছে।
অন্যদিকে, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাঁদের রাজধানী হিসেবে দেখে। কিন্তু শহরটিকে ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা ইহুদি বসতি এটিকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। গাজার অবস্থা আরও ভয়াবহ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে উপত্যকার বড় একটি অংশ প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এর বাইরেও সমাধান করার মতো একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য মন্টেভিডিও কনভেনশনে চতুর্থ যে মানদণ্ড রয়েছে, তা হলো—একটি কার্যকর সরকার। এটাই এখন ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন—পিএলও) মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে গঠিত হয় ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ (যা সাধারণভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা পিএ নামেই পরিচিত)। এটি গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর আংশিক বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ চালাত।
কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস ও প্রধান পিএলওর রাজনৈতিক শাখা ফাতাহর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের অধীনে বসবাস করছে। গাজার ক্ষমতায় হামাস, আর পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, যার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
এভাবে যে ফিলিস্তিনের কথা বলা হয়, তা ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা হয়ে আছে ৭৭ বছর ধরে এবং রাজনৈতিক বিভাজন চলছে ১৮ বছর ধরে। দীর্ঘ এই সময়ে পশ্চিম তীর ও গাজা আরও দূরে সরে গেছে একে অপরের কাছ থেকে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনি রাজনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি তাঁদের নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়েছেন এবং অভ্যন্তরীণ কোনো সমঝোতা বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতির ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
শেষবার ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল ২০০৬ সালে। অর্থাৎ, পশ্চিম তীর বা গাজায় ৩৬ বছরের কম বয়সী কোনো ফিলিস্তিনি জীবনে কখনো ভোট দিতে পারেননি। ফিলিস্তিনি আইনজীবী দিয়ানা বুত্তু বলেন, ‘এত বছর ধরে নির্বাচন না হওয়া সত্যিই মস্তিষ্ক অবশ করে দেওয়ার মতো। আমাদের নতুন নেতৃত্ব দরকার।’

এরপর, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর বিষয়টি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। হাজার হাজার নাগরিক নিহত হওয়ার মুখে পশ্চিম তীরের সদর দপ্তরে বসে থাকা আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কার্যত অসহায় দর্শকের ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।
যখন পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত নির্বাসন থেকে ফিরে এসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, তখন স্থানীয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিকেরা প্রায় উপেক্ষিত হয়ে পড়েন। ‘ভেতরের লোকেরা’ আরাফাতের ‘বাইরের লোকদের’ কর্তৃত্ববাদী ধরন মেনে নিতে পারেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে দুর্নীতির গুজবও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
সবচেয়ে বড় বিষয়, সদ্য গঠিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমাগত বসতি স্থাপন রোধে ব্যর্থ হয়। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের যে প্রতিশ্রুতি আরাফাতের ঐতিহাসিক হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে (ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসের লনে) আশাব্যঞ্জকভাবে উত্থাপিত হয়েছিল, সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
পরবর্তী বছরগুলোও ধীরস্থির রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য অনুকূল ছিল না। একের পর এক ব্যর্থ শান্তি উদ্যোগ, ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ, দুই পক্ষের চরমপন্থীদের সহিংসতা, ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়া এবং ২০০৭ সালে হামাস–ফাতাহর সহিংস বিভাজন—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে।
ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ ইয়াজিদ সায়িঘ বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নতুন নতুন মুখ, নতুন প্রজন্ম উঠে আসত। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি...দখলকৃত এলাকায় ফিলিস্তিনিরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলাদা জায়গায় ভেঙে পড়েছে। এতে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।’
তবু একজন নেতা উঠে এসেছিলেন—মারওয়ান বারঘৌতি। পশ্চিম তীরেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা বারঘৌতি ১৫ বছর বয়সেই আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ গোষ্ঠীতে সক্রিয় হন। দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা তথা বিদ্রোহের সময় তিনি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ ইসরায়েলিকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়। তিনি সব সময় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী।
তবু যখন ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়, তখন ফিলিস্তিনিরা প্রায় ২৫ বছর ধরে বন্দী একজন ব্যক্তির নামই বেশি উচ্চারণ করেন। পশ্চিম তীরভিত্তিক ‘প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের’ সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বারঘৌতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান। আর ২০০৫ সাল থেকে এই পদে থাকা মাহমুদ আব্বাসের সমর্থন অনেক কম।
মারওয়ান বারঘৌতি ফাতাহের জ্যেষ্ঠ সদস্য হলেও গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের বিনিময়ে হামাস যেসব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির তালিকা দিচ্ছে, সেখানে তাঁর নামও গুরুত্বের সঙ্গে রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু তাঁকে মুক্তি দিতে ইসরায়েল কোনো আগ্রহ দেখায়নি। গত আগস্টের মাঝামাঝি এক ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, ৬৬ বছর বয়সী কৃশকায় ও দুর্বল বারঘৌতিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির উপহাস করছেন। বহু বছর পর এটাই ছিল বারঘৌতির প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি।

গাজা যুদ্ধ শুরুরও আগে থেকেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধিতা ছিল স্পষ্ট। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, আমি-ই সেই ব্যক্তি, যিনি দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঠেকিয়ে রেখেছি। কারণ, তা হলে আমাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ত।’
আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আবার গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে আহ্বান জানানো হলেও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তাঁর যুক্তি, মাহমুদ আব্বাস এখনো ৭ অক্টোবরের হামাস হামলার নিন্দা করেননি।
গত আগস্টে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে এমন এক বসতি নির্মাণ পরিকল্পনায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়, যা কার্যত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। ৩ হাজার ৪০০টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন মেলে সে সময়। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ বলেন, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে ‘সমাধিস্থ করবে। কারণ, স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছু নেই, কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ারও নেই’।
এ বিষয়কে নতুন কিছু নয় বলে মনে করেন ইয়াজিদ সাইয়িঘ। তিনি বলেন, ‘আপনি চাইলে আর্চএঞ্জেল মাইকেলকেও (ইসলামে যাকে ফেরেশতা মিকাইল বলা হয়) পৃথিবীতে নামিয়ে এনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান করতে পারেন। তবু কোনো পার্থক্য হবে না। কারণ, যে পরিবেশে কাজ করতে হবে, তাতে কোনো ধরনের সাফল্য অর্জন একেবারেই অসম্ভব। আর এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।’
একটা বিষয় নিশ্চিত—যদি কোনো দিন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে ওঠেও, সেটা হামাস চালাবে না। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় তিন দিনের এক সম্মেলনে গত জুলাইয়ে একটি ঘোষণা গৃহীত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘হামাসকে অবশ্যই গাজায় তাদের শাসন শেষ করতে হবে এবং অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।’
‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’—নামে পরিচিত ওই ঘোষণা সব আরব রাষ্ট্র সমর্থন করে। পরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৪২ সদস্য দেশ তা সমর্থন করে। অন্যদিকে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গাজার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে প্রস্তুত—তবে সেটা হবে স্বাধীন টেকনোক্র্যাট বা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্রশাসনের কাছে।
বারঘৌতি কারাগারে, আব্বাসের বয়স প্রায় ৯০, হামাস ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং পশ্চিম তীর ছিন্নভিন্ন—এমন অবস্থায় স্পষ্ট যে ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব ও ঐক্য খুবই দুর্বল। তবে এ কারণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে অমূল্য মনে করা যাবে না। ডায়ানা বুত্তু বলেন, ‘এটা আসলে অনেক মূল্যবান হতে পারে।’ তবে সতর্ক করে দিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘কিন্তু সেটা নির্ভর করবে এসব দেশ কেন করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী।’
ব্রিটিশ সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু প্রতীকী স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, আমরা কি কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারব, নাকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কেবল স্বীকৃতির এক উৎসব হয়ে থাকবে।’
‘নিউইয়র্ক ঘোষণায়’ স্বাক্ষরকারী দেশগুলো—যাদের মধ্যে ব্রিটেনও আছে—প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ‘বাস্তব, সময়ে সীমাবদ্ধ ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ’ নেওয়ার। লন্ডনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন, ঘোষণায় গাজা ও পশ্চিম তীরকে ঐক্যবদ্ধ করা, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমর্থন দেওয়া, ফিলিস্তিনি নির্বাচন আয়োজন এবং গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর পরিকল্পনা—এমন কিছু পদক্ষেপের কথাই বলা হয়েছে, যা স্বীকৃতির পর অনুসরণ করা উচিত।
তবে তাঁরা জানেন, প্রতিবন্ধকতা ভয়াবহ। ইসরায়েল এখনো অনড়ভাবে বিরোধিতা করছে এবং হুমকি দিচ্ছে, পশ্চিম তীরের কিছু অংশ বা পুরোটা আনুষ্ঠানিকভাবে দখল (অ্যানেক্সেশন) করবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমার (ব্রিটিশ) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে।’
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নেয়—দশকের পর দশ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করে। এটা জাতিসংঘের নিজস্ব নিয়ম লঙ্ঘনের সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা আছে এবং ট্রাম্প এখনো তাঁর তথাকথিত গাজা ‘রিভেরা পরিকল্পনায়’ অটল বলে মনে হচ্ছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ মেয়াদে গাজার ‘মালিকানা’ নেবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে শুধু ‘পুনর্গঠিত ফিলিস্তিনি স্বশাসন’ এবং গাজার সঙ্গে পশ্চিম তীরের কোনো ভবিষ্যৎ সংযোগের কথাও এতে নেই।
গাজার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ হয়তো নির্ধারিত হবে নিউইয়র্ক ঘোষণা, ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং আরব দেশগুলোর পুনর্গঠন পরিকল্পনার মধ্যে কোথাও। সব পরিকল্পনাই—তাদের নিজস্ব ভিন্ন পথে—চেষ্টা করছে গাজাকে গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে কিছুটা হলেও কিছু উদ্ধার করতে। আর ভবিষ্যতে যা-ই আসুক, সেটা অবশ্যই উত্তর দিতে হবে—ফিলিস্তিন কেমন হবে এবং তাদের নেতৃত্ব কেমন হবে।
কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মতো ডায়ানা বুত্তুর কাছে আরও জরুরি প্রশ্ন হলো অন্য কিছু। তিনি বলেন, আসলে তিনি চাইবেন এসব দেশ আরও হত্যা ঠেকাতে কাজ করুক। তাঁর ভাষায়, ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে বরং হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়াই জরুরি।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত
তবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে
তবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।
তবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে