রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিতর্কিত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে দেওয়া রায়টি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় জয়। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন বিচারব্যবস্থা ও নির্বাহী শাখার ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তাও দিল এই রায়। ছয় রক্ষণশীল বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের এই রায়ের মাধ্যমে কার্যত লাগামহীন ক্ষমতার পথে ট্রাম্পকে একধাপ এগিয়ে দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছিলেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। আর বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট প্রশ্ন তুলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আদৌ আদালতের আদেশ মানবে কি না। কিন্তু তাঁদের উদ্বেগ যে ক্ষণস্থায়ী, তা প্রমাণ করতে বড় ভূমিকা রাখলেন সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিচারপতি। ব্যারেটকে দিয়ে গতকাল শুক্রবার রবার্টস এমন এক রায় লেখালেন, যা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে দিল—হোক তা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ বা ফেডারেল সরকার ও ব্যক্তি অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলতে চাওয়া নীতির বাস্তবায়ন।
সুপ্রিম কোর্টের হোয়াইট মার্বল ভবনে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এই রায় হয়। ব্যারেটের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত এবং বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়রের ভিন্নমতের বক্তব্য—এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব আদালতের ভেতরে প্রতিফলিত হয়। এই রায়ে আরও একটি প্রবণতা স্পষ্ট হয়—ছয় বিচারপতির রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অ্যাজেন্ডার সঙ্গে একমত। এই সমর্থনের পেছনে রয়েছে অভিবাসী বহিষ্কার বা স্বাধীন সংস্থার প্রধানদের অপসারণের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা বিচারপতিরাই বাড়াতে চান। এ ছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদে যখন আদালত এলজিবিটিকিউ ও সামাজিক নীতি নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তুলেছেন, তখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানেই থেকেছেন।
গতকাল শুক্রবার ৬-৩ ভোটে মেরিল্যান্ডের একদল ধর্মীয় বিশ্বাসী অভিভাবকের পক্ষে রায় দেন বিচারপতিরা। তাঁরা চাইছিলেন তাঁদের শিশুদের সরকারি বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কিছু এলজিবিটিকিউ সম্পর্কিত বই না পড়াতে। এর আগের সপ্তাহে এই ছয় বিচারপতিই ১৮ বছরের নিচে ট্রান্সজেন্ডার কিশোরদের জন্য জেন্ডার কেয়ার নিষিদ্ধ করার রাজ্যের আইন বহাল রাখেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মামলাতেই জয়ী হয়েছেন—হোক তা নিয়মিত শুনানির সময় বা জরুরি আপিলে। গতকাল জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলসংক্রান্ত মামলার রায়ের পর হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ব্যারেটকে অনেক সম্মান করি। সব সময় করেছি। আজকের রায়টি তিনি অসাধারণভাবে লিখেছেন—সবার কাছ থেকেই এমনটাই শুনছি।’ যদিও ব্যারেট জোরালোভাবে তাঁর অবস্থান সমর্থন করছেন না বলে এর আগে সমালোচনা করেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ট্রাম্পের পক্ষে আসার প্রবণতা স্পষ্ট হলেও নিম্ন আদালতের বিচারকেরা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকেই বহু নির্বাহী আদেশ ঠেকিয়ে দেন। কিছু বিচারক তাঁর ক্ষমতাকেন্দ্রিক পদক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওয়াশিংটন ডিসির ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের এক বিচারক রায়ে লেখেন, ‘একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাজা নন।’
কিন্তু গতকালের রায় এবং গত বছরের প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তিসংক্রান্ত রায় মিলিয়ে এখন প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র তাঁর ভিন্নমতের বক্তব্যে বলেন, ‘নির্বাহী দায়মুক্তির দ্বিতীয় ধাপও সম্পন্ন হলো।’
আদালতকক্ষে দ্বৈত অবস্থান
গতকাল সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টে এই মেয়াদের শেষ অধিবেশন যখন শুরু হয়, তখনো ছয়টি মামলার রায় বাকি ছিল। ট্রাম্পসংক্রান্ত মামলাটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল। তাই ধরে নেওয়া হয়, এই রায়ের লেখক হবেন রবার্টস বা অন্য কোনো জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। আর তা হলে রায়টি শুনানির একেবারে শেষে আসবে। কারণ, বিচারপতিরা সিনিয়রিটির উল্টোক্রমে রায় পাঠ করেন। কিন্তু এই ধারণা ভেঙে দিয়ে রবার্টস শুরুতে জানান, ট্রাম্প বনাম সিএএসএ মামলার রায় লিখেছেন বিচারপতি ব্যারেট।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মনোনীত বিচারপতি ব্যারেট রক্ষণশীল অংশের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় লেখার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া সচরাচর হয় না। তাই এটিকে ব্যারেটের ওপর রবার্টসের আস্থার প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে মধ্যপন্থা নেওয়া বিচারপতির সঙ্গে রবার্টসের সুসম্পর্ক গড়ার কৌশলও হতে পারে এটা। গতকালের রায়ে ব্যারেটের সঙ্গে একমত ছিলেন বিচারপতি থমাস, আলিতো, গরসাচ, কাভানো ও রবার্টস।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার দিন ২০ জানুয়ারি বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। ওই দিন তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের প্রচলিত ব্যাখ্যা বাতিল করে নতুন আদেশ দেন। যাতে বলা হয়, যেসব শিশুর জন্ম হয় এমন অভিভাবকের পরিবারে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বা সাময়িক ভিসায় (যেমন ট্যুরিস্ট বা স্টুডেন্ট) অবস্থান করছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব থাকবে না।
প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে ‘অসাংবিধানিক’ বিবেচনা করে নিম্ন আদালতের একাধিক বিচারক ওই আদেশে অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে হোয়াইট হাউস প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। তবে সুপ্রিম কোর্ট পুরো আদেশের সাংবিধানিকতা নিয়ে রায় দিক—এটা তাঁরা চায়নি; বরং তারা চেয়েছিল, নিম্ন আদালতের বিচারকেরা ট্রাম্পের নীতির ওপর দেশজুড়ে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন কি না; তা নির্ধারণ করুক সর্বোচ্চ আদালত।
নিম্ন আদালতের বিচারকেরা এমন ‘বিশ্বজনীন নিষেধাজ্ঞা’ দিয়ে প্রেসিডেন্টের নীতিগুলো কার্যকর হওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। চূড়ান্তভাবে বৈধ কি অবৈধ, সে বিষয়ে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। ব্যারেট বলেন, যাঁরা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের এখতিয়ার ছাড়িয়ে গেছেন।
১৭৮৯ সালের আইন অনুসারে আদালতের ক্ষমতা নির্ধারণ করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড নিয়ে আদালতের ভূমিকা ‘নমনীয়, তবে সীমাহীন নয়’।
তিনি আরও লেখেন, ‘অনেকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা নির্বাহী শাখার ওপর বিচার বিভাগের ক্ষমতা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কিন্তু ফেডারেল আদালতের কাজ হলো কেবল নির্দিষ্ট মামলা ও বিরোধ নিষ্পত্তি করা, নির্বাহী শাখার ওপর সার্বিক নজরদারি নয়।’
ব্যারেট যখন শান্ত গলায় রায় পড়ছিলেন, তখন তাঁর সহবিচারকেরা নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ব্যারেটের পাঠ শেষ হতেই বিচারপতি সোটোমেয়র প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে তাঁর প্রতিবাদ জানান। সাধারণত ভিন্নমত থাকলে বিচারপতিরা শুধু লিখিত বক্তব্যেই মত দেন। কিন্তু যেসব রায়ে তাঁরা তীব্র আপত্তি করেন, তখন তাঁরা তা আদালতকক্ষে পড়ে শোনান। গতকাল সোটোমেয়র ঠিক সেটাই করেন। তিনি তাঁর চেয়ারে এগিয়ে বসে ২০ মিনিট ধরে বক্তব্য দেন—ব্যারেটের চেয়ে দ্বিগুণ সময়।
সোটোমেয়র বলেন, এই রায় আদালতের ক্ষমতাকেই ক্ষুণ্ন করে। ১৮৫৭ সালের ড্রেড স্কট বনাম স্যান্ড ফোর্ড মামলার কথা তুলে ধরেন তিনি। সেখানে বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক নয়। পরে ১৮৬৮ সালে পাস হওয়া চতুর্দশ সংশোধনী তা সংশোধন করে। সংশোধনীতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে বা প্রাকৃতিকভাবে নাগরিকত্ব অর্জন করলে এবং এখানকার বিচারব্যবস্থার আওতায় থাকলে, যে কেউ যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর রাজ্যের নাগরিক।’ সোটোমেয়র বলেন, ‘এই নতুন আইনি কাঠামোতে কোনো অধিকারই আর সুরক্ষিত নয়।’
রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠের নিয়ন্ত্রণ
এই মেয়াদে সামাজিক নীতি, অভিবাসন ও নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ে যত বড় মামলা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সব কটিতেই তিনজন উদারপন্থী বিচারক—সোটোমেয়র, এলিনা কাগান ও কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন—প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
গত সপ্তাহেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। তাতে কিছু অভিবাসীকে নিজ দেশের বদলে দক্ষিণ সুদানের মতো জায়গায় পাঠানো নিয়ে আদালতের বাধা সরিয়ে নেওয়া হয়।
সোটোমেয়র লিখেছেন, ‘এই আদালত শুধু চোখ বন্ধ করে রেখেছে—এটাই প্রথম নয়, ভবিষ্যতেও এমনটা হবে বলে আমি শঙ্কিত। সর্বোচ্চ আদালত যখন বারবার আইন লঙ্ঘনকে পুরস্কৃত করে, তখন বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসনের ওপর মানুষ আস্থা হারায়।’
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ব্যাপারে শুরুর দিকে কিছু রক্ষণশীল বিচারপতি সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে তা কেটে যায়। গত ১৫ মে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে মৌখিক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ডি. জন সাওয়ারকে ব্যারেট জিজ্ঞাসা করেন, প্রশাসন কি সব আদালতের আদেশ মানবে? সাওয়ার বলেন, ‘সব সময় তা প্রযোজ্য নয়।’ ব্যারেট বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘তাই নাকি?’ এরপর তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্পূর্ণভাবে মানবেন?’ সাওয়ার বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটাই সঠিক।’
রবার্টস অতীতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর মনোভাব দেখালেও এখন তিনি প্রশাসনের অবস্থানকেই সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছেন। চলতি বছরের মার্চে ট্রাম্প এক বিচারককে ‘ইমপিচ’ বা অভিশংসনের দাবি জানানোর পর বিবৃতিতে রবার্টস বলেন, ‘এটা দুই শ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত যে কারও রায়ের সঙ্গে দ্বিমত থাকলেই তাকে ইমপিচ করা যায় না। সে জন্য আপিল প্রক্রিয়া রয়েছে।’ তবে সেটা তিন মাস আগের কথা। এর মধ্যে আরও অনেক রায় হয়েছে।
ট্রাম্পের বড় জয়
শুক্রবারের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের ৬-৩ রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ট্রাম্পের একক পক্ষে চলে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিচারপতি ব্যারেটকে ধন্যবাদ জানাতে চাই—তিনি অসাধারণ রায় লিখেছেন। এ ছাড়া বিচারপতি রবার্টস, আলিতো, গরসাচ, কাভানো এবং থমাস—তাঁরা সবাই চমৎকার মানুষ।’
সুপ্রিম কোর্টের বার্তা স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট ও বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য এখন বড় পরিবর্তনের মুখে। আর সেটা অনেকটাই হোয়াইট হাউসের দিকে হেলে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিতর্কিত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে দেওয়া রায়টি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় জয়। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন বিচারব্যবস্থা ও নির্বাহী শাখার ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তাও দিল এই রায়। ছয় রক্ষণশীল বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের এই রায়ের মাধ্যমে কার্যত লাগামহীন ক্ষমতার পথে ট্রাম্পকে একধাপ এগিয়ে দিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছিলেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। আর বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট প্রশ্ন তুলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আদৌ আদালতের আদেশ মানবে কি না। কিন্তু তাঁদের উদ্বেগ যে ক্ষণস্থায়ী, তা প্রমাণ করতে বড় ভূমিকা রাখলেন সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিচারপতি। ব্যারেটকে দিয়ে গতকাল শুক্রবার রবার্টস এমন এক রায় লেখালেন, যা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে দিল—হোক তা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ বা ফেডারেল সরকার ও ব্যক্তি অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলতে চাওয়া নীতির বাস্তবায়ন।
সুপ্রিম কোর্টের হোয়াইট মার্বল ভবনে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এই রায় হয়। ব্যারেটের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত এবং বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়রের ভিন্নমতের বক্তব্য—এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব আদালতের ভেতরে প্রতিফলিত হয়। এই রায়ে আরও একটি প্রবণতা স্পষ্ট হয়—ছয় বিচারপতির রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অ্যাজেন্ডার সঙ্গে একমত। এই সমর্থনের পেছনে রয়েছে অভিবাসী বহিষ্কার বা স্বাধীন সংস্থার প্রধানদের অপসারণের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা বিচারপতিরাই বাড়াতে চান। এ ছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদে যখন আদালত এলজিবিটিকিউ ও সামাজিক নীতি নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তুলেছেন, তখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানেই থেকেছেন।
গতকাল শুক্রবার ৬-৩ ভোটে মেরিল্যান্ডের একদল ধর্মীয় বিশ্বাসী অভিভাবকের পক্ষে রায় দেন বিচারপতিরা। তাঁরা চাইছিলেন তাঁদের শিশুদের সরকারি বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কিছু এলজিবিটিকিউ সম্পর্কিত বই না পড়াতে। এর আগের সপ্তাহে এই ছয় বিচারপতিই ১৮ বছরের নিচে ট্রান্সজেন্ডার কিশোরদের জন্য জেন্ডার কেয়ার নিষিদ্ধ করার রাজ্যের আইন বহাল রাখেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মামলাতেই জয়ী হয়েছেন—হোক তা নিয়মিত শুনানির সময় বা জরুরি আপিলে। গতকাল জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলসংক্রান্ত মামলার রায়ের পর হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ব্যারেটকে অনেক সম্মান করি। সব সময় করেছি। আজকের রায়টি তিনি অসাধারণভাবে লিখেছেন—সবার কাছ থেকেই এমনটাই শুনছি।’ যদিও ব্যারেট জোরালোভাবে তাঁর অবস্থান সমর্থন করছেন না বলে এর আগে সমালোচনা করেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ট্রাম্পের পক্ষে আসার প্রবণতা স্পষ্ট হলেও নিম্ন আদালতের বিচারকেরা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকেই বহু নির্বাহী আদেশ ঠেকিয়ে দেন। কিছু বিচারক তাঁর ক্ষমতাকেন্দ্রিক পদক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওয়াশিংটন ডিসির ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের এক বিচারক রায়ে লেখেন, ‘একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাজা নন।’
কিন্তু গতকালের রায় এবং গত বছরের প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তিসংক্রান্ত রায় মিলিয়ে এখন প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র তাঁর ভিন্নমতের বক্তব্যে বলেন, ‘নির্বাহী দায়মুক্তির দ্বিতীয় ধাপও সম্পন্ন হলো।’
আদালতকক্ষে দ্বৈত অবস্থান
গতকাল সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টে এই মেয়াদের শেষ অধিবেশন যখন শুরু হয়, তখনো ছয়টি মামলার রায় বাকি ছিল। ট্রাম্পসংক্রান্ত মামলাটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল। তাই ধরে নেওয়া হয়, এই রায়ের লেখক হবেন রবার্টস বা অন্য কোনো জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। আর তা হলে রায়টি শুনানির একেবারে শেষে আসবে। কারণ, বিচারপতিরা সিনিয়রিটির উল্টোক্রমে রায় পাঠ করেন। কিন্তু এই ধারণা ভেঙে দিয়ে রবার্টস শুরুতে জানান, ট্রাম্প বনাম সিএএসএ মামলার রায় লিখেছেন বিচারপতি ব্যারেট।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মনোনীত বিচারপতি ব্যারেট রক্ষণশীল অংশের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় লেখার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া সচরাচর হয় না। তাই এটিকে ব্যারেটের ওপর রবার্টসের আস্থার প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে মধ্যপন্থা নেওয়া বিচারপতির সঙ্গে রবার্টসের সুসম্পর্ক গড়ার কৌশলও হতে পারে এটা। গতকালের রায়ে ব্যারেটের সঙ্গে একমত ছিলেন বিচারপতি থমাস, আলিতো, গরসাচ, কাভানো ও রবার্টস।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার দিন ২০ জানুয়ারি বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। ওই দিন তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের প্রচলিত ব্যাখ্যা বাতিল করে নতুন আদেশ দেন। যাতে বলা হয়, যেসব শিশুর জন্ম হয় এমন অভিভাবকের পরিবারে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বা সাময়িক ভিসায় (যেমন ট্যুরিস্ট বা স্টুডেন্ট) অবস্থান করছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব থাকবে না।
প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে ‘অসাংবিধানিক’ বিবেচনা করে নিম্ন আদালতের একাধিক বিচারক ওই আদেশে অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে হোয়াইট হাউস প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। তবে সুপ্রিম কোর্ট পুরো আদেশের সাংবিধানিকতা নিয়ে রায় দিক—এটা তাঁরা চায়নি; বরং তারা চেয়েছিল, নিম্ন আদালতের বিচারকেরা ট্রাম্পের নীতির ওপর দেশজুড়ে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন কি না; তা নির্ধারণ করুক সর্বোচ্চ আদালত।
নিম্ন আদালতের বিচারকেরা এমন ‘বিশ্বজনীন নিষেধাজ্ঞা’ দিয়ে প্রেসিডেন্টের নীতিগুলো কার্যকর হওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। চূড়ান্তভাবে বৈধ কি অবৈধ, সে বিষয়ে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। ব্যারেট বলেন, যাঁরা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের এখতিয়ার ছাড়িয়ে গেছেন।
১৭৮৯ সালের আইন অনুসারে আদালতের ক্ষমতা নির্ধারণ করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ড নিয়ে আদালতের ভূমিকা ‘নমনীয়, তবে সীমাহীন নয়’।
তিনি আরও লেখেন, ‘অনেকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা নির্বাহী শাখার ওপর বিচার বিভাগের ক্ষমতা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কিন্তু ফেডারেল আদালতের কাজ হলো কেবল নির্দিষ্ট মামলা ও বিরোধ নিষ্পত্তি করা, নির্বাহী শাখার ওপর সার্বিক নজরদারি নয়।’
ব্যারেট যখন শান্ত গলায় রায় পড়ছিলেন, তখন তাঁর সহবিচারকেরা নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ব্যারেটের পাঠ শেষ হতেই বিচারপতি সোটোমেয়র প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে তাঁর প্রতিবাদ জানান। সাধারণত ভিন্নমত থাকলে বিচারপতিরা শুধু লিখিত বক্তব্যেই মত দেন। কিন্তু যেসব রায়ে তাঁরা তীব্র আপত্তি করেন, তখন তাঁরা তা আদালতকক্ষে পড়ে শোনান। গতকাল সোটোমেয়র ঠিক সেটাই করেন। তিনি তাঁর চেয়ারে এগিয়ে বসে ২০ মিনিট ধরে বক্তব্য দেন—ব্যারেটের চেয়ে দ্বিগুণ সময়।
সোটোমেয়র বলেন, এই রায় আদালতের ক্ষমতাকেই ক্ষুণ্ন করে। ১৮৫৭ সালের ড্রেড স্কট বনাম স্যান্ড ফোর্ড মামলার কথা তুলে ধরেন তিনি। সেখানে বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক নয়। পরে ১৮৬৮ সালে পাস হওয়া চতুর্দশ সংশোধনী তা সংশোধন করে। সংশোধনীতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে বা প্রাকৃতিকভাবে নাগরিকত্ব অর্জন করলে এবং এখানকার বিচারব্যবস্থার আওতায় থাকলে, যে কেউ যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর রাজ্যের নাগরিক।’ সোটোমেয়র বলেন, ‘এই নতুন আইনি কাঠামোতে কোনো অধিকারই আর সুরক্ষিত নয়।’
রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠের নিয়ন্ত্রণ
এই মেয়াদে সামাজিক নীতি, অভিবাসন ও নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ে যত বড় মামলা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সব কটিতেই তিনজন উদারপন্থী বিচারক—সোটোমেয়র, এলিনা কাগান ও কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন—প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
গত সপ্তাহেও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। তাতে কিছু অভিবাসীকে নিজ দেশের বদলে দক্ষিণ সুদানের মতো জায়গায় পাঠানো নিয়ে আদালতের বাধা সরিয়ে নেওয়া হয়।
সোটোমেয়র লিখেছেন, ‘এই আদালত শুধু চোখ বন্ধ করে রেখেছে—এটাই প্রথম নয়, ভবিষ্যতেও এমনটা হবে বলে আমি শঙ্কিত। সর্বোচ্চ আদালত যখন বারবার আইন লঙ্ঘনকে পুরস্কৃত করে, তখন বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসনের ওপর মানুষ আস্থা হারায়।’
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ব্যাপারে শুরুর দিকে কিছু রক্ষণশীল বিচারপতি সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে তা কেটে যায়। গত ১৫ মে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে মৌখিক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ডি. জন সাওয়ারকে ব্যারেট জিজ্ঞাসা করেন, প্রশাসন কি সব আদালতের আদেশ মানবে? সাওয়ার বলেন, ‘সব সময় তা প্রযোজ্য নয়।’ ব্যারেট বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘তাই নাকি?’ এরপর তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্পূর্ণভাবে মানবেন?’ সাওয়ার বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটাই সঠিক।’
রবার্টস অতীতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর মনোভাব দেখালেও এখন তিনি প্রশাসনের অবস্থানকেই সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছেন। চলতি বছরের মার্চে ট্রাম্প এক বিচারককে ‘ইমপিচ’ বা অভিশংসনের দাবি জানানোর পর বিবৃতিতে রবার্টস বলেন, ‘এটা দুই শ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত যে কারও রায়ের সঙ্গে দ্বিমত থাকলেই তাকে ইমপিচ করা যায় না। সে জন্য আপিল প্রক্রিয়া রয়েছে।’ তবে সেটা তিন মাস আগের কথা। এর মধ্যে আরও অনেক রায় হয়েছে।
ট্রাম্পের বড় জয়
শুক্রবারের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের ৬-৩ রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ট্রাম্পের একক পক্ষে চলে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিচারপতি ব্যারেটকে ধন্যবাদ জানাতে চাই—তিনি অসাধারণ রায় লিখেছেন। এ ছাড়া বিচারপতি রবার্টস, আলিতো, গরসাচ, কাভানো এবং থমাস—তাঁরা সবাই চমৎকার মানুষ।’
সুপ্রিম কোর্টের বার্তা স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট ও বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য এখন বড় পরিবর্তনের মুখে। আর সেটা অনেকটাই হোয়াইট হাউসের দিকে হেলে গেছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিতর্কিত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে দেওয়া রায়টি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় জয়। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন বিচারব্যবস্থা ও নির্বাহী শাখার ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তাও দিল এই
২৮ জুন ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিতর্কিত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে দেওয়া রায়টি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় জয়। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন বিচারব্যবস্থা ও নির্বাহী শাখার ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তাও দিল এই
২৮ জুন ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিতর্কিত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে দেওয়া রায়টি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় জয়। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন বিচারব্যবস্থা ও নির্বাহী শাখার ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তাও দিল এই
২৮ জুন ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এক বিতর্কিত রায়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হলো। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ে দেওয়া রায়টি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় জয়। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন বিচারব্যবস্থা ও নির্বাহী শাখার ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তাও দিল এই
২৮ জুন ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে