হুসাইন আহমদ

চলতি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ঘনীভূত হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সরব।
এই উত্তেজনার ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী ও নীরব সংকট—বেলুচিস্তান। নির্বিচার ধরপাকড়, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অর্থনৈতিক শোষণের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ছায়ায় ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসও জড়িত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুচ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান, যা দেশের মোট ভূমির ৪৪ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত। তবে এখানকার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, যার বড় একটি অংশ বেলুচ জাতিগোষ্ঠী।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের সময়, বেলুচিস্তানের খান (খান অব কালাত) বেলুচকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যেটাকে বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘জবরদখল’ বলে থাকেন।
এর পর থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে বেলুচদের সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়। ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা গেছে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সম্পদে আঞ্চলিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবি ছিল প্রতিটি বিদ্রোহের মূল রসদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করেছে।
বাংলাদেশ ও বেলুচিস্তান—পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য এক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর সামঞ্জস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একইভাবে বেলুচরাও ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অবদমন, সম্পদের শোষণ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে দমন করে, যা গণহত্যায় পরিণত হয়। বেলুচিস্তানেও আমরা দেখি, প্রতিটি আন্দোলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে অস্বীকার করে সামরিক দমন চালানো হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযানের কথা উল্লেখ না করলে নয়। বেলুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গলের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে দমন-পীড়ন চালায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল—বিশেষত ভারতের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কিন্তু বেলুচদের আন্দোলন এখনো তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় তাদের সমস্যা উপেক্ষিত রয়েছে।
‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ বেলুচিস্তান
এবারের বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বেলুচিস্তানে পাঁচ শতাধিক গুম, শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার ও অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
খুজদার, তুরবত, পানজগুর ও গওয়াদর—এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ পরিচালনা করছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে সাধারণ বেলুচদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালানোর একটি উপায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। পরে অনেককে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায়, তারা ফিরে আসে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে বা লাশ হয়ে।
সিইপিসি ও গওয়াদর: উন্নয়নের নামে বিতাড়ন ও শোষণ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিইপিসি) হলো চীনের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর অন্যতম। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে গওয়াদর বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বেলুচদের কাছে প্রকল্পটি উন্নয়নের প্রতীক নয়; বরং এটিকে তারা নিজেদের জমি ও সম্পদ দখলের মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
গওয়াদর শহরে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেলুচদের অভিযোগ, গওয়াদরকে ‘মেগা সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নামে বেলুচ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। অথচ চীনা ও পাঞ্জাবি শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সবই তৈরি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াকে অনেক বেলুচ বিশ্লেষক ‘সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন’ হিসেবে দেখছেন।
সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী প্রতিরোধ
বর্তমানে বেলুচিস্তানে দুই ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে চলছে—একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ, অন্যটি অহিংস গণ-আন্দোলন। সশস্ত্র প্রতিরোধে বিএলএ, বিআরএ ও বিএলএফের মতো সংগঠন সক্রিয়ভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর দমননীতি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী বেলুচ সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘নিখোঁজ ব্যক্তি’ বা গুম ইস্যু এখন বেলুচ জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অথবা শেখ হাসিনার আমলে বহু মা-বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্তানদের সন্ধান দাবি করছেন।
বেলুচিস্তানে ট্রেনে হামলা: বিদ্রোহের নতুন মাত্রা
২০২৫ সালের মার্চে বিএলএর সংঘটিত ট্রেন বিস্ফোরণ বেলুচিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি অভিমুখী যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। রেললাইনের নিচে স্থাপন করা বোমা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দুর্বল করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই হামলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেলুচ বিদ্রোহীরা শুধু প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নয়, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা একদিকে যেমন সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দমননীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে, তেমনি বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা এবং ভয় আরও বাড়াবে।
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসীও বেলুচিস্তানকে....
এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ইসলামাবাদে বিএলএসহ বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির এই সন্ত্রাসীদের চুরমার করে দেব...আপনারা কী মনে করেন, বিএলএফ ও বিএলএর মতো সংগঠনের এই ১ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে বেলুচিস্তান ছিনিয়ে নিতে পারবে?’
জেনারেল আসিম মুনির আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের শত্রুরা যদি মনে করে যে একটি মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী দল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এমনকি ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসী একত্র হলেও তারা বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
জেনারেল মুনির আরও বলেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি। যারা এ নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছে, তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া কিংবা সিন্ধু—সব অঞ্চল পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’ শুধু দেশীয় সন্ত্রাসীদের নয়, বরং তাদের পেছনে ইঙ্গিত করেন। বেলুচদের বিদ্রোহকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মূল কারণ, যেমন আর্থসামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বঞ্চনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে নজর ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের আবরণে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে চাইছে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের পুনরুজ্জীবন ও কাশ্মীর
সেই প্রবাসী সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কাশ্মীরি ভাইদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারত যদি আমাদের সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে।’
জেনারেল আসিম মুনির অভিযোগ করেন, ভারত একতরফাভাবে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অবৈধ দখলদারত্ব জারি রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট; যেমন বেলুচিস্তান পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক সংকট যখন আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান এবং বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন’ এবং ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব পুনরুজ্জীবনের কথা বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তাঁর এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে ভারত থেকে।
কাশ্মীরে হামলা: সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তার
ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ভারত এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু ভারত পানি আটকে দিয়ে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক রাত গোলাগুলির পর অবশেষে গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বসে।
মঙ্গলবার মাঝরাতের কিছু পরে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ ঘটনায় পাকিস্তানের অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং পাল্টা হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষে এরপর ড্রোন হামলা চলছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে বেলুচ বিদ্রোহীরাও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা: সহিংসতার নতুন মাত্রা
মে মাসে বেলুচিস্তানে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এসব হামলা শুধু পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং আন্দোলন কতটা সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ; তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেলুচ জনগণের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাব। সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান কি বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারাল
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।’
শাহিদ খাকান আব্বাসি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিদ্রোহীরা যেভাবে শহরে এবং গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সেখানে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।’
আব্বাসি বলেন, ‘আমরা যদি সংবিধান অনুযায়ী বেলুচ জনগণের অধিকার স্বীকার না করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংকটের স্বীকারোক্তি হয়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা সহজে অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা, কৌশল ও দ্বৈত নীতি
কিন্তু বেলুচিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিলেও তা কার্যকর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়নি। মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেহেতু পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে থাকে। ফলে বেলুচদের স্বাধিকার প্রশ্নে তাদের সমর্থন নেই।
একইভাবে চীনের পক্ষেও পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিপিইসিসহ নানা স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং সেনা দমনকে নীরব সমর্থন দিচ্ছে দেশটি।
ভারত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের মানুষের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখায়। শুধু তা-ই নয়, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (আরএডব্লিউ) মাধ্যমে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ তোলে দেশটি।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নেবে। পাকিস্তান যদি একদিকে বেলুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব—দুই দিক থেকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। বেলুচিস্তানের ‘নীরব সংকট’ ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, নির্যাতিত, বাস্তুচ্যুত ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সামরিক দমন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাকে শুধু গভীরতর করে তুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির মন্তব্য, সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা এই সংকটকে আরও বেশি গভীর করে তুলে ধরছে। মানবাধিকার সংগঠন ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সত্যি স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে বেলুচিস্তানের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, একটি জাতিকে তার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা যায় না। বেলুচিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংলাপ, স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ হতে পারে ভবিষ্যতের একমাত্র টেকসই পথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
আরও খবর পড়ুন:

চলতি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ঘনীভূত হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সরব।
এই উত্তেজনার ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী ও নীরব সংকট—বেলুচিস্তান। নির্বিচার ধরপাকড়, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অর্থনৈতিক শোষণের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ছায়ায় ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসও জড়িত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুচ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান, যা দেশের মোট ভূমির ৪৪ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত। তবে এখানকার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, যার বড় একটি অংশ বেলুচ জাতিগোষ্ঠী।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের সময়, বেলুচিস্তানের খান (খান অব কালাত) বেলুচকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যেটাকে বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘জবরদখল’ বলে থাকেন।
এর পর থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে বেলুচদের সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়। ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা গেছে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সম্পদে আঞ্চলিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবি ছিল প্রতিটি বিদ্রোহের মূল রসদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করেছে।
বাংলাদেশ ও বেলুচিস্তান—পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য এক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর সামঞ্জস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একইভাবে বেলুচরাও ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অবদমন, সম্পদের শোষণ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে দমন করে, যা গণহত্যায় পরিণত হয়। বেলুচিস্তানেও আমরা দেখি, প্রতিটি আন্দোলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে অস্বীকার করে সামরিক দমন চালানো হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযানের কথা উল্লেখ না করলে নয়। বেলুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গলের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে দমন-পীড়ন চালায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল—বিশেষত ভারতের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কিন্তু বেলুচদের আন্দোলন এখনো তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় তাদের সমস্যা উপেক্ষিত রয়েছে।
‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ বেলুচিস্তান
এবারের বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বেলুচিস্তানে পাঁচ শতাধিক গুম, শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার ও অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
খুজদার, তুরবত, পানজগুর ও গওয়াদর—এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ পরিচালনা করছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে সাধারণ বেলুচদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালানোর একটি উপায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। পরে অনেককে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায়, তারা ফিরে আসে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে বা লাশ হয়ে।
সিইপিসি ও গওয়াদর: উন্নয়নের নামে বিতাড়ন ও শোষণ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিইপিসি) হলো চীনের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর অন্যতম। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে গওয়াদর বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বেলুচদের কাছে প্রকল্পটি উন্নয়নের প্রতীক নয়; বরং এটিকে তারা নিজেদের জমি ও সম্পদ দখলের মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
গওয়াদর শহরে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেলুচদের অভিযোগ, গওয়াদরকে ‘মেগা সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নামে বেলুচ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। অথচ চীনা ও পাঞ্জাবি শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সবই তৈরি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াকে অনেক বেলুচ বিশ্লেষক ‘সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন’ হিসেবে দেখছেন।
সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী প্রতিরোধ
বর্তমানে বেলুচিস্তানে দুই ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে চলছে—একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ, অন্যটি অহিংস গণ-আন্দোলন। সশস্ত্র প্রতিরোধে বিএলএ, বিআরএ ও বিএলএফের মতো সংগঠন সক্রিয়ভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর দমননীতি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী বেলুচ সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘নিখোঁজ ব্যক্তি’ বা গুম ইস্যু এখন বেলুচ জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অথবা শেখ হাসিনার আমলে বহু মা-বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্তানদের সন্ধান দাবি করছেন।
বেলুচিস্তানে ট্রেনে হামলা: বিদ্রোহের নতুন মাত্রা
২০২৫ সালের মার্চে বিএলএর সংঘটিত ট্রেন বিস্ফোরণ বেলুচিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি অভিমুখী যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। রেললাইনের নিচে স্থাপন করা বোমা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দুর্বল করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই হামলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেলুচ বিদ্রোহীরা শুধু প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নয়, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা একদিকে যেমন সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দমননীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে, তেমনি বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা এবং ভয় আরও বাড়াবে।
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসীও বেলুচিস্তানকে....
এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ইসলামাবাদে বিএলএসহ বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির এই সন্ত্রাসীদের চুরমার করে দেব...আপনারা কী মনে করেন, বিএলএফ ও বিএলএর মতো সংগঠনের এই ১ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে বেলুচিস্তান ছিনিয়ে নিতে পারবে?’
জেনারেল আসিম মুনির আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের শত্রুরা যদি মনে করে যে একটি মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী দল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এমনকি ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসী একত্র হলেও তারা বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
জেনারেল মুনির আরও বলেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি। যারা এ নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছে, তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া কিংবা সিন্ধু—সব অঞ্চল পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’ শুধু দেশীয় সন্ত্রাসীদের নয়, বরং তাদের পেছনে ইঙ্গিত করেন। বেলুচদের বিদ্রোহকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মূল কারণ, যেমন আর্থসামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বঞ্চনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে নজর ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের আবরণে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে চাইছে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের পুনরুজ্জীবন ও কাশ্মীর
সেই প্রবাসী সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কাশ্মীরি ভাইদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারত যদি আমাদের সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে।’
জেনারেল আসিম মুনির অভিযোগ করেন, ভারত একতরফাভাবে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অবৈধ দখলদারত্ব জারি রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট; যেমন বেলুচিস্তান পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক সংকট যখন আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান এবং বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন’ এবং ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব পুনরুজ্জীবনের কথা বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তাঁর এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে ভারত থেকে।
কাশ্মীরে হামলা: সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তার
ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ভারত এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু ভারত পানি আটকে দিয়ে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক রাত গোলাগুলির পর অবশেষে গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বসে।
মঙ্গলবার মাঝরাতের কিছু পরে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ ঘটনায় পাকিস্তানের অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং পাল্টা হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষে এরপর ড্রোন হামলা চলছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে বেলুচ বিদ্রোহীরাও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা: সহিংসতার নতুন মাত্রা
মে মাসে বেলুচিস্তানে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এসব হামলা শুধু পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং আন্দোলন কতটা সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ; তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেলুচ জনগণের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাব। সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান কি বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারাল
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।’
শাহিদ খাকান আব্বাসি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিদ্রোহীরা যেভাবে শহরে এবং গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সেখানে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।’
আব্বাসি বলেন, ‘আমরা যদি সংবিধান অনুযায়ী বেলুচ জনগণের অধিকার স্বীকার না করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংকটের স্বীকারোক্তি হয়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা সহজে অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা, কৌশল ও দ্বৈত নীতি
কিন্তু বেলুচিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিলেও তা কার্যকর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়নি। মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেহেতু পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে থাকে। ফলে বেলুচদের স্বাধিকার প্রশ্নে তাদের সমর্থন নেই।
একইভাবে চীনের পক্ষেও পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিপিইসিসহ নানা স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং সেনা দমনকে নীরব সমর্থন দিচ্ছে দেশটি।
ভারত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের মানুষের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখায়। শুধু তা-ই নয়, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (আরএডব্লিউ) মাধ্যমে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ তোলে দেশটি।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নেবে। পাকিস্তান যদি একদিকে বেলুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব—দুই দিক থেকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। বেলুচিস্তানের ‘নীরব সংকট’ ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, নির্যাতিত, বাস্তুচ্যুত ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সামরিক দমন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাকে শুধু গভীরতর করে তুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির মন্তব্য, সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা এই সংকটকে আরও বেশি গভীর করে তুলে ধরছে। মানবাধিকার সংগঠন ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সত্যি স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে বেলুচিস্তানের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, একটি জাতিকে তার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা যায় না। বেলুচিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংলাপ, স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ হতে পারে ভবিষ্যতের একমাত্র টেকসই পথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
আরও খবর পড়ুন:
হুসাইন আহমদ

চলতি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ঘনীভূত হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সরব।
এই উত্তেজনার ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী ও নীরব সংকট—বেলুচিস্তান। নির্বিচার ধরপাকড়, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অর্থনৈতিক শোষণের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ছায়ায় ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসও জড়িত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুচ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান, যা দেশের মোট ভূমির ৪৪ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত। তবে এখানকার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, যার বড় একটি অংশ বেলুচ জাতিগোষ্ঠী।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের সময়, বেলুচিস্তানের খান (খান অব কালাত) বেলুচকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যেটাকে বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘জবরদখল’ বলে থাকেন।
এর পর থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে বেলুচদের সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়। ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা গেছে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সম্পদে আঞ্চলিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবি ছিল প্রতিটি বিদ্রোহের মূল রসদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করেছে।
বাংলাদেশ ও বেলুচিস্তান—পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য এক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর সামঞ্জস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একইভাবে বেলুচরাও ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অবদমন, সম্পদের শোষণ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে দমন করে, যা গণহত্যায় পরিণত হয়। বেলুচিস্তানেও আমরা দেখি, প্রতিটি আন্দোলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে অস্বীকার করে সামরিক দমন চালানো হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযানের কথা উল্লেখ না করলে নয়। বেলুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গলের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে দমন-পীড়ন চালায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল—বিশেষত ভারতের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কিন্তু বেলুচদের আন্দোলন এখনো তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় তাদের সমস্যা উপেক্ষিত রয়েছে।
‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ বেলুচিস্তান
এবারের বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বেলুচিস্তানে পাঁচ শতাধিক গুম, শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার ও অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
খুজদার, তুরবত, পানজগুর ও গওয়াদর—এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ পরিচালনা করছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে সাধারণ বেলুচদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালানোর একটি উপায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। পরে অনেককে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায়, তারা ফিরে আসে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে বা লাশ হয়ে।
সিইপিসি ও গওয়াদর: উন্নয়নের নামে বিতাড়ন ও শোষণ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিইপিসি) হলো চীনের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর অন্যতম। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে গওয়াদর বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বেলুচদের কাছে প্রকল্পটি উন্নয়নের প্রতীক নয়; বরং এটিকে তারা নিজেদের জমি ও সম্পদ দখলের মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
গওয়াদর শহরে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেলুচদের অভিযোগ, গওয়াদরকে ‘মেগা সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নামে বেলুচ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। অথচ চীনা ও পাঞ্জাবি শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সবই তৈরি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াকে অনেক বেলুচ বিশ্লেষক ‘সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন’ হিসেবে দেখছেন।
সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী প্রতিরোধ
বর্তমানে বেলুচিস্তানে দুই ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে চলছে—একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ, অন্যটি অহিংস গণ-আন্দোলন। সশস্ত্র প্রতিরোধে বিএলএ, বিআরএ ও বিএলএফের মতো সংগঠন সক্রিয়ভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর দমননীতি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী বেলুচ সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘নিখোঁজ ব্যক্তি’ বা গুম ইস্যু এখন বেলুচ জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অথবা শেখ হাসিনার আমলে বহু মা-বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্তানদের সন্ধান দাবি করছেন।
বেলুচিস্তানে ট্রেনে হামলা: বিদ্রোহের নতুন মাত্রা
২০২৫ সালের মার্চে বিএলএর সংঘটিত ট্রেন বিস্ফোরণ বেলুচিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি অভিমুখী যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। রেললাইনের নিচে স্থাপন করা বোমা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দুর্বল করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই হামলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেলুচ বিদ্রোহীরা শুধু প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নয়, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা একদিকে যেমন সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দমননীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে, তেমনি বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা এবং ভয় আরও বাড়াবে।
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসীও বেলুচিস্তানকে....
এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ইসলামাবাদে বিএলএসহ বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির এই সন্ত্রাসীদের চুরমার করে দেব...আপনারা কী মনে করেন, বিএলএফ ও বিএলএর মতো সংগঠনের এই ১ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে বেলুচিস্তান ছিনিয়ে নিতে পারবে?’
জেনারেল আসিম মুনির আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের শত্রুরা যদি মনে করে যে একটি মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী দল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এমনকি ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসী একত্র হলেও তারা বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
জেনারেল মুনির আরও বলেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি। যারা এ নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছে, তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া কিংবা সিন্ধু—সব অঞ্চল পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’ শুধু দেশীয় সন্ত্রাসীদের নয়, বরং তাদের পেছনে ইঙ্গিত করেন। বেলুচদের বিদ্রোহকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মূল কারণ, যেমন আর্থসামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বঞ্চনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে নজর ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের আবরণে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে চাইছে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের পুনরুজ্জীবন ও কাশ্মীর
সেই প্রবাসী সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কাশ্মীরি ভাইদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারত যদি আমাদের সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে।’
জেনারেল আসিম মুনির অভিযোগ করেন, ভারত একতরফাভাবে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অবৈধ দখলদারত্ব জারি রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট; যেমন বেলুচিস্তান পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক সংকট যখন আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান এবং বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন’ এবং ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব পুনরুজ্জীবনের কথা বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তাঁর এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে ভারত থেকে।
কাশ্মীরে হামলা: সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তার
ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ভারত এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু ভারত পানি আটকে দিয়ে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক রাত গোলাগুলির পর অবশেষে গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বসে।
মঙ্গলবার মাঝরাতের কিছু পরে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ ঘটনায় পাকিস্তানের অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং পাল্টা হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষে এরপর ড্রোন হামলা চলছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে বেলুচ বিদ্রোহীরাও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা: সহিংসতার নতুন মাত্রা
মে মাসে বেলুচিস্তানে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এসব হামলা শুধু পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং আন্দোলন কতটা সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ; তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেলুচ জনগণের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাব। সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান কি বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারাল
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।’
শাহিদ খাকান আব্বাসি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিদ্রোহীরা যেভাবে শহরে এবং গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সেখানে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।’
আব্বাসি বলেন, ‘আমরা যদি সংবিধান অনুযায়ী বেলুচ জনগণের অধিকার স্বীকার না করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংকটের স্বীকারোক্তি হয়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা সহজে অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা, কৌশল ও দ্বৈত নীতি
কিন্তু বেলুচিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিলেও তা কার্যকর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়নি। মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেহেতু পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে থাকে। ফলে বেলুচদের স্বাধিকার প্রশ্নে তাদের সমর্থন নেই।
একইভাবে চীনের পক্ষেও পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিপিইসিসহ নানা স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং সেনা দমনকে নীরব সমর্থন দিচ্ছে দেশটি।
ভারত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের মানুষের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখায়। শুধু তা-ই নয়, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (আরএডব্লিউ) মাধ্যমে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ তোলে দেশটি।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নেবে। পাকিস্তান যদি একদিকে বেলুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব—দুই দিক থেকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। বেলুচিস্তানের ‘নীরব সংকট’ ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, নির্যাতিত, বাস্তুচ্যুত ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সামরিক দমন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাকে শুধু গভীরতর করে তুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির মন্তব্য, সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা এই সংকটকে আরও বেশি গভীর করে তুলে ধরছে। মানবাধিকার সংগঠন ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সত্যি স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে বেলুচিস্তানের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, একটি জাতিকে তার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা যায় না। বেলুচিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংলাপ, স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ হতে পারে ভবিষ্যতের একমাত্র টেকসই পথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
আরও খবর পড়ুন:

চলতি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ঘনীভূত হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সরব।
এই উত্তেজনার ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী ও নীরব সংকট—বেলুচিস্তান। নির্বিচার ধরপাকড়, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অর্থনৈতিক শোষণের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ছায়ায় ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসও জড়িত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুচ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান, যা দেশের মোট ভূমির ৪৪ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত। তবে এখানকার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, যার বড় একটি অংশ বেলুচ জাতিগোষ্ঠী।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের সময়, বেলুচিস্তানের খান (খান অব কালাত) বেলুচকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যেটাকে বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘জবরদখল’ বলে থাকেন।
এর পর থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে বেলুচদের সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়। ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা গেছে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সম্পদে আঞ্চলিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবি ছিল প্রতিটি বিদ্রোহের মূল রসদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করেছে।
বাংলাদেশ ও বেলুচিস্তান—পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য এক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর সামঞ্জস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একইভাবে বেলুচরাও ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অবদমন, সম্পদের শোষণ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে দমন করে, যা গণহত্যায় পরিণত হয়। বেলুচিস্তানেও আমরা দেখি, প্রতিটি আন্দোলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে অস্বীকার করে সামরিক দমন চালানো হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযানের কথা উল্লেখ না করলে নয়। বেলুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গলের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে দমন-পীড়ন চালায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল—বিশেষত ভারতের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কিন্তু বেলুচদের আন্দোলন এখনো তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় তাদের সমস্যা উপেক্ষিত রয়েছে।
‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ বেলুচিস্তান
এবারের বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বেলুচিস্তানে পাঁচ শতাধিক গুম, শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার ও অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
খুজদার, তুরবত, পানজগুর ও গওয়াদর—এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ পরিচালনা করছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে সাধারণ বেলুচদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালানোর একটি উপায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। পরে অনেককে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায়, তারা ফিরে আসে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে বা লাশ হয়ে।
সিইপিসি ও গওয়াদর: উন্নয়নের নামে বিতাড়ন ও শোষণ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিইপিসি) হলো চীনের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর অন্যতম। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে গওয়াদর বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বেলুচদের কাছে প্রকল্পটি উন্নয়নের প্রতীক নয়; বরং এটিকে তারা নিজেদের জমি ও সম্পদ দখলের মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
গওয়াদর শহরে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেলুচদের অভিযোগ, গওয়াদরকে ‘মেগা সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নামে বেলুচ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। অথচ চীনা ও পাঞ্জাবি শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সবই তৈরি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াকে অনেক বেলুচ বিশ্লেষক ‘সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন’ হিসেবে দেখছেন।
সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী প্রতিরোধ
বর্তমানে বেলুচিস্তানে দুই ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে চলছে—একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ, অন্যটি অহিংস গণ-আন্দোলন। সশস্ত্র প্রতিরোধে বিএলএ, বিআরএ ও বিএলএফের মতো সংগঠন সক্রিয়ভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর দমননীতি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী বেলুচ সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘নিখোঁজ ব্যক্তি’ বা গুম ইস্যু এখন বেলুচ জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অথবা শেখ হাসিনার আমলে বহু মা-বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্তানদের সন্ধান দাবি করছেন।
বেলুচিস্তানে ট্রেনে হামলা: বিদ্রোহের নতুন মাত্রা
২০২৫ সালের মার্চে বিএলএর সংঘটিত ট্রেন বিস্ফোরণ বেলুচিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি অভিমুখী যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। রেললাইনের নিচে স্থাপন করা বোমা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দুর্বল করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই হামলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেলুচ বিদ্রোহীরা শুধু প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নয়, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা একদিকে যেমন সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দমননীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে, তেমনি বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা এবং ভয় আরও বাড়াবে।
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসীও বেলুচিস্তানকে....
এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ইসলামাবাদে বিএলএসহ বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির এই সন্ত্রাসীদের চুরমার করে দেব...আপনারা কী মনে করেন, বিএলএফ ও বিএলএর মতো সংগঠনের এই ১ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে বেলুচিস্তান ছিনিয়ে নিতে পারবে?’
জেনারেল আসিম মুনির আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের শত্রুরা যদি মনে করে যে একটি মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী দল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এমনকি ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসী একত্র হলেও তারা বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
জেনারেল মুনির আরও বলেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি। যারা এ নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছে, তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া কিংবা সিন্ধু—সব অঞ্চল পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’ শুধু দেশীয় সন্ত্রাসীদের নয়, বরং তাদের পেছনে ইঙ্গিত করেন। বেলুচদের বিদ্রোহকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মূল কারণ, যেমন আর্থসামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বঞ্চনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে নজর ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের আবরণে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে চাইছে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের পুনরুজ্জীবন ও কাশ্মীর
সেই প্রবাসী সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কাশ্মীরি ভাইদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারত যদি আমাদের সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে।’
জেনারেল আসিম মুনির অভিযোগ করেন, ভারত একতরফাভাবে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অবৈধ দখলদারত্ব জারি রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট; যেমন বেলুচিস্তান পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক সংকট যখন আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান এবং বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন’ এবং ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব পুনরুজ্জীবনের কথা বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তাঁর এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে ভারত থেকে।
কাশ্মীরে হামলা: সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তার
ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ভারত এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু ভারত পানি আটকে দিয়ে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক রাত গোলাগুলির পর অবশেষে গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বসে।
মঙ্গলবার মাঝরাতের কিছু পরে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ ঘটনায় পাকিস্তানের অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং পাল্টা হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষে এরপর ড্রোন হামলা চলছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে বেলুচ বিদ্রোহীরাও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা: সহিংসতার নতুন মাত্রা
মে মাসে বেলুচিস্তানে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এসব হামলা শুধু পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং আন্দোলন কতটা সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ; তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেলুচ জনগণের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাব। সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান কি বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারাল
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।’
শাহিদ খাকান আব্বাসি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিদ্রোহীরা যেভাবে শহরে এবং গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সেখানে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।’
আব্বাসি বলেন, ‘আমরা যদি সংবিধান অনুযায়ী বেলুচ জনগণের অধিকার স্বীকার না করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংকটের স্বীকারোক্তি হয়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা সহজে অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা, কৌশল ও দ্বৈত নীতি
কিন্তু বেলুচিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিলেও তা কার্যকর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়নি। মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেহেতু পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে থাকে। ফলে বেলুচদের স্বাধিকার প্রশ্নে তাদের সমর্থন নেই।
একইভাবে চীনের পক্ষেও পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিপিইসিসহ নানা স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং সেনা দমনকে নীরব সমর্থন দিচ্ছে দেশটি।
ভারত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের মানুষের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখায়। শুধু তা-ই নয়, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (আরএডব্লিউ) মাধ্যমে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ তোলে দেশটি।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নেবে। পাকিস্তান যদি একদিকে বেলুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব—দুই দিক থেকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। বেলুচিস্তানের ‘নীরব সংকট’ ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, নির্যাতিত, বাস্তুচ্যুত ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সামরিক দমন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাকে শুধু গভীরতর করে তুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির মন্তব্য, সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা এই সংকটকে আরও বেশি গভীর করে তুলে ধরছে। মানবাধিকার সংগঠন ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সত্যি স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে বেলুচিস্তানের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, একটি জাতিকে তার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা যায় না। বেলুচিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংলাপ, স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ হতে পারে ভবিষ্যতের একমাত্র টেকসই পথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
আরও খবর পড়ুন:

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২১ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে