ইজাজুল হক

‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:

‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৬ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে