Ajker Patrika

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবনেও নিরাপদ ছিলেন না শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ১৮: ১০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবনেও নিরাপদ ছিলেন না শিক্ষার্থীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাতেই ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাতে ভিসির বাসভবনের সামনেই অতর্কিত হামলার শিকার হন তাঁরা। সোমবার রাত থেকে এক ভয়ার্ত রূপ ধারণ করে এই ক্যাম্পাসের।

সংঘর্ষের শুরু গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এলে অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগ।

এর কিছু পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নিজেদের সংঘবদ্ধ করে ছাত্রলীগের হামলা প্রতিহত করে। এতে করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হাটে। এই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে জড়ো হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পর আন্দোলনকারীরা সংঘবদ্ধভাবে ছাত্রলীগের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপদ মনে না করায় তাঁরা উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।

ঘটনার সময় থাকা প্রত্যক্ষদর্শী এক সংবাদকর্মী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছাত্রলীগ এর পর থেকেই বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নেয়। এ জন্য তারা বিভিন্ন হল থেকে কর্মীদের একসঙ্গে হওয়ার আহ্বান করে। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লিটন তার অনুসারীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে জড়ো হতে থাকে। সে সময় তারা লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রের জড়ো করতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৮টা ৪০ এর দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তাঁদের বিক্ষোভ চালিয়ে যান।

এক সংবাদকর্মী জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিষয় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার খাতিরে ভিসির বাসভবনে অবস্থান নেয়।

একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও বহিরাগতরা সন্ত্রাসীরা মিলে আবারও হামলা করতে পারে এমন খবরে উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে (সীমানা প্রাচীরের মধ্যে) অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে আশ্রয় নেওয়ার ১০ মিনিট পর বাসভবনের সামনে বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ শাখা ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রাচীরের মূল ফটকের ওপাশ থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাচের বোতল ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় হামলাকারী ব্যক্তিদের অধিকাংশের মাথায় হেলমেট ও হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় দুটো পেট্রলবোমা ছুড়তে দেখা যায় তাঁদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী বলেন, ছাত্রলীগ এর মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়াও বহিরাগত কর্মীদের ক্যাম্পাসে ডেকে আনে। পিকাপে করে আশপাশের গেরুয়া, ইসলামনগর, জামসিং, আশুলিয়া, সাভার এলাকা থেকে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ শুরু করে।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ১২টা ৪০ এর দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ছেড়ে বাসভবন সংলগ্ন মাঠে অবস্থান নেন। অন্যদিকে বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ অবস্থান নেন। তখনো আন্দোলনকারীরা বাসভবন চত্বরে আশ্রয়ে ছিলেন। এভাবে দুই ঘণ্টা চলতে থাকে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তখন বাইরে থেকেই বিভিন্ন উপায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।

একপর্যায়ে রাত ১টা ৫০ এর দিকে পুলিশের সামনে ফটক ভেঙে বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন হামলাকারীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা ছুড়ে বাসভবনের প্রধান ফটকের লাইটসহ বিভিন্ন লাইট ভাঙচুর করেন তাঁরা। এরপর আন্দোলনকারীদের ব্যাপক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উপাচার্য বাসভবনেই ছিলেন। হামলাকারীরা পুলিশের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালেও পুলিশ তাঁদেরকে বাঁধা দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পরে হামলাকারীদের কয়েকজনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, হামলার সময় উপাচার্যের বাসভবনে অনেক শিক্ষক অবস্থান করছিলেন। তাঁরাও হতবাক হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতরা এভাবে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ঢুকে কীভাবে হামলা করতে পারে। শিক্ষকদের মারতে পারে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ও পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার লাইভ ও পোস্ট করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী বলেন, এমন অবস্থায় সব হল থেকে প্রায় দুই হাজারের মতো শিক্ষার্থী জোট বেঁধে উপাচার্যের বাসার সামনে আসেন প্রতিরোধ করতে। এত এত শিক্ষার্থী দেখে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তখন পিছু হটতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পিছু হটতে সহায়তা করেছে।

এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল, ছররা গুলি নিক্ষেপ ও পিটুনি দেন। এতে অন্তত শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগেরও কয়েকজন নেতা-কর্মীও আহত হয়েছেন। এছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত ৪-৫ জন শিক্ষক ও ৭ জন সাংবাদিক আহত হন। আহতদের মধ্যে বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন আর গুরুতর আহতদের সাভারের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে রাত পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জানতে পেরে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়। পরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের হামলায় পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

কী হচ্ছে আজ

আজ মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের বিশমাইল গেটে বহিরাগতদের প্রায় ১০০ জন অবস্থান নিলে ক্যাম্পাস আবার উত্তাল হয়ে ওঠে। তখন আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে বহিরাগতরা ওই স্থান ত্যাগ করে।

এরপর আশপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরের পর ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন, ১০ শিশুসহ দগ্ধ ১৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ১২ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোকান মালিক, লুন্দিয়া টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া পুরি ও রুটি ভাজি বিক্রি শেষে সকালে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। তিনি ভুলে গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক পর্যায়ে গ্যাসের বিস্ফোরণে দোকানে আগুন ধরে যায়। এসময় দোকানের সামনে থাকা পথচারী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দগ্ধ হন।

আহতরা হলেন—হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫০) ও নাছির মিয়া (৪০)।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, আহতদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ রাস্তার ওপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে কয়েকজন মানুষ আগুনে পুড়তে দেখি। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। একজনের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং অন্যদের ২০–৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যুবকের

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
দুলাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার একটি গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামির নাম দুলাল মিয়া (২৮)। তিনি ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক আশরাফুল আলম আসামির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদ আহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামির জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ জানান, গত মঙ্গলবার রাতে দুলাল মিয়া আট বছরের ওই শিশুকে ঘর থেকে ডেকে নেন। এরপর তাকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটি চিৎকার করলে শ্বাস রোধ করে তাকে হত্যা করেন দুলাল।

মাকছুদ আহাম্মদ জানান, এদিকে ওই রাতেই শিশুকে না পেয়ে তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সে সময় সন্ধান চেয়ে মাইকে প্রচারও করা হয়। তখন দুলাল মিয়াও শিশুটির বাবার সঙ্গে খোঁজাখুঁজিতে যোগ দেন। পরদিন গত বুধবার সকালে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় দুলাল মিয়া ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

জবানবন্দির বরাতে ওসি মাকছুদ আহাম্মদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় দুলাল মিয়ার আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আল সরকারের সঙ্গে কথা হয়। পরে বুধবার রাতে শিশুটির বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। মামলার পরই দ্রুত তদন্ত শুরু করে ঘটনাস্থলসংলগ্ন বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনা শেষে ওই রাতেই দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শিশুটির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামলা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার চাটমোহরে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের একটি মামলাকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসানো হয়েছে। পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন ও অভিযুক্তদের খালাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার সকালে চাটমোহর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মামলার ১ নম্বর বিবাদী, ছাইকোলা ইউনিয়নের কুবড়াগাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন।

জানা গেছে, গত ৪ জুলাই রাত আড়াইটার দিকে কুবড়াগাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম (৬৫) নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে ঘর থেকে বাইরে ডেকে শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেয়। এতে তিনি দগ্ধ হন। প্রথমে তাঁকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুর রহিমের ভাই আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে প্রতিবেশী সাতজনকে বিবাদী করে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। মামলার ছয়জন জামিন পেলেও ১ নম্বর বিবাদী শফিকুল ইসলাম এখনো কারাগারে।

সংবাদ সম্মেলনে সুমাইয়া খাতুন দাবি করেন, ঘটনার দিন ওই সময়ে তাঁর স্বামী চাটমোহরে ছিলেন না। তাঁরা দুজনই সেদিন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছিলেন, যেখানে তাঁরা ফুটপাতে বিরিয়ানি বিক্রি করেন। তা সত্ত্বেও তাঁর স্বামীকে মামলার ১ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুলের পিতা শহিদ সরদারসহ আরও দুই ভাইকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

সুমাইয়ার ভাষ্য, ‘আমার স্বামী গ্রামে থাকেন না। আমরা তিন সন্তান নিয়ে হাটহাজারীতেই থাকি। প্রতিপক্ষ আমাদের ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করেছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করা হয়নি। আমরা অন্যায়ের শিকার।’ তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তে গাফিলতি থাকায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার। তিন সন্তানসহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে শফিকুল ইসলামের পিতা শহিদ সরদার, তাঁর মা ও অন্যান্য স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুলশানে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ জব্দ, গ্রেপ্তার ১

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ। ছবি: র‍্যাব
র‍্যাবের হাতে জব্দ হওয়া ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ। ছবি: র‍্যাব

রাজধানীর গুলশানে মদের চালানসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ ও মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়।

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে।

গ্রেপ্তার রবিউল ইসলাম (২১) নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভিটি গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. রাকিব হাসান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানে অভিযান চালিয়ে ৫৪০ বোতল বিদেশি মদ, মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানসহ রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত