Ajker Patrika

মতিউরের স্ত্রী লায়লার নামেই ৮৫ কোটির সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৪, ০০: ১০
মতিউরের স্ত্রী লায়লার নামেই ৮৫ কোটির সম্পদ

ছেলের ছাগল-কাণ্ডে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের অব্যাহতি পাওয়া প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির বাড়ি নরসিংদীতে। জেলার রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান তিনি। লাকি ও তাঁর ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে নরসিংদী, গাজীপুর ও ঢাকায়। এমনকি নির্বাচনী হলফনামায় ৮৫ কোটি টাকার সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন লাকি। 

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের মরজাল গ্রামে লায়লা কানিজ লাকির বাবার বাড়ি। এলাকায় অনেকের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা হয়নি। 

শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লায়লা কানিজ লাকি একসময় ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে প্রথমে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০২৩ সালে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছাদেকের মৃত্যুতে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লাকি। জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। 

সর্বশেষ নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংরক্ষিত নারী আসন (নরসিংদী-গাজীপুর আসন) পেতে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গত ২৯ মে টেলিফোন প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। ওই উপজেলায় ভোট গ্রহণের আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. সুমন মিয়ার মৃত্যুতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ২৬ জুন পুনঃ তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। 

 লাকির যত সম্পদ 
গ্রামের বাড়ি মরজালে কয়েক একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট। নিজ বাড়িতে গড়েছেন দৃষ্টিনন্দন ‘লাকি কটেজ’। বাড়ির পাশে সড়কের নামও রাখা হয় ‘লায়লা কানিজ লাকি সড়ক’। 

এ ছাড়া গাজীপুরের পুবাইলে ‘আপন ভুবন’ নামে বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পট রয়েছে লাকির মালিকানায়। লাকি ও তাঁর ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে শূন্য দশমিক ৪৫১৬২৫ একর জমি রয়েছে সেখানে। 

পুবাইলের গ্লোবাল শুজ লিমিটেড কোম্পানির অংশীদার হিসেবে নাম রয়েছে লাকির। ওই কোম্পানির নামে জোত ১২৫-এ ৩৪৩৪৫ শতক, জোত ৭০-এ ২৮০০ শতক, জোত ৯০-এ শূন্য দশমিক ০৩৩০ শতক জমি রয়েছে। 

এ ছাড়া ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৭/এ রোডের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে লাকির নামে রয়েছে ফ্ল্যাট। সাভারের বিলামালিয়া মৌজায় খতিয়ান ১৩৬৯৬-এ ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ জমিও রয়েছে। 

সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী হলফনামার তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লায়লা কানিজ লাকির আয় দেখানো হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৪ টাকা। মোট সম্পদ দেখানো হয় ৮৫ কোটি টাকার। 

জমি দখলের অভিযোগ
লাকিদের হাতে জমি হারানো মরজালের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আশরাফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুয়া দলিলে লাকি আমাদের ২০৫ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। তাঁর দখলের কারণে বাকিটা অন্যত্র বিক্রিও করতে পারছি না। এ নিয়ে ২০১৮ সালে বিভাগীয় কমিশনার, দুদক, জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।’ 

দখলের শিকার আরেক ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে দুই শতক জমি ১০ লাখ টাকা চুক্তিতে কিনে নেন লাকি। আমি বাড়িতে না থাকায় পরে ৪ লাখ টাকা দিয়ে বাকি দুই শতকও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখলে নেন।’ এ ঘটনায় তিন বছর আগে বিভাগীয় কমিশনার, দুদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান নজরুল। 

সুজাৎ আলী মাস্টার নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘চার বছর আগে লাকি এবং তাঁর লোক নুরুজ্জামান ও রুহুল আমিন আমার স মিল, গাছপালা, ঘর ভেঙে জোরপূর্বক ৪২ শতক জমি দখলে নেন। এ বিষয়ে এসপি, ডিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিই। তদন্ত করতে কেউ এলেই তাঁদের টাকা দিয়ে নিজেদের পক্ষে নিয়ে নেন লাকি। এতে কাজ না হলে কোর্টে মামলা করি, যা চলছে।’ 

মরজাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাজিদা সুলতানা নাসিমা বলেন, ‘লাকি রায়পুরার ত্রাস। তাঁদের অবৈধ টাকার কারণে রাজু এমপির মতো লোক তাঁর ভক্ত হয়ে গেছেন। আমি নিজেই অনেক সাফারার সবাই জানে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে লায়লা কানিজ লাকির মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। 

আর লাকির বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমপির ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, রাজু অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত লায়লা
রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি ঈদের ছুটি শেষে তিন কর্মদিবস অনুপস্থিত। গতকালও উপজেলা পরিষদে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন তা কেউ বলতে পারছেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত তিন কর্মদিবস উনাকে দেখতে পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে পাইলিংয়ের সময় ধসে পড়ল পাশের ভবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১০
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে ভবনটিসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনে অবস্থিত আরএফএল কোম্পানির বেস্ট বাই শোরুম। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন সেখানে কর্মরতরা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনমালিকের অভিযোগ, নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের বলা হলেও কর্ণপাত না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলি স্বর্ণকারপট্টির মুজিব সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক টিম।

সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণাধীন এই ভবনের মালিক স্থানীয় সঞ্জয় কর্মকার, অজয় কর্মকার ও সেলিম নামে আরেক ব্যক্তি। পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পার্শ্ববর্তী ভবনসংলগ্ন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা বা প্যারাসাইলিং ব্যবস্থা ছিল না। এই অবস্থায় পাইলিংয়ের (নিচের অংশ) কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্মাণশ্রমিকেরা। হঠাৎ করেই ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে দৌড়ে সরে পড়েন নির্মাণশ্রমিক ও শোরুমটির কর্মচারীরা।

বেস্ট বাইয়ের কর্মীরা জানান, তারা সকালে এসে ফ্লোরের টাইলসে ফাটল দেখতে পান। ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে ক্যাশ কাউন্টার টেবিলটা সরিয়ে ফেলেন, এর মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনের এক পাশ।

ধসে পড়া ভবন ও বেস্ট বাই ফ্রাঞ্চাইজের মালিক মনিরা খাতুনের দাবি, এ ঘটনায় তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি এর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বারবার নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা রাতের আঁধারে আমার ভবনের নিচের মাটি সরিয়ে ফেলেছে, যার কারণে আজকের এই দুর্ঘটনা। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ৩ ফুট দূরত্ব রেখে কাজ করার কথা থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ সকালে উল্টো আমার কর্মচারীদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।’

একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা শহরের বাসিন্দা ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাফফর আলী মুসা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণ করতে হলে পৌরসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং তা সঠিকভাবে তদারকির দায়িত্ব তাদের। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো তাহলে এমন দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভবনমালিকদের একজন সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে আসা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ আলম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ পেলে সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পৌরসভার প্রশাসক ও ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত