Ajker Patrika

নিজে সুফল পাবে না বলে বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দেয় না তারেক: কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ১৬: ০৬
নিজে সুফল পাবে না বলে বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে দেয় না তারেক: কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে ভালো করলে তার সুফল নিজে পাবেন না বলে দলকে নির্বাচনে যেতে দেন না তারেক রহমান। এ ছাড়া দলীয় নেতারা সংসদে গেলে তাঁর নিজের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যাবে বলে তারেক দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে সংসদে পাঠানো থেকে বিরত রেখেছেন। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এখন দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। বিএনপির টপ টু বটম—সবাই দুর্নীতিবাজ। এই দলের নেতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া টপ টু বটম দুর্নীতির বরপুত্র।’ 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভালো মানুষ সাজানোর জন্য মির্জা ফখরুল বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) তাদের নির্বাচিত ছয়জনকে সংসদে পাঠালেন। এখন যদি ফখরুল সংসদে যায়, তাহলে তারেকের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যাবে—এ রকম একটা সাইকোলজি থেকে ফখরুলকে পার্লামেন্টে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছে তারেক রহমান, এক ধমকে।’ 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল নিজেই তো স্বাধীন নন। তাঁর দলে কোনো পর্যায়ে কোনো সম্মেলনই হয় না, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। তারেকে রহমান বিদেশে থাকলে বিএনপি স্বাধীন সত্তা নিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে পারবে—সেটা আমরা বিশ্বাস করি না।’ 

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি আসবে না; নির্বাচনে বিএনপি যদি আসত গতবারের মতো ফলাফল হতো না—এটা আমি মনে করি। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে অপজিশনের একটা ভোট ছিল। কিন্তু তারেক রহমান মনে করেন, যদি এই অবস্থায় বিএনপি ভালো করে, এটার সুফল তো আমি পাচ্ছি না। তারেক রহমান তো পাচ্ছে না। এখন তার অনুপস্থিতিতে অন্য কেউ নেতা হবে!’ 

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ফখরুল সাহেব নিজেও অনুধাবন করতে পারছেন, তাঁকে কীভাবে তারেকের ধমকের ওপর চলতে হয়। এখন (মির্জা ফখরুল) বলেন, তাঁকে (তারেককে) শাস্তি দেওয়া যাবে না। শাস্তি তিনি তো পেয়েছেন, নতুন করে দেওয়ার কী আছে? তাঁর শাস্তি ভোগ করাই হচ্ছে বিষয়। তাঁকে এখানে (দেশে) এনে শাস্তি ভোগ করাতে হবে। সেটাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। শাস্তি দেওয়ার তো বিষয় না!’ 

তারেকের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এফবিআই ঢাকায় এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে, ট্যাক্স ফাঁকি—অর্থ পাচারের। সেই মামলার রায় হয়েছে। দেশের আদালত, বিচারব্যবস্থা বিএনপির বিরুদ্ধে গেলে তাদের নেতারা বিচারও মানে না, বিচারব্যবস্থা মানে না, আইন মানে না, আইনের শাসন তারা মানতে চায় না।’ 

অস্ত্র মামলা, দুর্নীতির মামলায় তারেকের সাজা হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘তারেকের আর কত সাজা হবে? তাঁর তো সাজা হয়েছে। শাস্তি হয়ে গেছে। এখন তাঁকে শাস্তি ভোগ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সে কথাই বলেছেন। তাঁকে ভালো মানুষ সাজানোর চেষ্টা করার কোনো কারণ নেই।’ 

বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা হঠাৎ করে এক কলমের খোঁচায় বাদ দিয়েছে। কারণ কী? কারণ হলো, ওই ৭ দফায় আছে দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বিএনপির কেউ নেতা হতে পারবে না। ওই ৭ ধারায় আছে, দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তি বিএনপির নেতা হতে পারবে না। ফখরুল তাঁকে (তারেককে) ভালো মানুষ সাজাচ্ছেন, তাহলে ধারাগুলো বাদ দিলেন কেন? দুর্নীতিবাজের যে ধারা আর দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির যে ধারা সেটাতে তারেক রহমান দোষী হয়ে যাচ্ছেন। সে জন্য হঠাৎ করে তারেকের নির্দেশে এক কলমের খোঁচায় বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনে জমা দিয়েছেন।’ 

বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এরা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শ মানে না। এরা এ দেশের গণতন্ত্রকে গিলে খেয়েছে। এরা এ দেশে লুটপাট করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশকে অন্ধকার গহ্বর থেকে উদ্ধার করে আজকে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা, অর্থনীতির অগ্রযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাচেতনা বিকাশের অগ্রযাত্রার সাফল্য ফিরিয়ে এনেছেন।’ 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা আজ এসব কথা বলে অন্ধকারে ঢিল ছোড়েন, তাঁদের বলব—১৫ বছর আগে বাংলাদেশ কেমন ছিল? বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন ছিল? আর ১৫ বছর পরে কেমন হয়েছে? আমাদের ভুলত্রুটি আছে, এটা আমরা স্বীকার করে নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অতীতের ভুলত্রুটি থেকে আমরা শিক্ষা নেব।’

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা, এটা কে বের করেছে? পুলিশ বের করেছে। পুলিশ কোন সরকারের? এটা কি বিএনপির আমলের পুলিশ নাকি শেখ হাসিনার আমলের পুলিশ। ডিবি ব্যাপারটা উদ্ঘাটন করেছে। মামলা হওয়ার আগে এবং মামলার শাস্তি হওয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী কাউকে অপরাধী বলা যাবে না। 

আওয়ামী লীগের সৎ সাহস আছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, জেলার জেনারেল সেক্রেটারি রিমান্ডে, এই রকম উদাহরণতো বিএনপির আমলে, এরশাদের আমলে ছিল না। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, অ্যাড. আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়া ঠিকমতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন: ডা. জাহিদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০০
বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের ফটকে ব্রিফ করেন ডা. জাহিদ। ছবি: স্ক্রিনশট
বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের ফটকে ব্রিফ করেন ডা. জাহিদ। ছবি: স্ক্রিনশট

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন রোগীর শারীরিক অবস্থা যতটুকু ডিসক্লোজড (সাধারণকে জানানো) করা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় তা-ই করা হয়েছে। দেশবাসীকে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাই। মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও দোয়ায় তিনি সুস্থ হয়ে যেন বাংলাদেশে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেন—এই কামনা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থা পূর্বের যে অবস্থায় ছিল, তাই রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকদের সমন্বয় রয়েছে। প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন দেশের সময়ের ব্যবধান থাকায় সন্ধ্যাতেও তাঁদের সঙ্গে মিটিং হয়। এখন পর্যন্ত যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন। আমরা আশাবাদী—দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাঁর বয়স, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং পরিকল্পিতভাবে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কারণে শারীরিক জটিলতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই—তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। তাঁর ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার সর্বক্ষণ উপস্থিত রয়েছেন। দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সব নেতা-কর্মী, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্য রোগীদের চিকিৎসা যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। সবার জন্যই এই হাসপাতাল উন্মুক্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কারণে আপনাদের চিকিৎসা সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। আমাদের নেতাকর্মীরাও কোনো বিঘ্ন ঘটাবেন না।’

ব্রিফিং শেষে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ওনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে—এটা বলতে পারেন।’

উল্লেখ্য, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লন্ডন সফরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪১
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল রহমান। ফাইল ছবি
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিমানবন্দরে পৌঁছেই সরাসরি যুক্তরাজ্যের নটিংহামে নেতা-কর্মীদের পূর্বনির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ও কর্মসূচিতে অংশ নিতেই ডা. শফিকুর রহমান লন্ডন সফর করছেন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমকে জানান, ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকের নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় বুধবার সকালে শফিকুর রহমান লন্ডন সফর করছেন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, লন্ডন সফর শেষে শফিকুর রহমান সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন। সৌদি আরব থেকে ২১ ডিসেম্বর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এর আগে ১৭ ডিসেম্বর সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন যাত্রা করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুই মিত্র জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

  • ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে একটি করে আসনে ছাড়ের ইঙ্গিত।
  • আজ বৈঠক হবে এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণফোরামের সঙ্গে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৫
দুই মিত্র জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

আসন ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ নিষ্পত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে একটি করে আসনে ছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোটকে আরেকটি আসন ছাড় দেওয়া নিয়েও আলোচনা আছে। এই দুই জোটের অন্য দলগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে ভিন্নভাবে মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বিকেলে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন।

সূত্র বলছে, ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আসন দেওয়ার ব্যাপারে সবুজসংকেত দেওয়া হয়েছে, যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে ২০ ডিসেম্বর।

এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ৬ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণফোরামের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠকে বসবে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সবশেষে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি।

১২ দলীয় জোট ও সমমনা জোটের বৈঠক সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৫, কুষ্টিয়া-২ আসনসহ কয়েকটি আসনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে দুই জোটের মিত্ররা। বিএনপির হাইকমান্ড তাদের আশ্বস্ত করেছে, এই বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি তুলেছেন মিত্র জোটের নেতারা। তাঁদের দাবি, জাতীয় সরকারে যেন সব দলকেই মূল্যায়ন করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে দুই জোটের নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, তাঁদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে। যাঁদের মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের সংসদের উচ্চকক্ষে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। তারা দীর্ঘ দিনের মিত্র হিসেবে সর্বোচ্চ মূল্যায়নের চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন।’

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা ৯টা আসন চেয়েছি। বিএনপির পক্ষে সমমনা জোটকে আসন দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আর যাঁদের এবার মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও কবির সিগমা। ছবি: সংগৃহীত
ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও কবির সিগমা। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হয়েছেন দুই সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী। তাঁরা হলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

আজ বুধবার তাঁরা আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হন।

এলাকার কর্মী ও সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদক্ষেপ এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা।

সিগমা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

সিইসিকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কাজী রেহা কবির সিগমা বলেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্য়য়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’

কাজী রেহা কবির সিগমা বলেন, ‘আমি কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। গণসংযোগের কাজে অনেক কর্মী-সমর্থক তৎপর হয়েছে। কিন্তু আমার আইনানুগ গণসংযোগের কাজে ত্রাস সৃষ্টি করে আমার কাজ দুরূহ করার কল্পে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ কর্তৃপক্ষ ন্যক্কারজনকভাবে তৎপর হয়েছে।’

রেহা কবির সিগমা সিইসিকে বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১টায় তারা এক নিরপরাধ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ভুয়া মামলায় কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায়। আমার কর্মীদের আতঙ্কগ্রস্ত করা হয়েছে। যার ফলে নির্বাচনী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’

কবির সিগমা আরও বলেন, ‘আমার কর্মী মো. কিয়ামত আলী (৫০) একজন নিরীহ জনপ্রিয় লোক। তার নামে কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না। তাকে ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বরে করা একটি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ওই মামলায় আমার কর্মী মো. কিয়ামত আলী এজাহারভুক্ত আসামি নয়। কিয়ামত আলীর বাড়ি অষ্টগ্রাম থানা হতে মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটার পথ দূরত্বে হলেও গত এক বছরে কোনো কারণে কখনো পুলিশ কিয়ামতের খোঁজ করেনি। কিয়ামতের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হলেও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, শুধু আমার কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির জন্যই অষ্টগ্রাম থানা-পুলিশ কোনো বিশেষ স্বার্থ হাসিল করার জন্য এ কাজ করেছে।’

সিগমা অবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করে আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নাতীত ও সুষ্ঠু করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সিইসিকে অনুরোধ জানান।

পরে রেহা কবির সিগমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’

এদিকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

প্রার্থী নিরাপত্তার শঙ্কা নিয়ে ইসিতে আসছেন—এ বিষয়ে কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে—জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যারিস্টার ফুয়াদ এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ হচ্ছে, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না। আমরা সার্বিকভাবে সব প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।

সব প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবেন না। জনগণ যাঁকে বেশি ভোট দেবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন।’ তাই সচিব সব প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের আচরণ বিধিমালা মেনে চলার আহ্বান জানান ইসি সচিব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত