Ajker Patrika

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল আজ, ব্যবধান গড়ে দেবে যে রাজ্যগুলো 

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ১৫: ১৮
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল আজ, ব্যবধান গড়ে দেবে যে রাজ্যগুলো 

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে আজ মঙ্গলবার। টানা ৪৪ দিন ধরে চলা সাত ধাপের ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা হতে যাচ্ছে আজ। এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ভারতের প্রায় ৬৪ কোটি মানুষ। বুথফেরত জরিপ বলছে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তবে বিরোধীরা বারবার বলছেন, এবার তারাই জিতবেন। 

তবে যে বা যারাই জিতুক না কেন, সেখানে ব্যবধান গড়ে দেবে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য। আর সেগুলো হলো—বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, বিহার, তেলেঙ্গানা, ওডিশা, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক ও উত্তর প্রদেশ। এ ছাড়া, বিজেপি ভারতের দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যে কতটা ভালো করে, তারা ওপরও অনেক কিছুই নির্ভর করেছে। 

পশ্চিমবঙ্গ 

এই রাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসন আছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২২টি আসন, যা ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়ে ১২টি কম। বিপরীতে ২০১৪ সালে মাত্র দুটি আসনে জেতা বিজেপি ২০১৯ সালে পেয়েছিল ১৮টি আসন। 

সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালে মোদি বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায় তাঁর দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ ছাড়া, ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাজ্যটির বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যদি লোকসভায় ভালো ফলাফল করে, তবে তা সেই নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে। 

বুথফেরত জরিপ অবশ্য বলছে, এই রাজ্যে বিজেপিই এগিয়ে থাকবে। তবে বুথফেরত জরিপ যা-ই বলুক না কেন, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া এই রাজ্যে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী। তৃণমূল কংগ্রেস তো বটেই, এই রাজ্যে জয় ইন্ডিয়া জোটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

মহারাষ্ট্র

 ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ও স্থানীয় রাজনৈতিক দল শিবসেনা মিলে ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪১ টিতে জিতেছিল। তবে এবার শিবসেনা দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশ অবশ্যই বিজেপির সঙ্গে আছে। কিন্তু অপর অংশ যোগ দিয়েছে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে। ফলে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না, এই রাজ্যে কোন শিবসেনা বিজয়ী রূপে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। 

শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টিও দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশ বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার সঙ্গে, অপরাংশ বিজেপির জোটে। ফলে, এনসিপির কোন অংশ ভোটে প্রাধান্য বিস্তার করবে, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। হিন্দুপ্রধান এই রাজ্যে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া যদি ভালো ফলাফল করতে পারে, তবে তা বিজেপির জোটের বিরুদ্ধে তাদের অনেকাংশেই এগিয়ে দেবে। অধিকাংশ বুথফেরত জরিপ বলছে, এবারের নির্বাচনে বিজেপি জোটের আসনসংখ্যা কমতে পারে এই রাজ্যে। 
 
ওডিশা
বিজেপি এবারের নির্বাচনে বিজু জনতা দলের ঘাঁটি বলে পরিচিত ওডিশায়ও ভালো ফলের আশা করছে। এর আগে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজু জনতা দল ২১টি আসনের মধ্যে ১২টিতে জিতেছিল। বিপরীতে বিজেপি পেয়েছিল আটটি আসন। এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আরও ভালো করার আশা করছে। কারণ, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পাওয়া বিজেপি পরের নির্বাচনেই পেয়েছিল আটটি আসন। 

নির্বাচনের আগে বিজেপি বিজু জনতা দলের সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা চালালেও তা ভেস্তে যায়। তবে এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ দলের শীর্ষ নেতারা রাজ্যটিতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। বুথফেরত জরিপগুলো রাজ্যটিতে বিজেপির বিশাল জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে বিরোধীরা এটিকে উড়িয়ে দিয়েছে। 

বিহার
ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বিহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্য, যে রাজ্যে বর্ণ রাজনীতি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে ভোটের লড়াইয়ে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এনডিএ জোটের অংশীদার ছিল জনতা দল (ইউনাইটে)। সেবার রাজ্যের ৪০ আসনের মধ্যে ৩৯টিই জিতেছিল বিজেপি ও জেডিইউ। 

কিন্তু কিছুদিন পরেই বিজেপির জোট ভেঙে জনতা দলের নিতীশ কুমার চির প্রতিদ্বন্দ্বী লালু প্রাসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে যোগ দেয়। গত বছর সেই জোটও ভেঙে নিতীশ ফের বিজেপির কোলে ওঠেন। আর রাষ্ট্রীয় জনতা দল যায় বিরোধী জোট ইন্ডিয়ায়। বিরোধী জোট বিহারে ভালো ফলের আশা করছে। বিরোধী জোটের অন্যতম মুখ রাহুল গান্ধী রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদবের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। 

তবে আশার বিপরীতে বুথফেরত জরিপ বলছে, এবারের নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট দুই অঙ্কের সংখ্যাই পার হতে পারবে না। বিপরীতে এনডিএ জোটই এই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে আবির্ভূত হবে। বিরোধীরা এই জরিপের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ‘মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। 

তেলেঙ্গানা

এবারের লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম ব্যাটলগ্রাউন্ড বা রণক্ষেত্র হলো দক্ষিণী রাজ্য তেলেঙ্গানা। বছরখানেক আগেই এই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস স্থানীয় নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করেছে। তবে এর আগের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি ১৭ লোকসভা আসনের মধ্যে ৯টিতে জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল চারটি এবং কংগ্রেস মাত্র তিনটি। এবারে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারে। কারণ, রাজ্যটিতে এখন কংগ্রেস ক্ষমতায়। 

বুথফেরত জরিপগুলো বলছে, তেলেঙ্গানায় বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিপরীতে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। 

কর্ণাটক

তেলেঙ্গানার পাশাপাশি কর্ণাটকেও ক্ষমতায় আছে কংগ্রেস। গত বছর অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে ভূমিধস জয়লাভ করে। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৫টিতেই জিতেছিল। সে সময় জোটে থাকা স্থানীয় দল জেডিএস ও কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র একটি করে আসন। গতবার জেডিএস কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলেও এবার দলটি বিজেপির এনডিএ জোটে গেছে। 

কর্ণাটকে জয় কংগ্রেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতায় আছে সেখানে এটি দলটির সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষা। তবে বেশির ভাগ বুথফেরত জরিপ কর্ণাটকে বিজেপিকে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিপরীতে কংগ্রেস দুই অঙ্কের সংখ্যা পার হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার ভবিষ্যদ্বাণী বাতিল করেছেন। 
 
এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশ রাজ্যও এই নির্বাচনে ব্যবধান গড়ে দিতে ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত