Ajker Patrika

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই, হামলা সন্দেহের বশে

সৌগত বসু, ফরিদপুর থেকে
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ২৫
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই, হামলা সন্দেহের বশে

ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনও নিশ্চিত জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীর মারধরে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকেরাই। সেই কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। 

আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্দিরটি সর্বজনীন। ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এই এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সবগুলো গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত। আশেপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশেপাশের এলাকা থেকে।

গতকাল সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০–১৫ মিনিটের মধ্যেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন পাশে শুধুমাত্র সাতজন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে এমন- সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্কুলে বা তাঁর আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরাও নেই।

আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চপল্লী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক গজ পেছনে মন্দিরের অবস্থান। স্কুলের কক্ষ থেকে মন্দিরের সবকিছুই দেখা যায়। সেখানে চারটি মূর্তি রয়েছে। এর মধ্যে কালী ও শিব মূর্তি ছিল একসঙ্গে। আর ২ ফুট দূরে দুই পাশে অন্য দুটি মূর্তি। আগুনে পুড়েছে শুধুমাত্র কালী মূর্তি। এই মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা শাড়ি পুড়ে গেছে। মূর্তির সামনে প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটি প্রদীপ রয়েছে। 

এই বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক (বাথরুম ও হাত ধোয়ার জায়গা) তৈরির কাজ চলছে। সেখানকার যে কক্ষে শ্রমিকদের অবস্থান সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের সামনে থেকে কক্ষের পেছনের গ্রিলের জানালার অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো কক্ষে ইট ছড়িয়ে আছে। আর কক্ষের তিন জায়গায় রক্তের ছোপ দাগ। কক্ষে শ্রমিকদের কাপড় ও ব্যাগ রয়েছে। কক্ষে প্রবেশের দুটি দরজার একটি ভাঙা অবস্থায় আছে। 

ঘটনা শুরু যেভাবে 
পঞ্চপল্লী গ্রামে এই মন্দিরটির বয়স প্রায় ৬০ বছর। মন্দিরের পেছনেই বসতি রয়েছে। আর এর মধ্যে প্রভাষ কুমার মন্ডলের (৫০) পরিবার মন্দিরটিতে প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান। প্রতিদিনের মতোই প্রভাষ কুমারের স্ত্রী তপতী রানী মন্ডল (৪০) সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। মন্দির থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ গজের মতো। 

তপতি রানী আজকের পত্রিকাকে জানান, গতকাল সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর সময় সাতজন নির্মাণ শ্রমিক স্কুলের মধ্যেই ছিলেন। প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার কিছু সময় পর গোবরের জ্বালানি সংগ্রহ করতে তিনি আবারও মন্দিরের সামনে যান। তখন নির্মাণ শ্রমিকদের তিনি মন্দিরের সামনে দেখেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। 

তপতি বলেন, শ্রমিকেরা গালিগালাজ করলেও মন্দির ও হিন্দু নিয়ে কিছু বলেননি। এরপর তাঁরা পাশে রাখা একটি নসিমনের (ইঞ্জিনচালিত বড় ভ্যান) কাছে যান। এই নসিমনে স্কুলের নির্মাণসামগ্রী ছিল। এরপর তপতি রানী আবার বাড়ি ফিরে আসেন।

তপতি রানী আরও বলেন, নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কখনো তাঁদের ঝামেলা হয়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যাতেও তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার যাওয়ার সময় তিনি তাদেরকে গালিগালাজ করতে শোনেন। সেসময় তাঁরা মন্দিরের সামনেই ছিলেন।

তবে কী বিষয় নিয়ে শ্রমিকেরা গালিগালাজ করছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তপতি রানী।

বিদ্যালয়ের গ্রিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাজানা যায়, তপতির স্বামী প্রভাষ কুমার মন্ডলের পরিবার শুরু থেকেই এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। প্রভাষ কুমারের মা মনমতি মন্ডল, এরপর তার পিসি (ফুফু) গোলাপী মন্ডল, এরপর তাঁর ভাইয়ের বউ সন্ধ্যা রানী মন্ডল এর আগে মন্দিরে সন্ধ্যাপ্রদীপ ও বাকি কাজ করতেন। তাঁরা সবাই এখন মৃত। এরপর থেকে মালতি রানী মন্দিরের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান।

প্রভাষ কুমার মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই আগুন আগুন চিৎকার শুনে তাঁরা মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখতে পান, কালী মূর্তির শাড়িতে আগুন, সেটা আস্তে আস্তে পাশে থাকা কাপড়ের জিনিসেও ছড়িয়ে যায়। এলাকায় পানির সংকট আছে। সেজন্য আগুন নেভাতে তাদের কিছু সময় লাগে। তবে মূর্তি ছাড়া অন্য কিছুতে আগুন লাগেনি। আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকেরা ওই স্থানেই ছিলেন। এর মধ্যেই আশপাশের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলে তারা স্কুলের মধ্যে তাদের কক্ষে চলে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীরা বলেন, আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা–কাটাকাটি হয়। আর এর জেরে স্থানীরা নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করে বেঁধে রাখেন কক্ষের মধ্যে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, শুরুতে মধুখালী থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ খুবই অল্প মানুষ ছিল। তাঁদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আর এই সময়েই স্কুলের ওই কক্ষ ভেঙে নির্মাণশ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। মন্দির সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষই বেশি ছিল তখন। তাই তাদের থামানো যায়নি।

শ্রমিকদের যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে সে কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে উত্তেজিত জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকাস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সীতা রানী বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার কাজ করতে এসেছেন। তাঁরা স্কুলের মধ্যেই থাকেন। মাঝে মাঝে নির্মাণ সামগ্রী এলে সেগুলো আনতে বাইরে যান। 

স্কুলের আরেক শিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তাঁরা এই ঘটনা শুনতে পান। স্কুলে আসার পর দেখেন স্থানীয় প্রশাসন সেখানে উপস্থিত রয়েছে। তবে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে আশেপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ এখানে ভিড় করেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

স্কুলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, তিনি খবর পেয়ে যখন স্কুলে আসেন তখন নির্মাণশ্রমিকরা স্কুলের ভেতরের কক্ষে ছিলেন। এসময় মধুখালি থানার পুলিশ, ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ওই কক্ষে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। তবে তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এসময় উত্তেজিত জনতা বাইরে থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একটি ইট তাঁর শরীরেও লেগেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা গতকাল ঘটনা শোনার পরই এখানে এসেছেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যায়নি। 

আগুনে কালী প্রতিমার শাড়ি পুড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকাডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন ইউপি সদস্য তাঁকে ফোন করে কালী মন্দিরে আগুনের কথা জানান। তিনি আনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পান নির্মাণ শ্রমিকদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই কক্ষে রাখা হয়েছিল। 

এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তপন বলেন, তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁরা আগুন দিয়েছে কিনা। নির্মাণ শ্রমিকরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ আগুন দেয়নি। সন্দেহ করে তাঁদেরকে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। 

রাত ১১টার পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে থাকা মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম একই ধরনের বক্তব্য দেন। 

আগুন কে দিল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, বাতাসের কারণে আগুন লাগতে পারে। আর পুরো এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়াতে একমাত্র ওই নির্মাণ শ্রমিকেরা মুসলিম ছিলেন। তাই তাঁদেরকেই সন্দেহ করা হয়। আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে সেটা জানা না গেলেও আগুন লাগার পর তা ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছে। সেটির সঙ্গে স্কুলের প্রকল্পের বিষয় থাকতে পারে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, মূর্তির সামনে থাকা প্রদীপ থেকে মূর্তির দূরত্ব অনেক বেশি। আর মূর্তি মাটি থেকে উঁচু একটা জায়গায় রয়েছে। তাই বাতাসে আগুন লাগা সম্ভব নয়। আশেপাশে কাঠ আর টিনের তৈরি মন্দির এবং দুটি মূর্তি থাকলেও সেগুলো অক্ষত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সকালে স্থানীয়দের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিমার গায়ে আগুন লাগলে সব সন্দেহ তাঁদের ওপর পড়ে।

অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কোনো একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনায় একজন আটক আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 
এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ওপর আক্রমণ নির্বাচনী পরিবেশ বানচালের নীলনকশা: বিএনপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৬
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, এই আক্রমণ সুদূরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। দেশের একটি চক্র এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ শুক্রবার দুপুরে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।

রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা হাদিকে গুলি করা হয়। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। হামলায় গুরুতর আহত এই নেতার জন্য ‘বি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তের দরকার বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা।

সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান, হাদির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসকেরা ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত জোগাড় করতে বলেছেন।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থীর ওপর হামলার পরপরই বিবৃতি আসে বিএনপির পক্ষ থেকে।

এতে বলা হয়, হাদি (৩৩) আজ দুপুরে বিপথগামী দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই আক্রমণ সুদুরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। দেশের একটি চক্র এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সমাজে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে হিংস্র সন্ত্রাসীরা পরিব্যাপ্ত রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণতন্ত্রের বিজয়ের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই একটি কুচক্রী মহল দেশকে নৈরাজ্যের অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা সেই অপতৎপরতারই নির্মম বহিঃপ্রকাশ। নাশকতাকারীদের অন্তর্ঘাতমূলক কাজের বিষয়ে জনগণকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্রের পথচলাকে রুদ্ধ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তাই এসব নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নইলে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠবে।

বিএনপি দুস্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে এবং গুলিতে গুরুতর আহত শরিফ ওসমান হাদির আশু সুস্থতা কামনা করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই লাপাত্তা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে রাহিমা আক্তার (২৬) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী মুনসুর মিয়াসহ (৩২) পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার জয়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মুনসুর মিয়া উপজেলার জয়পুর গ্রামের রঙ্গ মিয়ার ছেলে।

আর নিহত রাহিমা আক্তার একই গ্রামের মো. আবুল হাশেমের মেয়ে।

১০ বছর আগে মুনসুর মিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রাহিমার। তাঁদের সংসারে আট বছর ও তিন বছর বয়সী দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে।

নিহত রাহিমার বাবা আবুল হাশেম বলেন, ‘মুনসুর মিয়ার জুয়া খেলার অভ্যাস রয়েছে। জুয়ায় হেরে বাসায় গিয়ে রাহিমাকে মারধর করত। গতকাল সন্ধ্যায় জুয়ায় হেরে বাসায় গিয়ে রাহিমাকে বেধড়ক মারধর করে মুনসুর। একপর্যায়ে রহিমা অচেতন হয়ে গেলে তাকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় মুনসুর ও তার পরিবারের লোকজন। চিকিৎসক রাহিমাকে মৃত ঘোষণা করলে মুনসুর ও পরিবারের লোকজন লাশ রেখে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে দৌড়ে হাসপাতালে যাই। পরে রাতে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসেছি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আজ সকালে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। লাশ নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরব। রাতে এ ঘটনায় মামলা করা হবে। আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’

মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, ‘রাহিমার মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখা গেছে। তিনি বিষ পান করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি ‘লাইফ সাপোর্টে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৭
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছে। তাঁর মাথার ভেতরে বুলেটটি আটকে আছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, বেলা ২টা ২৫ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন দুর্বৃত্ত এসে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং দ্রুত পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, হাদির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন (ক্রিটিক্যাল) এবং বুলেটটি মাথার ভেতরে থাকায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় শরিফ ওসমান হাদির পেছনের রিকশায় ছিলেন মো. রাফি। তিনি হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘জুমার নামাজ শেষে আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। রিকশায় ছিলাম। বিজয়নগর আসতেই একটা মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে হাদি ভাইয়ের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমি ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম।’

এদিকে, ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর দুর্বৃত্তদের এমন হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, যেন হামলায় জড়িত সবাইকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জনগণ যাদের সমর্থন দেবে, তারাই জিতবে: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘পেশিশক্তির প্রয়োগ, জোর করে ভোট নেওয়া, যেকোনো মূল্যে জিততে হবে—এই ধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে এসে জনগণের কাছে আমরা যাই। জনগণ যাদের সমর্থন দিবে, তারাই জিতবে।’

আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড় প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণবিধি বিষয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস এ কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের (এনসিপি) জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০ আসনে আমরা মনোনয়ন দিয়ে আমাদের মতো করে নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি এবং সামগ্রিকভাবে সাংগঠনিক অবস্থাকে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দিকে মনোনিবেশ করছি। এর মধ্যবর্তী সময়ে যদি বাংলাদেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমাদের এই ধরনের সংস্কারের সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের সার্বিক যে অবস্থা, সেই অবস্থাকে অগ্রগতির দিকে রেখে যদি কোনো একটি রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে, দলের সঙ্গে অ্যালায়েন্সের আলোচনা সামনে আসে, সেই আলোচনা হয়তো অগ্রসর হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে, কোন জোটে যাব কিংবা যাব না। আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে প্রস্তুতি, সেটি নিচ্ছি।’

দুই ছাত্র উপদেষ্টার এনসিপিতে আসার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের অভ্যুত্থানে দুজন সহযোদ্ধা ছাত্র উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আসিফ মাহমুদ। আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, তিনি ঢাকা-১০ আসনে তাঁর জায়গা থেকে নির্বাচন করবেন। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। আমরা চাই যে তিনি আমাদের পূর্বের সহযোদ্ধা, তিনি আমাদের এনসিপিতে আসুক এবং এনসিপির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। পাশাপাশি আমাদের আরেকজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি তাঁর জায়গা থেকে এখনো কিন্তু নির্বাচন যে করবেন কিংবা কোন আসনে করবেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট এখনো বক্তব্য দেননি। আমরা প্রত্যাশা করব, তিনিও এনসিপিতে আসবেন। এনসিপির হয়ে যেকোনো একটি আসনে নির্বাচন করে আগামী জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত