Ajker Patrika

মেডিকেলে সুযোগ না পাওয়া নদী এখন গেটিসবার্গ কলেজের শিক্ষার্থী

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৪: ৪০
মেডিকেলে সুযোগ না পাওয়া নদী এখন গেটিসবার্গ কলেজের শিক্ষার্থী

সোহীনি নদী আমেরিকার প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপে গেটিসবার্গ কলেজে স্নাতক পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ম্যাথম্যাটিক্যাল ইকোনমিকস বিষয়ে চলতি বছরের আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু করবেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

সোহীনি নদী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্ন থেকেই নদী এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

স্বপ্ন দেখার শুরু 
এইচএসসি পরীক্ষার পর নদী আটঘাট বেঁধে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। প্রথমবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অল্পের জন্য সুযোগ হয়নি। দ্বিতীয়বারও ভাগ্য সহায় হয়নি তাঁর। এমনিতেই মনঃকষ্টে ভুগছিলেন তিনি, এর ওপর মানুষের নানা কথা শুনতে হয় তাঁকে। কিন্তু ভেঙে পড়েননি নদী। ডাক্তার হওয়া স্বপ্নের ইতি টেনে বিদেশে পড়াশোনার কথা ভাবেন তিনি। শুরু করেন ইউটিউবে ঘাঁটাঘাঁটি। এরই মধ্যে এক আপুর ভিডিও চোখে পড়ে তাঁর। ওই ভিডিও দেখে অনেক অজানা বিষয়ে জানতে পারেন নদী। পরে সেই আপুর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং তাঁর দিকনির্দেশনায় আবেদনের খুঁটিনাটি আয়ত্ত করেন।

যেভাবে বৃত্তি পেলেন
ইউটিউব থেকেই বৃত্তির আবেদনের প্রাথমিক ধারণা পান নদী। কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন হবে, তা-ও নোট করে রাখেন। এরপর বড় ভাই ও আপুদের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে জানতে চেয়ে মেইল করেন। তাঁরা তাঁকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন। নদী যে বৃত্তি পেয়েছেন, সেটির আবেদন শুরু হয়েছিল গতবছর আগস্ট মাসে। এর মধ্যে তিনি তাঁর এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস, একাডেমিক রেজাল্ট সনদ, রিকোমেন্ডেশন লেটার, নিজস্ব রচনাসহ সব কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলেন। এরপর নভেম্বরে আবেদন করেন। আবেদন করলেও গেটিসবার্গ কলেজের মতো আমেরিকার সেরা কলেজে তিনি যে সুযোগ পাবেন, তা ভাবেননি। আবেদনের পর গেটিসবার্গ কলেজে একটা সাক্ষাৎকার দিতে হয়। কয়েক দিন পর ভোর ৬টায় ‘কনগ্র্যাচুলেশন!’ লেখা একটি অফার লেটারের মেসেজ পান নদী। এটিই বৃত্তি পাওয়ার বার্তা ছিল। খুশিতে নদীর চোখে পানি চলে আসে। তখন আবেগাপ্লুত চেহারায় তাঁর মাকে বলছিলেন, ‘আম্মু আমি পেরেছি, আমি পেরেছি!’

গেটিসবার্গ কলেজনদীর ছিল অনেক বাধা 
নদীর এই অর্জন সহজ ছিল না। খানিকটা আক্ষেপের স্বরে সোহীনি নদী বলেন, ‘দেশ আধুনিক হলেও এখনো আমাদের মনমানসিকতা সেই পুরোনো দিনের যুগে পড়ে আছে। এমন একটা পরিবেশ থেকে উঠে এসেছি, যেখানে কোনো মেয়ের বিদেশ যাওয়ার কথা শুনলেই মানুষ মুখ ভেংচি দেয়। নানা রকম বাজে মন্তব্য ছুড়ে দেয়। মাকে অনেকেই বলত, মেয়েমানুষ বিদেশ গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। কলেজশিক্ষকদের থেকে রিকোমেন্ডেশন পেতেও বেগ পেতে হয়। তাঁর শিক্ষকেরা বলছিলেন, ‘মেডিকেলে যেহেতু দুবার পরীক্ষা দিয়েও হয়নি, বিদেশের স্বপ্ন দেখা তোমার জন্য বোকামি।’ এ জন্য তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু নদী সব বাধা অতিক্রম করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। 

আবেদন প্রক্রিয়া 
আমেরিকার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত সনদ, একাডেমিক রেজাল্ট সনদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর কলেজের ৩ জন শিক্ষকের সুপারিশ সনদ প্রয়োজন হয়। শিক্ষকের অফিশিয়াল ই-মেইল দিয়ে সব শিক্ষা সনদ আর ট্রান্সক্রিপ্ট অধ্যাপকদের পাঠাতে হয়। পরে এই বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাচাইবাছাই করে থাকে। সবকিছু দেখে স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে।

পড়া যাবে যেকোনো বিষয়ে
গেটিসবার্গ কলেজে প্রায় ৫০টির বেশি মেজর বিষয় রয়েছে। এখানে যেকোনো বিষয় নিয়ে স্নাতক করা যায়। বৃত্তিতে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় দেওয়া থাকে না। এমনকি এই বৃত্তিতে একসঙ্গে ২ থেকে ৩টি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। কাউকে জোর করে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হয় না। কোনো বিষয় কয়েক দিন পড়ে কষ্টসাধ্য মনে হলে, পরে তিনি তাঁর বিষয় পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন।

গেটিসবার্গ কলেজবৃত্তির সুযোগ-সুবিধা 
একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর বৃত্তি পাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা, তিনি আর্থিক সাহায্য পান। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়াকালীন প্রতিবছর শিক্ষার্থীকে যত টাকা দিতে হয়। প্রতিবছরে টিউশন ফি, ইনস্যুরেন্স ফি, থাকা-খাওয়া; এমন সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিয়ে থাকে। এ ছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তাঁদের ব্যক্তিগত খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
যদি কারও আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থাকে, তাহলে প্রথমেই স্যাট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এই পরীক্ষায় ভালো নম্বর তোলা জরুরি। কারণ, বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্যাট, আইইএলটিএসে ভালো স্কোর কিংবা এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও অনেক সময় বৃত্তি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। কারণ, প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী এ রকম ভালো ফল নিয়ে আবেদন করেন। সে জন্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং নিজের মধ্যে থাকা দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা যায়। এই কাজগুলো সবার থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারে। নতুনদের এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকাটা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ৩১ ডিসেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে ৩১ ডিসেম্বর থেকে। যা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফি জমা দেওয়া যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকা সাপেক্ষে জিপিএ উন্নয়ন পরীক্ষার্থীসহ আবশ্যিক ও নৈর্বাচনিক বিষয় ও বিষয়গুলো এক থেকে চার বিষয়ে ২০২৫ সালে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ২০২৬ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য বিষয় ও বিষয়গুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবরে সাদা কাগজে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশ করবে।

আরও বলা হয়, বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফরম পূরণ করা যাবে ২০২৬ সালের ১২ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরীক্ষার্থী প্রতি ১০০ টাকা হারে বিলম্ব ফিসহ অনলাইনে ফি জমা দেওয়া যাবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

আরও বলা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) ২ হাজার ৪৩৫ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকে ২ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বেতন ও সেশন চার্জ হিসেবে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে।কোনো শিক্ষার্থীর নবম ও দশম শ্রেণির মোট ২৪ মাসের বেশি বেতন নেওয়া যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
বিইউবিটিতে চতুর্থবারের মতো ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট’ আয়োজিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) স্থায়ী ক্যাম্পাসের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা রিজিওনাল কনটেস্ট ২০২৫’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল এবং ডিজিটাল মিডিয়ার সাংবাদিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, যা ‘প্রোগ্রামিংয়ের অলিম্পিক’ খ্যাত—আইসিপিসির এই রিজিওনাল পর্বটি ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ বিইউবিটি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, বিইউবিটি এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করার গৌরব অর্জন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিইউবিটির উপাচার্য ড. এ বি এম শওকত আলী উপস্থিত সাংবাদিকদের এবং এই আয়োজনের গর্বিত স্পনসরদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হলো সারা দেশ থেকে বাংলাদেশের সেরা প্রোগ্রামারদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের মেধা বিকাশের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়া।’

শওকত আলী আরও জানান, এবারের আয়োজনে সারা বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। মোট ৩১৩টি টিমের ৯৩৯ জন মেধাবী প্রোগ্রামার এই চূড়ান্ত পর্বে লড়বেন, যা বাংলাদেশে আইসিপিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিইউবিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য মো. শামসুল হুদা এফসিএ।

এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তুলে ধরেন আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা সাইট ২০২৫-এর আরসিডি (RCD) এবং বিইউবিটির সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সাইফুর রহমান এবং আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা সাইট ২০২৫-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ও এনএসইউর ইসিই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল লায়েস এম এস হক।

এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস বিচারক (২০০৩-২০১৮) শাহরিয়ার মঞ্জুর এবং বিইউবিটির প্রকৌশল ও ফলিতবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুন্সী মাহবুবুর রহমান। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিইউবিটির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন: তিন দিনেও প্রকাশ করা হয়নি ব্যালট নম্বর, প্রচারে নেমে বিপাকে প্রার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদের ‎আসন্ন নির্বাচনে ক্যাম্পাসে প্রচার শুরু হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর থেকে। তফসিল অনুযায়ী টানা ১৩ দিন চলবে এই প্রচার। তবে প্রচার শুরুর পর তিন দিন পার হলেও প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা।

‎‎তফসিল সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর। প্রচারণার ১৩ দিন সময়ের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও ব্যালট নম্বর প্রকাশ না করায় প্রচারণায় বাধার অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা।

‎‎শিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেল’ থেকে ভিপি প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ব্যালট নম্বর না থাকায় প্রচার ও পেপার ছাপাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নাম সংশোধনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

‎ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেল’ থেকে জিএস প্রার্থী খাদিজাতুল কোবরা বলেন, ব্যালট নম্বর প্রকাশ না করায় প্রচার ব্যাহত হচ্ছে এবং এতে নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়। দ্রুত ব্যালট নম্বর প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

‎স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী চন্দন কুমার দাস বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা দায়িত্বহীন। প্রার্থিতা ও আচরণবিধি-সংক্রান্ত অভিযোগে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার পাশাপাশি ব্যালট নম্বর না দেওয়ায় প্রচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা কোনো পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

‎‎এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম চলছে। প্রার্থীদের নাম সংশোধনের জন্য আমাদের কাছে আবেদন এসেছে অনেকগুলো। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নাম সংশোধন বা নিকনেম রাখার জন্য কাজ করছি। ফলে আমাদের কিছুটা সময় বেশি লাগছে।’

‎এর আগে ৪ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই তফসিল অনুযায়ী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী ১১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৪ ডিসেম্বর প্রত্যাহারকৃত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভোট গ্রহণের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর, ভোট গণনা ৩০ ডিসেম্বর (ভোট গ্রহণ শেষে) এবং ফলাফল ঘোষণা ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাবির ‘সি’ ইউনিটের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মো. ফাহিম ফরহাদ
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৬
জাবির ‘সি’ ইউনিটের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা এখন একেবারে দোরগোড়ায়। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির পর এই শেষ মুহূর্তে সঠিক কৌশল নির্ধারণ করাই পারে একজন শিক্ষার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে। এ সময়ে নতুন করে কিছু পড়ার চেয়ে আগে শেখা বিষয়গুলো ঝালিয়ে নেওয়াই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ধরন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। তাই সামান্য কৌশলগত পরিবর্তনই এনে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।

বাংলা: ‘সি’ ইউনিটে বাংলা থেকে ২০টি প্রশ্ন থাকে। তাই প্রথমেই এইচএসসি বাংলা পাঠ্যবই ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। বিশেষ করে উপন্যাস ও নাটক, গল্প ও কবিতা, শব্দার্থ ও উদ্ধৃতি, লেখক ও পাঠ পরিচিতির দিকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

বাংলা ব্যাকরণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বানান ও উচ্চারণ, সমাস, কারক, ধ্বনি, পুরুষ ও সংখ্যাবাচক শব্দ—এসব বিষয় ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে। পাশাপাশি মুখস্থভিত্তিক অংশ যেমন সমার্থক ও বিপরীত শব্দ, বাগধারা এবং পারিভাষিক শব্দ নিয়মিত রিভিশন দিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাহিত্য ও সাহিত্যযুগ থেকেও প্রশ্ন আসে, তাই এই অংশটি অবহেলা করা যাবে না।

ভর্তি প্রস্তুতির সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই প্রশ্নব্যাংক থাকে। প্রতিদিন সেখান থেকে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন সমাধান করা এবং ব্যাকরণ বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণগুলো ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। শেষ সময়ে অফলাইনে মডেল টেস্ট দেওয়ার সুযোগ না থাকলে অনলাইনে বিভিন্ন অনুশীলনী পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে। এতে নিজের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা সহজ হয়, প্রস্তুতি আরও দৃঢ় হয় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

ইংরেজি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে ইংরেজিতে ভালো করা অনিবার্য। ইংরেজিতে কাঙ্ক্ষিত নম্বর না পেলে মোট স্কোর ভালো হলেও অনেক বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায় না। যেমন আইন ও বিচার, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ এবং ইংরেজি বিষয়ে ভর্তির জন্য আলাদাভাবে ইংরেজিতে অন্তত ৬০ শতাংশ নম্বর অর্জন করতে হয়। তাই ইংরেজি গ্রামারে—পার্টস অব স্পিচ, ভয়েস, আর্টিকেল, সাবজেক্ট-ভার্ব অ্যাগ্রিমেন্ট এবং রাইট ফরম অব ভার্ব—ভালো দখল থাকতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্য, এনালজি, অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রিপজিশন এবং সিনোনিম -অ্যান্টোনিমের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। বাজারে ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী ইংরেজির বেশ কিছু ভালো বই রয়েছে, সেগুলো থেকে নিয়মিত প্রশ্ন সমাধান করা উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যেমন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে, গ্রামার থেকে তুলনামূলকভাবে কম প্রশ্ন এসেছে এবং প্যাসেজ থেকে একাধিক প্রশ্ন করা হয়েছে। সাধারণত এক বা দুটি প্যাসেজ দেওয়া থাকে এবং সেখান থেকেই বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাই প্যাসেজ অনুশীলনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি প্রশ্নের ধরন একটু আলাদা হওয়ায় শেষ মুহূর্তে ইংরেজিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

সাধারণ জ্ঞান ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সাধারণ জ্ঞান ও বিভাগ-সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়ের প্রশ্ন ইংরেজিতে ছিল। সাধারণ জ্ঞানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিকের (ইতিহাস, অর্থনীতি, নোবেল পুরস্কার, নদ-নদী, বিশ্বযুদ্ধ, সভ্যতা, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, বিভিন্ন জায়গার পূর্বনাম, খেলাধুলা) প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

বিভাগ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ‘সি’ ইউনিটে যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলোর বিভিন্ন টপিক থেকে প্রশ্ন আসে। সি ইউনিটে বিষয় রয়েছে ৯টি; আইন ও বিচার (বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় সংসদ, সাংবিধানিক সংস্থা), জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ (বাংলাদেশের গণমাধ্যম, উল্লেখযোগ্য পত্রপত্রিকা, পত্রপত্রিকার প্রকাশকাল ও সম্পাদক), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও কনভেনশন, প্রণালি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেশের পরিচিতি), ইতিহাস (সভ্যতা, বিশ্বের প্রথম, প্রাচীন ও বর্তমান নাম, বিপ্লব, বিশ্বযুদ্ধ, আলোচিত যুদ্ধ), প্রত্নতত্ত্ব (বাংলার দর্শনীয় স্থান-স্থাপত্য, প্রাচীন মসজিদ-মন্দির-দুর্গ, গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল), বাংলা (বাংলা ভাষার ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক ও রচনা), দর্শন (বিখ্যাত মনীষীদের উক্তি, উক্তি-সম্পর্কিত প্রশ্ন), ইংরেজি এবং তুলনামূলক সাহিত্য (ইংরেজি সাহিত্য, ইংরেজি সাহিত্য যুগ, সাহিত্যিক পরিভাষা) এসব টপিক থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সবশেষে বলা যায়, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি হলো সময়, ধৈর্য ও কৌশলের একত্রীকরণ। সঠিক কৌশলে প্রস্তুতি নিলে অপ্রয়োজনীয় ভয় অনেকটাই কমে যায়। শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পুনরায় দেখে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার হলে ঘাবড়ানো নয়, আত্মবিশ্বাসী হওয়ায় পার্থক্য গড়ে তুলবে। শেষ পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হবে, পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায় না।

শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাবি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত