Ajker Patrika

চিত্তের বিকাশ এবং একজন অধ্যাপকের বক্তব্য

তাপস মজুমদার, সাংস্কৃতিক সংগঠক
চিত্তের বিকাশ এবং একজন অধ্যাপকের বক্তব্য

কয়েক দিন হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এস এম আবু বকরের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বর্তমান সময়ের ভাষায় বক্তব্যটি ‘ভাইরাল’ হয়েছে বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী অধ্যাপকদের এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এই বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী বলে কিছু নেই, সব হয়ে গেছে পরীক্ষার্থী।’ তিনি আরও বলছেন, ‘যদি শিক্ষাকে পূর্ণ করতে চান, তাহলে তার চিত্তের বিকাশ দরকার। সকাল থেকে বেলা আড়াইটা-তিনটা পর্যন্ত একটানা ক্লাস। কোনো বিরতি নেই।...যত সময় চিত্তের বিকাশ না হচ্ছে, তত সময় হল দখল চলবে; ঠেকাতে পারবেন না; কয়জনকে বহিষ্কার করবেন! সিট দখল চলবে; ডাইনিংয়ে খেয়ে পয়সা দেবে না, এগুলো মানুষ করার দায়িত্ব শিক্ষকের না!... ’

কথাগুলো ভাবাচ্ছে। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, প্রাসঙ্গিক এবং প্রণিধানযোগ্য কথা। তার মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময় পরীক্ষা লেগেই থাকে! ভাইরাল বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা অনেক মন্তব্য থেকে এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়। আর এই ‘পরীক্ষা’ একজন ছাত্রের জন্য রীতিমতো ভয়ানক দুর্ভোগ। তাঁর এই বক্তব্যে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন ছাত্র লিখেছেন, তিনি ২০২৩ সালে তিনটি সেমিস্টার ফাইনাল, বারোটি মিড টার্ম ও বারোটি ইনকোর্স পরীক্ষা দিয়েছেন। এর সঙ্গে তাঁর অ্যাসাইনমেন্টও ছিল। কী ভয়াবহ অবস্থা!

উপর্যুপরি পরীক্ষার ফলে ছাত্রদের শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক শ্রান্তি এসে যাওয়া স্বাভাবিক। এর ফলে তাঁদের চিন্তা করার সময় ও সুযোগ থাকছে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল চেহারা হতে পারে না। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ না থাকলে সেটা কোনো শিক্ষাই নয়। এমন কথা প্রায়ই শোনা যায় যে কোনো কোনো শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। অবশেষে তাঁর জমে যাওয়া একাধিক ক্লাস একটি ক্লাসে শেষ করে দেন। দুই সপ্তাহ বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষা করে ডিপার্টমেন্টে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও অনেক শিক্ষকই তা পরিপালন না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখেন। ফলে সময়মতো রেজাল্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। আমরা এ-ও জানি, একটি সেমিস্টারের রেজাল্ট হয়নি অথচ পরের সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ফলে এমনও ঘটে, পরীক্ষায় খারাপ ফল করা ছাত্রটি ‘ইমপ্রুভমেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ পান না। রেজাল্ট কেন হয় না? কোনো না কোনো শিক্ষকের গাফিলতি; মূল কাজের চেয়ে অন্য কাজে মনোযোগ; প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, শিক্ষক রাজনীতি, ব্যবসা, পদোন্নতি ইত্যাদি! এস এম আবু বকর এবং তাঁর মতো কিছু শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ছাত্রদের জীবন নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কোনো অধিকার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের থাকতে পারে না। এটা রীতিমতো অপরাধ।

কিন্তু এগুলো হচ্ছে কেন? শিক্ষকের সচেতনতার অভাব, জবাবদিহির অভাব, প্রশাসনিক দুর্বলতা, নাকি অন্য কিছু? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের আওতায় লিখিত ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার’র দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে শিক্ষকের দায়িত্ব সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা এ রকম—তাঁরা ছাত্রদের শিক্ষা দেবেন, গবেষণা পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করবেন, ছাত্রদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযোগ রেখে নির্দেশনা দেবেন ও ‘এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস’ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করবেন। এখানে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়—শিক্ষকেরা শিক্ষা দেবেন (শুধু ক্লাস নেওয়ার কথা বলা হয়নি) এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ রেখে পথনির্দেশ ও এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম দেখভাল করবেন। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক কমিটির দায়িত্বের মধ্যেও কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসের কথা বলা হয়েছে (এখানে এক্সট্রা না বলে কো-বলা হয়েছে)। প্রফেসর আবু বকর যে চিত্তের বিকাশের কথা বলেছেন, বোধ করি তিনি এই এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসের দিকেই বিশেষভাবে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ঘুরলে দুটো জিনিস সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। একটা হলো পোস্টার-ব্যানারসহ রাজনৈতিক সক্রিয়তা, আরেকটি হলো বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি। আমি দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা শুরু করেন; কোচিং শুরু করেন। তাহলে তিনি কি আর শিক্ষার্থী থাকেন! তিনি হয়ে যান পরীক্ষার্থী। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পড়ছিলাম। সেখানে দেখলাম, লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার জন্য ভোররাত থেকে লাইন পড়ে যায়। ৮টায় লাইব্রেরি খুলবে। ছেলেমেয়েদের লাইন ধরে লাইব্রেরিতে যাওয়ার ভিড়। কিন্তু শিক্ষার্থী হিসেবে শিখতে নয়; বিসিএস পরীক্ষার পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিতে। এই যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চিত্র হয়, তাহলে ছাত্ররা শিখবেন কখন। কীভাবেই বা শিখবেন। আমরা বিশ্বমানব হওয়ার প্রতিযোগিতায় দাঁড়াব কী করে?

এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব কার। প্রফেসর আবু বকর প্রশ্ন রেখেছেন এই দায়িত্ব কি শিক্ষকের নয়? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমরা যারা সাংস্কৃতিক সংগঠন করছি, তারা সংগঠনের জন্য সদস্য পাই না। স্কুলের ছেলেমেয়েদের কোচিং আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের বিসিএস প্রস্তুতি এবং নানা রকম স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণের হিড়িকে সাংস্কৃতিক কর্মীর উৎসের জায়গায় শুষ্ক বিরানভূমি তৈরি হয়েছে। মানবিক ও সাংগঠনিক কাজের কিছুই তাদের শেখা হচ্ছে না। অথচ এগুলো সুশিক্ষার পরিপূরক।

সম্ভবত স্বামী বিবেকানন্দের কথা—শিক্ষা মানে অন্তর্নিহিত গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ। কারিগরি শিক্ষায় মানবিক বিষয় পড়ানো হয় না। কোথাও কোথাও মানবিক বিষয় সিলেবাসে থাকলেও তার উদ্দেশ্য এবং চেতনা সম্পর্কে সচেতন না থেকেই শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য পড়ে যাওয়া হয়। তাহলে কীভাবে মানবিক মানুষ সৃষ্টি হবে? কীভাবে আলোকিত মানুষ পাওয়া যাবে? অতএব অন্তর্নিহিত গুণাবলি অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।

যথার্থ শিক্ষা না হলে স্বাধীন চিন্তা করা যায় না। একজন শিক্ষককে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান হতে হবে। রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে আমরা জানি, রুচির পরিবর্তন না হলে সে শিক্ষা কোনো শিক্ষা নয়। শিক্ষক হিসেবে মনোযোগ থাকতে হবে সত্যে, অবশ্যই তোষামোদে নয়। ফল কী হচ্ছে? আজকাল অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি, শিক্ষক নন্দিত না হয়ে নিন্দিত হচ্ছেন। এতে ব্যক্তিগতভাবে যেমন কষ্ট পাচ্ছি, তেমনি সামগ্রিকভাবে সমাজ নিয়েও আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ক্ষুদ্র দলাদলি, ভোট পলিটিকস, অর্থলিপ্সা—এসব কখনো চিত্তের বিকাশ ঘটাতে পারে না।

গত শতাব্দীর আশির দশকে দেখেছি, এমনকি নব্বইয়ের দশকেও, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন অনুষ্ঠানে ভরপুর থাকত। গান, আবৃত্তি, নৃত্য, ছবি আঁকা, নাটক যেমন নিয়মিত হতো, তেমনি তার দর্শকসংখ্যাও ছিল প্রচুর। এখন সেসব আর নেই। নেই বলেই চিত্তের সংকট দেখা দিচ্ছে। আবার সেই চর্চা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আরেকটি কথা। ছেলেমেয়েরা শুধু পারফর্ম করে তাদের দায়িত্ব শেষ করুক, এটাও কাম্য নয়। প্রকৃতপক্ষে সংগঠন করুক। দায়িত্ববোধসম্পন্ন মুক্তচিন্তার মানুষ হতে তা ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করছে? আলোচ্য ভিডিওটির লাখ লাখ ভিউয়ার এবং হাজার হাজার শেয়ার দেখে এটা অনুভব করা যাচ্ছে যে মানুষের মধ্যে ভালো কিছু পাওয়ার অধিকারবোধ এখনো যথেষ্ট প্রখর। আপাতত আমরা যে বলি, মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে, সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা পরিণত করে আমাদের প্রচণ্ডভাবে জাগ্রত হতে নির্দেশ করছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। অথচ যোগ্য-অযোগ্যনির্বিশেষে উপাচার্য হওয়ার জন্য শিক্ষকেরা (অবশ্যই সবাই নন) লাইন দিচ্ছেন রাজনীতির নাম ধরে। দেখা যায়, আদর্শবাদ, জ্ঞানচর্চা, স্বচ্ছতাবোধ, সততা ও প্রজ্ঞার অভাব আছে এমন অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন অথবা হওয়ার দৌড়ে শামিল রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নির্বাচন হচ্ছে অথচ শিক্ষার্থীদের নির্বাচন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘকাল।

এ অবস্থায় কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমে প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়, কীভাবে ‘চিত্তের বিকাশ’ ঘটানো যায়, তা গভীরভাবে অত্যন্ত দ্রততার সঙ্গে ভেবে কাজ শুরু করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি এই দায়িত্ব প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধারদের এবং বলা যেতেই পারে এখন পর্যন্ত শিক্ষককুলই কর্ণধার।

তাপস মজুমদার, সাংস্কৃতিক সংগঠক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত