ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হুনজা। তারা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘজীবী জনগোষ্ঠী বলে দাবি করা হয়। ১৯৭০ সালে ছড়িয়ে পড়া এই দাবির সত্যতা যাচাই করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এরপর তাদের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
হুনজা আদিবাসী গোষ্ঠী নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলো:
১। এখানকার মানুষের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে।
২। হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি।
৩। এই জনগোষ্ঠীর মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং এই বয়সেও তাঁরা গর্ভধারণ করতে পারেন।
এই দাবিগুলোর সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবি ১: হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে
হুনজাদের বয়সের প্রচলিত এই দাবি নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকেরা গবেষণা করেছেন। ২০১০ সালে বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক যুক্তরাজ্যের পিয়ার-রিভিউড গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে মানুষের দীর্ঘায়ু সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বেলজিয়ামের তিন গবেষক। তাঁরা গবেষণাটিতে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত ১১ ধরনের মিথের কথা তুলে ধরেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭০ এর দশকে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত দাবির পুনরুত্থান ঘটে। বিশেষ করে, সোভিয়েত রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায়। তবে ১৯৮০ এর দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই ধারণাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করা হয় এবং এগুলো মিথ বা প্রচলিত ধারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন ১৯৭৮ সালে জাপানের শিগেচিও ইজুমির বয়স দাবি করা হয় ১১৩ বছর। পরে ১৯৮৬ সালে ১২০ বছর বয়সে তাঁকে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ১৯৮৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে জাপানি গবেষকেরা দেখেন, শিগেচিও ইজুমির বয়স ১২০ নয়, বড়জোর ১০৫ বছর হবে।
১৯৩৩ সালে জেমস হিলটন ‘লস্ট হরাইজন’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। সেখানে শাংগ্রি-লা নামে তিব্বতে একটি কাল্পনিক ভূস্বর্গের কথা বলা হয়েছে, যেখানকার বাসিন্দারা সুখী, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে হুনজাদের বয়স-সম্পর্কিত ধারণাকে ‘শাংগ্রি-লার’ আধুনিক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্বাসে মানুষের অনেক বেশি আয়ু পাওয়ার গল্প রয়েছে। যেমন রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের বাসিন্দারা ১৬৮ বছর পর্যন্ত বাঁচেন। শুধু তা-ই নয়, সেখানে ১২০ বছরের বেশি বয়সী শত শত লোক জীবিত আছে—এমন দাবিও করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, আয়ুর এসব দাবিই প্রমাণ করে, এগুলো কতটা অবাস্তব! আবার দীর্ঘায়ু দাবিদারদের মধ্যে পুরুষই বেশি। যেখানে আধুনিক বিশ্বে নারীদের গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ এরডম্যান বাল্লাহ পালমোর দ্য জেরোন্টোলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় লেখেন, ১৯৭০-এর দশকে রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর বিভিন্ন প্রতিবেদন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপকসংখ্যক শতবর্ষী মানুষ বেঁচে আছেন এবং এদের কেউ কেউ ১৫০ বছর বা তার বেশি বয়স লাভ করেছেন।
তবে প্রতিবেদনগুলো সংশয়ের সৃষ্টি করে। কারণ, ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় আদমশুমারি চালিয়ে অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনুরূপভাবে রাশিয়ায়ও শতবর্ষী মানুষ বেশি থাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে হুনজাদের ভাষার কোনো লিখিত রূপ না থাকা এবং শিশুদের জন্মনিবন্ধন না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি।
১৯৬১ সালে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত হুনজাদের নিয়ে একটি গবেষণায় বলা হয়, হুনজা পুরুষদের সাধারণভাবে ১২০ বা ১৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার দাবিটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে এমন বয়স পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
জন মেরিয়ন টিয়ার্নি নামের একজন আমেরিকান সাংবাদিক হুনজা ভ্যালি ঘুরে এসে ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, হুনজা ভ্যালিতে গিয়ে তাঁদের বয়স-সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাটি ভেঙে গেছে। তাঁদের কোনো জন্মনিবন্ধন নেই। সেখানকার নিরক্ষর লোকজন জানেন না, তাঁদের বয়স কত এবং তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়িয়ে বলার প্রবণতা দেখেছেন তিনি।
ওই সাংবাদিক লেখেন, হুনজাতে অস্বাভাবিক বেশি কোনো শতবর্ষী আমি দেখিনি এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও স্বাস্থ্যকর নয়। তাঁদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছি। এ ছাড়া তাঁদের খাদ্যতালিকাতেও আয়োডিনের অপার্যপ্ততা রয়েছে।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত চিকিৎসা গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, হুনজাদের গড় আয়ু পুরুষের ৫৩ বছর এবং নারীদের ৫২ বছর।
১৯৮৬ সালে ওয়াশিংটন পোস্টেও দীর্ঘায়ু নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো সম্পর্কে এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, রাশিয়া, ইকুয়েডর কিংবা পাকিস্তান—যেখানেই দীর্ঘায়ুর দাবি উঠেছে, সেখানে অধিকাংশই বয়স নিয়ে মিথ্যা বলেছেন।
কিন্তু কেন মানুষ বয়স নিয়ে মিথ্যা বলে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু সংস্কৃতি যেমন, হুনজাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিদের খুব সম্মান করা হয়। তাঁদের সংস্কৃতিতে মানুষ যত বুড়ো হয়, তাঁর সম্মান তত বেশি।
অনুসন্ধানে ব্লু জোন নামে একটি পরিভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লু জোন বলতে এমন ভৌগোলিক স্থানকে বোঝায়, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার হার কম এবং মানুষের গড় আয়ু বেশি। পৃথিবীতে এমন পাঁচটি ব্লু জোনের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে সেখানে পাকিস্তানের হুনজা ভ্যালির নাম নেই। ব্লু জোন পাঁচটি হলো ইতালি, গ্রিস, জাপান, কোস্টারিকা ও যুক্তরাষ্ট্র।
হুনজাদের প্রকৃত গড় আয়ু নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে নেদারল্যান্ডসের রেডবাউড ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট রিসার্চের ওয়েবসাইটে গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ুর তথ্য পাওয়া যায়। সব শেষ ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৬৪ বছর।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর এবং তাঁদের কারও কারও ১৬৫ বছরও বাঁচার দাবিটি মিথ বা প্রচলিত বিশ্বাস, যা মোটামুটি ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রচার হয়ে আসছে। দাবিটির সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
দাবি ২: হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি
হুনজাদের নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলোর আরেকটি হলো, হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি। তবে ২০২১ সালে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ জাপানের নৃবিজ্ঞানী কিঞ্জি ইমানিশির লেখা বই ‘পারসোনালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন হুনজা ভ্যালি’-এর বরাত দিয়ে জানায়, ১৯৫৫ সালে হুনজা ভ্যালিতে জাপানি গবেষকদের একটি পর্যবেক্ষণে ১০ জন হুনজা আদিবাসীর মধ্যে টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। হুনজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ক্যানসারমুক্ত হওয়ার গুজব, ভিত্তিহীন।
হুনজাদের ক্যানসার না হওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করা হয়, তাঁদের খাদ্যতালিকায় থাকে এপ্রিকট নামের ফল। তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানসার কাউন্সিলের নির্বাহী তানইয়া বুকানন এএফপিকে বলেন, এপ্রিকট ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে—এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
একই দাবি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও একই বছর একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হুনজাদের কখনো ক্যানসার না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে। একই সঙ্গে অ্যাপ্রিকট ফল খাওয়ার সঙ্গে ক্যানসার না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
জনস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ মার্ক স্টিবিচ ফ্যাক্টভিত্তিক কনটেন্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান ভেরি ওয়েল হেলথে লেখেন, হুনজাদের কখনো রোগ না হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। ২০২১ সালে ৪২৫ জন হুনজার ওপর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে প্রতি তিনজনের একজনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া গেছে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের লক্ষণও দেখা গেছে।
এ ছাড়া এরই আগেই আমেরিকান সাংবাদিক জন মেরিয়ন টিয়ার্নির হুনজা ভ্যালি ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সেখানে ঘুরতে গিয়ে হুনজাদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছেন।
অর্থাৎ হুনজাদের কখনো টিউমার হয় না—তথ্যটি ভিত্তিহীন।
দাবি ৩: হুনজা মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং তাঁরা এই বয়সে গর্ভধারণ করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবি অনুযায়ী, হুনজা মেয়েদের ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয়। কোথাও কোথাও এই বয়স ৮০-৯০ বছর বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও দাবি করা হয়, তাঁরা ৬৫ বা ৮০-৯০ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
তবে অনুসন্ধানে দীর্ঘায়ুর দাবির মতোই এই দাবিরও কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটিও অতিরঞ্জিত তথ্য।
আবার এই দাবি সত্য হলেও এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সাধারণভাবে গর্ভধারণের কোনো বয়স নির্দিষ্ট নেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণের সক্ষমতা কমতে থাকে। সাধারণত মেনোপজের ৫ থেকে ১০ বছর আগে থেকেই একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যায়। আর ৪০ বছরের পরই সাধারণত মেনোপজ শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রেও ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের সন্তান জন্মদানের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।
হুনজাদের বাস পাকিস্তানের গিলগিট-বালটিস্তানের উত্তর অংশে হুনজা উপত্যকায়। এটির পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং উত্তর-পূর্বে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল। বর্তমান আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার আগে দুর্গম এই অঞ্চলে মানুষের পৌঁছানো ছিল কঠিন। আর দুর্গম হওয়ার কারণেই এই অঞ্চল মানুষের কাছে রহস্যময় হয়ে রয়েছে। সেই রহস্য থেকেই হুনজাদের বয়স, সন্তানধারণ ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ছড়িয়েছে নানা তথ্য। এগুলোর মধ্যে আছে শতবর্ষী দীর্ঘায়ু লাভ, ক্যানসার প্রতিরোধ এবং নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা।

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হুনজা। তারা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘজীবী জনগোষ্ঠী বলে দাবি করা হয়। ১৯৭০ সালে ছড়িয়ে পড়া এই দাবির সত্যতা যাচাই করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এরপর তাদের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
হুনজা আদিবাসী গোষ্ঠী নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলো:
১। এখানকার মানুষের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে।
২। হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি।
৩। এই জনগোষ্ঠীর মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং এই বয়সেও তাঁরা গর্ভধারণ করতে পারেন।
এই দাবিগুলোর সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবি ১: হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে
হুনজাদের বয়সের প্রচলিত এই দাবি নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকেরা গবেষণা করেছেন। ২০১০ সালে বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক যুক্তরাজ্যের পিয়ার-রিভিউড গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে মানুষের দীর্ঘায়ু সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বেলজিয়ামের তিন গবেষক। তাঁরা গবেষণাটিতে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত ১১ ধরনের মিথের কথা তুলে ধরেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭০ এর দশকে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত দাবির পুনরুত্থান ঘটে। বিশেষ করে, সোভিয়েত রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায়। তবে ১৯৮০ এর দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই ধারণাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করা হয় এবং এগুলো মিথ বা প্রচলিত ধারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন ১৯৭৮ সালে জাপানের শিগেচিও ইজুমির বয়স দাবি করা হয় ১১৩ বছর। পরে ১৯৮৬ সালে ১২০ বছর বয়সে তাঁকে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ১৯৮৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে জাপানি গবেষকেরা দেখেন, শিগেচিও ইজুমির বয়স ১২০ নয়, বড়জোর ১০৫ বছর হবে।
১৯৩৩ সালে জেমস হিলটন ‘লস্ট হরাইজন’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। সেখানে শাংগ্রি-লা নামে তিব্বতে একটি কাল্পনিক ভূস্বর্গের কথা বলা হয়েছে, যেখানকার বাসিন্দারা সুখী, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে হুনজাদের বয়স-সম্পর্কিত ধারণাকে ‘শাংগ্রি-লার’ আধুনিক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্বাসে মানুষের অনেক বেশি আয়ু পাওয়ার গল্প রয়েছে। যেমন রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের বাসিন্দারা ১৬৮ বছর পর্যন্ত বাঁচেন। শুধু তা-ই নয়, সেখানে ১২০ বছরের বেশি বয়সী শত শত লোক জীবিত আছে—এমন দাবিও করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, আয়ুর এসব দাবিই প্রমাণ করে, এগুলো কতটা অবাস্তব! আবার দীর্ঘায়ু দাবিদারদের মধ্যে পুরুষই বেশি। যেখানে আধুনিক বিশ্বে নারীদের গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ এরডম্যান বাল্লাহ পালমোর দ্য জেরোন্টোলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় লেখেন, ১৯৭০-এর দশকে রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর বিভিন্ন প্রতিবেদন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপকসংখ্যক শতবর্ষী মানুষ বেঁচে আছেন এবং এদের কেউ কেউ ১৫০ বছর বা তার বেশি বয়স লাভ করেছেন।
তবে প্রতিবেদনগুলো সংশয়ের সৃষ্টি করে। কারণ, ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় আদমশুমারি চালিয়ে অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনুরূপভাবে রাশিয়ায়ও শতবর্ষী মানুষ বেশি থাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে হুনজাদের ভাষার কোনো লিখিত রূপ না থাকা এবং শিশুদের জন্মনিবন্ধন না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি।
১৯৬১ সালে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত হুনজাদের নিয়ে একটি গবেষণায় বলা হয়, হুনজা পুরুষদের সাধারণভাবে ১২০ বা ১৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার দাবিটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে এমন বয়স পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
জন মেরিয়ন টিয়ার্নি নামের একজন আমেরিকান সাংবাদিক হুনজা ভ্যালি ঘুরে এসে ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, হুনজা ভ্যালিতে গিয়ে তাঁদের বয়স-সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাটি ভেঙে গেছে। তাঁদের কোনো জন্মনিবন্ধন নেই। সেখানকার নিরক্ষর লোকজন জানেন না, তাঁদের বয়স কত এবং তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়িয়ে বলার প্রবণতা দেখেছেন তিনি।
ওই সাংবাদিক লেখেন, হুনজাতে অস্বাভাবিক বেশি কোনো শতবর্ষী আমি দেখিনি এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও স্বাস্থ্যকর নয়। তাঁদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছি। এ ছাড়া তাঁদের খাদ্যতালিকাতেও আয়োডিনের অপার্যপ্ততা রয়েছে।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত চিকিৎসা গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, হুনজাদের গড় আয়ু পুরুষের ৫৩ বছর এবং নারীদের ৫২ বছর।
১৯৮৬ সালে ওয়াশিংটন পোস্টেও দীর্ঘায়ু নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো সম্পর্কে এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, রাশিয়া, ইকুয়েডর কিংবা পাকিস্তান—যেখানেই দীর্ঘায়ুর দাবি উঠেছে, সেখানে অধিকাংশই বয়স নিয়ে মিথ্যা বলেছেন।
কিন্তু কেন মানুষ বয়স নিয়ে মিথ্যা বলে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু সংস্কৃতি যেমন, হুনজাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিদের খুব সম্মান করা হয়। তাঁদের সংস্কৃতিতে মানুষ যত বুড়ো হয়, তাঁর সম্মান তত বেশি।
অনুসন্ধানে ব্লু জোন নামে একটি পরিভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লু জোন বলতে এমন ভৌগোলিক স্থানকে বোঝায়, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার হার কম এবং মানুষের গড় আয়ু বেশি। পৃথিবীতে এমন পাঁচটি ব্লু জোনের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে সেখানে পাকিস্তানের হুনজা ভ্যালির নাম নেই। ব্লু জোন পাঁচটি হলো ইতালি, গ্রিস, জাপান, কোস্টারিকা ও যুক্তরাষ্ট্র।
হুনজাদের প্রকৃত গড় আয়ু নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে নেদারল্যান্ডসের রেডবাউড ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট রিসার্চের ওয়েবসাইটে গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ুর তথ্য পাওয়া যায়। সব শেষ ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৬৪ বছর।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর এবং তাঁদের কারও কারও ১৬৫ বছরও বাঁচার দাবিটি মিথ বা প্রচলিত বিশ্বাস, যা মোটামুটি ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রচার হয়ে আসছে। দাবিটির সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
দাবি ২: হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি
হুনজাদের নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলোর আরেকটি হলো, হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি। তবে ২০২১ সালে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ জাপানের নৃবিজ্ঞানী কিঞ্জি ইমানিশির লেখা বই ‘পারসোনালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন হুনজা ভ্যালি’-এর বরাত দিয়ে জানায়, ১৯৫৫ সালে হুনজা ভ্যালিতে জাপানি গবেষকদের একটি পর্যবেক্ষণে ১০ জন হুনজা আদিবাসীর মধ্যে টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। হুনজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ক্যানসারমুক্ত হওয়ার গুজব, ভিত্তিহীন।
হুনজাদের ক্যানসার না হওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করা হয়, তাঁদের খাদ্যতালিকায় থাকে এপ্রিকট নামের ফল। তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানসার কাউন্সিলের নির্বাহী তানইয়া বুকানন এএফপিকে বলেন, এপ্রিকট ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে—এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
একই দাবি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও একই বছর একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হুনজাদের কখনো ক্যানসার না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে। একই সঙ্গে অ্যাপ্রিকট ফল খাওয়ার সঙ্গে ক্যানসার না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
জনস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ মার্ক স্টিবিচ ফ্যাক্টভিত্তিক কনটেন্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান ভেরি ওয়েল হেলথে লেখেন, হুনজাদের কখনো রোগ না হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। ২০২১ সালে ৪২৫ জন হুনজার ওপর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে প্রতি তিনজনের একজনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া গেছে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের লক্ষণও দেখা গেছে।
এ ছাড়া এরই আগেই আমেরিকান সাংবাদিক জন মেরিয়ন টিয়ার্নির হুনজা ভ্যালি ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সেখানে ঘুরতে গিয়ে হুনজাদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছেন।
অর্থাৎ হুনজাদের কখনো টিউমার হয় না—তথ্যটি ভিত্তিহীন।
দাবি ৩: হুনজা মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং তাঁরা এই বয়সে গর্ভধারণ করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবি অনুযায়ী, হুনজা মেয়েদের ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয়। কোথাও কোথাও এই বয়স ৮০-৯০ বছর বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও দাবি করা হয়, তাঁরা ৬৫ বা ৮০-৯০ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
তবে অনুসন্ধানে দীর্ঘায়ুর দাবির মতোই এই দাবিরও কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটিও অতিরঞ্জিত তথ্য।
আবার এই দাবি সত্য হলেও এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সাধারণভাবে গর্ভধারণের কোনো বয়স নির্দিষ্ট নেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণের সক্ষমতা কমতে থাকে। সাধারণত মেনোপজের ৫ থেকে ১০ বছর আগে থেকেই একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যায়। আর ৪০ বছরের পরই সাধারণত মেনোপজ শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রেও ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের সন্তান জন্মদানের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।
হুনজাদের বাস পাকিস্তানের গিলগিট-বালটিস্তানের উত্তর অংশে হুনজা উপত্যকায়। এটির পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং উত্তর-পূর্বে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল। বর্তমান আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার আগে দুর্গম এই অঞ্চলে মানুষের পৌঁছানো ছিল কঠিন। আর দুর্গম হওয়ার কারণেই এই অঞ্চল মানুষের কাছে রহস্যময় হয়ে রয়েছে। সেই রহস্য থেকেই হুনজাদের বয়স, সন্তানধারণ ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ছড়িয়েছে নানা তথ্য। এগুলোর মধ্যে আছে শতবর্ষী দীর্ঘায়ু লাভ, ক্যানসার প্রতিরোধ এবং নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা।
ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হুনজা। তারা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘজীবী জনগোষ্ঠী বলে দাবি করা হয়। ১৯৭০ সালে ছড়িয়ে পড়া এই দাবির সত্যতা যাচাই করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এরপর তাদের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
হুনজা আদিবাসী গোষ্ঠী নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলো:
১। এখানকার মানুষের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে।
২। হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি।
৩। এই জনগোষ্ঠীর মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং এই বয়সেও তাঁরা গর্ভধারণ করতে পারেন।
এই দাবিগুলোর সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবি ১: হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে
হুনজাদের বয়সের প্রচলিত এই দাবি নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকেরা গবেষণা করেছেন। ২০১০ সালে বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক যুক্তরাজ্যের পিয়ার-রিভিউড গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে মানুষের দীর্ঘায়ু সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বেলজিয়ামের তিন গবেষক। তাঁরা গবেষণাটিতে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত ১১ ধরনের মিথের কথা তুলে ধরেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭০ এর দশকে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত দাবির পুনরুত্থান ঘটে। বিশেষ করে, সোভিয়েত রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায়। তবে ১৯৮০ এর দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই ধারণাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করা হয় এবং এগুলো মিথ বা প্রচলিত ধারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন ১৯৭৮ সালে জাপানের শিগেচিও ইজুমির বয়স দাবি করা হয় ১১৩ বছর। পরে ১৯৮৬ সালে ১২০ বছর বয়সে তাঁকে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ১৯৮৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে জাপানি গবেষকেরা দেখেন, শিগেচিও ইজুমির বয়স ১২০ নয়, বড়জোর ১০৫ বছর হবে।
১৯৩৩ সালে জেমস হিলটন ‘লস্ট হরাইজন’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। সেখানে শাংগ্রি-লা নামে তিব্বতে একটি কাল্পনিক ভূস্বর্গের কথা বলা হয়েছে, যেখানকার বাসিন্দারা সুখী, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে হুনজাদের বয়স-সম্পর্কিত ধারণাকে ‘শাংগ্রি-লার’ আধুনিক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্বাসে মানুষের অনেক বেশি আয়ু পাওয়ার গল্প রয়েছে। যেমন রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের বাসিন্দারা ১৬৮ বছর পর্যন্ত বাঁচেন। শুধু তা-ই নয়, সেখানে ১২০ বছরের বেশি বয়সী শত শত লোক জীবিত আছে—এমন দাবিও করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, আয়ুর এসব দাবিই প্রমাণ করে, এগুলো কতটা অবাস্তব! আবার দীর্ঘায়ু দাবিদারদের মধ্যে পুরুষই বেশি। যেখানে আধুনিক বিশ্বে নারীদের গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ এরডম্যান বাল্লাহ পালমোর দ্য জেরোন্টোলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় লেখেন, ১৯৭০-এর দশকে রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর বিভিন্ন প্রতিবেদন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপকসংখ্যক শতবর্ষী মানুষ বেঁচে আছেন এবং এদের কেউ কেউ ১৫০ বছর বা তার বেশি বয়স লাভ করেছেন।
তবে প্রতিবেদনগুলো সংশয়ের সৃষ্টি করে। কারণ, ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় আদমশুমারি চালিয়ে অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনুরূপভাবে রাশিয়ায়ও শতবর্ষী মানুষ বেশি থাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে হুনজাদের ভাষার কোনো লিখিত রূপ না থাকা এবং শিশুদের জন্মনিবন্ধন না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি।
১৯৬১ সালে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত হুনজাদের নিয়ে একটি গবেষণায় বলা হয়, হুনজা পুরুষদের সাধারণভাবে ১২০ বা ১৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার দাবিটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে এমন বয়স পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
জন মেরিয়ন টিয়ার্নি নামের একজন আমেরিকান সাংবাদিক হুনজা ভ্যালি ঘুরে এসে ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, হুনজা ভ্যালিতে গিয়ে তাঁদের বয়স-সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাটি ভেঙে গেছে। তাঁদের কোনো জন্মনিবন্ধন নেই। সেখানকার নিরক্ষর লোকজন জানেন না, তাঁদের বয়স কত এবং তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়িয়ে বলার প্রবণতা দেখেছেন তিনি।
ওই সাংবাদিক লেখেন, হুনজাতে অস্বাভাবিক বেশি কোনো শতবর্ষী আমি দেখিনি এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও স্বাস্থ্যকর নয়। তাঁদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছি। এ ছাড়া তাঁদের খাদ্যতালিকাতেও আয়োডিনের অপার্যপ্ততা রয়েছে।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত চিকিৎসা গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, হুনজাদের গড় আয়ু পুরুষের ৫৩ বছর এবং নারীদের ৫২ বছর।
১৯৮৬ সালে ওয়াশিংটন পোস্টেও দীর্ঘায়ু নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো সম্পর্কে এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, রাশিয়া, ইকুয়েডর কিংবা পাকিস্তান—যেখানেই দীর্ঘায়ুর দাবি উঠেছে, সেখানে অধিকাংশই বয়স নিয়ে মিথ্যা বলেছেন।
কিন্তু কেন মানুষ বয়স নিয়ে মিথ্যা বলে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু সংস্কৃতি যেমন, হুনজাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিদের খুব সম্মান করা হয়। তাঁদের সংস্কৃতিতে মানুষ যত বুড়ো হয়, তাঁর সম্মান তত বেশি।
অনুসন্ধানে ব্লু জোন নামে একটি পরিভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লু জোন বলতে এমন ভৌগোলিক স্থানকে বোঝায়, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার হার কম এবং মানুষের গড় আয়ু বেশি। পৃথিবীতে এমন পাঁচটি ব্লু জোনের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে সেখানে পাকিস্তানের হুনজা ভ্যালির নাম নেই। ব্লু জোন পাঁচটি হলো ইতালি, গ্রিস, জাপান, কোস্টারিকা ও যুক্তরাষ্ট্র।
হুনজাদের প্রকৃত গড় আয়ু নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে নেদারল্যান্ডসের রেডবাউড ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট রিসার্চের ওয়েবসাইটে গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ুর তথ্য পাওয়া যায়। সব শেষ ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৬৪ বছর।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর এবং তাঁদের কারও কারও ১৬৫ বছরও বাঁচার দাবিটি মিথ বা প্রচলিত বিশ্বাস, যা মোটামুটি ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রচার হয়ে আসছে। দাবিটির সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
দাবি ২: হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি
হুনজাদের নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলোর আরেকটি হলো, হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি। তবে ২০২১ সালে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ জাপানের নৃবিজ্ঞানী কিঞ্জি ইমানিশির লেখা বই ‘পারসোনালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন হুনজা ভ্যালি’-এর বরাত দিয়ে জানায়, ১৯৫৫ সালে হুনজা ভ্যালিতে জাপানি গবেষকদের একটি পর্যবেক্ষণে ১০ জন হুনজা আদিবাসীর মধ্যে টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। হুনজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ক্যানসারমুক্ত হওয়ার গুজব, ভিত্তিহীন।
হুনজাদের ক্যানসার না হওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করা হয়, তাঁদের খাদ্যতালিকায় থাকে এপ্রিকট নামের ফল। তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানসার কাউন্সিলের নির্বাহী তানইয়া বুকানন এএফপিকে বলেন, এপ্রিকট ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে—এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
একই দাবি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও একই বছর একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হুনজাদের কখনো ক্যানসার না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে। একই সঙ্গে অ্যাপ্রিকট ফল খাওয়ার সঙ্গে ক্যানসার না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
জনস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ মার্ক স্টিবিচ ফ্যাক্টভিত্তিক কনটেন্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান ভেরি ওয়েল হেলথে লেখেন, হুনজাদের কখনো রোগ না হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। ২০২১ সালে ৪২৫ জন হুনজার ওপর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে প্রতি তিনজনের একজনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া গেছে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের লক্ষণও দেখা গেছে।
এ ছাড়া এরই আগেই আমেরিকান সাংবাদিক জন মেরিয়ন টিয়ার্নির হুনজা ভ্যালি ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সেখানে ঘুরতে গিয়ে হুনজাদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছেন।
অর্থাৎ হুনজাদের কখনো টিউমার হয় না—তথ্যটি ভিত্তিহীন।
দাবি ৩: হুনজা মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং তাঁরা এই বয়সে গর্ভধারণ করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবি অনুযায়ী, হুনজা মেয়েদের ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয়। কোথাও কোথাও এই বয়স ৮০-৯০ বছর বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও দাবি করা হয়, তাঁরা ৬৫ বা ৮০-৯০ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
তবে অনুসন্ধানে দীর্ঘায়ুর দাবির মতোই এই দাবিরও কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটিও অতিরঞ্জিত তথ্য।
আবার এই দাবি সত্য হলেও এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সাধারণভাবে গর্ভধারণের কোনো বয়স নির্দিষ্ট নেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণের সক্ষমতা কমতে থাকে। সাধারণত মেনোপজের ৫ থেকে ১০ বছর আগে থেকেই একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যায়। আর ৪০ বছরের পরই সাধারণত মেনোপজ শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রেও ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের সন্তান জন্মদানের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।
হুনজাদের বাস পাকিস্তানের গিলগিট-বালটিস্তানের উত্তর অংশে হুনজা উপত্যকায়। এটির পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং উত্তর-পূর্বে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল। বর্তমান আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার আগে দুর্গম এই অঞ্চলে মানুষের পৌঁছানো ছিল কঠিন। আর দুর্গম হওয়ার কারণেই এই অঞ্চল মানুষের কাছে রহস্যময় হয়ে রয়েছে। সেই রহস্য থেকেই হুনজাদের বয়স, সন্তানধারণ ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ছড়িয়েছে নানা তথ্য। এগুলোর মধ্যে আছে শতবর্ষী দীর্ঘায়ু লাভ, ক্যানসার প্রতিরোধ এবং নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা।

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হুনজা। তারা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘজীবী জনগোষ্ঠী বলে দাবি করা হয়। ১৯৭০ সালে ছড়িয়ে পড়া এই দাবির সত্যতা যাচাই করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এরপর তাদের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
হুনজা আদিবাসী গোষ্ঠী নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলো:
১। এখানকার মানুষের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে।
২। হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি।
৩। এই জনগোষ্ঠীর মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং এই বয়সেও তাঁরা গর্ভধারণ করতে পারেন।
এই দাবিগুলোর সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
দাবি ১: হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর, অনেকে এখানে ১৬৫ বছরও বাঁচে
হুনজাদের বয়সের প্রচলিত এই দাবি নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকেরা গবেষণা করেছেন। ২০১০ সালে বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক যুক্তরাজ্যের পিয়ার-রিভিউড গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে মানুষের দীর্ঘায়ু সম্পর্কে বিভিন্ন মিথ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বেলজিয়ামের তিন গবেষক। তাঁরা গবেষণাটিতে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত ১১ ধরনের মিথের কথা তুলে ধরেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭০ এর দশকে দীর্ঘায়ু-সম্পর্কিত দাবির পুনরুত্থান ঘটে। বিশেষ করে, সোভিয়েত রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায়। তবে ১৯৮০ এর দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই ধারণাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করা হয় এবং এগুলো মিথ বা প্রচলিত ধারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়। যেমন ১৯৭৮ সালে জাপানের শিগেচিও ইজুমির বয়স দাবি করা হয় ১১৩ বছর। পরে ১৯৮৬ সালে ১২০ বছর বয়সে তাঁকে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ১৯৮৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে জাপানি গবেষকেরা দেখেন, শিগেচিও ইজুমির বয়স ১২০ নয়, বড়জোর ১০৫ বছর হবে।
১৯৩৩ সালে জেমস হিলটন ‘লস্ট হরাইজন’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। সেখানে শাংগ্রি-লা নামে তিব্বতে একটি কাল্পনিক ভূস্বর্গের কথা বলা হয়েছে, যেখানকার বাসিন্দারা সুখী, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে। গবেষণা জার্নাল হিন্দাউইতে হুনজাদের বয়স-সম্পর্কিত ধারণাকে ‘শাংগ্রি-লার’ আধুনিক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্বাসে মানুষের অনেক বেশি আয়ু পাওয়ার গল্প রয়েছে। যেমন রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের বাসিন্দারা ১৬৮ বছর পর্যন্ত বাঁচেন। শুধু তা-ই নয়, সেখানে ১২০ বছরের বেশি বয়সী শত শত লোক জীবিত আছে—এমন দাবিও করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, আয়ুর এসব দাবিই প্রমাণ করে, এগুলো কতটা অবাস্তব! আবার দীর্ঘায়ু দাবিদারদের মধ্যে পুরুষই বেশি। যেখানে আধুনিক বিশ্বে নারীদের গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ এরডম্যান বাল্লাহ পালমোর দ্য জেরোন্টোলজিস্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় লেখেন, ১৯৭০-এর দশকে রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলে, পাকিস্তানের হুনজা উপত্যকা ও ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর বিভিন্ন প্রতিবেদন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই অঞ্চলগুলোতে ব্যাপকসংখ্যক শতবর্ষী মানুষ বেঁচে আছেন এবং এদের কেউ কেউ ১৫০ বছর বা তার বেশি বয়স লাভ করেছেন।
তবে প্রতিবেদনগুলো সংশয়ের সৃষ্টি করে। কারণ, ইকুয়েডরের ভিলকাবাম্বা উপত্যকায় আদমশুমারি চালিয়ে অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ুর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনুরূপভাবে রাশিয়ায়ও শতবর্ষী মানুষ বেশি থাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে হুনজাদের ভাষার কোনো লিখিত রূপ না থাকা এবং শিশুদের জন্মনিবন্ধন না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি।
১৯৬১ সালে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত হুনজাদের নিয়ে একটি গবেষণায় বলা হয়, হুনজা পুরুষদের সাধারণভাবে ১২০ বা ১৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার দাবিটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে এমন বয়স পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
জন মেরিয়ন টিয়ার্নি নামের একজন আমেরিকান সাংবাদিক হুনজা ভ্যালি ঘুরে এসে ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, হুনজা ভ্যালিতে গিয়ে তাঁদের বয়স-সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাটি ভেঙে গেছে। তাঁদের কোনো জন্মনিবন্ধন নেই। সেখানকার নিরক্ষর লোকজন জানেন না, তাঁদের বয়স কত এবং তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়িয়ে বলার প্রবণতা দেখেছেন তিনি।
ওই সাংবাদিক লেখেন, হুনজাতে অস্বাভাবিক বেশি কোনো শতবর্ষী আমি দেখিনি এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও স্বাস্থ্যকর নয়। তাঁদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছি। এ ছাড়া তাঁদের খাদ্যতালিকাতেও আয়োডিনের অপার্যপ্ততা রয়েছে।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত চিকিৎসা গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, হুনজাদের গড় আয়ু পুরুষের ৫৩ বছর এবং নারীদের ৫২ বছর।
১৯৮৬ সালে ওয়াশিংটন পোস্টেও দীর্ঘায়ু নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলো সম্পর্কে এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, রাশিয়া, ইকুয়েডর কিংবা পাকিস্তান—যেখানেই দীর্ঘায়ুর দাবি উঠেছে, সেখানে অধিকাংশই বয়স নিয়ে মিথ্যা বলেছেন।
কিন্তু কেন মানুষ বয়স নিয়ে মিথ্যা বলে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু সংস্কৃতি যেমন, হুনজাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিদের খুব সম্মান করা হয়। তাঁদের সংস্কৃতিতে মানুষ যত বুড়ো হয়, তাঁর সম্মান তত বেশি।
অনুসন্ধানে ব্লু জোন নামে একটি পরিভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লু জোন বলতে এমন ভৌগোলিক স্থানকে বোঝায়, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার হার কম এবং মানুষের গড় আয়ু বেশি। পৃথিবীতে এমন পাঁচটি ব্লু জোনের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে সেখানে পাকিস্তানের হুনজা ভ্যালির নাম নেই। ব্লু জোন পাঁচটি হলো ইতালি, গ্রিস, জাপান, কোস্টারিকা ও যুক্তরাষ্ট্র।
হুনজাদের প্রকৃত গড় আয়ু নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে নেদারল্যান্ডসের রেডবাউড ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট রিসার্চের ওয়েবসাইটে গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ুর তথ্য পাওয়া যায়। সব শেষ ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, গিলগিট-বালটিস্তানের বাসিন্দাদের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৬৪ বছর।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, হুনজাদের গড় আয়ু ১১০ থেকে ১২০ বছর এবং তাঁদের কারও কারও ১৬৫ বছরও বাঁচার দাবিটি মিথ বা প্রচলিত বিশ্বাস, যা মোটামুটি ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রচার হয়ে আসছে। দাবিটির সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
দাবি ২: হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি
হুনজাদের নিয়ে প্রচলিত দাবিগুলোর আরেকটি হলো, হুনজাদের কখনো টিউমার হয়েছে বলে কেউ শোনেনি। তবে ২০২১ সালে বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগ জাপানের নৃবিজ্ঞানী কিঞ্জি ইমানিশির লেখা বই ‘পারসোনালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন হুনজা ভ্যালি’-এর বরাত দিয়ে জানায়, ১৯৫৫ সালে হুনজা ভ্যালিতে জাপানি গবেষকদের একটি পর্যবেক্ষণে ১০ জন হুনজা আদিবাসীর মধ্যে টিউমারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। হুনজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ক্যানসারমুক্ত হওয়ার গুজব, ভিত্তিহীন।
হুনজাদের ক্যানসার না হওয়ার কারণ হিসেবে দাবি করা হয়, তাঁদের খাদ্যতালিকায় থাকে এপ্রিকট নামের ফল। তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানসার কাউন্সিলের নির্বাহী তানইয়া বুকানন এএফপিকে বলেন, এপ্রিকট ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে—এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
একই দাবি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসও একই বছর একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হুনজাদের কখনো ক্যানসার না হওয়ার দাবিটি মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করে। একই সঙ্গে অ্যাপ্রিকট ফল খাওয়ার সঙ্গে ক্যানসার না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
জনস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ মার্ক স্টিবিচ ফ্যাক্টভিত্তিক কনটেন্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান ভেরি ওয়েল হেলথে লেখেন, হুনজাদের কখনো রোগ না হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়। ২০২১ সালে ৪২৫ জন হুনজার ওপর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে প্রতি তিনজনের একজনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া গেছে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের লক্ষণও দেখা গেছে।
এ ছাড়া এরই আগেই আমেরিকান সাংবাদিক জন মেরিয়ন টিয়ার্নির হুনজা ভ্যালি ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সেখানে ঘুরতে গিয়ে হুনজাদের ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগতে দেখেছেন।
অর্থাৎ হুনজাদের কখনো টিউমার হয় না—তথ্যটি ভিত্তিহীন।
দাবি ৩: হুনজা মেয়েদের ৬৫ থেকে ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয় এবং তাঁরা এই বয়সে গর্ভধারণ করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবি অনুযায়ী, হুনজা মেয়েদের ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবতী মনে হয়। কোথাও কোথাও এই বয়স ৮০-৯০ বছর বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও দাবি করা হয়, তাঁরা ৬৫ বা ৮০-৯০ বছর বয়স পর্যন্ত অনায়াসে সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
তবে অনুসন্ধানে দীর্ঘায়ুর দাবির মতোই এই দাবিরও কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটিও অতিরঞ্জিত তথ্য।
আবার এই দাবি সত্য হলেও এটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সাধারণভাবে গর্ভধারণের কোনো বয়স নির্দিষ্ট নেই। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণের সক্ষমতা কমতে থাকে। সাধারণত মেনোপজের ৫ থেকে ১০ বছর আগে থেকেই একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যায়। আর ৪০ বছরের পরই সাধারণত মেনোপজ শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রেও ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের সন্তান জন্মদানের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।
হুনজাদের বাস পাকিস্তানের গিলগিট-বালটিস্তানের উত্তর অংশে হুনজা উপত্যকায়। এটির পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং উত্তর-পূর্বে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল। বর্তমান আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার আগে দুর্গম এই অঞ্চলে মানুষের পৌঁছানো ছিল কঠিন। আর দুর্গম হওয়ার কারণেই এই অঞ্চল মানুষের কাছে রহস্যময় হয়ে রয়েছে। সেই রহস্য থেকেই হুনজাদের বয়স, সন্তানধারণ ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ছড়িয়েছে নানা তথ্য। এগুলোর মধ্যে আছে শতবর্ষী দীর্ঘায়ু লাভ, ক্যানসার প্রতিরোধ এবং নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা।

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
০৩ নভেম্বর ২০২৫
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতের রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
০২ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।
আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।
আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠী হুনজা। তাদের গড় আয়ু ১১০-১২০ বছর, কখনো হয় না টিউমার—এমন ধারণা প্রচলিত আছে।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতের রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
০২ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।
বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’
ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি
বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।
বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ
এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।
এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।
একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।
বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’
ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি
বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।
বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ
এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।
এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।
একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠী হুনজা। তাদের গড় আয়ু ১১০-১২০ বছর, কখনো হয় না টিউমার—এমন ধারণা প্রচলিত আছে।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
০৩ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।
২৮ অক্টোবর ২০২৫
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।
ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।
‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।
গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।
ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।
‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।
গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠী হুনজা। তাদের গড় আয়ু ১১০-১২০ বছর, কখনো হয় না টিউমার—এমন ধারণা প্রচলিত আছে।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
০৩ নভেম্বর ২০২৫
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতের রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
০২ নভেম্বর ২০২৫
একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
১৩ আগস্ট ২০২৫ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।
ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।
ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই
ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত
ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।
সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল
এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।
কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
কথিত জেসিকা র্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।
ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।
ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই
ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত
ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।
সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল
এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।
কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
কথিত জেসিকা র্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

পাকিস্তানের উত্তরে গিলগিট-বালটিস্তানের হুনজা ভ্যালির অধিবাসী ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠী হুনজা। তাদের গড় আয়ু ১১০-১২০ বছর, কখনো হয় না টিউমার—এমন ধারণা প্রচলিত আছে।
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
০৩ নভেম্বর ২০২৫
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতের রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।
০২ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।
২৮ অক্টোবর ২০২৫