Ajker Patrika

রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, যাত্রীর তালিকায় ভাগনারপ্রধান প্রিগোঝিন

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০১: ৩৬
রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, যাত্রীর তালিকায় ভাগনারপ্রধান প্রিগোঝিন

রাশিয়ায় ১০ আরোহী নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, যাদের কেউ জীবিত নেই। ওই বিমানের যাত্রীর তালিকায় রুশ ভাড়াটে যোদ্ধার দল ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের নাম ছিল বলে রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

বুধবার রাতে মস্কোর উত্তরে বিধ্বস্ত হওয়া জেট বিমানের আরোহীদের মধ্যে সাত জন যাত্রী ও তিন জন ক্রু ছিলেন। এই ঘটনায় প্রিগোঝিনও নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। 

তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ভাগনারপ্রধান প্রিগোঝিন ওই বিমানে সশরীরে ছিলেন- এমন নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। তিনি ওই বিমানে ছিলেন কিনা তা রয়টার্সের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

বিবিসির খবরে বলা হয়, জেট বিমানটি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাচ্ছিল। রাশিয়ার বোলোগভস্কি এলাকার আকাশ থেকে পড়ে যেতে দেখা গেছে। মাঠের ওপর বিধ্বস্ত হয়ে এটি জ্বলতে থাকে।

রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ‘রোসাভিয়েতসিয়ার’ বলছে, বিধ্বস্ত বিমানটির যাত্রীর তালিকায় প্রিগোঝিনের নাম ও ডাকনাম ছিল। এমব্রেয়ার লিগ্যাসি-৬০০ বিজনেস জেট বিমানের আরোহীদের সবার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রুশ ভাড়াটে যোদ্ধার দল ভাগনার।

এর আগে ভাগনার গ্রুপ–সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন খবর দিয়েছে, মস্কোর উত্তরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার গুলিবর্ষণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

ভাগনার প্রধান প্রিগোঝিন পুতিনের শেফ ও বন্ধু হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ক্রেমলিন শাসকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের যোগসূত্র ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিলেন ভাগনার সেনারা। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ ছিলপ্রিগোঝিনের।

গত ২৩ জুন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের জন্য ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কোর দিকে অভিযান শুরু করেন তিনি। পথে কয়েকটি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ভাগনারের যোদ্ধারা। ভাগনারের নিয়ন্ত্রণে যায় গুরুত্বপূর্ণ একটি রুশ সেনাঘাঁটি। বিদ্রোহ করে বসেন প্রিগোশিন। সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।

পরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অভিযান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে ভাগনার সেনারা রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন বলে সমঝোতা করেন প্রিগোঝিন।

বিদ্রোহের পর ভাগনার সেনারা বেলারুশে চলে যান। তবে ভাগনারপ্রধান প্রিগোঝিনের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যায়। তিনি বেলারুশে আছেন বলে খবর ছড়ায়। এমনকি তাঁর রাশিয়া সফর এবং পুতিনের সঙ্গে দেখা করার খবরও জানা যায়। কিন্তু তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

৬২ বছর বয়সী প্রিগোঝিন ঠিক দুই মাস আগে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে একটি অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সঙ্গীদের নিয়ে পরে তাঁর মস্কো যাত্রা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় তাঁকে সতর্ক করা হয়েছিল যে—তাঁর জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে।

ভাগনারের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র দাবি করেছে, প্রিগোঝিনকে বহন করা বিমানটিকে গুলি করে বিধ্বস্ত করা হয়েছে। তবে এটি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশের টাকমাথার লোকদের বাঁচানোর লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউংয়ের সুবিন্যস্ত চুলের বাহার নজর কাড়ার মতো। তবে তিনি এখন এক অন্য অভিযানে নেমেছেন—দেশের টাকমাথা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ব্রত। তাঁর মূল লক্ষ্য—দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা। তিনি প্রস্তাব করেছেন, চুল পড়ার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ এখন থেকে এই বিমা থেকেই মেটানো হোক।

প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং গত মঙ্গলবার এক সরকারি ব্রিফিংয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এই সাহসী প্রস্তাব দেন। তিনি যুক্তি দেখান, একসময় চুল পড়ার চিকিৎসাকে স্রেফ ‘প্রসাধন’ বা সাজসজ্জা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু আধুনিক সময়ে এটি মানুষের কাছে রীতিমতো ‘টিকে থাকার লড়াই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিমা কেবল অসুস্থতাজনিত কারণে চুল পড়লে তার খরচ বহন করে। কিন্তু বংশগত কারণে টাক পড়লে বিমার টাকা পাওয়া যায় না। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জং ইউন-কিয়ং স্পষ্ট জানিয়েছেন, যেহেতু এটি জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি নয়, তাই একে বিমার আওতাভুক্ত করা হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট লি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বংশগত সমস্যাকে কেন রোগ হিসেবে দেখা হবে না?’

দক্ষিণ কোরিয়া কঠোর সৌন্দর্যের মানদণ্ডের জন্য পরিচিত। সেখানে টাক পড়া এক ধরনের সামাজিক কলঙ্ক, যা বিশেষ করে তরুণদের খুব কষ্ট দেয়। সরকারি তথ্য বলছে—গত বছর চুল পড়ার সমস্যায় হাসপাতালে যাওয়া ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিল ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী।

৩৩ বছর বয়সী লি ওন-উ নামে এক যুবক জানান, সামনের দিকে চুল কমে যাওয়ায় তিনি কোনো হেয়ার স্টাইল করতে পারেন না। তাঁর ভাষায়, ‘নিজেকে অগোছালো আর কুৎসিত মনে হয়, যা আমার আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে।’

প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তাঁকে ‘ইতিহাসের সেরা প্রেসিডেন্ট’ বলে আকাশচুম্বী প্রশংসা করছেন। তবে সবাই কিন্তু উচ্ছ্বসিত নন। খোদ ভুক্তভোগীদের মধ্যেও কেউ কেউ একে দেখছেন ‘ভোট পাওয়ার সস্তা কৌশল’ হিসেবে।

সমালোচকদের ভাষ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা গত বছর বড় ধরনের লোকসানের (প্রায় ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) মুখে পড়েছে। প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই চাপ আরও বাড়বে। কোরিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, টাকের চেয়েও মারাত্মক অনেক রোগ আছে যেগুলোতে আগে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

নেটিজেনদের একাংশ বলছেন, যেখানে স্যানিটারি প্যাড বা স্তন ক্যানসারের ওষুধের খরচ দিতেই সরকারি তহবিলের টান পড়ে, সেখানে টাকের চিকিৎসায় বিমা সুবিধা দেওয়াটা এক ধরনের ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’।

২০২২ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও এবার প্রেসিডেন্ট লি জয়ী হয়েছেন। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০২৬-এর স্থানীয় নির্বাচন সামনে রেখে তরুণ পুরুষ ভোটারদের তুষ্ট করতেই তিনি এই ‘কৌশলী আচরণ’ করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সমাজে তরুণেরা এমনিতেই কোণঠাসা। তাদের মনে এই বিশ্বাস জন্মানো যে রাষ্ট্র তাদের ছোটখাটো সমস্যা নিয়েও ভাবছে—এটিই হতে পারে লির রাজনৈতিক লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মান বাঁচাতে’ ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ইইউ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে আগামী ২ বছরের জন্য বড় অঙ্কের সুদহীন ঋণ দিতে রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা আজ শুক্রবার ভোরের দিকে এই ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ আপাতত ব্যবহার না করে বরং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ ধার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা তহবিলের জোগান দেওয়া হবে। কূটনীতিকদের ভাষ্যমতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নানা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তোনিও কস্তা লিখেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেছে। ২০২৬-২৭ সালের জন্য ইউক্রেনকে প্রায় ১০৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হলো। আমরা কথা দিয়েছিলাম, আমরা তা রেখেছি।’

তহবিলের উৎস নিয়ে কস্তা বিস্তারিত কিছু না জানালেও রয়টার্সের কাছে আসা এক খসড়া নথি বলছে, এই অর্থ আসবে সরাসরি পুঁজিবাজার থেকে এবং এর নিশ্চয়তা থাকবে ইইউ বাজেটের ওপর। রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহারের যে বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে আগে আলোচনা হচ্ছিল, তা থেকে আপাতত সরে আসা হয়েছে। তবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদকে ভিত্তি করে কোনো ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সরকারগুলোর মধ্যে আলোচনা চলবে।

এই চুক্তিতে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের ওপর কোনো আর্থিক দায় চাপানো হয়নি। কারণ দেশগুলো এই অর্থায়নে অংশ নিতে রাজি ছিল না। শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন এই ঋণ তখনই শোধ করবে যখন তারা মস্কোর কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বা ‘ওয়ার রিপারেশন’ পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সম্পদগুলো অচল অবস্থায় পড়ে থাকবে। তবে প্রয়োজনে সেই সম্পদ থেকে ঋণ শোধ করার অধিকারও ইইউ নিজের হাতে রেখেছে।

এক ইইউ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য অন্তত আগামী দুই বছরের অর্থের সংস্থান নিশ্চিত হওয়াটা একটা ইতিবাচক দিক।’ তবে অন্য একজন কূটনীতিকের মন্তব্য ছিল খানিকটা তির্যক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইউক্রেনকে বাঁচানোর চেয়ে বরং নিজেদের মান বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’

রাশিয়ার টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেলজিয়াম। রাশিয়ার জব্দ করা ২১০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ১৮৫ বিলিয়ন ইউরোই আছে বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ার নামক প্রতিষ্ঠানে। মস্কোর আইনি ও আর্থিক পাল্টা আঘাতের ভয়ে বেলজিয়াম সরকার বেশ আতঙ্কিত ছিল। ক্রেমলিন আগেই জানিয়ে রেখেছে, তাদের সম্পদ ধরা হলে তারা আদালতে যাবে এবং রাশিয়ায় থাকা বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে।

এই বৈঠকের আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তির সম্ভাবনা ছিল ‘ফিফটি-ফিফটি।’ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভারও আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্য ইইউ দেশগুলো যেন সম্ভাব্য সব ক্ষতির দায়ভার নিতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়।

শুক্রবার সকালে অবশ্য ডি ওয়েভার বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে ঋণ নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে অন্তত বড় কোনো ‘বিশৃঙ্খলা বা বিভাজন’ তৈরি হয়নি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই সম্পদ ব্যবহারের যেকোনো চেষ্টা হলে তারা ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবে। বিশ্লেষক ক্রিস উইফার মনে করেন, মস্কো বিষয়টিকে একটি ‘আর্থিক যুদ্ধ’ হিসেবে দেখবে এবং কড়া প্রতিশোধ নেবে। তিনি বলেন, অনেক ইইউ রাষ্ট্রই এখন সরাসরি ইউক্রেনকে অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই তারা মরিয়া হয়ে বিকল্প কোনো উৎসের সন্ধান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পথ সুগম করতে তুরস্ক রাশিয়ার কাছে তাদের সরবরাহ করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

গত বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তান এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই অনুরোধ করেন। রুশ ও তুর্কি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর এই শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয়টি এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এল, যার কয়েক দিন আগে তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক জানান, আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন পুনরায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উৎপাদন ব্যবস্থায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বারাক এক পোস্টে লেখেন, ‘তুরস্কের এফ-৩৫ প্রোগ্রামে পুনরায় যোগদানের ইচ্ছা এবং তাদের কাছে থাকা রুশ নির্মিত এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’

তুরস্ক কখনোই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিজ বিমানবহরে যুক্ত করেনি, তবে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার পর এই যুদ্ধবিমানের যৌথ উৎপাদন কর্মসূচি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল দেশটিকে। সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান এবং গ্রিসের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে মার্কিন কংগ্রেস আগে থেকেই তুরস্কের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং এই ক্রয়ের ফলে আঙ্কারার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০২০ সালে এক প্রতিরক্ষা বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে তুরস্ককে এফ-৩৫ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত করেন যে তুরস্কের কাছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই, তাহলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন ও তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতাও স্থবির হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ ফেরত নেওয়ার অনুরোধ এরদোয়ানের আগের অবস্থান থেকে এক বড় ধরনের প্যারাডাইম শিফট। আগে তুরস্ক চেয়েছিল এস-৪০০ নিজের কাছেই রাখতে (হয়তো অকেজো অবস্থায়) এবং সেই সঙ্গে এফ-৩৫ ক্রয় করতে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে তুরস্ক এস-৪০০ কোনো গুদামে রাখবে এবং এটি ব্যবহার করবে না, যা ন্যাটো পরিদর্শকেরা নিয়মিত যাচাই করবেন। এর আগে তুরস্ক এই ব্যবস্থা অন্য কোনো দেশে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্প সিরিয়ার ইস্যুতে এবং গাজায় হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রভাবের ওপর নির্ভর করছেন। মার্কিন থিংকট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অ্যারন স্টেইন এর আগে বলেছিলেন, ট্রাম্প তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘এফ-৩৫-এর প্রধান গ্রাহক হলো তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। ট্রাম্প তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমার ধারণা, তিনি প্রয়োজনে ইসরায়েলিদের আপত্তির বিরুদ্ধেও যেতে পারেন। ৪০টি জেটের অর্ডার অনেক বড় একটি বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি

গাজার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ব্যবহার করে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই উপত্যকার পুনর্গঠন কাজে ব্যয় করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচনা করেছে। সাবেক এক পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কর্মরত এক পশ্চিমা ও এক আরব কর্মকর্তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই আলোচনা বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব হলো—আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার এখনো ব্যবহৃত হয়নি এমন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানায় অংশ নেবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে।

আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের আগেই যুক্তরাষ্ট্র গাজার যুদ্ধোত্তর যে পরিকল্পনা শুরু করেছিল, তার অধিকাংশের মতোই এখানেও কোনো চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে সাবেক ওই পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ উপার্জনের ধারণাটি পুনরায় আলোচনায় আসে।

২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের অধিকার দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সার্বভৌম তহবিল প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এটি একটি নির্মাণ ও জ্বালানি গোষ্ঠী, যার মালিক গ্রিসভিত্তিক এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবার।

এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা একজন আন্তর্জাতিক অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তী যুদ্ধের আগে মিসর এই মালিকানায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিল। জাতিসংঘ বর্তমান এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস বিশেষজ্ঞ এবং দ্য গাজা মেরিন স্টোরি বইয়ের লেখক মাইকেল ব্যারন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।’

ব্যারন যখন ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, তখন গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়নের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার। এটি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আয় হওয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৫ বছর ধরে বছরে ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উন্নয়ন পুনর্গঠন কাজে বড় অবদান রাখতে পারে।’

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন খরচ অনেক বেশি—প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের ধারেকাছেও নেই। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ একদল মার্কিন প্রতিনিধি ইসরায়েল-অধিকৃত গাজার অর্ধাংশে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের একটি ছোট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, তিনি মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চপদস্থ কূটনীতিকদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই গাজাকে বিভক্ত রাখার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাটিও থমকে আছে, কারণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাদের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।

কাতার এবং সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়ন করার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, অন্যরা যা ধ্বংস করেছে তা পুনর্নির্মাণের জন্য তারা চেক লিখবেন না। অন্যদিকে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে কোনো তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি।

এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রধান উপসাগরীয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবুধাবি বর্তমানে গাজায় বৃহত্তম মানবিক ত্রাণ দাতা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো শান্তি চুক্তিকে যেভাবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সাথে যুক্ত করেছে, গাজার ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাস) ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একই পথে হাঁটতে চাইছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত