Ajker Patrika

তেল খালাসে নতুন যুগে বাংলাদেশ, জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬: ১৬
তেল খালাসে নতুন যুগে বাংলাদেশ, জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে

জ্বালানি তেল খালাসে নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। বহু প্রতীক্ষার পর গভীর সমুদ্রে বড় জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে এই কার্যক্রম শুরু হয় বলে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান জানান।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সকাল সোয়া ১০টায় মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করা জাহাজ এমভি হোরাই থেকে পাইপলাইনে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়েছে। এই জাহাজে ৮২ হাজার টন তেল আছে। প্রথম জাহাজটি খালাস হতে সময় লাগবে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা।

সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ৮২ হাজার মেট্রিকটন ক্রুড অয়েল আসে। সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় এসপিএম লাইনে তেল খালাস প্রকল্পের কমিশনিং শুরু করা যায়নি। গতকাল রোববার খালাসের অপেক্ষায় থাকা জাহাজটি মাতারবাড়ী এসপিএম প্রকল্পের হোস পাইপে নোঙর করে। সব চেক করে আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় পাইপলাইনে তেল খালাস শুরু হয়। এরপরের দফায় পরিশোধিত তেলের জাহাজ এলে দ্বিতীয় পাইপলাইনটিও কমিশনিং করা হবে।

ইআরএল সূত্র জানায়, বড় জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল খালাসে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ (এসপিএম) প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসপিএম প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে ২৫ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

আজ সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করা বড় জাহাজ ‘এমভি হোরাই’ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাইপলাইনে গভীর সাগর থেকে ১ লাখ মেট্রিকটন তেলবাহী বড় জাহাজ থেকে তেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২-৩ দিন। আগে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তেল খালাসে সময় লাগত ১০-১২ দিন। পাইপলাইনে তেল খালাসের ফলে দেশে জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা বাড়বে ১০-১৫ দিন। কমবে তেল চুরি, সিস্টেম লসসহ নানা পরিবহন নৈরাজ্য।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে গভীর সাগর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পাইপলাইন সাগরে নোঙর করা জাহাজ থেকে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে তেল নেওয়া হবে। পাইপলাইন কমিশনিং করার পর সেখানে থাকা হেজ, সার্কিট ভাল্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপর স্টোরেজ থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত পাইপলাইন কমিশনিং করা হবে। প্রথমে ক্রুড অয়েল, পরে ডিজেলে পাইপলাইন কমিশনিং করা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী আগস্টে প্রধানমন্ত্রী এসপিএম প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

সূত্র জানায়, বন্দরের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় এখন তেলবাহী বড় জাহাজগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটার জাহাজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১২ দিন সময় লেগে যায়।

আজ সোমবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরে নোঙর করা বড় জাহাজ ‘এমভি হোরাই’ থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল খালাস শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাগতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার মধ্যে সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহেশখালীর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এসপিএম থেকে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে মাতারবাড়ী এলটিই পর্যন্ত এবং পরে সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে তেল জমা হবে। পরে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অবস্থিত স্টোরেজ ট্যাংকে আনা হবে। 

২০১৫ সালে পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) হাতে নেওয়া হয়। মোট ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতিমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণসহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার। এ ছাড়া বিপিসি ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৬০১ কোটি টাকা দিচ্ছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে।

প্রকল্পের অধীনে এক সেট এসপিএম-পিএলইএম, একটি ভাসমান ভয়া, ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন, এর মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার সাগরের তলদেশ দিয়ে এবং ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন উপকূল দিয়ে, ২ লাখ ৮৮ হাজার ঘনমিটারের ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক, তিনটি ব্লক ভাল্ব স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। 

চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কারিগরি তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে এসপিএম প্রকল্প। এতে পরামর্শক হিসেবে সহায়তা দিচ্ছে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ। এসপিএম চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা। এখন ৪০ দিনের জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা থাকলেও এসপিএম চালুর পর তা আরও ১০-১৫ দিন বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জমির আইল কাটা নিয়ে দুই ভাইয়ের মারামারি, প্রাণ গেল কৃষকের

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় জমির আইল কাটা নিয়ে দুই চাচাতো ভাইয়ের মারামারি চলার সময় হাবিব শেখ (৪২) নামের এক কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের বনগ্রাম ব্যাঙডুবি মাঠে এ ঘটনা ঘটে। কৃষকের পরিবারের দাবি, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই ভাইই হাবিবকে পিটিয়ে মেরেছেন। অন্য দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, তাঁদের মারামারি ফেরাতে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন হাবিব।

নিহত হাবিব শেখ বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের বনগ্রাম গ্রামের লিয়াকত শেখের ছেলে।  

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বনগ্রাম গ্রামের মঞ্জু শেখের ছেলে শরিফুল এবং একই গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে রাকিব শেখ (২৭) সম্পর্কে চাচাতো ভাই। আজ সকালে শরিফুল ব্যাঙডুবি মাঠে পেঁয়াজ লাগাতে যান। তখন রাকিব জমির আইল কাটা হয়েছে বলে বাধা দেন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। এ সময় সেখানে থাকা হাবিব প্রাণ হারান।

হাবিরের ভগ্নিপতি মো. আলাউদ্দিন আলী জানান,, শরিফুল তাঁর জমি চাষের জন্য হাবিবকে ঠিক করেন। তাই আজ সকালে হাবিব পাওয়ার টিলার নিয়ে সে জমি চাষ করছিলেন। একপর্যায়ে জমির সীমানা নিয়ে শরিফুল ও তাঁর চাচাতো ভাই রাকিবের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। হাবিবদের সঙ্গে শরিফুল ও রাকিবদের পরিবারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে হাবিবকে কাজ দিয়ে তুচ্ছ ঘটনা ঘটিয়ে দুই ভাইই তাঁকে পিটিয়ে মেরেছেন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করা হবে বলে জানান আলাউদ্দিন।

অন্য দিকে অভিযুক্ত শরিফুল শেখ জানান, জমির সীমানা নিয়ে তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারি হয়। মারামারি ঠেকানোর সময় হঠাৎ স্ট্রোক করেন হাবিব। হাবিবকে কেউ আঘাত করেননি।

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মাহফুজুর রহমান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই হাবিবের মৃত্যু হয়েছে। মারামারির ঘটনায় শরিফুল ও তাঁর ছেলে টোকন শেখকে (৩২) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জামাল উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।  

বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রব তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তাঁরা পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপের জন্য কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সংস্কৃতির ওপর আঘাত মানে নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ও সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ও সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাঙালি সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত মানে গণ-অভ্যুত্থানের নতুন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা বা স্বপ্ন সেটিকে ব্যাহত করা বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’-এর কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন ছায়ানট সংস্কৃতিকর্মীরা।

এ সময় গানে গানে সংহতি সমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে সংস্কৃতি স্থাপনার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে এক হাজারের বেশি সংস্কৃতিকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন জানান পার্থ তানভীর।

ছায়ানটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কৃষ্ণকলি ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আমরা এটা কখনো মেনে নিতে পারি না। শত শত, হাজার হাজার সংস্কৃতি ব্যক্তি এখান থেকে শিখে বের হয়েছেন, যা দেশের সংস্কৃতি চর্চা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই আক্রমণ জাতি হিসেবে লজ্জার। ’২৪-এর জুলাইয়ের ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা বা স্বপ্ন ছিল মানুষের, সেই আকাঙ্ক্ষা বেহাত হয়েছে।’

তৃষ্ণা রানী শীল বলেন, ‘আমরা নতুন পরিবর্তন আশা করেছিলাম। কিন্তু এমন পরিবর্তন সবার জন্য দুঃখজনক, যা কাম্য ছিল না। যা হয়েছে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার হোক। সংস্কৃতি ছাড়া সুষ্ঠু বাংলা গড়তে পারব না। আমরা সামনের নতুন বছর নতুনভাবে শুরু করতে চাই সংস্কৃতি মনপ্রবণ নিয়ে। যত দিন সংস্কৃতি থাকবে ছায়ানট থাকবে।’

ছায়ানটের শিক্ষার্থী মো. জাবির মুনতাসির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যারা এই ঘৃণিত কাজটি করেছে ঠিক করেনি। শিল্পীদের প্রিয় জায়গা হচ্ছে ছায়ানট। এখানে সবাই গান শেখে, আমিও শিখি। ছুটির দিনে শুক্রবার আনন্দের সঙ্গে গান শিখতে এসে দেখি কিছু অসভ্য লোকেরা নাকি ছায়ানটে হামলা করেছে। সভ্য মানুষ হলে বাংলার বুকে এভাবে আঘাত হানতে পারত না।’

নাজিয়া হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মনুষ্যত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে দেখাতে হবে। আমরা যে নতুন প্রজন্ম, সুস্থ মনস্তাত্ত্বিক ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠছি সেটাকে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করছি। এটা শুধু সংস্কৃতির ওপর আঘাত নয়, এটা আমাদের বেড়া ওঠার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি।’

ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছায়ানটের মতো একটা বৃহৎ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান, যেটা কিংবদন্তি। সেই কিংবদন্তি স্থাপনার ওপর হামলা মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, মুক্তিযোদ্ধা, অভ্যুত্থান সবকিছুতে সংস্কৃতিতে এই গান অগ্রভাগে ছিল, আছেই। যুগ যুগ ধরে গান শুনিয়ে দেশপ্রেমিক মানুষকে সাহস ও অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এমন একটা ঘটনা কীভাবে ঘটাল, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। এই স্থাপনার ওপর হামলা মানে বাঙালির জাতিসত্তার ওপর হামলা। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে বিচার চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভাড়াটে চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন স্ত্রী, বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা: পুলিশ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
হেলাল উদ্দিন হত্যারকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে লোকজনের ভিড়। ছবি: ফাইল ফটো
হেলাল উদ্দিন হত্যারকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে লোকজনের ভিড়। ছবি: ফাইল ফটো

কয়েকজনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বেদেনা আক্তার (৪০)। টাকা পরিশোধ করতে পাওনাদাররা তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। তাই নিজের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে একটি ষাঁড় স্বামীকে না জানিয়ে বিক্রির পরিকল্পনা করেন তিনি। এ জন্য বাবার বাড়ির এলাকা থেকে চোর ভাড়া করেন বেদেনা আক্তার। গত শনিবার রাতে ভাড়া করা চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন তিনি। কিন্তু চুরির ঘটনা টের পেয়ে যান বেদেনার স্বামী হেলাল উদ্দিন। তিনি ষাঁড় চুরিতে বাধা দিতে গেলে স্ত্রীসহ পাঁচজন মিলে হেলালকে মুখ ও হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করেন। নেত্রকোনা সদর উপজেলার কৃষক হেলাল উদ্দিনকে (৫৮) হত্যায় আদালতে জবানবন্দিতে তাঁর স্ত্রী বেদেনা আক্তার এসব কথা জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক দাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত রোববার ভোরে সদর উপজেলার নাড়িয়াপাড়া গ্রামে নিজ ঘর থেকে কৃষক হেলাল উদ্দিনের হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত হেলাল উদ্দিন সদর উপজেলার নাড়িয়াপাড়া গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুরে নিহত হেলালের ছোট ভাই রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী বেদেনা আক্তারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন সদর উপজেলার নাড়িয়াপাড়া এলাকার রিয়েল মিয়া (৪০) ও বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া দুধকুড়া গ্রামের লিটন মিয়া (৫০)।

পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর স্ত্রী বেদেনা আক্তারকে আটক করার পর তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক দাম জানান, আদালতে বেদেনা আক্তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে কয়েকজনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। পাওনাদারেরা এখন টাকার জন্য তাঁকে তাগাদা দিচ্ছেন। তাই তাঁর বাবার বাড়ি বারহাট্টা উপজেলার সেমিয়া দুধকুড়া গ্রামের লিটন মিয়ার সঙ্গে চুরি করে তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিনের ষাঁড় নিয়ে বিক্রি করার জন্য চুক্তি করেন। গত শনিবার রাতে লিটন মিয়া, নাড়িয়াপাড়া গ্রামের রিয়েল মিয়াসহ চারজন মিলে গরু চুরি করতে গেলে হেলাল উদ্দিন টের পেয়ে যান। তিনি ষাঁড় চুরিতে বাধা দিতে গেলে স্ত্রীসহ পাঁচজন মিলে হেলালকে মুখ ও হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা চম্পক দাম বলেন, বেদেনা আক্তারের তথ্য অনুযায়ী গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে লিটন মিয়া ও রিয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় পাঁচটি চুরির মামলা রয়েছে।

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন সরকার বলেন, ‘অল্প সময়ে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটনসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বেদেনা আক্তারসহ তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য দুজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার মামলায় ১১ জন কারাগারে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫০
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার মামলায় ১১ জন কারাগারে

দৈনিক‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎ প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামসেদ আলম আজ মঙ্গলবার পৃথক আদেশে তেজগাঁও থানায় প্রথম আলোর করা মামলায় দুজনকে ও দ্য ডেইলি স্টারের করা মামলায় নয়জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

প্রথম আলোর মামলায় যাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ইয়াসিন (৩৯) ও মো. হাশেম (২৪)।

এ মামলায় গতকাল সোমবার ১৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

একই থানায় দ্য ডেইলি স্টারের করা মামলায় কারাগারে পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন মো. মাইনুল ইসলাম (২২), জুলফিকার আলী সৌরভ (২২), মো. আলমাস আলী (৩২), মো. জুবায়ের হোসেন (২১), আয়নুল হক কাশেমী (৩০), আব্দুর রহমান পলাশ (৩০), মো. জান্নাতুল নাঈম (২১), কারি মো. মুয়াজবীন আ. রহমান (৩৪) ও মো. ফয়সাল আহমেদ (২৪)।

আজ সন্ধ্যার আগে দুই মামলার এই ১১ আসামিকে আদালতে হাজির করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

তবে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবিষ্যতে রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হবে। আপাতত তাঁদের কারাগারে আটক রাখা দরকার।

শুনানি শেষে আদালত সবাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে কয়েক শ মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।

এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা পুলিশের ওপর মারমুখী আচরণ করে। পরে আরও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোসহ ভবনে আটকা পড়াদের উদ্ধার করে।

পরে হামলাকারীরা দ্য ডেইলি স্টারে একইভাবে হামলা করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০ থেকে ৪৫০ জনকে আসামি করে গত রোববার মামলা করেন প্রথম আলোর হেড অব সিকিউরিটি মেজর (অব.) মো. সাজ্জাদুল কবির। পরদিন পত্রিকাটির হেড অব অপারেশন মিজানুর রহমানও বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।

দুই মামলায় অভিযোগ করা হয়, হামলাকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট করে।

এতে প্রথম আলোর ৩২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। দ্য ডেইলি স্টারের ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা ছাড়াও উভয় মামলায় দণ্ডবিধি, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারাও যোগ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত