Ajker Patrika

জাতির ভবিষ্যৎ কেন অন্ধকার হচ্ছে

মহিউদ্দিন খান মোহন
জাতির ভবিষ্যৎ কেন অন্ধকার হচ্ছে

‘শিক্ষক’। তিন অক্ষরের এই শব্দটির মহিমা অপরিসীম। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অনন্য। শিক্ষক মানে তিনি হবেন সব রকম লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করার ব্রতে আত্মনিবেদিত একজন মানুষ। একজন শিক্ষক কোনো দুর্নীতি, অপরাধ করতে পারেন, এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।

আমরা যখন স্কুল-কলেজের ছাত্র ছিলাম, তখন দেখতাম স্যাররা কী রকম সৎ জীবনযাপন করতেন। তাঁরা নিজেরা সৎ থেকেছেন, ছাত্রদেরও সৎ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁরা আমাদের কাছে ছিলেন অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। এখন সময় বদলেছে। বিত্তবৈভবের লোভ মানুষকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে নীতিনৈতিকতার ঠাঁই হয়েছে ডাস্টবিনে। কেউ আর ওসবের ধার ধারে না। সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন তাঁর ‘বিষাদ সিন্ধু’ উপন্যাসে লিখেছেন, ‘হায় রে পাতকী অর্থ! তুই যত অনর্থের মূল’। ১৩২ বছর আগে করা তাঁর সেই উক্তির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। টাকার লোভ মানুষকে মুহূর্তে অমানুষ করে তুলতে পারে। এই লোভে পড়ে মানুষ দুর্নীতি-অপকর্মে লিপ্ত হতে দ্বিধা করে না। এমনকি অপরের প্রাণ সংহারেও তাদের হাত কাঁপে না। সাধারণ মানুষের দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার খবরে কেউ খুব একটা অবাক হন না। কেননা, অবক্ষয়ের করালগ্রাসে নিপতিত সমাজে এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু যখন শোনা যায় একজন শিক্ষক একই কাজে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন কপাল চাপড়ে বিলাপ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কেননা, জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিকদের সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে ন্যস্ত, তিনিই যদি অসাধুতা রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে কি মানুষ তৈরির আশা করা যায়? শিক্ষক সে প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে-ই হোন না কেন, তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য সমাজের শ্রদ্ধার আসনে উপবিষ্ট হবেন, এটাই সাধারণ প্রত্যাশা। কিন্তু সে প্রত্যাশা এখন চরম হতাশায় পর্যবসিত হচ্ছে।

 তেমনই একটি হতাশাজনক খবর এসেছে অতিসম্প্রতি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক উপাচার্যের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতি ও অসততার খবর প্রকাশিত হয়েছে গত ২০ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে। ‘ভার্সিটি না, অনিয়মের কারখানা’ শীর্ষ ওই খবরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’-এর সাবেক উপাচার্য ড. আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের দুর্নীতি-অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। সাবেক এই উপাচার্য মহোদয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে নিজের মতিঝিলের বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়া বাবদ ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬২ টাকা আত্মসাৎ, উত্তরার বাড়িকে ক্যাম্পাস দেখিয়ে পকেটে পুরেছেন ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ টাকা, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাড়িকে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লখ ১২ হাজার ৮০০ টাকা। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো বৈধ অনুমোদন ছাড়াই তিনি ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলরের চেয়ার দখল করে ছিলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। ইউজিসি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সংঘটিত অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বৈধ ও আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অবৈধ ভিসির স্বাক্ষরিত সনদের বৈধতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। ফলে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সর্বনাশের কবলে পড়েছে। পুরো প্রতিবেদনটি পাঠ করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাবেক ওই ভিসির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছিল। এদিকে গত ২২ জুন আজকের পত্রিকার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। এসব অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে এ ধরনের খবর নতুন কিছু নয়। শুধু বেসরকারি কেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কি এর ব্যতিক্রম? সাম্প্রতিককালে বহুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের টেন্ডারবাজিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই ভিসির অপসারণের দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তবে গোড়া শক্ত থাকায় ভিসি মহোদয়ার কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারেননি। দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সম্পর্কে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর মেয়াদে দু-চার দিনের বেশি ক্যাম্পাসে যাননি। তবে ক্যাম্পাসে না গেলেও বেতন-ভাতা, মিটিং-ভাতা তুলতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ওই ভিসি সাহেব আবার একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধান। ফলে সরকারি মহলের সঙ্গে তাঁর দহরম মহরম সহজেই অনুমেয়। নির্বাচনের সময় তাঁর সংস্থার পর্যবেক্ষণ পক্ষে থাকলে সুবিধা—এই বিবেচনায় বছরের পর বছর অনুপস্থিত থেকেও তিনি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

গত ২৪ জুন আজকের পত্রিকায় বেরিয়েছে আরেক কীর্তিমান ভিসির কাহিনি। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চাকরিপ্রার্থী শাহাবুবুল আলম। দুদক চেয়ারম্যানের বরাবর করা অভিযোগে তিনি বলেছেন, একাডেমিক ফলাফল এবং অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকলেও ভিসি তাঁকে নিয়োগ না দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন দুজনকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। দুদক এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি সাহেবদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তাঁরা কেউ চেয়ারে থাকাকালীন এ ধরনের কর্ম করে থাকেন। আবার কেউ বিদায়ের আগে গণনিয়োগ দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হন।

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যিনি প্রধান হন, তাঁর প্রতি মানুষের প্রত্যাশা থাকে তিনি মেধা, সততা ও দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মর্যাদাবান করে তুলবেন। পাশাপাশি নিজের সততা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবেন। কিন্তু নির্মম হলেও সত্যি যে, বর্তমান সময়ে তেমন ভাইস চ্যান্সেলর পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের নাম শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা আপনাআপনি নত হয়ে আসত। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী, বোস প্রফেসর আবুল মতিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক, ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়ার মতো নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও প্রশাসকেরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দিকেনির্দেশনা দিতেন। তাঁরা গর্বিত হতেন কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আর আজকাল কোনো কোনো মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরকে গর্ব করতে শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যানটিনে ১০ টাকায় চা, শিঙাড়া, সমুচা পাওয়া যায় বলে। এটা নাকি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্য!

এসব নিয়ে কথা বলছিলাম প্রবীণ এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, সবখানেই যখন পচন ধরেছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় আর বাকি থাকবে কেন? আগে ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছে সততা, নৈতিকতার পাঠ নিত। এখন অবৈধপথে অর্থ আয়ের শিক্ষা নেবে। জাতির ভবিষ্যৎ তো আর এমনি এমনি অন্ধকার হচ্ছে না!

মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত