বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমেরিকানরা যে একটা কিছু দেবে, তা মে মাসের ৩ তারিখে সরকারকে জানিয়েছে। ২৪ মে ভিসা নীতি হিসেবে এটি প্রকাশ করেছে তারা। তা করেছে নির্বাচনের ৬-৭ মাস আগে।
সময়টি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বিষয়টি আরও পরিষ্কার করলেন, নতুন ভিসা নীতি নিষেধাজ্ঞা না হলেও কাছাকাছি একটা কিছু।
প্রশ্ন হলো, কীভাবে তারা এটা নির্ধারণ করবে যে, কে কোথায় ভোটে বাধা দিচ্ছে? ভোট কারচুপি করছে বা সংঘাত করছে। সংঘাত তো একজন দুজন করে না। কয়েক শ লোক জড়িত থাকে। অবশ্য কিছু লোকের ওপর হয়তো চোখ বেশি থাকবে। যেমন, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসনের ডিসি ও ইউএনও। এর বাইরে রাস্তাঘাটে কে কাকে কোথায় বাধা দিল, কীভাবে তা দেখা হবে, এটা পরিষ্কার নয়।
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় গিয়ে তাঁরা এটা জানিয়ে এসেছেন। এই অবস্থানের পর বিএনপি এত দিন যে বলে আসছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করবে না, তার কী হবে? বিএনপিকে এখন একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
আরেকটি দিক হলো, শীর্ষ পর্যায়ে না হলেও মাঝারি পর্যায়ে দুই দলের নেতাদের নিয়ে একধরনের সংলাপ হয়েছে। কিন্তু একজন বিদেশি দূতের বাসায় এই সংলাপ হতে হলো, এটা আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়।
ভিসা নীতিটি সরকারি দল, বিরোধী দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সবার জন্য। তাঁরা ভবিষ্যতে কী অবস্থান নেবেন, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। দেখতে হবে কে কী বলছেন, করছেন। তবে সবাই সম্ভবত নিজের কথা ভাববেন।
আরও কিছু আসছে বলে যে কথা চালু আছে, সে বিষয়ে আগাম বলা সম্ভব নয়। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কিংবা অস্ট্রেলিয়া অনেক কিছুই একসঙ্গে করে। তবে ভিসা নীতির ক্ষেত্রে তারা আমেরিকাকে অনুসরণ করবে কি না, তা আগাম বলা অসম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্র যখন কিছু একটা করে, তখন তারা নিজেদের মূল্যবোধের অবস্থান থেকে তা করে থাকে বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তারা সবার জন্য একই নীতি অনুসরণ করে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে। একেক ক্ষেত্রে তারা একেক রকম পদক্ষেপ নিচ্ছে, এমন ভূরি ভূরি নজির আছে। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে তাদের যে নীতি, তা কি অন্য দেশের সঙ্গে মেলে?
অবশ্য ডোনাল্ড লুর কথায় মনে হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা এখানে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
সমশের মবিন চৌধুরী, বীর বিক্রম
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে