শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

সেকশন

 

জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বে শীর্ষ স্তরে কাজে ব্যাঘাত

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫২

জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বে শীর্ষ স্তরে কাজে ব্যাঘাত স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান বিসিএস ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা। তাঁর বিভাগের অধীনস্থ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাহান আরা বানু নবম ব্যাচের। অর্থাৎ মহাপরিচালকের চার ব্যাচ জুনিয়র হলেন সচিব। একইভাবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) ড. মুশফিকুর রহমানও ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা। তাঁর অধীনে একই দপ্তরে মহাপরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) পদে আছেন তিন ব্যাচ সিনিয়র কর্মকর্তা প্রণব কুমার ঘোষ। সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক কারণেই তাঁদের নানা দিকনির্দেশনা দেন জুনিয়র কর্মকর্তারা।

জানা যায়, এ মুহূর্তে অন্তত এক ডজন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান। ব্যাচ বিবেচনায় জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে কাজ করা নিয়ে চলছে একধরনের স্নায়ুযুদ্ধ। এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম। হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মন্ত্রণালয়গুলোর নিয়মিত বৈঠক ও আন্তমন্ত্রণালয় সভায়ও।

তবে ব্যাচ বিবেচনায় জুনিয়রের অধীনে কাজ করাকে উদারভাবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসনে একাধিক ব্যাচের কর্মকর্তা কাজ করেন। ব্যাচের সবাই পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন না। এসিআরে বিরূপ মন্তব্য থাকা, কাঙ্ক্ষিত ভাবমূর্তি না থাকা, বিভাগীয় মামলাসহ নানা কারণে অনেকে পদোন্নতি পান না। আর পদোন্নতিপ্রাপ্তরা ওপরে চলে যান। এতে প্রশাসনিকভাবে কেউ সিনিয়র, কেউ জুনিয়র হন। অতীতেও এমন ছিল।’ 

জানা গেছে, প্রশাসনে পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব আর সদস্যসচিব জনপ্রশাসন সচিব। সদস্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, অর্থসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব এবং কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল। মূলত পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সুপারিশ দেয় এসএসবি। সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এসিআরের মন্তব্য, ভাবমূর্তি, কর্মদক্ষতা ও সরকারের প্রতি আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন এসএসবির একাধিক সদস্য। এ ছাড়া কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতাদর্শ, নিকটাত্মীয়দের কেউ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী কি না, তা-ও বিবেচনায় নেওয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় এসএসবির কোনো সদস্যের আস্থাভাজন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। তবে সচিব হতে হলে অবশ্যই সরকারপ্রধানের সম্মতি থাকতে হয়।

জানা গেছে, বর্তমানে বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে দুই থেকে তিন ব্যাচ জুনিয়র সচিবের অধীনে দপ্তরপ্রধান হিসেবে কাজ করছেন অনেক কর্মকর্তা। কিছু মন্ত্রণালয়ে সচিবের সিনিয়র কর্মকর্তা আছেন অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বিসিএস একাদশ ব্যাচের। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সচিবের ছয় ব্যাচ সিনিয়র। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীনও সচিবের সিনিয়র। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে সচিব মশিউর রহমানের তিন ব্যাচ সিনিয়র পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) এমডি মুহম্মদ মউদুদুর রশীদ সফদার। বস্ত্র ও পাটসচিব আব্দুর রউফ একাদশ ব্যাচের হলেও তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী নবম এবং পাট অধিদপ্তরের ডিজি ড. সেলিনা আক্তার দশম ব্যাচের। শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা দশম ব্যাচের। চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) আরিফুর রহমান অষ্টম ব্যাচের। ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শহীদুল হক ভূঁঞাও সচিবের এক ব্যাচ সিনিয়র। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল একাদশ ব্যাচের, আর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ডিজি ফরিদা পারভীন অষ্টম ব্যাচের। একইভাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম ত্রয়োদশ ব্যাচের হলেও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের ডিজি (গ্রেড-১) এ কে এম হুমায়ুন কবীর এবং অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দশম ব্যাচের।

এ ধরনের নজির আরও আছে। খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন একাদশ ব্যাচের হলেও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. শাখাওয়াত হোসেন দশম ব্যাচের। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল হাসান ১১ ব্যাচের কর্মকর্তা হলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মিজানুর রহমান নবম ব্যাচের। 
এক দপ্তরপ্রধান জানান, তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিব একসময় তাঁর অধীনে মাঠে এডিসি ছিলেন। এখন তাঁর নির্দেশদাতা। তিনি কোনো বিষয়ে কথা বললে উল্টোটা বলেন সচিব। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বৈঠকে তিনি কম যান।

তবে অনেক সচিব সিনিয়র দপ্তরপ্রধান বা অতিরিক্ত সচিবকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দপ্তরপ্রধান জানান, দুই ব্যাচ জুনিয়র যখন সচিব হয়ে এলেন তখন তিনি ভয় পেয়ে পদত্যাগের চিন্তাও করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে পরিচিতি সভায় নতুন সচিব সবার সামনে তাঁকে অত্যন্ত সম্মান জানান। এখনো তাঁকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন।

 এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নানা কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে সিনিয়রদের কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কর্মসন্তুষ্টি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। দায়িত্ব পালনে অনীহার সৃষ্টি হয়। এতে প্রশাসনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। নিজস্ব স্বকীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততা উধাও হয়। প্রশাসনে একধরনের দলাদলি ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।’ 

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    পঠিতসর্বশেষ

    এলাকার খবর

     
     

    দেখি নৌকাকে কীভাবে পাস করাইয়া দেয়

    ‘বাংলাদেশে এখন ভালো মানের ১০ জন ফাস্ট বোলার আছে’

    ‘উগ্র-জাতীয়তাবাদী’ আচরণ জোকোভিচের

    এটাই তো কোচের মুনশিয়ানা

    ভোটের মাঠে

    নেত্রকোনা-৩: ‘দ্বিধায়’ আটকে ভোটের কৌশল

    পানি ও বিদ্যুৎ-সংকটে ভোগান্তি চরমে

    শ্যামলীর বহুতল ভবনে আগুন: নিয়ন্ত্রণে ১৩ ইউনিট, উদ্ধার ১৮

    শ্যামলীতে বহুতল ভবনে আগুন: নিচে মোবাইল ফোনে আটকা পড়াদের কান্নার আওয়াজ

    কানাডায় সিগারেটই দেবে মৃত্যুর বার্তা

    দক্ষিণখানে ২৬ লাখ টাকার জন্য স্ত্রীকে হত্যা করে কানাডায় পালান স্বামী: পুলিশ

    মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: সিপিডি

    গোপালগঞ্জে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা, মামলার পর আসামি গ্রেপ্তার