২১ মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের এক অনির্ধারিত বৈঠক হয়। সেদিন সকালে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক প্রায় ৭০ মিনিট স্থায়ী হয়। বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ধারণা করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগপ্রধান এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যে এই বৈঠক পরদিনও হবে।
একটানা ৪২ ঘণ্টা কারফিউ অব্যাহত থাকার পর এ দিন দুপুর ১২টায় জয়দেবপুর থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। জয়দেবপুর এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বিভিন্ন কলেজ এবং স্কুলশিক্ষকদের সম্মিলিত সভায় বাংলাদেশ থেকে সব পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের এবং সে স্থানে বাঙালি সৈন্য নিয়োগ করার দাবি জানানো হয়।
বিশিষ্ট আইনজীবী এ কে ব্রোহী এ দিন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। জনাব ব্রোহী তাঁর আইনগত মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে প্রেসিডেন্ট জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে শাসনক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রকারান্তরে এর পেছনে জনগণের অনুমোদন থাকবে।
এ ছাড়া প্রয়োজনবোধে প্রেসিডেন্টের এই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা দিয়ে জাতীয় পরিষদ কর্তৃক যথাসময়ে অনুমোদন করে নিতে পারবেন।’
সকালে ঢাকা পৌরসভার ভ্যাক্সিনেটর সমিতির উদ্যোগে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক দীর্ঘ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা অনুষ্ঠান এবং শপথ গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিকেলে বাংলা একাডেমি লেখক শিবিরের উদ্যোগে এক গণমুখী কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অভিপ্রায় অনুসারে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো এ দিন বিকেলে সদলবলে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকের সময় তৃতীয় কোনো ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
এ দিন আদমজীনগর খেলার মাঠে এক বিরাট শ্রমিক জনসভায় বক্তৃতা করেন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘বাঙালিরা আর কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চায় না। মুক্তি ও স্বাধীনতার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাঙালিরা তাদের প্রাণের দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।’
বিকেলে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাসভবনের সামনে সমবেত এক বিরাট জনতার উদ্দেশে ভাষণ দানকালে শেখ মুজিব বলেন, ‘বুলেট-বেয়োনেট দিয়ে কখনো সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। শহীদদের রক্তদান বৃথা যাবে না এবং জনগণের চূড়ান্ত বিজয় অবশ্যই হবে।’
গ্রন্থনা: জাহীদ রেজা নূর
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে