একটা সিরিজ শুরু হচ্ছে আর সাকিব আল হাসান আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন না, তা কি হয় নাকি। তাঁকে ঘিরে বিতর্ক এতক্ষণে নতুন করে জানানোর কিছু নেই। সামাজিক মাধ্যমে দৃষ্টি ফেললেই যে সাকিব আর তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অযুত-নিযুত আলাপ।
কিন্তু সাকিব? তিনি সেই একই। কতশত সমালোচনা, চারদিকে এত আলাপ—কিছুই যেন তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তা না হলে কী? গত বুধবার দুবাইয়ে বিতর্কিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কাল সাকিব দেশে ফেরেন। ফিরেই নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন আরেকটি অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে গতকাল সকালে সিলেটে দলের সঙ্গে যোগ দেন। আজ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচপূর্ব অনুশীলনে সাকিবকে দেখে বোঝার উপায় কই, তাঁকে নিয়ে দেশে কী ঝড়টাই-না বয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সাকিব তো এমনই!
বিতর্কের উত্তাপ সাকিবকে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। প্রতিবারের মতো গতকালও তিনি ছিলেন সংবাদকর্মীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। ফুটবল খেলা থেকে অনুশীলন—সাকিবের প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল তীক্ষ্ণ মনোযোগ। তাঁর অবশ্য এসবে থোড়াই কেয়ার। তিনি অনুশীলন করেছেন তাঁর মতো। বলা ভালো, একটু ব্যতিক্রম। এমনিতে আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নিজেকে ভাঙতে-গড়তে দুবার ভাবেন না সাকিব; বরং বাংলাদেশ দলে এই কাজে তাঁর চেয়ে কেউ এগিয়ে আছেন বলে মনে হয় না। তাই কিনা বাঁহাতি সাকিব সেন্টার উইকেটে অনুশীলনের এক ফাঁকে হয়ে গেলেন ডানহাতি! ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন তো? তবে ঠিকই পড়ছেন।
ব্যাপারটা যে শুধু মজার ছলে নয়, সেটা বোঝা গেল খানিক পরে। মাঝ উইকেট থেকে নেটে এসেও ডানহাতি ব্যাটিংয়ে অনুশীলন করলেন। সেখানে থাকল সুইপ, সুইচ হিটের মতো শটও। অনুশীলনে এতটা সিরিয়াস ছিলেন যে বল ঠিকমতো ব্যাটে-বলে না হলে হতাশা ঝেড়েছেন। টাইমিং ঠিকঠাক হলে সেটাও প্রকাশ পেয়েছে। কিছুক্ষণ বোলিং অনুশীলনে নিজেকে ভাঙা-গড়ার খেলায় সেখানেও থাকল চমক! লিটন দাসকে বোলিং করলেন বেশ খানিকটা দৌড়ে এসে। এই রানআপে তাঁকে এখন দেখা যায় না বললেই চলে। কী মনে করে লিটনকে বোলিং করলেন পুরোনো রানআপে। হয়তো বোলিংয়ে নতুন কোনো বৈচিত্র্য কিংবা অন্য যেকোনো কারণে হতে পারে।
শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, সতীর্থদের সঙ্গেও সাকিবকে খুঁজে পাওয়া গেল। তাঁর পাশের নেটেই ব্যাটিং করছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। স্পিনারদের বল ঘুরছিল বলে তাঁর কণ্ঠে একটু অভিযোগের সুর। কথাটা মাটিতে পড়তে না দিয়ে ওই পাশ থেকে সাকিবের উত্তর, ‘মারলেই টার্ন করা বন্ধ হয়ে যাবে।’ কত সরল সমাধান। যেন এর চেয়ে সহজ কোনো হিসাব হয় না। সাকিবের প্রতিদিনের জীবনযাপন তবে এত জটিল কেন? প্রশ্নটা নিশ্চয়ই মনে জাগছে। সেটা হলে তো তাঁকে প্রতিদিন খবরের শিরোনাম হতে হয় না।
‘খবর’ শব্দটা লিখতে গিয়ে মনে পড়ল লিটন দাসের বলা কথাটা, ‘আল হাসান (সাকিব) আপনি তো নিউজ দিয়ে দিলেন।’ সাকিব আবার নতুন কী নিউজ দিলেন? ঘটনা হচ্ছে, লিটনকে বোলিং করছিলেন সাকিব। তাঁর সঙ্গে কিছু নেট বোলার। লিটন নেট বোলারের বলে একটা কাভার ড্রাইভ মারার পর সাকিব বললেন, ‘শট লিটন।’ পরে যখন লিটন আবার কাভার ড্রাইভ মারলেন, এবার সাকিব বলে উঠলেন, ‘এই দুইটা ওখানে খেলিস।’ মানে, ম্যাচে বোঝাতে চেয়েছেন সাকিব। তারপর সাকিবকে পেছন থেকে ডেকে লিটনের ওই কথাটা। লিটন যেন মনে করিয়ে দিলেন, তাঁর আল হাসান যে নিউজের অপার বিস্তৃত সুড়ঙ্গ!
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে