Ajker Patrika

এটিএম বুথের টাকা ছিনতাই: উদ্ধার পৌনে ৪ কোটি

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০: ৫২
এটিএম বুথের টাকা ছিনতাই: উদ্ধার পৌনে ৪ কোটি

রাজধানীর তুরাগে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া টাকা নিয়ে রাখঢাক করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাতজনকে আটক এবং নয় কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানালেও এখন আর এ নিয়ে কথা বলতে চাইছে না। তুরাগ থানাও উদ্ধার টাকার পরিমাণ নিয়ে কথা বলতে নারাজ। 

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ওই টাকা বহনকারী সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক (প্রশাসন) অভিযোগ করেছেন, ‘আমরা ফিজিক্যালি দেখেছি ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টাকাগুলো থানায় জব্দ করে রাখা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ট্যাংকের মধ্যে দুটিতে টাকা পাওয়া গেছে। একটি ফাঁকা ছিল।’ 

আজ শুক্রবার বিকেলে মামলার পর বাদী আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে এ কথা বলেন। 

এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে মানি প্ল্যান্ট লিমিটেড জড়িত সন্দেহে কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তুরাগ থানা-পুলিশ।

গতকাল রাতে তুরাগ থানায় ডাকাতির মামলা করেন মানি প্ল্যান্টের পরিচালক আলমগীর হোসেন। এ মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মওদুত হাওলাদার আজ বিকেলে আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডাকাতির ঘটনায় সিকিউরিটি কোম্পানি মানি প্ল্যান্টের কেউ জড়িত আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। তবে আমাদের কোম্পানির নয়জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের মধ্যে টাকা বহনকারী পাঁচজন ছিল। এ ছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির ড্রাইভার ও তাদের আরেকজনও থানায় রয়েছে।’ 

তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত বলেন, ‘মানি প্ল্যান্টের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’ উদ্ধার করা টাকার পরিমাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নাই। সিনিয়র অফিসার বা ডিবির কাছ থেকে জানতে হবে।’ 

গতকাল ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের দূরত্বে ব্রিফিং করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির প্রধান) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ। হোটেল লা মেরিডিয়ানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার ১০ ঘণ্টার মধ্যে ৯ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করেছি আমরা। সিকিউরিটি কোম্পানি ও অন্যদের মিলে সাতজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছি। জড়িতরা টাকাভর্তি চারটি ট্রাংকের মধ্যে একটি ট্রাংক নিয়ে গেছে। যে গাড়িতে ওরা ছিনতাই করেছিল সেই গাড়িটিও আমরা উদ্ধার করেছি।’ 

যদিও তুরাগ থানার এক কর্মকর্তা আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনটি ট্রাংকের মধ্যে একটি ছিল ফাঁকা। আর দুটির মধ্যে একটিতে ছিল অর্ধেক ফাঁকা। সব মিলিয়ে তিনটি ট্রাংকের টাকা গণনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।’ 
 
টাকার গরমিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রাইসুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকাগুলো ডিবি উদ্ধার করেছে। টাকা গণনার সময় সিকিউরিটি কোম্পানির লোকজনও উপস্থিত ছিল। স্যার (ডিবির প্রধান) সেটা বলেছেন, সেটা তাঁর বক্তব্য। আপনি স্যারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।’ 

এসি রাইসুল আরও বলেন, ‘সিকিউরিটি কোম্পানির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কাউকে এখনো আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এখন আমরা সবকিছু বলতে পারব না। যখন ডিটেক্ট হবে তখন সবকিছু জানতে পারবেন।’

উদ্ধার করা টাকার পরিমাণ জানতে উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি। অপর দিকে ডিএমপি ডিবির প্রধান মো. হারুন অর রশীদও সাড়া দেননি। এসএমএস পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি। 

তুরাগের দিয়াবাড়ি ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজের ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে এ ছিনতাই হয়। ওই গাড়িতে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। 

তুরাগ থানায় করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরের ডিওএইচএস এলাকা থেকে চারটি ট্যাংকের ভেতর ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে সাভারের ইপিজেড এলাকার ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে ফিডিং করার উদ্দেশ্যে একটি গাড়িতে সিকিউরিটি কোম্পানির পাঁচজন রওনা হয়। সাভারে যাওয়ার পথে গাড়িটি তুরাগের দিয়াবাড়ি ১১ নম্বর ব্রিজের ঢালের রাস্তায় পৌঁছামাত্র পেছন দিক থেকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস গাড়িটিকে বাঁ দিকে চাপ দেয়। 

পরে ওই গাড়ি থেকে একজন নেমে বিভিন্ন ধরনের গালাগাল শুরু করে। তখন গাড়িতে থাকা সুপারভাইজার ‘কী সমস্যা’ জানতে চেয়ে রাস্তা থেকে সরে যেতে বলেন। তখন ওই কালো মাইক্রোবাস থেকে আরও দুজন নেমে এসে চালককে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে কিলঘুষি মারতে থাকে। আরও চার-পাঁচজন ডাকাত এসে লক থাকা গাড়ির দরজা ভেঙে ফেলে। সেই সঙ্গে গাড়ির ভেতরে থাকা দুজনকে রাস্তার পাশে ঝোপঝাড়ে নিয়ে আটকে রাখে। 

অন্যদিকে অপর একজন চালকের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়িটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে গাড়িতে থাকা এক্সিকিউটিভকে মারধর করে এবং পেছন দিক থেকে একজন গলা চেপে ধরে রাখে। ওই সময় গাড়িটি পঞ্চবটীর দিকে যাচ্ছিল। কিছু দূর যাওয়ার পর ডাকাতেরা ট্যাংকভর্তি টাকা তাদের গাড়িতে উঠিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যের মুখে মাস্ক পরা ছিল। তাদের সংখ্যা ১০-১২ জন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো শান্তিরক্ষী শান্তকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

সুদান থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে যখন কথা বলতেন, তখন অনাগত সন্তান নিয়ে কত শত স্বপ্ন বুনতেন শান্তিরক্ষী শান্ত মণ্ডল। সন্তান যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পায়, সে জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার আশা তাঁর আর পূরণ হলো না। সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাঁকে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের একজন কুড়িগ্রামের শান্ত মণ্ডল (২৬)। তাঁর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তাঁর বাবা সাবেক সেনাসদস্য (মৃত) নূর ইসলাম মণ্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নিহত শান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর মা সাহেরা বেগম শোকে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছেন। বড় ভাই সোহাগ মণ্ডলের চোখ কান্নায় লাল হয়ে আছে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।

সোহাগ মণ্ডল বলেন, শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। সোহাগ মণ্ডল আরও বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার বাবার বাড়িতে আছে। সেও খবর পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় শান্ত ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, ওদের ক্যাম্পে হামলা হয়েছে। হামলায় শান্ত মারা গেছে। হামলার সময় সে অস্ত্র পরিষ্কার করতে ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমরা এখন তার লাশের অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে কবর দিতে চাই।’

পরিবার থেকে জানানো হয়, স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো শান্তর। গতকাল শান্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শোকে বিহ্বল হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় এখন তিনি নেই।

শান্তর বাল্যবন্ধু সুমন বলেন, ‘শান্তর মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নামের মতোই সে শান্ত ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ বা কটু কথা বলেনি। এমন বন্ধুর মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত