Ajker Patrika

মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ের মাটি খুঁড়লেই মিলছে কয়লা

মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ের মাটি খুঁড়লেই মিলছে কয়লা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বামা গোমতী পাহাড়ের মাটি খুঁড়লেই মিলছে কয়লা। 

স্থানীয়রা কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে কয়লা বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। এই কয়লা রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন তাঁরা। সেখানে আরও কয়েকটি জায়গায় এভাবে কয়লা আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অবশ্য এই কয়লার ভান্ডারের বিস্তৃতি ও গভীরতা সম্পর্কে কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেননি। 

আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গণি আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাহাড়ের গায়ে কয়লার সন্ধান প্রায় এক বছর আগে পাওয়া গেলেও তিনি জেনেছেন সম্প্রতি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বিষয়টি প্রায় অজানাই থেকে গিয়েছিল। জানার পর তিনি নিজে গিয়ে দেখে এসেছেন। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। 

কয়লার সন্ধান পাওয়ার খবরে লোকজনের ভিড়স্থানীয় কৃষক মো. হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় বছরখানেক আগে আদা-হলুদ রোপণের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে কয়লা দেখতে পাই। পরে কৌতূহলী হয়ে কয়লা সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিত হয়েছি। অন্যদের জানালে অনেকেই আগ্রহী হয়ে সেসব কয়লা সংগ্রহ করে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করছে।’ 

আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুর্গম পাহাড়ে কয়লা পাওয়ার বিষয়টি সঠিক হলে তা পাহাড়ের বড় পাওয়া হবে। 

পাহাড়ের গায়ে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়লেই মিলছে কয়লাবামা গোমতীর একাধিক স্থানে মাটির নিচে কয়লা থাকার কথা জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রংছা কান্তি ত্রিপুরা কয়লা উত্তোলনে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।

বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউপির বামা গোমতী এলাকায় কয়লা পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়রা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। আমি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বলব, বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে। রিপোর্ট পরবর্তী আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের রোগে শয্যাসংকট

  • জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে শিশুরা।
  • তিন গুণ শিশু রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি।
  • শিশু হাসপাতালে ৫০ শয্যার একটিও খালি নেই।
­যশোর প্রতিনিধি
যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগী নিয়ে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় তাদের অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগী নিয়ে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় তাদের অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে দুই মাস বয়সী শিশু আহনাফ। তাকে নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগের শিশু চিকিৎসকের কাছে এসেছেন বাবা-মা। চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো শিশুটির পিতা মোহাম্মদ রঞ্জু বললেন, ‘১৫-২০ দিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছে ছেলেটি। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, সুস্থ হচ্ছে না। আজ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। অনেক ভিড় থাকায় লাইনে অপেক্ষায় আছি।’

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক অভিভাবক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় বছর বয়সী ছেলে আরিয়ান সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সুস্থ হয়নি। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু সুস্থ হচ্ছে না। শীতের মধ্যে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় খুবই কষ্ট পাচ্ছে। আজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু আহনাফ কিংবা আরিয়ান নয়, জেলায় তাদের মতো অনেক শিশু আবহাওয়া পরিবর্তনে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও যশোর শিশু হাসপাতালে বেড়েছে শিশু রোগীদের ভিড়। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। চিকিৎসকেরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা যায়, ২৪ সিটের বিপরীতে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে ৬০ শিশু। এদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে চার শতাধিক শিশু। অপর দিকে যশোর শিশু হাসপাতালে ৫০ সিটের প্রত্যেকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। এখানে সিট বাদে কাউকে ভর্তি করা হয় না। একই হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছে ৩ শতাধিক শিশু রোগী।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা বেনাপোলের শিশু তাকরিমের মা জুঁই সাথী বলেন, ‘ছেলেটি এক মাস ধরে জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াচ্ছি, কিন্তু সুস্থ হচ্ছে না। রাতে রাতে জ্বর আসছে। সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বসবে শুনে এসেছি। এখানে অনেক রোগীর ভিড়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’

সদর উপজেলার সতীঘাটা এলাকার রুমা খাতুন বলেন, ‘আমার ১৮ মাস বয়সী ছেলের ঠান্ডা লেগেছে। দুদিন ধরে ঠান্ডায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। অল্প টাকায় ভালো ডাক্তার দেখানোর জন্য এখানে এসেছি।’

ঝিকরগাছার ছুটিপুর এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘সর্দি, কাশিতে দুই মাস বয়সী নাতনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রথমে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেছিলাম। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় চার দিন আগে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন নাতনি অনেকটা সুস্থ।’

শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সালমা খাতুন বলেন, ‘জনবলের তুলনায় রোগীর চাপ বেশি হলে সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। রোগীর বেশি হওয়ায় মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

যশোর শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার মাস বয়সী এক শিশুর পিতা কামরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘জন্মের সময় আমার শিশুর ওজন কম ছিল। তাকে অনেক দিন এনআইসিইউতে রাখতে হয়েছিল। চার দিন হলো ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানকার পরিবেশ ও চিকিৎসা ভালো। শিশু সুস্থতার দিকেই যাচ্ছে।’

যশোর শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৈয়দ নূর-ই-হামীম বলেন, শীতে ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। দুদিন হলো, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে। হাসপাতালের ৫০ শয্যার একটিও খালি নেই। বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হুসাইন সাফায়েত বলেন, শীত বাড়ছে। সেই সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগীও বাড়ছে। শিশু ওয়ার্ডে ২৪ সিটের বিপরীতে তিন-চার গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। জনবল ও অবকাঠামোর সংকট থাকলেও সেবা অব্যাহত আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে শতভাগ বই মাধ্যমিকে এল অর্ধেক

মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী)
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব নতুন বই এসে পৌঁছেছে। ফলে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই প্রাথমিকের ১৯ হাজার ২২৪ শিক্ষার্থী হাতে পাবে নতুন বই। গত বছরের তুলনায় এবার প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে ১ হাজার ৬১৪ জন।

তবে মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে চিত্র একেবারে উল্টো। এখন পর্যন্ত চাহিদার অর্ধেকেরও কম বই পেয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য এবার বইয়ের চাহিদা ছিল ৭৫ হাজার ৩৭৬ কপি। ইতিমধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে গেছে। গতবার যেখানে বছরের শুরুতে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বই দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, এবার সেই ঘাটতি কাটিয়ে প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন।

অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪৫টি স্কুল ও ১৯টি মাদ্রাসাসহ মোট ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য চাহিদা ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ কপি। এর বিপরীতে এসেছে মাত্র ৮২ হাজার ৯৮০ কপি, যা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বই জেলা অফিস থেকে বিতরণ হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে তাদের চাহিদা ও সরবরাহের পৃথক হিসাব নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বই নিতে ভিড় করেছেন। বস্তাভর্তি বই কাঁধে বা গাড়িতে নিয়ে তাঁরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাচ্ছেন। সেখানে কথা হয় কালীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহাবুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী ১ জানুয়ারিতেই সব বই পাবে।

শিশুরা একসঙ্গে সব বই পেলে খুবই খুশি হয়। গতবার যে সংকট ছিল, এবার সেটা নেই।’

মাধ্যমিক পর্যায়ের এক মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সব বই এখনো আসেনি। যতটুকু দেওয়া হচ্ছে, আমরা নিয়ে যাচ্ছি। আশা করি বাকি বই দ্রুত পাওয়া যাবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দুলাল আলম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বই পেয়েছি। প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেব। বাকি বই কবে পাব, এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোটের মাঠে: ঘাঁটি ফেরতের লড়াই বিএনপির

  • ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি আসনেই বিএনপির প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।
  • আওয়ামী লীগ নেই, মাঠে ফিরেছে বিএনপি, ফিরে পেতে চায় পুরোনো নিয়ন্ত্রণ।
শিমুল চৌধুরী, ভোলা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোলার চারটি সংসদীয় আসনে প্রচার জমে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও গণসংযোগে সরব এখন উপকূলীয় এ দ্বীপ জেলা।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভোলার চারটি আসন ছিল বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুপস্থিতির সুযোগে আসনগুলো এবারও হস্তগত করতে চায় বিএনপি। আর বছরখানেক আগে থেকে চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ফলে ভোটের মাঠে এ দলটি সব আসনেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।

ভোলা-১ (সদর): গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে তোফায়েল আহমেদ এমপি হলেও ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আসনটি দখলে ছিল বিএনপির। ২০০৮ সালে বিএনপি ছাড় দেওয়ায় এই দলের সমর্থন ও প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ।

এরপর ২০১৪-২৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন তোফায়েল আহমেদ। তবে আগামী নির্বাচনে এই আসনটিতে বিএনপি আর ছাড় দিতে নারাজ। এই আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীরকে।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলের জেলা শাখার নায়েবে আমির মাওলানা মো. নজরুল ইসলামকে। দলটির নেতা-কর্মীরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হয়েছেন দলের সহসভাপতি মো. ওবায়েদ বিন মোস্তফা।

আগামী নির্বাচনে সদর আসনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীর। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, সম্ভাবনাময় এ দ্বীপ জেলায় পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত রয়েছে, যা দিয়ে সারকারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা করা সম্ভব। ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের দাবিও রয়েছে এলাকাবাসীর। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে স্থানীয়ভাবে এসব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।

ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান): এই আসনে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলেও ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে জয়ী হন মোশারেফ হোসেন শাহজাহান। ২০০১ সালে আসনটি পায় বিএনপি। ২০০৮ সালে এই আসনে ফের আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ এমপি হন। এরপর ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা আলী আজম মুকুল এমপি ছিলেন।

সরকার পতনের পর আলী আজম মুকুল মামলা মাথায় নিয়ে জেলহাজতে থাকায় এবং তোফায়েল পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর আসনটিতে নতুন করে শক্তি সঞ্চারের চেষ্টা করছে বিএনপি। এবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিমকে। এই আসনে এবার বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মো. ফজলুল করিম।

অনেক ভোটারের মতে, এই আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এ ছাড়া এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহিবউল্যাহ খোকন। ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মো. রেজাউল করিম বোরহানীকে।

ভোলা-৩ (লালমোহন ও তজুমদ্দিন): আসনটিতে এবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই আসনে ৬ বার এমপি নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন মেজর (অব.) জসিমউদ্দিন। কিন্তু চাকরি থেকে অবসরের পাঁচ বছর পার হওয়ার আগেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০০৯ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট মেজর (অব.) জসিমউদ্দিনের এমপি পদ অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে আসনটি শূন্য ঘোষণা হলে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) নির্বাচিত হন।

এই আসনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (পিডিপি) কেন্দ্রীয় মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম। তিনি জামায়াতে ইসলামীসমর্থিত ৮ দলের প্রার্থী। মেজর হাফিজের সঙ্গে প্রধান লড়াই হবে নাঈমের। এ ছাড়া মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী কামাল হোসেন।

ভোলা-৪ (চরফ্যাশন ও মনপুরা): এই আসনে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি হন সাদ জগলুল ফারুক। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের এম এম নজরুল ও ১৯৯২ সালের উপনির্বাচনে একই দলের জাফর উল্যাহ চৌধুরী জয়ী হলেও ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে জয়ী হন ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম। পরবর্তী সময়ে ২০০৮-২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায় আসনটি। সরকার পতনের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বিরুদ্ধে মামলা এবং বর্তমানে কারাগারে থাকায় আসনটি দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি। এই আসনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে।

ভোল-৪ আসনে বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ দাবি করে নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও এলাকায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।’

এই আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোস্তফা কামালকে। তিনি এখানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে চান। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কামাল হোসেন।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, নির্বাচনে যদি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়, তাহলে ভোলার চারটি আসনেই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয়ী হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর হাতিয়া: চর দখলের মচ্ছব, গরুমহিষের খাদ্যসংকট

  • দখল হচ্ছে বনের জায়গা। সংকটে কেওড়াবন।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের সহযোগিতা পায় না স্থানীয়রা।
  • দখলদারদের চাঁদা দিয়ে গরু-মহিষ-ভেড়া পালন করতে হচ্ছে।
ইসমাইল হোসেন কিরন,  হাতিয়া (নোয়াখালী)  
দখলের এ দৃশ্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চর আতাউরের উত্তর পাশের। ছবি: আজকের পত্রিকা
দখলের এ দৃশ্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চর আতাউরের উত্তর পাশের। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিগন্তজোড়া চর। চারদিকে মহিষ ও গরুর বিচরণ। মাঝেমধ্যে রয়েছে ভেড়ার পালও। তবে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে ছোট ছোট মাটির স্তূপ। সারিবদ্ধ এসব স্তূপ দখলের চিহ্ন বোঝানোর জন্য। দখলকারীরা ইতিমধ্যে এসব স্থানে গরু, মহিষ, ভেড়ার পাল না চরানোর নির্দেশ দিয়েছে। সরকার পতনের পর থেকেই চরে চলছে দখলের মচ্ছব। তবে প্রশাসন নীরব। এই দৃশ্য নোয়াখালীর হাতিয়ার চর আতাউর ও জাগলারচরের।

চর আতাউর ও জাগলারচরের অবস্থান হাতিয়ার তমরদ্দি ও চরকিং ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এই চর দুটি বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও স্বল্পসংখ্যক লোকবল নিয়ে দখল বন্ধ করতে পারছে না এই দপ্তর। ইতিমধ্যে লিখিতভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ডের কাছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, স্তূপ করে রাখা মাটিতে একটি করে গাছের ডাল পুঁতে দেওয়া হয়েছে। প্রতি একর জায়গার সীমানায় একটি করে স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কথা হয় আবু তাহের নামের একজনের সঙ্গে। মহিষের পাল নিয়ে সেখানে আছেন তিনি। তিনি বলেন, গত বর্ষা মৌসুম থেকে এই চরে দখলের কর্মকাণ্ড চলে আসছে। বর্ষায় হঠাৎ তাঁদের থাকার স্থানের চারপাশে দখল করে জমি চাষ শুরু হয়। বাধা দিলে নেমে আসে নির্যাতন। প্রশাসনকে জানিয়ে কোনো সহযোগিতা পাননি তাঁরা।

চর দখলের কারণে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট। চারদিকের জমি চাষ হয়ে যাওয়ায় আটকা পড়ে এসব গরু-মহিষ। পরে উপায় না পেয়ে দখলদারদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হয় স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মহিষ-গরু পালনের অনুমতি মিলেছে।

এই দুই চরের রাখালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দখলদারেরা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন স্থানীয় বিএনপির নেতা সাবেক ইউপি সদস্য মনির উদ্দিনের লোক হিসেবে কাজ করেন। তবে এই বিএনপি নেতা চরে যান না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমি হাতিয়ার বাহিরে অনেক দিন। চর দখলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’

এই বিষয়ে চরকিং ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, চর দখলের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এর সঙ্গে মনিরসহ কয়েকজন জড়িত থাকার কথা তিনি শুনেছেন।

স্থানীয়রা জানান, চরের উত্তর পাশে ও মাঝামাঝি দুটি জায়গায় রাখালেরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। চরের একেবারে দক্ষিণে একটি আশ্রয়ণ ও দুটি গুচ্ছগ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। নদী পার হয়ে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কেউ সেখানে যায় না। বন বিভাগ বিশাল এই চরে কেওড়াবাগানের রক্ষণাবেক্ষণ করে। পাশাপাশি নতুন জেগে ওঠা চরে কেওড়ার বীজ বপন করে। তবে দখলদারেরা নতুন ও পুরোনো সব চরের অনেক জায়গা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

চর এলাকায় বন বিভাগের জায়গা দখলের বিষয়ে নলচিরা রেঞ্জের কর্মকর্তা আল আমিন গাজী জানান, একটি গ্রুপ বেশ কিছুদিন আগ থেকে চরের জায়গা দখলের চেষ্টা করে আসছে। ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে নদীবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এ ছাড়া সীমিতসংখ্যক জনবল নিয়ে অভিযান সফল হয় না।

এই চরে গরু-মহিষ দেখাশোনা করেন এমন একজন সৈকত। তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে এই চরে মহিষ পালন করে আসছেন। কেউ কখনো চর দখলের চেষ্টা করেনি। সরকার বদলের পর থেকে বিভিন্ন গ্রুপ এসে চর দখল করছে। চরকিং ও হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে এই চর দখল করছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চরে থাকা কেওড়াবন উজাড় হয়ে যাবে।

মহিষের মালিক কামরু মিয়া জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই চরে মহিষ ও গরু পালন করে আসছেন। ইতিমধ্যে মাটির কিল্লা, পুকুর তৈরি করে নিয়েছেন। যাতে অস্বাভাবিক জোয়ারে গরু-মহিষ আশ্রয় নেয়। তবে হঠাৎ করে একটি পক্ষ তাদের এই চর থেকে চলে যেতে বলছে। রাখালদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, চর দখলের বিষয়টি মহিষের মালিকেরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বন বিভাগ থেকেও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হবে এসব চর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত